আমাদের বাংলাদেশ

আমাদের বাংলাদেশ বাংলাদেশের ঐতিয্য, ভ্রমণ, সাফল্য ও কৃষি বিষক সংবাদ পেতে লাইক দিয়ে যুক্ত থাকুন আমাদের এই পেইজে...

10/01/2023

গুরের চা...ফু দিয়ে খা...

18/12/2022

Celebration in Dhaka

পারিবারিক সংকটে বিপদে পড়ছে শিশুরা মো. খশরু আহসানএকটি সম্পর্ককে টিকিয়ে রাখতে দুজন মানুষের মধ্যে বিশ্বাস স্থাপন করা, একট...
13/08/2022

পারিবারিক সংকটে বিপদে পড়ছে শিশুরা
মো. খশরু আহসান

একটি সম্পর্ককে টিকিয়ে রাখতে দুজন মানুষের মধ্যে বিশ্বাস স্থাপন করা, একটু ছাড় দেওয়া, দুজন দুজনের সঙ্গে কিছুটা মানিয়ে নিয়ে চলার মধ্যে সৌন্দর্য খুঁজে নেওয়া অত্যন্ত জরুরি। সম্পর্কের মাঝে ‘সন্দেহ’ নামক শব্দকে স্থান দেওয়া আর জেনেবুঝে নিজের পায়ে কুড়াল মারার মাঝে কোনো আহামরি পার্থক্য নেই। পৃথিবী এবং মানুষ সমানতালে এগিয়ে চলছে আধুনিকতার স্পর্শে। এই আধুনিকতার ছোঁয়া আমাদের বেশ সুযোগ-সুবিধা দিচ্ছে ঠিকই, তবে সূক্ষ্ম দৃষ্টিতে তাকালে বোঝা যায়—আমাদের কাছ থেকে তার কেড়ে নেওয়ার তালিকাও নেহাত ছোট নয়।

দৈনিক ইত্তেফাকের সর্বশেষ খবর পেতে Google News অনুসরণ করুন
বিশ শতকের পূর্বেও বাংলাদেশে একান্নবর্তী বা যৌথ পরিবারের সংখ্যা বেশ ভালোই ছিল। যৌথ পরিবারের সদস্যদের সবার মাঝে এক ধরনের অভ্যন্তরীণ বন্ধন আপনা আপনিই তৈরি হতো। সবার প্রতি সবার অন্যরকম দায়িত্ববোধ ও শ্রদ্ধাবোধ কাজ করত। একুশ শতকের দিকে একান্নবর্তী পরিবার ভেঙে একক পরিবারের দিকে মানুষ খুব বেশি ঝুঁকে পড়ল। ইংরেজিতে যাকে বলছে, নিউক্লিয়ার ফ্যামিলি। কোনো এক অজানা কারণে বৃদ্ধ বাবামায়ের সঙ্গে তথাকথিত আধুনিক কিছু সন্তানের একই ছাদের নিচে বসবাস করতে চরম আপত্তি বাঁধতে শুরু করল। যৌথ পরিবারের ইতি ঘটার সঙ্গে সঙ্গে দেখা গেল বৃদ্ধাশ্রমের সংখ্যা অনেক বেশি বেড়ে যাচ্ছে। একান্নবর্তী পরিবারের সদস্যদের মাঝে একে অন্যের প্রতি দায়িত্ববোধকে, একক পরিবারে বিশ্বাসী সবাই প্রায় অতিরিক্ত ঝামেলা হিসেবেই বিবেচনা করে থাকে। সাধারণত একক পরিবারের স্বামী-স্ত্রী উভয়ই কর্মব্যস্ততার মধ্য দিয়ে জীবনযাপন করে থাকেন। পিতা-মাতার ব্যস্ততার ফলে সন্তানের সঙ্গে তাদের এক ধরনের দূরত্ব তৈরি হচ্ছে। একটি শিশু বাবামায়ের সার্বক্ষণিক তত্ত্বাবধান, মমত্ববোধ ছাড়া শৈশব, কৈশোরের সময় পার করছে; এটি বড় রকমের ভয়ানক কথা। গুটিকয়েক পরিবারে এর ভিন্নতা থাকলেও পৃথিবী জুড়ে বর্তমানে স্বামী-স্ত্রীর বিচ্ছেদের হার প্রতিনিয়ত বেড়েই চলেছে। বিচ্ছেদের কারণ হিসেবে উভয়পক্ষের অসংখ্য যুক্তি থাকলেও আপাতত সেই আলাপচারিতায় যাচ্ছি না। একজন স্বামী-স্ত্রীর বিচ্ছেদের পরবর্তী ঘটনার দিকে সচেতন দৃষ্টিতে তাকালে দেখা যায়, সবচেয়ে বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব পড়ে বিচ্ছেদ হওয়া ঐ দম্পতির ঘরে যদি কোনো সন্তান থেকে থাকে—তার ওপর। সময়ের প্রয়োজন কিংবা অপ্রয়োজন—যাই বলা হোক না কেন—বিচ্ছেদপরবর্তী সময়ে তারা নিজেদের নিজেদের মতো করে কোনো না কোনোভাবে মানিয়েই নেন। অথৈ সাগরে হাবুডুবু খাওয়ার মতো অবস্হায় পড়ে থাকে শুধু পরিবারের সন্তান। বাবা কিংবা মা যার সঙ্গেই সন্তান থাকুক না কেন, তার ভেতরে এক ধরনের বিশালাকারের অভাববোধ সৃষ্টি হয়।

পরিবার ভেঙে যাওয়ার পর দুজনের কারো সঙ্গেই যে শিশু থাকার সুযোগ পায় না—তাদের পৃথিবীটা আরো বেশি কঠিন হয়ে পড়ে। মাঝ সাগরে ডুবে মৃত্যু হওয়ার চেয়েও ভয়ানক যন্ত্রণা যেমন হয়, সেভাবে তাদের সময় কাটে। পৃথিবীতে যত ধরনের অস্বাভাবিক পথ রয়েছে, সেই পথে চলতে তারা বাধ্য হয়। অধিকাংশ ক্ষেত্রে এই ধরনের শিশুরা কিশোর গ্যাং, খুন, ধর্ষণ এবং মাদক কারবারের মতো কঠিন সব অপরাধের সঙ্গে নিজেকে জড়িয়ে ফেলে। অপরাধ জগতের পথের কাঠামো কিছুটা সংকটাপন্ন বা ভিন্ন ধরনের হয়। এই পথে পা বাড়ানো অধিকাংশ মানুষ পরবর্তী সময়ে চাইলেও স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে পারে না। সমাজের অন্যান্য ছেলেমেয়েদের মতো করে ওরা বড় হতে পারে না। অনেকটা তুচ্ছতাচ্ছিল্যের সঙ্গে তাদের জীবনযাপন করতে হয় বলে সামাজিক রীতিনীতি বা নিয়মকানুনের প্রতি এক ধরনের বিতৃষ্ণাবোধ কাজ করে। ফলে অন্ধকারাচ্ছন্ন মেঘ যেমন চোখের পলকে আকাশ ঢেকে দেয়, তেমনি করে এই শিশুরাও সামাজিকভাবে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। আকাশের মেঘ এক সময় পরিষ্কার হয় ঠিকই, কিন্তু অপরাধের সঙ্গে জড়িয়ে পড়া সেই শিশুটির আর্তনাদ আমাদের সামাজিক ব্যবস্থাপনাকে ছুঁতে পারে না। স্বাভাবিকভাবে বড় হওয়ার সুযোগ না পাওয়া সেসব ছেলেমেয়ের প্রতি কি তবে সমাজের কোনোই দায়িত্ব নেই?

লেখক : শিক্ষার্থী, নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়

ঈদযাত্রায় ট্রেনের অগ্রিম টিকিট বিক্রির দ্বিতীয় দিন চলছে আজ। টিকিট বিক্রি শুরু হয়েছে সকাল ৮টা থেকে। আজ দেওয়া হচ্ছে ২৮ এপ...
24/04/2022

ঈদযাত্রায় ট্রেনের অগ্রিম টিকিট বিক্রির দ্বিতীয় দিন চলছে আজ। টিকিট বিক্রি শুরু হয়েছে সকাল ৮টা থেকে। আজ দেওয়া হচ্ছে ২৮ এপ্রিলের অগ্রিম টিকিট। দ্বিতীয় দিনেও ট্রেনের অগ্রিম টিকিট পেতে স্টেশনে উপচে পড়া ভিড়...

ঈদযাত্রায় ট্রেনের অগ্রিম টিকিট বিক্রির দ্বিতীয় দিন চলছে আজ। টিকিট বিক্রি শুরু হয়েছে সকাল ৮টা থেকে। আজ দেওয়া হচ্...

৯ বছর আগে এই দিনে সাভারে ভয়াবহ ভবন ধসের ঘটনা ঘটে। ঐ ঘটনায় হতাহত হয় কয়েক হাজার শ্রমিক...
24/04/2022

৯ বছর আগে এই দিনে সাভারে ভয়াবহ ভবন ধসের ঘটনা ঘটে। ঐ ঘটনায় হতাহত হয় কয়েক হাজার শ্রমিক...

