Lilian's Literature Cafe

Lilian's Literature Cafe Digital Creator ,Story teller & book reviews
(22)

20/06/2024

ভোর পৌনে পাঁচটার দিকে রিভু মারা গেল। ওর লাইফ সাপোর্ট খুলে দেওয়ার কিছুক্ষণ পরই রিশাদ হাসপাতালে এসে পৌঁছাল। নিথর রিভুকে জড়িয়ে ধরে সেকি কান্না! আমি জানিনা আমার ভেতরে কী ভয়াবহ রক্ত ক্ষরণ হচ্ছিল।অথচ আমার চারপাশের মানুষ গুলো বুঝতে পারেনি। আমি যেন বিশাল সমুদ্র বুকে নিয়ে নির্বাক দাঁড়িয়ে আছি।
আমার সাড়ে নয় বছর বয়সী ছেলেটা হঠাৎ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে কিছুক্ষণ আগে পৃথিবী থেকে চলে গেছে।অথচ আমার ভেতরে কোন অনুভূতি কাজ করছে না।আমার শরীরের অর্গান গুলো যেন অকেজো হয়ে গেছে।আমি যেন পাথর হয়ে গেছি! আমার এক সময়ের স্বামী আমাদের প্রথম সন্তানকে বুকে নিয়ে গগনবিদারী চিৎকার করছে৷ আমারও তো তাঁদের জড়িয়ে ধরে কাঁদার কথা! অথচ পাশেই আমি নিস্তব্ধ এক অসহায় পাথর। রিশাদকে স্পর্শ করার অধিকার আজ আমার নেই। কিংবা আমাকেও স্পর্শ করার অধিকার রিশাদের নেই।
আজ আমাদের একমাত্র সন্তানের মৃত্যু প্রাক্তন সম্পর্কটুকুর অস্তিত্ব ও মুছে দিয়ে গেল।রিশাদ আজ পৃথিবীর সবচেয়ে নিঃস্ব পুরুষ। ওর একমাত্র সন্তান ও আশ্র‍য়স্থল ওকে ভয়াবহ নিঃসঙ্গতায় ফেলে দিয়ে গেল। রিশাদের জন্য আজ আমার কোন অনুভূতি নেই। অথচ এই মানুষটার জন্যই একদিন আমি নিজের পরিবার বিসর্জন দিয়েছিলাম। গোটা পৃথিবীটাকে তুচ্ছ করে দিয়ে রিশাদকে আপন করে নিয়েছিলাম। আমাদের কী দুর্দান্ত প্রেম ছিল!

এতোক্ষনে ভোরের আলো এসে হাসপাতালের পর্দা গুলো ছুঁয়ে দিয়েছে ।ভোরের আজানের সাথে ঢাকা শহর জেগে উঠতে শুরু করেছে ।মানুষ জনের আনাগোনা বাড়ছে ।

আমার চোখের কোনে পৃথিবীর সব কান্না এসে জমে আছে। আমার পুরো শরীর হীম হয়ে গেছে। আমি কাঁদতে পারছি না। আমি মৃত সন্তান বুকে নিয়ে পৃথিবীর সবচেয়ে সেরা বাবাকে দেখছি। যে তাঁর জীবনের সবটুকু দিয়ে সন্তানকে আগলে রাখার চেষ্টা করেছে।

এদিকে ডাক্তার নার্স সহ হাসপাতালে দায়িত্বে থাকা সবাই ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। সময়ের কাটা ঘুরতে ঘুরতে দিনের আলো নিয়ে আসে। আমি আমার নাড়ি ছেঁড়া ধন কে একবার ও স্পর্শ করার সুযোগ পাচ্ছি না। কারন মৃত্যুর পরও সে তাঁর পিতার ছায়ায় আছে।

সকাল সাড়ে সাতটটার দিকে দু'জন নার্স এসে রিশাদকে শান্ত করার চেষ্টা করে। আমি তখন আমার বুকের মানিককে শেষ বারের মতো হাত বুলিয়ে আদর করার সুযোগ পাই। আমার কলিজা ছেঁড়া বাচ্চার নিথর শরীরটা পাগল করে দেয়। আমি কতো জোরে চিৎকার দিয়েছিলাম আমার মনে নেই। তারপর বোধহয় আমি অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিলাম। আমার হার্ট অ্যাটাক হয়।
রিভুর গোসল থেকে কবর আমি কিছুই জানি না।

এক সপ্তাহ আগের কথা। আমি এখন ধানমন্ডির ল্যাব এইড হাসপাতালের আইসিউতে। আজ দুপুরে নাকি জ্ঞান ফিরেছে। আমার মনেহচ্ছে আমি পুনর্জন্ম নিয়ে ফিরেছি।
পাশের সেন্ট্রাল হাসপাতালে আমার একমাত্র সন্তান রিভু মা বলে ডাকছে। আমি স্পষ্ট শুনতে পাচ্ছি! কিন্তু বেহায়া জীবন আমাকে রিভুর কাছে যেতে দিচ্ছে না।আমি ডুকরে ডুুকরে কাঁদছি। আমার কান্নায় বিছানা ভিজে যাচ্ছে।
কিছুক্ষণ পর আমার সম্বিৎ ফিরে। একজন ভদ্রলোককে দেখা যাচ্ছে। সে আমার সাথে কিছু একটা বলার চেষ্টা করছে। তাঁকেও আমি চিনতে পারছি না। নার্স আমাকে বলল আমার স্বামী এসেছে।
আমি নির্বাক এক ভদ্রলোককে দেখতে লাগলাম। সে স্মিত হাসি মুখে আমাকে কি কি যেন বলল। তারপর মাথায় হাত বুলিয়ে আর কপালে চুমু দিয়ে চুপচাপ চলে গেল।

ওহ আমার মনে পড়েছে। উনি আমার ধনাঢ্য স্বামী। এক বছরের সন্তান বুকে নিয়ে যখন রিশাদদের বাসা থেকে বের হয়ে গাড়ির নিচে ঝাপ দিতে যাচ্ছিলাম তখন এই ভদ্রলোক বাঁচিয়েছিল। গল্পের মতো বললে কতোটা নির্মম নাটকীয় আমার জীবন!
উনার নাম সাজিদ হাসান। ধানমন্ডির এক ধনাঢ্য ব্যবসায়ী। তাঁর স্ত্রী তখন সন্তান সহ দেশের বাইরে পিএইচডি করতে গিয়ে তাঁর সহপাঠীকে বিয়ে করে নেয়। ভদ্রলোকের একাকিত্ব দূর করতেই হয়তো আমাকে সন্তান সহ আশ্রয় দেয়। তারপর সময় ও সুযোগ মতো বিয়ে করে নেয়।
সন্তানের দুধ জোগাড় করা দুুরের কথা নিজের পেটে এক বেলা ভাত দেওয়ার মতো পয়সা ও আমার কাছে ছিল না।
তারপর আমার ধনাঢ্য স্বামীর সাথে সন্তান সহ ভালোই কাটছিল। মনের জগতের কথা জানিনা। আমার আর সন্তানের পেট বেঁচেছিল। ভদ্রলোকদের সমাজে ঠাঁই হয়েছিল। দামী বাড়ি গাড়ি উপভোগ করার ভাগ্য হয়েছিল।
ভদ্রলোক রিভুকেও যথেষ্ট যত্ন করতেন। একদিন বিকেলে আমার বর্তমান স্বামী সাজিদ আমাদেরকে নিয়ে কোথাও খেতে যাবে। হঠাৎ গেটের সামনে চিৎকার চেঁচামেচি।
আমি গাড়ির কাঁচের আড়াল থেকে রিশাদকে দেখি। তখন রিভুর বয়স সাড়ে চারবছর। অথচ রিভু তাঁর বাবার চেহারা আর স্পর্শ ভুলেনি।
সাজিদ হাসান বেশ স্মার্ট লোক।ধনী লোকেরা টাকার প্রভাবে যেমন স্মার্ট হয়! কেমন করে যেন টাকা কিংবা ক্ষমতা দিয়ে রিশাদকেও ম্যানেজ করে ফেলল।

ওই যে বলেনা টাকার কাছে পৃথিবী গোলাম। এমন কিছু একটা হবে। টাকার কাছে মানুষ বিক্রি হয়। টাকার কাছে সম্পর্ক অচেনা হয়। টাকার কাছে নিখাঁদ প্রেমটা ও পরাজিত হয়। আমার আর রিশাদের প্রেমের সম্পর্কটা ও মুছে যায়।
রিশাদের সাথেও আমাদের মিউচুয়াল একটা সম্পর্ক তৈরি হল।মাঝেমধ্যে সে এসে রিভুকে নিয়ে যেত। আমার ও মা হিসেবে কোন সন্তানকে পিতার ভালোবাসা থেকে বঞ্চিত করার অধিকার নেই। রাজধানীর একটি নামী ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলের ছাত্র ছিল। মাঝেমধ্যে ছুটিতে রিশাদ ওকে নিয়ে যেত। আবার সময় মতো দিয়ে যেত।

সন্তানকে ভালোবাসে বলেই ডিভোর্স লেটার পেয়েই সন্তানের জন্য ছুটে এসেছিল। রিভুর মতো আদরে থাকা বাচ্চারও ডেঙ্গু জ্বর হতে পারে ভাবা যায় না। যেদিন জ্বর শুরু হল তখন রিশাদের কাছেই ছিল। প্রথমে আমরা সাধারণ জ্বর ভেবেছিলাম। আচমকাই অবস্থা খারাপ হয়ে যায়। অনেক রক্তের দরকার হয়। রিশাদের গায়ের রক্ত আর সাজিদ হাসানের টাকার ক্ষমতা ও আমার কলিজার টুকরো বাচ্চাটাকে বাঁচাতে পারেনি!

আমি জানি না রিশাদ এখন সন্তান ছাড়া কিভাবে বেঁচে আছে। নাহ! আমি এখন আর রিশাদকে ভালোবাসি না। কোন সহানুভূতি ও কাজ করে না। শুধু এক অসহায় পিতার জীবনের গল্পটা জানার ইচ্ছে!

