29/06/2024
🗣পেলে, ম্যারাডোনা নাকি সামাদ !?
প্রায় আট দশক আগের ঘটনা।
পেলে-ম্যারাডোনার জন্মও হয়নি তখন।
কথিত আছে যে, সর্বভারতীয় ফুটবল দল লন্ডনে গেছে লন্ডনের ফুটবল দলের বিরুদ্ধে ফুটবল খেলার জন্য, সে দলে রয়েছেন সামাদ নামে একজন ফুটবলার।
লন্ডনীরা প্রথমে ভারতীয় দলের সঙ্গে খেলতে চায় নি,
নাক সিঁটকিয়েছে। পড়ে যখন শুনলো সামাদ নামের
একজন ভারতীয় খেলোয়ার নাকি চ্যালেঞ্জ দিয়েছে যে সে গুণে গুণে একহালি গোল করবে লন্ডনীদের বিরুদ্ধে, তখন সেই খেলোয়ারটিকে নাকানি চুবানী খাওয়ানোর উদ্দ্যশে তারা খেলতে রাজী হয়।
খেলা শুরু হয়েছে, মাঠ লোকে লোকারন্য। সামাদ নামের সেই নেটিভ ইন্ডিয়ানটি কিরকম নাস্তানাবুদ হয় তা দেখার জন্য দলে দলে সাহেব মেমরা মাঠে হাজির হয়েছে। কিন্তু সামাদ সাহেবের খেলায় তেমন মনোযোগ নেই, তিনি এক পোয়া বাদাম কিনে কুট কুট করে তা চিবুচ্ছেন।
সাহেবদের দল ভারতীয় দলকে কোনঠাসা করে
ফেলেছে, কিন্তু তবুও সামাদ সাহেবের কোন ভ্রুক্ষেপ নেই। তখন দলের সবাই সামাদ সাহেবকে অনেক কাকুতি মিনতি করতে লাগলো, অবশেষে সামাদ সাহেব বল ধরলেন।
একে একে সবাইকে কাটিয়ে গোলে শট নিলেন, কিন্তু গোল হলো না, বল পোষ্টে লেগে ফিরে এলো।
সামাদ তখন রেফারীকে বললেন, ক্রস বারের হাইট ঠিক নেই, মেপে দেখুন। রেফারী ফিতে দিয়ে মেপে
দেখেন তাজ্জব ব্যাপার! সত্যি ক্রস বারের হাইট চার
ইঞ্চি কম। রেফারী সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে গোল ডিক্লেয়ার করলেন।
এরপর গুণে গুণে আরও তিনটি গোল করলেন।
সাহেবরা গুণের কদর করতে জানে, সামাদ সাহেবকে তারা ফুটবল যাদুকর উপাধি প্রদান করলো। ফুটবল জাদুকর সামাদ।
যিনি কিনা পেলে, ম্যারাডোনা, ষ্টেফানো, গারিঞ্জা, বেকেনবাওয়ার, পুস্কাসের বহু বছর আগেই ফুটবলকে দান করেছিলেন শৈল্পিকতা, আর নৈপুণ্যতা। মুলত তার একক নৈপুণ্যে সর্বভারতীয় ফুটবল টিম তৎকালীন গ্রেট ব্রিটেনের মত শক্তিশালী টিমকে ৪-১ গোলে আর ইউরোপীয় টিমকে ২-১ গোলে পরাজিত করে। হতবাক হয়ে যায় পুরো ইউরোপের ফুটবল বোদ্ধারা।
তার বর্ণাঢ্য ফুটবল ক্যারিয়ারের সূচনা হয় কিন্তু রংপুরের তাজ ক্লাবের হয়ে। সেখান থেকে তিনি যোগ দেন কলকাতার এরিয়েন্স ক্লাবে। পরবর্তীতে তিনি ইষ্ট বেঙ্গল রেলওয়ে ক্লাব, কোলকাতা মোহনবাগান, ভিক্টোরিয়া স্পোর্টিং ক্লাবের হয়েও খেলেছেন।
ক্যারিয়ারের শেষের দিকে তিনি কোলকাতা মোহমেডানের হয়ে কিছুদিন খেলেছেন।
আমাদের দেশের মানুষেরা পেলে চেনে, ম্যারাডোনা চেনে, হালের মেসি রোনাল্ডো, নেইমারকে চেনে, কিন্তু
দেশের গর্ব সামাদ জাদুকরকে চেনে না। ভাল মত জানে না। আমি নিজেও চিনতাম না। অবশ্য দোষ দিয়েও লাভ নেই।
বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন যখন জানানোর ব্যাবস্থা করে না, পর্যাপ্ত সুযোগ সৃষ্টি করে না, তখন
সবাই জানবে কিভাবে?
বিহারের পুর্ণিয়ায় জন্ম গ্রহনকারী এই কৃতি মানুষটি
সাতচল্লিশে ভারত বিভক্তির পর কলকাতা
থেকে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে চলে এসেছিলেন। তখন বোধ হয় বয়সজনিত কারনে আর খেলতেন না, সরকার তাঁকে রেল বিভাগে একটি চাকুরি প্রদান করেছিলো। তিনি থাকতেন দিনাজপুরের পার্বতীপুরে, সেখানেই মৃত্য হয়েছিল এই কিংবদন্তি ফুটবলারের।
-( #সংগৃহীত)