27/04/2024
এক ঘর মানুষের সামনে আমার ঠোঁটে ঠোঁট ডুবিয়ে দিলেন ঈশান ভাইয়া। ভাইয়া বলছি কেন? উনি তো আমার স্বামী! আমার ছয় মাসের স্বামী! গত ছয়মাস ধরে আমরা এক বাড়িতেই থাকছি অথচ আমাদের মধ্যে কোনো সম্পর্ক নেই। ঈশান ভাইয়া আমার ছোট খালামনির ছেলে। ঈশান দেখতে অত্যন্ত সুপুরুষ। কোন সিনেমার হিরোদের থেকে কম না। সুঠাম দেহ, ফর্সা গায়ের রং,উচ্চতা ৫ ফিট ১১ইঞ্চি, মাথার চুলগুলো হালকা কোঁকড়ানো, গালে খোঁচা খোঁচা দাড়ি। এক কথায় যাকে বলে চোখ ধাঁধানো সুন্দর। প্রথম দেখাতেই যে কোন মেয়ে তার প্রেমে পড়তে বাধ্য। আমিও ছোট বেলা থেকেই তার উপর ক্রাশিত ছিলাম। আমি যখন ক্লাস নাইনে পড়ি তখন ঈশান ভাইয়ার উপর প্রথম ক্রাশ খাই আমি। সেদিন ছিল ঈশান ভাইয়ার জন্মদিন। ঈশান ভাইয়া সেদিন ব্লাক কালারের স্টোনের কাজ করা একটা পাঞ্জাবি পড়েছিল যার হাতা ছিল কনুই অব্দি গুটানো, মাথার চুলগুলো পেছন দিকে স্পাইক করা,হাতে কালো ডায়ালের ঘড়ি আর ঠোঁটে তাঁর সেই চিরাচরিত হাসি। এতেই সেদিন ঘায়েল হয়েছিল আমি। কিন্তু সে সময় ভয়ে তাকে কিছু বলতে পারিনি।তবে কলেজে ওঠার পর আমি নিজের মনের কথাটা আর চেপে রাখতে পারিনি। আমি ফিজিক্সে খুব কাঁচা ছিলাম। ঈশান ভাইয়া আবার ফিজিক্স খুব ভালো পারে। তাই আম্মু ঈশান ভাইয়াকে বলেছিল আমাকে একটু ফিজিক্সটা একটু দেখিয়ে দিতে। ঈশান ভাইয়াদের বাসা যেহেতু আমাদের বাসা থেকে খুব বেশি দূরে নয় তাই আমিই তাদের বাসায় পড়তে যেতাম। তখন আমি ইন্টার ফার্স্ট ইয়ারে পড়ি। সামনেই ছিল ভ্যালেন্টাইন ডে। আমি মনে মনে ভাবলাম, এই ভ্যালেন্টাইন ডেতেই আমি তাকে আমার মনের কথা বলে দিবো। কিন্তু বুঝতে পারছিলাম না ঈশান ভাইয়াকে নিজের মনের কথাটা কিভাবে বলবো। বান্ধবীদের কাছ থেকে বিভিন্ন ট্রিপস নিয়ে শেষে ঠিক করলাম চিঠি লিখে আমি তাকে নিজের মনে কথা জানাবো। আর যেই ভাবা সেই কাজ। পরের দিন আমার মনের সমস্ত অনুভূতি এক জায়গায় জড়ো করে তার জন্য লিখে ফেললাম বিশাল এক পত্র।