সাত রঙের গল্প/The story of seven colors

সাত রঙের গল্প/The story of seven colors Assalamu Alaikum I Md. Shahin Page has been opened for your entertainment I hope everyone will be wi
(58)

03/15/2024

মেঘে_ঢাকা_আকাশ
#পর্ব-২
আমিনুর রহমান

কখনো ভাবিনি খুব কাছের মানুষ গুলোই একসময় দূরে চলে যাবে। আমার বুঝ হওয়ার পর থেকে বাবা আমার সাথে কখনো এতোটা কষ্ট নিয়ে কথা বলেনি। আজ এতো বছর পর কেনো জানি মনে হচ্ছে আমি সন্তান হিসেবে ব্যর্থ। যে সন্তানের কারণে বাবা মায়ের চোখে জল আসে সে সন্তানের মতো হতভাগা হয়তো পৃথিবীতে আর দ্বিতীয় জন নেই। আমার ভিতরটা পুড়ে যাচ্ছিলো,মনে হচ্ছিলো এই যন্ত্রণা থেকে মৃত্যুও অনেক ভালো। কিন্তু আমি মরতে চাই না,জবাব দিতে চাই ওইসব মানুষদের যাদের কারণে আজ আমি নিঃস্ব, আমার আপন মানুষগুলোও আমাকে দূরে ঠেলে দিয়েছে। তাদেরকে জবাব দেওয়ার জন্য হলেও আমাকে বাঁচতে হবে। আমার কাছে টাকা পয়সা তেমন ছিলো না। বাসা থেকে বের হওয়ার আগে খুব ভয় কাজ করছিলো। কেথায় যাবো,কি খাবো,কি করবো এরকম হাজারো চিন্তা এসে মস্তিষ্কের মাঝে বাসা বাঁধতে লাগলো। এতোদিন তো থাকা খাওয়া নিয়ে কোনো চিন্তা করতে হতো না। সারাদিন যাই করি না কেনো দিন শেষে মায়ের হাতের খাবারটা পেতাম,আরামে চিন্তাহীন ভাবে তুলতুলে নরম বালিশে মাথা রেখে রাতটা কাটিয়ে দিতে পারতাম। কিন্তু এখন কি পারবো? পারবো না। কারণ এখন আমার ওপর বাবা নামক বটগাছটা আর নেই। যার ছায়ায় আমি এতোটাদিন বেঁচে ছিলাম,আজ সেই মানুষটা তাঁর ছায়া আমার ওপর থেকে সরিয়ে নিয়েছেন।

কিছুক্ষণ পরেই আমি আমার ভালোবাসার মানুষগুলোকে ছেড়ে চলে যাবো। জানি না আর কোনোদিন তাদের সাথে দেখা হবে কিনা। বাবাকে বলে রাতটা থেকে যেতে চেয়েছিলাম। মা আর বোনের সাথে শেষ বারের মতো গল্প করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু কথাটা বাবাকে বলার মতো সাহস করে উঠতে পারিনি। ওইতো বোনটাকে আজ কতো সুন্দর লাগছে। টেবিলে বসে বই পড়ছিলো, আমাকে দেখেই উঠে দাঁড়ালো। আমাকে দেখে বলল,
"ভাইয়া কিছু বলবে?" আমি কিছু বলতে পারলাম না। দুইমাস হতে চলল ঠিকমতো আমার সাথে আমার বোনটা কথা বলেনি। আজ আমার সাথে কথা বলল। তাহলে কি বাবার মতো সেও জানে আজকের পর থেকে তাঁর ভাইটাকে আর সে চাইলেও ভাইয়া ডাকতে পারবে না৷ শেষবারের মতো ভাইয়া ডেকে নিজেকে সান্ত্বনা দিচ্ছে? কতো ইচ্ছে ছিলো বোনটাকে নিজের হাতে বউ সাজাবো,বোনকে বউয়ের সাজে দেখার ইচ্ছেটা বোধয় সব ভাইয়েরই পূরণ হয় না। আমারও হবে না। তাতে কি? মানুষের জীবনে তো আর সব ইচ্ছেই পূরণ হয় না। আমারও হবে না৷ তবে মনের ভিতর দুঃখটা থেকেই যায়। শেষবারের মতো বলতে ইচ্ছে করছিলো,আরেকবার ভাইয়া বলে ডাক। তোর মুখ থেকে ভাইয়া ডাকটা শুনতে অনেক ভালো লাগে৷ কিন্তু আমি বললাম না। কি দরকার শুধু শুধু মায়া বাড়িয়ে? অথচ আজকের পর থেকে এই ডাকটা না শুনেই আমাকে প্রতিটা রাত কাটাতে হবে।

