04/08/2024
আচ্ছা বলুন তো কিয়ামতের দিনকে কেন কিয়ামতের দিন বলা হয়?
কারণ দিনটিতে সেদিন আমরা সবাই দাসের মতো কিয়াম করে থাকবো। কিয়াম অর্থ দাঁড়িয়ে থাকা অর্থাৎ সে দিন আমরা সবাই দাসের মতো দাঁড়িয়ে থাকবো। এই জন্যই দিনটির নাম "ইয়াওমুল কিয়ামাহ" বা "কিয়ামতের দিন"! কোনো এক অদ্ভুত কারণে তাঁর কাছে এই দাঁড়িয়ে থাকাটা খুবই পছন্দনীয় তাই তো বোধহয় নামাজে তিনি এই কিয়াম করাটা বাধ্যতামূলক করে দিয়েছেন। তাই বলছি নামাজে যখন দাঁড়াবেন "দাঁড়িয়ে থাকুন", যতক্ষণ ইচ্ছে দাঁড়িয়ে থাকুন। আর যেহেতু চুপ চাপ দাঁড়িয়ে থাকাটা বেমানান, উনারই পাঠানো বাণী গুলো সেথায় পড়তে থাকুন। তবে বর্তমানে আমাদের নামাজটা কেমন যেন অটোমেটিক হয়ে গিয়েছে, কেমন যেন ট্রিগার বেসড হয়ে গিয়েছে যেমন ফাতিহা শেষ তো সূরা স্টার্ট, সূরা শেষ তো রুকু স্টার্ট, রুকু শেষ তো আবার দাঁড়ানো স্টার্ট। পুরোই অটোমেটিক, খেয়াল করুন। যেই মুহূর্তে আপনার সূরা শেষ হলো, অমনি রুকুতে যাওয়ার জন্য মনটা কেমন যেন ছটফট শুরু করে। সাথে সাথে না গেলে অস্থির হয়ে উঠে কারণ অটোমেটিক রিদমটা ব্যাহত হচ্ছে যে! আমাদের এই অটোমেটিক ট্রিগার বেসড নামাজ থেকে বের হতে হবে।
রুকুতে যাওয়াটা হবে আমাদের চয়েসের উপর। আমার রবের সামনে দাঁড়িয়ে আছি, যতক্ষণ ইচ্ছে দাঁড়িয়ে থাকবো। আমার যখন মনে হবে আমি এখন রুকুতে যেতে চাই, তখনই আমি রুকুতে যাবো। অর্থাৎ যাওয়াটাও হবে আমার কনশাস ডিসিশনের উপর। নোট বেসড অন আমার সূরা শেষ হয়েছে তাই এখন আমায় যেতে হবে, এটা করতে হলে, আমাদেরকে মাইন্ডফুল হতে হবে। নাহলে সেই অটোপাইলোটেই নামাজ শেষে হতে থাকবে। আর নামাজ শেষে ভাবতে হবে, আচ্ছা দ্বিতীয় রাকাতে যেন কোন সুরাটা পড়েছিলাম?
নামাজে মাইন্ডফুল হওয়ার তিনটা টেকনিক আমাকে হেল্প করে।
প্রথমটা হলো অ্যাকটিভ প্রশ্ন!