আমি সেই চিঠিটা ভ্যালেন্টাইন ডের দিন ঈশান ভাইয়ার বইয়ের মধ্যে রেখে আসি। কিন্তু ঈশান আমার ভালোবাসা তো এক্সসেপ্ট করেই নি উপরন্তু সেই চিঠি পড়ে সে আমার অনুভূতিগুলো নিয়ে মজা করেছিল। আমাকে বলেছিল, আমি যেন তার থেকে দূরে থাকি। আর কখনো তার সামনে না যাই। ইভেন সে আম্মুকেও বলে দেয় সে আমাকে আর পড়াতে পারবে না। উনার নাকি সময় নেই। সেদিন ঈশান ভাইয়ের কথায় ও কাজে আমি খুব কষ্ট পেয়েছিলাম। সেদিন সারারাত ধরে অনেক কান্নাকাটির পর সিদ্ধান্ত নিলাম যে ঈশান ভাইকে যদি আমি না পাই তাহলে এ জীবন রেখে আমার কি লাভ? ঝোঁকের বশে সুইসাইড এটেম্প করতে গিয়েছিলাম কিন্তু সুইসাইড করা কি এতোই সহজ! ব্লেড দিয়ে হাত কাটতে গিয়ে ভয়ে থরথর করে হাত কাঁপছিল তাই আমি নিজের সিদ্ধান্ত পাল্টে ফেললাম। তার পর ফেসবুক,ইউটিউবে কিছু অনুপ্রেরণা মূলক ভিডিও দেখে মনে মনে ভাবলাম ঈশান ভাইয়াকে আমি ভুলে যাবো। কিন্তু তা আর হলো কই? তাকে ভুলার আগেই অদ্ভুত ভাবে তার সাথে আবার জুড়ে গেলাম। খালামনি তখন ভীষণ অসুস্থ। হার্ট অ্যাটাক হয়েছিল। বাঁচার কোন আশাই ছিল না। তাই খালামনি মৃত্যুর আগে ঈশান ভাইয়ার বিয়েটা দেখে যেতে চেয়েছিলেন। একদিন কলেজে থেকে বাসায় ফিরে দেখি বাবাই আমাদের বাসায়। ড্রয়িং রুমে বসে আব্বুর সাথে কি নিয়ে যেন আলোচনা করছে। মনে মনে একটু অবাক হলাম। বাবাই ইদানিং এমনিতেই আমাদের বাসায় খুব একটা আসে না। তার উপর খালামনি এখন অসুস্থ। তাহলে সে এসময় আমাদের বাসায় কি করছে? পরে আম্মুর কাছে জানতে পারলাম সে নাকি আমার আর ঈশান ভাইয়ার বিয়ের কথা বলতে এসেছিল। কারণ খালামনি নাকি মৃত্যুর আগে আমার আর ঈশান ভাইয়ার বিয়েটা দেখে যেতে চায়। খালামণি নাকি ছোট বেলা থেকেই নাকি খালামনি আমাকে তার ঘরের বউ করে নিয়ে যেতে চেয়েছিলেন। আর ঈশান ভাইয়া নিজেও নাকি এই বিয়েতে রাজী।তাই আমিও নাচতে নাচতে বিয়েতে রাজী হয়ে গেলাম। হাজার হলেও ক্রাশকে বিয়ে করছি বলে কথা। কিন্তু বাসর রাতে জানতে পারলাম শুধু মাত্র মায়ের কথা রাখতেই ঈশান ভাইয়া আমাকে বিয়ে করতে রাজি হয়েছে। সে অরিন আপুকে ভালোবাসে। অরিন আপু ঈশান ভাইয়ার ফুফাতো বোন।
বাসর রাতে একহাত ঘোমটা টেনে ঈশান ভাইয়ার জন্য বউ সেজে বসে আছি। সাধারণ বাসর রাত নিয়ে সব মেয়েদেরই অনেক স্বপ্ন থাকে। আমার ও ছিল। তার উপর আবার ভালোবাসার মানুষটির সাথে বিয়ে হয়েছে। মনে রিতিমত লাড্ডু ফুটছিল। কিন্তু সেদিন ঈশান ভাইয়ার এক কথায় আমার সব আনন্দ নিমিষেই ফুরুত হয়ে যায়। ঈশান ভাইয়া ঘরে ঢুকেই আমার ডান হাতটা মুচড়ে ধরে কাট কাট গলায় বলে উঠে,
