বুদ্ধ -Buddha

বুদ্ধ -Buddha ইহা একটি বৌদ্ধ ধর্মীয় পেইজ ৷

ওয়াছো ( বর্ষাবাস) চীবর দান  ও সদ্ধর্মদেশনা  অনুষ্ঠান তারিখ : ৬ই সেপ্টেম্বর ২০২৪ই: শুক্রবার স্থান : টাইম স্কয়ার কনভেনশন স...
29/08/2024

ওয়াছো ( বর্ষাবাস) চীবর দান ও সদ্ধর্মদেশনা অনুষ্ঠান

তারিখ : ৬ই সেপ্টেম্বর ২০২৪ই: শুক্রবার
স্থান : টাইম স্কয়ার কনভেনশন সেন্টার
এপোলো শপিং সেন্টার ৪র্থ তলায়
কাজীর দেউরি, চট্টগ্রাম।

আয়োজনে : দি ওয়ার্ল্ড বুদ্ধ শাসন সেবক সংঘ চট্টগ্রাম।

সত্যের পথে অনেক কাটা  থাকে। সেগুলা উপেক্ষা করে চলতে হবে ।
19/08/2024

সত্যের পথে অনেক কাটা থাকে। সেগুলা উপেক্ষা করে চলতে হবে ।

05/08/2024

সবাই সাবধানে থাকবেন আর নিজেদের বিহার সুরক্ষার জন্য সকল তরুণ যুবক দাদাদের অনুরোধ করছি নিজেরাই পাহাড়া দিন।

বুদ্ধ - Buddha পরিবার

02/08/2024

গৃহস্থদের সুগতি এবং মুক্তির বিধান

ড. বরসম্বোধি ভিক্ষু

ভগবান মহাকারুণিক বুদ্ধের মহাকরুণা এতই গভীরে যে, তিনি সকলকে কেবল গৃহত্যাগ করে সন্ন্যাস গ্রহণ করতে বলেননি, বরং গৃহস্থ জীবন-যাপন করেও কিভাবে সুগতি-শান্তির অধিকারী হওয়া যায়, তার বিধানও প্রকাশ করেছেন। তাঁর উদ্ভাবিত বিমুক্তির উপায় প্রদর্শনের মধ্যে অষ্টাঙ্গ উপোসথ ব্রত পালন হল অন্যতম। প্রতি মাসে দু’টি পক্ষ থাকে। একটি হল শুক্ল পক্ষ এবং অপরটি কৃষ্ণ পক্ষ। দু’পক্ষের দু’ অষ্টমী তিথি, একটি অমাবশ্যা বা চাতুর্দশী এবং একটি পঞ্চদশী বা পূর্ণিমা। মাসে এ চার উপোসথের দিনে অষ্টাঙ্গ উপোসথ ব্রত ধারণ করলে গৃহস্থদের দশ পারমী পূরণের সুযোগ হয়ে থাকে। সুতরাং, সকল গৃহস্থদের নিষ্ঠার সাথে উপোসথ পালন করা উচিত। নিজেও উপোসথ পালন করুন এবং অন্যদেরকেও উপোসথ পালন করার জন্য উৎসাহিত করুন, প্রেরণাদান করুন। ‘ধম্ম সংগহো’ গ্রন্থে সূত্র পিটকের অঙ্গুত্তর নিকায় হতে উদ্ধৃতি প্রদান করে উপোসথ পালন সম্বন্ধিত ভগবান তথাগত বুদ্ধের উপদেশ বিবৃত হয়েছে-

‘চাচুদ্দসিং পঞ্চদসিং, যা চ পক্খস্স অট্ঠমী,
পাটিহারিযপক্খঞ্চ অট্ঠঙ্গসুসমাগতং।
উপোসথং উপবসেয্য, যোপিস্স মাদিসো নরো’তি।’

অর্থাৎ যে কোনো মনুষ্য যদি আমার মত হতে চায়, তাহলে তাদের অবশ্যই চাতুর্দশী (অমাবশ্যার পূর্বদিন), পঞ্চদশী (পূর্ণিমা) এবং প্রতিহার্য পক্ষের অষ্টমীদ্বয়ে অষ্টাঙ্গ উপোসথ শীল সমূহ পালন করা উচিত।

ইহ জন্মে এবং অনাগত জন্ম সমূহে সুখ-শান্তি, বিত্ত-বৈভব প্রাপ্তির ইচ্ছাকারী এবং বিমুক্তিকামীগণেরও পূর্ণিমা, অমাবশ্যা ও অষ্টমী তিথিতে উপোসথ ব্রত পালন করা বাঞ্ছনীয়।

অন্যান্য দিনে কৃত সু-কর্ম বা দুষ্কর্মে যে ফল (পূণ্য-পাপ) আমরা লাভ করে থাকি, অষ্টমী উপোসথ দিবসে সু-কর্ম বা দুষ্কর্ম সম্পাদন করলে তাতে অনেকগুণ বেশী পূণ্যের ফল বা পাপের দুঃখ দায়ক বিপাক লাভ হয়ে থাকে।

অষ্টমী উপোসথ দিবসে কৃত কর্মের যে ফল আমরা লাভ করে থাকি, তার চেয়েও অনেক গুণ অধিক ফল পাওয়া যায় চাতুর্দশী অর্থাৎ অমাবশ্যার উপোসথ দিবসে কর্ম সম্পাদন করলে।

চাতুর্দশী উপোসথ দিবসে কর্মের যে ফল অর্জিত হয়, তার চেয়েও বহুগুণ অধিক ফল লাভ হয়ে থাকে পূর্ণিমা দিবসে কর্ম সম্পাদন করা হলে।

অতঃপর ভগবান তথাগত বুদ্ধ আরও বলেছেন-

‘ভিক্ষুগণ! মাসের উভয় অষ্টমীর দিনে চার দিকের চার লোকপাল মহারাজ দেবগণের অমাত্য-পরিষদেরা মর্ত্য লোকে এরূপ দেখার জন্য বিচরণ করে থাকে যে, মনুষ্যদের মধ্যে অধিকাংশ লোক মাতৃ-সেবক কিনা, পিতৃ-সেবক কিনা, শ্রমণ সেবক কিনা, ক্ষীণাসব-সেবক কিনা, স্ব-কূলের জেষ্ঠদের গৌরব-শ্রদ্ধা প্রদর্শন করছে কিনা, উপোসথ ব্রত পালন করছে কিনা এবং নানাবিধ কুশল কর্ম সম্পাদন করছে কিনা।

ভিক্ষুগণ! মাসের চাতুর্দশী অর্থাৎ অমাবশ্যার দিনে চার দিকের চার লোকপাল মহারাজ দেবগণের পুত্রগণ মর্ত্য লোকে এরূপ দেখার জন্য বিচরণ করে থাকে যে, মনুষ্যদের মধ্যে অধিকাংশ লোক মাতৃ-সেবক কিনা, পিতৃ-সেবক কিনা, শ্রমণ-সেবক কিনা, ক্ষীণাসব-সেবক কিনা, স্ব-কূলে জেষ্ঠদের গৌরব-শ্রদ্ধা প্রদর্শন করছে কিনা, উপোসথ ব্রত পালন করছে কিনা এবং নানাবিধ কুশল কর্ম সম্পাদন করছে কিনা।

ভিক্ষুগণ! পূর্ব দিকের ধৃতরাষ্ট্র লোকপাল মহারাজ, দক্ষিণ দিকের বিরুড়ক লোকপাল মহারাজ, পশ্চিম দিকের বিরুপাক্ষ লোকপাল মহারাজ এবং উত্তর দিকে কুবের লোকপাল মহারাজ বিরাজমান রয়েছে। পূর্ণিমা সহ সমস্ত উপোসথ দিবসে দেবরাজগণও স্বয়ং মর্ত্য লোকে দেখার জন্য বিচরণ করে থাকে যে, মনুষ্যদের মধ্যে অধিকাংশ লোক মাতৃ-সেবক কিনা, পিতৃ-সেবক কিনা, শ্রমণ-সেবক কিনা, ক্ষীণাসব-সেবক কিনা, স্ব-কূলে জেষ্ঠদের গৌরব-শ্রদ্ধা প্রদর্শন করছে কিনা, উপোসথ ব্রত পালন করছে কিনা এবং নানাবিধ কুশল কর্ম সম্পাদন করছে কিনা।

ভিক্ষুগণ! মনুষ্যলোকে এরকম অল্প সংখ্যক মনুষ্যও যদি থাকে, যারা মাতৃ-সেবক, পিতৃ-সেবক, শ্রমণ-সেবক, ক্ষীণাসব-সেবক, স্বীয় স্বীয় কূলে জেষ্ঠদের গৌরব-শ্রদ্ধা প্রদর্শনকারী, উপোসথ রক্ষাকারী এবং বিবিধ পূণ্য কর্মে অনালস্য সম্পন্ন, তখন, ভিক্ষুগণ! উপরি উক্ত চারি লোকপাল দেব মহারাজ তাবতিংস দেবলোকের সুধম্মা সভায় একত্রিত হয়ে এরূপ জ্ঞাপন করে থাকে যে-

আয়ুষ্মানগণ! মর্ত্যলোকে এরকম মনুষ্য অল্প সংখ্যক রয়েছে, যারা মাতৃ-সেবক, পিতৃ-সেবক, শ্রমণ-সেবক, ক্ষীণাসব-সেবক, স্বীয় স্বীয় কূলে জেষ্ঠদের গৌরব-শ্রদ্ধা প্রদর্শনকারী, উপোসথ রক্ষাকারী এবং বিবিধ পূণ্য কর্ম সম্পাদনকারী। ভিক্ষুগণ! তখন তাতে তাবতিংস দেবলোকের অধিপতি অসন্তুষ্ট হয়ে ক্ষেদ প্রকাশ করে বলে থাকে যে, দেবতাদের সংখ্যা হ্রাস পাবে এবং অসুরদের সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে।

ভিক্ষুগণ! মনুষ্যলোকে যদি এরকম মনুষ্য অধিক সংখ্যক থাকে, যারা মাতৃ-সেবক, পিতৃ-সেবক, শ্রমণ-সেবক, ক্ষীণাসব-সেবক, স্বীয় স্বীয় কূলে জেষ্ঠদের গৌরব-শ্রদ্ধা প্রদর্শনকারী, উপোসথ রক্ষাকারী এবং বিবিধ পূণ্য কর্ম সম্পাদনকারী। ভিক্ষুগণ! তখন চারি লোকপাল দেব মহারাজ তাবতিংস দেবলোকের সুধম্মা সভায় সমবেত হয়ে দেবতাদেরকে জ্ঞাপন করে যে, আয়ুষ্মানগণ! মর্ত্যলোকে এরকম মনুষ্য অধিক সংখ্যক রয়েছে, যারা মাতৃ-সেবক, পিতৃ-সেবক, শ্রমণ-সেবক, ক্ষীণাসব-সেবক, স্বীয় স্বীয় কূলে জেষ্ঠদের গৌরব-শ্রদ্ধা প্রদর্শনকারী, উপোসথ রক্ষাকারী এবং বিবিধ পূণ্য কর্ম সম্পাদনকারী। ভিক্ষুগণ! তখন তাতে তাবতিংস দেবলোকের অধিপতি সন্তুষ্ট হয়ে আনন্দ প্রকাশ করে বলে থাকে যে,-‘দেবতাদের সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে এবং অসুরের সংখ্যা লোপ পাবে। !

