ফেনী সরকারী পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় বাংলাদেশের প্রাচীনতম বিদ্যালয় গুলোর মধ্যে অন্যতম। এই স্কুলটি ফেনী শহরের অন্যতম সরকারি বিদ্যালয়। ফেনীর মহকুমা প্রশাসক মৌলবী আহম্মদ, এমএ, ১৮৮৬ সালে বিদ্যালয়ে ১ম ভবন তৈরী করেন।এরপর ১৮৮৬ সালেই ততকালীন ফেনী মহকুমা প্রশাসক মহাকবি নবীনচন্দ্র সেন বিদ্যালয়টি উদ্বোধন করেন। ১৯৬৭ সনের ১৫ই আগষ্ট বিদ্যালয়টি জাতীয়করণ করা হয়।
১৮৮৬ সালে ততকালীন ফেনী মহকুমা প্রশাসক মহাকবি নবীনচন্দ্র সেন বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করেন। নাম দেন ফেনী হাই স্কুল। পাকিস্তান আমলে সারা পাকিস্তানের উল্লেখযোগ্য কয়েকটি স্কুলকে ব্রিটিশ শিক্ষা প্রকল্প "পাইলট প্রজেক্টের" আওতায় আনা হয়। এর মধ্যে "ফেনী হাই স্কুল" ও ছিল। পাইলট প্রজেক্টের আওতায় সকল স্কুলের নামের সঙ্গে 'পাইলট' যুক্ত হয়। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় স্কুলটি ব্রিটিশ আর্মি ক্যাম্প হিসেবে ব্যবহৃত হয়। বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন জাপানি বিমান বোমা হামলা চালানোর সময় একটি বোমা স্কুলের উত্তর পাশের লাল রঙের মূল ভবনটির পাশে পড়ে। ফলে ভবনটি আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। পরবর্তীতে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীনসময়েও এটি পাকআর্মি ক্যাম্প হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এসময় স্কুলের গুরুত্বপূর্ণ অনেক নথিপত্র ধ্বংস হয়। পাকআর্মি ঐসময স্কুলটিকে টর্চার সেলে পরিণত করেছিলো। স্কুলটির উত্তর-পূর্ব দিকে একটি অচিহ্নিত গণকবর রয়েছে। এছাড়া দক্ষিণ পাশে ছাত্রাবাসের পাশে জলাপূর্ণ স্থানটিতেও গণকবর রয়েছে। '৭১এ নিহত মানুষদের স্মরণে স্কুলের পূর্ব প্রান্তে একটি স্মৃতি স্তম্ভ রয়েছে।
শিক্ষা কার্যক্রম
বিদ্যালয়টিতে ৬ষ্ঠ শ্রেণী থেকে ১০ম শ্রেণী পর্যন্ত প্রায় ১৬০০ ছাত্র রয়েছে। ২০০৯ ইং এ দ্বিতীয় শিফট চালু করায় অদ্যবধি দুই শিফটে বিদ্যালয়টি পরিচালিত হয়ে আসছে। ডে শিফট এবং মর্নি শিফট। সিলেবাস অনুযায়ী স্কুলটিতে বছরে দুইটি পরীক্ষা নেওয়া হয়, অর্ধ-বার্ষিকী এবং বার্ষিকী।
অবকাঠামো
ফেনী পাইলট হাই স্কুলের পুরতন ভবন (বর্তমানে পরিত্যক্ত)
বিদ্যালয়ের লাল রঙের দ্বিতল মূল ভবনটি এখন পরিত্যক্ত। আগে এটিই ছিল প্রশাসনিক ভবন। এখন পাশের তিনতলা বিশিষ্ট নতুন ভবনটিতে প্রশাসনিক কার্যক্রম স্থানান্তর করা হয়েছে। এই দুই ভবনের মাঝে অবস্থান করছে বিদ্যালয়ের একতলা বিশিষ্ট মসজিদ। এর ঠিক বিপরীত দক্ষিণ পার্শ্বে অবস্থান করছে বিদ্যালয়ের 'এসেম্বলি হল'। মাঝে রয়েছে বিশাল মাঠ। এসেম্বলি হলের পূর্ব পার্শ্বে রয়েছে প্রধান শিক্ষকের বাস ভবন এবং এর পূর্ব পার্শ্বে রয়েছে আরেকটি ভবন। নাম 'বিজ্ঞান ভবন'। এখানেও পাঠ কার্যক্রম চালনা করা হয়। বিদ্যালয়ের ছাত্রাবাসটি রয়েছে প্রধান শিক্ষকের বাস ভবনের দক্ষিণ পার্শ্বে।