---"আমি তোকে বলেছিলাম যে, আমার থেকে দূরে থাকবি। আর তুই কি করলি? আম্মুর অসুস্থতার সুযোগ নিয়ে আমাকে বিয়ে করে নিলি। তবে একটা কথা ভালো করে শুনে রাখ, তুই আমার বউ হয়েছিস ঠিকই কিন্তু কখনো আমার কাছ থেকে না পাবি স্ত্রীর অধিকার। আর না ভালোবাসা। আমি শুধু অরিনকে ভালোবাসি। আর ওকেই বাসবো।"
আমিও ছিলাম নাছোড়বান্দা! শত অপমান সহ্য করেও তার পিছনেই ঘুর ঘুর করতাম। কিন্তু একটা সময় পর আমি বুঝতে পেরেছি জোর করে আর যাই হোক ভালোবাসা হয় না। তাই গত তিন মাস ধরে আমরা এক বাড়িতেই আছি কিন্তু আমাদের মধ্যে কোনো কথা হওয়া তো দূরের কথা, রাতের বেলা খাওয়ার সময় ছাড়া দেখাও হয়না। তবে তাতে অবশ্য ঈশান ভাইয়ের কোন মাথা ব্যাথা নেই। সে তার মতো বিন্দাস আছে। অফিস যাচ্ছে, নিজের গার্লফ্রেন্ডকে নিয়ে ঘু্রছে, ফিরছে, শপিং করছে, ফেসবুকে তাদের ছবি আপ করছে। আমি বলে একটা মানুষ যে তার জীবনের আছে সেদিকে তার কোন খেয়ালই নেই। প্রথম প্রথম ঈশানের এসব কর্মকাণ্ডে আমার খুব খারাপ লাগতো তবে আস্তে আস্তে এখন নিজেকে মানিয়ে নিতে চেষ্টা করছি। আর তো মাত্র কয়েক মাস এইচএসসি এক্সামটা শেষ হলেই আমি একটা ভার্সিটিতে এডমিশন নিয়ে তার থেকে দূরে চলে যাবো। এতোটাই দূরে যেন সে চাইলেও আর আমাকে দেখতে না পারে।
আজ আমরা আমার মামাতো বোনের বিয়ে উপলক্ষে নানু বাড়ি এসেছি। আমার মামাতো বোনের নাম ঐশী। আমার থেকে দুই বছরের বড় তবে আমি ওকে নাম ধরেই ডাকি। আজ ছিল ঐশীর গায়ে হলুদ। হলুদের অনুষ্ঠান শেষে আমরা সব কাজিনরা মিলে রং খেলছিলাম এমন সময় হঠাৎ করে কোথা থেকে যেন ঈশান এসে আমার হাত ধরে সেখান থেকে টেনে নিয়ে যাওয়া শুরু করল। ঈশান ভাইয়া আমার হাতটা এতো শক্ত করে ধরেছে যে,আমি খুব ব্যাথা পাচ্ছি।মনে হচ্ছে এখনি ভেঙে যাবে। তাই আমি ঈশান ভাইয়ের উদ্দ্যশে কাঁদো কাঁদো কন্ঠে বলে উঠলাম,
---"ঈশান ভাইয়া!কোথায় নিয়ে যাচ্ছো? প্লীজ হাতটা ছাড়ো। ব্যাথা পাচ্ছি তো।"
কিন্তু আমার কথাটা হয়তো তার কান অব্দি পৌঁছালো না। সে আগে মতোই আমাকে টেনে সিড়ির দিকে নিয়ে যেতে লাগলেন কিন্তু আমি আর সহ্য করলাম না। আমি ঝটকা মেরে তার হাত থেকে নিজের হাত ছাড়িয়ে নিলাম। তার পর কর্কশ গলায় বলে উঠলাম,
---"কি পেয়েছো তুমি আমাকে? নিজের যা ইচ্ছে হবে আমার সাথে তাই করবে? আমি তো কখনো তোমার কোন কাজে বাধা দিতে আসি না। তাহলে তুমি কেন আসো?"
