16/08/2023
✔✔ অনলাইন বিজনেসে কেন আপনি টাকা খরচ করবেন এবং কিভাবে করবেন
এখন অনেকেই বিজনেস করছে, কারন একটাই এখন বিজনেস করা আগের মত কঠিন কিছু নয়, বিজনেসের জন্য দোকান খুজতে হচ্ছে না, দোকানের জন্য মোটা অংকের কোন অগ্রিম টাকা লাগছে না, মাসে মাসে দোকানের ভাড়া, ইলেক্ট্রিসিটি বিল দেয়ার ঝামেলা নেই, সবার প্রথমেই কর্মচারিও লাগছে না, তাদের বেতনের কথাও চিন্তা করতে হচ্ছে না। ঘরে বসে ফ্রিতে একটা ফেসবুক পেজ খোলা যাচ্ছে, মার্কেটে গিয়ে কিছু প্রোডাক্ট কিনে আনা যাচ্ছে, সেগুলি খুব সহজেই আপলোড করে, ফেসবুকে বুস্ট করে সেল পাওয়া যাচ্ছে, আর কি দরকার, চমৎকার একটা ব্যাপার। অনেকেই অনলাইন বিজনেস করে নিজেই আরো কয়েকজনের কর্মসংস্থানের ব্যাবস্থা করে দিতে পারছে। গড়ে উঠছে বাংলাদেশে ই-কমার্স।
তবে আমার মনে হয় কিছু কিছু ক্ষেত্রে আমরা কিছু সিদ্ধান্ত নিতে ভুল করছি, সেগুলি নিয়েই এই লেখায় লিখতে চাচ্ছি।
☑☑ প্রোফাইল ফটো এবং কাভার ফটো মানসম্মত হচ্ছে না
আমরা অনেক যায়গায় টাকা খরচ করছি, তবে খুব গুরুত্বপূর্ণ কিছু জায়গা যেখানে টাকা খরচ করা খুবই দরকার সেগুলা এড়িয়ে যাচ্ছি তার মধ্যে একটা হচ্ছে কোম্পানির লোগো এবং কাভার ফটো, যে দুইটা ব্যাপার একটা ফেসবুক বিজনেসের জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার, আমি ব্যক্তিগত ভাবে অনেকের পেজ দেখেছি অনেক পেজে ভালোমানের লোগো তো দুরের কথা লোগোই নাই, তাদের কোন একটা প্রোডাক্টের ছবি বসিয়ে দেয়া হয়েছে, কাভার ফটোর ব্যাপারটাও তাই।
এটাকে কেন আমরা গুরুত্ব দিচ্ছি না এটা যদিও আমি এখনো বুঝে উঠতে পারি নাই, তবে এই জায়গাটাতে আমাদের কাজ করতে হবে, যারা বিজনেস করছেন অথবা করবেন তাদেরকে বলছি ভালো একটা লোগো এবং কাভার ফটো আপনার বিজনেসের জন্য খুবই দরকার, কারন এই দুইটা ব্যাপার আপনার ক্রেতাকে আপনার পেইজ সম্পর্কে ধারনা দিবে, একজন পেজে প্রবেশ করেই যদি নিম্নমানের লোগো এবং কাভার ফটো দেখে ভিতরে আর প্রবেশ করার আগ্রহই হারিয়ে ফেলবে যেখানে হয়তো আপনার অনেক আকর্ষণীয় প্রোডাক্ট অথবা সার্ভিস অফার ছিলো।
আপনি একজন প্রোফেশনাল ডিজাইনার থেকে লোগো, কাভার ফটো তৈরি করেন, অনেকে অনেক সস্তায় করে দেয় তবে সেগুলার মানও সস্তাই হয় তাই ৫০০-১০০ টাকা বেশি লাগলেও একজন ভালো ডিজাইনার দিয়ে লোগো আর কাভার ফটো করা জরুরি বলে আমি মনে করছি।
☑☑ প্রোডাক্ট ফটোগ্রাফি ভালো হচ্ছে না
এখানেও আমরা ইনভেস্ট করতে চাই না, যার ফলে প্রোডাক্টের ছবিগুলা হয় অন্ধকার, বুঝা যায় না এমন অনেক ছবিও অনলাইনে দেখতে পাওয়া যায়, আমি একদম উপরেই লিখে এসেছি আপনাকে কোন দোকান নিতে হচ্ছে না ইত্যাদি ইত্যাদি এবং আপনার কত খরচ বেঁচে যাচ্ছে, কিন্তু আপনি যদি দোকান নিতেন সেটাকে যেমন আপনাকে ডেকোরেশন করতে হতো অনলাইন শপের ব্যাপারটাও কিন্তু তাই, এটাকেও আপনাকে সুন্দর করে ডেকোরেশন করতে হবে। যেখানে ছবি তুলছেন সেখানে লাইটিং ঠিক আছে কিনা সেটার দিকে গুরুত্ব দিন, অনলাইনে আপনার প্রোডাক্টের নাম লিখে সার্চ করলে দেখবেন কত ক্রিয়েটিভ ভাবে ফটোগ্রাফি করা যায় আর সেটার জন্য কিন্তু হাজার হাজার টাকাও লাগে না, আপনি অনেক অল্প খরচের মধ্যে খুব সুন্দর ভাবে নিজেই প্রফেশনাল মানের ফটো তুলতে পারবেন।
