Ajijul Bari Sarker

Ajijul Bari Sarker সব কিছু আছে মনেরই মাঝে
আমার নিঃসঙ্গতার আমার সম্প্রচার
তোমার কাছে...

সরকারি তোলারাম কলেজে রসায়ন বিভাগের রজতজয়ন্তী (২৫ বছর) ও রসায়ন উৎসবের আমরা ব্যানার ডিজাইন করতে গিয়েছিলাম। এই ব্যানারের উপ...
16/12/2022

সরকারি তোলারাম কলেজে রসায়ন বিভাগের রজতজয়ন্তী (২৫ বছর) ও রসায়ন উৎসবের আমরা ব্যানার ডিজাইন করতে গিয়েছিলাম। এই ব্যানারের উপরের ছন্দটি লিখেছে আরেফিন, তোফা আর রোমান মিলে।

জুন ২০১৮ - ডিসেম্বর ২০২২গুগল ম্যাপে আমার আপ্লোড করা ছবির ১ মিলিয়ন ভিউ কাউন্ট হয়েছে।
16/12/2022

জুন ২০১৮ - ডিসেম্বর ২০২২
গুগল ম্যাপে আমার আপ্লোড করা ছবির ১ মিলিয়ন ভিউ কাউন্ট হয়েছে।

27/10/2022

কুয়েটে আমি যেদিন প্রথম ভর্তি হই সেদিন ও জানতাম না How drastically KUET is going to change me, আট দশটা সাধারণ মেয়ের চেয়েও বেশি চঞ্চল, হুট করে অবাধ স্বাধীনতা পাওয়া আমি ধরেই নিসিলাম ভার্সিটি আসলে কোনো পড়াশোনার জায়গা না, ওই যে ওই কথাটার মত, একবার ভার্সিটিতে চান্স পেয়ে গেলে কিছুই পড়া লাগেনা, আর আশেপাশে সবার মত আমারো ধারণা ছিল ভার্সিটিতে যারা ফার্স্ট সেকেন্ড হয় ওরা বদ্ধ পাগল, আঁতেল অথবা ভীনগ্রহের অতিমানব জাতীয় কোনো পদার্থ।

ফলাফল যা হবার তাই, যারপরনাই পাশ করার মত রেজাল্ট এমনকি কোন এক দুই সাব্জেক্টে ফেলের চেয়ে একটু ভাল অর্থাৎ ডি গ্রেড। এরমাঝে বাসা ছেড়ে বাইরে চলে আসার এস্টেটিক হতাশা, অল্প বয়সে প্রেমে পড়া আর সত্যি বলতে গণরুমের কঠিন জায়গাটার চাপ তো কিছু ছিলই!

যে গল্পটা আমি সারাজীবন ভাবতাম কাউকে বলব না, আজকে সেই গল্পটাই লিখে রাখছি এই জন্য যাতে অনেক বুড়ো হয়ে গেলেও খুব ভালো মতন মনে পড়ে What I am today, most of the credit goes to KUET. What I am not today most of the discredit goest to KUET as well.

ফার্স্ট ইয়ার ওইরকম উচ্ছন্নেই গেল। সেকেন্ড ইয়ার ফার্স্ট সেমিস্টার, ক্লাসে মন বসে না, আমি ক্লাসে বসে লেকচার না তুলে গান লিখি, কখনো ছবি আঁকি, সারারাত ফেসবুকিং করি, গল্প করি, ল্যাব রিপোর্ট লেখি ক্লাসে, কোনো স্যারের ভাষাও বুঝিনা, ক্লাসে কি পড়ায় তাও জানিনা। সেই ২-১ সেমিস্টারেই ক্লাস নিতেন কামরুল স্যার, কোর্স EE2111 সম্ভবত। একদিন ধরা খেলাম ক্লাসে বসে ল্যাব রিপোর্ট লেখায়, স্যার ল্যাব রিপোর্ট ছিড়ে ফেললেন সবার সামনে, এর আগেও নানান স্যারের কাছে বকা খেয়ে আসছি প্রতিদিন, ক্লাসে মোবাইল চালাই, পড়া ধরলে পারিনা বিভিন্ন কারণ, কিন্তু সেদিনের ল্যাব রিপোর্ট ছেড়ার ব্যাপারটা একটু বেশিই অপমানজনক। এরপর আসল ইলেক্ট্রিকাল সিটি, আরো অনেকের মত আমিও ২০ এ ০ পেলাম।

ওহ ভুলে গেছিলাম স্যার ছিল আমার রোলমেট, সংগত কারণে খারাপ ছাত্রী হিসেবেই স্যার আমাকে জানতেন এবং প্রচন্ড রাগ নিয়ে আমাকে বলেছিলেন "তুমি ৫১ রোলটার সম্মান নষ্ট করতেছ, you dont deserve this" এবং এই একটা লাইন ছিল এখন পর্যন্ত আমার জীবনের সবচেয়ে অপমানজনক, সবচেয়ে কষ্টকর গিলে ফেলার মত এবং for my life time I wont forget this ever that there is something else that I dont deserve. এইটা আমার মানতে ইচ্ছা করল না। আমি হলে গিয়ে আস্তে আস্তে পড়া বোঝার চেষ্টা করলাম, প্রথম প্রথম প্রচন্ড অপমানে আমার কান্না আসত, কিছুই মাথায় ঢুকত না, সেই বছর রোজার ছুটিতে ইলেক্ট্রিকাল বইয়ের সব সার্কিট আমি একা সলভ করছিলাম আমার মনে আছে জাস্ট বিকজ I dont believe there is something i dont deserve.
ফলাফল খুব একটা ভাল হওয়ার আগেই কোনো এক সু(!!) বন্ধু ইলেক্ট্রিকাল ক্লাসেই আমার প্রক্সি দিল, ফলাফল যা হবার তাই, স্যার একরকম আমাকে চিহ্নিতকরণ পূর্বক ক্লাস থেকে বের করে দিয়ে একদম ইলেক্ট্রিকাল বিল্ডিং থেকে টেক্সটাইল হেডের রুমে পাঠালেন, একই সাথে একটু একটু করে ভাল করার চেষ্টাটা বিফলে যাওয়ার কষ্ট আর দোষ না করেও শাস্তি পাওয়ার কষ্টে আমি হাউমাউ করে কাঁদলাম এবং ওই শেষবার আমি হেরে যাওয়ার কষ্টে কাদছিলাম।