৯ বছর আগে এই দিনে সাভারে ভয়াবহ ভবন ধসের ঘটনা ঘটে। ঐ ঘটনায় হতাহত হয় কয়েক হাজার শ্রমিক। সেই হতাহতের ঘটনায় করা হত্যা ম....

31/03/2022

৪০তম বিসিএস: ২৫৬ পদে মেলেনি যোগ্য প্রার্থী

খবরের লিংক কমেন্টে...

25/03/2022

"১৯ পদে জনবল নিয়োগ দেবে মেট্রোরেল"

বিস্তারিত জানতে ক্লিক করুন কমেন্টে দেওয়া লিংকে...

25/03/2022

সমবায় অধিদপ্তরে ৫১১ পদে চাকরি, আবেদনের শেষ তারিখ ২১ এপ্রিল

বিস্তারিত জানতে ক্লিক করুন কমেন্টে দেওয়া লিংকে...

25/03/2022

প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা আয়োজন নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্বে পড়েছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর

খবরের লিংক কমেন্টে...

21/03/2022

বিয়ের ১২ দিন না পেরুতেই চলে গেলেন সেই ফাহমিদা

বিস্তারিত পড়ুন কমেন্টে...

20/03/2022

করোনা থেকে সুস্থ হয়ে ওঠার পরও নানা শারীরিক জটিলতায় ভুগছেন দেশের অধিকাংশ মানুষ।

বিস্তারিত পড়ুন কমেন্টে...

20/03/2022
19/03/2022

তরুণ-তরুণীকে পেটালেন ইউপি সদস্য, ভিডিও ভাইরাল

বিস্তারিত কমেন্টে...

19/03/2022

দ্বিতীয় ডোজের অপেক্ষায় ৩০ লাখ শিক্ষার্থী

বিস্তারিত পড়ুন কমেন্টে...

বিগত বিশ বছরে অস্টিওআর্থ্রাইটিস রোগীর সংস্খ্যা ১১৩ দশমিক ২৫ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে...
09/03/2022

বিগত বিশ বছরে অস্টিওআর্থ্রাইটিস রোগীর সংস্খ্যা ১১৩ দশমিক ২৫ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে...

অস্টিওআর্থ্রাইটিস গেটে বাত বলতে শরীরের জয়েন্টে ব্যথা এবং কর্মক্ষমতা হারানোর মতো রোগকে নির্দেশ করে। বিগত কয়েক ব.....

05/03/2022

#পুতুল
আমার স্বামী রাসেল যখন তার দ্বিতীয় স্ত্রী তমাকে নিয়ে বাসায় ঢুকলো আমি একটুও অবাক হলাম না। মোটামুটি তিন বছর ধরেই আমি তার বিয়ের গুঞ্জন শুনছি। ব্যাপারটা যে সত্যি তা বুঝতে পেরে আব্বা-আম্মা মানে আমার শ্বশুর শাশুড়ি গ্রামের বাড়িতে চলে গেছেন, তারা তাদের ছেলের এই কাজ কিছুতেই মেনে নিতে পারেননি। আমি যদি তাদের সাথে যেতে পারতাম, কিন্তু আফসোস তাদের নিজেদেরই এখন দিন চলেনা তারমধ্যে আমি আবার বোঝা হয়ে যাব, তাই সিদ্ধান্ত নিলাম একমাত্র মেয়ে রিনিকে নিয়ে যত কষ্টই হোক এখানেই থাকবো।

রাসেলের মুখ দেখলাম হাসি হাসি, তমা সন্তান সম্ভাবা, বিয়েটা যে গুঞ্জন ছিল না এটা পরিষ্কার। আমি কিছুটা পাথরের মত দাঁড়িয়ে থাকলাম। রিনি বারবার প্রশ্ন করতে থাকলো ওই আন্টিটা কে?

রাসেলের এরকম হাসি হাসি চেহারা আরও একবার আমি দেখেছিলাম , যখন রিনি ছিল আমার পেটে, আদরের কমতি ছিল না। সব আদর উড়ে গেল যখন মাত্র সাড়ে সাত মাসে আমার প্রসব বেদনা উঠলো, আমার যখন জীবন মরণ দশা শিক্ষিত ছেলে হয়েও রাসেল একটাই প্রশ্ন করেছিল বিয়ের সাড়ে সাত মাসে বাচ্চা হয় কি করে? এই বাচ্চা নিশ্চয়ই আমার না । ডাক্তার ম্যাম ধমক দিয়ে তাকে বের করে দিয়েছিলেন। তিনি আমাকে বাঁচাতেই তখন ব্যস্ত, রাসেলের মত শিক্ষিত গাধাকে কাউন্সেলিং করা তখন তার পক্ষে সম্ভব ছিল না আর এই যুগের একটা ছেলে এই ধরনের অবান্তর কথা বললে যে কারো রেগে যাওয়া স্বাভাবিক।
তার পরেও রিনির জন্মের পর ডাক্তার তাকে বুঝিয়ে বলেছিল যে রিনি প্রিম্যাচিউর বেবী, কিন্তু কে কার কথা শোনে রাসেলের মাথায় কি ঢুকেছিল কে জানে? সে একনাগাড়ে বলে চলছিল, এই সন্তান আমার না । নিষ্প্রাণ চোখে চেয়ে দেখেছিলাম, শশুর আব্বা তাকে একটা থাপ্পর মেরে ছিলেন ।পুরনো যুগের মানুষ হয়েও তাদের অন্তর টা ছিল আধুনিক ।

আচ্ছা রাসেল কি সত্যি সত্যি বোঝেনি নাকি ইচ্ছে করে এমনটা করেছে কারণ আমাদের বিয়েটা পারিবারিকভাবে হয়েছে, বিয়েতে নাকি ওর মত ছিল না, পরে শুনেছিলাম আমি। কিন্তু ভয়ঙ্কর শকড হলাম যখন রিনিকে একবার কোলে পর্যন্ত নিলো না ও।

এরপর কেটে গেছে প্রায় পাঁচ বছর । আমরা একই বাড়িতে থাকি কিন্তু আলাদা রুমে ।আমি আমার মেয়েকে নিয়ে থাকি। রাসেল রাতভর কারো সাথে গল্প করে ,ফোনে চ্যাটিং করে, হাসাহাসি করে আমি শুনেও না শোনার ভান করি রোবটের মত, কোন উপায় নেই ,যাওয়ার কোন জায়গা নেই, বাবা মা নিজেই তো ভাইয়ের সংসারে বোঝা। চাকরির বয়সসীমাও শেষ হয়ে গেছে, কোন মূলধন নেই যে নিজে ব্যবসা শুরু করবো, আসলে কিছুই নেই আমার একটা মাত্র মেয়ে ছাড়া আমার পুতুল টার কাজল কালো চোখের দিকে তাকালে ভয়ঙ্কর মায়ায় আমি ডুবে যাই। এই চোখ দেখেও রাসেল কি করে অন্যদিকে চোখ ফিরিয়ে নেয় আমি বুঝতেই পারি না।

রিনির মনে এখন হাজার প্রশ্ন উদয় হয়, সবার বাবা এত আদর করে ওর বাবা এমন কেন? আমি নির্বাক থাকি, কি উত্তর দিবো মেয়েকে তবুও মাঝে মাঝে জোরাজুরিতে বলি সবাই তো আর একরকম হয় না এখন তুমি বড় হচ্ছো আস্তে ধীরে সব জানবে বুঝবে , রিনি গালে হাত দিয়ে শোনে। মায়ের কষ্টটা সে এখন একটু একটু বুঝতে শিখেছে।

স্কুলে যেবার আমার আদরের পুতুলটা প্রথম হলো দৌড়ে গিয়ে বাবাকে রিপোর্ট কার্ড দেখালো রাসেল শুধু রিপোর্ট কার্ড টা ছুড়েই মারে নি রিনিকে একটা ঠাস করে থাপ্পর বসিয়ে দিয়েছিল ।আবার মারতে যখন উদ্যত হলো আমি দৌড়ে গিয়ে মেয়েকে জাপ্টে ধরলাম আমার পিঠে প্রচন্ড একটা আঘাত পেলাম, ভাবতেই শিউরে উঠলাম আমার মেয়েটাকে না ধরলে আঘাতটা এই ছোট্ট শরীরটা সইতো। কি করে পারে এসব রাসেল?

