25/09/2023
যারা এসএসসি ২০২৩ এর পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছো এবং ঢাকা সিটি কলেজে ভর্তি হতে আগ্রহী তাদের উদ্দেশ্যে কিছু কথা বলছি।
তোমাদের মধ্যে অনেকেই ঢাকার বাইরের বিভিন্ন জেলা থেকে আসবে। এদের মধ্যে অনেকের শুরুতে থাকা-খাওয়া নিয়ে সমস্যায় পড়তে হয়। থাকা-খাওয়ার জন্য এবং কলেজ থেকে কাছাকাছি ধানমন্ডির জিগাতলার আশে পাশে অনেক হোস্টেল আছে।
পড়ালেখা, থাকা-খাওয়ার সুন্দর পরিবেশের পাশাপাশি ভালো নিরাপত্তার ব্যবস্থাসহ অনেক হোস্টেল তোমরা পেয়ে যাবা। তোমাদের মধ্যে যারা বিভিন্ন জেলা থেকে পড়তে আসবা তাদের বেশিরভাগ হোস্টেলে থাকবা। হোস্টেলে থাকার ব্যাপারে তোমাদের কিছু আগাম সতর্কতা দিয়ে রাখি।
ধানমন্ডির জিগাতলার মধ্যে কিছু ভালো মানের হোস্টেলের মধ্যে প্রথমেই নাম আসবে ড্রিম স্কলার্স হোম ছাত্রাবাস।
এই হোস্টেলের দুটি ভিআইপি আর দুটি সাধারণ মিলে মোট চারটা শাখা আছে জিগাতলায়। প্রথম দেখাতে হোস্টেলের পরিবেশ, নিরাপত্তা, যোগাযোগ ব্যবস্থা,থাকা-খাওয়ার পরিবেশ, পড়াশোনার পরিবেশ অনেকের কাছে ভালো লাগবে।
প্রথমেই হোস্টেলের পরিচালনায় যারা আছে তারা শিক্ষার্থীদের আর তাদের অভিভাবকদের হোস্টেলের সুনাম, শৃঙ্খলা, পরিবেশ, পড়াশোনার ব্যাপারে কঠোরতা, নিরাপত্তা, থাকা-খাওয়া ইত্যাদি ব্যাপারে বলে সকলের মনোযোগ আকর্ষণ করবে, এক কথায় ব্রেইন ওয়াশ করবে।
অভিভাবকরাও দেখে তার সন্তানদের ভালোর জন্য এটাই বেস্ট। তখনই তারা ফাঁদে পড়ে। হোস্টেলে যারা থাকবে শুরুতেই তাদের থেকে দুই মাসের এডভান্স টাকার পাশাপাশি সার্ভিস চার্জ বাবদ বড় একটা টাকার অংশ নিয়ে নিবে।
এদের ভিআইপি হোস্টেলে থাকা-খাওয়াসহ মাসে সর্বনিম্ন ১৩০০০ থেকে সর্বোচ্চ ২১০০০ টাকা পর্যন্ত রুম অছে। আর সাধারণ শাখায় সর্বনিম্ন ৮০০০ থেকে ১২০০০ টাকার রুম আছে।
তো শুরুতেই সবার থেকে দুই মাসের এডভান্স সহ ৩০০০০ থেকে ৪০০০০ টাকার মতো বড় একটা অংশ নিয়ে নেয়। তারপর সবার সাথে চুক্তিবদ্ধ হয় যে, শেষের দুই মাস যখন থাকবা নাহ তখন শেষের দুই মাসের সাথে এডভান্সের টাকা সমন্বয় করা হবে, শেষের দুই মাসে টাকা দেওয়া লাগবে নাহ।
চুক্তিপত্রে ছোট করে লেখা থাকে বর্ষ শেষ না হওয়া পর্যন্ত কোনো শিক্ষার্থী হোস্টেল ত্যাগ করতে পারবে নাহ। অন্যথায় দুই মাসের এডভান্সের টাকার পাশাপাশি অতিরিক্ত মাসের অর্ধেক টাকা জরিমানা দিয়ে হোস্টেল ত্যাগ করতে হবে।
এমনভাবে লেখা থাকে যেন সকলের নজর এড়িয়ে যায়। যারা নতুন হোস্টেলে উঠে তাদের সাথে প্রথম এক মাস হোস্টেল কতৃপক্ষ অনেক ভালো ব্যবহার করে, সবার রুমে গিয়ে সবার খোঁজ-খবর নেয়। সুবিধা-অসুবিধা দেখে। সবার পড়াশোনার খোঁজ-খবর রাখে। ভালো খাবার দেয়। খাবারের মান ভালো দেয়, কেউ অসুস্থ হলে প্রাথমিক চিকিৎসা, কারেন্ট চলে গেলে ২৪ ঘন্টা আইপিএস, নিজস্ব খাবার রাখার জন্য ফ্রিজের ব্যবস্থা, লবিতে নিজস্ব শিক্ষকের কাছে পড়ার সুবিধা, খাবার গরমের সুবিধা, ২৪ ঘন্টা ওয়াইফাই সুযোগ ইত্যাদি। কিছুদিন যাবার পর দেখা যায় কতৃপক্ষের আসল রূপ। হঠাৎ করে শুরু করে শিক্ষার্থীদের সাথে খারাপ ব্যবহার। আস্তে আস্তে সুযোগ-সুবিধা কমাতে শুরু করে। যেমন: রাত ১০ টায় ওয়াইফাই বন্ধ করে দেয়, দিনে দিনে খবারের মান খারাপ করে, খাবারের পরিমাণ কমিয়ে দেয়, নির্দিষ্ট সময়ের এক মিনিট লেইট হলে খাবার খেতে দেয় নাহ, রুমের কিছু নষ্ট হলে নিজে ঠিক করতে হবে অন্যথায় জরিমানা দিতে হয়, কারেন্ট চলে গেলে রুমে একটা লাইট অথবা একটা ফ্যান চলবে, লবিতে পড়তে নিজস্ব শিক্ষকের কাছে পড়তে হলে কারেন্ট বিল বাবদ অতিরিক্ত ৫০০ টাকা দিতে হবে, যেকোনো সময় হঠাৎ করে মাসের ভাড়া বড়িয়ে দেয়, রাত ৯ টার পর কাউকে হোস্টেল থেকে বের হতে দেয় নাহ, নির্দিষ্ট সময় পর কেউ বাহিরে থাকলে তাকে হোস্টেলে প্রবেশ করেতে দেয় নাহ, বিদ্যুৎ সংযোগ লাগে এমন কোনো জিনিস ব্যবহার করতে দেয় নাহ যেমন: নিজস্ব ফ্যান, লাইট, ইস্ত্রি, গরম পানি করার জগ ইত্যাদি ব্যবহার করতে হলে অতিরিক্ত বিদ্যুৎ বিল তোমাকে বহন করতে হবে। তোমার মানসিক বিনোদনের জন্য টেলিভিশন থাকার পরও সেটা দেখতে দিবে নাহ। রুম সার্ভিসের কথা বলে সবার থেকে শুরুতে ১০০০০ টাকা নিয়ে নেওয়ার পর ঠিক করে সার্ভিস দিবে নাহ। নামেমাত্র সবার কিছু নিত্যপ্রয়োজনীয় কাজ করে দিবে। হোস্টেলের শিক্ষার্থীদের কলেজে যাতায়াতের জন্য নিজস্ব পরিবহনের ব্যবস্থার কথা শুরুতে বললেও সেটি শুধু হোস্টেল কতৃপক্ষের জন্যই ব্যবহৃত হয়ে থাকবে। এমনকি পরবর্তীতে কারো অসুস্থতায় প্রাথমিক চিকিৎসারও ব্যবস্থা করা হয় নাহ। এগুলো নিয়ে কতৃপক্ষকে অভিযোগ দিলেও কোনো লাভ হয় নাহ, কতৃপক্ষ এগুলো কানেই তুলে নাহ। তাদের সমাধান হলো যাদের হোস্টেলে সমস্যা হবে তারা হোস্টেল ছেড়ে চলে যাও। সবার সাথে চুক্তিতে স্বাক্ষর থাকার কারণে কেউ বর্ষ শেষ হওয়ার আগে হোস্টেল ত্যাগ করতে পারে নাহ। কতৃপক্ষের সব নিয়ম মেনে অনিচ্ছা সত্ত্বেও থাকতে হয়। আর কেউ বর্ষ শেষ হওয়ার পূর্বে পারিবারিক সমস্যা অথবা নিজস্ব কোনো সমস্যায় হোস্টেল ত্যাগ করলে তাকে কখনোই দুই মাসের এডভান্সের টাকা ফেরত দেয়া হয় নাহ। কোনো শিক্ষার্থীর যদি পারিবারিক সমস্যার কারনে মাসের ১০ তারিখের মধ্যে টাকা দিতে দেরি হয় তাহলে সেই শিক্ষার্থীর খাবার বন্ধ করে দেওয়া হয়। আর কতৃপক্ষ সবসময় শিক্ষার্থীদের ভুল খুঁজে বের করার চেষ্টা করে, যেন শিক্ষার্থীরা হোস্টেলের নিয়ম বহির্ভূত কাজ করে। আর নিয়ম ভঙ্গ করলে তাকে সরাসরি বের করে দেয়। এসব বিষয় পরিবারকে জানালেও কোনো উপকার হয় নাহ, কারণ শুরুতেই অবিভাবক আর শিক্ষার্থী থেকে চুক্তিপত্রে স্বাক্ষর নিয়ে নেয়। এতে কেউ কোনো আইনগত ব্যবস্থাও নিতে পারে নাহ।
আমার এই হোস্টেলে পাঁচ মাস থাকার অভিজ্ঞতা শেয়ার করলাম। তোমরা যারা হোস্টেলে থাকবা আগে থেকে সবকিছু বিবেচনা করে, সঠিক তথ্য নিয়ে, সবকিছু যাচাই করে তারপর সিদ্ধান্ত নিবা।
ধন্যবাদ।©