গল্পের রাজ্য

গল্পের  রাজ্য নতুন নতুন সব উপন্যাস গল্প পেতে এই পেজে লাইক করে রাখতে পারেন।👍🥳

গল্প  #জীবন_এখানে_যেমনলেখক  #জয়ন্ত_কুমার_জয়পর্ব_৭সবর ভাই মাটিতে পড়ে ছটফট করছে।তার গ"লা আর বু"ক দিয়ে ফিনকি দিয়ে র"ক্ত বেড়...
21/12/2023

গল্প #জীবন_এখানে_যেমন
লেখক #জয়ন্ত_কুমার_জয়
পর্ব_৭

সবর ভাই মাটিতে পড়ে ছটফট করছে।তার গ"লা আর বু"ক দিয়ে ফিনকি দিয়ে র"ক্ত বেড় হচ্ছে।সেই র"ক্তে মেজদির কা"ফনের কাপড়ের অর্ধেকটা অংশ গাঢ় লাল বর্ণ ধারণ করলো।মায়ের দৃষ্টি উর্ধে।মায়ের এই রুপ জন্মত কখনো দেখিনি!

বিষয়টা নিয়ে গ্রামে রোল উঠে গেলো।বাড়িতে এখন কয়েক রাজ্যের মানুষ।কিছুক্ষণ আগে চেয়ারম্যান এসে আমার দিকে তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকলো।আমি বেশ স্বাভাবিক ভাবেই ওনাকে বসার জন্য চেয়ার এগিয়ে দিলাম।তিনি উপস্থিত লোকজনের কাছে শুনতে চাইলেন ব্যাপারটা কি ঘটেছে।কেউ একজন বললো

" চেয়ারমেন ছার সে কি বলবো।অবনীর মা ঘর থাইক্কা ফাগলের মতো ছুইট্টা পাকঘর থেকে বটি নিয়া সবরের গ"লায় এক কো"প! বাবারে বাবা,কি ভয়ঙ্কর মহিলা "

চেয়ারম্যান চোখ মুখ কুঁচকে বললো " আপনারা আটকালেন না কেন? "

" হেয় এমন কাম করবো কে জানতো? "

পুলিশ যখন মা'কে পুলিশ জিপে তুললো তখন মা আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলেছিলো,তোর দিদির দিকে একটু দেখিস মা।আমায় নিয়ে ভাবিস না।

হাউমাউ করে কেঁদে বলেছিলাম " তুমি ছাড়া আমাদের কি হবে মা,কেন করতে গেলে এমন "

" আমার কোনো চিন্তা নাই।অবনী থাকতে তোকে নিয়ে লোনো চিন্তা নাই আমার।দুইবোন মিলেমিশে থাকিস "

" আমি তোমায় বেড় করে আনার সবরকম চেষ্টা করবো মা। তুমি একদম ভেবো না,কিচ্ছু হবে না তোমার "

মা শুধু হাসলো।তারপর বড়দিকে জড়িয়ে ধরে কানে ফিসফিস করে কি যেন বললো।দুইবোন মাকে শেষ বারের মতো জড়িয়ে ধরে অনেক কাঁদলাম।

শেষ বারের মতো জড়িয়ে ধরে কেঁদেছি বললাম,কারণ পুলিশ কাস্টরিতে নিয়ে যাওয়ার দুইদিনের মাথায় মায়ের মৃ"ত্যুর খবর এলো।মাকে নিয়ে যাওয়ার পরেরদিন দেখতে গিয়েছিলাম।মা তখনো স্বাভাবিক ছিলো।পুলিশ জানালো মা নাকি বিড়বিড় করে কার সাথে নাকি কথা বলতো।পাগলের মতো হাসতো।তারপরের দিনই মা'য়ের মৃ"ত শরীর জেলে পড়ে ছিলো।দেয়ালে প্রচন্ড মাথা ঠুকার ফল স্বরুপ প্রচন্ড র'ক্তক্ষরণে মা শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করলো।

হঠাৎ করেই আমার জীবনটা এলোমেলো হয়ে গিয়েছিলো।মা, তিন বোনের হৈচৈ ভরা বাড়িটা আমার কাছে শ্মশানের মতো লাগতো।সবসময় একটা আতঙ্কের মতো লাগতো।বড়দি সারাক্ষণ অঝোরে কান্না করে,আমি পাথরের মতো বিছানার কোণে বসে থাকি।মাঝেমধ্যে মেজদির সাথে মায়ের সাথে কথা বলি।ওরা বেঁচে নেই,তবুও কল্পনায় তারা আমার সাথে বসে থাকে,গল্প করে।একদিন বড়দি আমার ঘরে এসে বললো

" তন্দ্রা,কার সাথে কথা বলছিস? "

" কই না তো,কার সাথে কথা বলবো? "

" আমি বাইরে থেকে স্পষ্ট শুনতে পেলাম তুই বিড়বিড় করতেছিস "

" মেজদির সাথে "

" অনু তোর সাথে কথা বলে? "

" হু।মাঝেমধ্যে মা ও বলে "

" ও আচ্ছা "

অবনী বুঝতে পারলো তন্দ্রার মাথা খারাপ হওয়ার যোগান।মৃ"ত ব্যক্তির ডাক খুবই ভয়ঙ্কর ব্যাপার।তারা যাকে ডাকে সেও চলে যায়।অবনী নিজেকে শক্ত করলো।ছোট একটা বোন আছে,তার ভবিষ্যত আছে,এভাবে নিজ হাতে নষ্ট হতে দেওয়া যায় না।তন্দ্রাকে এই বাড়িতে রাখা যাবে না।ওর নতুন পরিবেশ প্রয়োজন।

এসব ভাবতেই বাড়ির সামনে একটা রিক্সা এসে থামলো।অবনী দেখলো রিক্সা থেকে সাদাদ স্যার নামলেন।উঠোনে আসতেই অবনী পা ছুঁয়ে কদমবুসি করলো।ঘরে নিয়ে গিয়ে বসতে দিলো।বললো

" স্যার আপনি আসবেন ভাবিনি।ঘরে ফল,বিস্কুট কিচ্ছু নেই,কি দিই বলুন তো "

" আহা,এতো ব্যস্ত হয়ো না মা।তোমার মনের যে অবস্থা চলছে।মনকে শক্ত করো মা "

অবনী দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো " তাই তো করার চেষ্টা করছি স্যার "

" তন্দ্রা কোথায়? "

" ওর ঘরেই বসে আছে।মেয়েটা সারাদিন ঝুরঝুর করে কাঁদে।আপনি বসুন ডেকে আনি "

" মা তুমি একটু বসো।ওকে ডাকতে হবে না।তোমার সাথে একটু কথা বলতে আসলাম "

" হ্যা স্যার বলুন।সেদিন এসছিলেন দেখেছি।কথা বলার অবস্থায় ছিলাম না "

" তোমরা কি সুস্থ আছো মা?খাওয়া দাওয়া করছো?তোমার শরীর তো অর্ধেক হয়ে গেছে "

" বোনটাকে নিয়ে খুব চিন্তা হয় স্যার "

" তন্দ্রা? ও এখনো সামলে উঠতে পারছে না বুঝি।তা পারবে কিভাবে,এতো অল্প বয়সে এতো বড় ধাক্কা, সামলাতে তো সময় লাগবে "

" তন্দ্রা অসুস্থ হয়ে যাচ্ছে স্যার।বিরবির করে মা আর অনুর সাথে কথা বলে "

" বলো কি "

" হু।মাঝরাতে মায়ের ক"বর,অনুর কবর জড়িয়ে ধরে হু হু করে কাঁদে।ভয় হচ্ছে স্যার।এভাবে চললে ও পাগল হয়ে যাবে "

" অবনী মা,আমি যে কথাটা বলার জন্য এসেছি সেটা বলতে চাই "

" হ্যা বলুন না "

" তোমাদের এই পরিস্থিতিতে কথাটা বলতে চাইনি। কিন্তু তন্দ্রার কথা শুনে বলতেই হলো।তন্দ্রার পরিবেশ বদল প্রয়োজন "

" আমিও তাই ভাবছি স্যার।কিন্তু আর্থিক অবস্থা এখন বেশ শোচনীয়।কি করবো বুঝতে পারছি না "

" তোমার বোনটাকে আমি নিয়ে যেতে চাই মা "

" আপনি নিয়ে যাবেন? কিন্তু "

" আমার ছেলে বিষণ্ণর সাথে ওর বিয়ে দিতে চাই।তন্দ্রাকে আমার এবং আমার স্ত্রীর ভিষণ পছন্দ হয়েছে।অনেকদিন থেকে ভেবেছি তন্দ্রাকে ছেলের বউ করে নিয়ে যাবো "

" স্যার ওর বয়স তো...."

