06/10/2023
হজের সফরে এক
বিস্ময়কর নারীর সাথে সাক্ষাত
--------------------------------
আবদুস শহীদ নাসিম
----------------------------
আবদুল্লাহ ইবনুল মোবারক (রাহেমাহুল্লাহ ) বর্ননা করেছেন, তাঁর হজের সফরে এক বিস্ময়কর নারীর সংগে তাঁর সাক্ষাৎ হয় যিনি কুরআনের আয়াত দিয়ে ছাড়া কোনো কথা বলেন না। তিনি বলেন:
আমি বাইতুল্লায় হজ, অতপর রসূলুল্লাহর কবর যেয়ারতের উদ্দেশ্যে রওয়ানা করি। হঠাৎ আমি মরু পথে কালো একটা কিছু দেখতে পাই। জিনিসটা কী তা দেখার জন্যে আমার আগ্রহ দেখা দেয়।
কাছাকাছি গেলে বুঝতে পারি, তিনি একজন বয়স্ক মহিলা পশমি চাদর আর উড়না জড়িয়ে আছেন।
আমি: আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ ওয়া বারাকাতুহু।
মহিলা: سَلٰمٌ ۫ قَوْلًا مِّنْ رَّبٍّ رَّحِیْمٍ
(অর্থ: পরম দয়াবান প্রভুর পক্ষ থেকে সম্ভাষণ-‘সালাম’।)
সূত্র: সূরা ৩৬ ইয়াসিন: আয়াত ৫৮
আমি: আল্লাহ আপনার প্রতি রহম করুন, আপনি এখানে কী করেন?
মহিলা: سُبْحٰنَ الَّذِیْۤ اَسْرٰی بِعَبْدِهٖ لَیْلًا مِّنَ الْمَسْجِدِ الْحَرَامِ
(অর্থ: মহাবিশ্বের ত্রুটিহীন মহাপরিচালক তিনি, যিনি তাঁর দাসকে রাতের বেলা ভ্রমণ করিয়েছেন মসজিদুল হারাম থেকে।)
সূত্র: সূরা ১৭ ইসরা/বনি ইসরাঈল: আয়াত ১
আমি: তখন আমি বুঝতে পারলাম, তিনি হজ সম্পন্ন করে বায়তুল মাকদাস জেয়ারতের উদ্দেশ্যে রওয়ানা করেছেন। আমি জিজ্ঞেস করলাম, আপনি এখানে পড়ে আছেন কত সময় ধরে?
মহিলা: ثَلٰثَ لَیَالٍ سَوِیًّا
(অর্থ: ক্রমাগত তিন দিন।) সূত্র: সূরা ১৯ মরিয়ম: আয়াত ১০
আমি: আপনার সাথে তো পানাহারের কিছুই দেখছি না!
মহিলা: هُوَ یُطْعِمُنِیْ وَ یَسْقِیْنِ
(অর্থ: তিনিই আমাকে খাওয়ান পান করান।)
সূত্র: সূরা ২৬ আশ্ শোয়ারা: আয়াত ৭৯
আমি: আপনার সাথে তো পানি নেই, অযু করেন কিভাবে?
মহিলা: فَلَمْ تَجِدُوْا مَآءً فَتَیَمَّمُوْا صَعِیْدًا طَیِّبًا
(অর্থ: অতপর যদি পানি না পাও, তবে তাইয়াম্মুম করে নাও ভালো মাটি দিয়ে।) সূত্র: সূরা ৫ আল মায়েদা: আয়াত ৬
আমি: আমার সাথে খাবার আছে, আপনাকে আপ্যায়ন করতে পারি?
মহিলা: ثُمَّ اَتِمُّوا الصِّیَامَ اِلَی الَّیْلِ
(অর্থ: তারপর সওম পূর্ণ করো রাতের আগমন পর্যন্ত।)
সূত্র: সূরা ২ আল বাকারা: আয়াত ১৮৭
আমি: এটা তো রমজান মাস নয়!
