23/08/2024
‘ভাতের’ পণ্য বয়কট নিয়ে আলাপ হচ্ছে দেখে, আমার একটা অভিজ্ঞতা শেয়ার করছি। সপ্তাহখানেক আগে আমি শ্যাম্পু কিনতে বাজারে গেছি। পাইকারি বাজারের একগাদা দোকান আছে আরডিএ মার্কেটের পাশে। অনেকগুলো দোকান ঘুরতে হয়েছে সেদিন, কেবল ‘ভাতের’ উৎপাদিত শ্যাম্পু নিব না বলে। আমি যখন বলছি, ‘ভাতের’ পণ্য নিব না; তখন কেউ কেউ অবাক হলেন, আবার কেউ কেউ হলেন বিরক্ত! একটা দোকানেও না পেয়ে শেষে আরডিএ মার্কেটের এক শপ থেকে আমাদের দেশে উৎপাদিত মেরিল শ্যাম্পু নিয়ে আসলাম। বয়কটের ব্যাপারটা যে আরও ব্যাপকভাবে ও বড়ো পরিসরে হওয়া দরকার, সেটা বোঝানোর জন্য এই ছোট্ট ঘটনা উল্লেখ করলাম।
‘ভাত’ নামক দেশটাকে তো আমরা ছোটোবেলা থেকেই অত্যন্ত অপছন্দ করি। কিন্তু পণ্য বয়কটের ব্যাপারে তেমন সচেতন ছিলাম না। পরবর্তীতে আমি নিজে থেকে বয়কট করেছি এদেরকে অনেক কয় বছর হলো। তারপরেও আমার ভুল হতো অনেকসময়, কিংবা যাচাই করতে অসুবিধা হতো, পণ্যটা দেশী, না ‘ভাতীয়’! পিনাকী সাহেব যখন ভাতীয় পণ্য বয়কটের ডাক দিলেন, তখন ‘দেশিতো (desh*to)’ নামের একটা অ্যাপের সন্ধান পেলাম। যারা অ্যাপটা তৈরি করেছেন, তাদেরকে ধন্যবাদ জানাই। এটা আমার জন্য যাচাই করাকে সহজ করে দিয়েছে। আলহামদুলিল্লাহ। [অ্যাপের লিংক : https://play.google.com/store/apps/details?id=org.desh*to.user]
যারা এদেশের মুসলিমদের চরম দুশমন হিসেবে স্বীকৃত, যুগের পর যুগ ধরে আমাদেরকে বিপদে ফেলতে আগ্রহী, তাদের পণ্য বয়কট করা আমার নিজের গরজ ও দায়িত্ব মনে করি আমি। সৌদি ফতোয়া বোর্ডের সাবেক সদস্য আল্লামা আব্দুল কারিম আল-খুদাইর হাফিজাহুল্লাহ পণ্য বয়কট নিয়ে একটা কথা বলেছিলেন, “আপনার পিতা বা পরিবারের সাথে যাদের দুশমনি আছে, আপনি যদি তাদের পণ্য বয়কট করেন, তাহলে কেউ কি আপনাকে দোষারোপ করবে? তাহলে তার ব্যাপারটা কেমন হতে পারে, যে সকল মুসলিমদের সাথে তার দুশমনি জাহির করেছে?!” [দ্রষ্টব্য : https://youtu.be/JR6Jq2CeCUQ?si=ca__xHgI4dLhY7Qi]
অনেকে বলতে পারেন, সম্মিলিত ও কার্যকরী পদক্ষেপ ছাড়া একা একা পণ্য বয়কট করে কোনো লাভ আছে? আমি মনে করি, আছে। আমার অন্তর শান্তি পাবে, আল্লাহদ্রোহী দুশমনদের প্রতি আমার চরম ঘৃণার এই বহিঃপ্রকাশের কারণে আমি ইসলামের ‘ওয়ালা ও বারা’-র নীতি বাস্তবায়নের সওয়াব পাব ইনশাআল্লাহ। আল্লামা সুলাইমান আর-রুহাইলির কোনো লেখা বা অডিয়ো ক্লিপে আমি এরকমটা জেনেছি, কেউ ব্যক্তিগতভাবেও যদি দুশমন kaফিরদের প্রতি ঘৃণায় তাদের পণ্য বয়কট করে, তাহলে সে সওয়াব পাবে। এই কথার রেফারেন্স আমার কাছে আপাতত নেই, পেলে দিব, ইনশাআল্লাহ।
কুয়েতের সালাফি আলিম শাইখ উসমান আল-খমিস হাফিজাহুল্লাহ গাজ্জায় আগ্রসনের ব্যাপারে বলেছিলেন, “একজন মুসলিম গাজ্জার ভাইদের জন্য সর্বনিম্ন যেই কাজটি করতে পারে, সেটা হলো তাদের প্রতি জুলুমকারী রাষ্ট্র এবং তাদেরকে পৃষ্ঠপোষণকারী রাষ্ট্রগুলোর পণ্য বয়কট করা।” [দ্রষ্টব্য : https://youtu.be/vVD0ACBHv6Y?si=0wjiy_zJ2fEf8J9u]
শাইখ অন্যত্র বলেছেন, “আমি বলছি না, ihuদি ও জাionবাদীদেরকে প্রকাশ্যে পৃষ্ঠপোষণকারী রাষ্ট্রগুলোর পণ্য কেনা হারাম। কিন্তু আমি তাদেরকে উৎসাহ দিই, যারা আত্মসম্মানবোধ ও মুসলিম ভাইদের প্রতি ভালোবাসার কারণে এসব রাষ্ট্রের পণ্য কেনা থেকে বিরত থাকে।” [দ্রষ্টব্য : https://youtube.com/shorts/r3AfkAfLHsU?si=18Q7NQw5ijWpL4V-]