" প্রাপ্ত বয়স্ক হলে তখন বিয়ে হবে "

অবনীর চোখে জল চলে এলো।বোনটার জীবন এতো সুন্দর ভাবে গুছিয়ে যাবে কল্পনাও করেনি।স্যারের পা স্পর্শ করে অবনী কান্না করে ফেললো।সাদাদ স্যার অবনীর মাথায় হাত বুলিয়ে দিলেন।বললেন

" মা আমি বলি কি,তুমিও চলো।দুইবোন একসাথে আমার বাড়িতে থাকবে "

" আমি যেতে পারবো না স্যার।বোনের,মায়ের ক"বর রেখে আমি দূরে থাকতে পারবো না।শেষ সময় পর্যন্ত এই যায়গাটাকেই আঁকড়ে ধরে থাকতে চাই। আমাকে নিয়ে ভাববেন না।আপনার বাড়িতে আমার ছোট বোনটা রাজকন্যা হয়ে থাকবে জানি।ছোট বয়সে বড্ড কষ্ট পেলো মেয়েটা "

" মা একটা কথা রাখবে?তন্দ্রাকে আমি এখনি নিয়ে যেতে চাই "

অবনী চোখের জল মুছে বললো " আচ্ছা, আমি ওর জামাকাপড় গুছিয়ে দিচ্ছি "

" ওসব কিছু লাগবে না।আমি যাওয়ার রাস্তায় কিনে নিবো।তুমি শুধু অনুমতিটুকু দাও "

" স্যার কি বলছেন,আপনি আমার গুরুজন।অনুমতি দিবো কি, আপনার কাছে আজীবন কৃতজ্ঞ থাকবো "

আমি কিছু বুঝতে পারছি না।দিদি আমার হাত ধরে রিক্সায় বসিয়ে দিয়ে কপালে চু'মু খেয়ে বললো " ভালো থাকিস বোন।তোকে দেখতে রোজ যাবো।স্যারের বাড়িতে অনেক ভালো থাকবি তুই "

স্যার বিশাল একটা শপিংমলের সামনে রিক্সা দাড় করিয়ে এতো এতো জামাকাপড় কিনে দিলো।তারপর নিয়ে গেলো তার বাড়িতে।স্যারের স্ত্রী আমার কপালে চু'মু দিয়ে একটা ঘরে নিয়ে গিয়ে বললো

" দেখতো মা,পছন্দ হলো? "

বিশাল বড় ঘর।দেয়ালে চিত্রকর্ম করা,প্রশস্ত বিছানা।বললাম

" হু "

" ইশশ,মা আমার কয়দিনেই কি হাল হয়েছে শরীরের। চোখের নিচে কালি পড়ে গেছে,গাল বসে গেছে।স্নান করে নাও তো,আমি খাবার নিয়ে আসি "

_______________

এই গল্পের লেখক পেজের নাম জয়ন্ত কুমার জয়।যারা লেখকের পেজ থেকে গল্প সময় মতো পেতে চান তারা জয়ন্ত কুমার জয় লিখে সার্চ করুন,লেখক পেজ পেয়ে যাবেন।
" এতো ব্যস্ত হয়ে কি করছো?আর তোমার চোখে জল! কাঁদছো? " সাদাদ সাহেব স্ত্রীকে বললেন।তার স্ত্রী ব্যস্ত ভঙ্গিতে প্লেটে খাবার সাজাতে সাজাতে বললেন

" মেয়েটাকে দেখে বু"ক দুমড়ে মুচড়ে উঠছে বারবার।তাকানো যাচ্ছে না এমন চেহারা হয়েছে।এতো মিষ্টি একটা মেয়ের এই অবস্থা চোখে দেখা যায় বলো? "

" এক দেখাতেই মেয়েটার ওপর তো তোমার মায়া পড়ে গেছে "

" এতো মিষ্টি একটা মেয়ে,মায়া হবে না? "

" বলেছিলাম না,ভারী রুপবতী মেয়ে।একবার দেখলে চোখে গেঁথে যাবে "

" কিন্তু আমাদের পছন্দ তে কি আসে যায়।বিষণ্ণর তো পছন্দ হতে হবে "

" তন্দ্রাকে উপেক্ষা করার ক্ষমতা কোনো ছেলের থাকতে পারে বলে তো মনে হয় না "

" তোমার ছেলের এই ক্ষমতা আছে।দুইটা বছর ধরে দেখছোই তো কেমন জেদ নিয়ে বসে আছে।কখনোই নাকি বিয়ে করবে না।কোন মেয়েকে ভালোবেসে ধোঁকা খেয়েছে, সেটা এতো বছরেও মনে পুষে রাখতে হবে? এরকম গাঁধা ছেলে আমার পে'টে জন্মালো কীভাবে? "

" তন্দ্রাকে ওর বেশ পছন্দ হবে দেখো "

" কি জানি।তবে যাই বলো।জোর করে হলেও ওদের বিয়ে আমি দিয়ে তবেই ছাড়বো।মেয়েটাকে আমার ভিষণ মনে ধরেছে।নিজের মেয়ের থেকেও যত্নে রাখবো দেখে নিও "

খাবার নিয়ে তন্দ্রার ঘরের দিকে যেতেই বিষণ্ণ ডাকলো

" মা,একটু শুনে যাও তো "

ছেলের ডাকে তিনি ঘরে ঢুকলেন।বললেন " বল "

" পাশের রুমে মেয়েটা কে? "

" তোর বাবার স্কুলের ছাত্রী "

" ছাত্রী তো এখানে কি করছে? বাড়ি কি স্কুল নাকি? "

" তুই এতো রাগছিস কেন? "

" তো রাগবো না?একটা মেয়ে এরকম ন্যাকি সুরে কান্না করলে লেখায় মন দেওয়া যায়? "

" কি এমন লিখছিস হ্যা?ওইতো সব পাগলেও প্রলাপ "

" আমার লেখা তোমার কাছে পাগলের প্রলাপ মনে হয়? "

" হ্যা হয়।আর শোন,ওই মেয়ে ন্যাকি সুরে ইচ্ছে করে কাঁদছে না।সে অনেক দুঃখী একটা মেয়ে।মেয়েদের সম্মান করতে জানিস না? "

বিষণ্ন ঠো'ট বাঁকিয়ে বললো " আর মেয়ে।মেয়ে জাত হলো সবচেয়ে..... থাক তোমার সামনে বলতে চাচ্ছি না।যাও যেখানে যাচ্ছিলে "

ছেলের এমন উদ্ভট আচরণে তিনি মনে ভিষণ কষ্ট পেলেন।কি হয়ে গেলো তার ছেলেটার?রাগ কি ওর নাকের ডগায় লেগে থাকে সবসময়? তিনি চলে যেতেই বিষন্ন পিছু ডেকে বললো

" তোমার ন্যাকি রাণীকে বলবে মুখ বন্ধ করে কাঁদতে।কান্নার শব্দে আমার লেখার ডিস্টার্ব হচ্ছে "

" ন্যাকি রাণী আবার কেমন সম্বোধন? ওর নাম তন্দ্রা, কত মিষ্টি একটা নাম "

" নাম শুনতে চাইনি মা। তুমি এখন যাও "

বিষণ্ণর ভিষণ রাগ লাগছে।এতো এতো রুম থাকতে তার পাশের রুমটাতেই কেন বাবা তার ছাত্রীকে এনে রাখবেন?মেয়েটা কতদিন থাকবে এ বাড়িতে?বিষণ্ণ বেশ কাচুমাচু অবস্থায় পড়ে গেলো।সে বেশিরভাগ সময় ছোট প্যান্ট পড়ে থাকে,মাঝমধ্যে খালি গায়ে বারান্দায় হাটাহাটি করে।মেয়েটা যতদিন বাড়িতে থাকবে ততদিন বেশ সামলে চলতে হবে তাকে।

______________

একরাতের মধ্যেই স্যারের স্ত্রীকে আমার ভিষণ আপন মনে হতে লাগলো।তার আদর,যত্নে স্পষ্ট মায়ের ছাপ ফুটে উঠে। ঘুম থেকে উঠে দরজা খুলতেই আমার চোঝ ছানাবড়া হয়ে গেলো।সামনেই বেলকনিতে দাঁড়িয়ে খালি গায়ে হাফ প্যান্ট পড়া একটা ছেলে রেলিঙের সাথে হেলান দিয়ে ফোন টিপছে।না চাইতেও আমার দৃষ্টি তার শরীর পরখ করে ফেললো।ছেলেটা উপস্থিতি বুঝতে পেরে চমকে তাকালো আমার দিকে।চোখে চোখ পড়ায় লজ্জায়,আড়ষ্টটায় যেই না এক লাফে রুমের দিকে পা বাড়ালাম ওমনি দরজার থাকে ধাক্কা লেগে সজোরে চিৎপটাং..........

চলবে?

আজকের পর্ব অনেক বড় দিয়েছি।লাইক,কমেন্ট করে উৎসাহিত করবেন প্লিজ।

'কিরে আপা তুই আম্মা আব্বার জন্য কোন উপহার আনিস নি? ঈদের মধ্যেও খালি হাতেই চলে এলি?পায়রার কথায় লজ্জায় আমার মাথা কাটা য...
20/12/2023

'কিরে আপা তুই আম্মা আব্বার জন্য কোন উপহার আনিস নি? ঈদের মধ্যেও খালি হাতেই চলে এলি?

