24/01/2024
-- " বাড়িতে আসার সাথে সাথেই গোসল করিস কেন তুই বউ? তোর কাজটা কি এমন!দুপুর সন্ধ্যা যে সময় বাড়িতে আসিস আগে সোজা কলপাড়ে গিয়ে গোসল করতে হয়। আমি জানতে চাইলে নানান অজুহাত এ প্রসঙ্গ বদলায় ফেলিস। আমি কিন্তু কিছু বুঝতে পারছি না তুই কি করিস বাইরে৷ কই যাস, কি করিস এতো টাকা কোথায় থেকে আসে?আমার চিকিৎসার জন্য এতো টাকা কই পাচ্ছিস তুই? আজ সত্যি টা জানতে হবে আমার, বল তুই আমায়। "
অসমি মাথা নিচু করে চুপ থাকে।তার স্বামী জোরে চিৎকার করে উঠে আজ এই সব কথার জবাব চায় সে, না হলে রাতের খাবার খাবে না সে সাথে ঔষধ ও।
অসমি সন্ধ্যার পর বাড়িতে ফিরে গোসল সেরে, ঘরে আসলে তাকে জেঁকে বসে বিপ্লব (তার স্বামী)।
কি উত্তর দেবে অসমি সেটা ভাবতে ভাবতে কিছুক্ষণ চুপ থাকে। পরক্ষণেই রাগে গরগর করে অসমি আর বলে,
-- " এতো দিন থেকে বিছানায় পরে আছেন আমি যে আপনার দেখাশোনা করার জন্য পরে আছি এখানে নিজের সুখ-দুঃখ ভুলে। কষ্ট করে রোজগার করে আপনার খাওয়া চিকিৎসার ব্যবস্থা করছি সেটা কি সহ্য হচ্ছে না আপনার? বলেছি তো কাপড় কাটার কাজ করি একটা দোকানে, সে-তো আর আপনার বিশ্বাস এ আসে না।এখন এগুলোর জবাব দেন আমাকে, এটাও বলেন আমি না থাকলে আপনার কি হবে, কে দেখবে আপনাকে? "
উপায় খুঁজে না পেয়ে অসমি তার স্বামীর দূ*র্বল জায়গায় আঘাত করেছে।
সত্যি তো, অসমি ছাড়া বিপ্লব এর এই পৃথিবীতে কেউ নেই। তবুও বিপ্লব অসুস্থ অচল এই কথা বলে আঘাত করেছে অসমি বিপ্লব কে, তার জন্য দুঃখ টা রাগে পরিণত হয়ে যায় বিপ্লবের।
পাশে থাকা স্টিল এর মগ টা হাতে নিয়ে সজোরে ছুঁড়ে মা*রে অসমির দিকে। পিঠে গিয়ে ঠেকে মগটা অসমির, হালকা আর্তনাদ করে চুপ হয়ে যায় মেয়েটা।
এখন দু'জন দু'জনার দিকে চেয়ে আছে, কিন্তু কোনো কথা বলছে না। অসমি রান্নাঘর ঢুকে রাতের খাবার তৈরি করতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। বিপ্লব এর পছন্দের খাবার খিচুড়ি রান্না করে আজ সে।
বিপ্লব অনেক শান্ত মেজাজ এর ছেলে, ধৈর্য ক্ষমতা অনেক বেশি তার। কিন্তু ইদানীং বউয়ের আচরণ তার ভালো ঠেকছে না৷ আশেপাশের মানুষজন বাড়িতে এসে বসে নানান কথা বলে যায়,
-- " বিপ্লব তুই শয্যাশায়ী হয়ে তোর বউটা খা*রাপ হয়ে গেলো রে। এ পাড়ায় কাজ নাই, কাজের জন্য বাজার পার হয়ে শহরের দিকে যাইতে হয় তার, বুঝতে পারছিস কাজটা কি। "
আজ প্রতিবেশী চাচীর এমন কথা শুনে বিপ্লবের মাথায় র*ক্ত উঠে যায়। কিন্তু, অসমি তো ব্যাপার টা কৌশলে এড়ায় গেলো। না না এভাবে ছাড় দেওয়া উচিত হবে না।
বিপ্লব ভীষণ রাগ হয়ে চিৎকার করতে থাকে 'আসমানী, আসমানী' বলে।
আসমানী নাম শুনে চমকে উঠে অসমি, আসলে নিজের সত্যি নামটা ভুলতে বসেছে সে। ভালোবেসে বিপ্লব সবসময় আসমানী কে অসমি বলে ডাকে।
তাড়াতাড়ি বিপ্লবের কাছে আসে অসমি, জানতে চায় কি লাগবে।
বিপ্লবের এক কথা,
-- " সত্যি টা জানতে চায় সে। তার বউ রোজ কোথায় যায়?সে কোনো খা*রাপ কাজে নিজেকে বি*ক্রি করে দেয় নি তো! "
-- " দেখেন আপনি যা ভাবছেন তা ভুল, অযথা আমাকে ভুল বুঝতেছেন আপনি। মানুষ তো নিজেকে সবচেয়ে বেশি ভালোবাসে তাই না, এই আমি নিজেকে ছুঁয়ে ওয়াদা করছি আমি এমন কোনো কাজ করছি না যেটাতে আমার এবং আমার স্বামীর সম্মান ন*ষ্ট হয়। "