কিছুদিন পর তমার একটি পুত্র সন্তান হলো। রাসেলের সে কি আনন্দ পাড়া-প্রতিবেশী বন্ধু-বান্ধব সবাইকে মিষ্টি খাওয়াচ্ছে। কোল থেকে বাচ্চাটাকে নামাচ্ছে না। আমি আড়চোখে দেখি, না রাসেলকে না, রিনিকে ওর চোখে মুখে কেমন একটা হতবিহবল ভাব ,অনুভূতিটা অনেকটা ব্যাখ্যাতীত, যেন আমায় নিয়ে তো বাবা এমন কিছু করেনা তাহলে ওকে নিয়ে কেন? আমি যতটা সম্ভব রিনিকে দূরে রাখি, মেয়ের আবদার গুলো পূরণ করার চেষ্টা করি যদিও টাকার জন্য সেই রাসেলের কাছেই হাত পাততে হয় ।

"মামনি বাবা কেন আমায় আদর করে না? ওই ছোট্ট বাবুটাকে কত আদর করে । "
আমি বিষণ্ণ হয়ে মেয়ের দিকে তাকাই।
"চলনা মামনি আমরা বাবুটাকে অন্য কোথাও দিয়ে আসি তাহলে বাবা আমাকে ওর মত আদর করবে। " আমার বুক ফেটে যায়, চোখ কোন বাঁধা মানে না অঝোরে কেঁদে যায়।

এভাবেই কেটে গেল প্রায় আড়াই বছর।

এক বিষন্ন সন্ধ্যায় বসে বসে আমাদের বিয়ের ছবিগুলো দেখছিলাম, মলিন ঝাপসা স্মৃতি। এই আড়াই বছরে আমাদের সম্পর্কের আরও অবনতি ঘটেছে। মোটামুটি বাইরের মানুষের কাছে এখন আমি কাজের মহিলা।

-মামনি তুমি কি করছো? নিষ্পাপ কণ্ঠে বলে উঠলো আমার সাত বছরের মেয়ে রিনি। আমি কোনমতে চোখের পানি সামলে বললাম,
- কিছুনা মা এমনি বসে আছি, কিছু বলবে তুমি আম্মু?
-জানো মামনি, ছোট ভাই ছাদ থেকে পড়ে গেছে
-কি? আমার অন্তরাত্মা কেঁপে উঠলো
-তুমি কি করে জানলে
- বাহ রে আমরা একসাথে খেলছিলাম তো, নিচে উঁকি মারতে গিয়ে পড়ে গেছে।
-আমি অপলক দৃষ্টিতে আমার শিশুকন্যার দিকে তাকিয়ে থাকলাম, কি নির্বিকারভাবে এত কঠিন একটা কথা বলছে। ও কি জানে এর ফল কি হবে?
-সত্যি করে বলতো মা তুমি কি ওকে ধাক্কা দিয়েছো? আমি কাঁপা কাঁপা কন্ঠে জিজ্ঞেস করলাম।
-না মামনি, ও নিজেই পড়ে গিয়েছে ।বাবা এখন আমাকে ভাইয়ের মত আদর করবে কোলে নিয়ে স্কুলে যাবে, দোকানে গিয়ে চকলেট কিনে দেবে, তাইনা মামনি। দিনে দিনে ওর প্রতি রাসেলের অবহেলা থেকে ছোট্ট মন অবচেতনভাবে এটাই কল্পনা করে নিয়েছে যে ভাই না থাকলে বাবা হয়তো তাকে ভালবাসবে, আদরে মমতায় ভরিয়ে রাখবে, কিন্তু সত্যিটা যে তা না তা এ শিশুমন কে বোঝাবে?

তার ঠিক পাঁচ মিনিটের মধ্যে রাসেলের হিংস্র কণ্ঠ ভেসে আসলো, "দরজা খোল, তোর ওই জারজ সন্তান কে আজকে আমি টুকরা টুকরা করে কুত্তা দিয়ে খাওয়াবো।" তমার আর্তনাদ আর রাসেলের চিৎকারে আমার দম বন্ধ হয়ে যেতে লাগলো। আমি জাপ্টে ধরে বসে থাকলাম আমার রিনিকে, আমার আদরের পুতুলকে।

লেখক: সূবর্ণা শারমিন নিশি

04/03/2022

#কৌতূহল

রায়হান থানায় বসে রীতিমতো ঘামছিল, তার স্ত্রী আভা মিসিং প্রায় ২৪ ঘন্টা। আর এসব ক্ষেত্রে প্রথম আঙুল টা স্বামীর দিকেই ওঠে।
-আপনার স্ত্রীকে এক দিন ধরে খুঁজে পাচ্ছেন না অথচ এখন এসেছেন কমপ্লেইন করতে?
-আমি এসেছিলাম কিন্তু আপনারা বলেছেন ২৪ ঘন্টা অপেক্ষা করতে,২৪ ঘন্টা পার হয়ে গেছে।
-আচ্ছা ,আচ্ছা সাথে কোন ছবি আছে?
রায়হান, আভার ছবি বের করে দিল।
-আপনাদের বিয়ের কতদিন হয়েছে?
-প্রায় আট বছর।
-কিন্তু ছবির মেয়েটিকে দেখে তো মনে হচ্ছে বয়স খুব বেশি হলে ১৬/১৭ হবে। রিসেন্ট তোলা কোনো ছবি দিন।
-এই ছবিটা গত সপ্তাহে তোলা।
পুলিশ অফিসার সরু চোখে রায়হানের দিকে তাকালো।
-আপনার স্ত্রীর বয়স কত?
-আনুমানিক ২৬/২৭ হবে।
রায়হান কুলকুল করে ঘামতে শুরু করলো আসলেই ছবিটা গত সপ্তাহে তোলা, কিছু মানুষ থাকে যাদের বয়স বোঝা যায় না আভা তাদের মধ্যে একজন।
-ঠিক আছে বিষয়টা আমরা দেখছি আপনি বাড়ি যান আর হ্যাঁ শহর ছেড়ে বাইরে কোথাও যাবেন না যে কোন সময় আমরা ডাকতে পারি।

রায়হান বাড়ি ফিরে এলো, অনেক অগোছালো এলোমেলো চিন্তা ঘুরপাক খাচ্ছে, আভা গেল কোথায়, কেন গেলো, তাদেরতো সুখের সংসার ছিল, দুই মাসের এক কন্যা শিশু আছে তাদের, আইরা, যেন এক টুকরো স্বর্গ।

দুই সপ্তাহ পার হয়ে গেল আভার কোনো হদিস পাওয়া গেল না ,রায়হানের বাড়ি অফিস সবকিছু তল্লাশি নেয়া হলো যেহেতু আভা অনাথ ছিল তাই তার দিক থেকে কোন খোঁজখবর পাওয়ার সম্ভাবনা নেই।

বছর কেটে গেল আভা ফিরল না, যেন হাওয়া হয়ে গেছে। ভালবেসে বিয়ে করেছিল রায়হান আভাকে অনাথ জানার পরেও, বাড়িতে শুরুতে এ নিয়ে ঝামেলা হলেও পরে অবশ্য সবাই মেনে নিয়েছিল। মেনে না নেওয়ার কোনো কারণ ছিল না আভা দেখতে যেমন সুন্দরী ঠিক তেমনি গুণবতী অল্পদিনেই সবার মন জয় করে নিয়েছিল।
রায়হানের আজকাল কিছু ভালো লাগেনা । বড্ড একা লাগে, সবাই আবার বিয়ের কথা বলেছে কিন্তু রায়হান আশা ধরে রেখেছে যদি আভা সত্যি ফিরে আসে।

প্রায় সতেরো বছর পরে, রায়হান ঢাকা ছেড়ে দিয়েছে অনেকদিন আগে, বাবা-মা কেউ বেঁচে নেই আর নেই , একমাত্র মেয়ে আইরা কে নিয়ে ঢাকার হট্টগোল ছেড়ে দিয়েছে। ময়মনসিংহে ছোট্ট একটা গ্রামে গরিব অনাথ বাচ্চাদের কে পড়াশোনা করায়। হঠাৎ একদিন সেসব বাচ্চাদের মধ্য থেকে একটা বাচ্চা নিখোঁজ হয়ে গেল। স্বাভাবিকভাবেই খোঁজাখুঁজি শুরু হলো, বাচ্চাটা যেহেতু রায়হানের কাছে পড়তে যেতো তাই রায়হানকেও জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় ডাকা হল। প্রাইমারি জিজ্ঞাসাবাদ শেষে পুলিশ তাকে ছেড়ে দিল কিন্তু বাইরে ঝুম বৃষ্টি। বৃষ্টির শব্দ ছাপিয়ে রায়হানের কানে একটা শব্দ ভেসে আসলো,
-আমি বলছি তো স্যার, আমার স্ত্রী দুই দিন ধরে নিখোঁজ
-ইমরান সাহেব, কি নাম আপনার স্ত্রীর?
- আয়না
-কোন ছবি এনেছেন?
লোকটি পকেট থেকে ছবি বের করে পুলিশ অফিসার কে দিলো
-কত বছর হয়েছে আপনাদের বিয়ের?
-আট বছর
-কিন্তু দেখে তো মনে হচ্ছে মেয়েটির বয়স খুব বেশি হলে ১৬/১৭ হবে, তার রিসেন্ট কোন ছবি নেই?
-এই ছবিটা গতমাসেই তোলা হয়েছে।
পুলিশ অফিসার সরু চোখে ইমরানের দিকে তাকালো
-স্যার দেখুন আপনি প্রশ্নের পর প্রশ্ন আমাকে করেই যাচ্ছেন আমার দুই মাসের ছোট একটা বাচ্চা আছে আপনারা আমার স্ত্রীকে না খুঁজে উল্টো আমাকে জেরা করছেন
-ঠিক আছে, আমরা দুঃখিত, আপনি যান আমরা খুঁজে দেখবো।

