10/30/2023
আচ্ছা, তামিম ইকবালকে বিশ্বকাপ দলে প্রয়োজন ছিল- এই কথা বললে এক পক্ষ কেন মনে করে তারা টাকার কাছে বিক্রী হয়ে গেছে? তাইলে ওয়াসিম আকরাম, আকাশ চোপড়া, সৌরভ গাঙ্গুলিও টাকার কাছে বিক্রী হয়ে গেছে?
আবার সাকিব আল হাসানকে সেরা ক্রিকেটার বললে কেন আরেক পক্ষ এসে "দালাল", " টাকা খাইসে" বলে? তাইলে মার্ক নিকোলাস থেকে শুরু করে রবী শাস্ত্রী, হার্শা ভোগলে, নাসের হুসেইন, দীনেশ কার্তিক - এরা সবাই-ই টাকা খাইসে?
এই ওয়ার্ল্ড কাপ ব্যার্থতায় যেমন সাকিব আল হাসান বাংলাদেশের সর্বকালের সেরা ক্রিকেটার- ব্যাপারটা মিথ্যে হয়ে যায় নি, তেমনি এই ওয়ার্ল্ড কাপের আগে মাঠের খেলার চাইতে মাঠের বাইরের বিষয়বস্তুগুলোর দায়ও তিনি এড়াতে পারবেন না। হয়তোবা পারতেন, যদি দলটা ভাল করতো৷ তিনি নিজেই স্বীকার করেছেন, দলের উপর সেই ব্যাপারের ইমপ্যাক্ট পড়েছে৷ তিনি নিজেও কতটুকু টেকনিকাল প্রস্তুতি নিয়ে গেছেন বিশ্বকাপে সেটাও বিষয়, কারণ বিশ্বকাপে কেমন প্রস্তুতি নিয়ে যেতে হয় তার বেঞ্চমার্কটা তিনিই দেখিয়েছেন ২০১৯ সালে৷ তিনি তো সেই প্রস্তুতির বেঞ্চমার্ক এর কাছাকাছিও যেতে পারেন নাই, দলের অন্য জুনিয়ররাও পারেন নাই৷ সমস্যাটা এখানেই, অন্য জুনিয়রদের কনসেন্ট্রেশন লেভেলটাও খেলায় ছিল না ঠিকঠাকভাবে এবং সেটা দৃশ্যমান৷
দিনশেষে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে "বাংলাদেশ"৷ এদেশের দর্শকরা দুই ভাগে বিভক্ত৷ এদেশের সর্বকালের সেরা দুই সুপারস্টার দেশের জন্যও এক হতে পারেন নাই৷ দেশের চাইতে তাদের ইগো বড় ছিল, আছে, হয়তো থাকবেও৷ সাকিব-তামিম কারো অবদানই এই দেশের ক্রিকেটে কম না, কিন্তু শেষবেলায় যা হল তাতে ক্ষতিগ্রস্থ হল একটা পুরো ক্রিকেট কাঠামো৷ দুইজনের কেউই এখানে কম্প্রোমাইজ, স্যাক্রিফাইজ করেন নাই৷ ভারতে রোহিত- কোহলির সমস্যা কি কম ছিল? দেশের জন্য তারা এক হন নাই? ইংল্যান্ডের উইকেট যাওয়ার পর ১০- ১২ বছরের বাচ্চা ছেলেদের মত রোহিত-কোহলির করমর্দনের দৃশ্যটা আমাদের বুঝিয়ে দিয়েছে এই বিশ্বকাপে আমরা আসলে কোথায় পিছিয়ে আছি৷ আমরা পিছিয়ে আছি, আমরা "বাংলাদেশ" হয়ে যাই নাই এই বিশ্বকাপে৷
জেতা/হারার কথা বলবেন? সব ঠিক থাকলেও হারতে পারতাম৷ ২০১৪ তে হংকং এর কাছে হারিনাই? ২০১৫ বিশ্বকাপেও হারসিলাম, কিন্তু সেসব হারায় আফসোস ছিল না৷ কারণ, একসাথে ল'ড়াই করে হেরে আসছিলাম, গোটা "বাংলাদেশ" হেরে আসছিলাম, ২০১৫ তে হারানো হয়েছিল জোর করে। তখন আমাদের জোর করে হারানো লাগতো, এখন জোর করেও জিততে পারি না৷ ওইটা "বাংলাদেশ" ছিল, ওইখানের সাকিব-তামিম-মুশফিক-রিয়াদ-মাশরাফী, সবাই আমাদের ছিল৷ ব্যাক্তিগত ঘটনায় জেল খাটা রুবেলও আমাদেরই ছিল, সবাই মিলে হস্তক্ষেপ করে ব্যাপারটা সুরাহা করে বিশ্বকাপে রুবেলের খেলা নিশ্চিত করেছিল, হাজারটা মানুষ পিছে কথা বললেও ওই দলের সাব্বির রহমান আমাদের-ই ছিল, চার-ছয় খাইলেও তাসকিন-সানিরা আমাদেরই ছিল, বাংলাদেশের ছিল৷
এখন কেউ আমাদের নাই, সবাই যার যার ব্যাক্তির ৷এই বিশ্বকাপে একটা ক্রিকেট দল খেলতে গেছে, "বাংলাদেশ" খেলতে যায় নাই৷ এটাই মনে হয় সব থেকে বড় বাস্তবতা৷
দেশের ক্রিকেটের দুই বড় সুপারস্টার, যারা একটা প্রজন্মের আইকন তাদের একজনকে "ভুয়া", আরেকজনকে " ড্রামাবাজ" উপাধি শুনতে দেখার চাইতে দু:খজনক কিছু আর নাই৷ তবে, দর্শকদের এখানে দোষ নাই, এই জায়গায় নিজেদের তারা নিজেরাই এনেছেন, আর মাঝখান দিয়ে যাদের ম্যান ম্যানেজমেন্ট করার কথা তারাও পুরোপুরি ব্যার্থ৷
আমার কাছে এখনো ওই ভুয়া-ই "বাংলাদেশ", ওই ড্রামাবাজটাই "বাংলাদেশ"৷ কিন্তু আমি বললে কি আসে যায়, উনারা নিজেরা ফিল করেন তো, উনারাই "বাংলাদেশ"?
জানি না, কি আবোল-তাবোল লিখলাম। ক্রিকেট আমার কাছে শুধুই পেশাদারিত্বের জায়গা না৷ ২ বছর আগে লাইফ সাপোর্ট থেকে ফেরার পর আইসিইউতে ডাক্তারের কোন কথায় রেসপন্স করছিলাম না, ডাক্তার ক্রিকেট নিয়ে কথা উঠার পরই প্রথম রেসপন্স করেছিলাম। এই কথাগুলো বলার জন্য হয়তোবা আমি বেঁচেও থাকতাম না আজকে, আল্লাহর দয়ায় বেঁচে আছি৷ আমার ৭৮ বছর বয়সী দাদা নিউজিল্যান্ডে টেস্ট হলেও সেই টেস্ট দেখার জন্য ভোর ৪ টা থেকে উঠে টিভি খুলে বসে থাকেন৷ আপনারা "বাংলাদেশ"কে প্রতিনিধিত্ব করেন,তাই আপনাদের তারা এত ভালবাসে৷
দিনশেষে লাল-সবুজ থেকে বের তো হতে পারবো না, আশায় দিন গুনি, এদেশে অনেক গোড়া থেকে অনেক কিছুর সমাধান দরকার৷ হবে হয়তোবা একদিন।
Copied Syed Abid Hussain Sami