27/10/2022
আমাদের মধ্যে কি এমন মানুষের অভাব আছেন? যারা ইসলাম কে নিয়ে প্রতিনিয়ত সমলোচনা করে চলেছেন! আমাদের কে এমন অনেকে প্রশ্নের ঢিল ছুড়ে মারেন-
“আমি হাদিসে পড়েছি ইব্রাহীম ছিলো কা*ফে*রে*র বা*চ্চা। মুহাম্মদ ও ছিলো কা*ফে*রে*র বা*চ্চা। আব্দুল্লাহ্ মা*রা যাওয়ার ৪ বছর পরে মুহাম্মদ জন্মগ্রহণ করে তাহলে সে ছিলো জা*র*জ সন্তান।” (আস্তাগফিরুল্লাহ্)
এইধরনের কথা যখন আপনি শুনতে পান তখন আপনার মাঝে দুটো জিনিস কাজ করে। প্রথমত যে বা যারা বলছে আপনি তাদেরকে গালাগালি দিয়ে বসেন। জানি রাগ তো হবার ই কথা। হবে নাই বা কেন বলুন? যেখানে আমাদের কলিজাটাকে নিয়ে তারা মস্করা করছে সেখানে রাগ হওয়াটাই স্বাভাবিক। আবার অনেকে এনিয়ে পড়ে যান ব্যপক চিন্তায়। এত খোঁজাখুঁজি করলাম তবে পেলাম না এ বিষয়ে কিছু! ইসলাম আসলেই আছে তো? প্রিয় ভাই/ বোন আমার। আপনি হতাশ হবেন না। আল্লাহ্ কাওকে হতাশ করেন না। চলুন আপনাদের এখন ১৫০০ বছর আগের সেই আরব থেকে ঘুরিয়ে নিয়ে আসি। প্রিয় পাঠক/পাঠিকা আমি আশা রাখছি আপনারা আমার সাথে সাথে সেই আরব'কে উপভোগ করবেন এবং আপনার মনে থাকা সকল প্রশ্নের সঠিক উত্তর পেয়ে যাবেন ইনশাআল্লাহ্।
আব্দুল মুত্তালিব তখন নিজের গোত্রের কয়েকজন আর বাকি প্রত্যেক গোত্র থেকে কিছু মানুষ নিয়ে রওনা দিলেন সেই মহিলার উদ্দেশ্যে। কিন্তু তারা যখন হেজাজ আর সিরিয়ার মাঝের এক জনশূন্য এলাকায় পৌঁছালেন তখন তাদের পানি শেষ হয়ে গেল। ‘তাদের’ বলতে আব্দুল মুত্তালিবের গোত্রের মানুষের। তারা অন্য গোত্রের কাছে পানি চাইলে তারা দিতে অস্বীকার করল। বলল, এটা আব্দুল মুত্তালিবেরই দোষ যে, তারা এই মরুর বুকে ধুঁকে মরছে। এক ফোঁটা পানি না পেয়ে আব্দুল মুত্তালিব মৃত্যুকেই বেছে নিলেন। তিনি সবাইকে বললেন নিজেদের কবর খুঁড়তে। এতে করে শেষ বেঁচে থাকা লোকটিকে কষ্ট করে বাকিদের কবর দিতে হবে না। নিজেদের কবরে নিজেরাই মরতে পারবে। কিন্তু কবরে শুয়ে থাকা অবস্থাতেই আব্দুল মুত্তালিবের ধারণা পালটে গেল। তিনি হঠাৎ উঠে সিদ্ধান্ত নিলেন, তারা সকলে আবার উট নিয়ে রওনা দেবেন। আল্লাহ্ নিশ্চয়ই কিছু ব্যবস্থা করবেন। দূর থেকে বাকি গোত্র-সদস্যরা দেখতে থাকলেন তিনি কী করেন। অবিশ্বাস্য ব্যাপার, আব্দুল মুত্তালিবের উট হঠাৎ এক জায়গায় পা দিতেই খুড়ের আঘাতে সেখান থেকে পানি