17/03/2023
কোতোয়ালি থানা ও মডেল থানার মধ্যে পার্থক্য কী?
কোতোয়ালি নামটি এসেছে মুঘল আমলের কোতোয়াল থেকে। খুব সংক্ষেপে জানালে- তৎকালীন সময়ে প্রধান প্রধান আঞ্চলিক শহরগুলোর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী প্রধান হিসেবে একজন করে কোতোয়াল নিযুক্ত হতেন, তাঁর অবস্থান তথা দপ্তরকেই কোতোয়ালি বলা হতো।
পুলিশের প্রেক্ষিতে, ব্রিটিশ আমলে জেলা-শহরগুলোতে যেসব থানা অবস্থিত ছিলো, সেগুলো(র অধিকাংশই) কোতোয়ালি থানা হিসেবে পরিচিত। বর্তমান বাংলাদেশে ১১টি(র মতো) কোতোয়ালি থানা আছে— সিলেট, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ, ঢাকা, ফরিদপুর, বরিশাল, যশোর, বগুড়া, রংপুর ও দিনাজপুর।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, বাংলাদেশ পুলিশে জেলা সদরগুলোতে স্থাপিত (কোতোয়ালি ব্যাতিত) থানাগুলো (অধিকাংশ ক্ষেত্রেই) সদর থানা হিসেবে পরিচিত। ব্যাতিক্রমগুলো হচ্ছে— নোয়াখালী জেলা-শহরে "সুধারাম" থানা, শরিয়তপুর জেলা-শহরে "পালং" থানা। এছাড়া, ৯০দশকের শুরুতে RMP গঠনের আগে পর্যন্ত রাজশাহী জেলা-শহরে ছিলো "বোয়ালিয়া" থানা (যেটি বর্তমানে RMP অধিভুক্ত)।
বাংলাদেশ পুলিশের নানা ধরনের সংস্কারের উদ্দেশ্যে ২০০৫ সালের দিকে UNDP, DFID ইত্যাদি সংস্থার উদ্যোগ ও সহায়তায় "পুলিশ সংস্কার কর্মসূচি" র অংশ হিসেবে দেশের বিভিন্ন মেট্রোঃ-পুলিশ এবং জেলা-পুলিশের অন্তর্ভুক্ত বিভিন্ন স্থানে বেশ কিছু (২৫~৩০টি) থানাকে মডেল থানা হিসেবে গড়ে তোলা হয়। উদ্দেশ্য ছিলো সংশ্লিষ্ট থানার এলাকাবাসীকে উন্নত সেবা ও সহায়তা প্রদান করা। পরবর্তীতে এই কর্মসূচী দেশব্যাপী ক্রমান্বয়ে আরো বিস্তৃত করার কথা ছিলো।
এই লক্ষ্যে মডেল থানাগুলো (হওয়ার কথা) ছিলো পুরোপুরি স্বয়ংসম্পূর্ণ। অর্থাৎ, logistics, equipment, manpower, separation of duties (অর্থাৎ— ops, intel, investigation ইত্যাদি আলাদা থাকা), থানায় নিযুক্ত সদস্যগণের বাসস্থান, থানায় কর্মরত সদস্যগণের দাপ্তরিক কাজের জন্য বসার যায়গা, মামলা তদন্ত করার জন্য উন্নত প্রযুক্তি ও সরঞ্জাম, থানায় আটককৃত নারী-পুরুষ আসামীগণের হাজত, আধুনিক টয়লেট, অস্ত্রাগার, থানায় বিভিন্ন কারণে আগত সেবাপ্রার্থী ও দর্শনার্থীগণের বসার স্থান, সম্মেলন কক্ষ ইত্যাদি সহ প্রয়োজনীয় অন্যান্য সবকিছুর জন্য পর্যাপ্ত সংখ্যক কক্ষ, উপকরণ ও আসবাবপত্র, বিকল্প বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য জেনারেটর, পর্যাপ্ত সংখ্যক যানবাহন যেমন- পিকআপ, মোটরসাইকেল (এমনকি একটি করে এম্বুলেন্স) ইত্যাদি সহ সমস্ত কিছুর প্রাপ্যতা প্রতিটি মডেল থানায় থাকবে।
তবে, বাস্তবতা হচ্ছে এইসব কিছুর বাস্তবায়ন কখনোই পূর্ণতা পায়নি। যেসব সুবিধা, উপকরণ, যানবাহন ইত্যাদি পাওয়ার কথা ছিলো, সেগুলোর প্রায় প্রতিটি বিষয়ই ব্যাপকভাবে অসম্পূর্ণ ও অপর্যাপ্ত ছিলো সবসময়ই।
তাছাড়া, এটি একটি বৈদেশিক সাহায্যপুষ্ট প্রকল্প (ছিলো) বিধায় প্রকল্পের মেয়াদ (কয়েকটি ধাপে) শেষ হওয়ার পরে এসব মডেল থানাগুলোর বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা যেটুকুও প্রকল্প চলাকালীন সময়ে (আলাদাভাবে) পাওয়া যেতো, সেগুলোও ক্রমান্বয়ে হ্রাস পেয়ে বর্তমানে প্রায় শুন্যে এসে ঠেকেছে।
তাই, সুবিধা-অসুবিধা ইত্যাদি বিবেচনায় অন্যান্য (কোতোয়ালি, সদর কিংবা অন্যান্য যেকোনো সাধারণ) থানার সাথে বর্তমানে মডেল থানাগুলোর কোনো গুণগত বা কার্যক্রমের কোনো পার্থক্য আর অবশিষ্ট নেই, এগুলো এখন স্রেফ নাম হিসেবেই মডেল থানা রয়েছে আর কি।
শুভেচ্ছা রইলো।