04/26/2024
আমরা মনে করি দয়াল রাসূল (সাঃ)-এর যুগ থেকে তাসাউফটা এসেছে। আহলে সুফফা অর্থাৎ মসজিদে নববীর বারান্দা থেকেই মহান আল্লাহকে জানার বিজ্ঞানটা এসেছে। এজন্যই কিতাবে লিখেছে সউফ ধাতু থেকে তাসাউফ এসেছে। যারা পশমি কাপড় পড়তেন, যারা বারান্দার অধীবাসী তারাই হলেন সুফী।
আবার বিরোধিতা করতে গিয়ে বলেছে, হিন্দুদের বৈরাগীবাদ থেকে সূফীবাদ এসেছে। যারা সাধনা করতে বন-জঙ্গলে যেতেন, গাছের পাতা খেতেন, সংসারত্যাগী হতেন, ছালারচট পড়তেন তারাই সূফীবাদ প্রচার করেছেন। আচ্ছা, হযরত আদম (আঃ) থেকে শুরু করে আমাদের শেষ নবী হযরত মোহাম্মদ (সাঃ) পর্যন্ত ১ লক্ষ ২৪ হাজার নবী-রাসূলগন কোন জঙ্গলে গিয়েছিলেন❓অথচ সকল নবী ও রাসূলগন সমাজে থেকে, মানুষের কাছাকাছি থেকেই মহান আল্লাহর কথা নিজ নিজ জাতির কাছে তুলে ধরেছেন।
অতএব বিরোধিতা করতে হলে যোগ্যতা লাগে এই জ্ঞান যাদের হয়নি তাদেরকেই আমরা বলি, যারা বেশি অজ্ঞ তারাই হয়েছে ধর্মের বিশেষজ্ঞ। এই বিশেষজ্ঞরাই কিন্তু ধর্ম ডুবিয়েছে।
পবিত্র কুরআনে মহান আল্লাহ বলেন_ ওয়াল্লামাল আদামাল আছমাহা কুল্লাহা ছুম্মা আরদাহুম... অর্থাৎ হযরত আদম (আঃ) যে বিশেষ জ্ঞান লাভ করেছিলেন সেটাই ছিলো তাসাউফ। মহান আল্লাহ হযরত আদম (আঃ)-কে একটি লাল ও একটি কালো ষাড় গরু দিয়েছিলেন। তিনি এই দুইটি গরু দিয়ে জমিন আঁচড়ে গম চাষ শুরু করেন। অথচ বিজ্ঞান আজও বলতে পারেনি এই গম কোথা থেকে এসেছে। আবার হযরত নূহ (আঃ) গাছ কেটে তক্তা বানিয়ে নৌকার আবিস্কার করেছেন এবং হযরত সোলাইমান (আঃ) তামা গলিয়ে তৈজসপত্র বানিয়েছিলেন। তাহলে তো বোঝাই যায় সৃষ্টির আদিমতম বিজ্ঞানকেই তাসাউফ বলা হয়েছে। এই তাসাউফ সরাসরি মহান আল্লাহ থেকেই দয়াল রাসূল (সাঃ) পর্যন্ত ধারাবাহিক ভাবে এসেছে। কেউ এলমে ক্বালব বলে, কেউ এলমে মুকাশেবা বলে অথবা কেউ ক্বাশফে নফস বলে। যে যেভাবেই বলুক, বিদ্যা দুইটি।
একটি হলো মানুষের রচিত বিদ্যা আর অপরটি হলো মহান আল্লাহকে জানার বিদ্যা। অতএব জাহেরি বিদ্যা দিয়ে বাতেনি বিদ্যা মাপতে আইসেন না। কারন দুইটি দুই জগতের বিদ্যা।