ভগবান তথাগত বুদ্ধের উপরোক্ত দেশনায় উপোসথ পালন এবং ইহার গুরুত্ব সম্পর্কে যেভাবে বর্ণনা করা হয়েছে তা সকলকে গুরুত্ব সহকারে অনুধাবন করা উচিত এবং তদনুসারে উপোসথ ব্রত অনুশীলন করে ইহ-পরকালের মঙ্গল সাধন করা কর্তব্য।

02/08/2024
ড. দীপঙ্কর ভন্তেকে হত্যাই করা হয়েছে!!! বিশেষ সূত্রে প্রাপ্ত তথ্য অবলম্বনে- নিপুন বড়ুয়া=======১২ জুলাই ২০২৪ ইং সকাল হতেই ...
15/07/2024

ড. দীপঙ্কর ভন্তেকে হত্যাই করা হয়েছে!!!
বিশেষ সূত্রে প্রাপ্ত তথ্য অবলম্বনে- নিপুন বড়ুয়া
=======
১২ জুলাই ২০২৪ ইং সকাল হতেই ধ্যান চলছিলো, সেই তারিখেরই সন্ধ্যা সাড়ে ০৬ টার দিকে একজন উপাসক ও একজন উপাসিকার সাথে দীপঙ্কর ভন্তে উঠে কোথাও চলে গেলেন। যাবার পূর্বক্ষণেও তাঁর চোখে-মুখে কোন উদ্বেগ পরিলক্ষিত হয়নি। তিনি ফিরে আসেন পৌনে দুই ঘন্টা পর বা একঘন্টা পঁয়তাল্লিশ পর, আনুমানিক রাত ০৮.১৫ মিনিটে। তখন তাঁর চোখ-মুখ ছিল খুবই বিষণ্ন ভারাক্রান্ত ও বিষাদগ্রস্থ।

এসেই তিনি কারো সাথে কোন কথা না বলে, শুধু অনিবার্য কারণবশতঃ ধ্যান কার্যক্রম সমাপ্ত বলেই তিনি ধ্যান হল ত্যাগ করে নিজের কুটীরের দিকে চলে যান।

পরের দিন ১৩ জুলাই দুপুর এক ঘটিকার দিকে ভন্তের মরদেহ প্রকাশ্যে আসে গলায় ফাঁস দিয়ে ঝুলন্ত অবস্থায়। অথচ, চীবরও পারুপণ করা আছে ঠিকঠাক, পা মাটিতে ঠেকানো।

সূত্রমতে, ভন্তের সাথে উপাসকটি হলো #এমিল তংঞ্চগ্যা ও উপাসিকাটি হলো ভন্তের প্রধান সেবিকা বলে #প্রকাশ হ্যাপী চাকমা (এমিল তংঞ্চগ্যার স্ত্রী)। ভন্তের চিরকুট বলে প্রকাশ হওয়া দ্বিতীয় চিরকুটে যেই প্রসন্ন কান্তি তংঞ্চগ্যাকে ভন্তের প্রধান সেবক ও পিতৃতুল্য বলে উল্লেখ করেছেন, সেই #প্রসন্ন কান্তি তংঞ্চগ্যারই পুত্র ও পুত্রবধু হলেন এমিল তংঞ্চগ্যা ও তৎস্ত্রী হ্যাপী চাকমা।

এখন প্রশ্ন আসে,
#এমিল তংঞ্চগ্যা ও তৎস্ত্রী হ্যাপী চাকমা ভন্তেকে নিয়ে কোথায় গিয়েছিলেন?
#কেনো গিয়েছিলেন?
#কাদের সাথে দেখা করেছিলেন?
#তাদের সাথে কি আলাপ হয়েছে ওই সময়ে?
#কেনো ভন্তে ওখান হতে আসার পরপরই ধ্যান বন্ধ করেছিলেন?
#কেনো কারো সাথে কিছুই না বলে হঠাৎ করে চলে গেলেন নিজের কুটীরে, যেটি ওঁনার স্বভাব বিরুদ্ধ।
কেনো রাত ১২ টায় ও রাত ১১ টায় দুইটি চিরকুট লিখলেন?
এবং ভন্তের #চিরকুট বলে প্রকাশ্যে আসা উভয় চিরকুটে হ্যাপী চাকমা, এমিল তংঞ্চগ্যা, জেন্টি (সম্ভবত তাদের সন্তান) এবং প্রসন্ন বাবুর নাম জোর দিয়ে উল্লেখ করার কারণ কি? উনারা ছাড়া একমাত্র ভন্তের মায়ের নাম উল্লেখ করা হয়েছে।
#কেনো ভন্তের গুরুভন্তে উপসঙ্ঘরাজ ধর্মপ্রিয় ভন্তে, ভন্তের ভাই বা বোন, বা নিকটাত্মীয়, বা অন্য কোন ঘনিষ্ঠ উপাসক বা উপাসিকা বা আত্মীয়ের নাম উল্লেখ নেই?
#কথিত চিরকুটদ্বয় কি আদৌ ভন্তে লিখেছিলেন?

উপরোক্তভাবে, মনে করা অমূলক নয় যে, ড. দীপঙ্কর ভন্তে, হয়তো বিহারস্থ অন্য সকলের এবং রাঙ্গামাটিতে অবস্থানরত তাঁর ভাই ও মা, এবং বোন ও ভগ্নীপতির জীবনের হুমকী দূর করতে জঘন্য খুনীদের হাতে নিজের অমূল্য জীবন তুলে দিতে বাধ্য হয়েছিলেন। হয়তো, যদি তা না করতেন, তবে তিনিও খুন হতেন, সাথে অন্যরাও।

ভন্তের সুরতহাল রিপোর্ট বান্দরবান সদর হাসপাতাল বলছে, আত্মহত্যা, সাধারণ জ্ঞানে কি মনে হয়, আপনাদের?

ধুতাঙ্গ সাধক ড. এফ দীপংকর মহাস্থবিরের রহস্যময় জীবনাবসান বৌদ্ধ সমাজে জন্য এক কালো অধ্যায়। ▪️▪️▪️▪️▪️▪️▪️▪️▪️▪️▪️▪️▪️▪️পরম...
13/07/2024

ধুতাঙ্গ সাধক ড. এফ দীপংকর মহাস্থবিরের রহস্যময় জীবনাবসান বৌদ্ধ সমাজে জন্য এক কালো অধ্যায়।
▪️▪️▪️▪️▪️▪️▪️▪️▪️▪️▪️▪️▪️▪️
পরম পূজনীয় ধুতাঙ্গ সাধক, ভারতের কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের থেকে ডবল মাস্টার্স করা এবং স্বর্ণপদক প্রাপ্ত, বৌদ্ধ সমাজ সদ্ধর্মের আলোকবর্তিকা সাংঘিক ব্যক্তিত্ব ড. এফ দীপঙ্কর মহাস্থবির মহোদয়ের জীবন অবসান বৌদ্ধ সমাজের জন্য বিশাল অপূরনীয় ক্ষতি।
আজ ১৩ জুলাই দুপুর ১২ থেকে ২ টার মধ্যে বান্দরবানস্হ ধুতাঙ্গ কুটিরে পিণ্ড গ্রহণ করার পর ধুতাঙ্গ কুটিরের পাশে গাছের সাথে গলায় ফাঁস দেয়া অবস্হায় তাঁর মৃত্যু দেহ শিষ্যরা দেখতে পান।
অন্যান্য দিনের মতো আজও তিনি শিষ্যদের নিয়ে পিণ্ডাচারণ করেছিলেন। উল্লেখ্য যে, পূজনীয় ড. দীপংকর মহাস্থবির মহোদয় পিণ্ড গ্রহণের (চোয়াইং) সময় পাহাড়ের উপরের কুটিরে একা পিণ্ড গ্রহণ করতেন, ঐ সময় শিষ্যরা নীচের কুটিরে অবস্হান করতেন।
এই বুদ্ধ পুত্র আত্মহত্যা করার মতন ভিক্ষু নন। তাঁর এই মৃত্যু মেনে নেওয়া যায় না।

দোষীদের দ্রুত বিচার চাই।

যে ভিক্ষু চতুর্থ ধ্যান উৎপাদন করেও ভিক্ষুত্ব ছেড়ে দিয়ে গৃহে ফিরে গেল __________________মহাকাশ্যপ স্থবিরের জনৈক সার্ধবিহা...
23/06/2024

যে ভিক্ষু চতুর্থ ধ্যান উৎপাদন করেও ভিক্ষুত্ব ছেড়ে দিয়ে গৃহে ফিরে গেল
__________________