মায়ের রুমে যখন গেলাম তখন মা আমাকে দেখে মুখ ঘুরিয়ে নিলো। মনে হলো মা আমার সাথে কথা বলতে চায় না,আমার মুখটা দেখতে চায় না। কিন্তু আমি তো তাঁর মুখ না দেখে থাকতে পারি না,অনেক কষ্ট হয়। তাহলে কি মাও বাবার কথাটা জানে? তাহলে যে বাবা মাকে বলতে না বলল। বাবার মতো মাও আমাকে ঘৃণা করে,সন্তান হিসেবে পরিচয় দিতে লজ্জাবোধ করে? অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকার পরেও মা কোনো কথা বলল না,তখনও মা অন্য দিকে চেয়ে আছেন। আমি আর তখন আমার চোখের বিশুদ্ধ পানিটাকে ধরে রাখতে পারলাম না। নিজের অজান্তেই চোখ দুটো জলে ভিজে গেলো। মা হয়তো আমার চোখের জল দেখতে পেয়েছিলো কিংবা পায়নি। যখন আমি চলে আসতে নিলাম ঠিক তখন মা আমার সাথে কথা বললেন। মায়ের কথাটা শুনে আমার ভিতরটাতে এতো এতো ভালো লাগা কাজ করলো যেটা আমি পাঠকদেরকে লিখে বুঝাতে পারবো না। আমার চোখের জলটাকে তুচ্ছ মনে হলো। মা যখন বলল,

"কিছু বলবি বাবা?" তখন আমি জল মুছতে মুছতে মায়ের দিকে এগিয়ে গেলাম। বলতে চাইলাম,

"মা দেখো,বাবা আমাকে বাড়ি থেকে চলে যেতে বলেছেন। আমার কারণে নাকি আমার বোনের বিয়ে ভেঙে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে। তুমিই বলো মা? আমি কি তোমাদের ছেড়ে থাকতে পারবো? কখনো কি থেকেছি? জীবনে একটা রাতও তো তোমাদেরকে ছাড়া কাটাইনি। একটা বছর কিভাবে থাকবো? বাবা কি জানে না আমার যাওয়ার কোনো জায়গা নাই। বাবা কি জানে না আমার কাছে খাওয়ার মতো কোনো টাকা নাই। বাবা কি জানে না তোমার হাতের রান্না না খেলে আমার পেটে খাবার হজম হয় না। তুমি বাবাকে বলে ম্যানেজ করো মা। আমি থাকতে পারবো না তোমাদের ছাড়া। যতোটা দিন বাঁচবো তোমাদের মাঝেই আমি বেঁচে থাকতে চাই। তোমাদের ছাড়া আমার জীবনটা অপূর্ণ।"

কিন্তু আমি বলতে পারলাম না। বাবার সেই কথাটা মনে পড়ে গেলো৷ আমি মাকে গিয়ে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে লাগলাম। মা তখন বলল,

"কাঁদছিস কেনো? কি হয়েছে তোর আমাকে বল?"

আমি মায়ের প্রশ্নের জবাবে কিছু বলতে পারলাম না শুধু বললাম,
"আমাকে ক্ষমা করে দিও মা। আমি তোমাদের স্বপ্নটা পূরণ করতে পারিনি। আমার জন্য মানুষের কাছে তোমাদেরকে অনেক ছোট হতে হয়েছে৷ তবে বিশ্বাস করো মা আমি এমন কিছু করিনি। তোমার ছেলে কি এমন কাজ করতে পারে,তুমিই বলো মা? তুমিই তো আমাকে জন্ম দিয়েছো,আমার প্রতি তোমার বিশ্বাস থেকে বলো। আমি কি এমন কিছু করতে পারি?"