সারাবিশ্বে তরিকার লোকদের সাথে শরিয়ত পন্থীদের বিরোধিতা আছেই। যারা মহান আল্লাহ ও দয়াল রাসূল (সাঃ)-কে বাস্তব জিবনে পাওয়ার জন্য তাসাউফের গুরুত্ব দিচ্ছে তাদের বিরুদ্ধেই ফতোয়া দেওয়া হচ্ছে। এটা কিন্তু শুরু থেকেই। তারা ধরেই নিয়েছে ঊর্ধ্ব জগৎ ছাড়া মহান আল্লাহকে পাওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। মানুষ মরবে, জান্নাতে যাবে তারপর মহান আল্লাহর সাথে দেখা হবে। হাশরেও তিনি ৭০ হাজার নুরের পর্দার আড়ালে থাকবে। আর এভাবেই চলছে বাকির আশায় মানুষের ধর্ম-কর্ম করা। তরিকা যদি আল্লাহ ও রাসূল (সাঃ)-কে পাওয়ার পথ হয় তাহলে মানুষের উচিত সেই পথ খুজে বের করা এবং বাস্তব বিদ্যাটা অর্জন করা।
মানুষ যদি বাস্তব ধর্মের খোজ করতো তাহলে এই ধর্মটাই আল্লাহ ও রাসূল (সাঃ)-কে পাওয়ার জন্য সবার আগে সাহায্য করতো।
হযরত আব্দুল কাদের জিলানী (রহঃ) বড়পীড় ছিলেন। উনি তো তরিকা করেই বড়পীর হয়েছেন। যারা কঠোর সাধনা করে ওই স্তর পর্যন্ত পৌঁছাতে পেরেছে তাদের বিদ্যাটাই সমাজে প্রকাশ হয়েছে এবং সেই পথেই মানুষ মহান আল্লাহ ও দয়াল রাসূল (সাঃ)-কে পেয়েছে। আবার, হযরত খাজা মঈনুদ্দিন চিশতি (রহঃ) তার চিন্তা-চেতনা দ্বারা যে মতবাদটা নিয়ে এসেছেন সেটাই চিশতিয়া তরিকা হিসেবে সমাজে প্রকাশ পেয়েছে। মূলে এই দুটি বিদ্যা হযরত আলী কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহু থেকে এসেছে। মোজাদ্দাদিয়া ও নকশবন্দিয়া তরিকা দুটি এসেছে হযরত সালমান ফারসি (রাঃ) থেকে।
বর্তমানের খানকাহ শরীফ ও দরবারগুলোর সেজরা শরীফে ১ম নাম হযরত আবু বকর লিখে রেখেছে যা সম্পুর্ন ভুল। তিনি ১ম খলিফা ছিলেন, তাই বড় দেখাতে গিয়ে প্রথমে তার নামটাই লিখে রেখেছে।
হযরত সালমান ফারসি (রাঃ) জিবনের প্রথম অবস্থায় দীর্ঘদিন বিভিন্ন গির্জায় গিয়ে প্রকৃত পাদ্রীদের সাথে থেকে তাসাউফ শিখেছিলেন। উনি যার কাছে তাসাউফ শিখতেন সে মৃত্যুর আগে আরেক জনের নাম বলে দিতেন। হযরত সালমান ফারসি (রাঃ)-এর শেষ পাদ্রী যিনি ছিলেন তিনি বলেছিলেন_আমি তো তোমাকে পরিপূর্ণ করতে পারলাম না, তবে আখেরী জামানায় মোহাম্মদ (সাঃ) নামের একজন নবী মদীনায় আসবেন। তিনি আহম্মদ হিসেবে প্রকাশ পাবেন আর তার নাম থাকবে মোহাম্মদ (সাঃ)। অতএব, তুমি তার কাছেই তরিকা গ্রহন করবে। তিনি সেই ওসিয়ত মেনে তার যাবতীয় ধন-সম্পদ নিয়ে মদীনার উদ্দেশ্যে