মহাকাশ্যপ স্থবিরের জনৈক সার্ধবিহারিক চতুর্থ ধ্যান উৎপাদন করেও মাতুল স্বর্ণকারের গৃহে মনোহর দ্রব্যাদি দেখে প্রলুব্ধ হলো এবং ভিক্ষুত্ব ছেড়ে দিয়ে গৃহে ফিরে গেল। কিন্তু সে এত অলস ছিল যে কোনো কাজ করতে চাইতো না। তখন তাকে ঘর থেকে বের করে দেওয়া হয়। সে তখন পাপমিত্রের সংসর্গে পড়ে চুরিকর্মের দ্বারা জীবিকানির্বাহ করতে লাগল। একদিন সে চুরিতে ধরা পড়লে তাকে পিছমোড়া করে বেঁধে প্রতিটি চৌরাস্তার মোড়ে কশাঘাত করে বধ্যভূমিতে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল। সেই সময় মহাকাশ্যপ স্থবির পিণ্ডপাতের জন্য নগরে প্রবেশ করার সময় তাকে পিছমোড়া করে চৌরাস্তার মোড়ে কশাঘাত করে নগরের দক্ষিণদ্বার দিয়ে বধ্যভূমিতে নিয়ে যেতে দেখতে পেলেন। তখন তার বন্ধন শিথিল করিয়ে তাকে উপদেশ দিয়ে বললেন, "তোমার পূর্বের পরিচিত 'কর্মস্থান' (ভাবনা) পুনরায় মনে মনে স্মরণ কর।" মহাকাশ্যপ স্থবিরের উপদেশ শুনে সে স্মৃতি উৎপাদন করে পুনরায় চতুর্থ ধ্যান লাভ করল।

অতঃপর 'বধ্যভূমিতে নিয়ে গিয়ে তাকে হত্যা করব' বলে তাকে ভয়ভীতি প্রদর্শন করতে লাগল। সে তাতে ভীতও হলো না, সন্ত্রস্তও হলো না। তখন চতুর্দিকে দাঁড়ানো ঘাতকগণ তার দিকে অসিবর্শাদি অস্ত্র উত্তোলন করে ভয় দেখাল। কিন্তু এতেও তাকে ভীত হতে না দেখে তারা 'ওহে, এই লোকটিকে দেখো! অনেক শত অস্ত্রধারী ব্যক্তির মাঝখানে এই ব্যক্তি একটুও ভীত বা কম্পিত হচ্ছে না, কী আশ্চর্য!'-এই কথা বলে আশ্চর্যান্বিত ও স্তম্ভিত হয়ে মহাশব্দ করে রাজাকে সমস্ত ঘটনা জানাল। রাজা এটা শুনে বললেন, 'তাকে ছেড়ে দাও।' তারা তাকে বুদ্ধের কাছে নিয়ে গিয়ে ঐ বিষয়টি জানাল। বুদ্ধ স্বীয় দেহ থেকে আলো বিচ্ছুরিত করে উপদেশ প্রদানকালে একটি গাথা বললেন,

যে নিবনার্থী গার্হস্থ্য-বন্ধনরূপ কামবন থেকে মুক্তির প্রয়াসী হয়ে বন ত্যাগ করে পুনরায় সেই বনের প্রতি ধাবিত হয়, সেই ব্যক্তিকে দেখো, সে মুক্ত হয়েও পুনরায় বন্ধনাভিমুখে ধাবিত হচ্ছে অর্থাৎ বন্ধনের দিকে অগ্রসর হচ্ছে।
অর্থকথায, যে ব্যক্তি মুক্তিলাভ করতে প্রয়াসী হয়ে গার্হস্থ্যজীবনে আলয়-নামক বন ত্যাগ করে স্বাধীন প্রব্রজ্যা লাভহেতু নির্বন হয়েছে, দিব্যবিহার-নামক তপোবনে অধিমুক্ত, দুঃখদুর্দশাপূর্ণ গৃহাবাসবন্ধন-নামক তৃষ্ণাবন থেকে মুক্ত হয়ে পুনরায় দুঃখদুর্দশাপূর্ণ গৃহাবাসবন্ধন-নামক তৃষ্ণাবনের দিকেই ধাবিত হয়, এসো তাদৃশ ব্যক্তিকে নিরীক্ষণ করো। এই ব্যক্তি দুঃখদুর্দশাপূর্ণ গৃহাবাসবন্ধন থেকে মুক্ত হয়ে স্বাধীন প্রব্রজ্যাজীবন লাভ করেও তৃষ্ণাবশে পুনরায় দুঃখদুর্দশাপূর্ণ গৃহাবাসবন্ধনের দিকেই ধাবিত হচ্ছে।

বুদ্ধের এই ধর্মদেশনা শুনে সেই ব্যক্তি রাজপুরুষদের মাঝখানে শূলাগ্রে উপবিষ্ট হয়েও উদয়-ব্যয় ভাবনা করে অনিত্য, দুঃখ ও অনাত্ম-এই ত্রিলক্ষণ জ্ঞান উৎপন্ন করে সংস্কারসমূহকে সম্যকভাবে অবগত হয়ে স্রোতাপত্তিফল প্রাপ্ত হলেন এবং সমাপত্তিরূপে সুখ অনুভব করতে করতে আকাশের দিকে উড়াল দিয়ে আকাশপথেই বুদ্ধের কাছে গিয়ে বুদ্ধকে বন্দনা করে রাজাসহ চারি পরিষদের মধ্যে অবস্থান করে অর্হত্ত্ব প্রাপ্ত হলেন।

রেফারেন্স,
ধম্মপদ- অট্ঠকথা => তণ্হবগ্গো > ৩. বিভ্রান্ত ভিক্ষুর কাহিনী

প্রচার ও কম্পোজ - আর্যসুখ ভান্তে।

20/06/2024
আপনাদের এমন কোনো বৌদ্ধ বিহার পরিচিত আছে কি না যেখানে সংঘ অর্থ কষ্টে বা দায়ক দায়িকের অভাবে কঠিন চীবর দান করতে পারছেন না এ...
18/06/2024

আপনাদের এমন কোনো বৌদ্ধ বিহার পরিচিত আছে কি না যেখানে সংঘ অর্থ কষ্টে বা দায়ক দায়িকের অভাবে কঠিন চীবর দান করতে পারছেন না এবং বিহারের সংস্কার করা সম্ভব হচ্ছে না। বিহারের অবস্থান পাহাড়ি এলাকায় হলেও সমস্যা হবে না তবে গভীর এবং অতী দুর্গম হতে পারবে না। কারণ আমাদের যাতায়াতের বিগ্নীত না হওয়ার জন্য। আশা করি আপনাদের এই পূর্ণ কাজে সহযোগীতা পাবো।
আমাদের সঠিক তথ্যা দিয়ে পূর্ণ কাজে সহযোগীতা করে বৌদ্ধ ধর্মীয় কাজে আরো প্রসার ঘটাবেন।

প্রতিহিংসা, অহংকার,  লোভ,  তৃষ্ণা ভুলে চলুন সুন্দর ও সুস্থ বৌদ্ধ সমাজ গড়ে তুলি। সকল প্রাণী সুখী হউক ও নিবার্ণ লাভ করুক। ...
18/06/2024

প্রতিহিংসা, অহংকার, লোভ, তৃষ্ণা ভুলে চলুন সুন্দর ও সুস্থ বৌদ্ধ সমাজ গড়ে তুলি।

সকল প্রাণী সুখী হউক ও নিবার্ণ লাভ করুক।
জয়তু বুদ্ধ সাসনং

সন্ধ্যায় নন্দনকানুন বৌদ্ধ মন্দিরে
16/06/2024

সন্ধ্যায় নন্দনকানুন বৌদ্ধ মন্দিরে

05/06/2024

জগতে বুদ্ধের উৎপত্তি দুর্লভ

ড. বরসম্বোধি ভিক্ষু

শাস্ত্রে বর্ণিত হয়েছে-‘দুল্লভো বুদ্ধোপ্পাদো লোকস্মিং’ অর্থাৎ জগতে বুদ্ধের উৎপত্তি দুর্লভ। আজ হতে ২৬৪৮ বছর পূর্বে জগতের শাস্তা গৌতম শাক্যমুণি বুদ্ধের জন্ম শাক্য বংশের রাজা শুদ্ধোদন এবং মহারাণী মহামায়ার দাম্পত্য জীবনে বৈশাখী পূর্ণিমার দিনে লুম্বিনী উদ্যানে হয়েছিল। বুদ্ধের বাল্য নাম ছিল সুকিতি বা সিদ্ধার্থ। রাজকুমার সিগ্ধার্থের সাথে কোলীয় রাজকুমারী যশোধরার পরিণয় হয়েছিল। তাঁদের ঘরে জন্ম হয়েছিল কুমার রাহুল। সিদ্ধার্থ গৌতম ২৯ বছর বয়সে মহাভিনিষ্ক্রমণ বা গৃহত্যাগ করেছিলেন। সত্যের সন্ধানে তিনি ছয় বছর পর্যন্ত উগ্র বা কঠোর ধ্যান-সাধনা করেছিলেন। পুণঃ বৈশাখী পূর্ণিমা রাত্রিতে ৩৫ বছর বয়সে অর্থাৎ এখন হতে ২৬১৩ বছর পূর্বে উরুবেলার নৈরঞ্জনা নদী তীরে বোধিবৃক্ষ মূলে সম্বোধি জ্ঞান প্রাপ্ত করার মাধ্যমে সম্যক সম্বুদ্ধ হয়েছিলেন।

সম্যক সম্বোধি লাভ করার পর তিনি ৪৫ বছর পর্যন্ত অর্থাৎ ৮০ বছর বয়স পর্যন্ত লোকের হিত এবং কল্যাণের জন্য ধম্মের উপদেশ প্রদান করেছিলেন। বৈশাখী পূর্ণিমার রাত্রিতে তাঁর অন্তিম উপদেশ প্রদান করে কুশীনগরে ২৫৬৮ বছর পূর্বে মহাপরিনির্বাণ লাভ করেছিলেন।