পায়রার কথায় লজ্জায় আমার মাথা কাটা যাচ্ছে। বাড়ির সবগুলো মানুষের সামনে পায়রা আমায় এমন একটা লজ্জাজনক কথা বলবে আমি ভাবতে পারি নি।

'দুলাভাইয়ের তো চাকরি নেই পায়রা। তাই আপা হয়তো কিছু দিতে পারে নি। চুপ থাক না তুই।'

সায়রার কথায় আরো বেশি লজ্জায় পড়ে গেলাম। এক পলক রেদওয়ানের দিকে তাকাতেই দেখলাম সেও মাথা নিচু করে আছে। ঈদে বাপের বাড়িতে এসে এতো লজ্জাজনক পরিস্থিতিতে পড়বো ভাবতে পারি নি। পায়রার স্বামী আমাদের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসছে। এটা আমাকে আরো লজ্জা দিচ্ছে। এ বাড়ির বড় মেয়ে হয়ে বাবা মায়ের জন্য ঈদের উপহার আনতে পারি নি। ছোট দুইবোন মা বাবার জন্য হাত বোঝাই উপহার নিয়ে এসেছে।

আমার স্বামীর চাকরি নেই। ছয় মাস হলো রেদোয়ানের চাকরি নেই। যেই কোম্পানিতে রেদোয়ান চাকরি করতো সরকার থেকে তা বন্ধ হয়ে গেছে। তাই রেদওয়ানের চাকরিটাও চলে গেছে। রেদোয়ান চাকরি যোগারের অনেক চেষ্টা করেও চাকরি পায় নি।এদেশে তো একবার চাকরি গেলে দ্বিতীয় চাকরি পেতে দম ফুরোয়। রেদওয়ানের চাকরি যাওয়ার পরই আমার চারপাশটা বদলাতে শুরু করে। শাশুড়ি কথা শুনায়, ননদ কথা শুনায়। জা রাও এখন আর ছাড় দেয় না। প্রতিটা বেলায় খোঁটা দেওয়ার কথা তারা মোটেও ভুলে না। আগে যা সম্মান পেতাম তার ছিটেফোঁটাও এখন পাই না। সবকিছুই মেনে নিয়েছি আমি। স্বামীর চাকরি না থাকলে এটা স্বাভাবিক এখানে অস্বাভাবিক কিছুই নেই।

কিন্তু গতকালই আমার শাশুড়ি বলেছে, যেই ছেলে সংসারে একটা টাকাও খরচ করতে পারে না সেই ছেলে যেন বউকে নিয়ে কুরবানীর গোশত খেতে এ বাড়িতে বসে না থাকে। নিজের খরচ সাথে বউয়েরও খরচ। আমার ছেলেদের অন্ন ধ্বংস করছিস। আমার বাকি দুই ছেলে কি তোদের জন্য নিঃস্ব হবে নাকি?

শাশুড়ির এই কথাটা খুব গায়ে লেগেছিলো। ঈদের দিন শাশুড়ির কাছ থেকে এমন কথা শুনবো কখনো ভাবি নি। রেদওয়ান তার দুই ছেলের অন্ন ধ্বংস করছে? ঈদের সময় এতো বড় কথা তার মনে খুব দাগ কেটেছে। কিন্তু আমার অশ্রু বিসর্জন দেওয়া ছাড়া কোন উপায় ছিলো না। ও বাড়িতে খোঁটা শুনে এসেছি স্বামীর চাকরি নেই বলে। কিন্তু স্বামীর চাকরি না থাকলে বাঙালি বধূদের যা করতে হয় তাই তো করছি আমি। গাধার মতো কাজ করে তো তা পুষিয়ে দিচ্ছি, এতেও তাদের খুশি রাখতে পারি না। নিয়তি আমাকে এখানে এনে দাঁড় করিয়েছে।

সারাদিনের ক্লান্তি শেষে গতকাল রাতে মাকে ফোন করেছিলাম। মায়ের কাছ থেকে শুনেছিলাম আমার ছোট দুইবোন বেড়াতে আসবে। খুব খুশি হয়েছিলাম ভাবলাম বোনদের সাথে একসাথে বেড়াবো। এখানে তো এমনিতেও কোন পাত্তা নেই আমার। কিছুদিন বোনদের সাথে বাবার বাড়িতে ঘুরে আসলে ভালো লাগবে। তাই রেদওয়ানের সাথে জেদ ধরে বাপের বাড়িতে এসেছি। শাশুড়ি বহুবার নাক ছিটকেছে কিন্তু পাত্তা দেই নি। নিয়তির কথা স্মরণ করতেই জলে চোখ টইটুম্বর হয়ে গেলো।

এ বাড়িতে আমি সবার আগেই এসেছি। কিছুক্ষণ অপেক্ষা করার পর একে একে পায়রা এরপর সায়রা এসেছে। কি যে ভালো লেগেছে বোনদের দেখে বলে বোঝাতে পারবো না। কিন্তু আসার পরই ওরা দুইবোন মা বাবার জন্য তাদের আনা উপহার মা বাবাকে দিচ্ছে। খুব দামী দামী উপহার এনেছে। বাবার জন্য পাঞ্জাবি, পায়জামা, লুঙ্গি, টুপি, জুতা, আতর। মায়ের জন্য শাড়ি, ব্লাউজ, পেটিকোট পিছ, চুরি জুতো। বেশ ভালোই। উপহার দেওয়ার মাঝেই পায়রা ওমন একটা কথা বললো। লজ্জায় আর তাকাতে পারছি না। রেদওয়ানও যে খুব বিব্রত বোধ করছে এটা বুঝতে পারলাম। এ বাড়ির বড় জামাই যে। নিশ্চয়ই এটা তার জন্য লজ্জাজনক। আমরা দুজনেই লজ্জায় মাথা নিচু করে আছি।

'তোরা যা এনেছিস তা দে। ওদেরটা ওদের বুঝতে দে।' বাবার ধমকের সুর। পায়রা বাবার কথা শুনে মুখ ভেংচালো। রেদওয়ান আস্তে উঠে বাহিরে চলে গেলো। এখানে বসে লজ্জা পাওয়ার চেয়ে চলে যাওয়াই উত্তম। আমি আর কিছু বললাম না। ওরা নিজেদের আনা উপহারগুলো বাবা মায়ের হাতে বুঝিয়ে দিলো। এরপর সেখান থেকে নিজেদের ঘরে যেতেই দেখতে পেলাম পায়রার ননদ আর ননদের স্বামী আমাদের ঘরে শুয়ে আছে। আমাকে দেখে পায়রার ননদ বললো,

'আপনি দরজায় কড়া দিয়ে প্রবেশ করলেন না কেন? স্বামী স্ত্রীর ঘরে কেউ এভাবে প্রবেশ করে? নূন্যতম ম্যানার্সও কি আপনার মাঝে নেই?'

ওনার কথা শুনে অবাক হলাম। একে তো আমার ঘরে শুয়ে আছে উল্টো আমাকেই কথা শোনাচ্ছে। রাগ হলো প্রচুর। বললাম, আমার রুমে আমি নক করে কেন আসবো? আপনারা আমার রুমে কি করেন?

তো আমি কখন বললাম এটা আমার রুম? এখানে এখন আমাদের থাকতে দেওয়া হয়েছে। আর আপনি আমার সাথে এভাবে রেগে কথা বলছেন কেন? আপনাদের বাড়িতে বেড়াতে এসেছি কোথায় আদর যত্ন করবেন কিন্তু তা না করে অপমান করছেন! মেহমানদের সাথে কেউ এমন ব্যবহার করে? ভাবীকে আগেই বলেছিলাম আমি আসবো না জোর করে এনেছে এভাবে অপমান করার জন্য।

আমি আর তার সাথে কথা বড়ালাম না। সেখান থেকে চলে আসলাম। উঠানে রেদোয়ানকে মামার সাথে দাঁড়িয়ে কথা বলতে দেখলাম। সেদিকে একবার নজর দিয়ে সোজা মায়ের কাছে গেলাম। বললাম,

'মা আমাদের শোবার ঘরটায় পায়রার ননদ কি করছে?'

আমার কথায় মা চমকে উঠলেন। আমতা আমতা করে বললেন, এবার পায়রা ওর ননদ আর তার জামাই নিয়া বেড়াতে আসছে। বাড়িতে তো ঘর চাইরটা। সায়রার ঘরে সায়রা আর ওর ঘরে ওয় আর তোরটায়...

'ওর ননদ তাই তো? আমার ঘরে ওর ননদ কেন থাকবে?
ওরা ওখানে থাকলে আমরা কোথায় থাকবো?'

মা আবার আমতা আমতা শুরু করলেন। বললেন, 'তোরা আমগো আগের পুরান ঘরটায় এবার থাক। আমি সব গোছায়া দিমু। আমি আর কি করতে পারমু ক মা?