বেরুতে লাগলো! সকলে ‘আল্লাহ্ মহান’ চিৎকার করে উঠলেন। তখন বাকি গোত্রের সকলে মেনে নিলেন যে আব্দুল মুত্তালিবই একমাত্র জমজম কূপের আবিস্কারক হবার যোগ্য। সেই তখন থেকেই আর কখনো তাঁর মৃত্যু পর্যন্ত তাঁকে চ্যালেঞ্জ করেনি কেউ। তিনি উমাইয়া না হয়েও ছিলেন মক্কার নেতা, হাশিম গোত্রের সদস্য। তো আমরা কথা বলছিলাম তাঁর সন্তানদের নিয়ে, মূলত ছেলেদের নিয়ে। এর মধ্যে সবচেয়ে কর্মঠ, সুদর্শন আর সবার প্রিয় ছিল তাঁর ছেলে আব্দুল্লাহ। অনেক মেয়েই তাই বিয়ে করতে চাইত আব্দুল্লাহকে। কিন্তু তিনি বাবার অমতে বিয়ে করতে অস্বীকৃতি জানাতেন। আব্দুল মুত্তালিবের অনেকদিন ধরে কেবল একটাই ছেলে ছিল, হারেস। ইবনে হিশামের বই থেকে আমরা জানতে পারি যে, সেই কূপের ঘটনার পর তিনি মানত করেন যে, তাঁর যদি ১০ জন পুত্র সন্তান হয়, আর তাঁরা সকলে প্রাপ্তবয়স্ক হন তবে তাদের একজনকে তিনি কুরবানি দেবেন। উল্লেখ্য, তাঁর প্রিয়তম পুত্র ছিলেন আব্দুল্লাহ। একদিন সবাইকে কাবার কাছে আব্দুল মুত্তালিব ডেকে পাঠালেন। তাঁর সন্তানেরা যখন বাবার ওয়াদার কথা শুনল তখন, তাঁরা রাজি হয়ে গেল তাদের মাঝে একজন কুরবান হবার জন্য। তখন আব্দুল মুত্তালিব বললেন, “প্রত্যেকে একটি করে কাঠের তীর নাও। ওটার উপর নিজের নাম লিখে আমার কাছে আসো।” সেটা করবার পর তাদের নিয়ে আব্দুল মুত্তালিব গেলেন হুবাল দেবতার কাছে। কাবার এক কুয়ার উপর সেটার মূর্তি ছিল। হুবাল দেবতার কাছেই লটারির ব্যাপারগুলো মীমাংসা করা হতো। লটারি আর ভবিষ্যৎকথনের দেবতা ছিলেন হুবাল।।ছুরি উঠাতেই বড় ছেলে হারেস এসে ধাক্কা দিয়ে তাঁকে সরিয়ে দিলেন। সবাই যখন শুনল, তখন এসে আব্দুল মুত্তালিবকে বাধা দিতে লাগল। কেউই চাইত না, আব্দুল্লাহ কুরবান হন। কারণ সবাই ছিল আব্দুল্লাহর প্রতি মুগ্ধ। বোনেরা ভাইয়ের কুরবানির কথা শুনে কেঁদে উঠল। আর কোন কোন ভাই তো বলেই বসলেন, “আব্দুল্লাহর জায়গায় আমাকে কুরবানি করুন। তবু তাঁকে করবেন না!” অনেক বড় বড় সর্দার বললেন, “এভাবে সন্তান কুরবান করা শুরু করলে দেখা যাবে সবার ঘরেই এরকম মানব বলি প্রথা শুরু হয়ে গেছে। বাদ দিন এসব। আমরা টাকা দেব দরকার হলে মানতের ক্ষতিপূরণ হিসেবে।” সকলে তাঁকে উপদেশ দিল এক জ্বিন-উপাসিকার কাছে যেতে, যদি উনি বলেন কুরবান করতেই হবে তবে সকলে মেনে নিবে। সেই বিখ্যাত জিন উপাসিকার