রওনা দিলেন। যাওয়ার পথে যাযাবর ডাকাতদের হাতে লুট হলেন। ডাকাতরা তাকে বন্দি করলো এবং এক ধনী ব্যবসায়ীর কাছে ক্রীতদাস হিসেবে বিক্রি করে দিলো। যেহেতু ক্রীতদাস হয়ে গেছেন, তাই ওই ব্যবসায়ী তাকে খেজুর বাগান দেখাশোনার দায়িত্ব দিয়েছিলেন। তিনি একদিন গাছে উঠলেন খেজুর কাটার জন্য। গাছ থেকে শুনলেন কোনো এক পথিক হযরত মোহাম্মদ (সাঃ) এর কথা বলছে।
তিনি তো দয়াল রাসূল (সাঃ)-এর কাছে তরিকা গ্রহনের উদেশ্যেই মদীনায় এসেছিলেন। দয়াল রাসূল (সাঃ) যখন মক্কা থেকে হিজরত করে মদীনায় আসলেন তখন তো সবার কাছে প্রকাশ হয়ে গেলেন।
তিনি ওই পথিকের কথা শুনে দয়াল রাসূল (সাঃ)-এর দরবারে রওনা দিলেন। যাওয়ার পথে খেজুর বাগান হতে তিনি দুই প্রকারের খেজুর নিলেন। এর কারন হলো, হযরত সালমান ফারসি (রাঃ)-এর শেষ মোর্শেদ বলেছিলেন, মোহাম্মদ (সাঃ)-এর কাছে যখন যাবে তখন তঔফা বা নজরানা নিয়ে যাবে কারন তিনি জাকাত, ছদকা, দান করা কিছু গ্রহণ করেন না; আর তার পৃষ্ঠদেশে থাকবে নবুয়াত প্রাপ্তির নুরের মোহর। হযরত সালমান ফারসি (রাঃ) সেটাই পরিক্ষা করার জন্য এক প্রকার খেজুর ছদকা হিসবে নিলেন। যখন সেটা দিলেন দয়াল রাসূল (সাঃ) গ্রহন করলেন না। এরপর যেটা তঔফা হিসেবে দিলেন সেটাই দয়াল রাসূল (সাঃ) গ্রহন করলেন। এরপর সালমান ফারসি (রাঃ) দয়াল রাসূল (সাঃ)-এর পৃষ্ঠ মোবারকের কথা জিজ্ঞেস করলেন। দয়াল রাসূল (সাঃ) তার জামা মোবারক উঠিয়ে পিঠ মোবারকে নবুয়ত প্রাপ্তির সেই নুরময় মোহর দেখালেন। হযরত সালমান ফারসি (রাঃ) দয়াল রাসূল (সাঃ)-এর হাত ও কদম মোবারকে চুমু খেলেন এবং ইসলাম ধর্ম গ্রহন করলেন।
ইনি সেই সালমান ফারসি (রাঃ), যিনি ৩৫০ বছর জীবিত ছিলেন। তিনি ওই সাহাবী যিনি দয়াল রাসূল (সাঃ)-এর সাথে থেকে খন্দকের যুদ্ধে বিশেষ ভুমিকা পালন করেছিলেন।
কারবালার পর দুরাচার এজিদের ৮৯ বছর উমাইয়া খেলাফত আর আব্বাসিওদের ৫০৮ বছর ক্ষমতায় থাকার কারনে তাসাউফের অবশিষ্ট কিছুই তারা আর রাখেনি। যারাই তাসাউফের কথা বলেছে তাদেরকেই হত্যা করা হয়েছে এবং কৃত্রিম একটা ধর্ম সাজিয়ে রাষ্ট্রীয় ভাবে প্রচার করে গেছে। দুরাচার এজিদ বাহিনী মক্কা ও মদীনার সাহাবী এবং সাধারণ মানুষদের যেভাবে কচুকাটা করেছিলো তা রোমানদেরকেও হার মানিয়েছিলো। রোমান অ্যাম্পায়ার❗যারা একসময় বিশ্ব শাসন করেছে, যারা দুই লক্ষেরও বেশী সৈন্য নিয়ে চীন আক্রমণ করেছিলো। জেরুজালেম ও বায়তুল মুকাদ্দাস মসজিদের আশেপাশে যত ইহুদীরা বসবাস করতো তারা রোমানদের অধীনেই ধর্ম-কর্ম করতো।