রায়হানের ভীষণ কৌতূহল হল, লোকটি বেরিয়ে যাওয়ার আগেই সে পিছন থেকে ডাক দিলো,
-ভাই শুনুন
- বলুন
-আপনার স্ত্রী দুই দিন ধরে নিখোঁজ বললেন, আপনার কাছে কি তার কোন ছবি আছে, আমি কি দেখতে পারি?
লোকটি ফোন থেকে ছবি বের করে দেখানো
-এটাতো আভা
-আপনি ভুল করছেন ওর নাম আয়না
-আপনার স্ত্রী খুব ভালো নাচ জানতেন, গানের গলাও চমৎকার ছিল, তাই না?
লোকটি হতবিহবল হয়ে বলল আপনি কি করে জানেন?
রায়হান মনে মনে বললো আভা আর ফিরবে না কিংবা আয়না আর ফিরে আসবে না।

রায়হান ঝুম বৃষ্টিতে নেমে গেল, আভা আর আয়না যে একই ব্যক্তি তাতে কোন সন্দেহ নেই। জীবনে এমন অনেক অদ্ভুত কিছু ঘটনা ঘটে যায় যার কোন উত্তর আমাদের কাছে থাকে না। কে জানে, আভা কে? সত্যিই কি আভা এই পৃথিবীবাসী নাকি অন্য কিছু? সতেরো বছর পরেও একটা মানুষ কখনো একই রকম থাকে না, হাজারো কৌতুহল উঁকি দিয়ে যাচ্ছে রায়হানের মনে কিন্তু সে জানে এসব প্রশ্নের উত্তর কখনো সে পাবে না।

🖋️🖋️🖋️- সূবর্ণা শারমিন নিশি।

03/03/2022

#অসহায়

প্রায় দশ লাখ টাকা যৌতুকের বিনিময়ে আমার বিয়ে হলো একটা এনজিওতে কর্মরত শহীদ নামক একজনের সাথে, বাবা-মায়ের টাকা গেলেও তারা এখন ভারমুক্ত কারন আমার মতো কালো বর্নের কুশ্রী চেহারার একটা মেয়ের সারা জীবনের জন্য একটা ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। ছেলেটার চাকরী অত্যন্ত সাধারণ, খুব কম আয় তাতে অবশ্য আমার বাবা-মায়ের কিছুই যায় আসে না, তারা বোঝা নামিয়েছেন।

আমার স্বামী শহীদ দেখতে আহামরি তেমন কিছু না, বোনের বিয়ে হয়ে গেছে , বাবা মারা গেছে বছর সাতেক আগে , মা তার সঙ্গেই থাকেন।

বিয়ের এক মাসের মাথাতেই আমি বুঝে গেলাম আমার প্রতি তার কোন আগ্রহ নেই ,আগ্রহ যতটুকু ছিল ওই দশ লাখ টাকার উপরে তাই এতদিন হয়তো আমার সাথে ভালো ব্যবহার করেছে আর এখন পান থেকে চুন খসলেই যাচ্ছে তাই ব্যবহার করে এমনকি তুই-তোকারি করে, গালিগালাজ তো বাদই দিলাম।
কিছুদিন পর দেখলাম ও অন্য রুমে শুচ্ছে। ব্যাপারটা দেখে শাশুড়ি মা খুব চিন্তিত হয়ে গেলেন, "মাগো তোমাদের মধ্যে কি কোন ঝামেলা হয়েছে?" উনি সহজ সাধারণভাবে জিজ্ঞেস করলেন।

কী উত্তর দেবো ,আমি তো কিছুই জানিনা? চুপ করে থাকলাম।

কৌতুহল থেকেই এক দিন আড়ি পাতলাম, কই শহীদ ঘুমায়নি তো, স্পষ্ট কথা বলার শব্দ শুনছি মাঝে মাঝে আবার হাসছে, তার মানে কারো সাথে ফোনে কথা বলছে। আমার বিধ্বস্ত চেহারা দেখে মা এসে মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগলেন, উনিই বা কি করবেন? এরকম প্রায়ই হতে লাগলো এক ছাদের নিচে থেকেও আমরা যেন অপরিচিত। ও আসে, খাবার খায়, নিজের ঘরে ঢুকে যায়।

এভাবে এক রাতে যখন ফিরে এসে গোসলে ঢুকলো, আমি ওর ফোনটা চেক করলাম ।একটা নাম্বার থেকে সারা দিনে প্রায় বারোবার কন্টাক করা হয়েছে । আমি নাম্বারটা টুকে নিলাম তারপর ফোনটা যথাস্থানে রেখে দিলাম। পরদিন ও অফিস যাওয়ার পর আমি ওই নাম্বারে ডায়াল করলাম ফোনটা একটা মেয়ে রিসিভ করলো।
অপরিচিত নাম্বার থেকে ফোন পেয়ে মেয়েটি জিজ্ঞেস করলো,
- হ্যালো কে বলছেন?
-আমার পরিচয় আপনার না জানলেও চলবে তবে আপনি যার সাথে এখন ঘনিষ্ঠ ভাবে চলাফেরা করছেন দয়া করে তার সম্পর্কে একটু খোঁজখবর নিন
-মানে কি, আপনি কে, কি বলতে চাচ্ছেন?
এমন সময় আমার হাত থেকে ফোনটা কেড়ে নিয়ে মা বলে উঠলেন, "শোনো মেয়ে, শহীদ আমার ছেলে আর এতক্ষন যার সাথে কথা বলছিলে সে আমার পুত্রবধূ । না জেনে না শুনে কি করে তোমরা দুম করে একটা ছেলের সাথে ঘোরাঘুরি শুরু করো আমি বুঝতে পারিনা । মা লাইনটা কেটে দিলেন।
রাতে কলিংবেলের শব্দ শুনে দরজা খোলার সাথে সাথে শহীদ হিংস্র জানোয়ারের মত আমার উপর ঝাঁপিয়ে পড়লো
-তুই শ্রেয়া কে ফোন করেছিলি, তুই বলেছিস যে তুই আমার বউ
শহীদ আমার চুলের মুঠি ধরে ছিল আমি কোনমতে ব্যথা সামলাতে সামলাতে বললাম "এটা কি ভুল কিছু?" বলার সঙ্গে সঙ্গে ঠাস করে ও আমার গালে একটা থাপ্পর মারলো তারপর আমাকে মেঝেতে ফেলে চড়, কিল ,ঘুষি ,লাথি মারতে লাগলো যেন একেবারে হিংস্র জানোয়ার হয়ে গেছে, অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করছে।
আমার ঠোঁট কেটে গেছে, কপাল ফেটে রক্ত বের হচ্ছে।
এমন সময় মা এসে আমাকে জড়িয়ে ধরলেন,
-ও কিছু বলেনি , যা বলার আমি বলেছি, এখন কি আমাকে মারবি?"
-দরকার হলে তাই করবো,তুই বুড়ি মরিস না কেন ?আমার উপর বোঝা হয়ে বসে আছিস, তোর মরণ আসে না কেন? মা সহ আমি স্তব্ধ হয়ে গেলাম, আমার কান ঝাঝা করছিল, ওর এতটা অধঃপতন! শহীদ বলেই চলেছে,
-তোর কি ধারণা তোর মতো কালো পেত্নীকে আমি আমার বউ হিসেবে মেনে নেব শুধুমাত্র তোর বাবার টাকার জন্য তোকে বিয়ে করেছি না হলে তোর মুখ দেখলেই তো আমার বমি পায়। তোর চেহারা দেখলেই আমার দিন খারাপ যায়। অনেক কষ্টে অনেকদিন পেছনে পেছনে ঘুরে শ্রেয়াকে রাজি করিয়েছিলাম আর তুই আর এই বুড়ি মিলে সেটাতে পানি ঢেলে দিলি। এখন তোরা বুঝবি শাস্তি কাকে বলে ?
শহীদ রাগে গজগজ করতে করতে আমাকে আরো একটা লাথি মেরে নিজের ঘরে চলে গেলো আমি ওখানে স্থবির মূর্তির মত পরে রইলাম, মা আমার পাশেই নিস্তব্ধ হয়ে বসে আছেন।