ভীষণ অবাক হলাম‌। মা আমাকে সেই পুরানো ঘরটায় থাকতে বলছে। যেটার অর্ধেক টিনই ক্ষয় হয়ে গেছে। একদম নাজেহাল অবস্থা। তৎক্ষণাৎ চোখদুটো জলে টইটুম্বর হয়ে গেলো। মায়ের সাথে কথা না বাড়িয়ে লাভ নেই কারণ মা কিছুই করবেন না এটা বেশ ভালো বুঝেছি। তাই উঠানে রেদোয়ানের কাছে গেলাম। সে উঠানে একা দাঁড়িয়ে আছে। আমার মলিন মুখ দেখে রেদোয়ান বললো,

কি হয়েছে আয়ু? এভাবে মুখ গোমড়া করে রেখেছো কেন?

আমার চোখ থেকে তৎক্ষণাৎ জল গড়িয়ে পড়ছে। বললো, তোমাকে এখানে এনে খুব অসম্মান করেছি আমি তাই না?

রেদোয়ান হাসলো। বললো, বাড়িতেই বা কিসের সম্মান পাই আমি?

ওর কথায় ভীষণ কষ্ট হলো আমার। বললাম, আমাদের এবার পুরানো ঘরটায় থাকতে হবে রেদোয়ান।

রেদোয়ান বিস্মিত হলো। কিন্তু মুখে কিছুই বললো না। আমি বুঝতে পেরেও চুপ থাকলাম। কিছু বলার সাহস পেলাম না। ঘর থেকে জামা কাপড়ের ব্যাগটা নিয়ে পুরানো ঘরটার দিকে গেলাম। ঘরের এক কোণায় একটা ছোট্ট খাট। পাশে একটা টেবিল তার উপর এক জগ পানি আর একটা গ্লাস। এপাশে একটা আলনা। রেদোয়ান ঘরে ঢুকেই জগ থেকে পানি নিয়ে পান করলো। এরপর ধপাস করে খাটের উপর বসে পড়লো রেদোয়ান। মাথার উপর তাকিয়ে ফ্যানের সন্ধান করলো সে।

আয়ু এখানে ফ্যান নেই?

মাথা নাড়িয়ে না জানালাম। এরপর টেবিলের উপর থেকে হাতপাখা নিয়ে রেদোয়ানকে বাতাস করতে লাগলাম। সাথে সাথে নিজের চোখের জলও বিসর্জন দিতে লাগলাম। এখানে এসেও একই পরিস্থিতিতে পড়বো ভাবতেই পারি নি আমি। নিয়তির পরিণতির কথা ভাবতেই শরীর শিউরে উঠলো আমার।

হঠাৎই পায়রার চিৎকার চেঁচামেচিতে ঘর থেকে বের হয়ে আসলাম। ব্যাগপত্র হাতে নিয়ে পায়রা মায়ের সাথে কথা বলছে। তার ননদের সাথে আমার ব্যবহার নিয়ে কি যেন বলছে ও। সাথে বাড়িতে থাকবে নাও বলছে। ওর ননদ, তার স্বামী এবং পায়রার স্বামী এক পাশে দাঁড়িয়ে আছে। ওর ননদ আমাকে দেখেই মুখ ভেংচি দিলো। ভীষণ অবাক হলাম আমি। ওদের কাছে যেতেই পায়রা মাকে বললো, এই যে তোমার বড় মেয়ে চলে এসেছে। ওকে বলো এক্ষুনি আমার ননদের কাছে ক্ষমা চাইতে। নাহলে আর এক মুহূর্তও আমি এই বাড়িতে থাকবো না!

ওর এমন ব্যবহার আমি স্বপ্নেও আশা করি নি। ওর কথা শুনে মনে হচ্ছে আমার পায়ের নিচ থেকে মাটি সরে যাচ্ছে.....

#দিন_বদলের_হাওয়ায় [১]
#তানজিলা_তিহা (লেখনীতে)

চলবে...?

এই রকম আরও গল্প পেতে পেইজটি Like এবং Follow করে পাশে থাকুন। #গল্পের রাজ্য

 #বধু_সুন্দরী   #পর্ব----০6 যা অনুমান করেছিলাম তাই,রাস্তায় দেখা হওয়া সেই মেয়েটা।নিজের সামনে যেন শ্রেষ্ঠাকেই দেখেছি আমি।ম...
20/12/2023

#বধু_সুন্দরী
#পর্ব----০6
যা অনুমান করেছিলাম তাই,রাস্তায় দেখা হওয়া সেই মেয়েটা।নিজের সামনে যেন শ্রেষ্ঠাকেই দেখেছি আমি।মেয়েটা নিজেকে ছাড়িয়ে পালিয়ে যেতে চাইছে,কিন্তু আমার হাত থেকে নিজেকে মুক্ত করা যে এতো সহজ নয় তার জন্য।

---কোথায় পালাচ্ছো,তোমার সব খেলা শেষ।ধরে ফেলেছি তোমায় আমি.....
(তাকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠলাম আমি)

---ছাড়ুন,আমায় ছাড়ুন বলছি!ভালো হচ্ছে না একদম,

---ভালো হচ্ছে না মানে,রাতের বেলা একটা অপরিচিত মানুষের কাছে লুকিয়ে লুকিয়ে যাওয়াটা কি খুব কাজ মনে হয় তোমার কাছে?

--আমায় ছেড়ে দিন,দয়া করে ছাড়ুন আমায়।

---না ছাড়বো না,আজ তো কিছুতেই ছাড়ছি না তোমায়।সেদিন তো পালিয়ে বেঁচেছিলে,আজ কে বাঁচাবে তোমায়?

---আপনার কোনো ধারনাও নেই নেই আমার সম্পর্কে,জানেন কি করতে পারি আমি!
(মেয়েটার কথা শুনে আমি আরো বেশী অবাক হয়ে যাচ্ছি)

---কে তুমি,কেন আমার সাথে লুকোচুরি খেলা খেলছো,কি চাও তুমি...??

----জানতে চান,কি চাই আমি....??

---হ্যাঁ, জানতে চাই, আর জানতে চাই বলেই তো ছুটে ছুটে এলাম আমি!

---ঠিক আছে, আমি বলবো, তার আগে হাতটা ছাড়ুন,

---আর তুমি ছুটে পালাও তাই না??তোমার বুদ্ধির জবাব নেই সত্যি,

---না আমি পালাবো না,যদি জানার এতই ইচ্ছা থাকে একবার হাতটা ছেড়ে দেখুন,

---একদম চালাকি করার চেষ্টা করো না,

---না,করবো না চালাকি,

অগত্যা মেয়েটার হাতটা ছেড়ে দিলাম আমি, এমনিতেই আমার আওতার ভেতরে আছে সে,তাই পালাতে চাইলেও এতো সহজে পালাতে পারবে না সে।মেয়েটা তার বুকের ভেতরে হাতটা ঢুকিয়ে দিলো,কিছু একটা বের করতে চাইছে মনে হচ্ছে!

---এই,তুমি এটা কি করছো,কি বের করছো এটা?

---ভয় পাবেন না,প্রমান বের করছি,আপনি জানতে চেয়েছিলেন না আমি কে!

এই বলে মেয়েটা আমাকে অবাক করে দিয়ে ওর বুকের ভেতর থেকে একটা পিস্তল বের করে।আমি যেন পুরো বোকা বনে গেলাম তার সামনে!

---না,তুমি এটা করতে পারো না।এভাবে ধোকা দিলে আমায় তুমি....ছিহ!আমি বিশ্বাস করে ছিলাম তোমায়,

---চুপ থাকো,একদম চুপ থাকো,তোমার মুখে বিশ্বাস আর অবিশ্বাসের কথা মানায় না।আর ভেবোনা আমি ছেড়ে দেবো তোমায়,এক এক করে সবকিছুর শোধ তুলবো,

মেয়েটা কি বলছে এসব,আমার ওপর এতো কি রাগ ওর।আর কিসের শোধ তোলার কথা বলছে ও।আমার মাথায় ঢুকছে না কিছুই।

---তুমি কি বলছো এসব, যা বলছো ভেবে বলছো তো?আমি তোমায় চিনি না,জানি না কিসের শোধ তুলতে চাইছো আমার ওপরে তুমি?নাকি তুমি আমার পরিচিত কেউ,আচ্ছা তুমি শ্রেষ্ঠা নও তো?

