21/12/2023
গল্প #জীবন_এখানে_যেমন
লেখক #জয়ন্ত_কুমার_জয়
পর্ব_৭
সবর ভাই মাটিতে পড়ে ছটফট করছে।তার গ"লা আর বু"ক দিয়ে ফিনকি দিয়ে র"ক্ত বেড় হচ্ছে।সেই র"ক্তে মেজদির কা"ফনের কাপড়ের অর্ধেকটা অংশ গাঢ় লাল বর্ণ ধারণ করলো।মায়ের দৃষ্টি উর্ধে।মায়ের এই রুপ জন্মত কখনো দেখিনি!
বিষয়টা নিয়ে গ্রামে রোল উঠে গেলো।বাড়িতে এখন কয়েক রাজ্যের মানুষ।কিছুক্ষণ আগে চেয়ারম্যান এসে আমার দিকে তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকলো।আমি বেশ স্বাভাবিক ভাবেই ওনাকে বসার জন্য চেয়ার এগিয়ে দিলাম।তিনি উপস্থিত লোকজনের কাছে শুনতে চাইলেন ব্যাপারটা কি ঘটেছে।কেউ একজন বললো
" চেয়ারমেন ছার সে কি বলবো।অবনীর মা ঘর থাইক্কা ফাগলের মতো ছুইট্টা পাকঘর থেকে বটি নিয়া সবরের গ"লায় এক কো"প! বাবারে বাবা,কি ভয়ঙ্কর মহিলা "
চেয়ারম্যান চোখ মুখ কুঁচকে বললো " আপনারা আটকালেন না কেন? "
" হেয় এমন কাম করবো কে জানতো? "
পুলিশ যখন মা'কে পুলিশ জিপে তুললো তখন মা আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলেছিলো,তোর দিদির দিকে একটু দেখিস মা।আমায় নিয়ে ভাবিস না।
হাউমাউ করে কেঁদে বলেছিলাম " তুমি ছাড়া আমাদের কি হবে মা,কেন করতে গেলে এমন "
" আমার কোনো চিন্তা নাই।অবনী থাকতে তোকে নিয়ে লোনো চিন্তা নাই আমার।দুইবোন মিলেমিশে থাকিস "
" আমি তোমায় বেড় করে আনার সবরকম চেষ্টা করবো মা। তুমি একদম ভেবো না,কিচ্ছু হবে না তোমার "
মা শুধু হাসলো।তারপর বড়দিকে জড়িয়ে ধরে কানে ফিসফিস করে কি যেন বললো।দুইবোন মাকে শেষ বারের মতো জড়িয়ে ধরে অনেক কাঁদলাম।
শেষ বারের মতো জড়িয়ে ধরে কেঁদেছি বললাম,কারণ পুলিশ কাস্টরিতে নিয়ে যাওয়ার দুইদিনের মাথায় মায়ের মৃ"ত্যুর খবর এলো।মাকে নিয়ে যাওয়ার পরেরদিন দেখতে গিয়েছিলাম।মা তখনো স্বাভাবিক ছিলো।পুলিশ জানালো মা নাকি বিড়বিড় করে কার সাথে নাকি কথা বলতো।পাগলের মতো হাসতো।তারপরের দিনই মা'য়ের মৃ"ত শরীর জেলে পড়ে ছিলো।দেয়ালে প্রচন্ড মাথা ঠুকার ফল স্বরুপ প্রচন্ড র'ক্তক্ষরণে মা শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করলো।
হঠাৎ করেই আমার জীবনটা এলোমেলো হয়ে গিয়েছিলো।মা, তিন বোনের হৈচৈ ভরা বাড়িটা আমার কাছে শ্মশানের মতো লাগতো।সবসময় একটা আতঙ্কের মতো লাগতো।বড়দি সারাক্ষণ অঝোরে কান্না করে,আমি পাথরের মতো বিছানার কোণে বসে থাকি।মাঝেমধ্যে মেজদির সাথে মায়ের সাথে কথা বলি।ওরা বেঁচে নেই,তবুও কল্পনায় তারা আমার সাথে বসে থাকে,গল্প করে।একদিন বড়দি আমার ঘরে এসে বললো
