03/05/2020
*******রমজানের শিক্ষা ৯******
#গীবত_পরিহার_করা।
★গীবত একটি মারাত্মক কবীরা গুনাহ।
রমজানের অন্যতম একটি শিক্ষা হলো গীবত পরিহার করা।আমরা সামাজিক জীব। জীবন পরিচালনার ক্ষেত্রে একে অপরের সাথে পারস্পরিক সম্পর্ক গভীর কিন্তু খেয়ালে কিংবা বে-খেয়ালে একজনের অগোচরে আরেকজনের বিপক্ষে গীবদ করি যা অত্যন্ত গর্হিত।আমাদেরকে বেমালুম ভুলে গেলে হবে না গীবতকারীর #৩টি মারাত্মক ক্ষতি রয়েছে।
১.) গীবতকারীর দোয়া কবুল হয়না।
২.) গীবতকারীর কোন নেক আমল কবুল হয়না।
৩.) আমল নামায় পাপ বৃদ্ধি পেতে থাকে।
একটি খারাপ কাজ থেকে বিরত থাকলেই কিন্তু আমরা সত্যিকার আশরাফুল মাখলুকাতের পরিচয় দিতে পারি। মহান আল্লাহ #সূরা_হুজরাতের_১২_নম্বর_আয়াতে বলেন
وَلَا يَغْتَبْ بَعْضُكُمْ بَعْضًا أَيُحِبُّ أَحَدُكُمْ أَنْ يَأْكُلَ لَحْمَ أَخِيهِ مَيْتً فَكَرِهْتُمُوهُ
✨আর তোমরা কেউ কারো গীবত করো না, তোমরা কি কেউ আপন মৃত ভাইয়ের গোশত খাওয়া পছন্দ করবে ? একে তোমরা অবশ্যই ঘৃণা করবে।, (সূরা হুজুরাত:১২)।
📍 কোরআনের বিভিন্ন স্থানে এবং হাদীসের মাধ্যমে জানতে পারি আল্লাহ তা'য়ালা বারংবার সতর্ক করেছে গীবত থেকে দূরে থাকার জন্য। আর রমজান মাস বরকতের মাস এ মাসে অবশ্যই গীবত থেকে দূরে থাকবো এটাই রহমত,মাগফিরাত,নাজাতের মর্যাদার দাবী।
#ভাইসব_জানুন_গীবত_কী?
গীবত শব্দটির আভিধানিক অর্থ হচ্ছে দোষারোপ করা, পরনিন্দা করা ইত্যাদি।পরিভাষায় গীবত বলা হয় ‘তোমার কোনো ভাইয়ের পেছনে তার এমন দোষের কথা উল্লেখ করা যা সে গোপন রেখেছে অথবা যার উল্লেখ সে অপছন্দ করে।
💢আবু হুরায়রা রাঃ থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,গীবত কাকে বলে, তোমরা জান কি? সাহাবিগণ বললেন, আল্লাহ ও তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -ই ভালো জানেন। তিনি বললেন, তোমার কোনো ভাই (দীনি) সম্পর্কে এমন কথা বলা, যা সে অপছন্দ করে, তা-ই গীবত। সাহাবায়ে কেরাম জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রাসূল, আমি যে দোষের কথা বলি তা যদি আমার ভাইয়ের মধ্যে থাকে তাহলেও কি গীবত হবে? উত্তরে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তুমি যে দোষের কথা বল, তা যদি তোমার ভাইয়ের থাকে তবে তুমি অবশ্যই তার গীবত করলে আর তুমি যা বলছ তা যদি তার মধ্যে না থাকে তবে তুমি তার ওপর মিথ্যা অপবাদ দিয়েছ। (মুসলিম)
•সুতরাং এ কথা নির্দ্বিধায় বলা যায়, কোনো ভাইয়ের এমন দোষের কথা বলা গীবত যা সে অপছন্দ করে।
#হাদীসের_আলোকে_গীবতের_পরিণাম
গীবত ইসলামি শরিয়তে হারাম ও কবিরা গুনাহের অন্তর্ভুক্ত। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ বলেন,
وَيْلٌ لِكُلِّ هُمَزَةٍ لُمَزَة
✨ধ্বংস তাদের জন্য, যারা অগ্র-পশ্চাতে দোষ বলে বেড়ায়।’ (সূরা হুমাজাহ-১)
কেউ গীবত শুনলে তার অনুপস্থিত ভাইয়ের পক্ষ থেকে তা প্রতিরোধ করবে সাধ্যমতো। আর যদি প্রতিরোধের শক্তি না থাকে তবে তা শ্রবণ থেকে বিরত থাকবে। কেননা, ইচ্ছাকৃতভাবে গীবত শোনা নিজে গীবত করার মতোই অপরাধ।
♦হাদিসে আছে, সাহাবি মায়মুন রাঃ বলেন,
‘একদিন স্বপ্নে দেখলাম এক সঙ্গী ব্যক্তির মৃতদেহ পড়ে আছে এবং এক ব্যক্তি আমাকে তা ভক্ষণ করতে বলছে। আমি বললাম, আমি একে কেন ভক্ষণ করব? সে বলল, কারণ তুমি অমুক ব্যক্তির সঙ্গী গোলামের গীবত করেছ। আমি বললাম, আল্লাহর কসম আমি তো তার সম্পর্কে কখনো কোনো ভালোমন্দ কথা বলিনি। সে বলল, হ্যাঁ, এ কথা ঠিক। কিন্তু তুমি তার গীবত শুনেছ এবং সম্মত রয়েছ।’রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,মিরাজের সময় আমাকে এমন এক সম্প্রদায়ের কাছে নিয়ে যাওয়া হলো যাদের নখ ছিল তামার। তারা তাদের মুখমণ্ডল ও দেহ আঁচড়াচ্ছিল। আমি জিবরীল আঃ-কে জিজ্ঞাসা করলাম, এরা কারা? তিনি বললেন, এরা নিজ ভাইদের গীবত করত ও ইজ্জতহানি করত। (মাজহারি)