মহিলা: وَ مَنْ تَطَوَّعَ خَیْرًا ۙ فَاِنَّ اللّٰهَ شَاكِرٌ عَلِیْمٌ
(অর্থ: যে কেউ স্বেচ্ছায় কল্যাণকর কাজ করবে, সে জেনে রাখুক, আল্লাহ অবশ্যি স্বেচ্ছা-কল্যাণ কাজের স্বীকৃতি ও মর্যাদা প্রদানকারী, সর্বজ্ঞানী।)
সূত্র: সূরা ২ আল বাকারা: আয়াত ১৫৮
আমি: আমাদের জন্যে তো সফরে রোজা ভঙ্গ করা মুবাহ করে দেয়া হয়েছে।
মহিলা: وَ اَنْ تَصُوْمُوْا خَیْرٌ لَّكُمْ اِنْ كُنْتُمْ تَعْلَمُوْنَ
(অর্থ: আর তোমরা যদি সওম পালন করো, সেটাই তোমাদের জন্যে উত্তম, তোমরা যদি বিষয়টি অনুধাবন করতে!) সূত্র: সূরা ২ আল বাকারা: আয়াত ১৮৪
আমি: আমি আপনার সাথে যেভাবে কথা বলছি, আপনি যে সেভাবে বলছেন না!
মহিলা: مَا یَلْفِظُ مِنْ قَوْلٍ اِلَّا لَدَیْهِ رَقِیْبٌ عَتِیْدٌ
(অর্থ: মানুষ যে কথাই উচ্চারণ করে তা রেকর্ড করার জন্যে দায়িত্বে নিয়োজিত একজন প্রহরী তার কাছেই রয়েছে।) সূত্র: সূরা ৫০ ক্বাফ: আয়াত ১৮
আমি: আমি তার জবাবে কেবলই বিস্মিত হচ্ছি। আমি তাকে বলি, আপনি কেমন মানুষ!?
মহিলা:
وَ لَا تَقْفُ مَا لَیْسَ لَكَ بِهٖ عِلْمٌ ؕ اِنَّ السَّمْعَ وَ الْبَصَرَ وَ الْفُؤَادَ كُلُّ اُولٰٓئِكَ كَانَ عَنْهُ مَسْـُٔوْلًا
(অর্থ: যে বিষয়ে তোমার এলেম নেই তার অনুসরণ করোনা। নিশ্চয়ই কান, চোখ, অন্তর এর প্রত্যেকটি সম্পর্কেই কৈফিয়ত চাওয়া হবে।)
সূত্র: সূরা ১৭ ইসরা/বনি ইসরাঈল: আয়াত ৩৬
আমি: দু:খিত, আমার ভুল হয়ে গেছে!
মহিলা: لَا تَثْرِیْبَ عَلَیْكُمُ الْیَوْمَ ؕ یَغْفِرُ اللّٰهُ لَكُمْ
(অর্থ: আজ আর তোমাদের বিরুদ্ধে (আমার) কোনো নিন্দা-ভৎর্সনা নেই। আল্লাহ তোমাদের ক্ষমা করুন।) সূত্র: সূরা ১২ ইউসুফ: আয়াত ৯২
আমি: আমি কি আপনাকে আমার উটে করে আপনার লোকদের কাছে কাফেলা পর্যন্ত এগিয়ে দিতে পারি?
মহিলা: وَ مَا تَفْعَلُوْا مِنْ خَیْرٍ یَّعْلَمْهُ اللّٰهُ
(অর্থ: তোমরা যে কোনো কল্যাণের কাজই করবে, আল্লাহ তা জানেন।)
সূত্র: সূরা ২ আল বাকারা: আয়াত ১৯৭
আমি: আমি আমার উটকে বসিয়ে দিলাম, যাতে করে তিনি উঠতে পারেন।
মহিলা: قُلْ لِّلْمُؤْمِنِیْنَ یَغُضُّوْا مِنْ اَبْصَارِهِمْ
(অর্থ: হে নবী! মুমিন পুরুষদের বলো: তারা যেনো (নারীদের থেকে) নিজেদের দৃষ্টি সংযত রাখে।) সূত্র: সূরা ২৪ আন্ নূর: আয়াত ৩০
আমি: তখন আমি আমার চক্ষু নত করি। কিন্ত তিনি যখনি উটে উঠতে যান, উট নড়েচড়ে সরে যায়। তাই তিনি উঠতে পারছিলেন না। আমি তার চাদরে ধরে তাকে টেনে উঠিয়ে দিতে চাই, কিন্তু ---
মহিলা: وَ مَاۤ اَصَابَكُمْ مِّنْ مُّصِیْبَةٍ فَبِمَا كَسَبَتْ اَیْدِیْكُمْ
(অর্থ: তোমাদের জীবনে যে দুর্দশা-দুর্ঘটনাই ঘটে, তা তোমাদেরই হাতের কামাই।) সূত্র: সূরা ৪২ আশ্ শূরা: আয়াত ৩০
আমি: আমি আপনার এ কথার মর্ম বুঝে উঠতে পারিনি।
মহিলা: فَفَهَّمْنٰهَا سُلَیْمٰنَ
(অর্থ: আমরা বিষয়টি সম্পর্কে সুলাইমানকে সঠিক বুঝ দিয়েছিলাম।)
সূত্র: সূরা ২১ আল আম্বিয়া: আয়াত ৭৯
আমি: তখন আমি উট কে থামিয়ে রাখি এবং তাঁকে বলি: উঠুন!
