26/05/2022
শিমুলের বিয়ে হয়েছে আট-ন'মাস হলো। ও এই বছর UPSC পরীক্ষা দেবে বলে প্রিপারেশন নিচ্ছে। হঠাৎ এত ভালো সম্বন্ধ'টা এসে পড়াতে শিমুলের বাবা-মা আর অপেক্ষা করতে চান নি। কিন্তু পাত্রের সাথে আলাদা করে কথা বলার সময় শিমুল নিজেই রাতুলকে জানিয়েছিল ওর upsc র প্রিপারেশন নেবার ব্যাপারটা। সব শুনে সেদিন রাতুল চুপ করেছিল, কিন্তু দু'দিন পর ওদের বাড়ি থেকে ফোন আসে মেয়ে পছন্দ হয়েছে বলে, এবং পাকা কথার দিন শিমুলকে ওর হবু শ্বশুর-শাশুড়ী জানান যে শিমুল ওবাড়িতে গিয়ে বিয়ের পরেও প্রিপারেশন চালিয়ে যেতে পারে, এবং পরীক্ষা দিয়ে সফল হলে নিজের কেরিয়ারে মন দিতে পারে। সেই কথা মতোই শ্বশুর-শাশুড়ি যথেষ্ট সহযোগীতা করেন শিমুলকে এই ব্যাপারে, আর রাতুল তো আছেই। দিনের বেলা ক্লাস সেরে ক্লান্ত হয়ে বাড়ি ফেরে ও। শাশুড়ি মা'র প্ল্যান মতোই তারপর ও বেশ কিছুটা সময় ঘুমিয়ে, রিল্যাক্স করে কাটিয়ে দেয়। তারপর পড়তে বসে। যথারীতি পড়াশুনো চলে বেশ রাত পর্যন্ত। রাতে শুয়ে শুয়ে একটু ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম চেক করে ঘুমোতে যাওয়া শিমুলের অনেক বছরের অভ্যেস। এখনো রাতে পড়াশুনা শেষে রাতুলের পাশে শুয়ে ও ফোন নিয়ে একই রকম ভাবে একটু ঘাঁটা-ঘাঁটি করে তবে ঘুমোতে যায়। সেদিন পাশের বাড়ির পারুল কাকিমা বিকেলে এসেছিলেন ওর শাশুড়ী বীণা দেবী'র কাছে। গল্পে গল্পে বললেন,
- আচ্ছা দিদি, তোমার বৌমা ঘরের কাজ-বাজ কিছু করে?
- কেন বলো তো?
- না জিজ্ঞাসা করলাম এমনি...
- দেখো আমাদের তো দু'টো কাজের লোক আছে, আর সোমা বলে মেয়েটিও সব সময়ের ফাইফরমাশ খাটার জন্য বাড়িতেই থাকে। তাই আমাকেই তেমন কিছু কাজ করতে হয়না বাড়িতে, ও বাচ্চা মেয়ে, ও আর কি করবে? তাছাড়া ও তো upsc পরীক্ষার জন্য তৈরি হচ্ছে, তাই সারাদিন পড়াশুনাটাই করে ও মন দিয়ে। আমরা তেমনটাই বলেছি ওকে।
- হুম। শোনো একটা কথা বলি, তোমার বৌমা, অনেক রাত অব্দি ওই ফেসবুক না কি বলে, ওসব করে, জানো?
- তাই?
- হ্যাঁ গো।
- তো, তাতে কি হয়েছে?
- আরে অত রাতে এরকম বিয়েওলা মেয়েরা বা ভদ্রবাড়ির মেয়েরা ওসব করে না গো!
- কেন?
- ওই সময় নাকি সব অসভ্য ছেলেরা, মাঝ বয়সী হ্যাংলা লোকগুলো ওই ফেসবুকে থাকে, মেয়েদের সাথে নোংরা কথা বলে! তোমার বৌমা'কে দেখে তো ভদ্র বাড়ীর মেয়ে বলেই মনে হয়, তারওপর তোমাদের মত মানী বাড়ির বউ এখন ও। কোথায় কি ঝামেলা পাকিয়ে বসবে...
- ঝামেলা?
- হ্যাঁ গো! শুনেছি পুলিশের লোকও নাকি ঘাপটি মেরে থাকে ফেসবুকে। এসব উল্টো-পাল্টা কথাবার্তা বলা ছেলে মেয়েদের ধরবে বলে। তাই বলছিলাম...
- আচ্ছা আমাকে একটা কথা বলো তো, তুমি এতসব জানলে কি করে?
- আরে আমাকে তো অঞ্জন বললো যে "মা, পাশের বাড়ির বৌদির ব্যাপার-স্যাপার সুবিধের নয়, একটু জ্যেঠিমাকে জানিও।" দিদি, তুমি রাতুল'কে একটু নজর রাখতে বোল বউয়ের ওপর...
- হুমম... আচ্ছা পারুল... তার মানে তোমার ছেলে রাত-বিরেতে ফেসবুক করে বেড়ায়! আচ্ছা ও কি আমার বৌমা'র সাথেও ওইসব নোংরা কথা বলেছে?
- ছি ছি দিদি, এসব কি বলছো? ও কেন রাতে...
- এক মিনিট, ও রাতে ফেসবুকে না থাকলে জানলো কি করে আমার বৌমা রাতে ফেসবুকে অনলাইন থাকে? আর শিমুলের সাথেও ও নিশ্চয়ই কথা বলেছে... নাহলে এত শিওর হলো কি করে, আমার বৌমা ঠিক কি করে, কি নিয়ে লোকের সাথে কথা বলে ফেসবুকে?... আচ্ছা পারুল, অঞ্জন আবার পুলিশের কেসে ফাঁসে-টাসে নি তো এর মধ্যে? একটু খোঁজ নিও তো...
- আরে দিদি, এসব কি বাজে কথা বলছো তুমি?
- না, ও যতটা ডিটেলস এ এসব নিয়ে জ্ঞান রেখেছে, যেমন খুঁটিয়ে তোমায় সব বলেছে... তাই ভাবছি, এতটা জানলো কি করে! আসলে আমার রাতুল তো বরাবরই একটু বোকা, এত বছরেও এসব জানে-টানে না বোধহয়... তাই ওর পাশে শুয়ে-বসেই বৌমা আমার ফেসবুক ঘাঁটে রাত্রিবেলা... বলতে হবে তো ওকে অঞ্জনের ব্যাপারে একটু, বৌমা'কেও জিজ্ঞাসা করতে হবে...
- আমি উঠলাম দিদি আজ।
- সে কি, চা খেয়ে যাবে না একটু?
- নাঃ, যাই...
- আচ্ছা বেশ, এসো তবে। আর যা বললাম... অঞ্জনের ব্যাপারটা একটু খোঁজ নিয়ে দেখো...
- দরজাটা দিয়ে দিও দিদি, আমি আসছি...
©সুজাতা