এখনে প্রশ্ন আসতে পারে কেন ফটোগ্রাফি কে এতোটা গুরুত্ব দিতে হবে, কাস্টোমারকে ছবি দেখাতে পারলেই তো হলো, তাহলে চিন্তা করেন আপনি যখন কোন শপিং সেন্টারে কোন জামা কাপড়ের দোকানে যান সেই দোকানে কতগুলা লাইট জ্বলে নিশ্চয়ই খেয়াল করে দেখেছেন? অনেক না? তারা এটা কেন করে যেখানে কাস্টোমার শপিং সেন্টারে গিয়ে হাতে ধরে কাপড় কেনার সুযোগ পায় সেখানেও লাইটিং ভালো রাখার প্রয়োজন হয়, যেন কাস্টোমার সঠিক প্রোডাক্টি দেখতে পায়, বুঝতে পারে, সেখানে অনলাইনে যেখানে কাস্টোমারের একমাত্র অবলম্বন ছবি কারন এখানে সে হাতে ধরে কিছু কেনার সুযোগ পাচ্ছে না সেখানে যদি ছবিই ভালো না পায় সে কিভাবে সে সিদ্ধান্ত নিবে। তাই প্রোডাক্ট ফোটোগ্রাফি উন্নত করার চেস্টা করা উচিৎ, আপনাকে সে জন্য প্রোফেশনাল ফটো স্টুডিও বানাতে না, এখন মার্কেটে ছোট বড় বিভিন্ন মাপের ফটোগ্রাফি বক্স পাওয়া যায় আপনারা সেগুলা কিনে সহজেই ভালোমানের ফটোগ্রাফি করতে পারবেন।
☑☑ পেজে মানসম্মত লাইক নেই
ধরুন একটা পেজ যেখানে লাইক ১০ লাখ, কিন্তু তারা যখন একটা পোস্ট দেয় সেখানে ১০টা লাইকও পড়ে না তাহলে সে পেজে কেউ প্রবেশ করে কিছুক্ষণ ঘুরে বেড়ালে তার ধারনা কি হবে? খুব একটা ভালো ধারনা হবে না এটা বলাই যায় তবে কথা হচ্ছে এরকম কেন হচ্ছে কেন, এরকম হবার পিছনে কারন কি? ১০ লাখ লাইকের একটা পেজের পোস্টে লাইক এতো কম কেন থাকবে, কারন অনেকেই পাইকারি হারে লাইক কিনে, কারন ফেসবুক অ্যাড সিস্টেম থেকে লাইকের অ্যাড দিয়ে লাইক আনতে অনেক টাকা খরচ হয়ে যাবে, অনেকেই ১ হাজার টাকায় ৫ হাজার লাইক, ২ হাজার টাকায় ১০ হাজার লাইক ইত্যাদি এরকম সার্ভিস অফার করে থাকে, এই লাইকগুলা টার্গেট লাইক হয় না, অনেক ফেইক আইডি থাকে, যারা লাইক দিচ্ছে তারা কোন কিছু না দেখেই লাইক বাটনে ক্লিক করে তাই পরবর্তী কোন পোস্ট যখন সেই পেজ থেকে করা হয় তখন যে অল্প কিছু মানুষের কাছে সেই পোস্ট টা রিচ হয় তারা সেটা সম্পর্কে আগ্রহ দেখায় না।
কিন্তু ফেসবুক অ্যাড সিস্টেম থেকে আপনি খুব সহজেই আপনার প্রোডাক্ট অথবা সার্ভিসের ধরন বুঝে সে অনুযায়ী অডিয়েন্স নির্বাচন করে অনেক ভালো মানের লাইক পেতে পারেন, হ্যা খরচ বেশি লাগবে তবে ভালো কিছু পেতে হলে আপনাকে কিছু তো দিতেই হবে, আপনি নিজে যদি না জানেন তাহলে অ্যাড এজেন্সির সাথে যোগাযোগ করতে পারেন, তারা সুন্দর ভাবে আপনার প্রোডাক্ট অথবা সার্ভিসের পেজের লাইকের জন্য অ্যাড দিয়ে দিবে, দরকার হলে আপনিও আপনার মতামত জানান তাদেরকে আপনার অডিয়েন্স সম্পর্কে।
☑☑ অ্যাডের বাজেট অনেক কম