♦আবু সায়িদ ও জাবের রাঃ থেকে বর্ণিত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন‘গীবত ব্যাভিচারের চেয়েও মারাত্মক গুনাহ। সাহাবায়ে কেরাম আরজ করলেন, এটা কিভাবে? তিনি বললেন, ব্যক্তি ব্যভিচার করার পর তওবা করলে তার গোনাহ মাফ হয়ে যায়। কিন্তু গীবত যে করে তার গোনাহ আক্রান্ত প্রতিপক্ষের ক্ষমা না করা পর্যন্ত মাফ হয় না।’সুতরাং এ কথা সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হল যে, গীবত একটি জঘন্য পাপাচার। এ থেকে সবাইকে সতর্কতার সাথে বিরত থাকতে হবে।
★যাদের_দোষ_বর্ণনা_করা_যায়
গীবত নিঃসন্দেহে হারাম।
★তারপরও যাদের দোষ বর্ণনা করা যায় তা হচ্ছে কোনো অত্যাচারীর অত্যাচারের কাহিনী প্রতিকারের আশায় বর্ণনা করা।
★সন্তান ও স্ত্রীর বিরুদ্ধে তার পিতা ও স্বামীর কাছে অভিযোগ করা।
★ফতোয়া গ্রহণ করার জন্য ঘটনার বিবরণ দেয়া ও - প্রয়োজন ও উপযোগিতার কারণে কারো দোষ বর্ণনা করা জরুরি।
★আবার যাদের স্বভাব গীবত করা তাদের সম্পর্কে অন্যদের সাবধান করার জন্য তার দোষ বর্ণনা করা জায়েজ।
➖যেমন →উম্মুল মুমিনীন আয়েশা রাঃ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
‘একদা এক ব্যক্তি (মাখরামা ইবনে নওফেল) নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কাছে সাক্ষাতের অনুমতি প্রার্থনা করলেন। তখন তিনি বললেন, তাকে আসার অনুমতি দাও, সে গোত্রের কতই না নিকৃষ্ট লোক। অতঃপর তিনি তার সাথে প্রশস্ত চেহারায় তাকালেন এবং হাসিমুখে কথা বললেন। অতঃপর লোকটি চলে গেলে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! আপনি তার সম্পর্কে এমন কথা বলেছেন, অতঃপর আপনিই প্রশস্ত চেহারায় তার প্রতি তাকালেন এবং হাসিমুখে কথা বললেন। এ কথা শুনে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হে আয়েশা, তুমি কি কখনো আমাকে অশ্লীলভাষী পেয়েছ ? নিশ্চয়ই কেয়ামতের দিন আল্লাহতায়ালার কাছে মর্যাদার দিক দিয়ে সর্বাধিক নিকৃষ্ট সেই লোক হবে, যাকে মানুষ তার অনিষ্টের ভয়ে ত্যাগ করেছে। (বুখারি, মুসলিম)
★গীবত_থেকে_বেঁচে_থাকার_উপায়
গীবত থেকে বেঁচে থাকা অত্যন্ত জরুরি। এ থেকে বাঁচার উপায়।প্রথম উপায় হচ্ছে অপরের কল্যাণ কামনা করা। কেননা,
◾রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন(,‘দীন হচ্ছে নিছক কল্যাণ কামনা করা।’)
◾দ্বিতীয় উপায়, আত্মত্যাগ অর্থাৎ যেকোনো প্রয়োজনে অপর ভাইকে অগ্রাধিকার দেয়া। যেমন আল্লাহ এরশাদ করেছেন,
وَيُؤْثِرُونَ عَلَى أَنْفُسِهِمْ وَلَوْ كَانَ بِهِمْ خَصَاصَةٌ
✨‘তারা নিজের ওপর অন্যদের প্রয়োজনকে অগ্রাধিকার দেয়, যদিও তারা অনটনের মধ্যে থাকে।’
(সূরা হাশরের আয়াত ০৯)
◾তৃতীয় উপায় অপরের অপরাধকে ক্ষমা করে দেয়া।
◾চতুর্থত উপায়, মহৎ ব্যক্তিদের জীবনী বেশি বেশি করে অধ্যয়ন করা।রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অন্যত্র বলেছেন,
♦যে ব্যক্তি আমার জন্য তার জিহ্বা ও লজ্জাস্থানের জিম্মাদার হবে, আমি তার জন্য জান্নাতের জিম্মাদার হবো।’ (বুখারি)।♦
★ সুতরাং গীবতের মত কবিরা গুণাহ থেকে মুক্ত থাকা আমাদের জন্য আবশ্যক। আর রমজানের শিক্ষাই হলো খারাপ শরীয়ত বিরোধী কাজ থেকে যোজন যোজন মাইল দূরে থাকা। আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে এই খারাপ কাজ থেকে মুক্ত রাখুন। আল্লাহুম্মা আমিন।