11/05/2024
বাস্তবে আর কাগজে সব সময় অসম একটি লড়াই। লড়াইটা হবে রিপাবলিকান বনাম ডেমোক্রেট।
গতবারের ফলাফল আমরা জানি। ট্রাম্পকে পরাভূত করে বাইডেন দখল করেছে হোয়াইট হাউজ। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনী ইতিহাসে এখন পর্যন্ত রিপাবলিকানরা মোট ২৯বার এবং ডেমোক্রেটরা মোট ২১ বার প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছে....
নভেম্বরের ৫ তারিখ মার্কিন নাগরিকরা ভোট দিবেন। সবার ধারণা তারা ট্রাম্প কিংবা কমলাকে দেবীকে ভোট দিবেন। ধারণা ভুল!
মার্কিনিরা ৫ নভেম্বর ভোট দিবে ইলেক্টোরাল কলেজকে। ইলেক্টোরাল কলেজ হলো নির্বাচক মণ্ডলী। যার সদস্যরা রাজ্যগুলোর বিভিন্ন দলের রাজনৈতিক কর্মী। সাধারণ জনগণের ভোটের মাধ্যমে তারা নির্বাচিত হবেন।
৫ নভেম্বরের ভোটে যে সকল ইলেক্টোরাল কলেজ নির্বাচিত হবেন, তারা ডিসেম্বর মাসের দ্বিতীয় বুধবারের পর প্রথম যে সোমবার আসবে সেদিন নিজ নিজ রাজ্যের রাজধানীতে উপস্থিত হয়ে ভোট দিবেন। তারপর শুরু হবে প্রেসিডেন্ট এবং ভাইস প্রেসিডেন্ট নির্বাচন প্রক্রিয়া।
ইলেক্টোরাল কলেজদের ভোট গণনা করা হবে পরের বছর অর্থাৎ ২০২৫ সালের জানুয়ারির ৬ তারিখ। বিজয়ী প্রার্থী শপথ গ্রহণ করবেন ২০ জানুয়ারি ২০২৫।
অর্থাৎ মার্কিন নাগরিকরা প্রেসিডেন্ট নির্বাচন করেন না, তারা নির্বাচন করেন ইলেক্টোরাল কলেজ আর এই ইলেক্টোরাল কলেজরা পরবর্তীতে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন করেন।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট একই সাথে সরকার প্রধান, রাষ্ট্র প্রধান এবং সামরিক বাহিনীর কমান্ডার ইন চিফ।
আমেরিকাতে মোট রাজ্য ৫০। ৫০টি অঙ্গরাজ্যে মোট ইলেক্টোরাল ভোটের সংখ্যা ৫৩৮। যিনি ২৭০ টি ইলেক্টোরাল ভোট পাবে তিনি হবেন পরবর্তী প্রেসিডেন্ট।
কোন প্রার্থী যদি পপুলার ভোট বেশি পায় কিন্তু ইলেক্টোরাল ভোট ২৭০টি না পান তাহলে ভোট বেশি পাওয়া সত্ত্বেও তিনি প্রেসিডেন্ট হতে পারবেন না!
যেমন ২০১৬ সালের নির্বাচনে হিলারি মোট ভোট পান ৬ কোটি ৫৮ লাখ ৪৪ হাজার ৬ শত ১০ ভোট। ট্রাম্পের প্রাপ্ত ভোট সংখ্যা ছিল ৬ কোটি ২৯ লাখ ৭৯ হাজার ৬ শত ৩৬ ভোট। হিলারির থেকে ট্রাম্প ২৮ লাখ ৬৪ হাজার ৯ শত ৭৪ ভোট কম পেয়েও হোয়াইট হাউজ বগল দাবা করতে সক্ষম হন।
কারণ ট্রাম্পের প্রাপ্ত ইলেক্টোরাল কলেজ ভোট ছিল ৩০৪টি।
তবে যদি কেউ ২৭০ টি ইলেক্টোরাল ভোট না পায় তখন কী হবে?
সেক্ষেত্রে প্রথম তিন জন প্রার্থীর মধ্য থেকে প্রতিনিধি সভার গোপন ভোটের মাধ্যমে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত করা হবে।
আসল কথা হচ্ছে এবারের নির্বাচনে কে হবেন পরবর্তী প্রেসিডেন্ট?
এটা নির্ভর করবে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গরাজ্যের ইলেক্টোরাল ভোটের সংখ্যার উপর। কারণ কোন রাজ্যে যদি কোন দলের প্রার্থী জয় পায় তাহলে সে অঙ্গরাজ্যের সব ইলেক্টোরাল ভোট চলে যাবে সেই দলের প্রেসিডেন্ট প্রার্থীর পকেটে। টেক্সাস রাজ্যে যদি ডোনাল্ড ট্রাম্পের দল জয় পায় তাহলে সেখানকার ৩৮ টি ইলেক্টোরাল ভোট সরাসরি চলে যাবে ট্রাম্পের পকেটে। এ পদ্ধতিকে বলা হয় “উইনারস টেক অল”...