বাড়ি ছিল ইয়াসরিব বা মদিনাতে। কিন্তু ওখানে তাঁকে পাওয়া গেল না। তিনি নাকি গিয়েছেন খায়বারে। তখন তাঁরা খায়বারেই গেলেন। সেখানে গিয়ে আব্দুল মুত্তালিব তাঁকে খুঁজে পেলেন। ঘটনা খুলে বলবার পর মহিলা বললেন পরদিন আসতে, তাঁর কাছে জ্বিন এসে জানাবে উত্তর। পরদিন, মহিলা উত্তর দিলেন, “তোমাদের মাঝে ক্ষতিপূরণ কত রক্তের বিনিময়ে?” তাঁরা বললেন, “দশটি উট।”আব্দুল মুত্তালিব মক্কায় ফিরলেন। এরপর লটারির ব্যবস্থা করলেন। লটারি করা হয় আজলান তীরের দ্বারা। অনুষ্ঠিত হয় কাবার ভিতরে। প্রথম বারেই উঠল আব্দুল্লাহর নাম। ২য় বারেও উঠল আব্দুল্লাহর নাম। ৩য় বারেও। এভাবে একাদশ বারে গিয়ে দেখা গেল উঠেছে রক্তের ক্ষতিপূরণ। তাই আব্দুল মুত্তালিব ১০x১০=১০০টি উট কুরবানি দিলেন আর মানতমুক্ত হলেন। নিশ্চিত হবার জন্য আরো তিনবার তিনি তীর ছোঁড়েন এবং তিনবারই ক্ষতিপূরণ ওঠে। তিনি আরো ত্রিশটি উট কুরবানি দিলেন। কুরবানি করা উটগুলো ওখানেই ফেলে আসলেন সবাই, যে কেউ সেই মাংস খেতে পারত। আব্দুল্লাহর বংশে আরও এক পূর্বপুরুষ কুরবানি থেকে রক্ষা পান। তিনি ছিলেন হযরত ইসমাইল (আ)। তাঁর পরিবর্তে কুরবানি হয় একটা দুম্বা। আব্দুল্লাহর তখন ২৪ বছরের যুবক, তখন সুরা ফিলের আব্রাহার ঘটনা ঘটে। সে বছরের শুরুতেই আব্দুল মুত্তালিব ছেলের বিয়ের ব্যবস্থা করেন। তিনি সম্ভ্রান্ত জুহরাহ গোত্রের ওয়াহব এর মেয়ে আমিনাকে পছন্দ করলেন পুত্রবধূ হিসেবে। বলা হয়, যাওয়ার পথে কাফেলা এক জায়গায় থামে। সেখানে আব্দুল্লাহকে দেখে আসাদ গোত্রের ওয়ারাকা ইবনে নাওফেলের বোন। আব্দুল্লাহকে দেখে তাঁর মধ্যে কামনা জেগে উঠে। অসংখ্যবার অনুরোধ করে তাঁকে, যেন আব্দুল্লাহ তাকে বিয়ে করেন। কিন্তু রাজি হন না আব্দুল্লাহ, পিতার কথা বলে এড়িয়ে যান। তখন সেই মেয়ে তাঁকে ১০০ উট উপহার দেয়ার কথা বলে, তারপরও যেন তাকে বিয়ে করে। কিন্তু আব্দুল্লাহ প্রত্যাখ্যান করেন। নিরুপায় হয়ে, সে অনুরোধ করে, অন্তত একবারের জন্য হলেও যেন তার সাথে শারীরিক সম্পর্কে মিলিত হন আব্দুল্লাহ। এবং এক্ষেত্রেও প্রত্যাখ্যাত হয় সে। কাফেলা আবার রওনা হল আর তারা যথাসময়ে জুহরাহ-দের এলাকায় পৌঁছালেন। বিয়ে হয়ে গেল আমিনা আর আব্দুল্লাহর। আমিনার বয়স তখন ১৪। একইসাথে আব্দুল মুত্তালিব নিজেও আমিনার এক চাচাতো বোনকে বিয়ে করেন, যার