মা কিছু বলে না। আমিও কথাগুলো বলে চলে আসি। জানি না মা কথাগুলো বিশ্বাস করেছে কিনা। সেটা নিয়ে ভাবছিও না। এখন বিশ্বাস করলেই তো আমি আমার হারানো দিনগুলো আর ফিরে পাবো না। আমার বাইশ বছরের জীবনে কখনো এভাবে মাকে জড়িয়ে ধরিনি। হয়তো লজ্জা কিংবা সংকোচ যে কারণেই হোক না কেনো মাকে কখনো জড়িয়ে ধরা হয়নি। তবে আজ যখন মাকে জড়িয়ে ধরলাম তখন আমি একটা জিনিস উপলব্ধি করলাম। মাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদার মতো সুখ এই পৃথিবীতে আর কিছু হতে পারে না। আমি যখন মাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদছিলাম তখন মনে হলো আমি পৃথিবীর সবচাইতে বিশুদ্ধ আর পবিত্র মানুষটাকে জড়িয়ে ধরে আছি।

এখন প্রায় রাত বারোটা বাজে। বাসার সবাই ঘুমিয়ে গেছে৷ বাবা বলেছিলেন আমি চলে যাওয়ার কথাটা কেউ যেনো জানতে না পারে। সেটাই করছি। সত্যি বলতে যেতে ইচ্ছে করছিলো না আবার থাকার মতো অবস্থাতেও আমি নেই। বাড়ির বাহিরে চলে এসেছি,আর চাইলেও আমি এই বাসায় যেতে পারবো না। কারণ এই বাসার মানুষগুলোকে আমি সবসময় ভালো দেখতে চাই। তাদেরকে আমি কোনো সুখ দিতে না পারলেও কোনো দুঃখ দিতে চাই না। তাই বাবার বাঁধ্য সন্তান হয়ে বাবার কথামতো বাসা থেকে চলে যাচ্ছি। শেষবারের মতো যখন জানালার দিকে তাকালাম তখন কাউকে দেখতে পেলাম না। অথচ আমি আশা করেছিলাম বাবা আমার চলে যাওয়াটা দেখবে,শেষ বারের মতো আমাকে দেখবে। কিন্তু এমনটা হলো না।

ফোনটা আবার হাতে নিলাম। অন্তত কয়েকটা রাত কারো না কারো বাসায় থাকতে হবে। এতো রাতে কার বাসায় যাবো এটা ভাবতেই মনে হলো, এতো রাতে কাউকে বিরক্ত করা ঠিক হবে না। আজকের রাতটা না হয় ফুটপাতেই কাটাই। কতো মানুষ তো তাদের সারাটা জীবন রাস্তায় কাটালো,আমি না হয় একটা রাতের জন্য ফুটপাতের মানুষ হয়ে গেলাম। যদিও আমি জানি আমার আর ফুটপাতের মানুষগুলোর মাঝে কোনো পার্থক্য নেই এখন। কারণ তাদের মতো আমারও এখন কোনো আপন মানুষ নেই। কিছু সময় আগে সবকিছু ত্যাগ করে আমাকে চলে আসতে হয়েছে। এখন আমি একা,বড়ই একা। আমার জীবনে আপন কিংবা পর কেউ নাই। আমার একাকিত্বের জীবনের শুরু আজ। জানি না এই একাকিত্বের সাথে লড়াই করে কতোদিন টিকতে পারবো আমি।

ফোনটা চেক করতেই দেখলাম বাহাত্তরটা মিসড কল। মিলির সাথে কথা বলার পর ফোনটার প্রতি আর মনোযোগ দেওয়া হয়নি। একবার শুধু দেখেছিলাম মিলি অনেকবার ফোন দিয়েছে। তখন ফোনে কথা বলার মতো অবস্থা ছিলো না তাই এড়িয়ে গিয়েছিলাম। আমি নিজেই মিলিকে ফোন দিতে চাইলাম। কিন্তু দেখলাম অনেক রাত হয়ে গেছে। এতো রাতে মিলি হয়তো ঘুমিয়ে গেছে তাই ফোন দিবো কি দিবো না এটা নিয়ে দ্বিধায় পড়ে গেলাম। সবশেষে যখন রাতটা কোনোক্রমেই পাড় হচ্ছিলো না তখন মিলিকে ফোন দিলাম। ফোন দেওয়ার সাথে সাথেই মিলি ফোন ধরে ফেলবে এটা ভাবিনি। তাঁর মানে এতোক্ষণ সে জেগে ছিলো। ফোন রিসিভ করে মিলি খুব কড়া গলায় বলল।