অবদান
ফেনী সরকারী পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ে শিক্ষক সল্পতা ও একাডেমিক ভবন সংকটের কারনে শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে । এ স্কুলে ৫২ শিক্ষকের বিপরীতে ২৪ শিক্ষক দিয়ে চলছে শিক্ষা কার্যক্রম। জানা গেছে ফেনী সরকারী পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়টি ১৮৮৬ সালে প্রতিষ্ঠত হয়ে সফলতার সাথে শিক্ষা কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছ।এ বিদ্যালয়ে অধ্যায়ন করে অনেকই সরকারী -বেসরকারী বিভিন্ন উচ্চ পর্যায়ে নিয়োজিত রয়েছেন। ১টি বিজ্ঞানাগার, ১টি প্রশাসনিক ভবন ও প্রায় দু’শত বছরের ১টি পরিত্যক্ত পুরাতন ভবন দিয়ে ফেনী সরকারী পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের পাঠদান কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। পর্যাপ্ত একাডেমিক ভবন না থাকায় বিজ্ঞানাগারের ৫টি কক্ষে ও প্রশাসনিক ভবনের ৬টি কক্ষে ক্লাস নেওয়া হয়। এছাড়া দু’শত বছরের পরিত্যক্ত পুরাতন ভবনকে ল্যাব ও এসেম্বলি (জাতীয় সঙ্গিত) পরিচালনার কাজে ব্যবহার করা হয়। বিদ্যালয়ের অফিস সূত্রে জানা যায়, স্কুলের ২৮ পদ শূন্য পদগুলো হলো, বাংলা ৮টি পদের বিপরীতে ৬টি পদ শূন্য রয়েছে,গণিত ৬ টি পদের বিপরীতে ৫টি পদ শূন্য রয়েছে, ইংরেজী ৮ টি পদের বিপরীতে ৩টি পদ শূন্য রয়েছে, সমাজ বিজ্ঞান ৪টি পদের বিপরীতে ২টি পদ শূন্য রয়েছে, ধর্ম ৪টি পদের বিপরীতে ২টি পদ শূন্য রয়েছে, রসায়ন বিজ্ঞান ৪টি পদের বিপরীতে ১টি পদ শূন্য রয়েছে, জীব বিজ্ঞানের ৪টি পদের বিপরীতে ২টি পদ শূন্য রয়েছে, ব্যবসায় শিক্ষা ৪টি পদের বিপরীতে ৪টি পদ শূন্য রয়েছে, ভূগোল ২টি পদের বিপরীতে ১টি পদ শূন্য রয়েছে। চারু কলা ২টি পদের বিপরীতে ১টি পদ শূন্য রয়েছে, শারিরিক ২টি পদের বিপরীতে ১টি পদ শূন্য রয়েছে। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা আরো জানান শিক্ষক সংকট ও পর্যাপ্ত একাডেমিক ভবন না থাকা স্বত্বেও আমরা অত্যন্ত আন্তরিকতার সাথে আমাদের প্রাতিষ্ঠানিক কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছি। অনেক সময় আমাকেও অফিসের কার্যক্রম পরিচালনার পাশা-পাশি একাধিক ক্লাস নিতে হয়। প্রতিষ্ঠানে প্রধান শিক্ষিকার অফিস থাকলেও তাও প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। অনেক সময় শিক্ষকবৃন্দ জায়গার সল্পতা ও চেয়ারের অভাবে অফিসিয়াল মিটিং’র সময় দাঁড়িয়ে থাকেন।নেই কোন সহকারী প্রধান শিক্ষকের অফিস।এছাড়া নেই লাইব্রেরীর ব্যবস্থা।
📷