06/09/2022
একটা পরিবারে একজন ছেলে ঠিক যতটা আদর যত্নে বড় হয়, ঠিক ততটাই কিংবা তার চেয়েও আরও বেশি আদরে একটা মেয়ে বেড়ে উঠে ৷ সেই পরম আদরের ধনকে আপনার হাতে যখন তুলে দেয়া হচ্ছে, আপনি তাকে আপনার পরিবারের সদস্য হিসেবে গ্রহণ করছেন, অর্থাৎ শর্তহীন ভালোবাসায় গ্রহণ করছেন তাকে তাই নয় কি!! তাহলে সেখানে ভিক্ষার দান থাকবে কেন?
ভিক্ষা! কি বলছি বুঝতে পারছেন না!!? জি আমি যৌতুক নামক ক্যান্সারের কথা বলছি। আর যৌতুক তো ভিক্ষার সমপর্যায়েই পরে তাই না🤗।। জেনে রাখুন, সমাজের প্রতিটা রন্ধ্রে রন্ধ্রে ঢুকে পড়েছে এই মহামারী।
কন্যাপক্ষ থেকে জোর করে কোনো কিছু আদায় করা ইসলামে হারাম। বরং ইসলামে বিয়ের বিনিময়ে কন্যাকে দেনমোহর আদায় করার কথা বলা হয়েছে। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘আর তোমরা নারীদের মোহরানা স্বতঃপ্রবৃত্ত হয়ে প্রদান করবে।’ (সুরা নিসা, আয়াত : ৪)
যৌতুক মানেই কনেপক্ষের দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে অন্যায়ভাবে তার পরিবার থেকে বিশেষ সুযোগ-সুবিধা আদায় করা। অথচ আল্লাহতায়ালা কাউকে জুলুম করে সম্পদ আহরণ নিষিদ্ধ করেছেন। আল্লাহ বলেন, ‘এবং অন্যায়ভাবে একে অপরের সম্পদ ভক্ষণ কোরো না।’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ১৮৮)
যৌতুকের উৎপত্তি কোথা থেকে সেই কথায় এবার আসা যাক 👇
যৌতুক উপমহাদেশীয় কুসংস্কারের অংশ। হিন্দু সমাজে নারীরা সম্পদের উত্তরাধিকারী হতো না। তাই অনেক আগে থেকেই হিন্দু সমাজে নারীদের বিয়ের সময় যৌতুক দেওয়ার প্রচলন ছিল। কালক্রমে তা বিয়ের পণ হিসেবে আবির্ভূত হয়, যা কনেপক্ষের জন্য এক কষ্টকর রীতি হয়ে দাঁড়ায়। (ইসলামের বৈধ ও নৈতিক প্রেক্ষাপট, ব্যারিস্টার তমিজুল হক)। আর ইসলামে ভিন্ন সংস্কৃতি গ্রহণেও নিরুৎসাহিত করা হয়েছে । রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যে অন্য জাতির সাদৃশ্য অবলম্বন করবে সে তাদের দলভুক্ত গণ্য হবে।’ (আবু দাউদ, হাদিস ৪০৩১)
অবশ্য কন্যাপক্ষ খুশি হয়ে কিছু দিলে তা উপহার হিসেবে গণ্য হবে। প্রিয়নবী (সা.) তাঁর মেয়ে ফাতেমার বিয়েতে একটি পশমের সাদা চাদর, একটি ইজখির ঘাসের বালিশ এবং চামড়ার পানির মশক দিয়েছিলেন। অন্য বর্ণনায় একটি জাঁতার কথাও এসেছে। (আবু দাউদ, ইবনে মাজাহ)
বিয়ে একটি সামাজিক ও ধর্মীয় চুক্তি, যেখানে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে পারস্পরিক বিশ্বাস, বোঝাপড়া আর ভালোবাসা। বিয়ে কেবল দুটি হৃদয়ের সম্মিলন নয়, পুরো দুটি পরিবারের মাঝে সেতু বন্ধন। সেখানেই যদি যৌতুক নামক ক্যান্সার বাসা বাধে তখন বিয়ের মূল উদ্দেশ্যটাই বাধাগ্রস্ত হয়ে দাঁড়ায়।
যেখানে দেশে এখনো মেয়ের বাড়ি থেকে কোরবানির গরু দিতে হয়, কনের বাড়িতে আসবাব না থাক, বরের ঘর সাজিয়ে দিতে হয়। কেবল বিয়ের সময় নয়, রোজা, ঈদ, পিঠা-পুলি যে কোন পার্বণকে উপলক্ষ করে মেয়ের শ্বশুরবাড়ি যৌতুক আশা করে।
ভাবখানা এমন, মেয়ের বাপেরবাড়ি তার শ্বশুরবাড়ির প্রতি ঋণ শোধ করছে। এতে করে যে, মেয়ে এবং তার উপযুক্ততার অবমাননা করা হয় এটা কারো মস্তিষ্কে ঢুকে না। রোজার সময় ইফতার, ঈদে সবার জন্য জামা-কাপড়, কুরবানি ঈদে গরু পাঠানো অবশ্যক, না হলে আত্নীয়স্বজনের কাছে ইজ্জত শেষ।
সামাজিকতার নামে এসব অনাচার পালন করতে গিয়ে জীবন একজনেরই অভিশপ্ত হয়ে ওঠে না, পরিবার সমাজও অভিশপ্ত হয়ে ওঠে। কখনো কখনো হত্যা, আত্মহত্যার ঘটনাও ঘটে।
এই অঘোষিত যৌতুককে একেক এলাকায় একেকরকম কালচার বলে চালিয়ে নেয়া হয়। এর বিরুদ্ধে ব্যাপক সচেতনতার মাধ্যমে গণজাগরণ ঘটাতে হবে আর সরকারকেও কঠোর হতে হবে। যারা এই অন্যায্য ও অবৈধ লেনদেন করেন তাদেরকে নিরুৎসাহিত করতে সবাইকেই যার যার অবস্থান থেকে ভূমিকা রাখতে হবে।
আঙ্গুল তুলে বলতে হবে যারা নেন তারা ভিখিরি,যারা দেন তারা ব্যক্তিত্বহীন। বলতে হবে এটা ঘৃন্য অপরাধ।
বাংলাদেশের আইন অনুযায়ী যৌতুক নিষিদ্ধ ও শাস্তিযোগ্য অপরাধ। ইসলামি শরিয়তেও এর কোনো স্থান নেই। শরিয়তের বিধানে যৌতুক সম্পূর্ণ হারাম ও নিষিদ্ধ এবং কবিরা গুনাহ বা মহাপাপ।
©
ছবি ইন্টারনেট থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে।।