ঠিক তার পরদিন শহীদ একটা মেয়েকে নিয়ে সন্ধ্যাবেলায় উপস্থিত হলো আমার জিজ্ঞাসু দৃষ্টি দেখে বললো,
-তোর চেহারা দেখেই তো আমার মন উঠে যায় আর শরীর সেটা তো একটা কালো রঙের ডিপো। আজ থেকে আমার যখন ইচ্ছা হবে তখন আমার বাড়িতে আমি যে কোন মেয়েকে নিয়ে আসব তুই যা করার করে নে। বলে ও মেয়েটাকে নিয়ে ঘরের ভেতরে ঢুকে গেল। আমি দরজা ধরে বসে পরলাম। এতটা অপমান ! আমার নিজের স্বামী অন্য একটা মেয়ের সাথে একই রুমে রাত কাটাচ্ছে তাও আবার আমার চোখের সামনে।

এভাবে ১/২ সপ্তাহ পর পরই শহীদ নতুন নতুন মেয়ে নিয়ে আসতো । আমি যতটা না বিস্মিত হতাম তার চেয়ে অনেক বেশি অপমানিত বোধ করতাম।
মা সারাদিন কাঁদেন আর বলেন তাকে যেন আমি মাফ করে দিই আমার জীবনটা উনি নষ্ট করে দিয়েছেন। আমি দাঁত কামড়ে পড়ে থাকলাম, যাবার কোন জায়গা নেই, বাবা-মা জায়গা দিবে না ইতোমধ্যে আমার পেছনে দশ লাখ টাকা খরচ করে ফেলেছে আর আমি যে তাদের বোঝা এটা ছোটবেলা থেকেই শুনে এসেছি আমার গায়ের রং আমার চেহারা সবকিছু মিলিয়ে আমি যেন তাদের জীবনে এক দুর্বিষহ অধ্যায়। ইতোমধ্যে মা আমাকে একজনের সাথে পরিচয় করিয়ে দিলেন, উনি এখন থেকে আমাকে সেলাই শেখাবেন। উনি এরকম অসংখ্য মেয়েদের সেলাইয়ের ট্রেনিং দেন। যেহেতু মায়ের পরিচিত তাই টাকা পয়সা কিছু লাগবেনা। আমি খুব মন দিয়ে কাজ শিখতে লাগলাম, আমার আগ্রহ দেখে উনি নিজেই আমাকে আরো নতুন নতুন কাজ শেখাতে লাগলেন। এভাবে কেটে গেল প্রায় ছয় মাস, শহীদের কোন পরিবর্তন হয়নি। সে তার মত করে জীবন কাটাচ্ছে।

কয়েকদিন পর একটা অচেনা নাম্বার থেকে ফোন এলো, শহীদ বাইক একসিডেন্ট করেছে আমাকে তাড়াতাড়ি হাসপাতালে যেতে বললো। আমি কোন রকম ভাবে ব্যাগটা নিয়ে হাসপাতালে গিয়ে পৌঁছলাম ততক্ষণে ওকে ওটিতে ঢুকিয়ে ফেলা হয়েছে। ডাক্তার এসে বললেন, পেশেন্টের পায়ের উপর দিয়ে ট্রাক চলে গেছে এমতাবস্থায় যদি রোগীকে বাঁচাতে হয় তাহলে দুটি পা-ই কেটে ফেলতে হবে আমি একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে কনসেন্ট ফরমে সাইন করে দিলাম। প্রায় বাইশ দিন পর হাসপাতাল থেকে ওকে ছেড়ে দেয়া হলো। একটা হুইল চেয়ারের ব্যবস্থা করতে হলো। আমি ওকে বাড়ি নিয়ে আসলাম। দুপুরের খাবারের ব্যবস্থা করলাম, খাওয়া-দাওয়া সব কিছু শেষ হলে বললাম,
-এতদিন আমার গায়ের রঙ আর খারাপ চেহারার জন্য তোমার অনেক অত্যাচার, অপমান সহ্য করেছি আর এখন তুমি পঙ্গু, নতুন নতুন মেয়ে নিয়ে আসা তো অনেক দূর বাথরুমে যেতে হলেও অন্যের সাহায্য প্রয়োজন তোমার
-প্লিজ আমাকে মাফ করে দাও
-আমি দুঃখিত শহীদ, আমি এতটা উদার নই মহান নই অনেকেই হয়তো আমার নামে অনেক বাজে কথা বলবে যে পঙ্গু স্বামীকে ছেড়ে চলে গেছে কিন্তু তারা কেউ ভেতরের খবরটা জানে না । আমি নিজে আমার চেহারা তৈরি করিনি মহান সৃষ্টিকর্তা সেটা তৈরি করেছিলেন আর সেই দোষে তুমি আমাকে দোষী করেছ আজ তোমার সাথে যা ঘটে গেছে সেটাও সেই সৃষ্টিকর্তার আদেশেই ঘটেছে, সৃষ্টিকর্তা নিজেই যেখানে তোমার প্রতি মহানুভবতা দেখাতে পারেননি সেখানে আমি তো কোন ছার। জানি অনেকেই ভুল বুঝবে আমার আড়ালে অনেক কটু কথা বলবে কিন্তু যেই যন্ত্রণা যে অপমান আমি সহ্য করেছি দিনের পর দিন তা কেউ দেখবে না । আমি তোমাকে ছেড়ে চলে যাচ্ছি সারা জীবনের জন্য, আরো আগেই যেতে পারতাম কিন্তু আমি চাইছিলাম এমন একটা মুহূর্ত যখন তুমি নিজে থেকে অসহায় বোধ করবে যেমনটা আমি সবসময় করতাম। আমার এই কুৎসিত রূপ আর কখনো তোমাকে দেখতে হবে না। এ কি, তুমি আমার দিকে তাকিয়ে আছো কেন? আমার চেহারা দেখলে না তোমার বমি পায়। আমি একটু হেসে ফেললাম।

নিজের ঘরে এসে আগেই গুছিয়ে রাখা ব্যাগ টা নিয়ে বের হতে চাচ্ছিলাম ঠিক এমন সময় মা এসে বললেন," মাগো আমি একটা অমানুষ জন্ম দিয়েছি ।এই অমানুষের সাথে এক ছাদের নিচে আমিও থাকবো না। আমাকে কি তোমার সঙ্গে নেবে? একবেলা খাবার দিলেই চলবে, আমি না হয় কোথাও না কোথাও একটা কাজের ব্যবস্থা করে নেব, অন্তত অন্যের বাড়িতে ঝি গিরি তো করতে পারবো।"
আমি মাকে জড়িয়ে ধরে চিৎকার করে কেঁদে উঠলাম।
অনেকদিন পর খোলা রিকশায় মায়ের সাথে বসে ছুটে চলেছি অজানা গন্তব্যে কোনও দ্বিধা-দ্বন্দ্ব ছাড়াই, আমি জানি আমি পারব ,আমাকে পারতেই হবে।

কলমে- সুবর্ণা শারমিন নিশি

স্পেনের বার্সেলোনায় চলমান বিশ্বপ্রযুক্তির সবচেয়ে বড় আয়োজন ‘ওয়ার্ল্ড মোবাইল কংগ্রেস (এমডব্লিউসি)’-এ এবার যেন ফোল্ডেব...
03/03/2022

স্পেনের বার্সেলোনায় চলমান বিশ্বপ্রযুক্তির সবচেয়ে বড় আয়োজন ‘ওয়ার্ল্ড মোবাইল কংগ্রেস (এমডব্লিউসি)’-এ এবার যেন ফোল্ডেবল বা ভাঁজ করা স্মার্টফোনের চমক

স্পেনের বার্সেলোনায় চলমান বিশ্বপ্রযুক্তির সবচেয়ে বড় আয়োজন ‘ওয়ার্ল্ড মোবাইল কংগ্রেস (এমডব্লিউসি)’-এ এবা.....

02/03/2022

ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ কী তাহলে বিশ্ব সংকটের দিকে এগোচ্ছে....

