08/12/2021
* সকাল বেলার রোদ্দুর *
-----------------তীর্থ অনুরাগ
ডিনার শেষে কোমড়ে আচঁল গুজে বাড়তি খাবার গুলো ফ্রিজে রেখে কিচেন ক্লিন করতে থাকে বেলা। এমন। সময় হঠাৎ করে তাৎপর্য পেছন থেকে জড়িয়ে ধরায় বেলা ভয় পেয়ে কেঁপে ওঠে মৃদু চিৎকার করে। তাৎপৰ্যর স্পর্শ বুঝতে পেরে চোখ বন্ধ করে নেয় বেলা। তুমি!! এভাবে কেউ হঠাৎ করে জড়িয়ে ধরে? জানো আমি কতোটা ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম?
তাৎপর্য নিজের দু'হাত বেলার উন্মুক্ত কোমড় থেকে স্লাইড করে নিয়ে পেটে রাখে। বেলার গলায় মুখ ডুবিয়ে বলে "কার এতো বড় সাহস, যে কি না আমার বউকে ভয় দেখায়। বেলা তাৎপর্যর হাত আলগা করে পেছন ফিরে তাৎপর্য এর পায়ের পাতায় ভর করে গলা জড়িয়ে বলে "এ-ই যে আমার সামনে যে পাজি দুষ্ট লোকটা দাঁড়িয়ে আছে, এ-ই তো আমাকে সময়ে অসময়ে ভয় দেখায়" | তাৎপর্য বেলার কোমড় চেপে নিজের আরও কাছে নিয়ে এসে ।” আমার বউটা বুঝি বেশি ভয় পেয়েছে? এখন তো আমাকে আমার বউ এর ভয় ভাঙতে হবে। চলো তোমার ভয়টা ভেঙে দেই” এই বলে বেলাকে কোলে নিয়ে বেডরুমে দিকে অগ্রসর হয়। তাৎপর্য আর বেলার ভালোবাসা -বাসি নামক হিসাবের খাতায় যুক্ত হয় আরও একটি রাত।
সকালে বেলা নিজেকে তাৎপর্যর উন্মুক্ত বুকে আবিষ্কার করে। তাৎপর্যর বুকে থুতনি ঠেকিয়ে এক পলকে তাঁর দিকে তাকিয়ে থাকে। পাঁজি টাকে কত নিষ্পাপ দেখাচ্ছে। ফ্যানের বাতাসে কপালের চুলগুলো তালে তাল মিলিয়ে নাচ্ছে, জোড়া ভ্রুর নিচে ঘণ পাপড়ির বোজা দুই চোখ, মুখে যেন এক সন্তুষ্টির ছাপ খেলা করছে। কে বলেছে শুধু মেয়েদের ঘুমন্ত অবস্থায় নিস্পাপ দেখায়, মিষ্টি দেখায়? কেউ যদি এখন তাৎপর্য কে এভাবে দেখতো, তাহলে নির্ঘাত প্রেমে পড়ে যেত। বেলা তাৎপর্যর থেকে চোখ সরিয়ে তার বুকে আঙুল দিয়ে আঁকিবুকি করতে থাকে।
আমার বুকটাকে কি খেলার মাঠ পেয়েছ, যে এভাবে আঙ্গুল দিয়ে কুতকুত খেলছ?
বেলা তাৎপর্যর বুকে মাথা ঘষে বলে "আমার জমিতে আমি যা খুশি খেলব, তাতে তোমার কি?
| ও তাই বুঝি? তাহলে আমিও আমার জমিতে একটু খেলি কি বলো?
