01/06/2024
باب فَضْلِ الْوُضُوءِ، وَالْغُرُّ الْمُحَجَّلُونَ مِنْ آثَارِ الْوُضُوءِ
حَدَّثَنَا يَحْيَى بْنُ بُكَيْرٍ، قَالَ حَدَّثَنَا اللَّيْثُ، عَنْ خَالِدٍ، عَنْ سَعِيدِ بْنِ أَبِي هِلاَلٍ، عَنْ نُعَيْمٍ الْمُجْمِرِ، قَالَ رَقِيتُ مَعَ أَبِي هُرَيْرَةَ عَلَى ظَهْرِ الْمَسْجِدِ، فَتَوَضَّأَ فَقَالَ إِنِّي سَمِعْتُ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم يَقُولُ " إِنَّ أُمَّتِي يُدْعَوْنَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ غُرًّا مُحَجَّلِينَ مِنْ آثَارِ الْوُضُوءِ، فَمَنِ اسْتَطَاعَ مِنْكُمْ أَنْ يُطِيلَ غُرَّتَهُ فَلْيَفْعَلْ ".
حدثنا يحيى بن بكير، قال حدثنا الليث، عن خالد، عن سعيد بن أبي هلال، عن نعيم المجمر، قال رقيت مع أبي هريرة على ظهر المسجد، فتوضأ فقال إني سمعت النبي صلى الله عليه وسلم يقول " إن أمتي يدعون يوم القيامة غرا محجلين من آثار الوضوء، فمن استطاع منكم أن يطيل غرته فليفعل ".
৯৮। উযুর ফযীলত এবং উযুর প্রভাবে যাদের উযুর অঙ্গ—প্রত্যঙ্গ উজ্জ্বল হবে
১৩৬। ইয়াহয়া ইবনে বুকায়র (রাহঃ) .... নুআয়ম মুজমির (রাহঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ আমি আবু হুরায়রা (রাযিঃ) এর সঙ্গে মসজিদের ছাদে উঠলাম। তারপর তিনি উযু করে বললেনঃ আমি রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-কে বলতে শুনেছি, কিয়ামতের দিন আমার উম্মতকে এমন অবস্থায় ডাকা হবে যে, উযুর প্রভাবে তাদের হাত-পা ও মুখমণ্ডল থাকবে উজ্জ্বল। তাই তোমাদের মধ্যে যে এ উজ্জ্বলতা বাড়িয়ে নিতে পারে, সে যেন তা করে।
The Superiority Of Ablution. And Al-ghurr-ul-muhajjalun (the Parts Of The Body Of The Muslims Washed In Ablution Will Shine On The Day Of Ressurrection And The Angels Will Call Them By That Name) From The Traces Of Ablution
Narrated Nu`am Al-Mujmir: Once I went up the roof of the mosque, along with Abu Huraira. He perform ablution and said, "I heard the Prophet (sallallahu ’alaihi wa sallam) saying, "On the Day of Resurrection, my followers will be called "Al-Ghurr-ul- Muhajjalun" from the trace of ablution and whoever can increase the area of his radiance should do so (i.e. by performing ablution regularly).’ "
হাদীসের ব্যাখ্যা:
অযু: ভিতর-বাহিরের পবিত্রতা অর্জনের উপায়
অযু এমন একটি আমল, যা আমরা প্রতিদিন করি এবং একাধিকবার করি। পাঁচ ওয়াক্ত নামাযের জন্য অযুর প্রয়োজন হয়। তাই নামাযীমাত্রই অযুতে অভ্যস্ত থাকবে, তবে কখনো কখনো এই অভ্যস্ততা এক ধরনের যান্ত্রিকতাও তৈরি করে। সচেতন না হলে এর দ্বারা আমলের প্রাণময়তা বিনষ্ট হয়। অথচ কোনো আমলের পূর্ণ সুফল পেতে হলে তা জীবন্ত ও প্রাণবন্ত হওয়া চাই। শরীয়তের কোনো আমলই ছোট নয়। যেসব আমল বাহ্যিকদৃষ্টিতে সাধারণ বলে মনে হয়, তার দ্বারাও আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টি ও নৈকট্যের পথে অনেক দূর অগ্রসর হওয়া সম্ভব যদি তা যত্নের সঙ্গে করা হয়। এজন্য কোনো আমলকেই সামান্য মনে করা উচিত নয়।