এমনিতেই ঈশান রেগে ছিল। তা উপর আমার কথা শুনে তার রাগ আরো বেড়ে গেল। সে আমাকে পাশের দেওয়ালের সাথে শক্ত করে চেপে ধরে দাঁতে দাঁত চেপে বললো,
---"আমি ধরলেই তো তোর ফোস্কা পড়ে। তাই না? আর নিজে যখন ছেলেদের সাথে ঘড়াঘড়ি করিস তখন?"
ঈশান ভাইয়ার কথা শুনে আমি রাগী কন্ঠে বললাম,
---" মাইন্ড ইউর ল্যাঙ্গুয়েজ। কি যা তা বলছো তুমি!"
---"ওহ্,যা তা। আমি এখন যা তা হয়ে গেলাম তাই না? আলভি যখন ধরে তখন তো খুব মজা নিস। আর আমি বললেই দোষ!"
ঈশান ভাইয়ার কথা শুনে আমি হতবাক। এ কোন ঈশান ভাইয়াকে দেখছি আমি। ঈশান ভাইয়ার মতো মানুষের মধ্যেও যে এমন কুৎসিত একটা পার্সোনালিটি লুকিয়ে থাকতে পারে আমি কোন দিন ভাবতেও পারিনি। আমি ঈশান ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে বললাম,
---"আমার যা ইচ্ছে হবে তাই করবো তাতে তোমার কি?হু আর ইউ টু টেল এবাউট মি?"
ঈশান ভাইয়া রেগে বললো,
---"দেখতে চাস আমি কে?"
কথাটা বলেই ঈশান ভাইয়া আমার ঠোঁট জোড়া নিজের দখলে নিয়ে নিলো। তার সব রাগ এখন আমার ঠোঁটের উপর ঝাড়ছে। আমি ব্যাথায় কুঁকড়ে যাচ্ছি অথচ সেদিকে তার কোন খেয়াল নেই। নিদারুণ যন্ত্রনায় নিজেকে ছাড়াতে ব্যর্থ হয়ে চোখ বন্ধ করে খিচে পাথরের মতো দাঁড়িয়ে রইলাম আমি। কিন্তু একটু পর যা হলো তার জন্য আমি মোটেও প্রস্তুত ছিলাম না। হঠাৎ করে ঈশান ভাইয়া আমার কোমড় জড়িয়ে ধরে পাগলের মত আমার ঠোঁটে কিস করতে লাগলেন। উনার স্পর্শে আমি বারবার কেঁপে উঠছি। আমি আর সহ্য না করতে পেরে নিজের শক্তি দিয়ে তাকে ধাক্কা মারলাম। কিন্তু তবুও সামনের শক্তিটাকে এক বিন্দু ঠলাতে পারলাম দেখে হঠাৎ করে ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলাম আমি। আমার কান্নার আওয়াজ ঈশান ভাইয়ার কানে যেতেই ঈশান ভাইয়া আমাকে ছেড়ে দিলো। তার পর সে আমার অশ্রুমাখা চোখের দিকে একবার তাকিয়ে ঘটঘট করে সেখান থেকে চলে গেল। আর আমি ফ্লোরে ধপ করে বসে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদতে লাগলাম। এটা তো উনার অধিকার ছিল। তাহলে আমি কেন কাঁদছি আমি নিজেও জানি না!
"
চলবে
#তোমার নামের রৌদ্দুরে❤️
:jisan Mahmud
#সূচনা পর্ব
দ্বিতীয় পর্বের লিংক কমেন্ট বক্স এ দেওয়া হয়েছে 💬👇
নেক্সট পার্ট সবার আগে পেতে এখনি আমাদের পেইজ ফলো করে রাখুন :