প্রশ্নগুলো শেষ করতে না করতেই আমাদের পাশ দিয়ে একটা ট্যাক্সি এসে দাঁড়ালো।মেয়েটা আমার দিকে পিস্তলটা তাক করে রেখে গাড়িতে গিয়ে উঠলো।ভারী সোয়ানা মেয়ে সে...আমি তার পিছু করেছি এটা খেয়াল করে পালানোর বন্দোবস্ত ভালো ভাবেই করে ফেলেছিলো।

এভাবে আমাকে মৃত্যুর সামনে দাঁড় করিয়ে একপর্যায়ে পালিয়ে যায় মেয়েটা।আমার হা করে তাকিয়ে সেই দৃশ্য দেখা ছাড়া কোনো উপায় ছিলো না।তবে যাই হোক না কেন,এই মেয়েটা কিছুতেই শ্রেষ্ঠা হতে পারে না,এটা আমি নিশ্চিত।শ্রেষ্ঠা এতোটা ধুরন্ধর প্রকৃতির কখনোই নয়,তাছাড়া চেহারায় মিল থাকলেও দুজনের আচার ব্যবহার আকাশ পাতাল ব্যবধান।
পরক্ষণেই বাবার কথা মাথায় আসে আমার,, আমি তো ছোটবেলা থেকেই তাকে একজন ফেরেশতার চোখে দেখে এসেছি,সেই মানুষটা যদি আমার সাথে এমন একটা জঘন্য কাজ করতে পারে,তার ভেতরে যদি এমন একটা পশুসত্ত্বা লুকিয়ে থাকতে পারে তবে শ্রেষ্ঠার ভেতরে কেন নয়।আমি জানি না,এই মেয়েটা শ্রেষ্ঠা নাকি অন্য কেউ,তবে সে যেই হোক না কেন বাবার সাথে তার নিশ্চয়ই কোনো যোগাযোগ আছে এটা অনেকটা নিশ্চিত আমি।বাবা মারতে চায় আমায়, আর সেও ক্ষতি করতে চাইছে আমার,আবার আজকে রাতেই আমার হাসপাতালে থাকার বিষয়ে জেনে এই পর্যন্ত চলে এলো সে,কেউ সাহায্য না করলে এগুলো একার পক্ষে সম্ভব নয় কিছুতেই।তাই সবার আগে আমাকে এটা জানতে হবে,বাবার সাথে এই মেয়েটার কোনো যোগাযোগ আছে কিনা,আর সেই যোগাযোগ কিসের ওপর ভিত্তি করে?এই প্রশ্নের উত্তর জানতে পারলে আমার রহস্য উন্মোচনের পথটা আরো সহজ হয়ে যাবে।

এতোক্ষণ ছুটতে ছুটতে বেশ ক্লান্ত হয়ে পড়েছি, আবারো হাসপাতালের দিকে পা বাড়ালাম।মাথায় আবারো পেইন হচ্ছে!আর সেটা হওয়াই স্বাভাবিক,এতোক্ষন যা স্ট্রেচ গিয়েছে....
নিজের কেবিনে গিয়ে শুয়ে পড়ি,আর তারপর সকাল হবার জন্য অপেক্ষা করতে থাকি।
-
-
-
-
সকালবেলা শ্রেষ্ঠা,মিছিল আর বাবা সবাই এলো হাসপাতালে।আমাকে রিলিজ করা হবে আজকে।আমায় সুস্থ হয়ে উঠতে দেখে সবাই বেশ আনন্দিত,বাবাও আনন্দিত।তবে আমি ভালো করেই জানি তার এই আনন্দের পেছনে লুকিয়ে আছে একরাশ ব্যর্থতার হতাশা।সুযোগ পেয়েও নিজের সন্তানকে খুন করতে না পারার হতাশা।হয়তো আবারো সুযোগ খুঁজছে সে, নিজের অসামাপ্ত কাজকে কিভাবে সমাপ্ত করা যায়।

----ভাইয়া,আজ তোমায় রিলিজ করা হবে তাই না?(মিছিল বেশ উৎসুক স্বরে আমায় প্রশ্ন করে)

---হ্যাঁ,রে।

---তার মানে, আজকেই বাসায় যাচ্ছো তুমি...??

---হুম,,

মিছিলকে দেখে একটা বুদ্ধি আসলো আমার মাথায়।কেবিনে আমার সাথে মিছিল একাই এখন,বাবা আর শ্রেষ্ঠা বাইরে ফর্মালিটিজ সারতে ব্যস্ত।আমি মিছিলকে আমার কাছে ডাকি।

---শোন, ভাই। একটু আমার কাছে আয়।আমার পাশে বস।

মিছিল আমার কথামতো আমার পাশে বসলো।আমি জড়িয়ে ধরলাম ওকে।তারপর আরো অধিক ঘনিষ্ঠ হলাম ওর।

---দেখ তোকে একটা প্রশ্ন করি,কাউকে আবার বলবি না কিন্তু।

---কি প্রশ্ন ভাইয়া?

---কাল রাতে কার সাথে ঘুমিয়েছিলি তুই...??তোর ভাবির সাথে, নাকি বাবার সাথে,নাকি একাই।

---বাবার সাথে ঘুমিয়েছে,কিন্তু তুমি জানো ভাইয়া....

---কিন্তু কি বল (উৎসুক স্বরে)

---আমার খুব ভয় করছিলো রাতে!

---ভয় করছিলো,কিন্তু কেন?বাবা তো ছিলো তোর সাথে?

---না ছিলো না!

---ছিলো না মানে,কি বলছিস তুই?

(এতো কেঁচো খুঁড়তে যেন সাপ বেড়িয়ে আসছে ধীরে ধীরে!)

---তুমি তো জানো মাঝে মাঝে রাতে ঘুম ভেঙে যায় আমার,কাল রাতে ঘুম ভেঙে যেতে দেখি বাবা নেই পাশে,,তখন খুব ভয় করছিলো আমার।

---বাবা কোথায় ছিলো,তুই জানিস কিছু?

---না,তাতো জানি না।তবে সে আবার ভোররাতের দিকে ফিরেও আসে।

---তুই কি তাহলে এতো সময়ে জেগে ছিলিস?

---না, তবে বাবা রুমে আসাতে টের পাই আমি।

---আচ্ছা,আর কি কিছু লক্ষ্য করেছিস।

---নাতো,আর কি.......

---ওহহ!

---এই শোন আমার আর একটা কাজ করে দিবি,তার বদলে যা চাইবি তাই দেবো।

--কি কাজ ভাইয়া??

---বাবার ফোনটা ম্যানেজ করে দে আমায় একটু,আর শোন ভুলেও যাতে বুঝতে না পারে আমি চেয়েছি ফোনটা।তুই গেম খেলার কথা বলে নিয়ে আয়।

---এটা কোনো কাজ হলো,আমি এক্ষুনি নিয়ে আসছি।

মিছিল রেরিয়ে গেলো,আমার ছোট ভাইটা সত্যিই খুব কাজের।ওর থেকে এতো কিছু জানতে পারলাম,এখন বাবার ফোনটা হাতে পেলে হয়তো কোনো না কোনো ক্লু পেলেও পেয়ে যেতে পারি।তাছাড়া একবার ট্রাই করে তো দেখাই উচিত।কারণ বর্তমানে ফোনটাই একমাত্র মানুষের যোগাযোগের মাধ্যম।অপরাধীর ফোন ঘাটলে অনেক সময় অনেক প্রশ্নের উত্তর পাওয়া যায়।

একটু পরে মিছিল ফোন নিয়ে এলো,আমি ওকে বাইরে পাঠিয়ে দিয়ে ভালো করে ফোনটা ঘাটতে লাগলাম......
বাবার সাথে নিজের পূর্ব অভিজ্ঞতা ব্যবহার করে ফাইল সেভ ওপেন করে ফেললাম।ভেতরে অনেকগুলো ফোল্ডার দেখা যাচ্ছে।হন্নে হয়ে সবকিছু খুঁজতে লাগলাম,কারণ আমি ভালো করেই জানি কিছু থাকার হলে এখানেই আছে।
খুঁজতে খুঁজতে একটা ছবির দিকে চোখ আঁটকে গেলো আমার,,,
বাবার ফোনে শ্রেষ্ঠার একটা ছবি,তবে ছবিটা ঠিক শ্রেষ্ঠার নয়।মেয়েটার বেশভূষা সম্পূর্ণ সেই মেয়েটার মতো!!যার সাথে গতকাল রাতে দেখা হয়েছিলো আমার।তার মানে আমি যা অনুমান করেছিলাম তাই, বাবার যোগাযোগ আছে ওর সাথে.....!!!!