সুরার মাঝেই নিজেকে মাঝে মাঝে একটিভলি প্রশ্ন করুন। আচ্ছা আমি এই মুহূর্তে কার সামনে দাঁড়িয়ে আছি? তিনি কি আমায় দেখছেন? তিনি কি আমার কথা গুলো শুনছেন? হ্যাঁ দেখছেন, প্লাস শুনছেনও। এমনকি তিনি আমার কথার জবাবও দিয়ে যাচ্ছেন! এটা করলে দেখবেন আপনার অটো পাইলট মুড দূর হয়ে যাচ্ছে। আপনি প্রেজেন্টে ফিরে এসেছেন। এই ফিরে আসাটাই আমাদের অবজেকটিভ
দ্বিতীয়টা হলো: তারতীল
প্রতিটা আয়াতের মাঝে এক থেকে দু সেকেন্ড গ্যাপ দিয়ে পড়ুন। প্রথম একটা আয়াত পড়ুন। তারপর ব্রেইন কে সেটা প্রসেস করতে একটু টাইম দিন। দেখবেন অযথা চিন্তা গুলো দূর হয়ে যাচ্ছে কারণ ব্রেইন সেটা প্রসেস করতে ব্যস্ত। অন্য চিন্তা করার আর সময় নেই তার। বিষয়টা প্র্যাকটিস করতে গেলে টের পাবেন কি নিদারুণ চেলেন্জিং একটা কাজ এটা। কারণ আমাদের ব্রেইন এই এক্সট্রা প্রসেসিং করাটা পছন্দ করে না। তার পছন্দ অটোপাইলট মুডের এফোর্টলেস নামাজ।
আর তৃতীয় পয়েন্ট হলো: বুঝে পড়া
কি পড়ছেন তা ওয়ার্ড বাই ওয়ার্ড বুঝার চেষ্টা করুন। আয়াত মুখস্ত করে না ওয়ার্ড বাই ওয়ার্ড মুখস্ত করে।
এই তিনটার সমন্বয় যদি ঘটাতে পারেন দেখবেন দাঁড়িয়ে থাকতে আর বিরক্ত লাগছে না বরং এনজয় করছেন। সাথে আরেকটা জিনিস বলে রাখা দরকার যে ওয়ার্ড বাই ওয়ার্ড বুঝে পড়তে গেলে আরেক মেজিকাল জিনিস ঘটবে। আপনার মেন্টাল মডেলে শিফট হতে শুরু করবে। কীভাবে?
একটা কেস স্টাডি দিচ্ছি। কিছুদিন পূর্বে রিজিক নিয়ে বেশ পেরেশানিতে ছিলাম। তখন নামাজের ভিতর একটা ছোট্ট পরিবর্তন আনি। মুখস্থ সূরা গুলো বাদ দিয়ে কিছু সিলেক্টেড আয়াত পড়া স্টার্ট করি বিশেষ করে আল ইমরানের ২৬ নং আয়াতটি যেখানে বলা হচ্ছে "ইজ্জতের মালিক আল্লাহ, বেইজ্জতের মালিকও আল্লাহ, তিনিই যাকে ইচ্ছে বেহিসাব বাড়িয়ে দেন, তিনিই রিজিকের মালিক আর রিজিকও তিনি যাকে ইচ্ছে বেহিসাব বাড়িয়ে দেন"। এভাবে পড়তে পড়তে দুদিনও লাগেনি, সব টেনশন গায়েব কারণ দৈনিক পাঁচবার যখন এই পাওয়ারফুল ইনফোটা আপনি কনসিউম করবেন সেটা তখন টনিকের মতো কাজে দিবে। অটো সাজেশনের মতো কাজ করবে, সাব কনসাসলি আপনার বিলিফ সিস্টেমকে টিউনড করবে যে "আমার রবই আমার রিজিকের ব্যবস্থা করবেন", এতো টেনশনের কি আছে?