নাম ছিল হালাহ। অবশ্য, তখনকার আরব সমাজে এটাতে অবাক হবার মতো কিছুই ছিল না। হালাহ এর গর্ভে জন্ম নেন হামজা (রা)। এজন্যই চাচা হামজার বয়স মুহাম্মাদ (স) এর এত কাছাকাছি। কোনো কোনো জায়গায় বলা আছে যে, হামজা (রা) মুহাম্মাদ (সা) এর চেয়ে চার বছরের বড়। কিন্তু এটা ঠিক নয়। হামজা (রা) আর মুহাম্মাদ (সা) দুজনকে একইসাথে সুয়ায়বা ধাত্রী লালন করেন। আরব রীতি অনুযায়ী, তিন দিন শ্বশুরবারিতে থাকলেন আব্দুল্লাহ। এরপর কাফেলা ফিরতি যাত্রা শুরু করল। পথে আবার সেই মেয়ের সাথে দেখা হল আব্দুল্লাহর। কিন্তু, অবাক ব্যাপার, এবার আর মেয়ের মধ্যে সেই ব্যাকুলতা দেখা গেল না। আব্দুল্লাহ এর কারণ জিজ্ঞেস করলেন, “কী ব্যাপার?” সেই মেয়ে উত্তর দিল, “এখন আর তোমাকে আমার প্রয়োজন নেই।” এখানে বলে রাখা ভাল, এ মেয়ের ভাই ওয়ারাকা ইবনে নাওফেল ছিলেন খুবই বিদ্বান। ওয়ারাকাই ছিলেন সেই ব্যক্তি যিনি নিশ্চিত করেন যে, হযরত মুহাম্মাদ (স) একজন নবী। খ্রিস্টান ওয়ারাকা তাওরাত আর ইঞ্জিল এর উপর ছিলেন বিশেষ দক্ষ। তাই মুহাম্মাদ (স) এর আগমন বিষয়ে জানাটা তাঁর জন্য কঠিন কিছু ছিল না। ওয়ারাকাই নিশ্চিত করেন, যিনি ওহী নিয়ে এসেছেন ইনি আসলে শয়তান না, বরং জিবরাঈল (আ)। ওয়ারাকাই ভবিষ্যৎবাণী করেন, মক্কাবাসীরা মুহাম্মাদ (সা)-কে বের করে দেবে। সেই মেয়েটার নাম ছিল রুকিইয়া বিনতে নাওফেল, অন্য এক বর্ণনায় কুতাইলা। তাঁর অতিরিক্ত আগ্রহের কারণ রহস্যের আড়ালেই আছে। গোত্রভিত্তিক প্রধান দেবতার ব্যাপার নিয়ে কিছুটা জানা দরকার। একেক অঞ্চল একেক দেবতাকে প্রাধান্য দিত। কারোরই এ ব্যাপারে কোনো সন্দেহ ছিল না যে, আল্লাহ্ হলেন স্রষ্টা। তিনি সবার উপরে। সর্বময় ক্ষমতার মালিক। কিন্তু, তাঁরা একই সাথে অন্য দেবদেবীতেও বিশ্বাস রাখত। তাদের মতে, ছোটোখাটো কাজগুলো দেখভাল করতেন এই দেবদেবীরাই। যেমন মক্কার দেব দেবী অমুক হলে তায়েফের দেবদেবী তমুক। সকল গোত্রই বিশ্বাস করত, আল-লাত, উজ্জাহ ও মানাত নামের তিন দেবী নাকি আল্লাহ্র কন্যা! লাত দেবীকে কোনো কোনো অঞ্চলে আবার তাঁর স্ত্রীও ভাবা হতো! এ দেবীরা কিন্তু পুরোপুরি আরবীয় আবিষ্কার নয়। বিদেশি দেবীদের প্রভাবে তাদের চরিত্র তাঁরা বানিয়ে নিয়েছিল। যেমন, সুমেরীয় দেবী আশেরাহ আর আসিরাত থেকে আল-লাত দেবী, মেসোপটেমিয়ান দেবী ইশ্তার