নিজের উপর প্রচন্ড জেদ হল, ক্লাসে যে মেয়েটা ফার্স্ট হয় সে যদি পারে আমি কেন পারব না, ২-২ সেমিস্টার শুরু করার আগে determined হলাম। সব ক্লাস মন দিয়ে করা, এমন কোনো কিছু নাই যেটা আমি শেখার চেষ্টা করিনাই। ততদিনে কামরুল স্যার ও হায়ার স্টাডিজের জন্য দেশের বাইরে চলে গেছেন।
মানুষের যদি ১০ বার পড়লে মনে থাকত, আমি সেটা ৫০ বার পড়তাম, এখনো মনে আছে ২-২ তে মেকানিক্স এন্ড মেশিন ডিজাইনের কিছু বিশ্রি ম্যাথ ছিল, এমনও ম্যাথ ছিল আমি ৮৯ বার প্রাকটিস করছিলাম। ২-২ পরীক্ষা দিয়ে বাসায় আসলাম ঢাকায়।

বাসায় এসে আব্বা আম্মাকে সামনে রেখে বললাম এই প্রথম আমি জীবনের সবচেয়ে বেশি পরিশ্রম করছি, আমি প্রমাণ চাই, অল্প মেধা থাকলেও পরিশ্রম মানুষকে ভাল ফল দিতে পারে। এই সেমিস্টার এ আমি সবচেয়ে ভাল পরীক্ষা দিয়ে আসছি। আমি ফার্স্ট হব। রুমমেট এবং অনেকেই আমাকে বুঝাইছিল ভার্সিটি লাইফে টিচাররা সবাই নাকি মুখ চিনে মার্ক দেয়,একবার যে ফার্স্ট হয় সেই বারবার ফার্স্ট হয়, নাহলে সেকেন্ড থার্ড এরাই ভাল করে, সিরিয়ালের একেবারে পেছন থেকে এসে কেউ কোনোদিন ফার্স্ট হয়না।

আমি আব্বু আম্মুকে বললাম এইবার আমি ফার্স্ট না হলে আর কোনোদিন পড়াশোনা করব না, বিসিএসের বই খাতা কিনব, ইঞ্জিনিয়ারিং আমাকে দিয়ে হবেনা।

কিন্তু আমাকে দিয়ে হল। আমি ৩.১১ থেকে ৩.৯৪ পেয়ে সেই সেমিস্টারে ফার্স্ট হলাম, সবাই অবাক হল, শুধু অবাক হইনাই আমি, I remember what I get that I deserve. বিশ্বাস হইল চেষ্টা করলে সবই সম্ভব। বিশ্বাস হইল ভার্সিটিতে কেউ মুখ চিনে খাতা দেখে না, ভার্সিটিতে একদম পিছন থেকে এসেও ফার্স্ট হওয়া যায়।

এরপরের সেমিস্টার এ টার্গেট আরো শক্ত। ৪ এ ৪ পেতে হবে। তখনো আমার ব্যাচে কেউ ৪ পায়নাই, আমি চেষ্টা করতে থাকলাম। আমি তিনটা টিউশনি করতাম, নিজের খরচ নিজেই চালানোর চেষ্টা করতাম, প্রেম ও করতাম এরপরে হলে এসে পড়তাম, কুয়েটের প্রচন্ড গরমে আমি খাটের চারপাশে বিছানার চাদর আটকায় পড়তাম যাতে কারো মুখ দেখে ডিস্ট্রাক্ট না হই।
হয়তো ব্যাপার গুলা ততটাও কঠিন না কিন্তু আমার মত স্বল্প মেধাসম্পন্ন মানুষের জন্য ততটাই কঠিন কারণ মানুষের যেটা একবারে হইত আমার সেটা বুঝতে লাগত ১০ বার, ৩-১ এ একাউন্টিং পরীক্ষার দুইদিন আগেও আমি ডিপার্টমেন্ট এর প্রোগ্রামে এংকরিং করছি, কোনোদিন কোনো ট্যুর মিস দেইনাই, কোনোদিন কোনো হ্যাং আউট মিস দেইনাই, সব পেয়ে রুমে এসে আবারো কঠিন পরিশ্রম করছি।
সেমিস্টার পরীক্ষার দীর্ঘ ২৬ দিন সেই বছর আমি ঘুমাইছি দৈনিক এক ঘন্টা। সবাই ৬ সেট বা ৮ সেটের প্রিপারেশন নিল আমি নিলাম পুরা বইয়ের। টার্গেট একটাই, চার।
কোনো একজন ক্লোজ বান্ধবি এই অবস্থা দেখে পরীক্ষার আগের রাতে এসে বলল এবার এত চেষ্টা করলেও তুই ফার্স্ট হবি না, আগেরবার মিশফা ফার্স্ট হয়নাই এবার সে হবেই।
মিশফার প্রতি পূর্ণ সম্মান রেখেই বলতেছি মিশফা ফার্স্ট হোক বা যা ই হোক, আমার লক্ষ্য ছিল চার। আমি সেইবার চার পেলাম।

সেদিন বাসায় এসে ক্যালকুলেটর এ গুনলাম, ৩-১ থেকে সামনের সব সেমিস্টার এ আমি যদি ৪ পাই আমার সিজিপিএ হবে ৩.৭৩ আর মিশফা তো নিশ্চিত ৩.৯ এর উপরে। তার সাথে আমার কোনোদিন কোনো ককম্পিটিশন ছিল না ঠিক, কিন্তু আমার লক্ষ্য সেদিন থেকে শুরু হল, When I will leave Kuet, I will not leave without having 3.73 in my bag. অর্থাৎ সামনের সবগুলো সেমিস্টারে ৪ পেতে হবে।