চলবে,,,
যারা গল্প পড়তে পছন্দ করেন তারাই ফলো করেন 🙂🌺

গল্প  #জীবন_এখানে_যেমনলেখক  #জয়ন্ত_কুমার_জয়পর্ব_৬মেজদি যখন মে"ঝেতে কা"টা মুরগীর মতো ধরফর করছে তখন আমি হতভম্ব নির্বাক দাঁ...
20/12/2023

গল্প #জীবন_এখানে_যেমন
লেখক #জয়ন্ত_কুমার_জয়
পর্ব_৬

মেজদি যখন মে"ঝেতে কা"টা মুরগীর মতো ধরফর করছে তখন আমি হতভম্ব নির্বাক দাঁড়িয়ে আছি।প্রথম এরকম পরিস্থিতির স্বীকার হয়ে আমার বোধশক্তি যেন অবস হয়ে গেছে।

মাথায় ক্রমশ জল ঢালার পর মেজদির জ্ঞান ফিরলো।ততক্ষণে আশেপাশের বাড়ির মানুষজন দিয়ে আমাদের বাড়ির উঠোন,বারান্দা ভর্তি।একেকজন একেক কথা বলছে।কেউ বলছে, জোয়ান মেয়ে চুল খুলে ঘুরে বেড়ায়,ভূত প্রেত তো এদেরই ধরবে।কেউ আবার বলছে,কালো জাদু করেছে বোধহয়।আমি দাড়িয়ে তাদের কথা শুধু শুনছি।

এক বয়স্ক মহিলা তো বলেই ফেললো,এই মেয়ের উপর অশরীরী আত্মা ভর করেছে।এ মেয়ে আর থাকবে না।উ"লঙ্গ হয়ে এদিক সেদিক ছুটে বেড়াবে।

পায়ের র"ক্ত মাথায় উঠে যাওয়া বলে একটা কথা প্রচলিত আছে।বিষয়টা আমার সাথে ঘটলো। কথাটা শুনে পায়ের র"ক্ত সত্যি সত্যিই যেন মাথায় উঠে গেলো।

যতটা সম্ভব খারাপ ব্যবহার,কিছুটা গালিগালাজ করে সবাইকে উঠোন থেকে তাড়িয়ে দিলাম।পারলে একেকটার ঘা"ড় ধাক্কা দিয়ে বেড় করে দিতাম।দরজার কাছে দাঁড়িয়ে একজন বললো

" এইটুকুনি মেয়ার এতো ত্যাজ? সমাজে তোরা থাকোস কেম্নে এই দেইখা লমু।খুব আগুন তোগো তিন বোনের "

" আগুন জানেন ই যখন তাহলে লাগতে আসেন কেন? পেছন পোড়াতে?এই বয়সে পেছন পুড়"লে সামলাতে পারবেন তো? "

উপস্থিত সবাই আমার কথায় হাতবে না রাগ হবে ভেবে পেলো না।তাদের ভাবনার অপেক্ষাও করলাম না।ঠক করে দরজা লাগিয়ে দিলাম।কঠিন কথাগুলো বলে এখন বেশ হালকা লাগছে।

সবর ভাই মেজদিকে বার কয়েক হসপিটালে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলো।কিন্তু মেজদি একটা জেদ ধরে বসে আছে যে তার কিচ্ছু হয়নি।ডাক্তার দেখালে সে বিষ খাবে।

মা যেন হাঁটতে ভুলেই গেলো।সারাক্ষণ মেজদির পাশে বসে থাকে।মেজদি বেশ বিরক্ত হয়,অনেক কঠিন সব কথাও বলে।তবুও মা সেখানেই বসে থাকে।

রাতে সবর ভাই হোটেল থেকে পরোটা আর মুরগীর মাংস নিয়ে আসলো।কিন্তু এই পরিস্থিতিতে খাওয়ার রুচি কারোর হলো না।বাড়ির সবার এই চুপসে যাওয়া দেখে মেজদি হাত ইশারায় কাছে ডাকলো।কাছে যেতেই মেজদি আমার হাত ধরে উঠে বসার চেষ্টা করলো।মা আর আমি দিদিকে ধরে বিছানায় আধশোয়া করে রাখলাম।মেজদি মুখে হাসির রেখা ফুটিয়ে বললো

" কতবার বলবো আমার কিচ্ছু হয়নি।এখন বেশ সুস্থ আমি "

মা ব্যকুল হয়ে বললো " মা তুই কথা বলিস না তো।চুপ করে থাক,কথা বলতে কষ্ট হচ্ছে।কি খাবি? "

" আমার কষ্ট হচ্ছে না মা।আজ বড়দির বিয়ে,তোমরা আমাকে নিয়ে কেন পড়লে বলো তো? মজা করো,হৈ হুল্লোড় করবে তা না আমার কাছে পড়ে আছো "

" তুই সুস্থ হ,তারপর হৈ হুল্লোড় "

অনেক বোঝানোর পর মাকে নিজের ঘরে পাঠিয়ে দেওয়া হলো। বিছানায় দুজন পাশাপাশি শুয়ে আছি।বড়দি একটু পরপরই দরজার কাছে দাঁড়িয়ে বলছে

" তন্দ্রা,এই তন্দ্রা "

" হু বলো "

" অনু কি করছে? ঘুমাচ্ছে? "

" হু। তুমি বারবার এভাবে ডাকলে তো ঘুম ভেঙ্গে যাবে "

" আচ্ছা আর ডাকবো না।তুই একটু সজাক থাকবি বুঝলি।ওর দিকে নজর রাখিস "

" আচ্ছা "

" আমি জেগেই থাকবো।দরকার হলে ডাকবি কেমন? "

" আচ্ছা "

বড়দি চলে যেতেই মেজদি মৃদু স্বরে বললো " আমাদের বড়দি কত্তো ভালো তাই না রে? "

" হু। কিন্তু তুমি মিথ্যা কেন বলতে বললে? তুমি তো ঘুমাওনি "

" ঘুমাইনি জানলে চিন্তা করতো,নির্ঘুম রাত কাটাতো।কি দরকার অযথা চিন্তা বাড়িয়ে দেওয়ার "

" কি জানিস তন্দ্রা,বড়দির মতো করে কেউ ভালোবাসতে পারে না।কিন্তু দেখ,ওর জীবনেই সত্যিকারের ভালোবাসা নেই "

" নেই কে বললো? "

" তোকে যে বলেছিলাম পছন্দের কেউ আছে কিনা,বললি না তো "

" আমি বলতে পারবো না দিদি।ভিষন লজ্জা লাগছে "

" আছে তাহলে। দেখতে কেমন "

" সেভাবে দেখিনি।তবে ফর্সা,স্বাভাবিক ধরণের লম্বা "

" সাদাদ স্যারের ছেলে? "

" হু "

" স্যারকে বল বিয়ের সম্বন্ধ নিয়ে আসতে "

" এখনো তুমি আছো।মেজো বোন ছেড়ে ছোট বোনের জন্য ছেলে দেখতে আসবে? "

মেজদি হেসে বললো " আমি বেশিদিন থাকবো না।সমস্যা হবে না "

" দিদি এসব বলবা না তো। আমার কান্না পাচ্ছে "

" আরে কি মুশকিল,কান্না পাচ্ছে বলেই তো কান্না শুরু করে দিলি "

" তো কি করবো? তুমি সবসময় বাজে কথা কেন বলো? এক্ষুনি কি বললা সেটা বড়দিকে ডেকে বলবো? "

" সরি বোন,ভুল হয়ে গেছে।চোখের জল মোছ,একটা কথা বলবো "

" হু বলো "

" বড়দির ইচ্ছের বিরুদ্ধে সবর ভাই বিয়েটা করেছে।কেন করেছে শুনবি? "

" কেন? "

" আমি যেন মুখ খুলতে না পারি "

" মানে? "

" মানেটা পরিষ্কার।আমার পে'টে সবর ভাইয়ের সন্তান "

দিদদির কথায় আমার মাথা যেন শূন্য হয়ে গেলো।ধরপর করে বিছানায় উঠে বসে বললাম " কিহ?এটা কি বললে তুমি? "

" আস্তে কথা বল গাঁধা মেয়ে "

" তোমার পে'টে সবর ভাইয়ের বাচ্চা? "

" হ্যা।আরে কি মুশকিল, তুই কথায় কথায় কান্না করিস কেন? "

" কতটা ভয়ঙ্কর কথা বলছো তুমি জানো?বিষয়টা জানাজানি হলে বড়দির কি হবে? "

" কেউ জানবে না।সবর ভাই সেই ব্যবস্থাই করেছে।উনি জানে দিদির সংসার বাঁচাতে আমি কখনোই মুখ খুলবো না।"

" বাচ্চাটা নষ্ট করে ফেলো।কি পরিচয়ে ও বড় হবে? "

" সবর ভাই ক্লিনিকে নিয়ে গেছিলো সেদিন।শেষ মুহুর্তে মনে হলো যাই হয়ে যাক,এতো বড় পাপ করতে পারবো না "

" তার মানে সেদিন সবর ভাই তোমায় ক্লিনিকে নিয়ে গেছিলো বাচ্চা ন'ষ্ট করাতে? আর দিদির সামনে এমন ভাব করলো যেন কিছুই জানেনা! "

" মহা ধূর্তবাজ "

" তুমি ওনার ফাঁদে পা দিলে কিভাবে? "

" মাথা ঠিক ছিলো না রে।শরীরে প্রথম পুরুষের স্পর্শ কি উপেক্ষা করা যায়? আর উনিও জোর করে সবটা করেছে।ভয়ে মুখ ফুটে বলতেও পারিনা "

" দাড়াও আমি এর শেষ দেখে ছাড়বো।এক্ষুনি সবর জানোয়ারটার পশুত্বরুপ দিদিকে জানাবো "

" পাগল হইছিস নাকি?দিদির জীবনটাই এলোমেলো হয়ে যাবে।দিদি ছোট থেকে অনেক কষ্ট করেছে,আর কষ্ট দিতে চাই না "

মেজদিকে জড়িয়ে ধরলাম।মেজদি আমার মাথায় হাত বুলিয়ে বললো

" বিষয়টা জানাজানি করিস না বোন,প্লিজ।দিদির বেঁচে থাকা তাহলে খুব কষ্টের হয়ে যাবে "

" দিদির জন্মদিনের রাতে উনি আমার কো'মড় স্পর্শ করেছিলো।আর মাঝরাতে দিদির ঘরেও গেছিলো।সেরাতে দিদির সাথে আমি ছিলাম।আমি জানি উনি আমার সাথে খারাপ কিছু করার জন্য দিদির ঘরে এসছিলো।কিন্তু বুঝতে পারেনি সাথে দিদি আছে "

" নর্দমার কিট একটা। যাইহোক অনেক রাত হইছে।ঘুমা, কাল স্কুল আছে না? "

" এতোকিছুর পরেও তুমি এতো স্বাভাবিক আছো কিভাবে দিদি? "

" শেষ সময়ে সব ভুলে ভালো থাকার চেষ্টা করছি।তুই ঘুমা তো।আয় তোকে একটু বু"কে জরিয়ে ধরি "

কাঁদতে কাঁদতে দিদিকে জড়িয়ে ধরেই ঘুমিয়ে পড়লাম।ঘুম ভাঙ্গলো বিভীষিকাময় এক অনুভূতি নিয়ে।রোদের ছটা তখন জানালা ভেদ করে ঘরের ভেতর ঢুকেছে।খানিকটা রোদ পড়েছে মেজদির ধবধবে পায়ে,শরীর ফটফটে সাদা হয়ে গেছে।যেন বিন্দুমাত্র র"ক্ত অবশিষ্ট নেই।ধর্ণার ছাঁদের সাথে দুটো ওড়না একসাথে করে একটা দড়ির মতো করে ধর্ণার বাঁশের সাথে বাঁধা।ওরনার শেষ মাথায় মেজদির গলা।মাটি থেকে হাত খানেক উপরে মেজদির শ"রীর ঝু'লছে।ওড়না গলায় চাপ লেগে গলার অর্ধেকটা পর্যন্ত কে"টে গেছে।

দিদির লা"শ যখন নামানো হয় ততক্ষণ পর্যন্ত আমি ঘোরের মধ্যে ছিলাম।টেনে পড়ুয়া একটা মেয়ে তার মেজদির ওড়নায় গলায় ফাঁস দেওয়া মৃ"ত শরীর দেখছে!

বড়দির তুলনায় মেজদিকে আমি একটু বেশিই ভালোবাসতাম।বয়সের ফারাক কম থাকায় বন্ধুর মতো মিশতাম।সেই মেজদির অপমৃ"ত্যু আমাকে গভীর ভাবে ব্যথিত করলো।

উঠোনে মেজদিকে জড়িয়ে ধরে মা যখন হাইমাউ করে কাঁদছে তখন আমি ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে ছিলাম সবর ভাইয়ের দিকে।লোকটার মুখে মিথ্যা বেদনার ছাপ।মনে মনে তার খুশির অন্ত নেই সেটা বেশ বুঝতে পারলাম।শুধুমাত্র দিদির কথা ভেবে এই লোকটাকে ছেড়ে দেওয়া কি ঠিক হবে?এরকম জানোয়ারের সাথে বড়দি সংসার করবে কি করে?যার জন্য আমার অতি কাছের একজন বু"কে এতো ব্যাথা নিয়ে ছটফট করতে করতে মা"রা গেলো তাকে এতো সহজে ছাড় দেওয়া মোটেও উচিত নয়।

মেজদির বলা কথাগুলো বারবার কানে ভাসছিলো।দিদি দিব্যি দিয়েছিলো যেন কাউকে বিষয়টা না বলি।কিন্তু যে মানুষটা আর নেই তার দিব্যি বাঁচিয়ে রেখে একটা পশুকে ছাড় দেওয়ার কোনো মানেই হয় না।

অনেক কষ্টে দিদিকে আর মা'কে ঘরে নিয়ে এলাম।মাকে জ"ড়িয়ে ধরে বললাম

" মা কান্না থামাও।দিদির মৃ"ত্যুর কারণটা আমি জানি।তোমার শোনা প্রয়োজন।কেঁদে তো আর দিদি ফিরে আসবে না।দোষীকে শাস্তি দিলে তবুও তার প্রতিশোধ পুর্ণ হবে "

তারপর গতরাতে মেজদির বলা সকল কথা বললাম।কথাগুলো শুনে বড়দি ধপ করে মেঝেতে আছাড় খেয়ে পড়লো।মা দাঁড়িয়ে রইলো পাথরের মতো শক্ত হয়ে।দিদিকে মেঝে থেকে তুলতে যেতেই বিকট এক আর্তনাত করে মা বিদ্যুতের গতিতে ঘর থেকে বেড়িয়ে গেলো।দিদিকে ধরে ঘরের বাইরে আসতেই দেখলাম মায়ের হাতে ব"টি।সবর ভাই মাটিতে দাপাদাপি করছে।তার গ"লা আর বু"ক দিয়ে ফিনকি দিয়ে র"ক্ত বেড় হচ্ছে।সেই র"ক্তে মেজদির কা"ফনের কাপড়ের অর্ধেকটা অংশ গাঢ় লাল বর্ণ ধারণ করলো।মায়ের দৃষ্টি উর্ধে।মায়ের এই রুপ জন্মত কখনো দেখিনি!

আগামী পর্বের অপেক্ষায়.............

দায়িত্ব নিয়ে প্রতিদিত গল্প দিচ্ছি।পাঠক-পাঠিকাদের রেসপন্স কম আসলে কষ্ট পাবো।

 #বধু_সুন্দরী   #পর্ব----০৫ জ্ঞান ফেরার পরে দেখতে পাই আমি একটা হাসপাতালের বেডে শুয়ে আছি।মাথায় একটা মোটা ব্যান্ডেজ করা,ভে...
20/12/2023

#বধু_সুন্দরী
#পর্ব----০৫
জ্ঞান ফেরার পরে দেখতে পাই আমি একটা হাসপাতালের বেডে শুয়ে আছি।মাথায় একটা মোটা ব্যান্ডেজ করা,ভেতরে প্রচুর যন্ত্রনা হচ্ছে।

আমার জ্ঞান ফিরতে দেখে নার্স বাইরে ছুটে গেলেন।তার একটু পরে বাবা,ভাই আর শ্রেষ্ঠা তড়িঘড়ি করে ভেতরে প্রবেশ করলো।

শ্রেষ্ঠা আর মিছিল আমাকে এই অবস্থায় দেখে রীতিমত কান্না শুরু করে দিলো।বাবা তাদের শান্ত করে এগিয়ে আসলেন আমার দিকে।

----সৃষ্টিকর্তার কাছে অসংখ্য শুকরিয়া, তিনি বাঁচিয়ে দিয়েছেন তোকে!

বাবার মুখের দিকে হা করে তাকিয়ে আছে আমি,কী হচ্ছে এসব আমার সাথে।মনে হচ্ছে আমি আর বাস্তবে নেই,ভিন্ন একটা অভিনয়ের চলে এসেছি।নিজের চোখে বাবাকে আঘাত করতে দেখেছি আমাকে!সেটা তো আর মিথ্যা নয়।

আমি নিশ্চিত বাবা ভুলেও ভাবতে পারছেন না, আমি দেখে ফেলেছিলাম তাকে।কিন্তু আমাকে আঘাত করে, আবার হাসপাতালে ভর্তি করে সুস্থ করে তোলার অর্থ কি....???
নাহ!এবার দেখছি টেনশনে মাথা ছিড়ে যাবার উপক্রম আমার।

একটু পরেই ভেতরে একটা লোক এসে ঢুকলো,সাথে একজন পুলিশ।পুলিশ আমাকে উদ্দেশ্য করে বলতে লাগলেন :

---ইনি গোডাউনের দারোয়ান,গতকাল রাতে ইনি যথাসময়ে না আসলে হয়তো বাঁচানো যেতো না আপনাকে।

---উনি আমায় বাঁচিয়েছেন মানে,বুঝলাম না আমি??