আমি তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের প্রথম বর্ষের ছাত্রী! রিশাদ আমাদের এক বছরের সিনিয়র হলেও ইয়ার ড্রপ করে। পরে আমাদের ক্লাসমেট হয়ে যায়!
সেদিন ক্লাস শেষ করে লাইব্রেরী ওয়ার্ক করে চা খাওয়ার জন্য বসে ছিলাম। চায়ের দোকানে প্রচুর ভিড় ছিল। হঠাৎ গরম চা আমার গায়ের উপর পড়ে। মাথা তুলে তাকিয়ে দেখি ক্লাসের ইয়ার ড্রপ করা সেই ছেলেটা।গরম চা একটা মেয়ে গায়ে পড়েছে। আমি আর আমার বান্ধবী নিশুতি চিৎকার করে উঠি। অথচ নির্বিকার ছেলেটা সরি না বলে চায়ের কাপ রেখে একটু দুরে গাছের সামনে গিয়ে সিগারেট ধরাল।

চলবে ------

#প্রেম_ও_প্রাক্তন
#পর্ব১
#উপন্যাস
#নুরুন_নাহার_লিলিয়ান



মানুষ তাঁর নিয়তির বাইরে যেতে পারে না। তাই নিয়তিকে মেনে নিয়ে এগিয়ে যেতে হয়
18/06/2024

মানুষ তাঁর নিয়তির বাইরে যেতে পারে না। তাই নিয়তিকে মেনে নিয়ে এগিয়ে যেতে হয়

16/06/2024

A Beautiful Rainy Day at Bcsir
যখন জীবন মানুষের নিষ্ঠুর রূপটাই দেখায় তখন মানুষের দিক থেকে মনোযোগ সরিয়ে প্রকৃতির প্রতি নিবেদন করা উচিত। বিশাল প্রকৃতির রহস্যের কাছে তুচ্ছ নিজেকে আবিষ্কার করা যায়।তখন মানুষ নিজেকে ভেঙে চুরে নতুন করে তৈরি করে। জীবনের পথে যতো রকম ঝড়বৃষ্টি থাকুক তখন সেই সব প্রতিকুলতার সাথে মোকাবেলা করার সক্ষমতা অর্জন করে। দিন শেষে সব মানুষই একা। বিষাক্ত মন মানসিকতার মানুষের বন্ধুত্বের চেয়ে একাকিত্ব অনেক ভাল বন্ধু হতে পারে। এই পৃথিবীতে সবাই একা হলেও মহান আল্লাহর উপর ভরসা ও তাঁর রহমত গুলোর সাথে সম্পর্ক স্থাপন করতে পারলে জীবন অনেক সুন্দর। জীবন অনেক আনন্দের। জীবন অনেক আকাংখার। জীবন অনেক স্বপ্ন ও সফলতার।





゚viralシ
゚viralシ2024fyp









Send a message to learn more

15/06/2024

বর্তমানে বেশিরভাগ মানুষই নেগেটিভ মন মানসিকতার আপনি যদি কোন বিষয়ে মহৎ কাজ করেন সেটাও সন্দেহের দৃষ্টিতে দেখবে। কারণ পৃথিবীর কোন মানুষের ভেতরে এখন বিশ্বাসের সৌন্দর্য নেই।

-------- নুরুন নাহার লিলিয়ান

15/06/2024

বিসিএসআইআর গবেষনাগার কোয়ার্টারে একটি সুন্দর সকাল||A beautiful morning at Bcsir

A Beautiful Morning ❤️Bcsir

#বিসিএসআইআর

Send a message to learn more

13/06/2024

A Beautiful Rainy Day at Bcsir

13/06/2024

আজকে আমার প্রাক্তন স্বামীর বর্তমান স্ত্রীর ঘরে প্রথম কন্যা সন্তান হয়েছে।সে কোলে সন্তান নিয়ে হাসিমুখে ফেসবুকে ছবি পোষ্ট করেছে। পাশের বিছানায় বর্তমান স্ত্রীর হাতে সেলাইন। বাম পাশে মুখ করে শুয়ে আছে তাই তাঁর চেহারাটা বোঝা যাচ্ছে না ।

ভীষণ সুখি দাম্পত্যের দৃশ্য।কি অপার মানবিক সৌন্দর্য। যেকোন মানুষের মন শীতল সুখে ভরে উঠবে। সবাই নতুন সন্তান আগমনে তাকে অভিনন্দন জানাচ্ছে।আমিও তাঁর ছবিটির দিকে তাকিয়ে অভিনন্দন দিলাম।
"অভিনন্দন তৃতীয় কন্যা সন্তানের গর্বিত জনক ড. রাশিকুর রহমান"
তারপর নিজের মনের অজান্তেই ঝাপসা চোখে জল নিয়ে হেসে উঠলাম।
আমার প্রাক্তন স্বামী ড. রাশিক তৃতীয় সন্তান কোলে নেওয়া ছবি ছাড়াও আরও একটি ছবি ও পোস্ট করেছে৷ সে ছবিটায় আমাদের দুই মেয়ে সোনালি ও রুপালি । সে দুই পাশে দুই মেয়েকে জড়িয়ে আদুরে ভঙ্গিমায় ছবিটা তুলেছে। আর সে ছবিটা কোরিয়ায় থাকাকালীন আমিই তুলে দিয়েছিলাম। আমি আমার ফেক আইডি দিয়ে দেখলাম সে আগের সমস্ত স্মৃতি ছবি মুছে ফেলেছে কিংবা অনলি মি করে রেখেছে। নতুন সন্তানের নাম রেখেছে গোধুলি।

তাঁর প্রাণ খোলা হাসি দেখে মনেহচ্ছে তৃতীয় বার কন্যা সন্তানের বাবা হওয়ায় তিনি বেশ খুশি।
আমি কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে চোখ সরিয়ে নিলাম। মনোযোগ দিলাম নিজের কাজে। লোক দেখানো পিতৃত্ব দেখাতে সোনালি আর রুপালির ছবি ব্যবহার করতেও ভুলেনি।

আজকে সোমবার। আমার ল্যাবে বেশ ব্যস্ততা। সকালেই সুপারভাইজারের সাথে জরুরি মিটিং ছিল। এরপর কিছু ল্যাব ওয়ার্ক করেছি৷ এখন ল্যাপটপের সামনে আর্টিকেল লিখতে বসেছি৷ নিজের উপর অনেক ধকল যাচ্ছে।
আমি খুব মনোযোগ দিয়েই ল্যাবে কাজ করছিলাম।মগে কফি ঢেলেছি। মাত্র চুমুক দিব সে সময় মেসেঞ্জারে কিছু ছবির স্কিনশট। আমার প্রাক্তন স্বামীর গর্বিত কন্যা সন্তানের বাবা হওয়ার ছবি।
আমার কিছু কাছের মানুষেরা পাঠিয়েছে। আসলে হঠাৎ এমন খবরে সবাই বিস্মিত। কারন রাশিকের সাথে আমার ডিভোর্স হয়েছে কয়েক বছর হল। তেমন কেউ জানেনা। ডিভোর্সটা আমিই দিয়েছিলাম৷ রাশিক হয়তো লজ্জায় কাউকে জানায়নি। নতুন বিয়ের ছবি কিংবা পাল্টে যাওয়া জীবনের গল্পটা প্রকাশ করেনি৷ তাই হঠাৎ তৃতীয় সন্তান সহ ছবি দেখে সমাজে নানা কৌতুহল তৈরি হয়েছে।
ড. রাশিক একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক। অনেক পরিচিতি আছে। সবাই তাকে অনেক অমায়িক, ভদ্র ও ভাল মানুষ হিসেবে জানে৷ অথচ
তাঁর স্ত্রী তাকে তালাক দিয়েছে৷ যার সাথে সাত বছর প্রেম আর দশ বছর সংসার করেছে৷ সতের বছরের দীর্ঘ সংসার ভ্রমণে এমন কী ঘটল যে তাঁর প্রেমিকা প্রিয়তম স্ত্রী ছেড়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিল।