সেদিনের পর আর কোনোদিন পেছনে ফিরতে হয়নাই, শেষ চারটা সেমিস্টারেই আমি ৪ পেয়েছিলাম, জোড় সেমিস্টারের প্রচন্ড ঠান্ডার রাতে হলের বারান্দায় বসে পড়ছি আমি, দিনে সবাই জেগে থাকত, পড়া হতোনা তাই কোনো পিএলে আমি দুপুরে ভাত খাইনাই, ওই সময়টায় আমি ঘুমাতাম, খাইতাম সেদ্ধ কাপ নুডলস, আর সারারাত জেগে থাকতাম। দৈনিক ঘুমাতাম ৩ ঘন্টা।

রোদ, বৃষ্টি, ভূমিকম্প কোনোদিন কোনো ক্লাস মিস দিতাম না, কোনো কারণে মিস হলে লেকচার রেকর্ড করতাম, বাসায় এসে নোট করতাম। যত কঠিন যত অসাধ্য আমি তত বেশি আগ্রাসি হয়ে উঠলাম এমনকি মনে আছে ৩-২ এর সময় নির্বাচনের জন্য হল ভ্যাকান্ট করে দিল, বাসায় এসে দেখি পড়াশোনা হয়না, আবার ক্যাম্পাস ফেরত গেলাম।

স্বপ্ন ছিল যে বিশ্ববিদ্যালয় আমার পুরা গল্পটাকে এভাবে পাল্টে দিছে সেই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হব আমি। সবচেয়ে স্বল্প মেধাবী কিন্তু সবচেয়ে পরিশ্রমী একজন মানুষ হিসেবে নিজের গল্পটা আমি আমার স্টুডেন্টদের শোনাব, কিন্তু সেই স্বপ্ন শেষ পর্যন্ত আর সত্যি হয়নাই।
শেষের দিকে আমি অপেক্ষা করতাম কামরুল স্যার ফেরত আসলে একদিন ধন্যবাদ দিব, হয়তো উনি সেদিন সেইভাবে না বললে নিজেকে আর চেনাই হইত না।

কামরুল স্যার ফেরত আসলেন, ভয়ে কিংবা সংকোচে আর কোনোদিন বলা হয়নাই, ধন্যবাদ ও সেইভাবে দেয়া হয়নাই। পাশ করার আগেই চাকরি পেলাম। এখন আমার আর আমার সেই গল্পের কুয়েটের মাঝে বিস্তর দূরত্ব।

আজকে কুয়েটে শিক্ষক নিয়োগের আবেদন জমার শেষ দিন ছিল। আমি এখন স্ব-কর্মস্থলে ভালো একটি অবস্থানেই আছি। হয়তো যে স্বপ্নটা অনেক পরে আমার মধ্যে কাজ করছিল সেটা আমারো আগে অন্য কেউ প্রাপ্য হয়ে গেছে। যিনি শিক্ষক হবেন তিনি নিশ্চয়ই আমার চেয়ে অনেক বেশি ওই অবস্থানটা পাবার যোগ্য, তবুও এই দিনটায় এসে আমার মনে হয় আমার কুয়েট চ্যাপ্টার এখানেই শেষ।

ধন্যবাদ কুয়েট। আমাকে আজকের আমিতে পরিণত করার জন্য, ধন্যবাদ কুয়েট, এই অসম্ভব জেদি কনফিডেন্স আমাকে চেনার জগৎটা দেখানোর জন্য।
একটা না পাওয়া অসম্ভব মরিচীকার পিছে ছুটতে ছুটতে আমি বিশ্বাস করতে শিখেছি there is nothing in this world that you dont deserve, there is nothing in this world that is impossible. All good wills will make a very different way. Today or Tomorrow 🙂

লেখক: সানজিদা রশীদ বহ্নি
টেক্সটাইল'১৫

Photo Credit : Rakib Hasan Shuvoসাবদি, বন্দর, নারায়ণগঞ্জ
27/10/2022

Photo Credit : Rakib Hasan Shuvo

সাবদি, বন্দর, নারায়ণগঞ্জ

21/10/2022

কী শেখালো হার্ভার্ড?

দুবছর আগে যে স্বপ্নময় যাত্রা শুরু করেছিলাম, তার বিদায়ঘণ্টা বাজছে।বান্দরবান থেকে বোস্টন- যাত্রাটা ছিল অবিশ্বাস্য, অদ্ভুত, বিচিত্র, কিমাশ্চর্যম! বাংলাদেশ-মায়ানমার বর্ডারে রোহিঙ্গা সংকটের মাঝামাঝি দাঁড়িয়ে কল্পনাও করতে পারিনি একদিন পা রাখব বিশ্বের অন্যতম শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপীঠে, সহপাঠী হিসেবে পাবো সারা বিশ্ব থেকে ছেঁকে আনা অসামান্য সব মানুষদের, সরাসরি বসতে পারবো বর্তমান বিশ্বের সর্বোচ্চ মননশীল কিছু শিক্ষকদের ক্লাসে।দশ বছর বয়েসে সর্বপ্রথম যে বিদ্যাপীঠের নাম শুনি, প্রায় পঁচিশ বছর পর সেখান থেকে গ্রাজুয়েশন করাটা আমার মত সামান্য মানুষের জন্যে অনেকটা স্বপ্ন স্পর্শ করার মতই আনন্দের।

তবে এই হরিষেও লুকিয়ে আছে বিষাদ- আগামী আঠাশ তারিখ যে কনভোকেশন হবে সেটা হবে শুধুই অনলাইনে। করোনা অতিমারীর এই ক্রান্তিকাল ছিনিয়ে নিয়েছে আমার অতি সযতনে লালিত একটা সুপ্ত ইচ্ছে- বাবা মা কে দুপাশে রেখে গ্রাজুয়েশনের কালো গাউন পরে জন হার্ভার্ডের মূর্তিকে পেছনে রেখে একটা ছবি তুলব- তা আর হল কই? এ কথা মা কে বলতেই মা বললেন, দেখ, কত মানুষ এ অতিমারীতে সর্বস্ব হারিয়েছে, সে তুলনায় এ আর কি? ভেবে দেখলাম, আসলেই তাই।

দু বছরে যা শিখেছি, তা কি দু পৃষ্ঠায় তুলে ধরা সম্ভব? নাহ- সম্ভব না।কিন্তু মোটা দাগে মূল অনুধাবনগুলো তো তুলে ধরা যায়! সে চেষ্টাই করা যাক!