" তন্দ্রা,কার সাথে কথা বলছিস? "
" কই না তো,কার সাথে কথা বলবো? "
" আমি বাইরে থেকে স্পষ্ট শুনতে পেলাম তুই বিড়বিড় করতেছিস "
" মেজদির সাথে "
" অনু তোর সাথে কথা বলে? "
" হু।মাঝেমধ্যে মা ও বলে "
" ও আচ্ছা "
অবনী বুঝতে পারলো তন্দ্রার মাথা খারাপ হওয়ার যোগান।মৃ"ত ব্যক্তির ডাক খুবই ভয়ঙ্কর ব্যাপার।তারা যাকে ডাকে সেও চলে যায়।অবনী নিজেকে শক্ত করলো।ছোট একটা বোন আছে,তার ভবিষ্যত আছে,এভাবে নিজ হাতে নষ্ট হতে দেওয়া যায় না।তন্দ্রাকে এই বাড়িতে রাখা যাবে না।ওর নতুন পরিবেশ প্রয়োজন।
এসব ভাবতেই বাড়ির সামনে একটা রিক্সা এসে থামলো।অবনী দেখলো রিক্সা থেকে সাদাদ স্যার নামলেন।উঠোনে আসতেই অবনী পা ছুঁয়ে কদমবুসি করলো।ঘরে নিয়ে গিয়ে বসতে দিলো।বললো
" স্যার আপনি আসবেন ভাবিনি।ঘরে ফল,বিস্কুট কিচ্ছু নেই,কি দিই বলুন তো "
" আহা,এতো ব্যস্ত হয়ো না মা।তোমার মনের যে অবস্থা চলছে।মনকে শক্ত করো মা "
অবনী দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো " তাই তো করার চেষ্টা করছি স্যার "
" তন্দ্রা কোথায়? "
" ওর ঘরেই বসে আছে।মেয়েটা সারাদিন ঝুরঝুর করে কাঁদে।আপনি বসুন ডেকে আনি "
" মা তুমি একটু বসো।ওকে ডাকতে হবে না।তোমার সাথে একটু কথা বলতে আসলাম "
" হ্যা স্যার বলুন।সেদিন এসছিলেন দেখেছি।কথা বলার অবস্থায় ছিলাম না "
" তোমরা কি সুস্থ আছো মা?খাওয়া দাওয়া করছো?তোমার শরীর তো অর্ধেক হয়ে গেছে "
" বোনটাকে নিয়ে খুব চিন্তা হয় স্যার "
" তন্দ্রা? ও এখনো সামলে উঠতে পারছে না বুঝি।তা পারবে কিভাবে,এতো অল্প বয়সে এতো বড় ধাক্কা, সামলাতে তো সময় লাগবে "
" তন্দ্রা অসুস্থ হয়ে যাচ্ছে স্যার।বিরবির করে মা আর অনুর সাথে কথা বলে "
" বলো কি "
" হু।মাঝরাতে মায়ের ক"বর,অনুর কবর জড়িয়ে ধরে হু হু করে কাঁদে।ভয় হচ্ছে স্যার।এভাবে চললে ও পাগল হয়ে যাবে "
" অবনী মা,আমি যে কথাটা বলার জন্য এসেছি সেটা বলতে চাই "
" হ্যা বলুন না "
" তোমাদের এই পরিস্থিতিতে কথাটা বলতে চাইনি। কিন্তু তন্দ্রার কথা শুনে বলতেই হলো।তন্দ্রার পরিবেশ বদল প্রয়োজন "
" আমিও তাই ভাবছি স্যার।কিন্তু আর্থিক অবস্থা এখন বেশ শোচনীয়।কি করবো বুঝতে পারছি না "
" তোমার বোনটাকে আমি নিয়ে যেতে চাই মা "
" আপনি নিয়ে যাবেন? কিন্তু "
" আমার ছেলে বিষণ্ণর সাথে ওর বিয়ে দিতে চাই।তন্দ্রাকে আমার এবং আমার স্ত্রীর ভিষণ পছন্দ হয়েছে।অনেকদিন থেকে ভেবেছি তন্দ্রাকে ছেলের বউ করে নিয়ে যাবো "
" স্যার ওর বয়স তো...."
