12/01/2024
নেতায় নেতা বানাচ্ছে, জনগণ কি তা মেনে নিচ্ছে?
----------------------------------------------------------
মোঃ হাসানুর জামান বাবু।
‘এই দুনিয়া এখন তো আর সেই দুনিয়া নাই,/ মানুষ নামের মানুষ আছে দুনিয়া বোঝাই,/ এই মানুষের ভিড়ে আমার সেই মানুষ নাই...।’ মিতালী মুখার্জির গাওয়া এই গানটি এখনও বেশ শ্রোতাপ্রিয়। গানের কথাগুলোর মর্মার্থ সহজ অনুধাবনযোগ্য এবং আমাদের বর্তমান সামাজিক পরিবেশ-পরিস্থিতির দিকে দৃষ্টি নিবদ্ধ করলে এর যথার্থতা নিয়ে সংশয় না থাকারই কথা। এই যে সমাজে এত মানুষের বিচরণ, সবাই কি মানুষ? হাত, পা, চোখ, মুখ, নাক থাকলেই যে মানুষ বলে কাউকে গণ্য করা যাবে, তা কিন্তু নয়। মানুষের ঘরে জন্ম নিলেই যে কেউ আক্ষরিক অর্থে মানুষ হবে, তারও কোনো গ্যারান্টি নেই। মানুষের আসল পরিচয় তার কাজে, তার আচার-আচরণে। স্কুলছাত্র থাকা অবস্থায় একটি ভাব-সম্প্রসারণ পড়েছিলোম ‘তরুলতা সহজেই তরুলতা, পশুপাখি সহজেই পশুপাখি। কিন্তু মানুষ, অনেক সাধনায় মানুষ।’ তখন এ কথাগুলোর মর্মার্থ ততটা উপলব্ধিতে আসেনি।
পরবর্তীতে যখন বুদ্ধি বেড়েছে, কথাগুলোকে অকাট্য সত্য হিসেবেই মনে হয়েছে। মানুষকে মানুষ হতে হলে অনেক সাধনা করতে হয়, অনেক কিছু অর্জন করতে হয়, আবার অনেক কিছু বিসর্জনও দিতে হয়। যে ছয়টি রিপু মানুষের মনুষ্যত্বকে ধ্বংস করে, সেগুলোকে পরিহার করে আত্মশুদ্ধি অর্জনকারীরাই প্রকৃত মানুষ হিসেবে গণ্য হতে পারেন। আর যারা ষড়রিপুর দ্বারা আক্রান্ত হয়ে বিবেক-বুদ্ধি বিসর্জন দিয়ে আত্মস্বার্থ চরিতার্থ করার কাজে ব্যাপৃত হন, তারা আকার-আকৃতিতে মানুষ সদৃশ হলেও
প্রকৃতার্থে মানুষ হিসেবে গণ্য হতে পারেন না। মানুষকে মানুষ হয়ে উঠতে হলে অর্জন করতে হয় গুণাবলি, আর বিসর্জন দিতে হয় লোভ, হিংসা ইত্যাদি। আজ আমাদের সমাজের দিকে তাকালে হতাশ হতে হয়। চারিদিকে স্বার্থসিদ্ধির এক সর্বনাশা উন্মাদনা। অর্থ-বিত্ত অর্জনই যেন এখন মুখ্য বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে
তা যেভাবে হোক যে পন্থায় হোক। আর তা করায়ত্ব করার জন্য কারও কারও আচরণ পশুকেও হার মানায়। আর এখানেই মিতালী মুখার্জির গানের কথাগুলোর যথার্থতা প্রতিভাত হয়ে ওঠে।
