29/06/2024
প্রখ্যাত সাংবাদিক গিয়াস কামাল চৌধুরীর স্মৃতিকথাঃ-
:-সৈয়দ মাহফুজ-উন নবী খোকন এর স্মৃতি চারণ ঃ -
ভয়েস অব আমেরিকা খ্যাত উপমহাদেশের প্রখ্যাত সাংবাদিক গিয়াস কামাল চৌধুরী বাংলাদেশ সংবাদ সংস্হার স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট , ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন, ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের ও নেতৃত্ব দেন। বঙ্গবন্ধুর সরকার আমলে ১৯৭৩-৭৪ অর্থসালে দক্ষিণ চট্রগ্রামে সাংবাদিক সমিতি ও সাতকানিয়া প্রেসক্লাবে তৎকালিন তথ্য ও বেতার মন্ত্রীকে আমন্ত্রন জানাতে ঢাকায় যান প্রবীণ সাংবাদিক সৈয়দ মোস্তফা জামাল ভাই। ঢাকায় তিনি চেষ্টা চালিয়ে পরে জামালভাই আমাকে ডাকযোগে পত্র লেখেন। তিনি অনেক চেষ্টার পরে ও কেন পারেন নি, তা পত্রে লেখেন। জামাল ভাইয়ের পত্র পেয়ে চুপটি মেরে বসে না থেকে ট্রেনযোগে ঢাকায় ছুটলাম। তখন আমি ঢাকার মতিঝিল বাংলাদেশ অবজার্ভার হাউসের দৈনিক পূর্বদেশ, দৈনিক আজাদীর দক্ষিণ চট্রগ্রাম মহকুমা প্রতিনিধি এবং তখন জামালভাই দৈনিক ইওেফাকের দক্ষিণ চট্রগ্রাম প্রতিনিধি। এখানে একটু সৈয়দ মোস্তফা জামাল ভাই কে একটু পরিচয় করিয়ে দিতে চাই। তিনি ঢাকায় তৎকালিন দৈনিক পয়গাম পত্রিকার মফঃস্বল সম্পাদক ছিলেন। একই সাথে শেখ ফজলুল হক মণি, গোলাম সরওয়ার সাহেব সহ আরো অনেকেই ছিলেন। জামালভাই দৈনিক আজাদীর ঢাকাস্থ প্রতিনিধি ছিলেন। ছিলেন বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন এর এসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি জেনারেল। জাতীয় প্রেসক্লাবে জামালভাইসহ শ্রদ্বেয় গিয়াস কামাল চৌধুরীর সাথে দেখাকরে বিষয়টি জানতে চেষ্টা করি। পটিয়ার তৎকালিন শিল্প প্রতিমন্ত্রী অধ্যাপক নুরুল ইসলাম সাহেব আপওি জানিয়েছিলেন বলে জানতে পারলাম। গিয়াস কামালভাইকে বললাম কেন আপনি প্রতিবাদ করেন নি। তিনি হেসে আমাকে শান্ত করে তার পরামর্শে জামালভাইসহ মন্ত্রীর সাথে দেখা করতে যাই। মন্ত্রী পরদিন চট্রগ্রাম এর রাউজানে শিক্ষা সম্মেলনে যাবেন আমাদের ও সাথে যেতে বললেন। অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামানের সভাপতিত্বে অনুষ্টানে প্রধান অতিথি তথ্যও বেতার প্রতিমন্ত্রী তাহেরউদ্দিন ঠাকুর। পরে দৈনিক আজাদীর সম্পাদক বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব সাদা মনের সৎ নিষ্টাবান মানুষ শ্রদ্বেয় অধ্যাপক মোহাম্মদ খালেদ সাহেবের বাড়িতে দুপুরে খেতে বসার পূর্বে মন্ত্রী মহোদয়ের সাথে আমার ভিতরে জমে থাকা ক্ষোভ প্রকাশ করে বললাম আপনি ঢাকা থেকে এ পযর্ন্ত আসারপরও কিছু বলছেন না কেন? ঠিক আছে তাহলে আমরা চলে যাই। তিনি হেসে আমাকে