মহিলা: উঠতে উঠতে বলেন:
سُبْحٰنَ الَّذِیْ سَخَّرَ لَنَا هٰذَا وَ مَا كُنَّا لَهٗ مُقْرِنِیْنَ ـ وَ اِنَّاۤ اِلٰی رَبِّنَا لَمُنْقَلِبُوْنَ
(অর্থ: পবিত্র ও মহান তিনি, যিনি আমাদের নিয়ন্ত্রণাধীন করে দিয়েছেন এটিকে। আমরা তো এটাকে বশীভূত করতে সমর্থ ছিলাম না। আমরা অবশ্যি ফিরে যাবো আমাদের প্রভুর কাছে।) সূত্র: সূরা ৪৩ আয্ যুখরুফ: আয়াত ১৩-১৪
আমি: তখন আমি উটের লাগাম ধরে ওকে দ্রুত তাড়িয়ে নেয়ার চেষ্টা করি। কিন্তু-
মহিলা: وَ اقْصِدْ فِیْ مَشْیِكَ وَ اغْضُضْ مِنْ صَوْتِكَ
(অর্থ: চলাফেরায় মধ্যপন্থা অবলম্বন করবে এবং তোমার কণ্ঠস্বর রাখবে সংযত।) সূত্র: সূরা ৩১ লুকমান: আয়াত ১৯
আমি: তখন আমি ধীরে ধীরে উট চালাতে থাকি আর কবিতা আবৃত্তি করতে থাকি। কিন্তু -
মহিলা: فَاقْرَءُوْا مَا تَیَسَّرَ مِنَ الْقُرْاٰنِ
(অর্থ: কুরআনের যতোটুকু আবৃত্তি করা তোমাদের জন্যে সহজ, সেটাই আবৃত্তি করো।) সূত্র: সূরা ৭৩ আল মুযযাম্মিল: আয়াত ২০
আমি: لَقَدْ أُوْتِيْتُمْ خَيْرًا كَثِيْرًا
(আপনাকে অনেক কল্যাণ দান করা হয়েছে।)
মহিলা: وَمَا یَذَّكَّرُ اِلَّاۤ اُولُوا الْاَلْبَابِ
(অর্থ: তবে বুঝ-বুদ্ধিওয়ালা লোকেরা ছাড়া উপদেশ গ্রহণ করেনা।)
সূত্র: সূরা ২ আল বাকারা: আয়াত ২৬৯
আমি: কিছুক্ষণ পথ চলার পর আমি তাকে জিজ্ঞেস করি: আপনার স্বামী আছেন কি?
মহিলা: یٰۤاَیُّهَا الَّذِیْنَ اٰمَنُوْا لَا تَسْـَٔلُوْا عَنْ اَشْیَآءَ اِنْ تُبْدَ لَكُمْ تَسُؤْكُمْ
(অর্থ: হে ঈমানদার লোকেরা! তোমরা এমন সব বিষয়ে প্রশ্ন করোনা, যা তোমাদের কাছে প্রকাশ হলে তোমাদের কষ্ট দেবে।)
সূত্র: সূরা ৫ আল মায়েদা: আয়াত ১০১
আমি: তার কাফেলার কাছে পৌঁছা পর্যন্ত আমি আর তার সাথে কোনো কথা বলিনি। অতপর তার কাফেলার কাছে এলে আমি তাকে বলি এইযে আপনার কাফেলা। এখানে আপনার লোক কে?
মহিলা: اَلْمَالُ وَ الْبَنُوْنَ زِیْنَةُ الْحَیٰوةِ الدُّنْیَا
(অর্থ: ধনমাল এবং সন্তান-সন্ততি দুনিয়ার জীবনের একটি সৌন্দর্য মাত্র।)
সূত্র: সূরা ১৮ আল কাহাফ: আয়াত ৪৬
আমি: তখন আমি বুঝলাম, তাঁর ছেলেরা এ কাফেলায় আছে। আমি জিজ্ঞেস করলাম, তারা আপনার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে হজ করেছে? আর আপনাকে রেখেই রওয়ানা করেছে! ওরা চিনবে কিভাবে? আর আপনি ----!