সূরা মা-ইদার ষষ্ঠ আয়াতে অযুর বিধান উল্লেখিত হয়েছে। সঙ্গে গোসল ও তায়াম্মুমের বিধানও রয়েছে। আয়াতের শেষে আল্লাহ তাআলা বলেন, (তরজমা) ‘আল্লাহ তোমাদের উপর কোনো প্রকার কষ্ট আরোপ করতে চান না; বরং তিনি তোমাদেরকে পবিত্র করতে চান এবং তোমাদের প্রতি তাঁর অনুগ্রহ সম্পূর্ণ করতে চান, যাতে তোমরা শোকরগোযারী কর।’ হাদীস শরীফ থেকে বোঝা যায় যে, অযুর মাধ্যমে বাহ্যিক পবিত্রতার সঙ্গে অভ্যন্তরীণ পবিত্রতাও অর্জন করা যায়। অযু যেমন নামাযের চাবি তেমনি তা অন্তরের পবিত্রতা অর্জনেরও উপায়।
তদ্রূপ হাদীস শরীফে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে যে, অযুর দ্বারা আল্লাহ তাআলা বান্দার গুনাহ মাফ করবেন এবং কিয়ামত দিবসে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে উজ্জ্বলতা দান করবেন। কুরআন মজীদের উপরোক্ত আয়াত এবং নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর বিভিন্ন হাদীস থেকে খুব সহজেই অযুর গুরুত্ব ও ফযীলত অনুধাবন করা যায়। অন্য অনেক আমলের মতো অযুও চিন্তা ও সংকল্প এবং কথা ও কাজের সমষ্টি। অর্থাৎ এতে অর্থাৎ অযুতে যেমন অঙ্গপ্রত্যঙ্গের দ্বারা করণীয় কিছু বিষয় রয়েছে তেমনি চিন্তা ও সংকল্পগত কিছু বিষয়ও রয়েছে।
অযুর শুরু ও শেষে পাঠ করা উচিত এমন কিছু দুআও হাদীস শরীফে উল্লেখিত হয়েছে। অযুর এই বিষয়গুলো সম্পর্কে চিন্তা ভাবনা করলে বোঝা যায় যে, অযু শুধু বাহ্যিক পবিত্রতারই মাধ্যম নয়, ঈমানী প্রেরণা উজ্জীবিত করারও উপায়।
অযুতে পাঠ করার মতো একাধিক যিকর ও দুআ সহীহ হাদীসে এসেছে।
তার মধ্যে সংক্ষিপ্ত দু’টি দুআ উল্লেখ করছি।
১. ‘বিসমিল্লাহ ওয়ালহামদুলিল্লাহ’ এই দুআতে দু’টি বাক্য রয়েছে। ছোট বাক্য, তবে তা ইসলামের মৌলিক কিছু চিন্তাকে ধারণ করে। ‘বিসমিল্লাহ’ অর্থ আল্লাহর নামে শুরু করছি। হাদীস শরীফের শিক্ষা হচ্ছে, সকল গুরুত্বপূর্ণ কাজ ‘বিসমিল্লাহ’ বলে শুরু করবে। কেননা, সকল কল্যাণ একমাত্র আল্লাহরই হাতে এবং সকল অকল্যাণ থেকেও মুক্তি দানকারী তিনি। অতএব সফলতার জন্য যেমন তাঁর সাহায্য চাই তেমনি ব্যর্থতা থেকে বাঁচার জন্যও তাঁরই আশ্রয় নেওয়া কর্তব্য। দ্বিতীয় বাক্য ‘আলহামদুলিল্লাহ’ অর্থাৎ সকল প্রশংসা আল্লাহ তাআলার জন্য। আমাদের চিন্তা-শক্তি ও কর্মশক্তি আল্লাহ তাআলারই দান। নেক আমলের তাওফীকও আল্লাহ তাআলাই দান করেন। নেক আমলের পরিচয়, পন্থা ও পদ্ধতিও তিনিই নির্দেশ করেছেন। এগুলো বান্দার প্রতি তাঁর অনুগ্রহ। তাই যখন নেক আমলের সুযোগ হয় তখন মুমিনের কর্তব্য আল্লাহ তাআলার শোকরগোযারী করা। সূরা মাইদার যে আয়াত ইতিপূর্বে উল্লেখিত হয়েছে তার শেষ বাক্যটি ছিল, ‘যাতে তোমরা শোকরগোযারী কর।’ হাদীস শরীফে আছে যে, ‘আলহামদুলিল্লাহ’ হচ্ছে সর্বোত্তম শোকর।’ অতএব অযুর শুরুতে ‘বিসমিল্লাহ ওয়ালহামদুলিল্লাহ’ বলার দ্বারা কুরআন মজীদের আয়াতের উপর আমল হয়ে যায়।