ঠিক সে রকম অবস্থা বিরাজ করছে আমাদের বর্তমান রাজনীতির অঙ্গনে। সেখানে এখন নেতার ছড়াছড়ি। অনেকটা কার্তিক মাসে গ্রামের খাল-বিল-ডোবা-নালায় কিলবিল করা খলসে-পুঁটির মতো নেতাদের বিচরণ। বেশ কিছুদিন আগে, তখনও চট্টগ্রাম কক্সবাজার মহাসড়ক চারলেন হাইওয়ের রূপ নেয়নি। তখন এ সড়কের দু’পাশে সারি সারি বড় বড় নানা ধরনের বৃক্ষ ছিল। সেবৃক্ষ গুলো গত আওয়ামীলীগ সরকারের আমলে নামেমাত্র টেন্ডার দিয়ে লুটপাট করে কর্ণফুলী সেতুর দক্ষিণ পাড় থেকে পটিয়া পর্যন্ত বৃক্ষ কেটে উজাড় করেছেন তৎকালীন এমপির ভাইবর্গ। সেসব বৃক্ষের কাণ্ড এবং ডালে ঝুলতে দেখা যেত হরেক রকমের, হরেক সাইজের ফেস্টুন। স্থানীয় নেতাদের বড় আকারের ছবি সম্বলিত ওই ফেস্টুনগুলো পথচারীদের দৃষ্টি আকর্ষণের পাশাপাশি বিরক্তি উৎপাদন করত। ওই সময় এক বিকালে চট্টগ্রাম শহর থেকে পটিয়া গ্রামের বাড়ীতে ফিরছিলাম আমার এলাকার এক বড়ভাইয়ের সঙ্গে তার গাড়িতে।
তিনি নিজেই ড্রাইভ করছিলেন।গাড়ী চলতে চলতে পটিয়ার শান্তিরহাট অতিক্রম করতেই এক সময় বড় বললেন, ভাই, গাছের দিকে দেখ!আমাদের পটিয়াতে এতো ‘নেতা আছে? আছে?। বললাম কোথায় নেতা? গাছে গাছে।’ তার কথায় হেসেছিলাম প্রচুর। তবে, অবস্থাদৃষ্টে তার কথাকে অতিশয়োক্তি মনে হয়নি আমার। তিনি ক্ষোভের সঙ্গেই বলেছিলেন, এ কী কালচার শুরু হলো? যে না সে গাছের মাথায় ফটো ঝুলিয়ে দিয়ে নেতা সেজে বসে থাকছে! ওরা কি নেতা পদবি ব্যবহার করার যোগ্য? নাকি নেতার সংজ্ঞায় পড়ে? বললাম, এখন এটাই হলো নেতা হিসেবে সমাজে পরিচিত হওয়ার সহজ উপায়। ডেল কার্নেগি বেঁচে থাকলে আর এই নেতাদের ক্রিয়া-কাণ্ড দেখে তিনি হয়তো ‘নেতা হওয়ার কয়েকটি সহজ উপায়’ নামে আরেকটি বই লিখে ফেলতেন।
বাস্তবিক আমাদের পটিয়ার রাজনৈতিক অঙ্গনে এখন রাজনীতির অভাব থাকলেও নেতার কোনো অভাব নেই। যেখানে সেখানে, যত্রতত্র নেতার উপস্থিতি লক্ষণীয়। এখন আর কেউ নিজেকে দলের কর্মী হিসেবে পরিচয় দিতে চান না। সবাই নেতা হিসেবে নিজেকে পরিচয় দিয়ে কেউকেটা হিসেবে গণ্য হতে অধিকতর আগ্রহী। কয়েক বছর আগে যখন আমি রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলাম, একজন সিনিয়র নেতা আক্ষেপ করে বলেছিলেন, এখন নেতার ভিড়ে কর্মী খুঁজে পাওয়া দুষ্কর হয়ে দাঁড়িয়েছে। আগে পোস্টার লাগাত দলের কর্মীরা। এখন কেউ আর কর্মী নেই, সবাই নেতা হয়ে গেছে। সে জন্য দলের পোস্টার লাগাতে হয় লেবার ভাড়া করে। আর নেতাদের ভিড়ে মঞ্চ ভেঙে পড়ার উপক্রম হয়।
রাজনীতিতে নেতার অপরিহার্যতা অনস্বীকার্য। কাউকে না কাউকে তো নেতা হতেই হবে। কিন্তু সে নেতা হওয়ার প্রক্রিয়াটি কি খুব সহজ? আমাদের এই উপমহাদেশের রাজনীতির দিকে চোখ ফেরালেই এ সত্যটি স্পষ্ট হয়ে উঠবে যে, এ যাবৎ যারা নেতা হিসেবে পরিগণিত বা সমাদৃত হয়েছেন, তারা গাছে পোস্টার-ফেস্টুন ঝুলিয়ে বা নেতার পেছনে দাঁড়িয়ে টিভি ক্যামেরায় মস্তক দেখিয়ে