02/03/2022

#ডাইনি

গ্রামের মানুষজন আমার বাড়ি ঘিরে রেখেছে, কখন আগুন লাগিয়ে দেয় ঠিক নেই।
কিছুক্ষণ আগে এলাকার চেয়ারম্যান জামিল তালুকদারের ছেলে শাহীন ভাই সিঁড়ি থেকে পড়ে গিয়ে মারা গেছেন। সেই দায় পড়েছে আমার উপর আমি নাকি কালোজাদু করে মেরে ফেলেছি।
কোন মতে ভেতর থেকে দরজাটা আটকে আমি চুপচাপ বসে কাঁপতে থাকলাম। কিছুক্ষণের মধ্যে পুলিশ এসে উপস্থিত হলো। গ্রামের মানুষের জোরাজোরি তে আমাকে তারা নিয়ে যেতে বাধ্য হলো। প্রত্যেকে বলতে লাগলো , আমি একটা ডাইনি, ছোটবেলাতেই বাবা-মাকে খেয়েছি, এখন যেই আমার সাথে দুর্ব্যবহার করে আমি নাকি তার এই অবস্থা করি। গত মাসে নাকি আমার কারণেই পাশের গ্রামের ছেলের ওপর কালো জাদু করে থাকে আত্মহত্যা করতে আমি বাধ্য করেছি আর এবারের শিকার হচ্ছে শাহিন ভাই।

পুলিশ আমাকে নিয়ে তো গেলো কিন্তু আইন এ ধরনের অন্ধ বিশ্বাসে বিশ্বাসী না তবুও আমার ঘর তল্লাশি করা হলো, কিছুই পাওয়া গেল না। গ্রামের মানুষের চাপেও পুলিশ আমাকে কাস্টডিতে রাখতে পারলো না কারণ আমার বিরুদ্ধে কোনো প্রমাণ নেই । আমি ভয়ে ভয়ে ফিরে এলাম, জানিনা ওরা আমার সাথে কি করবে, কিন্তু আমার আর যাবার কোন জায়গা নেই, এখানেই ফিরতে হবে।

আমি সুজাতা, জন্মের সময় মা মারা গেছেন আট বছর বয়সে বাবা ।আমি এর ওর বাড়িতে কাজ করে দুই বেলা কোন রকম খাবার জোটাতাম। সবাই মোটামুটি আমাকে স্নেহের চোখে দেখতো কিন্তু সমস্যা হলো তখন যখন রমাবৌদির দুই বছরের বাচ্চাটাকে কোলে নিয়ে পুকুর ঘাটে রোদে বসে রোদ পোহাচ্ছিলাম। দুরন্ত বাচ্চা আমার হাত ফসকে পানিতে পড়ে যায় আমি তুলতে তুলতে কোথায় যেন হারিয়ে গেল আসলে আমি এতটা ঘাবড়ে গিয়েছিলাম যে বুঝতে পারছিলাম না কি করা উচিত, আমার বয়স তখন মাত্র বারো, বাচ্চাটা মরে গেল। ‌ রমা বৌদি কপাল চাপড়ে কাঁদতে কাঁদতে বলতে লাগলেন "এই ডাইনি আমার ছেলেকে খেয়েছে, ইচ্ছে করে পানিতে ডুবিয়ে মেরেছে।" তারপর আর কি, পুরো গ্রামজুড়ে রটে গেল আমি নাকি ডাইনি।

এরপর প্রায় তিন বছর কেটে গেল। বাড়িতে একাই থাকতাম যেহেতু আমার বাবা-মা ছিল না। একরাতে সুযোগ বুঝে গ্রামের এক মদখোর হাসিম আমার ঘরে ঢুকে জোরজবরদস্তি করতে লাগলো আমার চিৎকার শুনে আশেপাশের মানুষজন ছুটে এলো আমার অবস্থা তখন একেবারেই বিধ্বস্ত , মানসিকভাবে এতটাই বিধ্বস্ত ছিলাম যে কি বলছিলাম তা নিজেই বুঝতে পারিনি। চিৎকার করে বলছিলাম " ভগবান তুলে নেয় না কেন তোর মতো জানোয়ার কে?" কাকতালীয়ভাবে তার মাত্র তেরো দিনের মাথায় বাইক অ্যাক্সিডেন্ট করে হাসিম মরে যায় । গ্রামের মানুষের সন্দেহ যেন তখন বিশ্বাসে পরিণত হয়ে গেছে। আমাকে দেখলে তখন আর কেউ দূর দূর করে না বরং এড়িয়ে চলে, কাছে ঘেষে না।
একদিন পাশের গ্রামের লতিফ নামের একজন আমার সাথে দেখা করতে আসে, সকলের কথায় বিশ্বাস করে সে নিজেও ভেবেছিল আমি কালোজাদুতে পারদর্শী তাই তার প্রেমিকাকে যেন আমি বশীকরণ করে তার কাছে নিয়ে আসতে পারি, ওই মেয়েটির নাকি সপ্তাহখানেক পরে বিয়ে। এজন্য সে আমাকে টাকাও দিতে চেয়েছিল কিন্তু যখন আমি তাকে না করলাম সে কিছুতেই শুনতে চাইছিল না । তাই একপ্রকার জোর করেই তাকে ঘর থেকে চিৎকার করে বের করে দিলাম আশেপাশের মানুষজন দেখছিল আর তার কিছুদিন পরেই সে আত্মহত্যা করে । আমি বুঝেছিলাম তার সেই প্রেমিকাকে না পাবার দুঃখেই সে এই কাণ্ড ঘটিয়েছে কিন্তু সব দোষ এসে পরলো আমার ঘাড়ে। আমার বাড়ির সীমানায় কেউ আসতো না তখন । আমি বাজার ঘাট করতে গেলে লোকজন দূরে সরে যেত এমনকি দোকানদাররা বিনা টাকায় জিনিসপত্র দিয়ে দিত এতে অবশ্য আমার লাভ হয়েছিল কারন আমার কোন উপার্জন ছিল না তা না হলে হয়তো না খেয়ে মরতে হতো।
কিন্তু এদের মধ্যে সবচেয়ে আলাদা ছিল শাহিন ভাই সে শহর থেকে পড়াশোনা করে এসেছে। এই এলাকার চেয়ারম্যানের ছেলে। গ্রামের বাচ্চাকাচ্চাদের পড়াশোনার জন্য একটা স্কুল খুলতে চায়। এইসব অন্ধবিশ্বাস তাকে দমাতে পারেনি। সে এক বিকেলে আমার বাড়িতে আসে আমার কথা শুনতে চায়, অনেকদিন পর এমন একজন মানুষকে পেয়েছি যে আমাকে বোন ডেকে স্নেহের চোখে আমার কষ্ট গুলো জানতে চায়, বুঝতে চায়। এরপর থেকে মাঝে মাঝে শাহিন ভাই আমার বাড়িতে আসতো ,এটা সেটা নিয়ে আসতো, গ্রামের মানুষজন সেটা দেখতো কিন্তু তারপর কি জানি কি হয়ে গেল শাহিন ভাইয়ের বাবা-মা দ্রুত তার বিয়ের ব্যবস্থা করলেন। ধুমধাম করে বিয়ে হয়ে গেল। শাহিন ভাই নিজে এসে আমাকে দাওয়াত করে গিয়েছিলেন কিন্তু আমি জানতাম সেখানে গেলে সবকিছু নষ্ট হয়ে যাবে তাই যাইনি। বিয়ের সপ্তাহখানেক পর শাহিন ভাই আবার এসেছিলেন আমরা আগের মতোই গল্প করলাম । শাহিন ভাই তার নববিবাহিত স্ত্রীর কথা বললেন , তার বিয়ের কথা বললেন, আমিও মুগ্ধ হয়ে শুনলাম আসলে আমার গল্প করার মতো কেউ নেই। এভাবে প্রায় মাস খানেক কেটে যাবার পর একদিন কানে এলো শাহিন ভাইয়ের সংসারে বিরাট অশান্তি হচ্ছে আর তার কারণ হচ্ছি আমি। তার স্ত্রীর ধারণা আমার সাথে শাহিন ভাইয়ের কোন বাজে সম্পর্ক আছে, কথাটা শুনে আমার মাথায় যেন বাজ পড়লো। পরে যখন উনি আমার সাথে দেখা করতে এসেছিলেন, আমি তাকে বাড়ি থেকে বের হয়ে যেতে বলেছিলাম সাথে এটাও বলে দেই আর কখনো যেন আমার বাড়িতে না আসে। গ্রামের মানুষের একটা বিশেষ বৈশিষ্ট্য হচ্ছে আড়িপাতা আসলে গ্রামের মানুষ বললে ভুল হবে , সব জায়গায় মানুষেরই বিশেষ বৈশিষ্ট্য এটা । আমি যখন বাড়ির দরজায় দাঁড়িয়ে তাকে কথাগুলো বলছিলাম কিছু মানুষ শুনেছিল আর তার কিছুদিন পরে শাহিন ভাইয়ের মৃত্যু হয়। গ্রামের এত ভালো একটা ছেলের মৃত্যুতে গ্রামবাসী আমায় দোষারোপ করা শুরু করলো, আমাকে ডাইনি আখ্যা দিয়ে পুলিশের হাতে তুলে দিলো, আমি নাকি কালো জাদু করে শাহিন ভাইকে মেরে ফেলেছি। এর আগে অনেকেই নাকি আমার কালো জাদুর শিকার হয়েছে।