পিট চাপড়ে্ বললেন যাবোতো, আগে খেয়ে নাও। আমি বললাম খাবোনা সরাসরি বলুন যাবেন কিনা, গেলে কখন যাবেন? তিনি বললেন তোমার ভাবী ও যাবেন ( মাননীয় মন্ত্রীর সহধর্মিনী) তখন আমি সেখানে তৎকালিন জেলা প্রশাসক জনাব এবি চৌধুরীকে জানালাম। জামালভাইকে বললাম চলেন মন্ত্রী মহোদয় আমাকে কথা দিয়েছেন যাবেন । মন্ত্রীর সাথে খাবার পর অামরা প্রস্তুতি নিতে চলে অাসি। এসেই তৎকালিন TTDC (Thana Traning & Development Center) বর্ওমান উপজেলা পরিষদ হল অনুমতি নিয়ে সুধীজনদের আমন্ত্রন করলাম। সাথে মাইকিং ও করা হয়। একই দিন বিকেলে সাতকানিয়ার টাওন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে তৎকালিন রাজনৈতিক দলের যুব সংগঠনের সম্মেলনের ঘোষণা মাইকে প্রচার করা হলেও দেখা গেল তারা আমাদের হল স্টেজ মাইক দখল করে আমাদের ব্যানারের উপর ব্যানার টাঙ্গিয়ে দিয়েছে। আমি প্রতিবাদ করলাম। যেহেতু এটা সাংবাদিকদের অনুষ্টানের জন্য অনুমতি নেয়া হয়েছে। তারা শুনলনা। আমি আমাদের ঢাকা চট্রগ্রাম থেকে আসা সাংবাদিক নেতৃবৃন্দকে, সুধীজনদের বিশেষ করে চট্রগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি নুরুল ইসলাম, অধ্যাপক মো খালেদ, সাতকানিয়া সরকারি কলেজের তৎকালিন ভাইস প্রিন্সিপ্যাল শ্রী অসিত কুমার লালা,অধ্যাপক আলী হায়দার সহ সকলকে অন্য কক্ষে বসানোর ব্যবস্হা করি। গিয়াস কামাল চৌধুরী আসার কথা থাকলেও তিনি আসতে পারেননি। যুব নেতারা আমার কাছে জিজ্ঞাসা করলেন মন্ত্রী কখন আসবে। উওরে আমি বললাম আপনাদের সম্মেলনেই মন্ত্রী আসবেন বলেই মাইকিং করলেন,আমাদের মন্চ দখল করলেন আবার আমাকে জিজ্ঞাসা করলেন কেন? আমি উপজেলার গেইটের দিকে পায়চারি করছিলাম ঠিক তখন পুলিশ সাইরেন বাজিয়ে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা উডিয়ে মন্ত্রীর গাড়ীর বহর এগিয়ে আসতে দেখি । ঠিক মন্ত্রীর গাড়ী আমার সামনে দাড়িঁয়ে গেল। তখন মন্ত্রীকে নিজের ক্ষোভ যাড়লাম। মন্ত্রী আমার গালে একটু মৃদুচড় আর গালটা টেনে দিয়ে দখলকারি যুবলীগের মঞ্চে উঠে পড়েন। কিছুক্ষন পর মাইকে ঘোষণা এলো তাদের প্রধান অতিথি মন্ত্রী মহোদয় বক্তব্য রাখবেন। মন্ত্রী মহোদয় ঘোষককে ডেকে বললেন, " আমি বক্তব্য রাখবোনা। আমিতো আপনাদের অনুষ্টানে আসিনি , এসেছি সাংবাদিক বন্ধুদের অনুষ্টানে। পরে তাদের অনুষ্টান শেষ করলে আমরা চট্রগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি ( Chittagong Union of Journalist ) জনাব নুরুল ইসলামেরর সভাপতিত্বে তথ্য ও বেতার মন্ত্রী প্রধান অতিথির বক্তব্যদেন। পরে গিয়াস কামাল চৌধুরীকে তার ঢাকার বাসায় ফোন করে জানাই। দৈনিক পূর্বকোণ এর সিনিয়র সাংবাদিক জনাব কামরুল ইসলাম এখনো টাট্রা করে সবাইকে বলেন তথ্যমন্ত্রী মাহফুজ-উন নবী খোকনের গাল টেনে দিয়েছিলেন। তথ্যমন্ত্রী নিজেও দৈনিক ইওেফাকের সংসদ রিপোর্টার ছিলেন। সাংবাদিক হওয়ার কারনে আমাকে তিনি খুবই স্নেহ করতেন। সাংবাদিক বন্ধুরা আমার বিরুদ্বে অভিযোগ ছিল যে, আমি জাতীয় প্রেসক্লাবে গিয়াস কামাল চৌধুরীর সাথে জগড়া করেছি কেন? জবাবে বললাম তিনি অর্থ্যৎ শ্রদ্বেয় গিয়াস কামাল চৌধুরী কি আপনাদের কাছে নালিশ করেছেন? আমার সাথে ভালো সম্পর্ক উনার। এখানে সম্পর্কের কোন ছিড় ধরানো যাবেনা ভাই। সাংবাদিকদের কেন্দ্রীয় কমিঠির নেতৃত্বে আমি থাকা কালে শ্রী নির্মল সেন,গিয়াস কামাল চৌধুরী, আহমেদ হুমাইয়ুন, রিয়াজ উদ্দিন আহমদ,হাবিবুর রহমান মিলন,সহ সকলের সাথে আমার সুসম্পর্ক বিদ্বমান ছিল। বিশেষ করে শ্রদ্বেয় গিয়াস কামাল চৌধুরীর বাসা, নির্মল সেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর তথ্য উপদেষ্টা শ্রদ্বেয় ইকবাল সোবহান চৌধুরীর বাসায় যাতায়ত ছিল সবচে বেশি। জাতীয় প্রেসক্লাবে একুশে অনুষ্টানে ভারত- বাংলাদেশের শিল্পীরা আসছিলেন। রাত প্রায়১১ টা ১০ মিনিট। জাতীয় প্রেসক্লাব থেকে একুশে রেলী বের হয়ে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার অভিমুখে চলছিল। গিয়াস কামাল ভাই রের্লীর অগ্রভাগে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। তখন আমি ওনার পাশে। হটাৎ তিনি আমাকে জোরে ধরতে বলেন ""আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙাগানো একুশে ফেব্ররুয়ারী.....। আস্তে বলায় আমার পায়ে গুতুনি মারলেন। সে থেকে শহীদ মিনার পযর্ন্ত ওনার কথা মত চলেছি। বাসায় গেলে তো নাছুড়বান্দা। নাখেয়ে আসতেই দেবেন না। ঢাকায় বিএফইউজে,ডিইউজে সাংবাদিক সমিতির যৌথ সমাবেশও মিছিলে আহমেদ হুমায়ুন, নির্মল সেন,রিয়াজভাই,গিয়াস কামাল ভাই,সফিউদ্দিন ভাই আমরা একসাথে মিছিলে ছিলাম। তখন দৈনিক বাংলা, ইওেফাক, সংবাদ ইংরেজি টাইমস্ সহ বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় অগভাগে নেতৃবৃন্দের সাথে আমার ছবিও ছাপা হয়। গিয়াসভাই আমাকে শ্লোগান ধরতে বলেন " তৈল,চাল ডালের দাম... কমাতে হবে এ শ্লোগান ধরতে উনি বার বার বলতেন রাগের সুরে। শ্লোগান ধরার সময় শ্রদ্বেয় গিয়াসভাই এক বিশেষ পোজ দিয়ে দাড়িয়ে লাফ দিতেন। ঢাকায় জাতীয় যাদুঘরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এর প্রাণীতত্ব সমিতি আয়োজিত সেমিনারে আমাকে আমন্ত্রন জানানো হয়। প্রধান অতিথি ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয় মন্জুরী কমিশনের চেয়ারম্যান। মূল প্রবন্ধ ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর ডক্টর জাকের হোসেন। আলোচক ছিলেন