ওই মর্যাদার আসনে আসীন হননি। এ জন্য তাদেরকে অনেক কাঠখড় পোড়াতে হয়েছে, জীবনের সোনালি সময়কে ব্যয় করতে হয়েছে, বিসর্জন দিতে হয়েছে জীবনের অনেক সাধ-আহ্লাদ। বছরের পর বছর মিছিল মিটিং করতে হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শুরু করে উত্তপ্ত রাজপথে,কখনো শাসক শ্রেণীর ভয়ে লুকিয়ে থাকতে হয়েছে অন্ধকার প্রকোষ্ঠে। তারা কর্মী হিসেবে রাজনীতির পথে হাঁটতে শুরু করেছিলেন। এক সময় কর্মই তাদেরকে পৌঁছে দিয়েছে নেতার স্তরে। মহাত্মা গান্ধী, নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসু, জওহরলাল নেহরু, মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী, শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হক, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, শেখ মুজিবুর রহমান, শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান, তারা কেউই হঠাৎ করে নেতা বনে যাননি। রাজনীতির মাঠে পদচারণার শুরুতে তারা
কর্মীই ছিলেন।
তারপর অনেক চড়াই-উৎরাই পার হয়ে পৌঁছেছেন নেতার স্তরে। মহাত্মা গান্ধী পেশাজীবনের শুরুতে পাড়ি জমিয়েছিলেন সুদূর দক্ষিণ আফ্রিকায়। সেখানে গিয়ে তিনি ভারতীয়দের দুর্দশা দেখে প্রতিবাদী ভূমিকায় নেমেছিলেন। সে কারণে তাকে জেল খাটতে হয়েছিল, এমনকি শে^তাঙ্গদের দ্বারা আক্রান্ত হয়ে তাঁর জীবন সঙ্কটাপন্ন হয়েছিল। মওলানা ভাসানী তরুণ বয়সে জমিদারের শোষণ-নির্যাতনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে গিয়ে এলাকা থেকে বিতাড়িত হয়ে আসামে চলে যেতে বাধ্য হয়েছিলেন। সেখানেও তিনি নিজেকে নিয়োজিত করেছিলেন নিপীড়িত মানুষের পক্ষে লড়াইয়ে। মজলুম জননেতা অভিধাটি তার নামের সঙ্গে এমনি এমনি যুক্ত হয়নি। সাহসী যশোর জেলার সাহসী সন্তান মহান স্বাধীনতার ঘোষক শহীদ জিয়াউর রহমান গাছে পোস্টার ঝুলিয়ে কিংবা নেতার চাটুকার হিসাবে নেতা হননি। এ জন্য তাঁকে পার হতে হয়েছে অনেক দুর্গম পথ। জীবনের সোনালি সময়ে তার বিরুদ্ধে হয়েছে একাধিকবার সেনা বিদ্রোহ! কতো বার কাটাতে হয়েছে বন্দুকের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে । কোনো কোনো সময় মৃত্যু তাঁর খুব কাছাকাছি চলে এসেছিল।(০৭ নভেম্বর সিপাহী জনতার বিপ্লব) জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস তার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। কিন্তু তিনি তাঁর জীবনের ব্রত থেকে সরে যাননি এতটুকু। আমাদের যারা প্রাতঃস্মরণীয় রাজনীতিক, তাদের জীবনালেখ্য পর্যালোচনা করলে