আমি ড. তাসনিম তমা। একজন অনুজীব বিজ্ঞানী। আমি এবং আমার স্বামী ড. রাশিকুর রহমান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুজীব বিজ্ঞানে সহপাঠী ছিলাম। কি দূর্দান্ত প্রেমের গল্প আমাদের।
রাশিক প্রথম হলে আমি হতাম দ্বিতীয়। সব কিছুতেই যে সৃষ্টিকর্তা রাশিকের পাশেই আমাকে রেখে দিতো।
কতো জায়গায় রিসার্চের কাজে এক সাথে ঘুরে বেড়িয়েছি। রাশিক সুযোগ পেলেই আমার হাতটা ধরে ফেলতো। কিছুতেই হাত ছাড়তে চাইতো না। লুকিয়ে লুকিয়ে সুযোগ বুঝে আমার হাত ধরতে পারাটা ছিল ওর রাজ্য জয় করার মতো। আমার হাতটা ধরেই একটা শান্তির মিষ্টি হাসি দিতো। কালো মানুষ। ধবধবে সাদা দাঁতের হাসি সবার চোখে পড়তো।
কালো হলেও রাশিক বেশ সুদর্শন, বাকপটু আর ভাল রেজাল্টের কারনে ভীষণ জনপ্রিয় ছিল।আমি ধবধবে ফর্সা না হলেও যথেষ্ট উজ্জল আমার গায়ের রঙ। মেধাবী হিসেবেও নাম ডাক ছিল।
পারফেক্ট জুটি হিসেবে পুরো সায়েন্স ফ্যাকাল্টিতে সবাই আমাদের চিনতো।
মাস্টার্সের পর রাশিক ডিপার্টমেন্টে জয়েন করল। আর আমি একটি প্রাইভেট বিশ্ব বিদ্যালয়ে।।
খুব দ্রুত আমরা পারিবারিক ভাবে বিয়েও করে ফেললাম। বছর ঘুরতেই আমাদের ঘরে প্রথম কন্যা সোনালি এলো। এরপর দেড় বছর পর এলো রুপালি।
সুখেই চলছিল আমাদের ছোট সাজানো সংসার।
রাশিক ঘরের বড় ছেলে। ওর ছোট দুই বোন ও এক ভাই আছে। আমাদের সংসার, চাকরি আর জীবন গুছিয়ে নেওয়ার ব্যস্ততা বেড়ে গেলো। সোনালি ও রুপালি ও বেড়ে উঠতে লাগল। সেই সাথে রাশিকের ভাই বোনেরাও পরিপক্ক হতে শুরু করল। আমার বড় ননদের বিয়ে হল। ছোট ননদ ও দেবরের দুই বিশ্ব বিদ্যালয়ে সুযোগ হল। রাশিকের স্কুল শিক্ষক বাবা অবসরে গেলো।
সংসারের সমস্ত দায়িত্ব এলো রাশিকের উপর।
কিন্তু ধীরে ধীরে কোন এক ফাঁকে আমাদের দাম্পত্যের ছন্দ হারাতে শুরু করল।
আমার বড় ননদের বিয়ে হলেও বাবার বাড়িতে বিভিন্ন ওযুহাতে থাকতো। আর আমাদের দাম্পত্যে কলহ তৈরি করাই যার একমাত্র দায়িত্ব হয়ে গেলো।
আমি সারাদিন বাইরে চাকরি করি। সংসারে ও সন্তানের কোন মনোযোগ নেই।এমনকি আমার বেতনের পুরোটা কেন সংসারে দেই না।
এমন হাজারো ছোট খাটো বিষয় গুলো বৃহৎ রূপ নিতে শুরু করল।বড় ননদ খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে আমার দোষ বের করতো। আর আমার শাশুড়ি, ছোট দেবর ও ননদ তাদের সাথে সহযোগিতা করে যেতো।
এতো গুলো মানুষ যে আমার সংসারে সেটা সবাই ভুলে গেছে। বিষয়টা এমন যে আমিই ওদের সংসারে অতিরিক্ত চাকরিজীবী বোঝা নারী।
দিন যেতে থাকে আমি সবার চক্ষুশূলে পরিনত হতে থাকি।
আমি শুধু নীরবে মানিয়ে নিয়ে সংসারটা এগিয়ে নেওয়ার ব্রতে ছিলাম। দিনের পর দিন নির্যাতিত হওয়া আমার ভেতরের মানুষটাও পাল্টে যেতে লাগল।
আমি ক্লাসে মনোযোগ দিতে পারতাম না। স্মৃতি লোপ পেতে থাকল। আমার মেয়ে দুটোর চেহারা চোখের পিসিতে লেপ্টে থাকতো। গভীর বিষন্নতায় আমি নিজেকে হারিয়ে ফেলছিলাম।
তারপরও চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিলাম। পালিয়ে থেকেও যদি বাঁচতে পারি। রাশিকের ও আমার ক্যারিয়ারের কথা ভেবে পিএইচডি করার সিদ্ধান্ত নিলাম।
কোরিয়ার ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে একই প্রফেসরের অধিনে আমাদের পিএইচডির সুযোগ হয়ে গেলো।
সাড়ে তিন বছরের একটা সুযোগ হল সংসার বাঁচাতে আরেক সংসার থেকে পালিয়ে যাওয়া।।
কোরিয়ার দিন গুলো ভাল মন্দে খারাপ ছিল না। আমাদের দুই সোনালি ও রুপালি নতুন দেশে বেশ মানিয়ে নিল।
আমি আর রাশিক যেন সাড়ে তিন বছরের জন্য আবার সেই প্রেমময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিরে গেলাম।
তবে প্রায়ই আমাদের সম্পর্কটায় ঝড় বৃষ্টি হয়ে যেত কোন নির্দিষট কারন ছাড়া।
বাংলাদেশ থেকে যখন রাশিকের মা ও ভাই বোনেরা ফোনে কথা বলতো। ঠিক সেদিন থেকেই পরবর্তী এক সপ্তাহ রাশিক আমার সাথে তেমন কোন কথা বলতো না। একই ল্যাবে আমরা কাজ করতাম। জরুরি রিসার্চের বাইরে একটি কথা ও রাশিক বলতো না। রাশিক যেন নিজস্ব সংসার জীবন থেকে ছিটকে যেতো।
আমি অসহায়ের মতো নিখোঁজ হওয়া রাশিককে জীবনে ফিরিয়ে আনতে চেষ্টা করতে থাকি।
এমন হাজারও উন্থান পতনের সাংসারিক গল্প নিয়ে আমাদের দু'জনের পিএইচডির সময় শেষ হয়ে এলো।
রাশিক সঠিক সময়ে থিসিস জমা দিতে পারলেও আমার দেরি হয়ে গেলো।
নাহ। আমার মেধা কিংবা পরিশ্রমে কোন ঘাটতি ছিল না। শুধু মনের আকাশটা সব সময় মেঘাচ্ছন্ন থাকতো। বৃষ্টি হওয়ার ভয় আর সংকোচে আমার জীবন যেতো। আমি রিসার্চে মনোযোগ দিতে পারতাম না।
ছোট ছোট দু'টো মেয়ের লালন পালন করা , স্বামীর মন বুঝে চলা,অন্যদিকে রাশিক তার স্কলারশিপের পুরো টাকা দেশে পরিবারের খরচের জন্য পাঠাতো। আর আমারটা দিয়ে আমাদের কোরিয়ার সংসার চলতো।
সব হিসাব নিকাশ মেনে নিয়েও আমি সুখী সংসার করে যেতে চাইলাম। কখনও আমি টাকা দিতে না চাইলে রাশিক কথা বন্ধ করে দিয়ে আমাকে শাস্তি দিতো।
আমিও ঘরের বড় মেয়ে।আমার ও ছোট দুই ভাই বোন আছে। আমার বাবাও একজন অবসরপ্রাপ্ত চাকুরিজীবী।তাদের প্রতি সামান্য কিছু দায়িত্ব পালন তো দূরের কথা। আমার স্কলারশিপের পুরো টাকায় বিদেশের মাটিতে দু'টো সন্তান নিয়ে টিকে থাকা ভীষণ হিমশিম খেতে হতো।
বাংলাদেশি কিংবা কোরিয়ার কোন সামাজিক অনুষ্ঠানে যেতেও চিন্তা করতাম। কারন সংসারের খরচের পর হাতে কিছুই থাকতো না। নিজের কিংবা সন্তানদের জন্য ভাল মন্দ সৌখিন কোন কেনাকাটা করার। মনটা সব সময় হীনমন্যতায় ভুগতো।
রাশিকের পিএইচডির পর আমরা বাংলাদেশে ফিরে এলাম। আমি কিছুদিন পর বাকি ছয় মাসে রিসার্চের বাকি কাজ করব। তারপরে ডিগ্রী নিয়ে ফিরব।
দেশে ফেরার পর আবার সেই আগের চিত্র। অল্প কিছু দিনেই কেমন খুব দ্রুত যেন সম্পর্কের দেয়াল ভাঙতে শুরু করল।
আমার শাশুড়ির ধারনা আমি স্কলারশিপ পেয়েছি। আমার কাছে অনেক টাকা জমা আছে। ছোট ননদের বিয়ের জন্য আমার টাকা দিতে হবে।
প্রতিদিন সকাল শুরু হতো ঝগড়া দিয়ে।এরমধ্যে আমাকে কোরিয়া যেতে হবে। রাশিক নতুন বায়না করল কোরিয়া যেতে হবে না। ছেলের মা হতে হবে। দু'টো মেয়ের পর তাঁর একটা ছেলে চাই। একজন উচ্চ শিক্ষিত পিএইচডিধারী বিশ্ব বিদ্যালয়ের প্রাক্তন সেরা ছাত্র, সেরা শিক্ষকের মুখে মধ্যযুগীয় নারী দমন পিড়নের বাক্য শুনে আমি কেমন হতবাক হয়ে গেলাম।
নির্যাতনের মাত্রা বেড়ে গেলো। মুখের কটুবাক্য এক সময়ে গায়ে হাত তোলায় পরিনত হল। কোরিয়ার বাকি ছয় মাস রিসার্চ করে পিএইচডি শেষ করার ডেড লাইনটা ও শেষ হয়ে গেলো।
আমার ভেতরের তিলে তিলে মরে যাওয়া মানুষটা হঠাৎ একদিন প্রতিবাদী হয়ে উঠল।
ভাবলাম পৃথিবীতে দম নিয়ে বেঁচে থাকাটা সবার আগে জরুরি। আমার দু-চোখ পৃথিবী দেখলেই আপন অনুভূতি নিয়ে চিন্তা করব।
তারপর একদিন নীরবে আমার বিন্দু বিন্দু করে সাজানো সংসার, প্রিয়তম প্রাক্তন প্রেমিক, সংসারের প্রিয় স্বামী, আর সহস্র স্মৃতি ফেলে শুধু সন্তান দু'টো সহ জীবন নিয়ে পালিয়ে এলাম।
আমার আর কোরিয়া যাওয়া হল না। বাবার বাসায় মেয়ে দু'টো নিয়ে প্রাইভেট বিশ্ব বিদ্যালয়ের চাকরিটার উপর ভরসা করে নতুন জীবন শুরু হল।
আমার মেয়ে দু'টোই আমাকে অনুপ্রেরণা দেয়। ওরা আমাকে বলে "মা তুমি আবার ল্যাবে যাও। মা তুমি সেরা বিজ্ঞানী হও।"
ছোট ছোট মেয়ে দু'টোর স্বপ্ন পূরণে আমি আবার লড়াই শুরু করলাম। আগের করা কিছু রিসার্চ কে অবলম্বন করে আমেরিকার বিভিন্ন বিশ্ব বিদ্যালয়ের প্রফেসরদের সাথে নতুন করে যোগাযোগ শুরু করলাম।
আমার ফুলব্রাইট স্কলারশিপে নতুন করে পিএইচডির সুযোগ হল। বৃদ্ধা মায়ের কাছে মেয়ে দু'টোকে রেখে আমেরিকার চাপেল হিলে একাই পাড়ি জমালাম। ইউনিভার্সিটি অফ নর্থ ক্যারোলিনায় আমার নতুন জীবন শুরু হল।
গত বছর আমার পিএইচডি শেষ হয়েছে। দেশে আর না ফেরার সিদ্ধান্ত নিলাম।
পোস্ট ডক্টরেট শুরু করলাম। আমার মেয়ে দুটো অনিশ্চয়তা, ভয়, যুদ্ধ দেখতে দেখতে এতো ছোট বয়সেও মানিয়ে নেওয়া শিখে গিয়েছে।
আগামী সপ্তাহে বিশেষ বিমানে আমার মা বাবা সহ ওরা আসছে আমেরিকা আমার কাছে। গত কতো গুলো বছর আমার কলিজার টুকরো সন্তান দু'টোকে স্পর্শ করতে পারিনি। আমার বুকে নিয়ে ওদের স্পন্দন ছুঁয়ে দেখতে পারিনি। চোখের জল নদী হতে হতে সমুদ্রে মিশে গেছে। আমি আর এর উৎস খুঁজে পাইনা।
রাশিকের ভালোবাসা আর পাল্টে যাওয়া আমাকেও পাল্টে দিল। কখনও জীবনে পরম আপনজন ও অচেনা হয়। ঘটনা পরম্পরায় অনেক অপ্রত্যাশিত দূর্ঘটনাও ঘটে। অসহায় মানুষ কেবল নিয়তিকে দোষারোপ করে। কোন ভাবেই জীবনের রহস্যময় জলোচ্ছ্বাসের প্রকৃত কারণ খুঁজে পায় না।
রাশিক অবশ্য সন্তানদের ফিরে পেতে কেস করেছিল। সন্তানদের মায়ের প্রতি ভালোবাসার জোর বেশি থাকায় কেসে হেরে যায়। কিন্তু তারপর কোন দিনও সে একই শহরে থেকেও আমাদের মেয়েদের সোনালি ও রুপালি কে একবারও দেখার প্রয়োজনবোধ করেনি। কারন তাঁর দু’চোখে তখন ছেলের বাবা হওয়া স্বপ্ন।
পিতৃহীন হয়ে আমার মেয়েরা নানীর কোলে বড় হয়। ড. রাশিক নতুন একজনকে বিয়ে করে। সে হয়তো আমার মতো সংসারে অমনোযোগী, উচ্চাকাংখী, ছেলে সন্তান জন্ম না দেওয়ার মতো অযোগ্য না। হয়তো তাঁর নতুন সঙ্গীর সাথে সংসার জীবন ভালোই কেটেছে।
আমিতো এখন সকল ঝড় কাটিয়ে বেশ আছি। পৃথিবীতে এখন করোনাকাল চলছে। অদৃশ্য ভাইরাস এর সাথে যুদ্ধ। আমাদের বড় রিসার্চ টিম ভাইরাসের ভ্যাকসিন আবিষ্কার নিয়ে, জিনোম সিকোয়েন্সিং নিয়ে ভীষণ ব্যস্ত।আমিও দুঃখকে আর শত্রুকে জীবনের পরম সত্য মেনে নিয়েছি।
আমেরিকার আবহাওয়া ও পাল্টে যেতে শুরু করেছে।
বাতাসে উত্তাপ কমে যাচ্ছে।দুমাস পর গভীর শীতলতা যেন এই দেশের মানুষের দেহমনকে ছুঁয়ে যাবে।
আমি আমার মা বাবা আর দুই মেয়েকে নিয়ে শুভ্র সফেদ তুষারে মাখামাখি করব।
চিৎকার করে বলব ছেলের মা হতে না পারলেও বেঁচে থাকা যায়।আত্ম সম্মানের জন্য প্রিয়তম প্রেমিককেও ভুলে থাকা যায়।

