03/05/2024
উসমানী সাম্রাজ্যের সর্বশেষ সিংহ।
আলেজিয়ার্সের সেজায়িরলি গাজী হাসান পাশা । (১৭১৩ - ১৯ মার্চ ১৭৯০) ছিলেন উসমানীয় সাম্রাজ্যের গ্র্যান্ড অ্যাডমিরাল বা কাপুদন পাশা (১৭৭০-৯০), গ্র্যান্ড ভিজিয়ার (১৭৯০) তিনি "সিংহ পাশা" হিসেবেও ততোধিক পরিচিত।
একজন তরুণ জানিসারি অবস্থায় তিনি একটি স্প্যানিশ যুদ্ধজাহাজ আটক করেন। জাহাজটির মালিকানা তিনি নিয়ে নেন আর তখন থেকেই তার জীবনের কিংবদন্তীতুল্য ঘটনাগুলোর সূত্রপাত ঘটে। আলজেয়ার্সে তিনি একটি সিংহ পোষ মানিয়ে নেন এবং শত্রু জাহাজ আটকের পর পোষা সিংহ নিয়ে তিনি গ্রেফতারকৃত জাহাজ পরিদর্শনে যেতেন।
যিনি আমেরিকাকে ট্যাক্স দিতে বাধ্য করেছিলেন। হ্যা, আপনি ঠিকই শুনেছেন, আমেরিকাও একসময় উসমানী সাম্রাজ্যকে ট্যাক্স দিতে বাধ্য ছিলো। ১৭০০ সালের মধ্যবর্তি সময়ের কথা।
আমেরিকা সবে মাত্র রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে । তখন উসমানী সাম্রাজ্যের নৌ বাহিনীর প্রধান ছিলেন এডমিরাল গাজি হাসান পাশা। যার নাম শুনামাত্র বিভিন্ন দেশের নৌ বাহিনীর অন্তরাত্মা কেঁপে উঠতো। তিনি সব সময় সাথে সিংহ নিয়ে চলাফেরা করতেন। তার দক্ষ নেতৃত্বে তখনও উসমানী সাম্রাজ্যের নৌ বাহিনী বিপুল বিক্রমে রাজত্ব করতো আটলান্টিক মহাসাগর, কৃষ্ণ সাগর, এবং ভূমধ্যসাগরে। এই তিনটি সাগল ছিলো উসমানীদের বাড়ীর পুকুর। সাম্রাজ্যের অনুমতি ছাড়া কোনো রাষ্ট্রের জাহাজ প্রবেশ করতে পারতোনা।
সেই সময় আমেরিকা মস্তানি করে তাদের পাঁচটি জাহাজ সৈন্য সহ ভূমধ্যসাগরে প্রবেশ করে। সাথে সাথে সাম্রাজ্যের নৌ বাহিনীর প্রধান গাজি হাসান পাশা তাদের দাওয়া করতে এবং আটক করতে নির্দেশ দেন। টানা পাঁচ ঘন্টা যুদ্ধের পর আমেরিকা নৌ বাহিনী পরাজয় বরন করে এবং উসমানী সাম্রাজ্যের নৌ বাহিনীর হাতে বন্দী হয়।
গাজি হাসান পাশা আটককৃত আমেরিকার সৈনিক এবং যুদ্ধ জাহাজ আলজেরিয়ার উপকূলে বেধে রাখেন। তখন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট জর্জ ওয়াশিংটন উসমানী সুলতানের কাছে তাদের সৈন্য এবং জাহাজ ফেরত চান।
তখন সুলতান জর্জ ওয়াশিংটনের কাছে বিশাল মুক্তিপণ দাবী করেন। এবং জর্জ ওয়াশিংটনকে সরাসরি নিজে এসে একটা চুক্তিপত্রে সাক্ষর করতে বলেন। বাধ্য হয়ে জর্জ ওয়াশিংটন নিজে এসে খলিফার সাথে চুক্তিপত্রে সাক্ষর করেন।
তিনি ভূমধ্যসাগরে অসংখ্য আমেরিকান যুদ্ধজাহাজ আটক এবং ধ্বংস করেন। আমেরিকার উপর কর আরোপ করেন।আমেরিকার স্বাধীনতার উসমানীয়রাই একমাত্র সাম্রাজ্য যারা আমেরিকাকে কর প্রয়োগে বাধ্য করে। তুর্কি ভাষায় আমেরিকার সাথে "ত্রিপলি চুক্তি"র ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। আমেরিকার ইতিহাসে এটিও প্রথম এবং একমাত্র চুক্তি যা কোন বিদেশী ভাষায় লিপিবদ্ধ হয়েছিল। আমেরিকা উসমানী সাম্রাজ্যকে এককালীন ৬,৪২,০০০টি উসমানী স্বর্ণখন্ড প্রদান করে এবং বছরে ১২,০০০টি স্বর্ণখন্ড প্রদানে বাধ্য ছিল। এই চুক্তি অনুযায়ী আমেরিকা উসমানী সাম্রাজ্যকে টানা আঠারো বছর ট্যাক্স দেয়।
আজকের তুরষ্কের ন্যাভাল একাডেমীগুলোর ভিত্তিপ্রস্তর তিনিই স্থাপন করে গেছেন। নিজের আয়কৃত অর্থ দিয়েই ৩ বছরের মধ্যে একটি নতুন এবং আধুনিক অটোমান নৌবহর তৈরি করেন। অসংখ্য মসজিদ এবং বিদ্যালয় স্থাপন করেছেন। নিঃসন্তান অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন এবং কোন পরিবারও রেখে যাননি। অসুস্থতা বা সম্ভবত বিষক্রমে আক্রান্ত হয়ে তিনি ১৭৯৯ সালের ১৯ মার্চ মারা যান। মহান আল্লাহ তা'য়ালা তাকে তার ইসলামের খেদমত স্বরুপ জান্নাত দান করুক (আমিন)
আহ! কোথায় হারিয়ে গেল আমাদের সেই বিশ্ব মুসলমানদের মাথার ছায়াদানকারী বটবৃক্ষ।