সেক্ষেত্রে নিউইয়র্ক, টেক্সাস, ক্যালিফোর্নিয়া এবং ফ্লোরিডা অঙ্গরাজ্য ট্রাম্প-কমলা দেবী দুজনের জন্যই এসিড টেস্ট। এ ৪টি রাজ্যে আছে ১৩৭টি "ইলেক্টোরাল" ভোট।
২০১৬ সালের নির্বাচনের ট্রাম্প ও হিলারি উভয়ই সমান সংখ্যক ২ টি রাজ্যে জয়লাভ করেন। এ ৪ টি রাজ্যে যে প্রার্থী যত বেশি সংখ্যক রাজ্যে জয় পাবে হোয়াইট হাউজের চাবি পাওয়া তার জন্য ততটা সহজ হবে।
কিন্তু প্রেসিডেন্ট হতে চাইলে জিততে হবে সুয়িং স্টেট বা ব্যাটেলগ্রাউন্ড বলে বিবেচিত রাজ্যগুলোতে। পেনসিলভানিয়া (২০), উইসকনসিন (১০), মিশিগান (১৬), নর্থ ক্যারোলাইনা (১৫), অ্যারিজোনা (১১), ফ্লোরিডা (২৯), কলোরাডো (৯), নেভাডা (৬), নিউ হ্যাম্পশায়ার (৪), ভার্জিনিয়া (১৩) মত রাজ্যগুলোতে।
এসব রাজ্যকে মূলত ব্যাটেল গ্রাউন্ড হিসেবে ধরা হয়। যেখানে ইলেক্টোরাল কলেজের সংখ্যা প্রায় ১৩০-১৪০। এই রাজ্যগুলোর বেশীরভাগ ইলেক্টোরাল কলেজের সংখ্যা যার দিকে বেশি যাবে তার হোয়াইট হাউজের টিকেট কনফার্ম।
একটা মজার বিষয় হচ্ছে, বিগত সকল নির্বাচন “ওহাইও”রাজ্যে যে দল বা প্রার্থী জয় পেয়েছে তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হয়েছে। এখন পর্যন্ত জরিপে ওহাইও রাজ্যে কমলা দেবী চেয়ে ডোনাল্ড ট্রাম্প ১০ শতাংশ এগিয়ে আছে। এ কারণে বলা হয়- উইন দা ওহাইও, উইন দা হোয়াইট হাউজ...
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিতে “অক্টোবর সারপ্রাইজ” বলে একটা ব্যাপার আছে। যেহেতু সংবিধান অনুসারে প্রতি ৪ বছর পর নভেম্বর মাসের প্রথম মঙ্গলবার নির্বাচন হয়, তাই সারপ্রাইজটাকে নভেম্বরের আগের মাস “অক্টোবর সারপ্রাইজ” বলা হয়।
নির্বাচনের আগে সাধারণত যে প্রার্থী সবচেয়ে বেশি এগিয়ে থাকে নির্বাচনের ঠিক আগ মুহুর্তে তার পরাজয়ের সম্ভাবনা প্রকট হয়, তাকেই "অক্টোবর সারপ্রাইজ" বলা হয়! যদি অক্টোবর সারপ্রাইজ ঘটে তাহলে ট্রাম্প জয়ী, আর যদি তা না ঘটে তাহলে কমলা দেবী জয়ী!
যদি ট্রাম্প হারে তাহলে নিঃসন্দেহে কমলা দেবী প্রেসিডেন্ট। আমেরিকার প্রেসিডেন্ট হবেন দক্ষিণ ভারতিয় বংশভুত শ্যামলা গোপালানের মেয়ে “কমলা দেবী হ্যারিস”!
রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট আব্রাহাম লিংকন ১৮৬৩ সালে দাশপ্রথা বিলুপ্ত করেন। দাশপ্রথা বিলুপ্ত করায় আততায়ীর গুলিতে প্রাণ হারান লিংকন।
সেই লিংকনের রিপাবলিকান পার্টির বিরুদ্ধে তোপ দাগিয়ে কালোদের প্রতিনিধি হিসেবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে প্রথমবারের মত কৃষ্ণাঙ্গ মহিলা প্রেসিডেন্ট হিসেবে নির্বাচিত হবার দৌঁড়ে বেশ ভালোই এগিয়ে কমলা দেবী হ্যারিস!
যদি তাই ঘটে, তাহলে লিংকন কী বলবেন?
হায় কমলা, তুমিও!
নব্বইয়ের দশকে নির্মিত হয়েছিল সুপারহিট চলচিত্র "কমলার বনবাস"! ৩৬ ঘণ্টা পর সবাই জেনে যাবে "কমলার বনবাস" হবে, না "ট্রাম্পের বনবাস" হবে!
কমলার বনবাস চলচিত্র দুই বাংলার দর্শকদের কাছে প্রচুর জনপ্রিয় ছিল। কিন্তু এবার যদি আমেরিকার নির্বাচনে কমলা দেবীর বনবাস না ঘটে তাহলে সেটা হজম করার শক্তি কী আছে বঙ্গ দেশের কতিপয় দর্শকদের!
কিন্তু ভুলে গেলে চলবে না দিন শেষে, ইটস দ্যা ইলেকটোরাল কলেজ দ্যাট ম্যাটার্স, নট উইনিং দ্যা পপুলার ভোট!
ভুপেন বলিল কর্তা, এমন মাইনকার চিপায় কখনো পড়ি নাই! এক দিকে ডোনাল্ড ট্রাম্প, আরেকদিকে ভারতীয় কমলা দেবী হ্যারিস!