আমি বোধহয় একটু আবেগপ্রবণ হয়ে গেছি। রাশিকের কোলে তৃতীয় মেয়ে! ছেলের মা না হতে চাওয়ার কারনে আমার সমস্ত সততা, শিক্ষা আর ভালোবাসা কে অস্বীকার করেছিল। কি অদ্ভুত পৃথিবী!
দু'জন মানুষ দুই দেশে বেশ তো চলছে। ড. রাশিক ফেসবুক আর ল্যাপটপের ফোল্ডারে রাখা অতীত জীবনের সব মুছে ফেলে নতুন সঙ্গীকে স্বাগত জানিয়েছে। কিন্তু আমার মস্তিস্কের স্মৃতির ফোল্ডারটা ইচ্ছে করলেই মুছে ফেলা যায় না। ভালোবাসা নামক গভীর অনুভূতি তাঁকে চিরন্তন করে রেখেছে।
আজ সকল স্বপ্ন পূরণের সকল আক্ষেপ হয়তো শেষ। জীবনের সকল ব্রতে আমি জয়ী।
কিন্তু ভেঙে যাওয়া আপন বিশ্বাসের জগতটা আগলে ধরার মানুষটা নেই। বার বার ভালোবাসা আমায় ফিরিয়ে দেয়। নতুন করে কাউকে বিশ্বাস করার সাহস কে গুড়িয়ে দেয় ।
যে গভীর ভাবে ভালোবাসে সে হয়তো কষ্ট পায়, হেরে যায় কিন্তু হেরে যেতে যেতে ও একদিন অদম্য সাহস নিয়ে জয়ী হয়ে যায়।

পৃথিবীতে কয়জন প্রকৃত হৃদয় উৎসর্গ করতে পারে। সামনের পথ গুলোতে আমার প্রিয়তম প্রাক্তন প্রেমিক স্বামীটি হয়তো হঠাৎ করে আমার হাতটা ধরবে না।

আমাকে কেউ বেঁচে থাকার অদম্য লড়াইয়ের গল্প শুনাবে না। কিন্তু আমি তো আমাদের মেয়েদের ছোট ছোট হাত গুলো ধরে এগিয়ে যাব। তাদের শুনাবো আমার শ্রেষ্ঠ ভালোবাসা আর লড়াইয়ের গল্পটি।

#সংসার
#নুরুন নাহার লিলিয়ান

11/06/2024

বাসার আশেপাশে পরিস্কার পরিচ্ছন্ন রাখা অভ্যাস হোক|BCSIR
আমাদের বর্তমান বাসার পেছনেই খোলা একটা জায়গা আছে। সেখানে অনেক ধরনের গাছপালা আছে। কিন্তু বিভিন্ন বাসার যতো নর্দমা আছে লোকজন সেখানে ফেলে। যেকারণে একটা সুন্দর সবুজ জায়গা ময়লার ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে। মাঝেমধ্যে অফিস থেকে পরিস্কার করে।তখন বোঝা যায় জায়গাটার সবুজ সৌন্দর্য। আবার কিছুদিন পর আগের নর্দমার চেহারায় ফিরে যায়।
একটা জাতীয় গবেষণাগারের আবাসিক এরিয়ায় এমন দৃশ্যপট আশা করা যায় না। পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা ঈমানের অঙ্গ। তাছাড়া ডেঙ্গু ও জীবাণুবাহী নানা রকম পোকা মাকড়ের ও উপদ্রব বেড়েছে।
একজন মানুষ সুশৃঙ্খল ও পরিস্কার পরিচ্ছন্ন না থাকলে আসলেই কী তাকে শিক্ষিত বলা যায়! বাংলাদেশটা ও দেশের বাইরের মতো পরিস্কার পরিচ্ছন্ন ও নান্দনিক হয়ে উঠতো।কিন্তু আমাদের দেশের মানুষজনের জীবন যাপন পদ্ধতি সুন্দর না। শিক্ষিত অশিক্ষিত সবারই লাইফস্টাইল অগোছালো ও অপরিস্কার। নিত্য জীবন যাপন স্বাস্থ্যকর না।

লোকজন পরিস্কার করার পর জানালা দিয়ে তাকালে মনেহয় একটা সুন্দর জায়গায় বসবাস করছি। চোখেরও আরাম লাগে। ভালো পরিবেশে থাকলে মানুষের মন ও শরীর ভালো থাকে। প্রতিদিনের জীবন যাপনে প্রোডাক্টিভিটি বাড়ে।

Send a message to learn more

 #বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। #রুম নাম্বার ৩২৭  #অর্থনীতি  #স্মৃতির পাতা থেকে #যে রুমে বসে লেখা আমা...
11/06/2024

#বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
#রুম নাম্বার ৩২৭
#অর্থনীতি
#স্মৃতির পাতা থেকে
#যে রুমে বসে লেখা আমার তিনটি উপন্যাস প্রকাশ হয়।
#যে রুমে বসে নিজের করা সূচীকর্ম দেয়ালে
#রুমের মানুষ গুলোকে মনে পড়ে


10/06/2024

কথাসাহিত্যিক নুরুন নাহার লিলিয়ানের বই গুলো যেসব বুক শপে পাওয়া যাবে

ঘরে বসে বই পড়ুন পৃথিবীর যেকোন দেশ থেকে রিদমিক বইটই • Boitoi  এ্যাপসে অনলাইন ভার্সনে পাওয়া যাচ্ছে নুরুন নাহার লিলিয়ানের ক...
07/06/2024

ঘরে বসে বই পড়ুন পৃথিবীর যেকোন দেশ থেকে রিদমিক বইটই • Boitoi এ্যাপসে অনলাইন ভার্সনে পাওয়া যাচ্ছে নুরুন নাহার লিলিয়ানের কয়েকটি বই।বই অনুরাগী পাঠকেরা পৃথিবীর যেকোন দেশ থেকে সহজেই সুলভে পড়তে পারবেন।

Google Play Store এ গিয়ে বইটই এ্যাপস ডাউন লোড দিয়ে লিংকে ক্লিক করুনঃ
***অশ্রুরুদ্ধ
https://link.boitoi.com.bd/AXNN

***গোপনে সে আমায় ভালোবাসে
https://link.boitoi.com.bd/CSnA

***হোক্কাইডো আইল্যান্ড
https://link.boitoi.com.bd/p5xR

***আনন
https://link.boitoi.com.bd/vxsD

***অর্ধেক গল্প, অর্ধেক কবিতা
https://link.boitoi.com.bd/vnYp

***জাপানি ভূতের গল্প
https://link.boitoi.com.bd/Uf4s

***ঘরে বসে বই অর্ডার করতে লিংকে ক্লিক করুনঃ
www.rokomari.com

উপন্যাস"অরোরা টাউন " এর অর্ডার লিংক
https://www.rokomari.com/book/131236/aurora-town
গল্পগ্রন্থ "অহর্নিশ "
https://www.rokomari.com/book/156561/ohorinsh
উপন্যাস "মারিজুয়ানা "
অর্ডার লিংক
https://www.rokomari.com/book/177853/marijuana

উপন্যাস "আনন" এর অর্ডার লিংক
https://www.rokomari.com/book/200327/anon

গল্পগ্রন্থঃ "অশ্রুরুদ্ধ"
https://www.rokomari.com/book/224831/osruruddho
উপন্যাস"গোপনে সে আমায় ভালোবাসে " উপন্যাসটির অর্ডার লিংকঃ
https://www.rokomari.com/book/213853/gopone-shea-amai-valobashe

ভ্রমণ গল্পগ্রন্থ "হোক্কাইডো আইল্যান্ড"
https://www.rokomari.com/book/194970/hokkaido-iceland
"অর্ধেক গল্প, অর্ধেক কবিতা "
অর্ডার লিংক
https://www.rokomari.com/book/178931/ordhek-golpo-ordhek-kobita

সকল বই এক সাথে পেতে অর্ডার লিংক
https://www.rokomari.com/book/author/48448/nurun-nahar-liliyan

****অডিও বুক শুনুন ShunBoi Apps & ShunBoi Family থেকে। Google Play Store থেকে সহজেই ফ্রি ডাউনলোড করে শোনা যাবে আমার লেখা বই গুলোর অডিও ভার্সন পৃথিবীর যেকোন দেশ থেকে।
শুনুনঃ
https://fb.watch/bP9zjqcETR/

****ই-বুক আকারে পড়া যাবে বইটই @বইটই.Boitoi Apps থেকে। Google play Store থেকে Free Download দিয়ে পড়া যাবে ই-বুক পৃথিবীর যেকোন প্রান্ত থেকে।

Follow my lifestyle channel
www.youtube.com/c/nurunnaharlilian
Follow my literature page
Lilian's Literature Cafe
Follow my literature group
Lilian's Literature Cafe
Face Book Page:
Nurun Nahar Lilian
*****************************************
বাংলাদেশের যে কোন জেলা থেকে সকল বই পেতে কল করুন...