হার্ভার্ডের প্রথম শিক্ষা হচ্ছে, প্রতিষ্ঠান মানুষকে বড় করে না- মানুষই প্রতিষ্ঠানকে বড় করে। প্রতিষ্ঠান মানুষকে একটা প্ল্যাটফর্ম দেয় মাত্র; মানবসত্তার সর্বোচ্চ উন্মেষে বিশ্ববিদ্যালয় বা প্রথাগত শিক্ষা অপরিহার্য নয় এটা বঙ্গবন্ধু, মহাত্মা গান্ধী, নজরুল সহ হাজার হাজার “অক্সফোর্ড-হার্ভার্ডে-না-পড়া” মহামানবেরা অজস্রবার প্রমাণ করেছেন। এটা মাথায় রেখেও একজন সদ্য হার্ভার্ড গ্রাজুয়েট হিসেবে সবচাইতে ভীতিকর যে প্রশ্নটি আমি নিজেকে করি, সেটি হচ্ছে- আমি কি আসলেই এর যোগ্য? কি হবে যদি এই “হার্ভার্ড” ট্যাগটাই আমার জীবনের সর্বোচ্চ অর্জন হয়? আমার এপিটাফে যদি এটা লেখা থাকে, “এখানে ঘুমিয়ে আছে মাসরুফ হোসেন, যে একদা হার্ভার্ডে পড়াশোনা করেছিল”- এর চাইতে হাস্যকর, মর্মান্তিক আর বিব্রতকর কি হতে পারে? দুটো বছর আমাকে যে শিক্ষা দেয়া হয়েছে, ওটা যদি কারো কোনো কাজেই না আসে, তাহলে এত এত সময়, শ্রম আর অর্থ ব্যয় পুরোটাই ব্যর্থ। সমস্যা হচ্ছে, পূর্বসুরীদের মধ্যে নোবেল বিজয়ী, প্রেসিডেন্ট/প্রধানমন্ত্রী, বিলিওনেয়ার এবং গত চারশ বছরের বড় বড় রথী মহারথীরা রয়েছেন।এঁদের অর্জনের সামনে দাঁড়ানো মানে পর্বতের সামনে মূষিক হিসেবে অবস্থান করার মতই।হিসেব করে দেখলাম, গত পঁয়ত্রিশ বছরে মানবজাতি বা নিদেনপক্ষে দেশের সমাজে কিংবা জ্ঞানের ভাণ্ডারে এই অধমের উল্লেখ করার মত এক বিন্দু অবদানও নেই।সম্পূর্ণ শূন্য ভাণ্ডার, পুরোটাই নিঃস্ব, রিক্ত। সমুদ্রের পাশে দাঁড়িয়ে পিপীলিকা যেমন অনুভব করে, এই অনুভূতিটাই আমার প্রথম শিক্ষা।পঁয়ত্রিশ বছরেও এত এত সুযোগ পাওয়া স্বত্বেও স্রেফ খাওয়া, ঘুমানো আর নিজের ফূর্তিতে দু চারটে বই পড়া ছাড়া আর কিছুই করতে পারিনি, পশ্চাদ্দেশে এই পদাঘাতের অনুভূতিটা হার্ভার্ড থেকে পাওয়া জ্ঞানের সর্বপ্রথম এবং অতি জরুরি হীরকখণ্ড-বিশেষ। বাকি জীবন কাটবে এই পরিস্থিতি পাল্টানোর সংগ্রামে, এ দিব্যি বুঝতে পারছি।

হার্ভার্ডের দ্বিতীয় শিক্ষার কথা বলতে গেলে চলে আসবে অমর্ত্য সেন, এরিক মাসকিন, জ্যাক যশট্যাক আর মাইকেল ক্রেমারের কথা। এই চারজনই নোবেল বিজয়ী, জ্যাক যশট্যাক বাদে বাকি তিনজনই অর্থনীতিতে, জ্যাক কেবলমাত্র চিকিৎসাবিজ্ঞানের।এর মধ্যে প্রফেসর সেন এবং প্রফেসর ম্যাসকিনের আমি সরাসরি ছাত্র, বাকি দুজনের সান্নিধ্যে এসেছি তাঁদের লেকচারে অংশ নিতে গিয়ে।এই চারজনের মধ্যে সবচাইতে কমন যে বৈশিষ্ট্যটি সেটি হচ্ছে একদম অকপটে “আমি জানি না” এই কথাটি বলতে পারা। এই অভিজ্ঞতা প্রথম হয়েছিল মহামনীষী অমর্ত্য সেনের অফিসে। তখনও উনার কোর্স নেইনি, দুরু দুরু বক্ষে শুধু দেখা করতে গিয়েছি।বাংলাদেশের রাজনৈতিক অর্থনীতি নিয়ে একটা প্রশ্ন করতেই তিনি মৃদু হেসে বললেন, দেখো, এটা চমৎকার একটা প্রশ্ন- এ নিয়ে বই লেখা যেতে পারে, কিন্তু এটা আমার জ্ঞানের বাইরে। আমি অর্থনীতিতে সামান্য কিছু অবদান রেখেছি মানে তো আর এই না যে আমি সর্ববিষয়ে জ্ঞানী।তুমি বরং এ বিষয়ে যিনি বিশেষজ্ঞ এমন কারো সাথে দেখা করো। একই অভিজ্ঞতা মাইকেল ক্রেমারের সাথেও। গতবছর এমআইটি এর অভিজিৎ ব্যানার্জি আর এস্টার দুফলো এর সাথে হার্ভার্ড থেকে নোবেল পুরষ্কার পেলেন মাইকেল ক্রেমার।তাঁকে বাংলাদেশের অর্থনীতি নিয়ে একটা প্রশ্ন করতেই তিনি বললেন- এর তিনটা উত্তর আছে। প্রথমটা হচ্ছে, আমি জানি না। দ্বিতীয়টা হচ্ছে, আন্দাজে তোমাকে কিছু একটা বলতে গেলে সেটা ভুল হবে। আর তৃতীয় উত্তর হচ্ছে, তুমি বরং ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের মুশফিক মোবারকের সাথে (বাংলাদেশি-আমেরিকান অর্থনীতিবিদ) যোগাযোগ করো- আমার কথা বলো।ওর এ বিষয়ে রিসার্চ আছে, ও ভাল বলতে পারবে।