" প্রাপ্ত বয়স্ক হলে তখন বিয়ে হবে "
অবনীর চোখে জল চলে এলো।বোনটার জীবন এতো সুন্দর ভাবে গুছিয়ে যাবে কল্পনাও করেনি।স্যারের পা স্পর্শ করে অবনী কান্না করে ফেললো।সাদাদ স্যার অবনীর মাথায় হাত বুলিয়ে দিলেন।বললেন
" মা আমি বলি কি,তুমিও চলো।দুইবোন একসাথে আমার বাড়িতে থাকবে "
" আমি যেতে পারবো না স্যার।বোনের,মায়ের ক"বর রেখে আমি দূরে থাকতে পারবো না।শেষ সময় পর্যন্ত এই যায়গাটাকেই আঁকড়ে ধরে থাকতে চাই। আমাকে নিয়ে ভাববেন না।আপনার বাড়িতে আমার ছোট বোনটা রাজকন্যা হয়ে থাকবে জানি।ছোট বয়সে বড্ড কষ্ট পেলো মেয়েটা "
" মা একটা কথা রাখবে?তন্দ্রাকে আমি এখনি নিয়ে যেতে চাই "
অবনী চোখের জল মুছে বললো " আচ্ছা, আমি ওর জামাকাপড় গুছিয়ে দিচ্ছি "
" ওসব কিছু লাগবে না।আমি যাওয়ার রাস্তায় কিনে নিবো।তুমি শুধু অনুমতিটুকু দাও "
" স্যার কি বলছেন,আপনি আমার গুরুজন।অনুমতি দিবো কি, আপনার কাছে আজীবন কৃতজ্ঞ থাকবো "
আমি কিছু বুঝতে পারছি না।দিদি আমার হাত ধরে রিক্সায় বসিয়ে দিয়ে কপালে চু'মু খেয়ে বললো " ভালো থাকিস বোন।তোকে দেখতে রোজ যাবো।স্যারের বাড়িতে অনেক ভালো থাকবি তুই "
স্যার বিশাল একটা শপিংমলের সামনে রিক্সা দাড় করিয়ে এতো এতো জামাকাপড় কিনে দিলো।তারপর নিয়ে গেলো তার বাড়িতে।স্যারের স্ত্রী আমার কপালে চু'মু দিয়ে একটা ঘরে নিয়ে গিয়ে বললো
" দেখতো মা,পছন্দ হলো? "
বিশাল বড় ঘর।দেয়ালে চিত্রকর্ম করা,প্রশস্ত বিছানা।বললাম
" হু "
" ইশশ,মা আমার কয়দিনেই কি হাল হয়েছে শরীরের। চোখের নিচে কালি পড়ে গেছে,গাল বসে গেছে।স্নান করে নাও তো,আমি খাবার নিয়ে আসি "
_______________
এই গল্পের লেখক পেজের নাম জয়ন্ত কুমার জয়।যারা লেখকের পেজ থেকে গল্প সময় মতো পেতে চান তারা জয়ন্ত কুমার জয় লিখে সার্চ করুন,লেখক পেজ পেয়ে যাবেন।
" এতো ব্যস্ত হয়ে কি করছো?আর তোমার চোখে জল! কাঁদছো? " সাদাদ সাহেব স্ত্রীকে বললেন।তার স্ত্রী ব্যস্ত ভঙ্গিতে প্লেটে খাবার সাজাতে সাজাতে বললেন
" মেয়েটাকে দেখে বু"ক দুমড়ে মুচড়ে উঠছে বারবার।তাকানো যাচ্ছে না এমন চেহারা হয়েছে।এতো মিষ্টি একটা মেয়ের এই অবস্থা চোখে দেখা যায় বলো? "
" এক দেখাতেই মেয়েটার ওপর তো তোমার মায়া পড়ে গেছে "
" এতো মিষ্টি একটা মেয়ে,মায়া হবে না? "
" বলেছিলাম না,ভারী রুপবতী মেয়ে।একবার দেখলে চোখে গেঁথে যাবে "
" কিন্তু আমাদের পছন্দ তে কি আসে যায়।বিষণ্ণর তো পছন্দ হতে হবে "
" তন্দ্রাকে উপেক্ষা করার ক্ষমতা কোনো ছেলের থাকতে পারে বলে তো মনে হয় না "
" তোমার ছেলের এই ক্ষমতা আছে।দুইটা বছর ধরে দেখছোই তো কেমন জেদ নিয়ে বসে আছে।কখনোই নাকি বিয়ে করবে না।কোন মেয়েকে ভালোবেসে ধোঁকা খেয়েছে, সেটা এতো বছরেও মনে পুষে রাখতে হবে? এরকম গাঁধা ছেলে আমার পে'টে জন্মালো কীভাবে? "
" তন্দ্রাকে ওর বেশ পছন্দ হবে দেখো "
" কি জানি।তবে যাই বলো।জোর করে হলেও ওদের বিয়ে আমি দিয়ে তবেই ছাড়বো।মেয়েটাকে আমার ভিষণ মনে ধরেছে।নিজের মেয়ের থেকেও যত্নে রাখবো দেখে নিও "
খাবার নিয়ে তন্দ্রার ঘরের দিকে যেতেই বিষণ্ণ ডাকলো
" মা,একটু শুনে যাও তো "
ছেলের ডাকে তিনি ঘরে ঢুকলেন।বললেন " বল "
" পাশের রুমে মেয়েটা কে? "
" তোর বাবার স্কুলের ছাত্রী "
" ছাত্রী তো এখানে কি করছে? বাড়ি কি স্কুল নাকি? "
" তুই এতো রাগছিস কেন? "
" তো রাগবো না?একটা মেয়ে এরকম ন্যাকি সুরে কান্না করলে লেখায় মন দেওয়া যায়? "
" কি এমন লিখছিস হ্যা?ওইতো সব পাগলেও প্রলাপ "
" আমার লেখা তোমার কাছে পাগলের প্রলাপ মনে হয়? "
" হ্যা হয়।আর শোন,ওই মেয়ে ন্যাকি সুরে ইচ্ছে করে কাঁদছে না।সে অনেক দুঃখী একটা মেয়ে।মেয়েদের সম্মান করতে জানিস না? "
বিষণ্ন ঠো'ট বাঁকিয়ে বললো " আর মেয়ে।মেয়ে জাত হলো সবচেয়ে..... থাক তোমার সামনে বলতে চাচ্ছি না।যাও যেখানে যাচ্ছিলে "
ছেলের এমন উদ্ভট আচরণে তিনি মনে ভিষণ কষ্ট পেলেন।কি হয়ে গেলো তার ছেলেটার?রাগ কি ওর নাকের ডগায় লেগে থাকে সবসময়? তিনি চলে যেতেই বিষন্ন পিছু ডেকে বললো
" তোমার ন্যাকি রাণীকে বলবে মুখ বন্ধ করে কাঁদতে।কান্নার শব্দে আমার লেখার ডিস্টার্ব হচ্ছে "
" ন্যাকি রাণী আবার কেমন সম্বোধন? ওর নাম তন্দ্রা, কত মিষ্টি একটা নাম "
" নাম শুনতে চাইনি মা। তুমি এখন যাও "
বিষণ্ণর ভিষণ রাগ লাগছে।এতো এতো রুম থাকতে তার পাশের রুমটাতেই কেন বাবা তার ছাত্রীকে এনে রাখবেন?মেয়েটা কতদিন থাকবে এ বাড়িতে?বিষণ্ণ বেশ কাচুমাচু অবস্থায় পড়ে গেলো।সে বেশিরভাগ সময় ছোট প্যান্ট পড়ে থাকে,মাঝমধ্যে খালি গায়ে বারান্দায় হাটাহাটি করে।মেয়েটা যতদিন বাড়িতে থাকবে ততদিন বেশ সামলে চলতে হবে তাকে।
______________
একরাতের মধ্যেই স্যারের স্ত্রীকে আমার ভিষণ আপন মনে হতে লাগলো।তার আদর,যত্নে স্পষ্ট মায়ের ছাপ ফুটে উঠে। ঘুম থেকে উঠে দরজা খুলতেই আমার চোঝ ছানাবড়া হয়ে গেলো।সামনেই বেলকনিতে দাঁড়িয়ে খালি গায়ে হাফ প্যান্ট পড়া একটা ছেলে রেলিঙের সাথে হেলান দিয়ে ফোন টিপছে।না চাইতেও আমার দৃষ্টি তার শরীর পরখ করে ফেললো।ছেলেটা উপস্থিতি বুঝতে পেরে চমকে তাকালো আমার দিকে।চোখে চোখ পড়ায় লজ্জায়,আড়ষ্টটায় যেই না এক লাফে রুমের দিকে পা বাড়ালাম ওমনি দরজার থাকে ধাক্কা লেগে সজোরে চিৎপটাং..........
চলবে?
আজকের পর্ব অনেক বড় দিয়েছি।লাইক,কমেন্ট করে উৎসাহিত করবেন প্লিজ।