চ্যানেলটি খুলি ২০১২ তে অনেক গুলো বিষয় মাথায় রেখে। ২০০৭ এ এমেরিকায় স্বামীর কাছে চলে আসার পর রান্না বান্না করতে গিয়ে অনেক সমস্যার সম্মুখিন হয়েছি। বিশেষ করে রান্নার উপকরন নিয়ে।
ঠেকতে ঠেকতে আর ট্রাই করতে করতে একটা সময় বুঝলাম যে রান্নার টেকনিক এবং টাইমিং টা বদলাতে হবে তাহলেই এখানেও দেশীয় স্বাদ পাওয়া সম্ভব।
২০১২ তে চ্যানেল খোলার পেছনে ২ টা কারন কাজ করে..
আমার এক বিদেশী জ্বা আমার রান্না খুবই পছন্দ করতো এবং আমার রেসিপি ফলো করে সে বাসায় রান্না করতো।
কিছু কিছু রেসিপি তে সে ফেইল হতো বিশেষ করে পোলাও জাতীয় খাবার।
তখন আমি বেশ কয়েকবার তাকে ফোনে আমার রান্না ভিডিও করে স্কাইপে তে পাঠাতাম।
ভিডিও একটু বড় হয়ে গেলেই ঝামেলা হতো পাঠাতে।
যার ফলে ডিসিশন নেই যে ইউটিউবে আপলোড করে তাকে লিংক দিলে সে যখন খুশি দেখতে পাবে।
দিত্বীয় কারন হলো রেসিপি মনে রাখা।
এমন অনেক রেসিপি আছে যা আমরা বছরে একবারই করে থাকি।
এবং একবার সেটা মজা হলে বছর ঘুরে পরেরবার আর সেইটা সেইম লাগেনা কারন আমরা এতোখানি সময়ের গ্যাপে নিজেরাই ভুলে যাই কিভাবে করেছিলাম।
চ্যানেল খোলা হলেও সেভাবে রেগুলার আপলোড করা হতো না।
২০১৫ তে আমার মা মারা গেলে তখন চ্যানেলটার প্রতি আগ্রহ টা বেড়ে যায়। আমার আম্মা খুব ভালো রাধতেন। অথচ তার অনেক রেসিপিই আমি করতে পারিনা
আমার বিদেশের মাটিতে বড় হওয়া তিনটা মেয়ে যেনো তার মায়ের রান্নার কৌশল তাদের মতো করে পায় সেই উদ্দেশ্যেই রেসিপি আপলোডের পরিমান বাড়িয়ে দেই।
প্রমিত ভাষায় নয়, আমার রেসিপি বর্ননার শুরুটাই ঠিক আমি দৈনন্দিন জীবনে বাংলা ইংরেজী মিলিয়ে যেভাবে কথা বলি সেভাবে।
যাতে করে আমার মেয়েরা বা তাদের বয়সী মেয়েরা বুঝতে পারে সহজেই।
মূলত প্রবাসী বাংলাদেশী এবং আমাদের পরবর্তী প্রজন্মদের সাংসারিক জীবনের শুরুতে কিচেন হেল্প হিসেবে কাজ করেছি আমি আমার চ্যানেলের পেছনে।
আমি সবসময় চেষ্টা করি রেসিপি যেমনই হোক টিচিং টা যেনো ইজি হয় কারন, “রান্না তো সহজই হওয়া উচিত, তাই না?”
এই স্লোগানে আমার চ্যানেল প্রতিনিয়ত কুকিং এবং লাইফষ্টাইল নিয়ে চমকপ্রদ এবং ভিন্ন আয়োজন হয়ে থাকে।
যেমন বাংলাদেশি রান্নার চ্যানেলগুলোর মধ্যে সর্বপ্রথম দর্শকদের জন্য উপহারের ট্রেন্ড শুরু হয় আমার চ্যানেলে।
রান্নার পাশাপাশি আমি হোম গার্ডেনিং এরও প্রতি সীজনাল সিরিজ করে থাকি
আরও আছে বিভিন্ন স্থানে ট্রাভেল ভ্লগ।
কিছুদিন আগে আমার চ্যানেলে “বান্ধবীর রান্নাঘরে” নামক ১১ পর্বের একটি সিরিজ প্রচারিত হয়
যেখানে পরিচিত/অপরিচিত ১১ জন প্রবাসী নারীর রান্নাঘরে তাদের রেসিপি ভিডিও করা হয়।
যা অসম্ভব সাড়া পাই
সম্প্রতি চ্যানেলে চলছে “ম্যান মেড” নামে নতুন একটি সেগমেন্ট। যার প্রথম দুটি পর্ব ইতোমধ্যেই প্রচার হয়ে গেছে।
এর এক একটি পর্বে প্রবাসী বাংলাদেশি পুরুষদের রান্নাঘর তারা নিজেদের একটি রেসিপি শেয়ার করেন।
পুরো রান্নার ভিডিওতে রান্না ছাড়াও তাদের বিভিন্ন প্রতিভা সামনে উঠে আসছে যা খুবই মুগ্ধ করবে দর্শকদের।
মজার ব্যাপার হচ্ছে এরা কেউই পেশায় রন্ধনশিল্পী নন।
এ ধরনের সম্পূর্ন ভিন্নধর্মী অনুষ্ঠান বাংলাদেশি কোনও ব্যাক্তিগত ইউটিউব চ্যানেলে এই প্রথম।
যেই ধরনের এক একজন ট্যালেন্টের দেখা মিলছে তা সত্যিই অবাক করার মতো।
এবং আমার মনে হয় এই ট্যালেন্টেড মানুষগুলোর খবর সাড়া বিশ্বের বাংগালিদের মাঝে ছড়িয়ে পরা উচিত
সামনে আরও অনেক বৈচিত্রতা নিয়ে ভাবি আমি।
আমি ক্রিয়েটিভ কাজ ভালোবাসি তাই ফলাফল কি পেলাম তাই নিয়ে ভাবিনি কখনও।
নিজের আত্মতৃপ্তির জন্য এই চ্যানেল আমার ভালোবাসা।
সেলিনা রহমান