08/28/2024
শুধু ডুম্বুর ড্যাম না, ভারতের ত্রিপুরায় বাংলাদেশের বিভিন্ন নদীর উজানে আরো অনেকগুলো ব্যারেজ/ড্যাম আছে। যেমন: যৌথ নদী কমিশনের তৈরী মানচিত্র অনুসারে, বাংলাদেশের সীমান্ত থেকে ৩৫ কিমি উজানে মুহুরী নদীর উপর মুহুরী(কলসী) ব্যারেজ, ৫২ কিমি উজানে গোমতি নদীর উপর মহারাণী ব্যারেজ, ৫২ কিমি উজানে খোয়াই নদীর উপর খোয়াই ব্যারেজ এবং ৪৮ কিমি উজানে মনু নদীর উপর মনু ব্যারেজ নির্মাণ করা হয়েছে।
আমরা ত্রিপুরার একজন ডিস্ট্রিক্ট মেজিস্ট্রেটের বরাতে শুধু ডুম্বুর ড্যামের গেট খুলে দেয়ার কথা জানি। অন্য ব্যারেজের গেটগুলোও খুলে দেয়া হয়েছে কিনা সে বিষয়ে আনুষ্ঠানিক ভাবে কোন তথ্য পাওয়া যায়নি। তবে যে কারণে ডুম্বুর ড্যামের গেট খুলে দেয়া হয়েছে, সেই কারণে ত্রিপুরার অন্যান্য ব্যারেজের গেইটগুলোও খুলে দেয়ার কথা।
এই ব্যারেজগুলো একযোগে খুলে দিলে বন্যার স্বাভাবিক প্রবাহের চেয়ে বেশি স্রোত মুহুরী, গোমতি, খোয়াই ও মনু নদী হয়ে বাংলাদেশের ফেনী, কুমিল্লা, হবিগঞ্জ, মৌলভিবাজার ইত্যাদি অঞ্চলে প্রবল বন্যার সৃষ্টি করবে এটাই স্বাভাবিক।
প্রথমত, ভারত কী ব্যারেজ বা ড্যামের গেট খুলে দেয়ার ব্যাপারে বাংলাদেশকে কোন আগাম সতর্কতা বার্তা পাঠিয়েছিলো? সতর্কতা বার্তা না পাঠালে বাংলাদেশের উচিত তীব্র প্রতিবাদ জানানো। কারণ আগাম সতর্কতা পেলে অনেক মানুষকে সময় মতো নিরাপদে সরিয়ে আনা যেত।
দ্বিতীয়ত, নদীতে বাধ দেয়া হলে ভারী বৃষ্টিপাতের মৌসুমে ধরণের পরিস্থিতি হবেই। বাংলাদেশের মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত আন্ত:সীমান্ত নদীগুলোর উপর ভারত একের পর এক তরফা বাধ নির্মাণ করে চলেছে বলেই একদিকে শুকনো মৌসুমে বাংলাদেশ পানি থেকে বঞ্চিত হচ্ছে, পলি জমে বাংলাদেশের নদীগুলোর পানি ধারণ ক্ষমতা কমে গেছে অন্যদিকে বর্ষা মৌসুমে বাংলাদেশকে না জানিয়ে বাধ খুলে দেয়ার কারণে ফ্ল্যাশ ফ্লাডের শিকার হচ্ছে।
তৃতীয়ত, অনেকে মনে করছেন ভারতের বাধের বিপরীতে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে বাধ দিয়ে সমস্যার সমাধান করা যাবে। এটা ভুল ধারণা। যে কারণে প্রবল বৃষ্টিপাতের কারণে সৃষ্ট পানির ঢল সামাল দিতে ভারত তার বাধের গেট খুলে দিয়েছে, বাংলাদেশকেও তাই করতে হবে। যেমন: মুহুরী প্রকল্পের বাধ ফেনী অঞ্চলকে ভারত থেকে নেমে আসা পানির ঢল থেকে রক্ষা করতে পারেনি। বাংলাদেশও মুহুরি প্রকল্পের বাধের ৪০টি গেট খুলে দিতে বাধ্য হয়েছে।
কাজেই, নদীর উপর আরো বাধ নির্মাণ সমাধান নয়। সমাধান করতে হলে নদীর উপর থেকে সমস্ত ধরণের বাধ অপসারণ করতে হবে। যতদিন বাধ অপসারণের মতো রাজনৈতিক বাস্তবতা তৈরী না হয়, ততদিন ভারতকে বাধ্য করতে হবে আন্ত:সীমান্ত নদীগুলো থেকে এক তরফা পানি প্রত্যাহার কিংবা বিনা নোটিশে হঠাৎ পানি ছেড়ে দেয়া বন্ধ করতে। এজন্য প্রথমে দ্বিপাক্ষিক ভাবে চাপ দিতে হবে, কাজ না হলে জাতিসংঘ সহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ফোরামে যেতে হবে।