বনী ইসরাইল জাতি❗যাদের মাথার উপর মহান আল্লাহ তুর পাহাড় তুলে ধরেছিলেন। যারা মৃত থেকে জিবিত হওয়ার পরও হযরত মূসা (আঃ)-কে মিথ্যাবাদী বলেছে। যারা ওয়াদা ভঙ্গ করে স্বর্নের বাছুর বানিয়ে ইবাদত করেছে।
এরাই সেই বনী ইসরাইলদের বংশধর। এরাই হযরত মূসা (আঃ)-এর দোহাই দিয়ে গির্জায় গির্জায় ফতোয়া দিতো আবার হযরত ঈসা (আঃ)-এর আগমনি বার্তা নিয়ে সারা শহর দৌড়ে বেড়াতো। হযরত ঈসা (আঃ) জন্মগ্রহন করে মায়ের কোলে কথা বললে এরাই কিন্তু সবার আগে পালিয়েছে। রোমান সাম্রাজ্য পতনের যে ভয়টা ছিলো তা নতুন নবীকে নিয়েই ছিলো। যেহেতু রোমানরাও হযরত ঈসা (আঃ)-কে হত্যার চক্রান্ত করতো; অতএব তাদের উপরেও মহান আল্লাহ অসুন্তুষ্ট হলেন।
মহান আল্লাহ দেখালেন আসহাবে কাহাফ অর্থাৎ গুহাবাসীদের মোজেজা। আর এই অলৌকিক ঘটনার মাধ্যমেই রোমান সাম্রাজ্য পতন করে দিলেন।
হযরত ইসা (আঃ)-এর প্রতি চরম হিংসা করা, তাকে সবসময় হত্যার চিন্তা করা এবং তাকে নবী না মানার কারনেই নির্ধারিত সময়ের পর মহান আল্লাহ হযরত ঈসা (আঃ)-কে নিজের কাছে উঠিয়ে নিলেন। কারন যারা বনী ইসরাইলের বংশধর তাদের স্বভাব মহান আল্লাহর ভালো করেই জানা। যাদের স্বভাব হলো সত্যকে অস্বীকার করা, যাদের চরিত্র ঠাট্টা-বিদ্রুপ করা ও নবী-রাসূলদের হত্যা করা। অতএব মহান আল্লাহ দেখিয়ে দিলেন তাদের স্বভাব, চরিত্রের মোজেজা। যে লোকটা পরিকল্পনা করে হযরত ঈসা (আঃ)-কে হত্যা করতে দলবল ভাড়া করেছিল; মহান আল্লাহ তাকেই হযরত ঈসা (আঃ)-এর হুবহু চেহাড়া দিয়ে দিলেন। ভাড়া করা দল হেরেই রশি দিয়ে বান দিলো, পিটাইলো এবং শুলে চড়ালো। চেহাড়া তো একদম হযরত ঈসা (আঃ)-এর মতই। কেউ তো জানে না যে, অলৌকিক ঘটনা একটা ঘটে গেছে।
অতএব, এখন সারা শহর দৌড়াও আর হযরত ঈসা (আঃ) ক্রুশবিদ্ধ হয়েছে এবং খ্রিস্টানরাই একমাত্র স্বর্গে যাবে বলে ফতোয়া দাও কোনো অসুবিধা নাই।