সৌদি আরবের সাবেক চিফ জাস্টিস এবং সর্বোচ্চ উলামা পরিষদের সাবেক সদস্য ইমাম সালিহ আল-লুহাইদান বলেছেন, “মুসলিমদের প্রতি জুলুমকারীদের পণ্য বয়কটের ব্যাপারে মুসলিমরা একজোট হলে, সেটা এক ধরনের jiহাদ হিসেবে বিবেচিত হবে।” [দ্রষ্টব্য : https://youtu.be/DYEBSKjxwxo?si=Px5Mjjt1C1105Afk]
এখন অনেক সালাফি ভাই বলতে পারেন, ‘শাসকের অনুমতি ছাড়া কোনো পণ্য বয়কট চলবে না।’ জি, আমরা জানি, ভাই, এরকম মত কিছু সালাফি বিদ্বান দিয়েছেন। আমি অধম ইমাম সালিহ আল-ফাওজানের ফতোয়া দেখেছি, তাঁর মতে শাসকের অনুমতি ছাড়া কাফিরদের পণ্য বয়কট করা যাবে না। এছাড়াও আল্লামা জাইদ আল-মাদখালি রাহিমাহুল্লাহ, আল্লামা সালিহ আস-সুহাইমি, আল্লামা মুহাম্মাদ বিন হাদি আল-মাদখালি প্রমুখ থেকে এরকম ফতোয়া আছে।
কিন্তু এর বিপরীত ফতোয়াও উলামাদের থেকে আছে। ইমাম সালিহ আল-লুহাইদান রাহিমাহুল্লাহ উল্লেখ করেছেন, “শাসকের অনুমতি ছাড়া কাফিরদের পণ্য বয়কট করা যাবে না, এমন ধরনের কথা সঠিক নয়।” [দ্রষ্টব্য : https://youtu.be/T3_coqWjxZA?si=N7usd6dHZQgZUGEd]
ইমাম আলবানি রাহিমাহুল্লাহ নিজে বুলগেরিয়ার পণ্য বয়কট করার ডাক দিয়েছিলেন, কারণ সেসময় তারা মুসলিমদেরকে মেরে ফেলছিল। এমনকি তিনি বলেছিলেন, তাদের পণ্য বয়কট করা ওয়াজিব। [দ্রষ্টব্য : https://youtu.be/MxdU22mv5Kc?si=Udj7j0wgIh5CEbQJ]
সৌদি আরবের হাতেগোনা কয়েকজন বিশিষ্ট কিবার উলামার অন্যতম আল্লামা আব্দুল আজিজ আর-রাজিহি হাফিজাহুল্লাহ তাঁর ফতোয়ায় উল্লেখ করেছেন, তিনি fraন্সের পণ্য বয়কট জারি রাখার মত পোষণ করেন এবং এটাও জানিয়েছেন, তাঁর পূর্বে এই ফতোয়া দিয়েছেন আল্লামা ইবনু জিবরিন এবং আল্লামা আব্দুর রহমান আল-বাররাক। [দ্রষ্টব্য : https://youtu.be/KLRJT2bVAZ0?si=b-JsusMyGfoJT0Qc]
সুতরাং কেউ যদি শাসকের অনুমতির জন্য ওয়েট করেন, সেটা তাঁর ব্যাপার। আমরা সাধারণ মানুষ, উলামা নই; আমাদের অন্তর ভিন্ন মতের উলামাদের দিকে ঝুঁকেছে, তাই আমরা তাঁদেরকে ফলো করছি। দয়া করে মানহাজ-কার্ড খেলে মুসলিমদের বিপদের সময় বিতর্ক তৈরি করবেন না। মুসলিম ভাইবোনদের কষ্ট দেখলে তাঁদের জন্য আমাদের অন্তরে স্বভাবজাতভাবে দয়া, রহমত, উদ্বেগ ও সহানুভূতি তৈরি হয়। আমরা আকিদার কিতাবপত্রেও আমাদের ইমামদের থেকে মুসলিমদের এই স্বভাবজাত চরিত্রের পাঠ শিখেছি।
শাইখুল ইসলাম ইবনু তাইমিয়া রাহিমাহুল্লাহ তাঁর বিখ্যাত আকিদার কিতাব ‘আকিদা ওয়াসিতিয়্যা’-র উপসংহারে লিখেছেন, “আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাত নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আগত কথার মর্মার্থকে বিশ্বাস করে। নবিজি বলেছেন, ‘মুমিন মুমিনের জন্য অট্টালিকা সদৃশ, যার একাংশ অন্য অংশকে শক্তিশালী করে। এরপর তিনি হাতের আঙুলগুলো অন্য হাতের আঙুলের ফাঁকে ঢুকালেন।’ তিনি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও বলেছেন, ‘মুমিনদের উদাহরণ তাদের পারস্পরিক ভালোবাসা, দয়ার্দ্রতা ও সহানুভূতির দিক থেকে একটি মানবদেহের ন্যায়। যখন তার একটি অঙ্গ আক্রান্ত হয়, তখন তার সমস্ত দেহ ডেকে আনে জ্বর ও অনিদ্ৰা।’” উদ্ধৃতি সমাপ্ত।
আল্লাহ সবাইকে বোঝার তৌফিক দিন। আমিন।
Md Abdullah Mridha