২. অযুর শেষে ‘কালিমায়ে শাহাদাত’ পাঠ করার কথা আছে। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে উত্তম রূপে অযু করার পর বলে, ‘‘আশহাদু আল্লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহূ লা শারীকা লাহু ওয়া আশহাদু আন্না মুহাম্মাদান আবদুহূ ওয়া রাসূলুহ্’ তার জন্য জান্নাতের আটটি দরজাই খুলে দেওয়া হয়।’’-সহীহ মুসলিম জামে তিরমিযীর বর্ণনায় এ দুআর সঙ্গে আরো দু’টি বাক্য আছে। তা হচ্ছে, ‘আল্লাহুম্মাজ‘আলনী মিনাত তাওয়াবীন ওয়াজ‘আলনী মিনাল মুতাতহহিরীন।’ মুমিন যখন ইবাদতের প্রস্তুতি নিয়ে অযু করে এবং আল্লাহকে হাজির নাজির জেনে কালেমায়ে শাহাদাত উচ্চারণ করে তখন অবশ্যই তাঁর ঈমান তাজা হয় এবং আশা করা যায় যে, শিরক ও নাফরমানীর কালিমা থেকেও আল্লাহ তাআলা তাঁর অন্তরকে পূর্ণ পবিত্র করে দিবেন। এভাবে চিন্তা করলে প্রতীয়মান হয় যে, মাসনূন অযুতে এমন কিছু উপাদান রয়েছে যা বান্দার অন্তর-জগতকেও নূরানী করে দিতে পারে।
অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ গুনাহ থেকে পবিত্র হয় হযরত উছমান ইবনে আফফান রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘যে উত্তমরূপে অযু করে তার শরীর থেকে, এমনকি তার নখের নিচ থেকেও গুনাহসমূহ বের হয়ে যায়।-সহীহ বুখারী; সহীহ মুসলিম
হযরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, মুসলিম বান্দা (অথবা বলেছেন মুমিন বান্দা) যখন অযু করে-যখন সে মুখমণ্ডল ধৌত করে তখন পানির সঙ্গে (অথবা বলেছেন পানির শেষ ফোঁটার সঙ্গে) ওই সমস্ত- গুনাহ বের হয়ে যায়, যার দিকে সে দু’ চোখ দ্বারা তাকিয়েছিল। যখন সে দুই হাত ধৌত করে তখন পানির সঙ্গে (বা বলেছেন পানির শেষ ফোঁটার সঙ্গে) ওই সকল গুনাহ বের হয়ে যায়, যা সে হাত দ্বারা করেছিল। যখন সে দুই পা ধৌত করে তখন পানির সঙ্গে (বা পানির শেষ ফোটার সঙ্গে) ওই সকল গুনাহ বের হয়ে যায়, যার দিকে সে চলেছিল। ফলে সে গুনাহ থেকে পাকসাফ হয়ে যায়।-সহীহ মুসলিম
আল্লাহ তাআলা নিজ অনুগ্রহে গুনাহ-মাফীর অনেক উপায় নির্ধারণ করেছেন। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত বান্দা এই সুযোগ গ্রহণ করতে পারে এবং নিজেকে গুনাহ থেকে পাকসাফ করতে পারে। সবচেয়ে বড় উপায় হচ্ছে তওবা। এর দ্বারা সব ধরনের গুনাহ আল্লাহ তাআলা মাফ করেন। তদ্রূপ বিভিন্ন বিপদ-আপদ, কষ্ট ও যন্ত্রণাও মুমিন বান্দার গুনাহমাফীর অন্যতম উপায়। পার্থিব জীবনে সবাই কিছু না কিছু দুঃখ কষ্ট ভোগ করে থাকে, কিন্তু' মুমিনের সৌভাগ্য এই যে, সে কষ্টের সময় সবর করে। তখন আল্লাহ তাআলা তার সগীরা গুনাহসমূহ মাফ করে দেন। গুনাহমাফীর আরেকটি উপায় হচ্ছে নেক আমল। এর দ্বারাও আল্লাহ তাআলা সগীরা গুনাহ মাফ করে দেন।