আমাদের প্রতিবেশী আরেকটা বিশ্ববিখ্যাত প্রতিষ্ঠান ম্যাসাচুসেটস ইন্সটিটিউট অফ টেকনোলজিতে (এমআইটি) শুনতে গিয়েছিলাম দুহাজার পাঁচ সালে চিকিৎসাবিজ্ঞানে নোবেল বিজয়ী জ্যাক যশট্যাকের লেকচার।পাশে দাঁড়িয়ে ছবি তুলতে যেতেই ভীষণ লজ্জা পেয়ে বললেন, দেখো, আমার চাইতে অনেক গুরুত্বপূর্ণ গবেষণা করা লোকজন এসব পুরষ্কার পায়নি, এ নিয়ে অত মাথা ঘামিও না। বরং একটা সমস্যা পছন্দ করো যেটা নিয়ে খুব বেশি কাজ হয়নি এবং যেটা নিয়ে দীর্ঘ সময় ধরে ভাবতে তুমি বিরক্ত হবে না। লেগে থাকো, দেখবে সেটার সমাধানও হবে, সাথে পুরষ্কারও আসবে। আর না এলেই বা ক্ষতি কি? যে আনন্দটা পাবে তার কাছে পুরষ্কার কিছুই না। সর্বশেষ জন, এরিক ম্যাসকিন অমর্ত্য সেনের সাথে সহশিক্ষক হিসেবে পড়াতেন দর্শনের একটা কোর্স। ইনি যে এত বড় ব্যক্তিত্ব, অর্থনীতির বর্তমান দিকপালদের একজন- এটা পুরো সেমেস্টারে তাঁর পাশের সীটে বসে ক্লাস করেও বুঝতে পারিনি।জানিও নি যে অমর্ত্য সেনের সাথে সাথে আরেকজন নোবেল বিজয়ী একই ক্লাসে আমাদের পড়াচ্ছেন- কেউ জানানোর প্রয়োজনও বোধ করেনি!এই যে নিজের জ্ঞানের সীমাবদ্ধতা সম্পর্কে জ্ঞাত থেকে কোথায় থামতে হবে এটা জানা এবং সুস্পষ্টভাবে নিজের না জানাকে সবার সামনে স্বীকার করে নেয়া- হার্ভার্ডে এটা আমার দ্বিতীয় শিক্ষা।

মহাভারতের গল্পে যক্ষ যুধিষ্ঠিরকে জিজ্ঞাসা করেছিল, হে যুধিষ্ঠির, এ পৃথিবীর সবচাইতে আশ্চর্য বিষয় কি? যুধিষ্ঠির বলেছিলেন, এই যে প্রতিদিন এত শত শত লোক মৃত্যুবরণ করে তাও মানুষ এমন ভাবে চলাফেরা করে যেন তার মৃত্যু হবেনা হাজার বছরেও- এটাই সবচাইতে আশ্চর্যের ব্যাপার।যদি আমার কাছে কেউ জিজ্ঞাসা করেন, আমার উত্তরটি হচ্ছে, “এই যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একই ব্যক্তি রবীন্দ্রনাথের চেয়ে ভাল সাহিত্য বোঝে, সক্রেটিসের চেয়ে দর্শন বেশি বোঝে, সত্যজিৎ রায়ের চেয়ে সিনেমা বেশি বোঝে, ডক্টর ফাউচির চাইতে করোনাভাইরাস বেশি বোঝে এবং নেপোলিয়নের চাইতে যুদ্ধবিদ্যা বেশি বোঝে- এটাই বর্তমান পৃথিবীর সবচাইতে বড় অবাক হবার মত বিষয়”। অথচ আমার দেখা এই মনীষী-চতুষ্টয় নিজের গবেষণার বিষয়ের বাইরে এক বিন্দুও জাহির করতে যান না, বিনয়াবনত থাকেন প্রতি মুহূর্তে- সরাসরি বলেন নিজেদের জ্ঞানের সীমাবদ্ধতার কথা-এই বিনয়টা হার্ভার্ডে আমার দ্বিতীয় শিক্ষা। এনাদের মত বিনয় অর্জন এক জীবনে অসম্ভবের কাছাকাছি, কাজেই, যথারীতি আগামী দিনগুলো কাটাতে হবে বিনয়ের সাধনায়-এটাও পরিষ্কার।

তৃতীয় যে শিক্ষাটি, এটাকে হার্ভার্ড না বলে আমেরিকার মূল শিক্ষা বলা যেতে পারে- বাকস্বাধীনতা বা ফ্রিডম অফ স্পিচ। রেভারেন্ড ব্রায়ান হেয়ার নামে প্রায় আশি বছর বয়স্ক একজন প্রফেসর আছেন হার্ভার্ড কেনেডি স্কুলে।তিনি হেনরি কিসিঞ্জারের টিচিং এ্যাসিস্টেন্ট ছিলেন, তার কাছ থেকে শিখেছেন আন্তর্জাতিক সম্পর্কের অলিগলি। শক্তিপ্রয়োগের নীতি কোর্সে যতবার তিনি কিসিঞ্জারের প্রসঙ্গ এনেছেন, ততবার সবার সামনে আমি তাঁকে মনে করিয়ে দিয়েছি উনিশশ একাত্তর সালে বাঙালির গণহত্যায় এই নৃশংস মানুষটির ভূমিকার কথা। ফাইনাল টার্মপেপারে সরাসরি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে কিসিঞ্জারকে এবং আমেরিকার নীতিকে অমানবিক, অপরাধমূলক, মানবতাবিরোধী এবং যুদ্ধাপরাধের শামিল হিসেবে বর্ণনা করেছি। আমার ধারণা ছিল এই কোর্সে প্রফেসর আমাকে ভাল নম্বর দেবেন না। তিনি শুধু সর্বোচ্চ নম্বরই দেন নি, হাতে লেখা নোট-এ সেই পেপারটির প্রশংসাও করেছিলেন।