এটা অবশ্যই ১০০% সঠিক কথা ২-৩ বছর আগেও ৫ ডলারের একটা অ্যাড দিলে রেস্পন্সের অভাব থাকতো না, সেলও ভালো ছিলো, তার একটাই কারন ছিলো সেটা হচ্ছে তখন কম্পিটিশন ছিলো অনেক কম, আপনি নিজেই চিন্তা করলে বুঝতে পারবেন ধরুন আগে ফেসবুকে অ্যাড দিতো বাংলাদেশের ১০০ টা ফেসবুক পেইজ, এখন দেয় ১০০০ টা, তাহলে ফেসবুককে কিন্তু এই ১০০০ কোম্পানির অ্যাড মানুষকে দেখাতে হবে, সে জন্য সে টাকা নিচ্ছে মানুষের কাছ থেকে, এখন ১০০ অ্যাড যখন টাইমলাইনে থাকে তখন স্বাভাবিক ভাবেই বেশি মানুষ অ্যাড দেখবে আর ১০০০ টা অ্যাড থাকলে মানুষ অ্যাড দেখবে কম, এটার একটা কারন ফেসবুকে মানুষের সময় কাটানোর পরিমানও জড়িত, ১০০০ টা অ্যাড, সব অ্যাড ফেসবুক এক যায়গায় দেখাতে পারবে না, বাজেট, অ্যাডের মান ইত্যাদির উপর নির্ভর করে কারো অ্যাড ১ নাম্বারে কারোটা ২ নাম্বারে আবার কারোটা আরো পিছনে দেখিয়ে থাকে, আর কেউ যদি ফেসবুক অল্প স্ক্রল করে চলে যায় তাহলে সে পিছনে পরে থাকা অ্যাডগুয়া দেখতে পাবে না।
এখন যাদের অ্যাড বাজেট অনেক কম হয়ে থাকে তারা যারা বেশি বাজেটের অ্যাড চালাচ্ছে তাদের থেকে প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে থাকে ফলে তাদের অ্যাডের রিচ কম হয়, আর রিচ কম হলে সেল কমে যাবে এটাই স্বাভাবিক।
আর উপরের পয়েন্ট অনুযায়ী আপনার প্রোডাক্ট, ফটোগ্রাফি, ইত্যাদির মান ভালো না হলে যে অল্প রিচও হয় সেটাতেও কোন লাভ হয় না, যারা দেখে তারা প্রোডাক্ট কেনার ব্যাপারে আগ্রহ দেখায় না।
অনেকেই বলে থাকে ৫ ডলারের অ্যাডের টাকাও উঠে না, তাদের কে বাজেট বাড়ানোর বললে তারা সেটা কিভাবে দেখবে? তাদের জন্য উপরের পয়েন্টগুলা লিখেছি আমি, আপনি যখন আপনার পেজের মান ভালো করবেন, প্রোডাক্টের মান, ছবির মান ভালো হবে ফেসবুকের রাঙ্কিং এ আপনি উপরে থাকবেন, আর প্রোডাক্টের মান ভালো হলে মানুষ আপনার প্রোডাক্ট কিনবে, সে ক্ষেত্রে ৫ ডলার না, ৫০ ডলারের অ্যাড দিলেও তার খরচ উঠে গিয়ে লাভও থাকবে সন্তোষজনক।
☑☑ নিয়মিত পোস্ট দেয় না
এই পয়েন্ট টা টাকা ইনভেস্টের সাথে জড়িত না, তবে খুবই গুরুত্বপূর্ণ, ফেসবুকের র্যাঙ্কিং এ ভালো পজিশনে থাকতে চাইলে আপনাকে রেগুলার পোস্ট করতে হবে, সব পোস্ট সেল পোস্ট হতে হবে এরকম না, বিভিন্ন ধরনের পোস্ট দিয়ে আপনার ক্রেতাকে আকৃষ্ট করেন। যা কিনা খুবই প্রয়োজন। উপরের পয়েন্টেই লিখেছি যে ফেসবুক র্যাঙ্কিং এ ভালো অবস্থানে থাকা জরুরি আর সেটা করতে হলে আপনাকে প্রতিদিন অন্তত ১টা হলেও পোস্ট দিতে হবে, আরো বেশি হলে আরো ভালো। আর ফেসবুকের নিয়ম অনুযায়ী আপনার পেজ যদি শুধুমাত্র অ্যাড নির্ভর হয়, অরগানিক রিচ না থাকে তাহলে আপনার অ্যাডের রেজেল্টও ভালো আসবে না তাই অরগানিক ভাবে পেজকে প্রানবন্ত করাটা জরুরি।
মনে রাখতে হবে এটা আপনার একটা বিজনেস, আর একটা বিজনেস করতে হলে মিনিমাম যে ব্যাপারগুলা দরকার সেগুলি আপনাকে করতে হবে, চিন্তা করুন তো আপনি একটা দোকান দিলেন সেখানে ইলেক্ট্রিসিটি ই নাই, কাজ করবে কি আপনার বিজনেস? কোনভাবেই না। ঠিক সেরকম ভাবে পেজের মান নিশ্চিত করা জরুরি আর সেটার জন্য আপনাকে প্রোফেশনাল মানুষদের কাছে যেতে হবে, ফ্রি লোগো বানানোর সফটওয়্যার খুলে বসলে হবে না।