দয়াল রাসূল (সাঃ)-এর যে শান্তির বাণী রোমানরাসহ অন্য রাজা-বাদশাহরা শুনেছিলো, কুচক্রী মুয়াবিয়া ক্ষমতায় বসেই রোমসহ আশেপাশের সব জায়গায় যুদ্ধ বাজিয়ে সেই শান্তির ইসলামটা ধ্বংস করে দিলো। এজন্যই ইতালির মানুষ মুসলমানদের চরম ভাবে ঘৃণা করে। বর্তমানে তারাই মনে হয় শান্তিতে আছে। কোন ঝগড়াতে নাই, কোনো মারামারি-কাটাকাটিতেও নাই। অথচ এরাই রোমান❗যাদের ছিলো বিশাল সাম্রাজ্য এবং যাদের ছিলো সবচেয়ে শক্তিশালী সেনাবাহিনী। পরবর্তীতে তারা বিজ্ঞানে মনোযোগ দিলে সমুদ্রের বিশাল অংশ তাদের দখলে চলে আসে এবং মজবুত অর্থনৈতিক খুটি দাঁড় করিয়ে ফেলে। আর এদিকে মুসলমানরা তো গেছেই।
এর আগেও কুচক্রী মুয়াবিয়া যখন সিরিয়ার গভর্নর ছিলো তখনও সিফফিনের যুদ্ধ বাজিয়েছিলো। এই কুচক্রী মুয়াবিয়ার কারনেই হাজার হাজার সাহাবীদের জিবন দিতে হয়েছে।
দুরাচার এজিদের পর মারোয়ান, মারোয়ান হের বিবির হাতে হত্যা হওয়ার পর, তার পোলা ২য় এজিদ ক্ষমতায় বসে। হের নামও এজিদই। ২য় এজিদ ক্ষমতায় বসার পর হের গনক ফতোয়া দিলো রাষ্ট্রীয়ভাবে ছবি হারাম ঘোষণা করার। হের গনকের ফতোয়া ছিলো_ আপনি যদি ছবি হারাম করতে পারেন, তাহলে আপনার রাজত্ব বাড়বে আরো ৩০ বছর। ২য় এজিদ প্রাচীন আমলের অসংখ্য ছবিসহ নবী-রাসূলগনের যত ছবি সংরক্ষিত ছিলো সব ধ্বংস করে দিলো। এরপর দয়াল রাসূল (সাঃ)-এর নাম দিয়ে একটা কৃত্রিম হাদিস বানালো। নবী-রাসূলগনের ছবিগুলো মহান আল্লাহ হযরত আদম (আঃ)-এর কাছে প্রেরণ করেছিলেন এবং পর্যায়ক্রমে ওই পর্যন্ত গিয়েছিলো। তাদের এই কৃত্রিম হাদিসের কারনেই একসময় মানুষ বিনাবাক্যে ছবিকে হারাম বলতো।
তবে এখন আর হারাম বলে না, প্রয়োজনে জায়েজ বলে। ছবি জায়েজ এই কথা শুনলে মানুষ এখনো চমকে উঠে। এই ক্ষমতার লোভেই তারা তাসাউফ শেষ করেছিলো।
প্রায় ৬০০ বছর রাষ্ট্রীয়ভাবে তাসাউফ না থাকার কারনে মুসলমানরা মহান আল্লাহ থেকে দুরে সরে গিয়েছিলো। তারাই কিন্তু মহান আল্লাহকে নিরাকার বানিয়েছে। কৃত্রিম ধর্ম বাস্তবায়ন করতে গিয়ে মহান আল্লাহকে অস্বীকার করেছে। মনগড়া তাফসীর ও দয়াল রাসূল (সাঃ)-এর দোহাই দিয়ে যতসব মিথ্যা ও বানোয়াট হাদীস চালু করেছে। এরপর কিতাবের মাধ্যমে আরো শক্তিশালী করেছে। মুসলমানরাই যখন ওই স্বভাব, চরিত্র ধারন করে নিয়েছে, তাই মহান আল্লাহ তাসাউফটা পুনরুদ্ধার করে দিলেন উসমানী খেলাফতের মাধ্যমে। আর্তুগ্রুল গাজি নামের এক মহান যোদ্ধা থেকেই এই সাম্রাজ্যের শুরু। প্রথম অবস্থায় তিনি ছোট একটি সাম্রাজ্যের শাসনকর্তা ছিলেন যার আশপাশে ছিলো সেলজুক সাম্রাজ্য, বাইজেন্টাইন সাম্রাজ্য ও আনাতোলিয়া সাম্রাজ্য সহ বিভিন্ন অংশ। এরপর তারই ছেলে উসমান গাজি মসুলমানদের সঠিক খেলাফত উদ্ধার করে আনলেন।
মধ্যপ্রাচ্য থেকে শুরু করে পূর্ব ইউরোপ পর্যন্ত ছিলো বিশাল উসমানী সাম্রাজ্য। ১ম উসমান থেকে শুরু করে পর্যায়ক্রমে শেষের দিকে আসলেন সুলতান সুলেমান। তারা ক্ষমতায় ছিলো ৬০০ বছরের অধিক সময়।
অনেকে মনে করে সুলতান সুলেমান তুচ্ছ বিষয় নিয়ে তার দুই ছেলেকে মৃত্যুদন্ড দিয়েছিলেন। সবার মতে তার দুই ছেলে তারই মত সৎ ও ন্যায়পরায়ণ ছিলো। তার ভুল বিবেচনা এবং অযোগ্য খেলাফতের কারনেই উসমানী সাম্রাজ্যের পতন হয়েছিলো। সুলতান সুলেমান খেলাফত দিয়ে যান শাহজাদা সেলিমকে। পরবর্তীতে আসে ২য় সেলিম ও ৩য় মুরাদ। এরপর আসলো ৩য় মাহমুদ ও ২য় আহমেদ। এই ৩য় মাহমুদ তার ১৫ থেকে ২০ জন ভাইকে শুধু হত্যাই করেছে। তাহলে বোঝা যায় খেলাফত নিয়ে তারা কতটা হিংস্র হয়ে গিয়েছিলো। যাইহোক, অনেক লম্বা ঘটনা। উসমানী খেলাফতের পর আসলো বৃটিশরা। আমরা তাদের গোলামি করলাম ২০০ বছর।
আমরা মানি আর না মানি ধর্মের, বিজ্ঞানের এবং রাজনৈতিক শিক্ষা আমরা তাদের থেকেই শিখেছি। শিখেছি নির্বোধ হওয়া।
উসমানী খেলাফত পতনও করলো আবার কিভাবে ব্যঙ্গ করতে হয় তাও মুসলমানদের শিখিয়ে দিলো। নাম দিলো অটোমান অ্যাম্পায়ার। আমরা নির্বোধরাই মনে করি অটোমান হলো ইংরেজি নাম। আমরা যদি বোধ ওয়ালা প্রাণী হতাম তাহলে বুঝতাম মানুষের নামের কখনো বাংলা ইরেজি হয় না। একজন মানুষের নাম উসমান। অথচ তার নাম ব্যঙ্গ করে বলছি অটোমান। তারা আমাদের অজ্ঞ, বোকা ও মূর্খ বানিয়ে গেছে আর আমরাও সফল হয়েছি। বলতে পারবো নির্বোধ হওয়ার সর্বশেষ ক্লাস পর্যন্ত তো আমরা ছাত্র হতেই পারি। তারা আমাদের কি শিখাবে❓
অতএব এরা তারাই, যারা এবার বিজ্ঞানের শক্তি নিয়ে এসেছে। এরাই রোমান, ইহুদি ও খ্রিস্টান।
