05/03/2016
তানোর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ডাক্তার সহ ৪৩ পদ শূন্য ব্যাহত হচ্ছে স্বাস্ব্য সেবা
অনলাইন ডেস্ক |
নিজস্ব প্রতিবেদক : বাইরে যেমন নোংরা ও বখাটের আড্ডা, ভেতরেও তেমনই অনিয়ম ও দূর্নীতিতে ভরপুর। রাজশাহীর তানোর উপজেলা স্বাস্ব্য কমপ্লেক্সে বেহাল দশার ফলে উপজেলার প্রায় সাড়ে ৩ লক্ষর বেশি মানুষ চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। সরকার অনুমোদিত ১২জন মেডিকেল অফিসারসহ মোট ৪৩টি পদ শূন্য রয়েছে। ফলে দীর্ঘদিন ধরে চিকিৎসক সংকট, চিকিৎসা সামগ্রী, প্রয়োজনীয় অবকাঠামো, কারিগরি উপকরণের অভাব ও ৩১ শয্যা হাসপাতাল থেকে ৫০ শয্যার হাসপাতাল ভবনের অবকাঠামো নির্মাণের পরও শুধুমাত্র উদ্বোধনের অভাবে চালু হ”েছনা ৫০শয্যার হাসপাতালটি।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে মোট চিকিৎসকের পদ ১৭টি। যার ১২টি চিকিৎসকের পদই শূন্য রয়েছে দীর্ঘদিন যাবৎ। এরমধ্যে আবার কর্মরত চিকিৎসকদের ৮০ ভাগ থাকেন অনুপসি’ত। এছাড়াও অন্যান্য কর্মকর্তা, নার্স, ৩য় ও ৪র্থ শ্রেণীর ৩১টি পদ শূন্য রয়েছে। উপকরণ থাকার পরেও সময়মতো প্যাথলজি পরীক্ষা হয় না, ১টি এ্যাম্বুলেন্সের রয়েছে তবুও স্থানীয় মাইকো মালিকদের কাছে অনেকটা অসহায় এ উপজেলার মানুষ। এখানে এক্স-রে মেশিন, ইসিজি মেশিন, জেনারেটর, ক্যালোরিমিটার ও মাইক্রোস্কোপ দীর্ঘদিন না চালিয়ে সেগুলোর অচল অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে।
ডাক্তারদের পরিবর্তে মূলত চিকিৎসা দেন উপসহকারী কমিউনিটি মেডিক্যাল অফিসাররা (মেডিক্যাল এসিসটেন্ট)। কিন্তু দূর-দূরত্ব থেকে আগত রোগীরা তাদের দেয়া চিকিৎসায় তুষ্ট হতে পারছেন না। শল্য চিকিৎসক (সার্জিক্যাল) এবং অ্যানেসথেসিয়া (অচেতন বিশেষজ্ঞ) চিকিৎসক না থাকায় অস্ত্রোপচারও (অপারেশন) এখানে হয় না। তার মধ্যে হাসপাতালের প্রধানসহ কোন ডাক্তার হাসপাতাল ক্যাম্পাসে থাকেন না বললেই চলে। সবাই বাইরে থেকে আসা-যাওয়া করেন। এছাড়া এখানে আরএমও’র পদসহ সার্জারী, মেডিসিন ও অ্যানাস্থেসিয়া ডাক্তারের পদ শূন্য রয়েছে। শুধু তাই নয় এ হাসপাতালে যে কয়েকজন বিশেষজ্ঞ ডাক্তার আছেন তারাও সপ্তাহে ২/৩ দিন হাসপাতালে আসেন এবং বাকি দিনগুলোতে স্থানীয়ভাবে বা শহরের চেম্বার এবং ক্লিনিকে রোগী দেখে থাকেন বলে একটি সূত্রে জানা যায়।
তার ফলে হাসপাতালটির জন্য বরাদ্দকৃত যন্ত্রপাতি বাক্সবন্দি হয়ে পড়ে আছে দীর্ঘদিন যাবৎ। হাসপাতালের চারিদিকে ব্রিচিং পাউডার ছিটানোর কথা থাকলেও তা মোটেও করা হয় না। হাসপাতালের বাইরের এলাকায় সন্ধ্যার পরেই মাদকসেবীদের আনাগোনা লক্ষ্য করার মতো। নিরাপত্তা বিষয়েও কোনো ভ্রূক্ষেপ নেই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের।
সন্ধ্যার পর বীভৎস গন্ধের সাথে মাদকের গন্ধও পাওয়া যায় বলে অভিযোগ রয়েছে। হাসপাতালটির দক্ষিণ ও পশ্চিম পার্শ্বের সদ্য নির্মাণকৃত সীমানা প্রাচীর ভেঙ্গে হাসপাতালটির ভিতর দিয়েই প্রতিনিয়ত ছোট-বড় সব ধরনের যান চলাচল করছে এমনকি রোগীরা সরকারী ঔষধ পান না বলে অভিযোগ থাকলেও কর্তৃপক্ষ তা মানতে নারাজ। আবার অনেকক্ষেত্রে হাসপাতালটিতে স্থানীয় প্রভাবশালীদের দৌরাত্ম চরমে। ফলে চরম অব্যবস্থাপনায় ৫০ শয্যার এ হাসপাতালটি এখন নিজেই রোগী হয়ে গেছেন।
নাম প্রকাশে অনি”ছুক এক রোগী জানান, এখানে ৩ দিন ধরে চিকিৎসা নিচ্ছি। মনে হয়, জীবনে কোনো বড় পাপ করেছি। তা না হলে এই রকম হাসপাতালে আমাকে থাকতে হতো না। এর চাইতে জেল খাটা ভালো। এক কথায় এখানকার এত খারাপ অবস্থা বলে শেষ করার মতো নয়।
এছাড়া এ উপজেলায় গ্রাম পর্যায়ে মোট ১৯টি কমিউনিটি ক্লিনিক চালু থাকলেও অধিকাংশ ক্লিনিক দুপুরের পরে আর চালু থাকে না। যদিও ক্লিনিকগুলো সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৩টা পর্যন্ত খোলা রাখার নিয়ম রয়েছে। ডাক্তার সংকট, আবাসিক চিকিৎসক না থাকা এবং ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের তদারকির অভাবে সাধারণ হাজার হাজার মানুষ সুচিকিৎসা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
উপজেলার সাতটি ইউনিয়নের মধ্যে মুন্ডুমালা, তালন্দ, কলমা, সরনজাই, কামারগাঁ ইউনিয়ন উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্রে মেডিকেল অফিসারের পদও শূন্য রয়েছে।
এনিয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তার দায়িত্বরত অফিসার ডা. মনোয়ার তারিক সাবু জানান, এ হাসপাতালে ৫০ শয্যায় উন্নীত হলেও তা এখনও উদ্বোধনের অভাবে চালু করা সম্ভব হয়নি। বেশ কয়েকবার চিকিৎসকসহ বিভিন্ন সংকটের কথা উল্লেখ করে আবেদন করা হয়েছে বলে দাবি করেন তিনি। তবে, সংকটের মধ্যেও সাধ্যমতো সর্বোত্তম সেবা দেয়ার চেষ্টা অব্যাহত আছে বলে জানান তিনি।