(রকমারি) ০১৫১৯৫২১৯৭১ অথবা ১৬২৯৭
(বইবাজার) 09611262020
(অথবা ডট কম) 09613-800800
(বুক এক্সপ্রেস) 01614321421 অথবা 01932403982
(শব্দালয়) 01935981535
(ইত্যাদি শপ) 01700769631
(daraz.com.bd)

সবাইকে আন্তরিক ধন্যবাদ

মেয়েটা বাবার কাছে মার খেয়ে নিজের ঘরে ঢুকেছে। আসাদ মেয়েটাকে মেরে কিছুক্ষণ বারান্দায় বসেছিল।অনেকক্ষণ ঝিম ধরে বসে থেকে কি য...
07/06/2024

মেয়েটা বাবার কাছে মার খেয়ে নিজের ঘরে ঢুকেছে। আসাদ মেয়েটাকে মেরে কিছুক্ষণ বারান্দায় বসেছিল।অনেকক্ষণ ঝিম ধরে বসে থেকে কি যেন ভাবছিল। আমাকে কিংবা ছেলে মেয়েকে মারার পর সে সব সময় ঝিম ধরে কোথাও বসে থাকে কিছুক্ষণ। তারপর উঠে এক গ্লাস পানি খায়। অনেকক্ষণ সে কারও সাথেই কথা বলে না। এই কথা না বলে থাকা ব্যাপারটা দুই এক দিনও চলে। তারপর সংসারের প্রয়োজন কিংবা নিজের প্রয়োজনে কথা বলে।

আজকেও তাই ঘটেছে। তবে আজকে কতোক্ষণ কিংবা আবার কবে কথা বলবে আমাদের কারও জানা নেই।ড্রয়িং রুমে যেতে ছোট্ট করিডোর আছে। আমি সেখানেই চুপচাপ বসে আছি।আমার পুরো শরীর থর থর করে কাঁপছে। আসাদের সাথে অনেক ধস্তাধস্তি হয়েছে। আমার শরীরের ভেতরের কাঁপুনি কোনভাবেই থামছে না। আমি নিজেকে মানসিক ও শারিরীক ভাবে স্বাভাবিক রাখতে পারছিনা।
বাইরে আযান দিচ্ছে।

আমি আঁড়চোখে দেখি। এশার আযানের পর টুপি নিয়ে মসজিদে গেল। মেয়েটা অংকে খারাপ রেজাল্ট করেছে। স্কুলে কিছু বান্ধবী হয়েছে তাদের সাথে মেসেঞ্জারে কথা বলে।এটা আসাদের পছন্দ না। তারমধ্যে অংকে সত্তর পেয়েছে। আসাদের স্বপ্ন তাঁর মেয়েকে সে ইঞ্জিনিয়ার বানাবে৷ আসাদের ভাষ্য অনুযায়ী সে স্বপ্ন নাকি পথে বসেছে!

মেয়েকে শাসন করা দরকার। কিন্তু এভাবে এলোপাতাড়ি পিটিয়ে? আমি মা হিসেবে এতো নিম্ন মানের কেন? মা হিসেবে আমি কেন এতো অসহায়? আমার ভেতরে ঝড় উঠে৷ আমি কিছুতেই নিজের ভাগ্যকে মেনে নিতে পারিনা। সঠিক ভাবে সকল অন্যায়ের প্রতিবাদ ও করতে পারিনা। নিজের কাছেই প্রশ্ন করি৷ কিন্তু উত্তরটা কি কোন ভাবে আমার পক্ষে দেওয়া সম্ভব?

নুশমার সব বান্ধবিদের আমি চিনি। আমার সামনেই কথা বলে। বরং আমি এসব এ্যাপস ব্যবহার করতে জানিনা বলে ওরা আমাকে বন্ধুর মতো শেখায়।
নুশমার বান্ধবিদের বেশির ভাগ মায়েরাই সোস্যাল সাইট ব্যবহার করে।যদিও ক্লাস নাইনে ফেসবুক, মেসেঞ্জার সহ কোন সোস্যাল সাইট ব্যবহার করা ঠিক না৷ কিন্তু পরিবর্তনশীল নিয়মে পৃথিবীটা পাল্টে গেছে অনেকখানি।পৃথিবীর পাল্টে যাওয়া গল্পে আমাদের ভুমিকা ও আছে।
জগত যেভাবে চলে সে পথে হাটতে না চাইলেও জীবনের অসহায়ত্ব গুলো আমাকে বাধ্য করে।

প্রযুক্তির উৎকর্ষতা মানুষকে পাল্টে যেতে বাধ্য করেছে। আমি সাধারণ একজন নারী৷ কিন্তু বই পড়তে, মানুষ দেখতে আর পৃথিবী নিয়ে ভাবতে ভাল লাগে।আসাদ যখন বাসায় থাকেনা আমি পুরনো আমলের সিনেমা মনোযোগ দিয়ে দেখি।ঘেঁটে ঘেঁটে অনলাইনে বই পড়ি। বাচ্চাদের পড়াই। আবার নিয়মিত নামাজ ও পড়ি। দিন শেষে এই নশ্বর ভূখণ্ড ছেড়ে চলে যেতে হবে সেটা ভেবে শংকিত হই।

আমার মনে পড়ে না নামাজে কোন দিন আমি আসাদের নামে কোন প্রার্থনা করেছি।অথচ আসাদের কাছ থেকে পাওয়া দুটো সন্তানের জন্য আমার সব প্রার্থনা।একজন অত্যাচারি ও সবার্থপর স্বামীকে স্ত্রী ঘৃণা করতে পারে। কিন্তু একজন মা সন্তানদের ভালোবাসহীন রাখতে পারে না। মা প্রকৃতির নিয়মেই সন্তানকে ভালোবাসে।
আসাদকে আমি প্রচন্ড ঘৃণা করি৷ আবার আসাদের অনেক কিছু আমি পছন্দ ও করি।
সে তাঁর সন্তানদের গভীরভাবে ভালোবাসে। কিন্তু শাসনের ধরনটা ভীষণ রকম বিব্রতকর।
অভিনন্দন কে মনে মনে ভালোবেসে আসাদের ঘর করি। হয়তো অনেকেই আমার মনের কথাটা জেনে গেলে আমাকে প্রতারক ভাববে।
অভিকে ভালোবাসাটা যে আমার বেঁচে থাকা। খুব অল্প সময়ে অভিনন্দন আমার সমগ্র অস্তিত্বে বেঁচে থাকার সাহসী স্বপ্ন বপন করে গেছে।সারা জীবন থাকলেও হয়তো আসাদ সে জায়গাটায় যেতে পারবে না। কোনদিন আমার হৃদয়কে স্পর্শ করতে পারবে না।
আমার অভির জন্য প্রতি মুহুর্তে খারাপ লাগা কাজ করে। একবার দেখার জন্য, একবার কাছাকাছি বসবার জন্য, পাশাপাশি হাঁটার জন্য, একটুখানি স্পর্শের জন্য। অথচ বছরের পর বছর একই ছাঁদের নিচে একই বিছানায় আসাদের সাথে থাকার পরও কখনও এতোটা গভীরভাবে তাঁকে অনুভব করিনি।

আমার মনের জগতের পুরোটা জুড়ে শুধু অভির ভালোবাসা। সেই ভালোবাসার সমুদ্রে আমার বিক্ষিপ্ত মন ডুবে থাকে। এক বিশাল দিশেহারা সমুদ্রে আমি প্রতিনিয়ত হাবুডুবু খাই।ডুবতে ডুবতে নিজেকে ভাসিয়ে রাখি। ভেসে থাকা ঢেউয়ের ভাঁজে নিজের জীবন খুঁজে বেড়াই।

নদী পাড়ের মেয়ে আমি। নদীর বহমান স্রোত আমার সমগ্র ধমনীতে। শিরা উপশিরায় ঢেউয়ের দুলনি নিয়মিত দোল খায়। পৃথিবীর সব আগুন আমার মতো নদীর কাছে এসে বিলীন হয়।বিয়ের পর আসাদের সাথে যেখানে গিয়েছি সবাই আমার বাহ্যিক ও অন্তরের সৌন্দর্য অনুভব করেছে। আমার নিজস্ব চিন্তা ভাবনা ও বৈশিষ্ট্যে মুগ্ধ হয়েছে।
অথচ আসাদ আমায় দমিয়ে রাখে প্রতি পদক্ষেপে। ওর পরিবারটাই অন্যের অনুভূতির মুল্য কম দেয়।
তাঁরা নিজেদের বানানো দুনিয়ায় নিজেরাই রাজা রানী। বাকি পৃথিবীর সবাই তাঁদের অধিনস্ত প্রজা। আসাদের যুক্তিহীন অহংকার আর স্বেচ্ছাচারিতা পৈতৃক সূত্রে পাওয়া। তারপরও কিছু কিছু সময়ে আসাদ নমনীয় হয়। হয়তো তাঁর মনের ভেতরের জগতের কোন হিসেব নিকাশের কারনে। হয়তো তাঁর নিজের ভেতরেও কোন অসহায়ত্ব আছে। কিংবা হতে পারে পারিবারিক ও সামাজিক চাপ। সে কখনও কখনও আগ্নেয়গিরির রূপ ধারণ করে। আবার নিজে নিজেই হঠাৎ ধেয়ে আসা মেঘের মতো আকাশে মিলিয়ে যায়।

আসাদের মনের মিথ্যা দাম্ভিকতার আগুন নেভে আমার ধৈর্য্যের জলের স্পর্শে। আসাদ জানে সে যতো নিষ্ঠুর হোক আমি তাকে ছেড়ে যাব না৷ কারন আমার যাওয়ার জায়গা নেই। হয়তো আমি ইচ্ছে করলেই তাকে ছেড়ে যেতে পারিনা। কিংবা আসাদকে ছেড়ে আমার কোথাও চলে যাওয়ার ইচ্ছেটাও মরে গেছে।

শুনেছি মানুষ যেখানে জন্মায় সেখানকার প্রকৃতি ও পরিবেশ তাকে প্রভাবিত করে। আমার আর আসাদের জন্ম একই জায়গার মাটিতে। অথচ আমাদের বেড়ে উঠা, চিন্তা, পছন্দ সব কিছু যেন যোজন যোজন দূরত্ব।