এটা প্রতীয়মান হবে যে, শুধু ‘নেতা’ বিশেষণটি নামের সঙ্গে যুক্ত করাই তাদের লক্ষ্য ছিল না। তাদের কাজই নেতা বিশেষণটি তাদের নামের সঙ্গে অনিবার্যভাবে সংযুক্ত করে দিয়েছে।
কিন্তু আজ সে অবস্থার পরিবর্তন হয়েছে। এখন রাজনীতি চর্চা করে, দল বা দেশের জন্য অবদান রেখে কষ্ট করে নেতার পর্যায়ে যেতে কেউ আগ্রহী নয়। তারা নেতা হতে চায় ঠিকই, তবে আপন কর্মের ফলশ্রুতিতে নয়। কেউ তাদের নেতা বানিয়ে দেবে এ প্রত্যাশায় ঘুরে বেড়ায় সারাক্ষণ নেতার বাড়ীতে, দাঁড়িয়ে থাকেন নেতার গাড়ীবহরের পাশে।সম্প্রতি মিডিয়া কর্মী হিসাবে নিউজের সুযোগ নিয়ে একটি বড় দলের নেতার বাসায় গিয়েছিলাম কথা বলতে। সেখানে এক যুবক এসেছে নেতাকে বলতে শুনলাম-তার আবদার তাকে দলের যুব সংগঠনের ওই উপজেলা থেকে জেলার একটি গুরুত্বপূর্ণ পদে বসিয়ে দিতে হবে। তখন ঐনেতা একটু রাগান্বিত হয়ে বললেন, আমাকে বানিয়ে দিতে হবে কেন? তুমি কর্মীদের সমর্থন নিয়ে ওই পদে যেতে পার না? নেতা বিরক্তিভরে বললেন, এরা কেউ নিজের যোগ্যতায় নেতা হতে পারবে না, এদেরকে নেতা বানিয়ে দিতে হবে। কী এক ট্র্যাডিশন চালু হলো!
বস্তুত এ এক সর্বনাশা পদ্ধতি চালু হয়েছে। কেউ কেউ বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোতে মুক্ত গণতন্ত্রের চর্চা না থাকায় এখন নেতা হওয়ার চিরাচরিত প্রক্রিয়া অকার্যকর হয়ে পড়েছে। এখন ওপরের দিকে তৈলমর্দন এবং নজরানা দিয়ে নেতা হওয়ার পদ্ধতি আবিষ্কার হয়েছে। আর নেতা হওয়ার মুখ্য উদ্দেশ্য কী তা বোধকরি বলার অপেক্ষা রাখে না। জনসেবা নয়, দেশ সেবা নয়। উদ্দেশ্য আত্মস্বার্থ চরিতার্থ করা। দল ক্ষমতায় এলে বা থাকলে পদ-পদবির জোরে নানান কিসিমের ফায়দা লোটার মওকা পাওয়া যায়। সুতরাং পদ একটি অতীব জরুরি বিষয়। যে করেই হোক তা বাগাতেই হবে।
ঐদিন নেতার মুখে আরো শুনলাম, উনি বললেন রাজনৈতিক দলের দ্বিতীয় প্রধান ব্যক্তির ঘনিষ্ঠ একজনের কাছে তার এলাকার এক ছাত্র সংগঠনের জেলার সাধারণ সম্পাদক এসে বলল, চাচা, আপনার সঙ্গে তো নেতার খুব ঘনিষ্ঠতা। তাকে বলে আমাকে আমাদের সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটিতে একটা পদ পাইয়ে দেন। নেতা তখন ছেলেটিকে নাকি বললেন, তুমি তো জেলা কমিটির একটি গুরুত্বপূর্ণ পদে আছই। আরেকটি পদ কী দরকার? ছেলেটি নির্বিকার জবাব দিলো ‘চাচা, কেন্দ্রীয় পদ থাকলে এলাকায় টেন্ডার-ইজারা পেতে সুবিধা হয়।’ ঘটনাটি শুনিয়ে ভদ্রলোক আফসোস করে নাকি বলেছিলেন, বুঝুন এবার! এই যদি হয় রাজনীতির লক্ষ্য তাহলে আর আশা-ভরসার জায়গা কি থাকে?