বিপ্লব একটু শান্ত হয়, নিজেকে ছুঁয়ে কেউতো মিথ্যা কথা বলতে পারে না এটা সে ছোট কাল থেকে জেনে আসছে।
স্বাভাবিক ভাবে দু'জনে রাতের খাবার খাওয়া শেষ করে বিছানায় ঘুমোতে যায়। চার মাস আগে এক ট্রাক এ*ক্সিডেন্টের এর পর থেকে বিপ্লব শয্যা*শয়ী, পা ভে*ঙে গেছে। পায়ের ভিতরে লোহার রড সাপোর্ট হিসেবে দেওয়া আছে। পুনরায় অপারেশন করে সেই রড বের করলে বিপ্লব আবার আগের মতো চলাফেরা করতে পারবে বলে ডাক্তার আশ্বাস দিয়েছে।
কিন্তু তারা দিনে আনে দিনে খায়, ছোট একটা মুদির দোকান চালাতো বিপ্লব বাজারে ভাড়া নিয়ে। তার অসুস্থতার জন্য সেটা ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে, ভাড়া বাকি ছিলো অনেক। তার অবস্থা দেখে দোকানের মালিক আর ভাড়ার টাকা নেয় নাই। শুধু বলেছে সুস্থ হয়ে যেনো আবার ফিরে আসে দোকানে।
-- " বউ ও বউ, কাছে আয় তোকে জ*ড়ায় না ধরলে আমার ঘুম আসে না যে। "
অসমি ছোট্ট বাচ্চার মতো বিপ্লবের কোলের ভিতরে নিজের জায়গা করে নেয়।
ফুলের মতো সাজানো সুন্দর জীবন টা তাদের অকালে ন*ষ্ট হতে চলেছে। অসমির চোখ ভর্তি পানি এতো সহজে সে হাল ছাড়বার মেয়ে নয়। যেভাবেই হোক না কেনো নিজের স্বামীকে সে সুস্থ করে তুলবেই। তার স্বামীর যেমন এ পৃথিবীতে সে ছাড়া কেউ নেই, তেমনি তারও কেউ নাই। তারা দু'জন দু'জনার।
ফজরে ঘুম থেকে উঠে অসমি নামাজ পড়ে, বিপ্লবের জন্য চা-নাস্তা জোগাড় করে খাইয়ে দেয় তাকে। হাতের কাছে প্রয়োজনীয় সব জিনিসপত্র শুকনা খাবার ও পানি রেখে চেয়ারে বসায় বিপ্লব কে তারপর আটটা নাগাদ কাজে চলে যায়।
অসমির চলে যাওয়ার পথে চেয়ে থাকে বিপ্লব, খুব খা*রাপ লাগে তার এই প*ঙ্গুত্ব। অসহায়ের মতো জীবনযাপন করতে, বউয়ের কষ্টের টাকায় দিনগুজরাতে একা একা বসে শুয়ে থাকতে।
পাড়া প্রতিবেশীর কথায় কান দেয়না এখন বিপ্লব, তার অসমির প্রতি পূর্ণ বিশ্বাস আছে। কিন্তু কাপড় কে*টে তো হাজার হাজার টাকা আয় করা যাবে না, এনিয়ে খটকা বিপ্লবের মনে। অসমিকে জিজ্ঞেস করবে তারও সময় পায় না, আসলে অসমির ওই মায়া ভরা মুখটা দেখলে সবকিছু ভুলে যায় সে। ভুলে যাওয়ার স্বাভাবিক, তার মায়াভরা ডা*গরডো*গর আঁখি যুগল দেখলে বিপ্লবের আর কিছু মনে থাকে না।
-- " বিপ্লব শোন, আজ দেখলাম তোর বউ শহরের নামকরা একজন ব্যবসায়ীর কাছ থেকে অনেক গুলো টাকা নিলো হেসে হেসে। কোন কাজের জন্য মানুষ এত টাকা মানুষকে দেয় জানিস কি তুই?
শুধু আমি না আমার নাতিডাও দেখছে সে কি কান্ড। তুই এ খা*রাপ মেয়ে মানুষটাকে ছাইড়া দে, জগতে মাইয়ার অভাব নাই। আর তুই মনে হয় এটাও জানিস না রোজ এক ভ্যানগাড়ি আইসা, তোর বউরে নিয়ে যায় আবার সেই ভ্যান এ দিয়ে যায়। "
প্রতিবেশী রহিমা চাচী আজও অনেক কথা বলে গেলো। বিপ্লব সব মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলতে চাইলেও পারছে না।
আজ দুপুরে অসমি পর পর কয়েকবার বমি করতে থাকলে তার সন্দেহ দ্বিগুণ হয়। কারণ স্বামী-স্ত্রীর মে*লামে*শা এখন তাদের নিষিদ্ধ ডাক্তারি মতে।
চলবে,
----
--------
গল্প : #বাস্তবের_সত্যতা
প্রথম পর্ব (০১)