এরকম করুণানিধান বুদ্ধের উৎপত্তি দুর্লভ হয়ে থাকে এবং তাঁর উৎপত্তি হয় সুখকর। তাঁর বাণী বা দেশনা সদ্ধম্মই হয়ে থাকে। তাই বলা হয়েছে-

‘সুখো বুদ্ধানং উপ্পাদো, সুখো সদ্ধম্ম দেশনা।’

অজ্ঞ, মুর্খ ও অনভিজ্ঞ লোকেরা বুদ্ধকে দুঃখবাদী হওয়ার মিথ্যা আরোপ লাগিয়ে থাকেন। তাঁরা এরকম আরোপ লাগিয়ে থাকেন যে, বুদ্ধ কেবল দুঃখের কথা বলে থাকেন এবং দুঃখের কারণ বলে থাকেন। কারণ ছাড়া দুঃখ উৎপন্ন হয়না। এ অর্থে দুঃখ হল সম্বুদ্ধ দেশনার ভিত্তি। ভগবান মহাকারুণিক বুদ্ধ বলেছেন যে, দুঃখের কারণ যেহেতু রয়েছে, তাহলে দুঃখ নিবারণও রয়েছে এবং দুঃখ নিবারণের উপায়ও রয়েছে। অর্থাৎ দুঃখ ক্ষেত্রকে অতিক্রমকারী সকল লোকের সহজ সুখ উপলব্দ রয়েছে। বুদ্ধের এ সত্য দেশনাকে না বুঝে নাদান অনভিজ্ঞ লোকেরা বুদ্ধের উপর দুঃখবাদী বা নিরাশাবাদী হওয়ার অভিযোগ করে থাকেন।

একজন বৈজ্ঞানিকের মত বুদ্ধ ‘দুঃখ’রূপ রোগকে জেনেছেন, দুঃখ আসার কারণকে জেনেছেন, দুঃখ যে নিরোধ হয় ইহাকে জেনেছেন এবং দুঃখ উৎপন্ন হলে ইহাকে দূর করার উপায় বা মার্গকেও জানার পর পরম সমাধানরূপে মধ্যম মার্গ বা মজ্ঝিম পটিপদা’র পথ আবিস্কার করে দেখিয়েছেন।

রোগ নিবারণকারী বুদ্ধ বলেছেন-

‘আরোগ্য পরমা লাভা, সন্তুট্ঠি পরমং ধনং,
বিস্সাসং পরমং ঞাতি, নিব্বানং পরমং সুখং।’

অর্থাৎ নিরোগ হল পরম লাভ, সন্তোষ হল পরম ধন, বিশ্বাস হল সবচেয়ে পরম বন্ধু এবং নির্বাণ হল পরম সুখ।

ভগবান বুদ্ধ দুঃখের সমূল উৎপাটন করে ভব মুক্তির উপদেশ দিয়েছেন। যার পরিণামে সহজ ও পরম সুখ উপলব্দ হয়ে থাকে। এজন্য ভগবান বুদ্ধ হলেন সুখবাদী। তিনি কখনও দুঃখবাদী নন।

‘সুখো বুদ্ধানং উপ্পাদো’ অর্থাৎ বুদ্ধের উৎপত্তি সুখকর। বুদ্ধের বোধি লাভ সুখকর। বুদ্ধ কে? তা জানতে আমাদের সত্যানুসন্ধান করা প্রয়োজন। একবার দ্রোণ নামক এক ব্রাহ্মণ বুদ্ধের অসাধারণ ব্যক্তিত্ব অবলোকন করে জিজ্ঞাসা করেছিলেন-

‘আপনি কি দেবতা?’
বুদ্ধ বলেছিলেন-‘না, আমি দেবতা নই।’

আবার বললেন-‘আপনি কি গন্ধর্ব?’

উত্তরে বললেন-‘না, আমি গন্ধর্বও নই।’

আবার জিজ্ঞাসা করলেন-‘আপনি কি যক্ষ?’

বুদ্ধ জানালেন-‘না, আমি যক্ষও নই।’

ব্রাহ্মণ পুণঃ জানতে চাইলেন-‘তাহলে আপনি কি মনুষ্য?’

বুদ্ধ উত্তরে বললেন-‘না, আমি অন্যদের মত মনুষ্যও নই।’

তথাগতকে করা প্রত্যেকটা প্রশ্নের এরূপ না বোধক উত্তর শুনে দ্রোণ ব্রাহ্মণ অবাক হয়ে বললেন-‘হে মহান পুরুষ! আপনি বলছেন যে, আপনি দেবতা নন, আপনি গন্ধর্বও নন, আপনি যক্ষও নন, এমনকি আপনি মনুষ্যও নন। তাহলে আপনি শেষ পর্যন্ত কি হন? আপনার পরিচয় কি?’ কিরূপেই আপনাকে জানব?

এর উত্তরে বুদ্ধ প্রকাশ করলেন-‘ব্রাহ্মণ! আমি বাস্তবে দেব, গন্ধর্ব, যক্ষ বা একজন মনুষ্যই হতাম, যদি আমি আমার মনের বিকার বা ক্লেশ বা ময়লা সমূহ সমূলে বিনাশ না করতাম। আমি মনের ময়লা সমূহ বা দূষণ সমূহ শিকড় হতে উৎপাটন করে ফেলে দিয়েছি। এখন পুনরায় বিকার সমূহ বৃক্ষ তৈরী করে অস্তিত্বে আসতে পারবেনা। জলে যেরকম পদ্ম জন্মে, জলেই বৃদ্ধি হয় এবং জল হতে বের হয়ে জলের উপর নিদাগ, নিষ্কলঙ্ক হয়েই প্রষ্ফুটিত হয়ে অবস্থান করে, অনুরূপভাবে হে ব্রাহ্মণ! আমি সংসারে জন্ম নিয়েছি, সংসারে বড় হয়েছি, কিন্তু আমি স্বীয় মনের সমস্ত বিকাররূপ ময়লা সমূহ মূল হতে নষ্ট করে দিয়েছি। এখন সংসার হতে জয়ী হয়ে অবস্থান করছি। এজন্য হে ব্রাহ্মণ! এখন আপনি আমাকে কেবল ‘বুদ্ধ’ বলেই জানবেন। আমি হলাম ‘বুদ্ধ’। বুদ্ধই আমার পরিচিতি।

অহো! সংসার কষ্টে পড়ে রয়েছে। ভগবান বুদ্ধ বলেছেন-‘জাতি চ জীযতি চ চবতি চ উপ্পজ্জতি চ।’

অর্থাৎ জন্ম নেয়, জরা-জীর্ণ হয়, মরে যায়, চ্যুত হয় এবং আবার উৎপন্ন হয়। ইহাই হল সংসারে দুঃখ।

‘ইমস্মিং সতি ইদং হোতি, ইমস্সুপ্পাদা ইদং উপ্পজ্জতি।’

অর্থাৎ ইহা (তৃষ্ণা) হলে এ (দুঃখ) হয়ে থাকে। ইহা উৎপন্ন হলে এরূপ উৎপন্ন হয়ে থাকে। প্রত্যয় হয়ে থাকলে তখন উৎপাদ হয়ে থাকে। কারণ হয়ে থাকলে, তখন পরিণাম উৎপন্ন হয়ে থাকে। অর্থাৎ বীজ হলে ফল উৎপন্ন হয়ে থাকে। তৃষ্ণার কারণে দুঃখ উৎপন্ন হয়ে থাকে। তথাগত বলেছেন-

‘ইমস্মিং অসতি ইদং ন হোতি, ইমস্স নিরোধা ইদং নিরুজ্ঝতি।’

অর্থাৎ ইহা (তৃষ্ণা) না হলে এ (দুঃখ) হয়না। ইহার নিরোধ হলে ইহাও নিরুদ্ধ হয়ে যায়।

তৃষ্ণার নিরোধ কিভাবে হয়? তৃষ্ণাই হল সংসারে সমস্ত দুঃখের মূল। তৃষ্ণার কারণেই রাগ, দ্বেষ এবং মোহ উৎপন্ন হয়ে থাকে। রাগ, দ্বেষ এবং মোহের সমুচ্ছেদ বা প্রহাণ করার জন্য মনুষ্যকে শীল-সমাধি এবং প্রজ্ঞার অনুশীলন করা উচিত। তৃষ্ণার ক্ষয় মানেই হল দুঃখ হতে মুক্তি লাভ করা। ইহাই হল সনাতন বা শাশ্বত সত্য।

ভগবান বুদ্ধ ইহাও বলেছেন যে, চার ধম্ম দ্বারা যুক্ত হয়েই মনুষ্য সুখী হয়ে থাকে।

‘ভিক্ষুগণ! চার ধম্ম দ্বারা যুক্ত মুর্খ, অবুঝ, অসৎপুরুষ নিজেই নিজেকে ক্ষত-বিক্ষত ও আঘাত প্রাপ্ত করে থাকে এবং সে সমস্ত ধম্ম সেবন করতে থাকলে অনেক অপূণ্য সঞ্চয় করে থাকে।

অপূণ্য সঞ্চয়ের সে চার ধম্ম কি কি?