থেকে দেবী উজ্জাহ, আর গ্রিক দেবী নেমেসিস থেকে কোনোভাবে প্রভাবান্বিত হয়ে আসে দেবী মানাত। তবে আব্দুল মুত্তালিব দেবদেবীর পূজা করতেন না। একেশ্বর ছিলেন। এমনলি আব্দুল মোতালেব অনেকের বিরুদ্ধে লড়েছেন যারা কাবা শরীফ ধ্বংষ করতে চেয়েছিলো। এবং তখন তাদের বিরুদ্ধে জিহাদ হয় এবং আব্দুল মোতালেবের পক্ষে আল্লাহ সৈন্য পাঠান পাখিদের কে! এবং এটাই উল্লেখ আছে সূ"রা ফিলে" প্রতিপক্ষ হাতি প্রেরণ করেন কাবা কে ধ্বংষ করতে তবে হাতির পা ভেঙ্গে দিলেও তারা যেতে চাইতো না। তাই সব ভুল ত্রুটি ভুলে দেখা যায় আল্লাহ পরিস্কার দেখিয়েছেন নবীজি পিতা বা দাদা মূর্তি পূজারী ছিলেন না। আচ্ছা যা-ই হোক, নবদম্পতি আমিনা আর আব্দুল্লাহ মক্কায় ফিরে এলেন। কিন্তু, শীঘ্রই সিরিয়া আর ফিলিস্তিনে ব্যবসার ডাক পড়ল আব্দুল্লাহর। আব্দুল্লাহ যখন চলে গেলেন, তখন আমিনা গর্ভবতী। আব্দুল্লাহ বেশ কয়েক মাস ফিলিস্তিনের গাজায় থাকলেন। এরপর আবার নিজ দেশে ফেরা শুরু করলেন। কাছাকাছি আসার পর তাঁর ইচ্ছে হল মামার বাড়ি মদিনাতে কিছুদিন থেকে যাবার। সেটাই করলেন তিনি। এরপর যখন যাবার সময় হয়ে এলো, তখন তিনি একটা মক্কাগামী কাফেলা ঠিক করলেন, তাদের সাথে তিনি মক্কায় ফিরে যাবেন। প্রস্তুতি যখন সব সম্পন্ন তখনই তিনি হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লেন। তাই মদিনায় রয়ে গেলেন। কাফেলা তাঁকে ছেড়েই চলে গেল মক্কায়। পরে যখন মক্কায় খবর পৌঁছালো, তখন আব্দুল্লাহর বাবা আব্দুল মুত্তালিব দুশ্চিন্তায় পড়ে গেলেন। তিনি সাথে সাথে তাঁর বড় ছেলে হারেসকে মদিনায় রওনা করিয়ে দিলেন যেন আব্দুল্লাহ যখন মক্কায় ফিরবেন সুস্থ হয়ে, তখন হারিস তাঁকে সঙ্গ দিতে পারেন, দেখে রাখতে পারেন। কিন্তু মদিনায় পৌঁছেই হারেস শুনলেন, তাঁর ভাই আব্দুল্লাহ আগেই মারা গেছেন। যে কাফেলাতে করে মক্কায় যাবার কথা ছিল আব্দুল্লাহর, সেটা মদিনা ত্যাগ করার এক মাস পরেই মারা যান আব্দুল্লাহ। সেখানেই কবর হয় তাঁর। বয়স হয়েছিল ২৫ বছর। দুঃখ ভারাক্রান্ত মন নিয়ে হারেস ফিরে গেলেন মক্কায়। বাবাকে আর সদ্যবিধবা আমিনাকে জানালেন আব্দুল্লাহর মৃত্যুর খবর। শোকের কালো ছায়া নেমে এলো মক্কায়। ভবিষ্যৎ অন্ধকার আমিনার, কী হবে তাঁর অনাগত সন্তানের? দুনিয়াতে আসার আগেই বাবাকে হারিয়ে ফেলল সে। আব্দুল্লাহ মারা