---কেন বাবু, আমি যখন নিজের স্ত্রীর সাথে ফোনে কথা বলতে বলতে বাইরে বের হচ্ছিলাম,তখন হঠাৎ কাউকে গোডাউন থেকে ছুটে পালিয়ে যেতে দেখলাম।হয়তো আমাকে দেখে ফেলেছিলেন উনি।তারপর একটু এগিয়ে যেতেই আপনার সেন্সলেস বডি দেখতে পাই।ততক্ষণে লোকটা পালিয়ে যায়,কিন্তু আপনার কথা ভেবে আমি আর পিছু নিলাম না তার।

দারোয়ানের কথা শুনে আরো ভয় হতে লাগলো আমার,তারমানে বাবা ইচ্ছে করে বাঁচায় নি আমায়,আমায় খুন করা উদ্দেশ্য ছিলো তার!!!হে.... সৃষ্টিকর্তা...এ কোন কঠিন পরিস্থিতির মুখে দাড় করালে আমায় তুমি??আমার নিজের বাবা খুন করতে চাইছে আমায়।আমি কি এমন ক্ষতি করেছি তার, বাবা কেন এটা করলো আমার সাথে!তার মানে মায়ের ফিরে আসা,ফোনকল এইসবকিছু বাবার ষড়যন্ত্র ছিলো।কিন্তু বাবার এসব করে কি লাভ?কেন সে এসব করছে?

একটু পরে পুলিশ আর সেই দারোয়ান বেরিয়ে গেলো।বাবা আবারো আমার সাথে কথা বলা শুরু করলো!

----এখন কেমন লাগছে বাবা?শরীরটা ভালো লাগছে তো।

এই মুহুর্তে বাবার সাথে কথা বলতেও ঘৃনা হচ্ছে আমার।ভাবতেই অবাক লাগছে ইনি আমার নিজের বাবা।যাকে আমি এতোটা সম্মান করি, ভালোবাসি সে কিনা আমার বিরুদ্ধে এতো বড়ো ষড়যন্ত্র চালাচ্ছে, তাও পেছন থেকে।কিন্তু এই মুহূর্তে কিছুতেই বুঝতে দিলে চলবে না তাকে,আমি তার চালাকি ধরতে পেরেছি।যাই হোক,এখন কিছু না জানার ভান করে থাকতে হবে।নয়তো সত্যটা পর্যন্ত পৌঁছতে পারবো না কোনোদিন।

পুলিশের ডাকে বাবা কেবিনের বাইরে বেরিয়ে গেলেন।ভেতরে মিছিল আলর শ্রেষ্ঠা।শ্রেষ্ঠা এসে আমার পাশে বসলো।মিছিল দাঁড়িয়ে আছে।

---আমি যেতে বারণ করেছিলাম আপনাকে!তারপরেও কেন গেলেন?

---আমি তো কেবল আমার মাকে উদ্ধার করতে গিয়েছিলাম!

---আচ্ছা,আপনিই বলুন মৃত মানুষ ফিরে আসে কখনো।আমার তো শুনেই সন্দেহ হয়েছিলো কেউ ফাঁসাতে চাইছে আপনাকে,তাই তখন বারণ করি। কিন্তু আপনি যে আমার কোনো কথা কানে নিলেন না।

শ্রেষ্ঠার কথাগুলো সত্যিই ভীষণ যৌক্তিক,আমি নিজেও এতোটা ডিপলি ভাবিনি।কিন্তু শ্রেষ্ঠাও তো আমার সন্দেহের তালিকার বাইরে নয়।বাবার বিরুদ্ধে প্রমান আমি নিজেই,কিন্তু শ্রেষ্ঠা।ওর আসল রুপ কিকরে সামনে আনবো আমি।ও কি সত্যিই আমার ভালো চায়,নাকি এটা ওর একটা মুখোশ।ঠিক বাবার মতো।
এই পৃথিবীতে আমিই বোধহয় একমাত্র হতভাগ্য মানুষ যাকে কিনা তার জন্মদাতা পিতা খুন করতে চাইছে,যাকে কিনা নিজের স্ত্রীকে প্রতিক্ষণ আর প্রতিমুহূর্তে সন্দেহর চোখে দেখতে হচ্ছে।এই যন্ত্রণাদায়ক জীবনের থেকে মৃত্যু অনেক অনেক শ্রেয়।কিন্তু মায়ের খুনির পরিচয় না জেনে,আমার বাবা কেন খুন করতে চাইছে আমায় এটা না জেনে মরেও শান্তি পাবো না আমি।তাই আমাকে যেকরেই হোক সমস্ত প্রতিকূলতার সমুক্ষীন হতে হবে।এর থেকে পালিয়ে বাঁচার কোনো রাস্তা নেই আমার।

---কি হলো,কি ভাবছেন এতো?
(শ্রেষ্ঠার কথায় ভাবনার ঘোর কাটলো আমার)

---না,কিছু না।

---ডাক্তার বলেছে কাল সকালে রিলিজ দেয়া হবে আপনাকে।ততক্ষণ এই হাসপাতালেই থাকতে হবে।

---ওহ,তা তুমি কি সিধান্ত নিলে?

---কি সিধান্ত?

---এখানেই থাকবে নাকি,বাসায় যাবে?

---বাহ রে,,আপনি অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে পড়ে আছেন।আর আমি কিনা আপনার স্ত্রী হয়ে বাড়ি গিয়ে আরাম করবো।এটা হতে পারে।

---তুমি তো বড়োদের মতো কথা বলা শিখে গেছো দেখি,

শ্রেষ্ঠা আমার কথার প্রত্যুত্তরে একটা লজ্জামিশ্রিত হাসি দিলো।আর কিছুই বললো না।
-
-
সারাদিন কেটে গেলো,,শ্রেষ্ঠা আমার কথায় সন্ধ্যার পরে শ্রেষ্ঠা মিছিলকে নিয়ে বাসায় চলে গেছে। বাবার কথা জানি না।আজকে একটু তাড়াতাড়িই আমি মেডিসিন নিয়ে ঘুমিয়ে পড়ি।
-
-
রাতেরবেলা হঠাৎ একটা শব্দে ঘুম ভেঙে গেলো আমার।ঘুমকাতুরে চোখে দেখতে পাই কেউ একটা আমার কেবিন থেকে বেরিয়ে গেলো।মাথার ব্যাথা অনেকটা কমেছে আমার।আর কিছু না ভেবে উঠে পড়লাম আমি।তারপর তার পিছু নেই।

একটা মেয়ে বোঝাই যাচ্ছে,পুরো সেদিনের রাস্তায় দেখা সেই মেয়েটার মতো বেশভূষা।যাকে দেখতে কিনা হুবহু শ্রেষ্ঠার মতো।এমনকি আমি এটাও জানি না,ওটাই শ্রেষ্ঠা কিনা।যাই হোক না কেন,আজ আর একে ছেড়ে দিলে চলবে না।এতো রাতে লুকিয়ে লুকিয়ে আমার কাছে কি এমন কাজ ওর,সেটা ওর মুখ থেকে বের করতে হবে।তাছাড়া ওকে ধরতে পারলে ওই শ্রেষ্ঠা কিনা সেটাও জানতে পারবো আমি।

মেয়েটা আমার থেকে মাত্র কয়েকগজ দূরে,হাসপাতালে পিনপতন নিরবতা বিরাজ করছে। আর আমি সমস্ত নিরবতা ভেঙে অজ্ঞাতনামা মেয়েটার পিছু নিলাম।এক পর্যায়ে হাসপাতালের বাইরে বেরিয়ে পড়ে সে।তারপর রাস্তা ধরে এগিয়ে যায়।আমিও আপ্রান চেষ্টা করছি তাকে পাকড়াও করবার।

তাড়াহুড়োতে ঘড়ি দেখা হয়নি,তবে রাত দেড়টা কি দুটো বেজেছে এইটুকু আন্দাজ করতে পারছি, লোকজন তো দূর রাস্তায় কোনপ্রকার যানবাহন পর্যন্ত চোখে পড়ছে না,চারদিকে কেবল শুন্যতা আর শুন্যতা।

মেয়েটা ছুটতে ছুটতে এক পর্যায়ে হোঁচট খেয়ে পড়লো,সৃষ্টিকর্তা যেন আজ একটু বেশিই সহায় আমার,তা না হলে এর থেকে বড়ো সুযোগ আর কি হতে পরে।সর্বশক্তি দিয়ে ছুটে যাই আমি,সে উঠে পা বাড়াতে না বাড়াতে হাতটা খপ ধরে ফেললাম আমি।তারপর ওর মুখ থেকে ওড়নার পর্দাটা সরিয়ে নিলাম।

যা অনুমান করেছিলাম তাই,রাস্তায় দেখা হওয়া সেই মেয়েটা।নিজের সামনে যেন শ্রেষ্ঠাকেই দেখেছি আমি।মেয়েটা নিজেকে ছাড়িয়ে পালিয়ে যেতে চাইছে,কিন্তু আমার হাত থেকে নিজেকে মুক্ত করা যে এতো সহজ নয় তার জন্য।

---কোথায় পালাচ্ছো,তোমার সব খেলা শেষ।ধরে ফেলেছি তোমায় আমি.....
(তাকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠলাম আমি!)

চলবে,,

Address

Faridpur
7800

Website

Alerts

Be the first to know and let us send you an email when গল্পের রাজ্য posts news and promotions. Your email address will not be used for any other purpose, and you can unsubscribe at any time.

Share


Other Digital creator in Faridpur

Show All