১) চিন্তা না করে, না বুঝে যদি কেহ কোনো নিন্দনীয় পুরুষের প্রশংসা করে থাকে।

২) কেহ না বুঝে, না চিন্তা করে যদি কোনো প্রশংসনীয় পুরুষের নিন্দা করে থাকে।

৩) বিনা চিন্তায়, বিনা ভাবনায় অশ্রদ্ধার স্থানে যদি শ্রদ্ধা উৎপন্ন করে থাকে এবং

৪) বিনা চিন্তায় ও বিনা ভাবনায় যদি কোনো শ্রদ্ধার স্থানে নিজের অশ্রদ্ধা প্রকট করে থাকে।

ভিক্ষুগণ! এ চার ধম্ম দ্বারা যুক্ত মুর্খ, অনভিজ্ঞ, অসৎপুরুষ নিজেই নিজেকে ক্ষত-বিক্ষত ও আঘাত প্রাপ্ত করে থাকে। সে দোষযুক্ত জীবন-যাপন করে থাকে এবং বিজ্ঞজন তার সমালোচনাই করে থাকে।

ভিক্ষুগণ! চার ধম্ম দ্বারা যুক্ত বুদ্ধিমান এবং বিজ্ঞ সৎপুরুষ নিজেই নিজেকে স্বাস্থ্যবান এবং শক্তিবান করে রাখেন। নিজেকে নিজে নির্দোষ মনে করে থাকেন এবং বিজ্ঞজনেরাও তাঁর প্রশংসা করে থাকেন। এ চার ধম্মকে সেবন করলে নিজের জন্য অতিশয় পূণ্যরাশি একত্রিত করে থাকেন।

কোন সে চার পূণ্যোৎপাদক ধম্ম?

১) ভেবে-চিন্তে প্রশংসনীয়দের প্রশংসা করলে।

২) নিন্দনীয়ের নিন্দা করলে।

৩) শ্রদ্ধেয়জনদের প্রতি শ্রদ্ধা উৎপন্ন করলে এবং

৪) অ-শ্রদ্ধেয় জনদের প্রতি অ-শ্রদ্ধা প্রকট করলে।

ভিক্ষুগণ! এ চার ধম্ম দ্বারা যুক্ত পুরুষ নিজেকে নিজে স্বাস্থ্যবান এবং শক্তিবান করে রাখেন। তিনি বহুপূণ্যকে একত্রিত করে রাখেন।’

‘ভিক্ষুগণ! যারা নিন্দনীয় পুরুষের প্রশংসা করে এবং প্রশংসিত পুরুষের নিন্দা করে থাকে, তারা এরকম করতে গিয়ে নিজেদের মুখের মাধ্যমে নিজের জন্য বহু পাপই একত্র করে থাকে। সুতরাং, সে পাপের ফলে তারা সুখময় জীবন ব্যতীত করতে পারেনা।

সংসারে যদি কোনো জুয়ারী নিজের সাথে নিজের সর্বস্ব সহ স্বকীয় সমস্ত ধন হারিয়ে ফেলে, তারপরেও তার পাপ অল্পই মনে করা হয়। অন্য কোনো দুষ্ট পুরুষ তথাগতের প্রতি যদি স্বীয় মন মলিন করে থাকে, তাতে ঈর্ষা, দ্বেষ করে থাকলে তাহাই সবচেয়ে বড় পাপ হয়ে থাকে।

যারা আর্য অর্থাৎ নির্বিকার পুরুষের প্রতি নিজের মন বা বাণী দূষিত করে থাকে, অপশব্দ বলে থাকে, তার যদি লক্ষ বছর পর্যন্ত নরকও লাভ হয়ে থাকে, তারপরেও তা অল্পই হয়ে থাকে।

27/05/2024

মানব কল্যাণে পঞ্চশীলের গুরুত্ব

ড. বরসম্বোধি ভিক্ষু

মহান শিক্ষক ভগবান বুদ্ধ হলেন পৃথিবীর জন্য এক আশীর্বাদ তুল্য। বুদ্ধগণের আবির্ভাব হয় বহুজনের হিত ও সুখের জন্য। তিনি সমগ্র জগতের মহান মার্গদাতা। এজন্য মানব সমাজ তাঁর প্রতি সবসময় অবনত মস্তক। লোকেরা সর্বত্র বৈশাখী পূর্ণিমাকে উপলক্ষ করে তাঁর জয়ন্তী মহাসমারোহে উদযাপন করে থাকে। সমগ্র পৃথিবীর লোকদেরকে তাদের দুঃখ দূর করতে এবং প্রত্যেকের হিত-সুখের প্রসার করতে তিনি পঞ্চশীল মার্গে চলার বার্তা প্রদান করেছেন। তিনি বলেছিলেন-‘বহুজন হিতায় এবং বহুজন সুখায়’ এ লক্ষ্যে পাঁচটি নৈতিক সদাচার নীতি পালন করা অতীব আবশ্যক। নৈতিক সদাচার বিহীন জীবন ও পশুর জীবনের মধ্যে তেমন পার্থক্য থাকেনা। মানুষের মধ্যে শান্তি, শৃঙ্খলা, মানবতা, সদাচার, নৈতিকতা, সদ্ভাব, সম্প্রীতি, প্রেম-মৈত্রী ইত্যাদি স্থাপনে পঞ্চশীলের গুরুত্ব রয়েছে অপরিসীম। তাহলে আসুন, আমরা দেখব যে, পঞ্চশীল কি?

সমগ্র পৃথিবীতে মানব সমাজের বিকাশ এবং নৈতিক উত্থানের জন্য বৌদ্ধ ধম্মের বা বুদ্ধ শিক্ষার পঞ্চশীল অনুশীলন অতীব তাৎপর্যপূর্ণ বলে গণ্য করা হয়। তথাগত গৌতম বুদ্ধ প্রত্যেক মানুষের জন্য পঞ্চশীলের অনুশীলন করা আবশ্যক বলে বর্ণনা করেছেন। সদাচার এবং সংযম অমান্যকারীদেরকে সমাজে চরিত্রহীন বলে গণ্য করা হয়। সদাচার-সচ্চরিত্রের অনুসরণ করা মনুষ্য জীবনের জন্য উচ্চ আদর্শ মান্য করা হয়েছে।

বৌদ্ধ ধম্মে কোনো বর্ণ, জাতি এবং গোত্রে জন্ম নিলে তাতে কোনো ব্যক্তি বড় বা ছোট অথবা উঁচু বা নীচু হয়না। বরং বুদ্ধ নির্দেশিত পঞ্চশীল লাগাতার প্রতিপালন করলেই ব্যক্তি শ্রেষ্ঠ ও আদর্শ মনুষ্য হয়ে থাকে এবং পঞ্চশীল প্রতিপালন না করলে বা তার বিপরীত আচরণ করলেই কোনো ব্যক্তি ছোট বা নিম্ন শ্রেণীর বলে দেখা হয়। ইহাকে কর্মবাদ বলা হয়। বুদ্ধের শিক্ষায় কর্মবাদকে অধিকতর মহত্ব প্রদান করা হয়েছে। তাই গৃহত্যাগী ভিক্ষু-ভিক্ষুণীদের জন্য আর্য অষ্টাঙ্গিক মার্গের অনুসরণ করা অতীব আবশ্যক। কিন্তু পরিবার এবং সমাজে বসবাসকারী সাধারণ গৃহস্থ লোকদের জন্য পঞ্চশীল মার্গের অনুশীলন করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ মান্য করা হয়।

ভগবান বুদ্ধ বারাণসীর নিকটে সারনাথের মৃগবনে ৫২৮ খৃষ্টপূর্বে আষাঢ়ী পূর্ণিমা দিনে ধম্মচক্র প্রবর্তন করতে গিয়ে পাঁচজন পরিব্রাজকদেরকে বলেছিলেন, যে কোনো ব্যক্তি ভাল চরিত্র সম্পন্ন হতে ইচ্ছা করলে, জীবনের বিকাশ ও শান্তি লাভ করতে চাইলে, তার জন্য জীবনের কোনো মানদণ্ড অনুসরণ করা অতীব আবশ্যক। প্রত্যেক ব্যক্তির জন্য জীবনের কোনো মানদণ্ড থাকা অবশ্যই উচিত। যাতে করে সে জীবনের ভাল-মন্দ, সুখ-দুঃখের পরিমাপ করতে সক্ষম হয়। তথাগত বুদ্ধ বলেছেন যে, তাঁর নির্দেশিত পাঁচ প্রকারের যে নীতি বা শীল রয়েছে, তা হল ভাল সদাচরণ, যা হল মনুষ্য জীবনের জন্য ভাল-মন্দ পরিমাপ করার এক অনন্য মানদণ্ড। পঞ্চশীল হল নিম্ন প্রকার-

১) ‘পাণাতিপাতা বেরমণী’ অর্থাৎ কোনো প্রাণীকে হত্যা না করা বা ব্যক্তি দ্বারা কোন স্বার্থ, উদ্দেশ্য বা ইচ্ছার দ্বারা মনুষ্য বা অন্য কোনো প্রাণীকে হত্যা করা হল অনেক মন্দ বা অসৎ কর্ম। হিংসা-বিদ্বেষ, জায়গা-সম্পত্তি, ব্যভিচার এবং অন্যান্য শত্রুতার কারণেও লোকেরা একে অপর ব্যক্তি বা প্রাণীকে হত্যা করে থাকে। এজন্য বৌদ্ধ ধম্মে মনুষ্যকে হত্যা হতে বাঁচতে পঞ্চশীলের এ প্রথম শীলের অনুশীলন অতীব তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করা হয়। ইহা হল মানুষের প্রথম নৈতিক সদাচার। হত্যা হতে বিরতির জন্য মনুষ্যকে সকল জীবের প্রতি অপরিমেয় প্রেম, মৈত্রী, দয়া, করুণা ও ভালবাসা ভাবনা এবং ব্যবহার থাকা উচিত। যদি কোনো ব্যক্তি জীব-হত্যা হতে বিরত থাকার সঙ্কল্প গ্রহণ করে কায়-বাক্য-মনে ঈর্ষা-দ্বেষ ত্যাগ করেছে এবং সে অস্ত্র-শস্ত্রের ব্যবহার ত্যাগ করে দিয়েছে, তাহলে তার অহিংসা ধম্মের অর্থাৎ শীলের প্রতিপালন হয়ে থাকে।