মুন্সিগঞ্জ শহরের ভূখণ্ডকে তিনটি নদী আগলে রেখেছে।
চারিদিকে অথৈ জল।থৈ থৈ জলঘেরা জীবন আমাদের। আমার যতো বয়স তারচেয়েও বেশি সময় ধরে আমি ধলেশ্বরী নদী পার হয়েছি। কত শত বার যে ধলেশ্বরীকে আমি বুকে ধারন করেছি।তাই সহস্র ধলেশ্বরী আমার বুকে জমাট বাঁধা।সব সময় চোখের কোনায় একটা বিশাল নোনা সমুদ্র লুকিয়ে থাকে। সবাই তা দেখতে পায় না।কিন্তু অভিনন্দন বুঝতে পারতো।

আমাদের আর অভিনন্দনদের বাসা খুব বেশি দূরে ছিল না। তাই আমাদের ছোট ছোট নিত্যদিনের ঘটে যাওয়া ঘটনা কিংবা দূর্ঘটণা গুলো গভীর ভাবে লেপ্টে আছে মনের গহীনে। আর মফস্বল শহরের গল্প গুলো মানুষের মন থেকে সহজে মুছে ফেলা যায় না৷
মফস্বলের ক্লান্ত জীবন যুদ্ধের সাথে বেঁচে থাকায় একটা নীরব স্বপ্ন থাকে। স্বপ্নটা একান্ত বুকে নিয়ে মানুষ গুলো এগিয়ে যায়।
অভি এক সময় ডাক্তার হতে চাইতো। কিন্তু সে আমার স্বামী আসাদের মতোই সিভিল ইঞ্জিনিয়ার হয়েছে।
কি অদ্ভুত একই প্রফেশনে দু'জন ভিন্ন মানসিকতার মানুষ।
মুন্সিগঞ্জ হরগঙগা কলেজের বিজ্ঞান বিভাগের তুমুল মেধাবী ছাত্র ছিল অভিনন্দন। আমার ক্লাস মেট ছিল।তবে এতো ছেলে মেয়ের মাঝখানে সবাইকে চেনা কঠিন।আমি বিজ্ঞান বিভাগের মাত্র কয়েকজনকে চিনতাম। অভিনন্দন মেট্রিকে বোর্ড স্ট্যান্ড করেছিল। তারপরও তাঁর বাবা তাকে ঢাকা পড়তে পাঠায়নি। বাবার চাকরি সূত্রে তাঁরা মুন্সিগঞ্জেই ছিল।
মুন্সিগঞ্জ শহরে সরকারি হরগঙগা কলেজের সেই সময় বেশ নাম ডাক আছে।ঐতিহ্য ও ঐতিহাসিক বিষয় বিবেচনায় হরগঙগা কলেজ ঢাকার কোন বিখ্যাত কলেজের চেয়ে কম ছিল না।অভিনন্দনের বাবা মনে করতেন প্রকৃত শিক্ষার্থী পৃথিবীর যেকোন জায়গা থেকেই সে জ্ঞান আহরণ করতে পারে। নির্দিষট একটা বয়স পর্যন্ত সন্তান বাবা মায়ের কাছেই থাকা ভাল। আর এক জীবনে পরিবারের সবাই একসাথে সুখে দুঃখে কাটানো ও অনেক বড় বিষয়। তারপর জীবন ও জীবীকার প্রয়োজনে মানুষকে পরিবারের কাছ থেকে দূরে যেতেই হয়।

অভিনন্দন ও ঠিক ছিল বাবার মতো বাস্তববাদী আর আর্দশবান।
এখনও ওর কথা মনে হলে চেহারটা কেমন চোখের সামনে ভাসতে থাকে।

আমি নিজের ভেতরের জটিলতা আবিষ্কার করতে পারিনা। আমার সংসারে কিছুক্ষণ আগে একটা ভয়ংকর জলোচ্ছ্বাস এসেছিল। অথচ কি নির্বিকার ভাবে আমি অভিনন্দনের কথাই ভেবে যাচ্ছি।কেউ কখনও আমার মনের জগতটা জেনে গেলে কি যে ভাববে!
কি ভাববে? আমি চরিত্রহীন! আমি ঘরে স্বামী রেখে আরেকজনকে ভালোবাসি। আমি প্রতারক কিংবা মানসিক রোগী।
যদি বলি আমার ভেতরে বেড়ে উঠা একটা অদ্ভুত অসুখের নাম অভিনন্দন। যে অসুখটা আমার মনের মধ্যে ঠাঁই করে নিয়েছে বলেই দেহটা বেঁচে আছে।
এই পৃথিবীতে কে কিভাবে বেঁচে থাকে সবাই কি সবার খবর জানে। আজকে ঢাকা শহরের পনেরো তলা ভবনের এগারো তলায় আমাদের বসবাস। এই বিলাসবহুল ভবনে কতো মানুষ জন থাকে থাকে। কয়জন আমরা পরস্পরের খবর রাখি। কয়জন জানি কে কিভাবে বেঁচে আছে।

দিন শেষে সূর্যের আলো যেমন রাতের অন্ধকারে মিশে যায়। সব সময় ব্যস্ত কিংবা সুখী মানুষটিও কোটির মানুষের ভিড় ঠেলে একা হয়ে যায়।
মানুষের সবচেয়ে বন্ধু তাঁর ভেতরে লুকিয়ে থাকা একা মানুষটা। যে মানুষটা তাঁর সবটুকু দেখতে পারে, বুঝতে পারে কিংবা অনুভব করতে পারে।
আমার মনের ভেতরের মানুষটা আমার
সমস্ত কষ্ট গুলো অনুভব করতে পারে বলেই অভিনন্দন কে অদৃশ্য করে রাখে। সে যে নিমগ্ন প্রেম। নীরব প্রার্থনা। প্রশান্তিময় বেঁচে থাকা।
প্রকৃত প্রেমে অনুভূতিময় সমুদ্রের স্পর্শ যে পায়নি সে কোনদিন আমার এই দহন গল্প বুঝবে না।
যাই মেয়েটাকে ঘর থেকে বের করি। কষ্ট পেয়ে কিছু করে ফেলতে পারে।
চলবে.......

গোপনে সে আমায় ভালোবাসে
#পর্ব-৩
#নুরুন নাহার লিলিয়ান

#বই #বইটই #উপন্যাস #গল্প
゚viral #পর্ব #নুরুননাহারলিলিয়ান ゚ #সাহিত্য #বই #বইমেলা
#গল্প

পৃথিবীর যেকোন দেশ থেকে বইটির ইবুক ভার্সন  পড়ুন। লিংক কমেন্টে
06/06/2024

পৃথিবীর যেকোন দেশ থেকে বইটির ইবুক ভার্সন পড়ুন। লিংক কমেন্টে

হঠাৎ করেই গাঁ টা কেমন ঘেঁমে উঠে। নিজের গায়ে কেমন ভ্যাপসা গন্ধ অনুভব হয়। তবে এই ব্যাপারটা বেশিক্ষন স্থায়ী হয়না। রুমের মধ্...
06/06/2024

হঠাৎ করেই গাঁ টা কেমন ঘেঁমে উঠে। নিজের গায়ে কেমন ভ্যাপসা গন্ধ অনুভব হয়। তবে এই ব্যাপারটা বেশিক্ষন স্থায়ী হয়না। রুমের মধ্যে হিটিং মেশিনের তেমন প্রয়োজন হয় না।
এই ভ্যাপসা গরমে কেমন অস্থিরতা কাজ করে। তবে বাইরে দমকা হাওয়া আছে।
মে মাসের সূর্য একটু বেশি তেজী দ্বীপ্ত। কেমন যেনো মাঝে মাঝে আবার শীত ও অনুভব হয়।

তবে শীতের ভারী পোষাক গুলো গাঁয়ে রাখা যায় না। ঋতু বদলের সাথে মানুষের জীবন যাপনে আসে পরিবর্তন।

বাইরের পরিবেশটায় কেমন একটা পরির্বতনের হাওয়া। শীতকালটা একটু একটু করে বিদায় নিচেছ।আবার কখনও হঠাৎ করেই হালকা তুষাড়পাত হয়। গভীরভাবে মেঘাচ্ছন্ন হয়ে উঠে।কখনও তীব্র রোদ আর দমকা হাওয়ার অদ্ভুত মিতালি। তখন ছাতা মাথায় নিয়ে হোক্কাইডো দ্বীপের ঐশ্বর্যময় প্রকৃতির রূপ উপভোগ করতে বেশ ভালো লাগে।

এর মধ্যে ল্যাব থেকে দুটো ট্যুরে যেতে হয়েছে। বেশ অনেকদিন বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যান্টিনে খাওয়া হয়নি।

মধ্য দুপুরে বিদীর্ণ দু:খ সুখ গুলো একটু ভিন্ন অনু্ভূতি দিয়ে যায়। ঠিক সময় মতো আজ অরুনিমা মধ্যাহ্ন ভোজে গেলো। মনে মনে মাসাহিকো কে মনে হলো। ক্যান্টিনের ভীড় খাবারের মেন্যু আর সময় সূচি সব ঐ রকম আছে। কিন্তু একটা মানুষের শূন্যতাবোধ অরুনিমার সমগ্র মন ছেয়েঁ রইলো।
কেমন একটা নিঃসঙগতাবোধ
মনের ভেতর কুড়ে কুড়ে খেতে লাগলো। বুকের কোথাও একটা চিন চিন ব্যথা।

হঠাৎ এমন অর্থহীন অনু্ভূতির আরেক নাম কি হতে পারে!
একটু লজ্জা বোধও মনের কোথাও উঁকি দিলো। আবার একটা শাসন ও মনকে নিয়ন্ত্রণ করেছিলো।
অনেক ভাবনার সাথে মনটা এলোমেলো খেলা করতে লাগলো।
ক্লান্ত মন নিয়ে ল্যাবের কাজ করতে হলো। হালকা পিচিছল রাস্তা। এর মধ্যে কেউ কেউ সাইকেল নিয়ে বের হয়েছে। জাপানি ছেলে মেয়েদের কাছে সাইকেল হলো পরম বন্ধু। কারও কাছে সাইক্লেলিং অনেকটা নেশার মতো। কারও কাছে সাইকেল ছাড়া জীবন অচল।

সাপ্পোরো শহরে সাইকেল ছাড়া মানুষ চিন্তা করা যায় না। খুব ছোট বয়স থেকেই এখানকার মানুষজন সাইকেল চালানো শিখে।