মহিলা: وَ عَلٰمٰتٍ ؕ وَ بِالنَّجْمِ هُمْ یَهْتَدُوْنَ
(অর্থ: তাছাড়া রয়েছে নির্ণায়ক চিহ্নসমূহ, আর নক্ষত্রের সাহায্যেও তারা পথের নির্দেশনা পায়।) সূত্র: সূরা ১৬ আন্ নাহল: আয়াত ১৬
আমি: আমি এক টুকরা কাপড় নিয়ে তাকে বলি, আপনার ছেলেদের নাম বলুন, আমি এ কাপড়ে তাদের নাম লিখে তাদের ডেকে দিচ্ছি।
মহিলা: তাদের নাম বললেন:
وَ اتَّخَذَ اللّٰهُ اِبْرٰهِیْمَ خَلِیْلًا/ وَكَلَّمَ اللّٰهُ مُوْسٰی تَكْلِیْمًاۚ / یٰیَحْیٰی خُذِ الْكِتٰبَ بِقُوَّةٍ
(অর্থ: আর আল্লাহ্ তো ইবরাহিমকে নিজের বন্ধু হিসেবেই গ্রহণ করেছেন। সূত্র: সূরা ৪ আন্ নিসা: আয়াত ১২৫/ এছাড়া আল্লাহ্ মূসার সাথে সরাসরি কথা বলেছেন। সূত্র: সূরা ৪ আন্ নিসা: আয়াত ১৬৪/ হে ইয়াহিয়া! এই কিতাবকে শক্ত করে আঁকড়ে ধরো। সূত্র: সূরা ১৯ মরিয়ম: আয়াত ১২)
আমি: তখন আমি ইবরাহিম, মুসা, ইয়াহিয়া বলে ডাকাডাকি করলাম। অবিলম্বে চন্দ্রসম তিনটি যুবক এসে উপস্থিত হলো।
মহিলা: ছেলেদের উদ্দেশ্যে:
فَابْعَثُوْۤا اَحَدَكُمْ بِوَرِقِكُمْ هٰذِهٖۤ اِلَی الْمَدِیْنَةِ فَلْیَنْظُرْ اَیُّهَاۤ اَزْكٰی طَعَامًا فَلْیَاْتِكُمْ بِرِزْقٍ مِّنْهُ
(অর্থ: এখন তোমাদের একজনকে তোমাদের এই মুদ্রা নিয়ে শহরে পাঠাও, সে দেখুক কোন্ খাবার উত্তম এবং তা থেকে কিছু খাবার নিয়ে আসুক তোমাদের জন্যে।) সূত্র: সূরা ১৮ আল কাহাফ: আয়াত ১৯
তখন একটি ছেলে গিয়ে খাবার কিনে নিয়ে আসে।
মহিলা: كُلُوْا وَ اشْرَبُوْا هَنِیْٓـًٔۢا بِمَاۤ اَسْلَفْتُمْ فِی الْاَیَّامِ الْخَالِیَةِ
(অর্থ: খাও, পান করো পরিতুষ্টির সাথে, সেই কাজের বিনিময়ে যা তোমরা করেছিলে অতীত দিনে।
সূত্র: সূরা ৬৯ আল হাক্কাহ: আয়াত ২৪
আমি: শুনো ছেলেরা, তোমরা খাবার শুরু করার আগে আমাকে বলো, তোমাদের মা’র বিষয়টা কী?
ছেলে: মার বয়স এখন চল্লিশ। তিনি কুরআনের আয়াত উচ্চারণ ছাড়া আর কোনো কথা বলেন না। তিনি ভয় পান তার কোনো কথা ভুল হয়ে যায় কিনা, যার ফলে মহান আল্লাহ তাঁকে পাকড়াও করবেন!
আমি: ذٰلِكَ فَضْلُ اللّٰهِ یُؤْتِیْهِ مَنْ یَّشَآءُ ؕ وَ اللّٰهُ ذُو الْفَضْلِ الْعَظِیْمِ
(এটা আল্লাহর অনুগ্রহ, তিনি যাকে ইচ্ছা তা দান করেন। আল্লাহ্ অতীব অনুগ্রহপরায়ণ।) সূত্র: সূরা ৫৭ আল হাদিদ: আয়াত ২১
Repost
---------------------------------