প্রমাণ না পেয়ে বাধ্য হয়ে পুলিশ আমাকে ছেড়ে দিয়েছে। আমি বাড়ি ফিরে এসেছি। মাঝরাতে হট্টগোল শুনতে পেলাম, আমার বাড়ির চারপাশে যেন অনেক মানুষ ভিড় করেছে। দরজা খোলার মতো সাহস আমার নেই আস্তে করে জানালার একপাশ খুলে দেখলাম ১৫/২০ জন মানুষ লাঠিসোটা নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। আমি আতঙ্কে জমে গেছি। ভগবানকে স্মরণ করছি কিন্তু লাভ হলো না ওরা দরজা ভেঙে ভেতরে ঢুকে গেল। আমার চুলের মুঠি ধরে টানতে টানতে উঠোনে নিয়ে গেলো। শুরু হলো চড়, লাথি, ঘুষি লাঠির আঘাত । টানা হেচরা তে আমি প্রায় বিবস্ত্র হয়ে গেছি। একজন বললো, "এইটা ভগবানের মন্দিরের সিঁদুর, এর গায়ে ছড়িয়ে দাও তাহলে আমাদের কোনো ক্ষতি করতে পারবেনা।" আমি যন্ত্রণায় কুঁকড়ে যাচ্ছিলাম আমার মাথা ফেটে গলগল করে রক্ত পড়ছে। প্রায় বিবস্ত্র, রক্ত আর সিঁদুরের লাল রংয়ের মাখামাখি আমি সবাইকে বলছি, "আমি ডাইনি না, আমি কালোজাদুর কিচ্ছু জানিনা, আমি তোমাদের মত সাধারন মানুষ ।"কেউ আমার কথা শুনলো না। কেউ যেন আমার ঘাড়ে খুব জোরে একটা আঘাত করলো। তারপর থেকে আর কোনো ব্যথা অনুভব করছিলাম না , পুরো শরীরটাই প্রায় অবশ হয়ে আছে। আমাকে অর্ধমৃত অবস্থায় রেখে ওরা চলে যাচ্ছিলো কিন্তু হঠাৎ আলতাফ চাচা বলে উঠলেন, " এই ডাইনি বেঁচে যাবে, একে জ্যান্ত ফেলে রেখে যাওয়া ঠিক হবে না, আগুন লাগিয়ে দাও এর গায়ে।" হিংস্র পশুর মতো ওরা আমার গায়ে আগুন লাগিয়ে দিলো। দাউদাউ করে জ্বলে উঠলো সে আগুন। আমি প্রচণ্ড চিৎকার করছিলাম, আর্তনাদ করছিলাম কেউ কানে নিলোনা। সবাই চলে গেলো। অসম্ভব যন্ত্রণায় ভগবানের কাছে প্রার্থনা করছিলাম প্রাণটা যেন খুব তাড়াতাড়ি বের হয়ে যায়, ভগবান বোধহয় আমার ইচ্ছা পূরণ করলেন।

ডাইনিটা মরে গেছে আজ তেরো তম দিন,
ওই বাড়ির সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় আলতাফ মিয়া যে কিনা গায়ে আগুন লাগিয়ে দেয়ার কথা বলেছিল সে লক্ষ্য করলো বাড়িতে মৃদু আলো দেখা যাচ্ছে কিছুটা ভড়কে গেলেও ভেবে দেখলো একবার গিয়ে দেখা যাক কিন্তু কয়েক পা এগিয়ে আর সাহস হলো না । গ্রামের আরো বেশ কয়েকজনকে ডেকে নিয়ে আসলো এটা দেখার জন্য সত্যিই কি আলো জ্বলছে নাকি এটা তার মনের ভুল কিন্তু সবাই দেখতে পেল আলতাফ মিয়া যা দেখেছে তা ঠিক। এরা তারাই যারা লাঠিসোটা নিয়ে উপস্থিত হয়েছিল। আস্তে আস্তে আট-দশজন দরজার সামনে এসে দাঁড়ালো। হালকা করে দরজার একটা অংশ অল্প করে ফাঁকা করে দেখলো ভেতরে পুরোপুরি নগ্ন সুজাতা এলোমেলো চুলে মাথাভর্তি সিঁদুর দিয়ে মোমবাতির একটি চক্রে বসে জোড়হাতে চোখ বন্ধ করে আছে।
ওদের সাড়া পেয়ে সেই মৃতা ডাইনি চোখ খুলে কুৎসিত একটা অট্টহাসিতে বললো,
" আমি তোদের মনের মত রূপে ফিরে এসেছি।"

কলমে- সূবর্ণা শারমিন নিশি।

02/03/2022
জিমেইলের আনসাবস্ক্রাইব সুবিধা ব্যবহার করে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রচারণামূলক ই-মেইলের নিবন্ধন বাতিল করা যায়
02/03/2022

জিমেইলের আনসাবস্ক্রাইব সুবিধা ব্যবহার করে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রচারণামূলক ই-মেইলের নিবন্ধন বাতিল করা যায়

বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সেবা নেওয়ার জন্য বাধ্যতামূলকভাবে ই-মেইল ঠিকানা দিয়ে নিবন্ধন করতে হয়। আবার অনেক প্রতিষ্ঠান...

02/03/2022

•• কাগজে ফুলে ভালোবাসা ••

রিকশা থেকে প্রিয় বন্ধু ঋজুর বাড়ির সামনে নামতেই মনটা বেশ শান্ত হল। আমি দেবেশ মিত্র, আঠাশ বছর বয়সী এক যুবক। আসলে বেশ কিছুদিন ধরেই এখানে আসার জন্য মনটা বেশ ছটফট করছিলো আমার। লাস্ট এসেছি বছর চারেক আগে। তারপর এই আধো গ্রাম আধো শহরে আমার আর আসা হয়নি। আসলে কলকাতার কলেজে পড়ার চান্স পেয়ে তারপরেই এই চাকরি তাই শত ইচ্ছে থাকলেও আসা হয়নি আমার।

এই যে এখানে আসার ছটফটানি সেটা যে শুধুই ঋজুর জন্য সেটা বলা ভুল। আসলে একটা পিছুটান সদ্য যৌবনকালের মায়া আছে আমার এখানে..! ঝুমুড়ি..। হাঁ ঝুমুড়ি সম্পর্কে ঋজুর কাকাতো বোন..। ছোটবেলায় ঋজুর কাকা কাকিমা মারা যাওয়ায় তাঁদের কাছেই মানুষ। সে বয়সে ঝুমুড়ির ওই ধরুন সতেরো সবে যৌবনের ধারা বইছে গা ছুঁয়ে কিন্তু আমি তার ছেলেমানুষির প্রেমে পড়েছিলাম।

বিকেল হলেই কোনো না কোনো অজুহাতে আমি ঋজুর বাড়ি যেতাম, ঝুমুড়িও আসতো অংক বুঝিয়ে দেওয়ার জন্য। তারপর ঋজু বিরক্ত হয়ে উঠে যেত। আমি তাকে রাশিবিজ্ঞান বোঝানোর সাথে সাথে মনের বিজ্ঞান ও বোঝাতাম তার সজ্ঞানেই...! তারপর একদিন তো লোডশেডিং ঝুমুড়ি একা বাড়িতে। ঋজু চপ আনতে গিয়ে আটকে পড়ল। ঝড় -বৃষ্টিতে
দোতলার ঘরে লোডশেডিং এ বন্দি দুজন মানুষ মোমবাতির আলোয় আবছায়া ঘর জুড়ে...। তীব্র বজ্রবিদ্যুত কাছে আনলো আমাদের। ওর মুখ দেখা যাচ্ছিলো না কিন্ত ওর উত্তপ্ত নিশ্বাস আমার কাঁধে টের পেয়েছিলাম। সেদিনটার কথা ভাবলে আজও শরীরে সেই উত্তপ্ত নিশ্বাস এর অস্তিত্ব যেন টের পাই...। কলেজে চান্স পাওয়ার পর আর জানানো হয়নি তাকে যোগাযোগ হয়নি আর..। আজ চারটে বছর পর আবার হবে দেখা..।

বাড়ির সামনে কাগজে ফুলে ছয়লাপ...। আমি দাঁড়াতেই ঝরে ঝরে পড়ছে...। কিন্তু ও কে ঝুমুড়ির পাশে! বর নাকি? মুহূর্তেই সব স্বপ্ন ভেস্তে গেল। আমার ছুটে আসার উচাটন, আশা সব এক মুহূর্তে উবে গেলো।

- "কি করবো আমি, ওর সামনাসামনি দাঁড়ানোর ক্ষমতা আমার নেই!