বাংলাদেশে একটু একটু সাইকেল চালাতে পারলেও জাপানে আসার পর পুরোদমে রপ্ত করে নিয়েছে।
নি:সঙগ প্রবাস জীবনে সাইকেলও একটা বড় বন্ধু।ল্যাবের কাজ শেষ করেই আজকে সাইকেল বের করলো। মনে মনে ভাবলো কিছুটা সময় সাইকেল নিয়ে ঘুরে বেড়াবে।

রাস্তার দুপাশে মৃত প্রায় বরফ স্তুপ গুলো একটু একটু করে ক্ষয়ে যাচেছ।
বরফে আবৃত শহরটা ক্রমশ জেগে উঠেছে।এই পরিবেশে সাইকেল নিয়ে দূরে কোথাও হারিয়ে যেতে পারলে ভালো হতো।কিংবা ছাতা মাথায় নিয়ে হেটে হেটে শেষ দিগন্তে চলে যাওয়া। হৃদয়ের কতো রকমের শূণ্যতা ঘেরা চাওয়া। ছোট ছোট ইচ্ছে গুলো খুব স্বাভাবিক ভাবেই উপভোগ করা যায়।

মনে মনে নিজের সাথে বিচিত্র আলাপন। হোক্কাইডো বিশ্ব বিদ্যালয়ের ভেতরে ধীরে ধীরে সাইকেল চালিয়ে যাচিছল। কিছুদূর যেতেই কেউ একজন পাশে সাইকেল নিয়ে এলো। সাইকেলের সাথের মানুষটার যে ছায়া সামনে পড়েছে তা অরুনিমার ভীষন পরিচিত।

অরুনিমা তাকাতেই ছেলেটি হেসে দিলো। কিছুটা সময় নিয়ে সে সাইকেল থেকে নামলো। তারপরে সাইকেল নিয়ে অরুনিমার পাশাপাশি হাটতে লাগলো।

বেশ অনেকটা পথ। দুজন কেউই কিছু বলছিলো না।তারপর একটা জায়গায় এসে মাসাহিকো থামলো। সেই সাথে অরুনিমা ও থামলো।
একটা নিশ্বাস ছেড়ে দিয়ে অরুনিমা কে জিজ্ঞেস করলো," তুমি যে ড্রেসটা গত মাসে পড়ে এই পথেই যাচিছলে সেটা কি বাংলাদেশি নাকি ভারতীয় পোষাক?
অরুনিমা জিজ্ঞেস করলো, " কোন পোষাকটা? "
মাসাহিকো উত্তর দিল," তোমার সাথে আরও দুই একজন ছিলো। ঠিক তোমারই মতো সাজ সজ্জা। তোমাদের সবাইকে পরীর মতো লাগছিলো। "
অরুনিমা বলল," ওহ!বুঝতে পেরেছি। সেই পোষাকটার নাম শাড়ি। সেটা বাংলাদেশি পোষাক। "

মাসাহিকোর চেহারায় আশ্চর্যজনক হাসি। সে খুব আন্তরিকতা নিয়ে আবারও বলল," খুব সুন্দর পোষাক। তোমাকে খুব সুন্দর লাগছিলো।"
মাসাহিকোর প্রশংসা আর কথায় অরুনিমা লজ্জা পেয়ে গেলো। নিজেরও হাসি পেয়ে গেলো। তারপর নিজেকে একটু সামলে নিয়ে বলল," ভারতীয়রা ও শাড়ি পড়ে। তবে তাদের থেকে আমাদের সংস্কৃতি একটু আলাদা। "
মাসাহিকো বলল," আমি ইন্টারনেটে ভারত এবং বাংলাদেশের ইতিহাস সামান্য জেনেছি।"
অরুনিমা বলল," খুব ভাল।"
তারপর মাসাহিকো আবার জিজ্ঞেস করলো, " সেদিন তোমাদের কোন প্রোগ্রাম ছিলো? "
অরুনিমা আন্তরিকতার সাথে বলল," বাংলা নববর্ষ। আমরা অনেক বাংলাদেশি পরিবার একত্রিত হয়ে আমাদের নববর্ষ উদযাপন করেছি।"
মাসাহিকো মজা করে জাপানি স্টাইলে মাথা নিচু করে বলল," লেট শুভ বাংলা নববর্ষ। "
অরুনিমা ওর কিঞ্চিৎ পাগলামি দেখে হেসে দিলো।তারপর বলল," তোমাকে লেট ধন্যবাদ।"

মাসাহিকো বলল," ধন্যবাদ না দিলেও চলবে।মাল্টিকালচারে অনেক দেশের নববর্ষ উদযাপন করা যায়। তাদের জীবন সম্পর্কে ও জানা যায়।"
অরুনিমা হঠাৎ সিরিয়াস হয়ে বলল," নিজ দেশের নববর্ষ কোন কিছুর সাথেই তুলনা হয় না। সবারই নিজ সংস্কৃতির প্রতি শ্রদ্ধা থাকা উচিত।"
মাসাহিকো বলল," একদম ঠিক। সেই সাথে সারা পৃথিবীর জানা অজানা সংস্কৃতির প্রতি ও আগ্রহ থাকা দোষের কিছু নয়।"
অরুনিমা বলল,"এখন আধুনিক যুগে অনেক মানুষেরই নিজ সংস্কৃতির চেয়ে অন্য সংস্কৃতির প্রতি আগ্রহ বেশি থাকে। কখনও সে আগ্রহবোধ নিয়ে অনেকের গর্ব থাকে। "
মাসাহিকো পাল্টা বলল," মানুষের মধ্যে অজানা অচেনা বিষয়ের প্রতি আগ্রহ থাকবেই।সে আগ্রহবোধটা মানুষের মধ্যে আছে বলেই আমরা পৃথিবীর মানুষেরা নতুন নতুন বিষয় জানতে পারি। নতুন নতুন তথ্য প্রতিনিয়ত যোগ হচেছ আমাদের জ্ঞান ভান্ডারে।"
অরুনিমা বলল," তাই আমরা প্রতিদিনই জ্ঞানী হয়ে উঠছি।হা হা হা। "
মাসাহিকো দুষ্টুমি ভরা কথায় হেসে দিলো। তারপর বলল," এটা কিন্তু সত্যি। যে কারনে আমরা প্রতিদিন একটু একটু করে পরিপক্ব হচ্ছি।"
হঠাৎ অরুনিমা জিজ্ঞেস করলো, " এতোদিন কোথায় ছিলে? তোমাকে ক্যান্টিনে দেখিনি।"
মাসাহিকো খুব আগ্রহ নিয়ে আবেগ জড়ানে কণ্ঠে পাল্টা জিজ্ঞেস করলো, " তুমি আমাকে খুজেঁ ছিলে? "
অরুনিমা খুব হালকা ভাবে বলল," অনেক দিন তোমাকে দেখিনি।"
মাসাহিকো বলল," টোকিওর চিবায় একটি গ্যাস কোম্পানির প্রজেক্টে কাজ শুরু করতে যাচিছ। মাস্টার্স শেষ হলেই জয়েন করবো।বেশ ভালো এবং মর্যাদা সম্পন্ন চাকরি।"
অরুনিমা বলল," অভিনন্দন তোমাকে।"
মাসাহিকো উৎফুল্ল হয়ে বলল," ধন্যবাদ।ধন্যবাদ।ধন্যবাদ।"
অরুনিমা ও মজা করে বলল," স্বাগতম। স্বাগতম। স্বাগতম।"

অরুনিমার দুষ্টুমি ভরা কথা আর হাসিতে মাসাহিকো অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো। চারপাশের প্রকৃতির মতো মাসাহিকোর মনের ভেতরটা ও উষ্ণ হয়ে উঠলো ক্রমশ কোথাও।রক্ত প্রবাহ একটু বেশি চঞ্চল হতে শুরু করলো। সমস্ত লোমকূপ গুলো ঘামে ভিজে উঠলো। বুকের ভেতর কেমন তোলপাড় শুরু হলো।

সব কিছু ঝাপিয়ে মাসাহিকো অসহায় চাতক চোখে একটা গভীর গোপন কথা বলতে চায়।অরুনিমা কি সেই গোপন কথাটা উন্মোচন করতে পেরেছে?
কি অদ্ভূত একটা রহস্য দুজনের সম্পর্কের মাঝে অদৃশ্য দেয়াল করে রেখেছে। সে দেয়ালটা ভীষন কঠিন আর বন্ধুর। তাদের মাঝের সে দেয়ালটা ভাঙা কারোরই সাহস নেই। কি জানি নাকি সম্পর্কের প্রতি বিনয় আর শ্রদ্ধা।হতে পারে আরও অনেক অন্য কিছু।

পৃথিবীর বেশিরভাগ মানুষই নিজের ভেতরটা আবিস্কার করতে ব্যর্থ। মাসাহিকো ও নিজের ভেতরের ভাষা প্রকাশ করতে পারছে না।দুজনের মনের আকাশটা যেন ভাষাহীন নিরবতায় ভেসে বেড়াচেছ। এই অদ্ভূত নিরবতায় দুজনেই নির্বাক। তারপর কোন কিছু না বলে। কোন বিদায় না নিয়ে। মাসাহিকো নিশ্চুপ সাইকেলের প্যাডে পা রাখলো। তারপর খুব দ্রুত সাইকেল নিয়ে চলে যাওয়া মাসাহিকোর দিকে তাকিয়ে রইলো। সমস্ত ভাবনা গুলো অরুনিমা কে ঘিরে স্থির হয়ে রইলো। তা কতোক্ষন অরুনিমা নিজেও জানে না।একান্ত গোপনে মাসাহিকো কে কেন্দ্র করে তার চারপাশে কি ঘটে যাচেছ ঠিক বুঝে উঠতে পারছে না।সাইকেল নিয়ে অনেকটা সময় দাড়িয়ে রইলো। সে সময় ছন্দা এবং পিংকি সাইকেল দিয়ে পাশ দিয়ে যাচিছলো।

ছন্দার ডাকে অরুনিমার ঘোর কাটলো। হঠাৎ ওর চমকে উঠা দেখে দুজনেই হেসে দিলো। তারপর ছন্দা এবং পিংকি কাছাকাছি এলো।
খুব শান্ত ভাবে ছন্দা বলল," আপু এখন সাইকেল চালানো কিছুটা ঝুঁকিপূর্ন। আর কিছুদিন পর আরাম করে সাইকেল চালাতে পারবেন। "
অরুনিমা বলল," এখনও সমস্যা হয়নি। কিছু কিছু রাস্তা বেশ পরিস্কার। আর কোন কোন রাস্তায় একটু ঝামেলা হলে সাইকেল থেকে নেমে পড়ি।"