হাদীস শরীফে আছে, এক সাহাবী রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকটে এসে বললেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ, আমি তো অমুক গুনাহ করে ফেলেছি, এখন আমার কী হবে? নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘আমাদের সঙ্গে নামায আদায় কর।’ সাহাবী নামায আদায় করলেন। ইতিমধ্যে কুরআন মজীদের এই আয়াত নাযিল হল, (তরজমা) আপনি নামায আদায় করুন দিবসের দুই প্রান্ত-ভাগে এবং রজনীর প্রথমাংশে। নিশ্চয়ই নেক আমলসমূহ দূর করে দেয় বদ আমলসমূহকে। এটা হল উপদেশ গ্রহণকারীদের জন্য উপদেশ।’ আল্লাহ তাআলার উপরন্তু অনুগ্রহ যে, তিনি বান্দার নেক আমলের বিনিময়ে বদ আমল ক্ষমা করে দেন। এই আয়াতে বিষয়টি মূলনীতি আকারে বলা হয়েছে, এর বিস্তারিত বিবরণ রয়েছে হাদীস শরীফে।
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এমন বহু আমলের কথা বলেছেন, যার মাধ্যমে গুনাহ মাফ হয়ে থাকে। ইতিপূর্বে যে দু’খানা হাদীস উল্লেখ করা হয়েছে তার মাধ্যমে জানা যাচ্ছে যে, ওইসব নেক আমলের মধ্যে অযুও অন্যতম। লক্ষণীয় বিষয় এই যে, উপরোক্ত ফযীলত তখনই পাওয়া যাবে যখন উত্তমরূপে অযু করা হবে। বলাবাহুল্য, ইখলাসের সঙ্গে মাসনূন তরীকায় যে অযু করা হয় তা-ই উত্তমরূপে সম্পাদিত অযু। কিয়ামতের দিন অযুর অঙ্গসমূহ ঝলমল করবে অযুর উপরোক্ত বৈশিষ্ট্য বিভিন্ন হাদীসে বর্ণিত হয়েছে। এটা হবে কিয়ামতের দিন উম্মতে মুহাম্মদীর বিশেষ পরিচয়। একটু চিন্তা করলে বোঝা যায় যে, অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ গুনাহ থেকে পবিত্র হওয়া এবং কিয়ামতের দিন তা ঝলমল করতে থাকার মধ্যে গভীর সামঞ্জস্য রয়েছে। কেননা, সেদিন গায়বের সকল পর্দা তুলে দেওয়া হবে এবং মানুষের কর্ম ও কর্মফল সবই সামনে এসে যাবে। অতএব সেদিন ওইসব অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের ঔজ্জ্বল্য প্রকাশিত হবে, যা দুনিয়াতে পাপের কালিমা থেকে মুক্ত হয়েছে। আর এই ঔজ্জ্বল্য দেখেই নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর উম্মতকে চিনে নিবেন। এ প্রসঙ্গে হাদীসের কিতাবে একটি ঈমান-উদ্দীপক ঘটনা রয়েছে। তা এই যে, একদিন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কবরস্থানে গেলেন এবং সেখানে সমাহিত মু’মিনদের লক্ষ করে বললেন, ‘আসসালামু আলাইকুম দারা কওমিম্ মু’মিনীন’ অর্থাৎ হে মুমিনদের আবাসভূমির অধিবাসীরা, তোমাদের প্রতি শান্তি- বর্ষিত হোক! লক্ষ করলে বোঝা যাবে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সামনে তাঁর দু’ শ্রেণীর উম্মত রয়েছেন : এক. যারা অতীত হয়েছেন এবং দুই. যারা তাঁর সঙ্গে রয়েছেন। এ অবস্থায় যদি তাঁর ভবিষ্যত উম্মতের কথা মনে পড়ে তবে আশ্চর্যের কিছু নেই। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবীদের লক্ষ করে বললেন, ‘আমার ইচ্ছে হচ্ছে, আমরা যদি আমাদের ভাইদের দেখতে পেতাম!’ উপস্থিত সাহাবীগণ আরয করলেন, ‘আল্লাহর রাসূল! আমরা কি আপনার ভাই নই?’ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘তোমরা হলে আমার সাহাবা, আমাদের ভাই তো তারা যারা এখনো (পৃথিবীতে) আসেনি।’ তখন সাহাবায়ে কেরাম আরজ করলেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ, আপনি (কিয়ামতের দিন) আপনার অনাগত ভাইদেরকে কীভাবে চিনবেন? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সরাসরি তার উত্তর না দিয়ে প্রশ্ন করলেন, বল তো, কারো যদি কপাল ও হাতে-পায়ে-সফেদ-চিহ্ন বিশিষ্ট কিছু ঘোড়া থাকে এবং সেগুলোকে অসংখ্য কালো রংয়ের ঘোড়ার মাঝে ছেড়ে দেওয়া হয়, সে কি তার ঘোড়াগুলো চিনে নিতে পারবে না? সাহাবায়ে কেরাম বললেন, ‘আল্লাহর রাসূল! সে তা পারবে।’ নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘কিয়ামতের দিন তাদের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গগুলোও অযুর কারণে ঝলমল করতে থাকবে। আর আমি হাউযে (কাউছারের) নিকটে তাদের পূর্বে গিয়ে অবস্থান করব।’ হাদীসটির সরল অর্থ হচ্ছে, অযুর কারণে বান্দার অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ঝলমল করতে থাকবে এবং তা হবে কিয়ামতের দিন উম্মতে মুহাম্মদীর বিশেষ পরিচয়। তবে চিন্তা করলে এখান থেকে আরো গভীর তাৎপর্য অনুধাবন করা যায়। কুরআন মজীদ ও সহীহ হাদীস থেকে জানা যায় যে, কিয়ামতের দিন মানুষ বিভিন্ন শ্রেণীতে বিভক্ত হবে। প্রত্যেক শ্রেণীর মানুষের থাকবে বিশেষ নিদর্শন, যার দ্বারা তার পরিচয় পাওয়া যাবে। তবে এই শ্রেণী-পরিচয় বর্ণ, ভাষা বা আঞ্চলিকতার ভিত্তিতে হবে না, হবে প্রত্যেকের নিজ নিজ কর্ম ও আমলের ভিত্তিতে। পৃথিবীতে যারা নেক আমল করেছে তারা নেক আমলের দ্বারা পরিচিত হবে আর যারা বদ আমল করেছে তারা পরিচিত হবে বদ আমলের পরিচয়ে। এভাবে আল্লাহ তাআলা নেককার মুমিনদেরকে সম্মানিত করবেন এবং কাফির-মুশরিকদেরকে লাঞ্ছিত করবেন। কিয়ামত-দিবসের এই সম্মান ও অসম্মান সম্পর্কে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর উম্মতকে সতর্ক করেছেন, যেন তারা ওই মহা দিবসের জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করে এবং যেসব নেক আমলের কারণে আল্লাহ তাআলা তাঁর বান্দাদেরকে বিশেষভাবে সম্মানিত করবেন তার প্রতি মনোযোগী ও যত্নবান হয়। অযুর ফযীলত বিষয়ক এই হাদীসটিকেও উপরোক্ত মূলনীতির সঙ্গে মিলিয়ে বোঝা উচিত। মোটকথা, হাদীস শরীফে অযুর যে গুরুত্ব, মাহাত্ম ও উপকারিতা বর্ণিত হয়েছে তা যদি আমরা স্মরণ রাখি তাহলে আশা করা যায়, বাহ্যিক পবিত্রতার পাশাপাশি আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে আভ্যন্তরীণ পবিত্রতা এবং আখিরাতের মর্যাদাও দান করবেন। আল্লাহ তাআলা নিজ ফযল ও করমে আমাদেরকে তাওফীক দান করুন। আমীন।
—সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৩৬ (আন্তর্জাতিক নং ১৩৬)
তাহকীক: তাহকীক নিষ্প্রয়োজন
হাদীসের বর্ননাকারী: হযরত আবু হুরায়রা রাযি. (মৃত্যু ৫৭/৫৮/৫৯ হিজরী)