এতো গেলো জাস্ট একটা এক্সাম্পল। কল্পনা করুন আপনি যখন এরকম চুম্বক চুম্বক মাইন্ডশীফটিং আয়াত গুলো পড়তে থাকবেন কি মারাত্মক কনফিডেন্টই না হয়ে উঠবেন দিন কে দিন। লাস্টলি আবারো বলি, যতক্ষণ পারেন দাঁড়িয়ে থাকুন। আপনি হয়ত রাসুলের (সাঃ) মতো বাকারার শেষ করে সূরা ইমরান পড়তে পারবেন না তবে আমপারার শেষ ১০টা সূরা তো অন্তত পড়তে পারবেন। তাই যদি হয় শুরু করে দিন। সূরা ফিল শেষ করেই রুকু তে যাওয়ার টেন্ডেন্সি রেসিস্ট করে সূরা কুরাইশ ধরুন, কুরাইশের পর মাউন ধরুন, তারপর কাউসার তারপর কাফিরুন। মনে রাখবেন কোনো তাড়া নেই আপনার। এরপর নাসের, লাহাব, ইখলাস, ফালাক শেষে নাস পড়ুন। তারপর সূরা যখন শেষ হবে কিছুটা সময় পস দিয়ে অপেক্ষা করুন। যখন মনে হবে আমি এখন মাথা নত করতে চাই তখন ফুল ইন্টেনশনে রবকে রুকু করুন। রুকুর তিন তাসবীহ শেষ হলেই উঠে দাঁড়ানোর টেম্পটেশনটা কন্ট্রোল করুন, রুকু অবস্থাতেই আবার ভাবুন, আচ্ছা! আমি কার সামনে নত হয়ে আছি? দাঁড়াতে দাঁড়াতে অবসার্ভ করুন আপনি কি বলছেন উঠতে উঠতে। আপনি বলছেন "সামি আল্লাহু লিমান হামিদা" অর্থাৎ "আল্লাহ শুনছেন তাঁর কথা, যে তাঁর প্রশংসা করছে"। অবসার্ভ করুন আপনি কিন্তু উঠেই বলে উঠলেন, "রাব্বানা লাকাল হামদ" অর্থাৎ "হে আমার রব! সকল প্রশংসা কিন্তু আপনারই" অর্থাৎ এই মুহূর্তে আপনি যা বলবেন আপনার রব তাই শুনবে! কারণ মাত্রই আপনি তাঁর প্রশংসা করলেন!
এই মাইন্ডসেট নিয়ে এখন সেজদায় যান। সিজদায় গিয়ে তাসবীহ শেষ করুন। আবারো বলি, তিন বার তাসবীহ শেষ হওয়া মাত্রই উঠে বসার টেম্পটেশন কন্ট্রোল করুন। আপনি তখনই উঠবেন যখন আপনার উঠতে ইচ্ছে করবে। এটা আপনার আর আপনার রবের ঘনিষ্ঠ মুহূর্ত, কাজেই মুহূর্তটা এনজয় করুন। লিস্ট ধরে ধরে যা যা চাওয়া দরকার চাইতে থাকুন, কারণ আমার রব এখন সব শুনছেন। কারণ মাত্রই আপনি তাঁর প্রশংসা করে এসেছেন!
সাধারণত, জামাতে পড়লে এভাবে পড়ার সুযোগ থাকে না আর জীবনে তো কখনো নফল পড়াই হয় না। তাহলে? তাহলে বলি কি, রমজানের এই শেষ ১০ রাত্রিগুলোই একটা সুযোগ। বেশি না জাস্ট দুটো রাকাত এভাবে একদিন ট্রাই করে দেখেন। আই প্রমিস, এক ভিন্ন স্বাদ পাবেন! একটা প্রচন্ড আকর্ষণ পেয়ে বসবে আপনাকে। দুটো রাকাতই শেষ হতে হতে দেখবেন লাগছে আধা ঘণ্টা। আর চার রাকাত শেষে হতে হতে তো দেখবেন পুরো এক ঘণ্টাই গায়েব!
তখন আর আপনি নামাজ কয় রাকাত পড়ছেন সেটা নিয়ে বদার্ড না কারণ ততক্ষণে আপনি বুঝে গিয়েছেন,
ইটস নট অ্যাবাউট দা কোয়ান্টিটি, ইটস অল অ্যাবাউট দা কোয়ালিটি!
লেখাটি সংগৃহিত
মূল লেখক কে তা জানি না। যিনিই হোন না কেন, আল্লাহ তা'লা ওনাকে উত্তম জাযা দান করুন এতো উত্তম একটি লেখনীর জন্য। আল্লাহ আমাদেরকে তাউফিক দান করুন উত্তম উপায়ে নামাজ আদায় করার। আমাদেরকে দয়াময় আল্লাহ যেন তাঁর আনুগত্যের প্রকৃত স্বাদ আস্বাদনের তাওফিক দান করেন। আল্লাহুম্মা আমিন।