06/04/2024
হযরত মুসা আলাইহি ওয়া সাল্লাম প্রায়ই আল্লাহর সঙ্গে সরাসরি কথা বলতেন। শুধু কথাই বলতেন না, তিনি প্রায় সময় ছোট্ট শিশুর মতো আল্লাহর কাছে বিভিন্ন বিষয় জানতেও চাইতেন। এই যেমন, তিনি একদিন আল্লাহর কাছে জানতে চাইলেন, হে আল্লাহ! আমার অনুসারীদের মধ্যে সবচেয়ে পাপী ব্যক্তিটা কে?
মুসা নবী আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর প্রশ্নের জবাবে আল্লাহতায়ালা বললেন, তুমি এখন যে পথের সামনে দাঁড়িয়ে আছো সেই পথটি যে ব্যক্তি সর্বপ্রথম অতিক্রম করবে, আমার সেই বান্দা-ই হলো তোমার অনুসারীদের মধ্যে সবচেয়ে বড়ো পাপী।
আল্লাহর কথা শোনার পর হযরত মুসা আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর মনে এক অজানা আগ্রহ তৈরি হলো। কে সেই ব্যক্তি, যে আমার অনুসারীদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি গুনাহে লিপ্ত রয়েছে! না জানি তার চেহারাটা কেমন! মুসা নবী আলাইহি ওয়া সাল্লাম পথের মধ্যে বসে পড়লেন। এই পথ যে সর্বপ্রথম অতিক্রম করবে সেই হলো বড়ো পাপী। নিশ্চয়ই কিছুক্ষণের মধ্যে সেই ব্যক্তিকে দেখতে পাবেন তিনি।
অপেক্ষার পালা শেষ হলো। হঠাৎ করেই তিনি দেখতে পেলেন এক ব্যক্তি ছোট্টে একটি ছেলেকে কোলে নিয়ে পথটি অতিক্রম করে ফেলল। তিনি বুঝতে পারলেন, তাহলে এই সেই পাপী ব্যক্তি। না জানি তার পাপের কী শাস্তি বরাদ্দ রেখেছেন আল্লাহ!
হযরত মুসা আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর মনে এবার নতুন আরেকটি প্রশ্ন জাগ্রত হলো। সবচেয়ে বেশি পাপী ব্যক্তি যদি এই লোক হয় তাহলে সবচেয়ে পূণ্যবান ব্যক্তিকেও তো একবার দেখা দরকার। তিনি আল্লাহর কাছে জানতে চাইলেন, হে আল্লাহ! আমি আমার অনুসারীদের মধ্যে সবচেয়ে পাপী ব্যক্তিকে খুঁজে পেয়েছি। এদের মধ্যে সবচেয়ে পূণ্যবান ব্যক্তিটাকেও দেখতে ইচ্ছে করছে খুব। অনুগ্রহ করে আমার অনুসারীদের মধ্যে এই মুহূর্তে সবচেয়ে পূণ্যবান ব্যক্তিটির সন্ধান দিন।
আল্লাহতায়ালা মুসা নবীর এ আবদারও রাখলেন। তিনি বললেন, সূর্য ডোবার সাথে সাথে যে লোকটি তোমার তোমার পূর্বস্থান দিয়ে চলে যাবে সেই ব্যক্তিটি হলো এই সময়ে তোমার অনুসারীদের মধ্যে সবচেয়ে পূণ্যবান ব্যক্তি।
হযরত মুসা আলাইহি ওয়া সাল্লাম আবারও অপেক্ষায় রইলেন। আজ তাহলে সূর্য ডোবার সাথে সাথেই সবচেয়ে পূণ্যবান ব্যক্তির সাক্ষাৎ পাব। না জানি কত বড়ো, কী সুন্দর চেহারার সেই লোক হবে। পূণ্যবান লোকটিকে দেখার জন্য তিনি অপেক্ষা করতে থাকলেন।
যেই মাত্র সূর্য ডুবতে শুরু করেছে, মুসা নবী আলাইহি ওয়া সাল্লাম দেখতে পেলেন সকালের সেই ব্যক্তিটাই তার ছোটো বাচ্চাকে কোলে নিয়ে তাঁর পূর্বস্থান দিয়ে চলে গেল!