বেলা তাৎপর্যকে সরিয়ে দিয়ে দ্রুত বেড থেকে নেমে পড়ে। একদম না, সব খেলা সবার জন্য না বুঝলে? এ-ই বলে ওয়াশরুমে চলে যায়, শাওয়ার নিয়ে এসে দেখে তাৎপর্য আবার ঘুমিয়ে পড়েছে। বেলা হাল্কা হেঁসে চলে যায় কিচেনে।আজ আকাশটা মেঘলা। শিশির পরার মতো ঝিরিঝিরি বৃষ্টি পড়ছে।
ছুটির দিন হওয়ায় তাৎপর্য সকালের খাওয়া শেষে কাঁথা মুড়ি দিয়ে আবার ঘুমানোর প্রস্তুতি নেয়। ছুটির দিন তার ওপর বাইরে ঝিরিঝিরি বৃষ্টি, ঠান্ডা ঠান্ডা পরিবেশ, ঘুমানোর জন্য একদম উপযুক্ত সময়। বেলা শাড়ির আঁচলে। হাত মুছতে মুছতে তাৎপর্যর পাশে গিয়ে বসে মাথায় হাত বুলিয়ে আহ্লাদি স্বরে বলে "শুনছো ওঠ না, ছুটির দিন বলে কি সারাদিন ঘুমাতে হবে? এ্যাই, ওঠো না” । (ধাক্কা দিয়ে)
তাৎপর্য ঘুম ঘুম চোখে তাকিয়ে একটু উঠে বেলাকে নিজের বুকের পা পাঁজরে টেনে নিয়ে শক্ত করে জড়িয়ে। | ধরে আবার শুয়ে পড়ে। "এমন করে না বউ, সপ্তাহে একটা দিন পাই ভালোভাবে ঘুমানোর জন্য। একটু ঘুমাতে দাও লক্ষীর্টি। (কপালে চুমু দিয়ে)
| বেলা উঠে বসে বলে "উঠবে না তো? ঠিক আছে থাকো তোমার ঘুম নিয়ে। আমি চললাম” । এ-ই বলে মুখ গোমড়া করে বারান্দার গ্রিল ধরে দাঁড়িয়ে থাকে।ততক্ষণে বাইরের ঝুম বৃষ্টি পড়া শুরু করে দিয়েছে।
| তাৎপর্য বুঝতে পারে তার অভিমানী পাগলী বউটা যে তার ওপর অভিমান করেছে। তাই তো অভিমানীর অভিমান ভাঙাতে বেড় ছেড়ে বারান্দায় গিয়ে প্রিয়তমাকে কাছে টেনে নিয়ে বলে আমার লক্ষী বউটার বুঝি | অভিমান হয়েছে?
| বেলা নিজের অভিমানের মাত্রাটা আরেক ধাপ বাড়িয়ে অভিযোগের সুরে বলে "একটা দিন বাড়িতে থাক তাও সারাদিন তোমার ঘুম আর ঘুম, আমাকে কখন সময় দাও বলে তো?
| তাৎপর্য বেলার গলায় মুখ ডুবিয়ে দেয়।” বাহ রে, কাল রাতেও তো সময় দিয়েছি। আরও সময় লাগবে বুঝি? একটা কাজ করি চলো। দুজনে একসাথে বৃষ্টিতে ভিজি। কতোদিন একসাথে বৃষ্টিতে ভিজা হয় না বলো তো? | তোমাকে ভিজা খোলা চুলে দেখতে বড় ইচ্ছে করছে” । এ-ই বলে নিজের শুষ্ক ঠোঁট জোড়া বেলার দিকে এগিয়ে নিয়ে যায়। বেলার ঠোঁটে চুম্বকের কাজ করার আগেই ধাক্কা অনুভব করে, পাগলীটা যে দৌড়ে পালিয়েছে।
তাৎপর্যও বেলার পিছু পিছু ছুটে।” এবার, এবার কোথায় পালাবে শুনি? এ-ই বলে বেলাকে কোলে নিয়ে এসে মাঝছাঁদে দাঁড় করিয়ে দেয়। বৃষ্টিতে ভিজে যায় দুটো শরীর, আর তার সাথে দুটো মন। হঠাৎ বজ্রপাতে বেলা ভয় পেয়ে তাৎপর্যকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে। যেন জড়িয়ে ধরেই পিষে ফেলবে। বেলার শতভয়ের নিরাপদ আশ্রয়ে যেন এই তাৎপর্যর এই বুকটা।
| তাৎপর্য বেলাকে আরো নিবিড় ভাবে জড়িয়ে ধরে।” এই পাগলী ভয় কিসের? আমি আছি তো তোমার সাথে।
"পাপ্পা, পাপ্পা", হঠাৎ সকালের ডাকে কল্পনার জগৎ থেকে বাস্তবে ফিরে তাৎপর্য। তাৎপর্যর বুঝতে আর বাকি রইলো না যে এতক্ষণ সে কল্পনায় বেলাকে নিজের বাহুডোরে আগলে রেখেছিল।
সকাল তাৎপর্য আর বেলার মেয়ে। আজ সকালের জন্মদিন। ৭বছর আগে ডেলিভারির সময় মারা যায় বেলা। সেই থেকে বেলার রেখে যাওয়া শ্রেষ্ঠ উপহার সকালকে বুকে আগলে রেখে অতি যত্নে একটু একটু করে বড় করে তুলছে তাৎপর্য। কখনো মায়ের অভাব বুঝতে দেয় নি। তবুও মাঝে মাঝে যখন আকাশের অজস্র তাঁরা দেখিয়ে বলে "পাপ্পা মাম্মা আকাশের কোন তাঁরা টা? তখন তাৎপর্য মেয়েকে কোলে বসিয়ে বলে "বাবা, সকাল বেলা সূর্য মামা যে কোমল রোদের তাপ দেয়, সেই কোমল রোদ্দুর টাই তোমার মাম্মা” ।
"পাপ্পা ও পাপ্পা কখন থেকে মাম্মা এর ছবির দিকে তাকিয়ে কি ভাবছো বলো তো”?