যাবার পর পুত্রবধূ আমিনার দায়িত্ব নিলেন আব্দুল মুত্তালিব। একটা বড় ‘কিন্তু’ সেখানে রয়ে যায়। তৎকালীন আরবে বিধবাদের সুযোগ সুবিধা মোটেও ভালো ছিল না, যদি না তাঁর আবার বিবাহ হয়ে থাকে। অনেকটা অবহেলাতেই কাটে তাদের জীবন। আইয়ামে জাহিলিয়ার এরকম অনেক প্রথাই পরে দূর হয়, কিন্তু সেটা ইসলামের আবির্ভাবের পরের কাহিনী। অনেকেই বলে থাকেন যে, নবিজীর পিতা মাতা জাগান্নামি! নির্ভরযোগ্য ভাবে বলতে গেলে অবশ্যই প্রিয় নবীর পিতা মাতা জান্নাতি। মহানবী (সাঃ) জন্মের আগে মানে দ্বীন-ইসলামের আগে এবং হযরত ঈসা (আঃ) কে আকাশে উঠিয়ে নেওয়ার পর থেকে যারা মূর্তি পূজা করেন নি তারা হানাফি অথবা আহালুল ফাতারা, তাদের কে আল্লাহ্ পাক জান্নাত দিবেন ইনশাআল্লাহ্। নবীর ঘরে কাফের জন্ম লাভ করেছে আবার কাফেরের ঘরেও নবী জন্মগ্রহণ করেছেন। তবে কোনো নবীকে তার পিতা মাতা বা পরিবারের জন্য ইস্তেগফার করার অনুমতি দেন নি! যেমন নবিজি বলেছিলেন “আমি আমার বাবা-মায়ের জন্য ইস্তেগফার করতে চাই” আল্লাহ্ অনুমতি দেন নি তবে কবর জিয়ারতের অনুমতি দিয়েছেন। অনেক ক্ষেত্রে নবিজীর স্বপ্নের মধ্যে এসে ইসলাম চাওয়ার সুপারিশ এর বিষয়ে বা কবর হতে জিন্দা করে ইসলাম গ্রহণের হাদিস পাওয়া যায়। যিনি অনেক বড় আলম, অনেক বড় ইমাম আমাদের নাম উল্লেখ করছিনা, তিনি কোনো এক বক্তার বিরুদ্ধে লিখতে গিয়ে নবীজির পিতা-মাতাকে কাফের বলে বই লেখেন। সে স্বপ্নে দেখে দুইজন ফেরেশতা তার মাথার কাছে এসে বলাবলি করতে লাগলো, যে নবীজির পিতামাতা কে নিয়ে বদনাম রটালো, ভুল হাদিস ছড়ালো তাকে কি করা উচিৎ? অপরজন বললো তাকে পাহাড় থেকে ফেলে দেওয়া উচিৎ হাত-পা বেধে, পরদিন সকালে সে দেখে সারা শরীর ক্ষত বিক্ষত এবং সে পাহাড়ের নিচে। তখন সে তার শিষ্যদের সব বই পুড়িয়ে ফেলতে বলেন। আমরা ক্লিয়ার বলতে পারিনা তারা জাহান্নামি, অবশ্যই আল্লাহ্ তাদের জান্নাত থেকে বিতাড়িত করবেন না। বাকিটা আল্লাহর উপর ছেড়ে দিন। যদি কিছু ঘটনা না ঘটতো তাহলে আমরা সেগুলোর থেকে শিক্ষা পেতাম না! লড়াই হোক জনসম্মুখে এমন ঘটনা তো আছেই যেমন মুসা (আঃ), আমাদের জাতীর পিতা ইব্রাহীম (আঃ)। সেসব ঘটনা পরে একদিন বলবো! তো এইযে আপনি সকল প্রশ্নের উত্তর পেয়ে গিয়েছেন এখন আপনি একটা প্রশান্তির দীর্ঘশ্বাস করুন! আলহামদুলিল্লাহ্।🌸
©RJ Mahin Khan