মনটা দুম করে ভেঙে গেল। চোখে জল। বন্ধুর সাথেও আর দেখা না করেই আমি তার চোখের অলক্ষ্যেই সেই রিক্সাতেই ফেরার পথ ধরলাম মনে এক অদ্ভুত বেদনা।

মনে মনে বলছি -
"বন্ধু তোর পাড়া নিঝুম একা আমি ফিরে যাই
কাগজে ফুল বলিস তাকে আমি আজও ঝুমুড়িকেই চাই"!
"ওর সাথে সেই লোডশেডিং এর সন্ধেটাই মনে থাক
বাকি সব কিছু ভুলে যাওয়া যাক ।"

কলমে - #অম্বিকা

01/03/2022

#স্বার্থপর

সন্ধ্যা ছয়টা বেজে গেল, আমার কলেজ পড়ুয়া মেয়ে রাহা এখনো বাড়ি ফেরেনি। আমি এ ঘর ও ঘর করতে লাগলাম, ওর ফোনটাও সুইচড অফ বলছে। আরও এক ঘণ্টা পার হয়ে গেল রাহা ফিরল না বাধ্য হয়ে আমি ওর বাবাকে ফোন করলাম। কিন্তু ও ফোন কেটে দিলো, যাবার আগেই বলে গিয়েছিল খুব জরুরী একটা মিটিং আছে। কিন্তু এদিকে আমি আর কোন টেনশন নিতে পারছিনা। আমি ফোন করতেই থাকলাম , বাধ্য হয়ে একসময় ও ফোনটা ধরলো। আমার কথা শুনে বলল তুমি চিন্তা করোনা আমি এখনই আসছি।

রাত নয় টায় আমরা জানতে পারলাম , রাহা কিডন্যাপ হয়ে গেছে। আর কিডন্যাপার দুই কোটি টাকা দাবি করছে, আমি আমার মেয়ের আর্তনাদ শুনতে পাচ্ছি, জানিনা ওরা কি করছে আমার মেয়ের সাথে। আমার ভেতরটা দুমড়ে মুচড়ে যাচ্ছে। রাহার বাবা মিনতির সুরে বলল যেভাবেই হোক আমি টাকা জোগাড় করে দিব কিন্তু আমার মেয়েকে কোন কিছু করবেন না। ওপাশ থেকে আমাদেরকে দুই দিনের সময় দেয়া হলো। সাথে এটাও বলা হল যদি আমরা থানা পুলিশ করি তাহলে আমার মেয়েকে জবাই করতে ওদের পাঁচ মিনিট সময়ও লাগবে না।

আমরা সবাই তখন ছুটছি শুধু, আমি আমার সমস্ত গয়না বিক্রি করে দিলাম, রাহার বাবা যেসব কোম্পানির শেয়ার কিনে ছিল সব বিক্রি করে দিল, বড় ছেলের বাইরে পড়তে যাওয়ার জন্য যে টাকা রেখে ছিলাম তাও ব্যাংক থেকে তুলে আনা হলো। এবার অপেক্ষার পালা, সেই কাঙ্খিত ফোনের।

অবশেষে এলো সেই কাঙ্খিত ফোন, কিডন্যাপার এর কথা অনুযায়ী রাহার বাবা আর আমার ছেলে একটা বাজারের ব্যাগে টাকা ভর্তি করে নির্দিষ্ট স্থানে রেখে এলো আবার যেন সেই জনম জনমের অপেক্ষা কখন রাহা ফিরে আসবে।

পরদিন সকালে রাহা ফিরে এলো, যেন জীবন্ত এক লাশ। আমি চমকে উঠলাম আমার মেয়েকে দেখে, দেখে মনে হচ্ছে কতদিনের না খাওয়া। শারীরিক আঘাত এর অনেকগুলো চিহ্ন, কপাল আর ঠোঁটের পাশে বিশ্রী রকম ক্ষত হয়ে আছে। আমি দৌড়ে গিয়ে আমার মেয়েকে জড়িয়ে ধরলাম, রাহা কেমন নিরলিপ্ত হয়ে দাঁড়িয়ে আছে, ওর বাবা মাথায় হাত দিয়ে সোফায় বসে পরলো। আমার এত বড় ছেলেটা পর্যন্ত হাউমাউ করে কেঁদে উঠলো। বাড়িটা যেন এক মৃত্যু পরী হয়ে গেল।

আমার যে মেয়ে সারাক্ষণ হইচই করে বেড়াতো সে সারাদিন একা বসে থাকে, টিভি দেখেনা, গান শুনে না ,ছাদে হাঁটে না এমনকি যে মোবাইল ফোনে কথা বলার জন্য বেশ কয়েকবার মার খেয়েছে সেই মোবাইল ফোনটা হাতে ধরে না। আমি আল্লাহর কাছে দোয়া করি যেন আমার মেয়েটা আবার স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে পারে।

আমার বোন তখন আমাকে পরামর্শ দিল, রাহাকে বিয়ে দিয়ে দিতে, তাহলে হয়তো ওর একাকীত্ব কাটবে। আমরাও বিষয়টা ভেবে দেখলাম, বেশ কয়েকটা ছেলেপক্ষ ওকে দেখতে আসলো, কিন্তু পরে কেউ কোন উত্তর পাঠায়নি। যদিও আমরা কেউ রাহার এই ঘটনা ছেলেপক্ষ দের কাউকেই কিছু জানায়নি কিন্তু রাহার এ্যাবনরমাল আচরণ ওদেরকে ভাবিয়ে তুলতো।

অবশেষে একটা ছেলে পাওয়া গেলো যে রাহাকে বিয়ে করতে রাজি আছে এবং বিয়ের পর বাইরে সেটেল্ড হবে আমরা খুব খুশি হলাম এটা শুনে কারণ রাহা যদি এই পরিবেশ ছেড়ে চলে যায় তাহলে ওর স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে আরো অনেক কম সময় লাগবে কিন্তু পাত্রপক্ষের কিছু ডিমান্ড আছে সোজা বাংলায় যেটাকে বলা হয় যৌতুক যদিও এখন আমাদের কোন কিছুই দেবার মত সামর্থ্য নেই , রাহার বাবা দিনরাত ছোটাছুটি করে সংসারের খরচ চালাতে, আমার ছেলেটাও অনার্সের সার্টিফিকেট হাতে ঘুরে ঘুরে বেড়ায় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে একটা চাকরির আশায় তবুও আমরা রাজি হয়ে যাই, অন্তত আমার মেয়েটা ভালো থাকুক।শেষ সম্বল বাড়িটা ব্যাংকের কাছে বন্ধক রেখে ছেলে পক্ষের ডিমান্ড পূর্ণ করলাম, বিদায় বেলায় জলভরা চোখে মেয়ের দিকে তাকিয়ে থাকলাম, ওর চোখে কোনো পানি নেই। আহারে আমার মেয়েটা, আমার ছোট্ট ফুলের মত মেয়ে, কি হতে কি হয়ে গেল।

আমি রাহা, কিছুক্ষণ আগেই আমার বিয়ে হয়েছে আমার পছন্দের ছেলে সাজিদ এর সাথে। বেশ অনেকদিন আগেই সাজিদের কথা বাবা মাকে বলেছিলাম কিন্তু যেহেতু সাজিদ ছোটখাটো একটা চাকরি করে আর অনাথ তাই তারা কিছুতেই আমার ভালোবাসার মূল্যায়ন করেনি উল্টে আমার পায়ে বেড়ি পরিয়ে দিয়েছিল। পড়াশোনা শেষ করে উচ্চতর ডিগ্রির জন্য বাইরে যেতে চেয়েছিলাম কিন্তু না আমার শখ কে মাটিতে পিষে সমস্ত পয়সা খরচ করেছে আমার বড় ভাইয়ের পিছনে কেননা সে ভালো স্টুডেন্ট আমি তার মতো নই। তাই আমি আর সাজিদ মিলে এই কিডনাপিং এর ঘটনাটা সাজিয়েছি ভাগ্যিস আগে কখনো সাজিদের ছবি দেখাইনি বাবা-মাকে, দেখালে বিয়ের সময় সমস্যা হয়ে যেত নামটা হয়তো তারা ভুলে গেছে। সেই দুই কোটি টাকা আর যৌতুকের টাকা সহ এখন আমাদের অনেক টাকা চাইলে আমরা যেকোন কিছু করতে পারি। একটু স্বার্থপর না হলে কি দুনিয়ায় টিকে থাকা যায়, আমি আমার ভালোটাই দেখবো, দুনিয়া পানিতে ভেসে যাক।

একটু স্বার্থপর না হলে কি আর দুনিয়ায় চলা যায়, সাজিদ জিনিস পত্র গুছাচ্ছিল আর এটাই চিন্তা করছিল। এক সপ্তাহের সংসার ওদের। ডিনার এর সাথে ও রাহার খাবারে দুটো ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে দিয়েছিল, রাহা এখন নিশ্চিন্তে ঘুমাচ্ছে। যে মেয়ে নিজে সুখে থাকার জন্য বাবা-মা ভাইয়ের সাথে এমন আচরণ করতে পারে সেই মেয়ে তো তারচেয়ে কোন ভালো ছেলে পেলে অবশ্যই তাকে ছেড়ে চলে যাবে। এই মেয়েকে কোনভাবেই বিশ্বাস করা যায় না, আর তাছাড়া একটা মেয়ের চেয়ে এক সুটকেশ ভর্তি টাকা সাজিদের কাছে অনেক বেশি ইম্পর্টেন্ট, ওই যে সুখে থাকতে হলে একটু স্বার্থপর হতে হয়। সাজিদ ঘুমন্ত রাহার দিকে তাকিয়ে বলল, বাই রাহা চিরজীবনের জন্য।

সূবর্ণা শারমিন নিষি

Address

Dhaka
1209

Telephone

+8801711064877

Website

Alerts

Be the first to know and let us send you an email when আমাদের বাংলাদেশ posts news and promotions. Your email address will not be used for any other purpose, and you can unsubscribe at any time.

Contact The Business

Send a message to আমাদের বাংলাদেশ:

Videos

Share


Other Media/News Companies in Dhaka

Show All

You may also like