আমরা মনে করি তাদের রাজত্ব শেষ। সাম্রাজ্যবাদ অথবা উপনিবেশ নিয়ে যারা দুই কলম লিখছে তারা বুঝতেই চায় না, বিজ্ঞানের শক্তি কিন্তু তাদের হাতেই। তারা যতটুকু চেয়েছে এবং মানুষ কতটুকু শিখবে সেটা তারাই সেট করে রেখেছে টুইটার, গুগল অথবা উইকিপিডিয়াসহ সুন্দর সব নাম দিয়ে। তারা কিন্তু এখনো বলে আমরা যদি অপরাধ করি, নাফরমানি করি অথবা তোমাদের নবীদের নামে মন্দ কথা বলি; তাহলে তোমাদের স্রষ্টাকে বলো আমাদের ধ্বংস করে দিতে❗আমরাও নির্বোধের মত স্রষ্টার কাছে প্রার্থনা করি। যখন কাজ হয় না, তখন আমরা স্রষ্টার ক্ষমতার ব্যাপারে উদাসীন হয়ে পড়ি। আবার অনেকে এটাও ভেবে নিয়েছে যে, স্রষ্টাকে বিশ্বাস না করে তারা হয়তো ভালোই করেছে। এগুলো নতুন কথা নয়। যারা বাস্তব ধর্ম পালন করে তারা জানে স্রষ্টার প্রতিটা কাজ কত নিখুঁত।
স্রষ্টা মানুষকে ধ্বংস করার জন্য সৃষ্টি করেন নাই। চরম বিপর্যয় সৃষ্টি ছাড়া স্রষ্টা কোনো অবাধ্য জনগোষ্ঠীকে ধ্বংস করেন না।
সকল নবী ও রাসূলগনের প্রার্থনা এটাই ছিলো যে, কোনো কাফেরও যেনো আজাবে পতিত না হয়। এজন্যই যেসব জনপদে ওলী-আউলিয়ারা অবস্থান করেন, মহান আল্লাহ সেখানে আযাব-গজব দিতে চান না। বাস্তব ধর্ম থেকে দুরে সরে যাওয়ার কারনেই মানুষ মহান আল্লাহকে বিশ্বাস করতে পারছে না। যারা ওই স্বভাব ধারন করেছে তারাই এসব উল্টো পাল্টা ও ভুলভাল কথা বলে। আর যারা সত্য অস্বীকার করছে পবিত্র কুরআনে তাদেরকে কাফের নাম দেওয়া হয়েছে। তাদের গল্প বলেন, লিখেন কোনো অসুবিধা নাই। তবে নির্বোধের মত তাদের স্বভাব ধারণ কইরেন না।
ফতোয়া একসময় তারাও দিয়েছে। যখন থেকে ফতোয়া ছেড়ে দিয়েছে তখনই তারা রাজত্ব পেয়েছে।
অতএব ফতোয়া দেন আর যাই করেন, এই কৃত্রিম ধর্ম থেকে বের হতে না পারলে মহান আল্লাহকে কখনোই সন্তুষ্ট করতে পারবেন না। মহান আল্লাহকে অসুন্তুষ্ট করে সাহায্য চাওয়া বোকামি ছাড়া কিছুই না। কৃত্রিম ধর্ম পালন করে যত সাহায্য চাইবেন তত গজব পড়বে। মুসলমানদের উপর মহান আল্লাহ চরমভাবে অসুন্তুষ্ট বাস্তব জীবনে আমরা কমবেশি সবাই দেখছি। আমরা পশ্চিমাদের গোলামি করছি একমাত্র তাসাউফ ছেড়ে দেওয়ার কারনে। আমরা যেই মহান মালিকের কথা বলছি, সাহায্য চাইছি; বাস্তবে সেই মহান মালিককেই অস্বীকার করছি। অতএব যার মালিক নাই তার কোনো রাজত্ব নাই।
কপি ইফতেখার আহম্মেদ। ১৮/৮/২০২৩