২) ‘অদিন্নদানা বেরমণী’ অর্থাৎ অদত্ত বস্তু গ্রহণ বা চুরি না করা। বুদ্ধের শিক্ষায় চুরি হল এক বড় অপরাধ। এজন্য তথাগত বুদ্ধ বলেছেন যে, প্রত্যেক ব্যক্তির সততার সাথে জীবন-যাপন করা উচিত। কখনও কারো বস্তু বা সামগ্রী চুরি করতে নেই। কখনও কারো সম্মতি ব্যতিরেকে কোনো বস্তু গ্রহণ করা সমীচীন যেমন নয়, তেমনি নেওয়ার প্রচেষ্টা করাও উচিত নয়। পঞ্চশীলের দ্বিতীয় এ শীল বা সদাচারটিও প্রত্যেকের নিষ্ঠার সাথে পালন করা উচিত। যদি কারো কোনো বস্তুর আবশ্যক হলে, তখন তা মালিকের কাছ হতে চেয়ে নেওয়াই বাঞ্ছনীয় এবং মালিকের সম্মতিতেই নিতে হবে। যদি সে বস্তু ফেরত দেওয়ার শর্তে নেওয়া হয়, তাহলে যথাসময়ে তা ফেরত দেওয়াও কর্তব্য। অন্য ব্যক্তির সম্পত্তি লোভ করে আত্মসাতের উদ্দেশ্যেই চুরি, হত্যা, লুঠ এবং অন্যান্য হিংসাত্মক ঘটনা সমূহ ঘটে থাকে এবং তাতে সমাজে নানা অশান্তি সৃষ্টি হয়।

৩) ‘কামেসু মিচ্ছাচারা বেরমণী’ অর্থাৎ বুদ্ধের শিক্ষায় পুরুষ বা স্ত্রী দ্বারা পর পুরুষ বা পর নারীর সাথে যৌন সম্পর্ক স্থাপন করাকেই মুখ্যতঃ ব্যভিচার বলা হয়। অর্থাৎ তৃতীয় শীল ভঙ্গের আরোপ এসে যায়। যে সকল মেয়ে অবিবাহিত এবং সে যদি নিকট সম্বন্ধিত কারো সংরক্ষণে জীবন-যাপন করে, তার সাথে যৌন সহবাস করা হলে এবং যে নারীর বিয়ে হয়ে গিয়েছে, তার সাথে অন্যপুরুষ যদি কামভোগ করে থাকে, তাহলে তাতে ব্যভিচার হয়ে যায়। এরকম আচরণ করলে মনুষ্যের ধন, শরীর এবং সম্মান হানি হয়ে থাকে। এরকম অপরাধ যুক্ত আচরণ দ্বারা সমাজে ব্যক্তি ব্যক্তির মধ্যে ঈর্ষা, দ্বেষ, লড়াই-ঝগড়া, এবং হিংসাত্মক ঘটনা সমূহ বৃদ্ধি পায়। ইহা সমাজের সবচেয়ে বড় অনাচার সমূহের মধ্যে অন্যতম। এজন্য প্রত্যেক ব্যক্তিকে এরূপ অপরাধ কর্ম হতে দূরে থাকা প্রয়োজন।

৪) ‘মুসাবাদা বেরমণী’ অর্থাৎ মিথ্যা কথন হতে বিরত থাকা। ইহা হল বাক্য সম্বন্ধিত শীল বা সদাচার। প্রত্যেক লোকের উচিত সত্য ভাষণ করা এবং সকলকে মিথ্যা বলা হতে সবসময় বিরত থাকা বাঞ্ছনীয়। মিথ্যা বলা হল অনেক বড় অপরাধ। পরিবার হোক বা সমাজ-সভা হোক অথবা পঞ্চায়েত হোক বা রাজ্য পরিষদ হোক বা বিচারালয় হোক, সর্বত্র ব্যক্তিকে পক্ষপাত বিহীন কোনো ঈর্ষা, দ্বেষ, ভয় এবং স্বজন প্রীতি বশতঃ নিজের বা অন্য কারো জন্য লাভ-ক্ষতি চিন্তা না করে সর্বদা সত্য ভাষণ করা উচিত। এরকম স্থানে মিথ্যা বললে অন্য কোনো ব্যক্তির শাস্তি, হানি এবং পরস্পরের মধ্যে শত্রুতা সৃষ্টি হয়। বৃথা কথা বললে, কটু কথা বললে এবং ভেদমূলক বাক্য বললেও অসত্য বাক্য হয়ে থাকে। এগুলির কারণেও সমাজে অশান্তি প্রসারিত হয়। এজ বুদ্ধের শিক্ষায় সত্য এবং প্রিয় বলা অনেক বড় সদাচার মান্য করা হয়। এরকম সত্য বলা হলে সমাজের মধ্যে এবং লোকদের মধ্যে পরস্পরের মধ্যে প্রেম, ভ্রাতৃত্ব এবং শান্তি-শৃঙ্খলা স্থাপন হয়ে থাকে।

৫) ‘সুরা-মেরেয্য-মজ্জ-পমাদট্ঠান বেরমণী’ অর্থাৎ মদ্যাদি নেশা জাতীয় পদার্থের সেবন না করা। সুরা, মদ ইত্যাদি নেশা জাতীয় বস্তু ত্যাগ করাও হল এক বড় সদাচার বা শীল। বুদ্ধের শিক্ষায় ইহারও অত্যন্ত গুরুত্ব রয়েছে। নেশাপান করলে মানুষের মন এবং চিন্তাশক্তি যুক্তিসঙ্গত, বিবেক প্রসূত এবং জ্ঞান পূর্বক থাকেনা। ব্যক্তির বুদ্ধি-বিবেক এবং ব্যবহার অসামান্যরূপে গড়বড় হয়ে যায়। নেশাপান করলে চুরি, লুঠপাট, মিথ্যা, হত্যা, এবং ব্যভিচার ইত্যাদি করার প্রবৃত্তি উৎপন্ন হয়ে থাকে। যার কারণে পরিবার এবং সমাজকে ভারী ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয় এবং ব্যক্তিকে শারীরিকভাবে, আর্থিকভাবে এবং সম্মানের হানির স্বীকার হতে হয়। নেশা জাতীয় ব্যবসা হতেও অন্য লোকদের এবং সমাজের ভারী ক্ষতি হয়ে থাকে। এজন্য বুদ্ধের শিক্ষায় নেশাদ্রব্যকে গ্রহণ করা, সেবন করা এবং সেগুলির ব্যবসা করাকে এক বড় অপরাধ গণ্য করা হয় এবং এগুলি হতে বিরত থাকাকে এক অনেক বড় সদাচার বিবেচিত হয়।

এরূপ উপযুক্ত মানদণ্ডের আধারে প্রত্যেক ব্যক্তি নিজের জীবনে অনুধাবন করতে পারে যে, সে সত্য এবং ন্যায়ের দিকে অগ্রসর হচ্ছে, না পতন বা অপরাধের দিকে অগ্রসর হচ্ছে। এরূপ উপরিউক্ত মানদণ্ডের ভিত্তিতে আমরা নিজের সমাজ এবং রাষ্ট্রের মূল্যাঙ্কন করতে পারি যে, তার নাগরিকদের নৈতিক উত্থান এবং বিকাশের স্তর কতটুকু। উপরিউক্ত ধম্ম এবং নৈতিক সদাচার পালন না করলে ব্যক্তি এবং সমাজের পতন হয়ে থাকে। সদাচার হতে পতন হওয়া বহুসংখ্যক নাগরিকদের কারণেই সমাজ এবং রাষ্ট্রের পতন হয়ে থাকে।

পৃথিবীর অনেক বিদ্বান সমাজ বিজ্ঞানীরা এ সম্পর্কে পুস্তকাদি প্রণয়ন করে বিস্তৃতভাবে লিখেছেন যে, পৃথিবীতে প্রত্যেক স্থানে দু’ প্রকারের মন্দ এবং পতিত লোক হয়ে থাকে। যাদের জীবনে অবশ্যই কোন না কোন মানদণ্ড দেখা যায়। প্রথম প্রকারের লোক নিজের পতন বা পতন হওয়ার অবস্থা হতে সবসময় উঠে দাঁড়ানোর চেষ্টা করে থাকে। কিন্তু কিভাবে উপরে উঠতে হবে সে রাস্তা জানতে পারেনা।

দ্বিতীয় প্রকারের পতিত বা মন্দ ব্যক্তি হল যাদের জীবনে কোন প্রকার মানদণ্ড থাকেনা। তারা পতিত বা পতন হতে থাকলেও জানেনা যে তাদের পতন হয়েছে বা পতন হতে যাচ্ছে। এজন্য এরকম লোক উপরে উঠার কোনো প্রয়াসই করতে পারেনা। এরকম লোক নিজের স্তর হতে নীচে নেমে পড়লেও বিশেষ কিছু তাদের উপলব্দি হয়না, যা তাদের জীবনে কোনো স্তরই নয়।

তথাগত বুদ্ধ বলেছেন যে, প্রত্যেক মনুষ্যের নিজেকে জিজ্ঞাসা করা উচিত যে, পঞ্চশীল পালন করলে ব্যক্তির কি কল্যাণ হয়, না অকল্যাণ? সমাজের জন্যও এ শীল কল্যাণকারী, না অকল্যাণকারী? যে সকল লোক এ সদাচার সমূহ পালন করেনা, তাদের চার প্রকারের হানি হয়ে থাকে। যেমন-

১) তাদের ধন-সম্পত্তির অনেক ক্ষতি হয়ে থাকে।
২) তাদের সম্পর্কে বহু অকীর্তি, অযশ ও অসম্মান প্রসারিত হয় এবং অন্যদের দৃষ্টিতে তাদেরকে হীন-নীচ দেখা হয়।
৩) তারা যে কোনো সভা, পরিষদ বা সমূহে বড়ই অশান্ত মন, সঙ্কোচ এবং ভয়ভীত হয়ে পেছনে উপস্থিত হয় এবং
৪) মৃত্যুর সময় তারা শান্তিতে মরতে পারেনা এবং মৃত্যুর পরেও তারা দুঃখ ভোগ করে থাকে।

