22/09/2022
প্রসঙ্গ: আমাজন কি আসলে শুরুতে লস দিয়েছিল? এটি কি পঞ্জি স্কিম ছিল?
ইদানিং কিছু ই-কমার্স ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের পক্ষে যুক্তি দেখাতে গিয়ে অনেকেই বলেন আমাজনও প্রথম দিকে লস দিয়েছিল। ইউটিউবে দেখলাম কয়েকজন অর্থনীতিবিদও এটা বলছেন। আমি গালে হাত দিয়ে বসে বিশেষ করে আর্থিক বিশেষজ্ঞদের কথা শুনছি, আর ভাবছি ওনারা কী বলছেন? একথা তো পুরো সত্য নয়। শুরু থেকেই এটি সফলতার সব চিহ্ন বহন করছিল। ঘাতপ্রতিঘাতের মধ্যে গেলেও আমাজন শুরু থেকেই স্বচ্ছ বিজনেস মডেল নিয়ে এগিয়েছিল। এটি কোনো পঞ্জি স্কিম ছিল না। নিচে তার একটি চিত্র তুলে ধরা হলো।
১. ১৯৯৪ সালে জেফ বেজোস সিয়াটলে একটি গ্যারেজে আমাজম প্রতিষ্ঠা করেন । পরে তাঁর দুই বন্ধু থেকে নেওয়া ২৪৫,০০০ ডলার বিনিয়োগ করে আমাজন ১৯৯৫ সালে ওয়েবসাইট খুলে অনলাইনে বই বিক্রি শুরু করে।
২. প্রথম দিকেই সপ্তাহে এর গ্রোথ ৩০% দিয়ে শুরু হয়ে তা কয়েক সপ্তাহ পর ৫০% পর্যন্ত স্পর্শ করে।
৩. মাত্র তিন বছরের মাথায় ১৯৯৭ সালে এটি স্টক এক্সচেঞ্জে নাম লেখায় ও আইপিও ইস্যু করে। প্রতি শেয়ারের দাম ছিল ১৮ ডলার।
৪. পাঁচ বছরের মাথায় ১৯৯৯ সালে জেফ বেজোস মিলিওনিয়ার হন এবং সে বছর তাঁকে টাইম ম্যাগাজিন Person of the year in 1999 ঘোষণা করে।
৫. পরের দুবছর কোম্পানিটি কিছু ভুল বিনিয়োগ করে সমস্যায় পড়ে, তবে তা খুব বড়ো সমস্যা ছিল না- এবং তা পণ্য ডেলিভারিতে বিন্দুমাত্র প্রভাব ফেলেনি। এসময় বেজোস সম্ভাব্য সবচে কম সময়ে ক্রেতাদের কাছে পণ্য পৌঁছে দেওয়ার নীতি নেন। এরই প্রতিফলন ঘটে হ্যারি পটারের বই যেদিন প্রকাশিত হয় সেদিনই আমেরিকার সকল প্রান্তে হাজার হাজার অর্ডারকারির কাছে পৌঁছানোর মাধ্যমে। এসময় কোম্পানিটির অভ্যন্তরীণ রক্তপাত মানে ক্ষতি হচ্ছিলো, স্টকের দাম কমছিলো, কিন্তু তাদের বিজনেস পলিসি, ভবিষ্যত পরিকল্পনা পরিস্কার ছিল, নতুন নতুন উদ্যোগ করা হচ্ছিলো, যার কারণে তাঁরা খুব দ্রুত ঘুরে দাঁড়ায়। সব পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হয়েছিল বিনিয়োগ জোগাড় করে, যেমন AOL এসময় ১০০ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করেছিল। ক্রেতাদের কাছ থেকে অগ্রিম নিয়ে এগুলো করা হয়নি।
৬.প্রতিষ্ঠার মাত্র সাত বছরের মাথায় ২০০১ সালে এর রেভিনিউ দাঁড়ায় এক বিলিয়ন ডলারেরও বেশি।
৭. এরপর আর পিছু ফিরতে হয়নি, ২০০৮ সালেই আমাজন আমেরিকার সবচে বড়ো ই-কমার্স প্লাটফর্ম 'eBay কে পেছনে ফেলে দেয়- যা ছিল অবিশ্বাস্য।
৮. ২০১১ সালে এর রেভিনিউ হয় ৮০ বিলিয়ন। একই বছর ব্যক্তিগতভাবে ১৮.১ বিলিয়ন নেট সম্পদ নিয়ে বেজোস দুনিয়ার ১৮তম ধনীর জায়গা দখল করেন।
৯. পরের বছর ২০১২ সালে এর রেভিনিউ দাঁড়ায় ১২০ বিলিয়ন ডলার।
১০. ২০২০ সালে এটি ট্রিলিয়ন ডলার কোম্পানিতে পরিণত হয়। ( আমেরিকান হিসেবে এক ট্রিলিয়ন মানে এক হাজার বিলিয়ন।)
মোদ্দা কথা হলো, অনেক ঘাতপ্রতিঘাতের মধ্যে গেলেও আমাজনের একটি ক্রিস্টাল ক্লিয়ার বিজনেস মডেল ছিল।
ক্রেতাদের সার্ভিস দেওয়ার ব্যাপারে কোনো আপোষ ছিল না। মাঝে মাঝে লস হলেও তার ব্যাখ্যা ছিল। সম্পদ ও দায়ের ফারাক ব্যাখায়িত ছিল।
আমাদের দেশের 'ছাতামাতা হায়হায়' কোম্পানির পক্ষে যুক্তি দেওয়ার সময় যারা আমাজন প্রসঙ্গ টানেন, তাঁরা কি এগুলো জানেন না!
আমার কেন জানি মানতে ইচ্ছে করে না।
( তথ্যগুলো আমাজনের উপর লেখা সবচে অথেনটিক বই
Amazon Unbound থেকে নেওয়া। বিশাল গবেষণাধর্মী বইটি লিখেছেন, Brad Stone)
#আসুনমায়াছড়াই
#বাদলসৈয়দ
৮.