এই যে ব্যক্তিগত বিশ্বাসের ঊর্ধ্বে উঠে নিরপেক্ষভাবে ভিন্ন একটি দৃষ্টিভঙ্গীকে মূল্যায়ন, এটা আমার কাছে অনেকটা ভিনগ্রহের বস্তু বলে মনে হয়েছিল। ধর্মতত্ত্ব স্কুলে গিয়েছিলাম প্রফেসর ফ্রান্সিস ক্লুনির অধীনে গীতা পড়তে, সেখানে আমি একমাত্র মুসলিম- বেশ কয়েকজন সনাতন ধর্মাবলম্বী, একজন হিন্দু সন্ন্যাসী (স্বামী সর্বপ্রিয়ানন্দ), বাকিরা খ্রিশ্চিয়ান, বৌদ্ধ, বাহাই, জুয়িশ ও অন্যান্য। নাস্তিক, এ্যাগনস্টিক এবং স্পিরিচুয়ালও ছিল কেউ কেউ। মজার ব্যাপার, প্রফেসর ক্লুনি নিজে একজন খ্রিশ্চিয়ান জেসুইট সন্ন্যাসী, পরিষ্কার সংস্কৃত জানেন, তিনি গীতা এবং সনাতন ধর্মের একজন শ্রেষ্ঠ পশ্চিমা পণ্ডিত। তাঁর ক্লাসে গীতার কিছু কিছু ব্যাখ্যা নিয়ে দ্বিমত করেছি, প্রতিবাদ করেছি, তর্ক করেছি-এমনকি সরাসরি এটাও বলেছি যে এই ব্যাখ্যা আমার কাছে গ্রহণযোগ্য নয় এবং তা এই কারণে। কেউ মনের ভুলেও প্রশ্ন তোলেনি কিভাবে একজন মুসলমান হয়েও আমি গীতা নিয়ে এত তর্ক করছি। যেসব আমি ঠিক বলেছি তাঁরা সেটা মেনে নিয়েছেন, আর যেসব ভুল বলেছি সেগুলো তাঁরা শুধরিয়ে দিয়েছেন। আমার ধর্মপরিচয়টা এখানে উল্লেখযোগ্যই নয়, জ্ঞানার্জনের প্রচেষ্টাটিই এদের কাছে জরুরী। এঁরা আধবয়েসী ভিনদেশী ছাত্রের কাছ থেকে শিখতে লজ্জিত নন, ব্যক্তিগত ইগো এঁদের জ্ঞানার্জনে বাধা হয়ে দাঁড়ায় না।যা মনে আসে আমি মুখ ফুটে বলতে পারি কোনও রকমের ব্যক্তিগত ক্ষয়ক্ষতির ভয় ছাড়াই-এই অভিজ্ঞতাটি আমাকে শিখিয়েছে জ্ঞানচর্চার প্রকৃত পরিবেশ কিরকম হতে পারে। স্বপ্ন দেখি, আমাদের দেশেও এমন জ্ঞানচর্চার পরিবেশ গড়ে উঠবে।

চতুর্থ শিক্ষাটি পেয়েছিলাম হার্ভার্ড কেনেডি স্কুলের রেজিস্ট্রার অফিসে বসে। তখন সবেমাত্র সেকেন্ড সেমিস্টারের গ্রেডস হাতে পেয়েছি, টিপিকাল বাংলাদেশি ছাত্রের মত হিসেব করছি পয়েন্ট কোনটায় কিরকম, সিজিপিএ কেমন আসছে। বাহাদুরি দেখাতে গিয়ে এমআইটিতে কয়েকটা কট্টর টেকনিকাল কোর্স নিয়েছিলাম যেটার কোনো ব্যাকগ্রাউন্ড আমার ছিলোনা। ওই দুটো কোর্সে গ্রেড আশানুরূপ আসেনি, সেটা নিয়ে বার বার হিসেব কষছি। যেহেতু এমআইটি অন্য প্রতিষ্ঠান, সেখানের গ্রেড পয়েন্ট হার্ভার্ডের নিয়মে রূপান্তর করাটাও একটা ভেজালের কাজ। সব মিলিয়ে হাজারটা প্রশ্ন মাথায়, ইশ, যদি সিজিপিএ যদি একটু কমে যায়?! রেজিস্ট্রার অফিসে ফোন করে এগুলো জানতে চাইতেই বলল, ভাই, তোমার প্রশ্নের মাথামুণ্ডু কিচ্ছু বুঝতে পারছিনা, তুমি অফিস সময়ে চলে এসো আমার কাছে- দেখি কি কাহিনী তোমার।যাবার পর ওখানের দায়িত্বরত কর্মকর্তাকে বললাম, ভাই এই এই অবস্থা, আমি আমার সিজিপিএ হিসেব করব কিভাবে? প্রশ্নটা শুনে সে আমার দিকে প্রায় পাঁচ মিনিট তাকিয়ে থাকলো, তারপর বলল, সিজিপিএ হিসেব করে কি করবা তুমি? কি দরকার এইটা? আমার মাথায় হাত! সাউথ এশিয়ার ছাত্ররা পয়েন্ট জিরো জিরো ওয়ান সিজিপিএ বাড়ানোর আশায় পারলে আত্মবলিদান করে ফেলে আর এই গাধা বলে কি?!