এভাবে স্পষ্ট হচ্ছে যে, মনুষ্য এবং মনুষ্য সমাজের জন্য পঞ্চশীলের সীমাহীন গুরুত্ব রয়েছে। পঞ্চশীল হল সকল লোকের জন্য খুবই হিতকারী ও লাভদায়ক। এরূপ সদাচার পালন করলে কোনো বর্ণ, জাতি, বিশ্বাস বা আস্থায় ভেদ-বিভেদ থাকেনা এবং আত্মা-পরমাত্মা, ঈশ্বর-পরমেশ্বর, স্বর্গ-নরক, তন্ত্র-মন্ত্র, পূজা-অর্চনা ইত্যাদি নানা প্রকার কাল্পনিক কর্মকাণ্ড মানারও আবশ্যকতা হয়না। ইহা হল মনুষ্যের বিকাশের জন্য একেবারেই যথার্থ এবং ভাল কর্মের ভিত্তিতে কর্মবাদ, যার প্রভাবে ভাল, সদ্গুণ এবং লাভান্বিত হওয়ার অনুভব করা যায় ও তা স্বচক্ষে দৃশ্যমান হয়। এজন্য বৌদ্ধ পরম্পরায় পঞ্চশীলকে ধম্মের সংজ্ঞা প্রদান করে বলা হয়েছে-‘পঞ্চসীলং ধম্মং সাধুকং সুরক্খিতং কত্বা অপ্পমাদেন সম্পাদেথ।’ অর্থাৎ পঞ্চশীল ধম্মকে অপ্রমাদের সাথে উত্তমরূপে সম্পাদন করো।

ধাম্মিকদের হীন মানসিকতাড. বরসম্বোধি ভিক্ষুভগবান বুদ্ধ ছিলেন পৃথিবীর গতানুগতিক ধারা হতে সম্পূর্ণ আলাদা একজন সত্তা, যিনি প...
09/05/2024

ধাম্মিকদের হীন মানসিকতা

ড. বরসম্বোধি ভিক্ষু

ভগবান বুদ্ধ ছিলেন পৃথিবীর গতানুগতিক ধারা হতে সম্পূর্ণ আলাদা একজন সত্তা, যিনি প্রবাহমান স্রোতের বিপরীত মুখী চলেছেন। মৃত মাছই স্রোতের সাথে ভাসে। জীবিত মাছ কিন্তু স্রোতের বিপরীতে চলতেই প্রয়াস করে থাকে। অনুরূপভাবে বুদ্ধ লোভ-দ্বেষ-মোহাচ্ছন্ন মানুষের মত প্রবাহমান স্রোতে গা না ভাসিয়ে অলোভ-অদ্বেষ ও অমোহ পথেই কায় বিবেক, বচী বিবেক ও চিত্ত বিবেক সম্পন্ন হয়ে সতত জীবন ব্যতীত করেছেন।

বুদ্ধের কোনো পরিগ্রহ বা ভবিষ্যতের জন্য সঞ্চয়ের উদ্দেশ্যে সংগ্রহ থাকতনা। পিণ্ডপাত করে যেদিন যা পেয়েছেন, সেগুলিকে তিনি শুদ্ধ ও ধম্মতঃ লব্দ আহার ভেবে সন্তুষ্ট হয়ে সজাগতা সহকারে গ্রহণ করেছেন। কোনো প্রকারের চিত্ত বিকারের প্রশ্নই থাকতনা। এজন্য তিনি সারাজীবন শত্রুর মধ্যেও অবৈরী হয়ে দিব্যি সুখে বিহার করেছেন। তিনি কাউকে তাঁর আহারের জন্য আগাম সূচনাও দেননি, চীবরের জন্যও চাহিদা প্রকাশ করেননি, বাসস্থান বা বিহার নির্মাণ করিয়ে দেওয়ার জন্যও অনুরোধ করেননি এবং ভৈষজ্যাদি সহ অন্যান্য সামগ্রী পাওয়ার জন্যও ইচ্ছা প্রকাশ করেননি। লোকেরা শ্রদ্ধায় যেদিন যা দিয়েছেন অর্থাৎ যথালাভে তিনি পরম তুষ্টি লাভ করেছেন এবং দাতাদেরকে তাঁদের প্রদত্ত দানের জন্য কৃতজ্ঞতা পূর্বক মঙ্গল কামনা করেছেন। দান দেওয়ার উপকারিতা-অপকারিতা বর্ণনা করলেও তিনি নিজেকে দেওয়ার জন্য চাহিদা প্রকাশ করে কোনোদিন কাউকে আদেশ প্রদান করেননি। এমনকি ধম্মদেশনা করে প্রাপ্ত ভোজনকেও তিনি বিনিময়রূপে দেখেছেন এবং তা ধম্মতঃ নয় বিবেচনা করে প্রত্যাখ্যান করেছেন। সবসময় তিনি ধম্মতঃ লব্দ প্রত্যয়ের মাধ্যমে শুদ্ধ, নির্মল ও সম্যক জীবিকা রক্ষার দিকে সর্বদা সচেতন থাকতেন।

তিনি যেমন অপরিগ্রহী হয়ে শুদ্ধ জীবিকার মাধ্যমে জীবন-যাপন করেছেন, তেমনি তাঁর শিষ্যদেরকেও তিনি ধম্মানুসারে জীবন-যাপনের উপদেশ দিয়েছেন। প্রত্যয়াদি লাভের বিনিময়ে কারো দাসত্ব বৃত্তি করে একস্থানে অবস্থান করা বুদ্ধের শিক্ষা নয়। প্রত্যয়াদি লাভের আকাঙ্খা উৎপন্ন করে কারো কাছ হতে চাওয়াও ভিক্ষুদের জন্য অধম্মতঃ জীবিকা হয়। তাই বুদ্ধ বলেছেন-

‘ন অত্তহেতু ন পরস্স হেতু
ন পুত্তমিচ্ছে ন ধনং ন রট্ঠং।
ন ইচ্ছেয্য অধম্মেন সমিদ্ধিমত্তনো,
স সীলবা পঞ্ঞবা ধম্মিকো সিযা। (ধম্মপদ)

অর্থাৎ যিনি অধম্মতঃ নিজের জন্য কিংবা পরের জন্য পুত্র, ধন বা রাষ্ট্র কামনা করেননা, এমনকি নিজের সমৃদ্ধির জন্যও জাগতিক বস্তু সমূহ কামনা করেননা, তিনিই সত্যিকার অর্থে শীলবান, প্রজ্ঞাবান এবং ধাম্মিক বলে কথিত হন।

বুদ্ধের কথায় স্পষ্ট দেখা যায় যে, শুদ্ধ জাবিকা নির্বাহী ভিক্ষুরা নিজেদের জন্য যেমন লাভ-সৎকার কামনা করতে পারেননা, তেমনি অন্যের জন্যও লাভ কামনা করতে পারেননা। উভয়ই হল ভিক্ষুর জন্য অনৈতিক। বুদ্ধের ভাষায় তাঁরা শীলবান, প্রজ্ঞাবান এবং ধাম্মিক নন বলে অভিহিত হয়েছে।

ভগবান বুদ্ধ গৃহস্থদেরকে পরিবার-পরিজন, স্ত্রী-পুত্র-কন্যা ও জ্ঞাতী-স্বজন রক্ষার জন্য সদুপায়ে পরিশ্রম করে কুশলতার সাথে পর্যাপ্ত ধন উপার্জন করতে বলেছেন। ধন না হলে গৃহস্থ জীবন সর্বদিকে ব্যর্থ বলেছেন (সব্ব সূঞ্ঞো দলিদ্দকো)। অর্থাৎ দারিদ্রতা হল অভিশপ্ত জীবন। আবার এ ধনকে বুদ্ধ ভিক্ষু বা ব্রহ্মচর্য জীবনের জন্য অনিষ্টের কারণ বলে উল্লেখ করেছেন। ধন-সম্পদ, গাড়ি-বাড়ি, অর্থ-বিত্ত নাম-যশ, খ্যাতি-প্রতিপত্তি ইত্যাদি গৃহস্থ জীবনের অলঙ্কার ও সৌভাগ্য সূচক হলেও ভিক্ষু জীবন বা ব্রহ্মচর্য জীবনের জন্য সেগুলি অলঙ্কার বা সৌভাগ্য নয়। ভিক্ষু জীবনের সম্পদ, সৌভাগ্য বা অলঙ্কার হল তাঁর শীল, সমাধি ও প্রজ্ঞা। যিনি যত বেশী শীলবান, প্রজ্ঞাবান ও ধ্যানী হবেন, তিনি ততবেশী সমৃদ্ধশালী ও আধ্যাত্মিক সম্পদশালী হবেন।

ভগবান বুদ্ধ রাজৈশ্বর্য ও বিত্ত-বৈভবকে তুচ্ছ মনে করে সবকিছু ত্যাগ করে শান্তি ও সুখের আশায় বৈরাগ্য জীবনকে বরণ করে নিয়েছিলেন। অরণ্যে, বৃক্ষমূলে বা শূণ্যাগারে সঞ্চয়হীনভাবে চারিকা করতে করতে ভগবান বুদ্ধ সাধারণভাবে জীবন-যাপন করেছেন। সম্পদ বলতে কেবল একটি অষ্টপরিস্কার। নিত্য ব্যবহার্য বস্তু সামগ্রী যে যা পেতেন, সেখানেই রেখে আসতেন সঙ্ঘের ব্যবহারের জন্য। সংগ্রহ বিহীন অবস্থায় অতীব বিবেকজ প্রীতি সুখ ও শান্তিপূর্ণভাবে সমগ্র জীবন অতিবাহিত করে কোনো রকমের শারীরিক বেদনা, হা-হুতাশ, উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা ব্যতীত শান্তিপূর্ণভাবে বৃক্ষের নীচেই সজ্ঞানে ধ্যানস্থ হয়ে তিনি পরিণত বয়সে মহাপরিনির্বাণ প্রাপ্ত হয়েছিলেন।