তাৎপর্য মেয়েকে কাছে টেনে নিয়ে তার অগোচরে চোখ থেকে নেমে আসা দুফোঁটা অশ্রু হাতের তালু দিয়ে মুছে নেয়। "কিছু না মা। তা আজ তো আমার ছোট্ট মা টার জন্মদিন। কি চাই পাপার কাছে”?
"আমার চকলেট, টেডিবিয়ার, বারবি ডল কিছু চাই না। শুধু তুমি এএএএএত্তো গুলা আদর করে দাও তাহলেই হবে।
তাৎপর্য মেয়েকে কোলে নিয়ে কপালে, গালে চুমু দিয়ে। "তাহলে আমি যে এতোগুলা চকলেট আর পুতুল পাশের রুমে রেখে দিয়েছি, ওগুলো কে নিবে”? সকাল তার বাবার গলা জড়িয়ে বলে ওগুলো পাপ্পার প্রিন্সেস নিবে।সকালের জন্মদিন উপলক্ষে ছাঁদে কেক কাটা হচ্ছে। ওগুলো আবার সবাইকে দেওয়া হচ্ছে। ছোট্ট সকাল স্পিকারের গানে তার ছোট ছোট বন্ধুদের সাথে নাচছে । তাৎপর্য এক কোণায় দাঁড়িয়ে মেয়ের আনন্দ দেখতে থাকে। সকাল জানেও না যে আজ তার জন্মদিনের পাশাপাশি তার মায়ের মৃত্যুবার্ষিকী।তাৎপর্য কখনো সকালকে জানতে দেয় নি তার মায়ের মৃত্যুর কারণ জানলে হয়তো কখনো এভাবে নেচে গেয়ে নিজের জন্মদিন পালন করতো না? নিজের জন্মের জন্য তার মায়ের মৃত্যু এ কথা ভেবে কষ্ট পেত।
| কি দরকার একটা সত্যি জানিয়ে এই নিস্পাপ প্রাণকে কষ্ট দিয়ে? তার থেকে না হয় একটা সত্যি অগোচরেই
থাক। একটা সত্যি লুকিয়ে যদি মাছুম শিশু সকাল হাসিখুশী থাকে, আনন্দে থাকে তাহলে সেই সত্যি টা না হয় | লুকিয়েই থাকুক।
তাৎপৰ্যর কোন কষ্ট নেই। তার কাছে তো তার সকাল আছে। মেয়েটা যে একদম তার বেলার কার্বন কপি। মেয়েকে বুকে আগলে রেখে ভালোই তো আছে। আর ভবিষ্যতেও মেয়েকে বুকে আগলে রেখে বড় করে তুলবে। সকাল যে তার আর বেলার ভালোবাসার চিহ্ন বেলার রেখে যাওয়া সম্পদ, বেলার ভালোবাসা। সকালের জন্মদিন উপলক্ষে আজ ছাঁদটা সাজানো হয়েছে। এ-ই ছাদে পরন্ত বিকেল, জোছনার রাতে বেলার সাথে কাটানো কতো মূহুর্তই না আছে তাৎপৰ্যর। কে বলেছে বেলা নেই? বেলা তো তাৎপর্যর অনুভবের সাথে মিশে আছে। তাৎপর্যর স্মৃতির প্রতিটি পাতায় আছে।
==================শেষ=================