শ্রদ্বেয় গিয়াস কামাল চৌধুরী,ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রাণী তত্ব বিভাগের প্রফেসর ডক্টর সোহরাব আলী নুর জাহান সরকার সহ আমি এবং যাদুঘরের পরিচালক। এখনো মনে আছে আমার। আমাকে খুব স্নেহ করে গিয়াসভাই আমাকে সম্মোধন করলেন" ""আমার নেতা চট্রগ্রামের সাংবাদিক "" বলে। বাংলাদেশ সংবাদ সংস্হার নিউজে আমার নামটা উনার আগে দিয়েছেন তিনি এ ভাবে Mr.Syed Mahfuzunnabi khokan, a journalist from chittagong and Geas kamal Chowdhury Special Correspondent Bss. বাংলাদেশ সংবাদ সংস্হা ( বাসস) ঢাকার পুরানা পল্টনে অফিসে প্রবেশ করে ঠিক মাঝামাঝি স্হানে তিনি বসতেন। অফিসে এসেই টাইপ মেশিন নিয়ে দ্রুত নিউজ করে ফেলতেন। ফেনীর লোকজন অাসলে খুব খুশী হতেন। তিনি সকলের সাথে কথা বলতেন মন খুলে প্রাণ খুলে। উনার বাড়ি কোথায় কেউ জিজ্ঞাসা করলে বলে উটতেন "" অামার বাড়ী মাধ্যের লাইন ""। ( অর্থাৎ তিনি বুঝাতে চাইতেন নোয়াখালী থেকে মধ্যের ট্রেনলাইন) । বিএফইউজে'র নির্বাচন চট্রগ্রামে অনুষ্টিত হয় একবার। তখন সভাপতি পদে প্রার্থী ছিলেন দৈনিক বাংলার আহমদ হুমাইয়ুন ও দৈনিক ইত্তেফাক এর হাবীবুর রহমান মিলন। হাবীবুর রহমান মিলন এর প্যানেলে গিয়াসকামালভাই সদস্য প্রার্থী । তিনিই সে প্যানেলের একমাত্র সদস্য নির্বাচিত হন। অধুনালুপ্ত ঢাকার দৈনিক পূর্বদেশের পরে দৈনিক বাংলারবাণীর নাজিমউদ্দিন ভাই নির্বাচনে সদস্য প্রার্থী হয়েও চট্রগ্রাম আসতে না পারায় ওনার প্রচারপত্র আমার অর্থে করে দেই। তখন ঢাকা থেকে আসা সাংবাদিকদের হোটেল শাহজাহান ও কেসিদে রোড়ে একটি হোটেলে রাখা হয়। সহ-সভাপতি প্রার্থী ছিলেন চট্রগ্রামের ডেইলী লাইফএর ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক জনাব নুর সাঈদ। তার পক্ষে প্রচারনায় ছিলেন ডেইলি লাইফের সাংবাদিক নাসিরভাই। তখন আমি ডেইলি মনিং পোষ্টের চট্রগ্রাম প্রতিনিধি ছিলাম। সিইউজের মেম্বারশীপ নেইনি। মনিং পোষ্ট এর পর ছেড়ে দিয়েছিলাম। সে সময় মনিং পোষ্টে কক্সবাজার বাড়ি প্রবীণ সাংবাদিক সন্জয় বড়ুয়া ও ছিলেন। শ্রদ্বেয় গিয়াস কামাল চৌধুরীর ইন্তেকালের পর ঢাকার গুলশানে একটি অনুষ্টানে শ্রদ্বেয় গিয়াস কামাল চৌধুরীর বড় মেয়ে ওছোট মেয়ের দেখা হয় আমার সাথে। তারা গিয়াসভাই কে মরনওোর সম্মাননা নেয়ার জন্য বিদেশ থেকে আসেন তার কন্যা।
**********************************************.......... চলবে
দীর্ঘদিন রোগভোগের পর ২০১৩ সালের ২৬ অক্টোবর তিনি ইন্তেকাল করেন।
সাংবাদিক সমাজের কিংবদন্তিতুল্য ও মানবতাবাদী মরহুম এ নেতার আত্মার মাগফিরাত কামনায় সবার কাছে দোয়া চাচ্ছি। মহান আল্লাহ মরহুমকে জান্নাত নসিব করুন, আমিন। শেষ হয়নি। .... চলবে