বললাম, সিজিপিএ দিয়ে কি হবে মানে? যদি পিএইচডি করতে চাই, রিসার্চ করতে চাই, তাহলে সিজিপিএ দেখতে চাইবে না? আর এত কষ্ট করে পড়াশোনা করলাম সিজিপিএ হিসেব করতে পারবোনা মানে? রেজিস্ট্রার অফিসের কর্মকর্তা আমার প্রশ্নে আরো ভড়কে গেল। বলল, “কেন ভাই, তোমার ট্রান্সক্রিপ্টে তো লেখাই আছে কোন কোর্সে কি লেটার গ্রেড ( অর্থাৎ এ, এ মাইনাস, বি প্লাস ইত্যাদি) পেয়েছ, সেটা দিয়েই তো সবাই কাজ চালায়, সিজিপিএ নিয়ে মাস্টার্স লেভেলে এত মাথাব্যাথা কেন তোমার? আর ট্রান্সক্রিপ্টে তো সিজিপিএ লেখা থাকেনা কোথাও!”- এইবার আমার মাথায় হাত, ট্রান্সক্রিপ্টে সিজিপিএ লেখা থাকেনা?! হে ভগবান!তাহলে দিন রাত খেটে মরলাম কেন এতদিন?!” রেজিস্ট্রার অফিসের কর্মকর্তা উত্তর দিলো, দেখো ভাই, এখানের ধারণাটা হচ্ছে, ভর্তি যেহেতু হতে পেরেছ হার্ভার্ডে, একটা মিনিমাম লেভেলের বুদ্ধিশুদ্ধি তোমাদের সবার আছে- কেনেডি স্কুলে আমরা সব কোর্স মিলিয়ে এভারেজে বি মাইনাস (অর্থাৎ ৫ আউট অফ ১০) সিজিপিএ রাখলেই তাকে ডিগ্রির জন্য উপযুক্ত ভাবি। এই সিজিপিএ ক্যালকুলেশন করে রেজিস্ট্রার অফিস, কারো রেজাল্ট খুব খারাপ হলে তখন ওটা নিয়ে হিসেব নিকাশ করি আমরা যে কিভাবে ও পাস করে বের হবে, এ ছাড়া ছাত্রের ট্রান্সক্রিপ্ট বা নম্বর শিটে এই সিজিপিএ এর কোনও অস্তিত্বই থাকেনা। এর পেছনে কারণ হচ্ছে, তুমি কেনেডি স্কুলের ছাত্র, কিন্তু দেখা গেল তুমি নিজের কমফোর্ট জোনের বাইরে গিয়ে এমআইটি বা বিজনেস স্কুলে খুব কঠিন একটা কোর্স নিলে- এতে তোমার গ্রেড খারাপ এলেও এমন কিছু শিখতে পারলে যা হয়তো তোমার জীবনটাকেই পাল্টে দিলো। তুমি দেখা গেল পরবর্তীতে পিএইচডি করলে ওই লাইনে, বা কর্মক্ষেত্র বেছে নিলে ওই বিষয়ের উপর। এই যে একজন ছাত্রের অপরিসীম সম্ভাবনা, তাকে সিজিপিএ ধরে রাখার ভয় দেখিয়ে সেটা সীমাবদ্ধ করে রাখার বিপক্ষে অবস্থান হার্ভার্ডের।লোকপ্রশাসন পড়তে এসেছ বলে তোমার যে অন্য বিষয় ভাল লাগবে না , বা নিজের প্যাশন তুমি অন্য কোনও ডিসিপ্লিনে খুঁজে পাবে না- এমন তো না, তাইনা?”

এই জিনিসটা আমার জন্য সত্যিকারের কালচারাল শক ছিল। সত্যিই তো, একেকজন ছাত্রের যে অপরিসীম সম্ভাবনা, কোন অধিকারে আমরা সেটাকে আটকে ফেলি? অনার্সে অর্থনীতি পড়া একজন যদি পরবর্তীতে পদার্থবিজ্ঞানে তার আনন্দ খুঁজে পায়, শিক্ষাব্যবস্থার কি উচিৎ না তার সেই প্যাশনকে জায়গা দেবার? প্রমথ চৌধুরী বলেছেন, সুশিক্ষিত লোক মাত্রই স্বশিক্ষিত। ভিন্ন ডিসিপ্লিনের একজন ছাত্র যদি নিজ আগ্রহ থেকে প্রবল পরিশ্রম করে নতুন একটা বিষয়ে পিএইচডিতে ভর্তি হবার মত যোগ্যতার প্রমাণ শিক্ষকদের কাছে দিতে পারে, কোন অধিকারে তাকে শিখতে দেয়া হবেনা? জ্ঞানের রাস্তায় প্রবেশের মুখে এক যোগ্যতা ছাড়া অন্য কোনওরকম চৌকিদারি থাকা যে ঠিক না, মানুষের সম্ভাবনাকে যে আটকে দেবার অধিকার কারো নেই, হার্ভার্ডে এটাই আমার চতুর্থ শিক্ষা।

এবার আসি সর্বশেষ এবং সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষাটিতে। উপরের বাকি চারটি জিনিস যদি নাও জানতাম, এই একটা জিনিস জানাটা আমার জন্য সবচাইতে জরুরী ছিল, নইলে সারাজীবন একটা ভুল ধারণা নিয়েই কাটাতাম। এই একটা শিক্ষার জন্য মনে মনে আফসোস করি, ইস, আর যদি পনেরোটা বছর আগে আসতাম এখানে, কতই না ভাল হত! এই শিক্ষাটা কেমন তার একটা উদাহরণ দিতে পারি। মনে করুন আপনি একটা আন্তর্জাতিক কনফারেন্সে গিয়েছেন- সবাই শেখানে কেতাদস্তর স্যুট টাই পরা- একমাত্র আপনি সেখানে সবার মাঝে বসে আছেন, সম্পূর্ণ দিগম্বর অবস্থায়- আপনার দেহে একটা সুতোও নেই। কল্পনা করতে পারেন, কি ভয়ঙ্কর রকমের লজ্জাজনক ব্যাপারটা? দুই বছর হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে লোকপ্রশাসনে মাস্টার্স শেষ করে আমার অনুভূতি ঠিক এরকম। বিশ্বাস করুন, এক বিন্দু বাড়িয়ে বলছিনা- বুদ্ধিবৃত্তির দিক থেকে নিজেকে সম্পূর্ণ নগ্ন লাগে, মনে হয়, গত তিন দশকের জীবনে স্রেফ চাপাবাজি করে আর ভাসা ভাসা অসম্পূর্ণ জ্ঞান জাহির করে এতদূর এসেছি, আমার বিন্দুমাত্র ধারণা নেই আসল ঘটনা কি।মস্তিষ্ককে যদি একটা কাঁচের জগের সাথে তুলনা করেন, এতদিন আমার জগ পুরোটাই ভর্তি ছিল উদ্ভট অহংকার, স্বল্প জ্ঞানের ঔদ্ধত্ব এবং নিজের সম্পর্কে সম্পূর্ণ মিথ্যে উচ্চ ধারণার দুর্গন্ধযুক্ত নর্দমার পানিতে পরিপূর্ণ। হার্ভার্ড যেটা করেছে, ধুয়ে মুছে ওই নোংরা পানি পরিষ্কার করে একটা ঝকঝকে পরিষ্কার জগ উপহার দিয়েছে, যেটা পরিষ্কার হলেও পুরোপুরি খালি। একরাশ লজ্জার সাথে সবার সামনে প্রকাশ্যে স্বীকার করি, যেসব জ্ঞানগর্ভ কথা আপনাদের সামনে ফেসবুকে এবং অন্যান্য জায়গায় বলে বেড়িয়েছি-এগুলোর কিছুই আমি নিজেই শিখতে পারিনি, আই লিটারালি নো নাথিং! এ্যাবসলিউটলি নাথিং! এটা বিনয় না, বিনয় করে এই কথা বলতে গেলে সক্রেটিসের মত জ্ঞানী হতে হয় যা আমার মত ক্ষুদ্র মানুষের পক্ষে শুধু বেমানানই নয়, চরম বেয়াদবীরও সামিল। কাজেই, বিনয় নয়, যেটা বললাম এটা একটা কর্কশ, নির্জলা, সাজগোজহীন সত্যি কথা।