হযরত মুসা আলাইহি ওয়া সাল্লাম হতভম্ব হয়ে গেলেন! আল্লাহর হিসেবে তো কোনো ভুল হবার কথা না! তাহলে সেই সবচেয়ে পাপী ব্যক্তিটাই কেন এ দিকে গেল! তিনি দ্রুত আল্লাহর কাছে জানতে চাইলেন। বললেন, হে আল্লাহ! আমি এ কী দেখলাম! আমার তো এখন সবচেয়ে পূণ্যবান ব্যক্তিটাকেই দেখার কথা। কিন্তু দেখতে পেলাম সেই সবচেয়ে পাপী ব্যক্তিকেই!
আল্লাহ বললেন, হে মুসা! তুমি ভুল কিছু দেখোনি। সকালের দেখা সবচেয়ে পাপী লোকটিকেই আমি সন্ধ্যাবেলা সবচেয়ে নেককার বান্দায় পরিণত করে দিয়েছি।
হযরত মুসা আলাইহি ওয়া সাল্লাম খুবই অবাক হলেন। অবাক হয়ে জানতে চাইলেন, হে আল্লাহ! এটা কীভাবে সম্ভব? মাত্র কয়েক ঘণ্টার মধ্যে লোকটি কী এমন নেক আমল করল যে তার সব পাপ বরবাদ হয়ে গেল এবং আমলনামা সবার শীর্ষে উঠে গেল!
আল্লাহতায়ালা বললেন, সকালে যখন এই ব্যক্তি ছেলেকে সাথে নিয়ে তোমাকে অতিক্রম করে জঙ্গলে প্রবেশ করলো, তখন তার কোলের ছেলেটি প্রশ্ন করেছিলো, বাবা! এই জঙ্গলটি কি অনেক বড়ো?
বাবা উত্তরে বলেছিলো, হ্যাঁ বাবা, এটি অনেক বড়ো একটি জঙ্গল। ছেলে আবার প্রশ্ন করলো, বাবা! জঙ্গল থেকে কি আরও বড়ো কোনো কিছু আছে?
তখন তার বাবা বলেছিলো, হ্যাঁ বাবা! ওই পাহাড়গুলো জঙ্গল থেকে আরও বড়ো।
ছেলেটি আবার প্রশ্ন করলো,পাহাড় থেকে কি বড়ো কিছু আছে বাবা?
বাবা বললো, আছে, ওই যে আকাশ দেখতে পাচ্ছো। ওটা পাহাড় থেকেও অনেক বড়ো।
ছেলে আবার প্রশ্ন করে বসল, আকাশ থেকে কি বড়ো কিছু আছে বাবা?
লোকটি নিঃশ্বাস ফেললো। বললো, হ্যাঁ, আমার পাপ এই আকাশ থেকেও অনেক বড়ো।
ছেলে বাবার এ উত্তর শুনে অবাক হলো। বলো কি বাবা, তোমার পাপ এতই বড়ো?
লোকটি বললো, হ্যাঁ রে বাপ, আমার পাপ অনেক বড়ো।
এবার ছেলেটি বললো, আচ্ছা বাবা! তোমার পাপ থেকে বড় কি কোনো কিছুই নেই?
লোকটি তার কোলের ছেলেকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে কাঁদতে বললো, আছে রে বাপ আছে। আমার পাপ থেকেও অনেক অনেক বড়ো হলো আমাদের আল্লাহর রহমত।
হে, মুসা! এই ব্যক্তির পাপের অনুভূতি ও অনুশোচনা আমার এতোই পছন্দ হয়েছে যে সবচেয়ে পাপী ব্যক্তিকেই আমি সবচেয়ে নেককার ব্যক্তি বানিয়ে দিয়েছি।
মনে রেখো, আমার শাস্তির হাত থেকে ক্ষমার হাত বহুগুণ বড়ো।
সবচেয়ে পাপী ও নেককার ব্যক্তির গল্প
সংকলন ও সম্পাদনা : কামরুল আলম