বুদ্ধ জীবনের সমস্ত কর্তব্য কর্মের অবসান করে কৃত্যাকৃত্যের ঊর্ধে উঠে তিনি পরিণত বয়সে জাগতিক সত্যকে মেনে অনুপাদিশেষ নির্বাণে উপনীত হয়েছিলেন। বুদ্ধত্ব লাভের পর ভিক্ষু-ভিক্ষুণী-উপাসক-উপাসিকা পরিষদ গঠন এবং তাঁদেরকে সদ্ধম্মে প্রতিষ্ঠিত করার যে প্রতিশ্রুতি তিনি দিয়েছিলেন, তা যখন তিনি পূর্ণ করেছিলেন তখনই তিনি কৃত্য সমাপ্ত হয়েছে মনে করলেন। পরিষদ কিভাবে টিকে থাকবে তজ্জন্য তিনি ধম্ম-বিনয় রেখে গিয়েছেন। তা যতদিন চারি পরিষদ আন্তরিক হয়ে অনুসরণ করবেন ততদিন নিজেদের মঙ্গল সাধন করতে পারবেন। তজ্জন্য বুদ্ধ চিন্তিত ছিলেননা। বড়ই শান্তিতে তিনি মহাপরিনির্বাণ লাভ করেছিলেন।

আমরা যদি লক্ষ্য করি দেখব যে, শান্তিতে মৃত্যু বরণ করতে দেখা যায় পাখিদেরকে। পাখীদের কোনো পরিগ্রহ বা সঞ্চয় থাকেনা। সকাল সকাল নিদ্রা যায় এবং সকাল সকাল জেগে উঠে। যেদিন যা পায়, তা খেয়েই জীবন-যাপন করে থাকে। সেকারণে পাখিরা প্রায় নীরোগ থাকে এবং নিশ্চিন্ত হয়ে শান্তিতে ঘুমানোর মত মৃত্যু বরণ করে থাকে। মৃত্যুর সময় কোনো রকমের অস্থিরতা, চঞ্চলতা কিংবা ছটপটানি থাকেনা। অনেক প্রকারের কামনা-বাসনা ও চাহিদা অপূর্ণ থাকায়, অনেক সঞ্চয় রেখে যেতে হয় বলে সাধারণ মানুষ হা-হুতাশ, ছটফটানি, অস্থিরতা ক্রন্দন ব্যতীত পাখির মতও শান্তিতে মৃত্যু বরণ করতে পারেনা। বিশেষ করে অধিকাংশ মানুষের অফুরন্ত চাহিদা, অতৃপ্ত তৃষ্ণা অবশিষ্ট থাকার কারণে অশান্ত ও অস্থির হয়ে জীবন ব্যতীত করতে হয় এবং মানুষের মৃত্যুর সময়েও তার প্রতিফলন লক্ষ্য করা যায়।

ভগবান বুদ্ধ কখনও চাননি যে, তাঁর আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে পরিবার-পরিজন ও গৃহত্যাগ করে আসা ভিক্ষুরা তাঁর নামে বিহার, প্রতিষ্ঠান ও তাঁর মূর্তি প্রতিষ্ঠা করার জন্য গৃহস্থের দ্বারস্থ হয়ে বা গৃহস্থের মুখাপেক্ষী হয়ে চাঁদার রসিদ নিয়ে অর্থ সংগ্রহ করুক। ইহা বুদ্ধ ভাবনারই পরিপন্থী। আজকাল অপ্রিয় হলেও সত্য ও বাস্তব যে, বুদ্ধ যা চাননি, তাহাই অনুসরণ করে চলেছেন আমাদের অনেক ভিক্ষুরা। তাঁরা বুদ্ধের নামে বিভিন্ন অজুহাতে অর্থ ও বিভিন্ন রকমের দান চেয়ে চেয়ে গৃহস্থের জীবনকে জ্বালাময় করে তুলছেন। দিন দিন লাগামহীন চাহিদা ফুলে-ফেঁপে হিমালয় সম স্ফীত হচ্ছে। গৃহস্থের মত একটা পূর্ণ হওয়ার সাথে সাথে আরও বৃহত্তর চাহিদার পরিকল্পনা করতে থাকেন। যাঁদের মন-মস্তিস্কে সব সময় দান তথা অর্থ সংগ্রহের চেতনা মাথায় থাকে, তাঁদের অনাসক্ততার জন্য ধ্যানচিত্ত আসবে কিভাবে? অধিকাংশ ভিক্ষুদেরকে বুদ্ধের নামে বিভিন্ন প্রজেক্টের নামে অর্থ সংগ্রহের মত অতীব নিন্দনীয় ও হীন কর্মেই লিপ্ত রয়েছেন দেখা যায়। যে অর্থ সম্পদকে বুদ্ধ দুঃখ বলে ত্যাগ করেছেন, অর্থ ও সম্পদ লাভের চাহিদাকে তৃষ্ণা অর্থাৎ দুঃখের কারণ উল্লেখ করে দূরে থাকতে নির্দেশ দিয়েছেন, বুদ্ধের অনুসারী হয়ে গেরুয়া বস্ত্র পরিধান করেই আমরা সর্বত্যাগী সে বুদ্ধের নামেই দেদার অর্থ চেয়ে নেওয়ার চাহিদার মত অপকর্মে লিপ্ত রয়েছি। সুতরাং এগুলি হল ধম্মের নামে কেবল ধান্ধা ছাড়া আর কিছুই নয়। এগুলি দ্বারা যদিও আমরা লোকের উপকার করছি বলে প্রচার করছি, সত্যিকার অর্থে লোভ-দ্বেষ-মোহ গ্রস্থ লোকের জন্য ভিক্ষুদের ইহা হল অত্যন্ত হীন এবং নিকৃষ্ট কাজ। ভিক্ষুরা যদি অলোভ, অদ্বেষ ও অমোহ হয়ে বুদ্ধের মত নির্মোহের, নিবৃত্তির ও নৈষ্ক্রম্যের পথে সাধারণকে উদ্বুদ্ধ করতে পারতেন, সেটাই হত সবচেয়ে উত্তম উপকার, উত্তম লাভ ও উত্তম সহায়তা।

বর্তমানে বুদ্ধের নামে বা বুদ্ধের নাম বিক্রি করে সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানের নামে যে অর্থ আমরা সংগ্রহ করছি, তার পরিণতি শান্তি, সৌহার্দ্য, সম্প্রীতি রক্ষার পরিবর্তে বেশী করে অশান্তি, অনৈক্য, মান-অভিমান ও ঝগড়া-বিবাদই সৃষ্টি করছি। তাতে অধিকাংশ ক্ষেত্রে আত্মহিত ও পরহিত উভয়ই বিঘ্নিত হচ্ছে। এগুলির মাধ্যমে অনন্ত দুঃখে পতিত হচ্ছি সকলে।

সেদিন দেখলাম কেউ একজন লিখেছেন, অমুক প্রখ্যাত পণ্ডিত ভিক্ষুর মুখাবয়ব ও চেহারা ইদানীং খুব বেশী মলিন দেখা যাচ্ছে। এজন্য খুব বেশী উদ্বিগ্নতা বোধ করছেন তিনি। অনেক ভিক্ষুর এরকম চেহারা মলিন হওয়ার মধ্যে বুদ্ধের অকাট্য সত্য বাণীরই প্রতিফলন দেখা যায়। বুদ্ধ বলেছেন-‘যে সর্বদা চণ্ড অর্থাৎ ক্রোধী স্বভাব বিশিষ্ট, অপরের অহিত-অকল্যাণ কামনা করে, অন্যের অনিষ্ট ও ক্ষতি কামনা করে, অন্যের সাথে বৈরীতা আচরণ করে, তার মুখ বর্ণ মলিন ও ফ্যাকাশে থাকবে। আর যিনি সর্বদা শত্রু-মিত্র নির্বিশেষে সকলের প্রতি ক্ষমাশীল, মৈত্রীকামী, মৈত্রী বিহারী, মৈত্রী ভাবনায় রত থাকেন, তাঁর মুখবর্ণ সর্বদা উজ্জ্বল ও দীপ্তিমান থাকে (মুখ বণ্ণো বিপ্পসীদতি)। ইহা হল ধম্ম বা ধম্ম অনুশীলনের প্রভাব। কার অন্তরে কতটুকু মৈত্রী, ক্ষমা ইত্যাদি মহান গুণ ও গুণের অনুশীলন রয়েছে, তা মুখবর্ণের মধ্যেও প্রকাশ পায়।

বুদ্ধ বলেছেন-আমার বাণী কিংবা আমাকে রক্ষার জন্য লোকের কাছ হতে অর্থ সাহায্য যারা কামনা করে তারা সত্যিকার অর্থে বুদ্ধের কোনো উপকার করেনা। তারা এগুলিকে একটা ধান্ধা বা জীবিকাই বানিয়ে নেয়। অর্থ দ্বারা বুদ্ধ রক্ষিত হয়না বা অর্থ ও প্রতিষ্ঠানের মধ্যে বুদ্ধ নাই। বুদ্ধ জীবিত থাকেন নির্লোভ, নির্মোহ, নির্দোষ ও নিষ্কলুষ আচরণের মধ্যে। বুদ্ধের শিক্ষাও দীর্ঘস্থায়ী থাকে নির্মল ধম্ম অনুশীলনের মাধ্যমে। ইহাই প্রকৃত ও বাস্তব বুদ্ধ পূজা। আমরা বর্তমানে বুদ্ধকে পাওয়ার চেষ্টা বা রক্ষার করার চেষ্টা করছি অর্থ, ক্ষমতা ও পদ-প্রতিষ্ঠা গড়ার মত ভ্রান্ত পথের মাধ্যমে। এভাবে বুদ্ধ রক্ষিত হবেনা।

Address

Bhodderhat , Chandgho , Chattogram
Chittagong
4400

Telephone

+8801833087557

Website

Alerts

Be the first to know and let us send you an email when বুদ্ধ -Buddha posts news and promotions. Your email address will not be used for any other purpose, and you can unsubscribe at any time.

Contact The Business

Send a message to বুদ্ধ -Buddha:

Videos

Share

Category

Nearby media companies