এই সত্য আবিষ্কার করেছি খুব বেশিদিন হয়নি। কিছুদিন প্রচণ্ড ডিপ্রেশনে ছিলাম, এমনকি এক দুবার অর্থহীন এই মূর্খতার কথা ভেবে আত্মহননের চিন্তাও উঁকি দিয়েছে। কিন্তু তারপর এসেছে এক ধরণের প্রশান্তি, যেটার সাথে অনেকটা নির্বানলাভের তুলনা করা যায়। শত্রু যখন চারিপাশ ঘিরে ধরে, ভীরু যোদ্ধা তখন বলে, হায়! আমাদের তো চারপাশ থেকে ঘিরে ধরেছে, এবার আমরা শেষ! কিন্তু সাহসী যোদ্ধা করে উল্টোটা-সে বলে, বাহ! এই তো সুযোগ, আমরা এবার চারদিক থেকে শত্রুকে আক্রমণ করতে পারব!

মহামতি অমর্ত্য সেনের কাছেই হার্ভার্ড জীবনের সর্বশেষ ক্লাসটি করেছি, তিনি আর তাঁর সহধর্মিনী প্রফেসর এমা দুজন মিলে পড়াতেন কার্ল মার্ক্স এবং এ্যাডাম স্মিথের দর্শনের তুলনামূলক আলোচনা। কোর্স ম্যাটেরিয়াল হিসেবে “কমিউনিস্ট ম্যানিফেস্টো” পড়তে হয়েছিল, যেখানে মার্ক্স শ্রমিকদের উদ্বুদ্ধ করেছেন তাঁর বিখ্যাত একটি উক্তি দিয়ে- হে শ্রমিক ভাইয়েরা, শেকল ছাড়া তোমাদের হারানোর কিছু নেই। এই উক্তিটি নিজের জন্য কিছুটা পরিবর্তন করে নিয়েছি। যত বড় মূর্খই হই না কেন, আজ থেকে যদি চেষ্টা করি- I have nothing to lose but my own ignorance.

মূর্খতা ছাড়া সামনের দিনগুলোতে আমার হারানোর আর কিছু নেই- এটাই হার্ভার্ডের সর্বশেষ এবং সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা।

Join Stories with Arif for getting amazing Short Stories daily!

মাসরুফ হোসাইন ভাই, এমপিএ, হার্ভার্ড

লঙ আইল্যান্ড, নিউ ইয়র্ক
২৫/৫/২০২০

21/10/2022

“Ci sarà sempre qualcuno che non comprenderà la tua scelta. Ma si sceglie per proseguire, non per essere compresi.”
- Joël Dicker

20/10/2022
19/10/2022

ফাইনালে খেলতে নামার আগে সানজিদা আখতার ফেসবুকে লেখেন, ‘যাঁরা আমাদের এই স্বপ্নকে আলিঙ্গন করতে উৎসুক হয়ে আছেন, সেই স্বপ্নসারথিদের জন্য এটি আমরা জিততে চাই। নিরঙ্কুশ সমর্থনের প্রতিদান আমরা দিতে চাই। ছাদখোলা চ্যাম্পিয়ন বাসে ট্রফি নিয়ে না দাঁড়ালেও চলবে, সমাজের টিপ্পনীকে এক পাশে রেখে যে মানুষগুলো আমাদের সবুজ ঘাস ছোঁয়াতে সাহায্য করেছেন, তাঁদের জন্য এটি জিততে চাই। আমাদের এই সাফল্য হয়তো আরও নতুন কিছু সাবিনা, কৃষ্ণা, মারিয়া পেতে সাহায্য করবে। অনুজদের বন্ধুর এই রাস্তাটুকু কিছু হলেও সহজ করে দিয়ে যেতে চাই।’

06/10/2022

আশাকরি কয়েকদিনের মধ্যেই আপনার পুরস্কার হাতে পেয়ে যাবেন, ইনশাআল্লাহ।

06/10/2022

েক সময় কোন প্রশ্ন করা হলে আমরা সচরাচর গুগলে সার্চ করে থাকি। তবে গুগল সার্চ করে প্রশ্নের উত্তর বের করার প্রবণ...

02/10/2022

আলাদিনের যাদুর প্রদীপের মত প্রত্যেকেরই যাদুর প্রদীপ আছে। কিন্তু যাদুর প্রদীপ জ্বালাতে শুধু ঘষামাজার প্রয়োজন নেই; প্রয়োজন আরও প্রভাবক (অধ্যবসায়, ধৈর্য, পরিশ্রম ইত্যাদি)।

সেপ্টেম্বর ১৭, ২০২২

Address

Jatrabari
1236

Website

https://twitter.com/ajijulbari/, https://www.flickr.com/photos/ajijulbari/

Alerts

Be the first to know and let us send you an email when Ajijul Bari Sarker posts news and promotions. Your email address will not be used for any other purpose, and you can unsubscribe at any time.

Share