ছন্দা এক হাতে সাইকেল আর অন্য হাত দিয়ে পিংকিকে দেখিয়ে বলল," আপু ও হচেছ পিংকি। খুব ব্যস্ত মানুষ।তিনটা পার্ট টাইম কাজ করে। তাই সেদিন প্রোগ্রামে আসতে পারেনি। "
পিংকি লজ্জা পেয়ে বলল, " আরে কি বলো! আপু আমাকে একটু ব্যস্ত থাকতে হয়। তাছাড়া এদেশের জীবন খুব কঠিন। আমি নেক্সট ইয়ার থেকে পিএইচডি শুরু করবো। স্কলারশিপ না পেলে নিজ খরচেই শুরু করবো। তাই একটু পরিশ্রম করছি। "
অরুনিমা বলল," আসলেই এখানে জীবনটা কঠিন এবং ব্যয় বহুল। আমি ও ল্যাব করার পাশাপাশি কিছু করবো। কিন্তু কাজ খুঁজে পাওয়া কঠিন মনে হচেছ। "
পিংকি বলল," আপু আমার বরের স্কলারশিপ নেই। ডিগ্রী নিতে খুব কষ্ট হচেছ। তাই আমি নিজে কাজ করে সংসারের ব্যালেন্স রাখছি। সঠিকভাবে সামাজিকতা রক্ষা করতে পারিনা বলে অনেক সমালোচনার সম্মুখীন হই।"
অরুনিমা বলল," জীবন যুদ্ধে বাস্তবতাই একমাত্র সত্য।সামাজিক ধারনা গুলো প্রতি মূহূর্তে পাল্টায়।"
ছন্দা বলল, " আপু বাংলাদেশের মানুষ গুলো এখানকার মতো কাজ পাগল হলে দেশ অনেক এগিয়ে থাকতো। তবে ধীরে ধীরে বাংলাদেশের দৃশ্যপট ও পাল্টাবে। তারপর সেদিনকার প্রোগ্রাম কেমন লাগলো? "
অরুনিমা উত্তর দিল," ভালো লেগেছে।তবে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে হওয়ায় সবার সাথে পরিচয় আর কথা বলা সম্ভব হয়নি।"
পিংকি বলল," সবার সাথে যে কথা বলতে হবে এমন নয়। কেউ কেউ আমাকে অসামাজিক ভাবে। তবে এটা নিয়ে তেমন ভাবিও না। "
ছন্দা একটু মুচকি হাসি দিয়ে জিজ্ঞেস করলো," ডা: পাপন নামের লোকটার সাথে পরিচিত হয়ে ছিলেন? "
অরুনিমা আন্তরিকতার সাথেই উত্তর দিলো," একদিন শপিংমলে কিছু বাংলাদেশিদের সাথে ওনাকে দেখেছি। সাধারন পরিচয় হয়েছে কিন্তু কেন?

ছন্দা একটু থামলো। কিন্তু পিংকি হেসে দিলো। দুজনে দিজনের চোখের দিকে কোন এক রহস্য নিয়ে তাকালো।
তারপর পিংকি বলল," ডা: পাপন দেখতে যেমন ভেতরটা ঠিক উল্টা। উনি একটা ইন্দোনেশিয়ান ছাত্রীর সাথে লিভটুগেদার করে। উনার নাকি বাংলদেশে স্কুল পড়ুয়া তিনটা বাচ্চা আছে। "
অরুনিমা খুব অবাক হয়। জোরে নি:শ্বাস নিতে নিতে বলে, " দেখলে একদমই বুঝা যায় না। তবে ব্যাপারটা মনেহয় জনপ্রিয় গোপন বিষয়। "

ছন্দা আর পিংকি একসাথে হেসে দিলো। তারপর হাসতে হাসতে পিংকি পুনরায় বলল," জনপ্রিয় গোপন বিষয়!একদম সত্যি। শুনেছি উনার স্ত্রী আবারও প্রাগন্যান্ট।সে ভন্ডামি করে ফেসবুকে আপডেট দেয় যে সে ফ্যামিলি কে খুব মিস করছে। এদিকে ইন্দোনেশিয়ান আনন্দে আত্মহারা। হা হা হা। "
অরুনিমা বলল," এমন একজন মানুষের জন্য পুরো সমাজটার বদনাম। এমন ভদ্রবেশী শয়তান আমাদের সমাজের সব স্তরে। অথচ আমরা সমাজের মানুষগুলো তাদের মতো মানুষের যেকোন সফলতায় তাকে নিয়ে বিগলিত হয়ে যাই।সম্মানের উঁচু স্থানে বসিয়ে রাখি।"

পিংকি একটু সিরিয়াস ভাবে বলল," আমরা চিন্তা করে সম্মান করি না। অন্যকে দ্বারা প্রভাবিত হয়ে সম্মান করি।"
ছন্দা বলল, " খুব কম মানুষ নিজের বিবেক সাথে নিয়ে চিন্তা করে। বেশির ভাগ তার পাশের মানুষটির কথা দ্বারা প্রভাবিত হয়।"
পিংকিও কথার সাথে একমত হলো।তারপর বলল," যদি কোন ছেলে বা মেয়ের সম্পর্ক ভেঙেগ যায়। আর তারা যখন নতুন সম্পর্কে জড়িয়ে জীবন শুরু করে আমরা সমাজের মানুষ তাদের অতীত আর বর্তমান নিয়ে কথা বলতেই থাকি। কিন্তু ডা: পাপনের মতো অনেক পুৃরুষ অথবা মহিলা আছে একটি সম্পর্কের আড়ালে হাজারো নারী কিংবা পুরুষ নিয়ে মেতে আছে।সেটা নিয়ে কেউ কথা বলে না। কারন সেগুলো আড়ালে থাকে।অনেকেই এমন লোক দেখানো ভন্ডামি করে। "

ছন্দা আবার ও বলল," লোক দেখানো ভন্ডামিতেই এখন সমাজ রঙিন। চিন্তার সঠিক চর্চা এবং বিকাশের সংস্কৃতি বাংলাদেশে নেই। "

তারপর তিনজন সাইকেল নিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে গেলো। চারপাশে অদ্ভূত স্নিগ্ধ পরিবেশ।স্নিগ্ধ বাতাসে সূর্যের হালকা আন্তরিক তাপ। সূর্যের কাছ থেকে আসা সোনাঝোরা রৌদ্রছায়া কেমন পুরো শরীরটা ছুয়েঁ ছুয়েঁ যায়।এমন মন মাতাল করা পরিবেশে নিজেকে মুক্ত বিহঙ্গের মতো মনে হচেছ। বরফে ঢাকা পথটা অল্প কিছুদিনের মধ্যে পরিস্কার পরিচ্ছন্ন হয়ে সুন্দর পরিবেশ সৃষ্টি করেছে।

এই পরিবেশে তিনজন বাংলাদেশি মেয়ে মনের আনন্দে সাইকেল নিয়ে ঘুরে বেড়াচেছ। এমন দৃশ্য গুলো নিজের মাতৃভূমি তে কম দেখা যায় বা কোথাও আশা করা যায় না।
সাইকেল নিয়ে তিনজন কিছুটা পথ এক সাথে আসার পর অরুনিমা বলল," আপনাদের দেখলে আমার ভেতরে খুব ভালো লাগা কাজ করে। মনেহয় জাপানের নিরাপদ পরিবেশে সদ্য বিবাহিতা নববধূরা সাইকেল নিয়ে পাখির মতো স্বাধীন ভাবে ইড়ে বেড়াচেছন।"
পিংকি বলল," বাংলাদেশে এখনও নারীকে দমিয়ে রাখার জন্য অনেক রকমের ফাদঁ পাতানো থাকে। প্রতারনার যেনো শেষ নেই। "
ছন্দা বলল, " প্রতারনামূলক কিন্তু এই সুন্দর জীবনকেই ভালোবেসে বেচেঁ থাকতে হয়। "
জীবনের গভীরতম সত্য গুলো জেনে বুঝেই আমাদের জীবন রচনা করতে হয়। আর সে জীবন এবং নিয়তির কাছে মানুষ অসহায় হয়ে পড়ে।

হোক্কাইডো বিশ্ব বিদ্যালয়ের সারি সারি গাছ গুলো শীতের আড়ঁমোড়া ভেঙে একটু একটু করে জেগে উঠছে। আর কিছুদিন পর থেকে তুষাড়কনায় ভেজা শীতল রাস্তা গুলো গ্রীষ্মের দমকা হাওয়ায় আনন্দে মেতে উঠবে। গাছে গাছে ছেয়ে যাবে সব সবুজ আনন্দে।জিংগিস খান আর বারবি কিউ পার্টিতে ব্যস্ত হয়ে উঠবে শিক্ষার্থীরা।

প্রতিনিয়ত যা কিছুই ঘটে যাক জীবন থেমে থাকে না কোন কিছুতে।জীবনের নিয়মকে আটকানো যায় না কোন কিছু দিয়ে।
তাই তিনজন বাংলাদেশি তরুনী জীবনের সব নিয়মকে সঙ্গী করে সামনের দিকে এগিয়ে যায়। আর পৃথিবীর সব সৌন্দর্য চেয়ে থাকে তাদের স্বাধীন জীবনের পথের দিকে।

উপন্যাস "অরোরা টাউন"
পর্ব ৯
নুরুন নাহার লিলিয়ান

পৃথিবীর যেকোন দেশ থেকে উপন্যাস "অরোরা টাউন " পড়া যাবে ইবুক এ্যাপসে লিংক কমেন্ট

#গল্প #উপন্যাস #বইটই ゚viralシ ゚viral #উপন্যাস #বইটই

Address

Kalabaga

Alerts

Be the first to know and let us send you an email when Lilian's Literature Cafe posts news and promotions. Your email address will not be used for any other purpose, and you can unsubscribe at any time.

Contact The Business

Send a message to Lilian's Literature Cafe:

Videos

Share

লিলিয়ান লিটারেচার ক্যাফের ক্যানভাস

লিলিয়ান লিটারেচার ক্যাফে একটি স্বয়ং সম্পূর্ণ সাহিত্য ক্যাফে। সাহিত্যিকদের শিল্পিত প্লাটফর্ম । এখানে বই প্রকাশ , পরিবেশনা , বাজারজাতকরন , সততার সাথে পাঠকের কাছে পৌঁছে দেওয়ার মত নানা রকম কার্যক্রমে অঙ্গীকারবদ্ধ । এছাড়া ও লেখক পাঠকের মধ্যে সেতু বন্ধনে নানা রকম আয়োজন করে থাকে । সকল সাহিত্য প্রেমিদের এই পেজে সুস্বাগতম ।

Nearby media companies


Other Digital creator in Kalabaga

Show All