মূলত এসব কারণেই সবার মধ্যে নেতা হওয়ার বাসনা প্রকট আকার ধারণ করেছে। কারণ, নেতা হতে পারলে অনেক সুবিধা। এই পরিচয়ে ভদ্রসমাজে কল্কে পাওয়া যায়, থানা-পুলিশ-প্রশাসনের কর্তারা সমীহ করে, চেয়ার এগিয়ে দেয়।
সমাজের সাধারণ মানুষেরা সালাম-আদাব দেয়। দল ক্ষমতায় থাকলে টু-পাইস কামিয়ে বিলসী জীবন যাপনের সুযোগ পাওয়া যায়। এ জন্যই নামের সঙ্গে নেতার তকমা আটার এমন কসরৎ। তাই নেতা নামের সোনার হরিণটি শিকার করতে অনেককে হন্যে হয়ে ছুটতে দেখা যায়। কেউ তেলের বোতল উপুড় করে ঢেলে দেয় নেতার চরণে, কেউ মানিব্যাগ উজাড় করে নেতার মানিব্যাগ ফুলেফেঁপে ওঠার ক্ষেত্রে অবদান রাখে। এসব সিকি-আধুলি নেতারা পদ-পদবি বাগিয়ে নিয়ে কী সব করে বেড়ায় তার দৃষ্টান্ত রয়েছে ভূরি ভূরি।বিএনপি এখনও ক্ষমতায় আসেনি,আসবে কিনা তারাও কোন গ্যারান্টি নেই।এখন থেকেই শুরু হয়েছে জুলুম অত্যাচার চাঁদাবাজি দখল এর চেষ্টা।যেনেতা পাতি নেতাদের এগুলো সুযোগ দেন,উনি খুবই জনপ্রিয় তাদের কাছে।আর যেনেতা এগুলো সুযোগ দেননা এবং নেতা বানিয়ে দিবেননা, নিজ যোগ্যতায়ও জনপ্রিয়তায় হয়ে আসতে বলবেন উনি ঐসব ধান্ধাবাজ নেতাদের কাছে খুবই বিরক্তিকর ও তাদের প্রিয়নেতা নয়।
পাঠক, ভুল বুঝবেন না। আমি কারও নেতা হয়ে ওঠার বিপক্ষে নই। বরং রাজনীতিতে নৈতিকতা সম্পন্ন নেতার জন্ম হোক, সেটাই চাই। আজকের রাজনৈতিক কর্মীটি কাল নেতা হবে এটাইতো স্বাভাবিক। তবে তা হতে হবে তার কর্মকাণ্ড দ্বারা,নীতিআদর্শ দ্বারা, নৈতিকতা দ্বারা, শিক্ষার গুণ দ্বারা মেধায় মননে ও যোগ্যতায়।
নেতা পদবিটি ব্যবহার করার আগে তাকে অর্জন করতে হবে নেতৃত্বের গুণাবলি। নেতা হতে হলে প্রথমত দলের জন্য নিবেদিতপ্রাণ হতে হবে, দ্বিতীয়ত সমাজে তাকে অর্জন করতে হবে গ্রহণযোগ্যতা। রাস্তা দিয়ে নেতা হেঁটে গেলে মানুষ যদি বলে ‘ওই যে ধান্দাবাজ যায়’, তাতে দলের ভাবমূর্তি যে বাড়ে না তা বলার অপেক্ষা রাখে না। নেতা পরিচয় দানকারী কিছু ব্যক্তির কথা জানি, যাদের নির্দিষ্ট কোনো পেশা নেই। অথচ চট্টগ্রাম শহরে তাদের একাধিক ফ্ল্যাট-বাড়ি আছে। চাঁদাবাজি-ধান্দাবাজিই তাদের আয়ের প্রধান উৎস। রসিকজনেরা এদের নাম দিয়েছেন‘এলওপি’, অর্থাৎ ‘লিভিং অন আদার পিপল’। এই এলওপিরাই আজ রাজনীতির মাঠ দাঁপিয়ে বেড়াচ্ছে। এদের দাপটে প্রকৃত রাজনৈতিক কর্মীরা কোণঠাসা। আফসোসের বিষয় হলো, হাটে-মাঠে-ঘাটে এত এত নেতা, কিন্তু প্রকৃত নেতা খুঁজতে গেলে হতাশ হতে হয়। আর তখনই মিতালী মুখার্জির গাওয়া পূর্বোক্ত গানটিকে বড্ড প্রাসঙ্গিক মনে হয়।তাইতো ক্ষোভে দুঃখে যন্ত্রণায় বলতে বাধ্য হচ্ছি-নেতায় নেতা বানাচ্ছে, জনগণ কি তা মেনে নিচ্ছে??
লেখক:-
মিডিয়া কর্মী ক্রীড়া সংগঠক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক।