18/08/2024
শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় নুরুল ইসলামের দাফন
দক্ষিণবঙ্গের বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ, আইয়ুব খান বিরোধী আন্দোনের নেতা ও মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক যশোরের বীর মুক্তিযোদ্ধা নুরুল ইসলামের দাফন সম্পন্ন হয়েছে। রোববার দুপুরে বাঘারপাড়ার যাদবপুর ঈদগাহ মাঠে তাকে রাষ্ট্রের পক্ষে গার্ড অব অনার প্রদান করা হয়।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন, উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আবু ইউসুফ, থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রকিবুজ্জামান, ওসি তদন্ত মকবুল হোসেনসহ একদল চৌকস পুলিশ সদস্য।
এর আগে শনিবার নুরুল ইসলাম যশোর সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিলো ৮১ বছর। স্ত্রী, চার পুত্র ও এক কন্যাসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন তিনি।
পারিবারিকভাবে জানা যায়, দীর্ঘদিন ধরে কিডনি রোগে আক্রান্ত হয়ে নুরুল ইসলাম ডায়ালাইসিসের ওপর নির্ভরশীল ছিলেন। শনিবার দুপুরে শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে সিএমএইচে ভর্তি করলে বিকেলে মারা যান।
এদিকে, বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ নুরুল ইসলামের শোকাহত পরিবারকে সমবেদনা জানাতে আসেন বিএনপির খুলনা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিত। এছাড়া শোক প্রকাশ করেছেন, যশোর উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কমান্ড, বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতা-কর্মী, সাংবাদিক ও সামাজিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।
রোববার দুপুরে গার্ড অব অনার প্রদান শেষে যাদবপুর ঈদগাহ মাঠে অনুষ্ঠিত জানাজায় অংশ নেন, মরহুমের ভাইপো জনপ্রশাসন মন্ত্রণালের উপ-সচিব সাজেদুর রহমান সবুজ, বাঘারপাড়া উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের ডেপুটি কমান্ডার একিন উদ্দীন, বীর মুক্তিযোদ্ধা আলতাফ হোসেন, যাদবপুর টেকনিক্যাল কলেজিয়েট স্কুলের অধ্যক্ষ আক্তারুজ্জামান, মরহুমের মেজ ছেলে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর বিগ্রেডিয়ার জেনারেল মুজাহিদুল ইসলাম, সেজ ছেলে যশোর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক শরিফুল ইসলাম লেলিন ও ছোট ছেলে বেসরকারি বিমান সংস্থা নভোএয়ারের পাইলট সিরাজুল ইসলামসহ বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুজন। জানাজা শেষে বিকেলে নুরুল ইসলামকে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়।
১৯৪৩ সালের ১৫ এপ্রিল বাঘারপাড়া উপজেলার জহুরপুর ইউনিয়নের যাদবপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন নুরুল ইসলাম। বকতিয়ার বিশ্বাস বক্তের চার পুত্র সন্তানের মধ্যে দ্বিতীয়। নুরুল যশোর মুসলিম একাডেমি থেকে কৃতিত্বের সাথে ম্যাট্রিক (এসএসসি), ১৯৫৮ সালে যশোর সরকারি এমএম কলেজ থেকে বি.কম (ডিগ্রি) পাস করেন। শুরুতে ছাত্র ইউনিয়নে যুক্ত ছিলেন তিনি। ১৯৬২ সালে যশোরে এমএম কলেজের জিএস (সাধারণ সম্পাদক) নির্বাচিত হন। আইয়ুব খান বিরোধী আন্দোলনে যশোরে নেতৃত্ব দিয়ে দক্ষিণবঙ্গের অন্যতম ছাত্রনেতা হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন তিনি। ১৯৬৬ সালে মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানীর রাজনৈতিক দল ন্যাপের যশোর জেলা সভাপতি ও কেন্দ্রীয় কৃষক সমিতির সদস্য নির্বাচিত হন। ওই সময়ে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, শেরে বাংলা একে ফজলুল হক, মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, হেমন্ত সরকার, আব্দুল হক প্রমুখ নেতার ঘনিষ্ঠ সান্নিধ্যে আসার সুযোগ হয় নুরুলের।
১৯৬২-১৯৭১ সালে বাঘারপাড়ার খাজুরা মনিন্দ্রনাথ মিত্র মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও ঝিনাইদহের কালীগঞ্জের চাপরাইল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেন। এরপর মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন। ১৯৭৩ সালে যশোর-৪ আসনে ন্যাপের কুঁড়েঘর প্রতীক নিয়ে সংসদ সদস্য পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। ১৯৭৫ উদীচী যশোরের সভাপতি নির্বাচিত হন। ওই বছরে বাকশাল গঠিত হলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তাকে যশোরের সেক্রেটারি (সাধারণ সম্পাদক) টু গর্ভনর করেন। ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু সপরিবারে নিহত হলে ওই রাতেই নুরুল ইসলামকে গ্রেফতার করা হয়।
Credit by: Akash
https://youtube.com/?si=TCG2KWmo9Weh-DsF