"সমস্যা কি তোমার? নিজেকে কি মনে করো তুমি? এতো বড় জঘন্য একটা কাজ করেও তুমি আমার সাথে ভাব নিচ্ছো? আমাকে ইগনোর করছো? কতোবার ফোন দিয়েছি হিসাব করেছো? আমার তোমাকে এড়িয়ে চলা উচিত সেখানে তুমিই আমাকে এড়িয়ে চলছো। ব্রেকআপের পর তুমি যদি একটিবার ফোন দিয়ে সরি বলতে তাহলে আমি সব ভুলে যেতাম,তোমাকে বুকে টেনে নিতাম। কিন্তু তুমি সেটাও করোনি। কেনো করোনি? তোমার ইগোর কারণে,তাইতো? আজ যখন এতোদিন পর নিজ থেকে ফোন দিলাম তখন তুমি আমার ফোন ধরতে চাও না,ফোন কেটে দাও।"

আমি মিলিকে আমার কষ্টের কথা বলতে চাইলাম। বলতে চাইলাম আমার নিঃস্ব হওয়ার কথা। তাকে বলতে চাইলাম আমার বাবা আমাকে বাড়ি থেকে এক বছরের জন্য বের করে দিয়েছেন। এক বছরের জন্য না সবসময়ের জন্য। কারণ আমি হয়তো আর ওই বাড়িতে কোনোদিন পা রাখবো না৷ কিন্তু বললাম না। আমার কষ্টের কথা কাউকে জানাতে চাই না আমি। আর মিলি আমার এখন কেউ না। তাকে বললে হয়তো সে মজা নিবে। সুখের কথা মানুষকে বলা যায়,মানুষের সাথে শেয়ার করা যায়। কিন্তু দুঃখের কথা কখনো কাউকে বলতে নেই,তাহলে মানুষ মজা নিবে। আমিও আমার দুঃখটা শুধু আমার মাঝেই লুকায়িত রাখতে চাই,কাউকে বলতে চাই না।

আমি মিলিকে বললাম,
"একটু সমস্যা হয়েছিলো তাই ফোনটা ধরিনি। সমস্যা নেই তুমি তোমার যতো রাগ আছে আমার ওপর ঝাড়তে পারো আমি কিছু মনে করবো না। তবে তোমার কাছে আমার একটাই অনুরোধ আমার ওপর কোনো অভিযোগ রেখো না।"
আমার কথা শুনে মিলি ফোনটা রেখে দেয়। তাঁর ফোন রেখে দেওয়ার কারণটা আমি খুঁজতে গেলাম না। হয়তো আমার কাপুরুষের মতো আত্মসমর্পণটা সে মেনে নিতে পারেনি তাই ফোনটা রেখে দিয়েছে।

চলবে.......

03/15/2024

আমার ছাত্রী অবনিকে পড়াতে গিয়ে দেখলাম তাঁর আম্মু একটা ছেলের সাথে খুব অন্তরঙ্গ হয়ে বসে আছে। আমি তাদের দুজনকে দেখে লজ্জায় মুখ ঘুরিয়ে নিলাম। আমাকে দেখে তারা নিজেরাও নিজেদেরকে গুছিয়ে নিলো। আসলে মানুষের আসল চেহারাটা বুঝা যায় না। অবনির মা যে এরকম একটা খারাপ কাজ করতে পারে এটা কখনো আমার ভাবনায় আসেনি। তবে চাহিদার প্রয়োজনে মানুষ অনেক জঘন্য কাজও করে থাকে। নিজের থেকে বয়সে অনেক ছোট ছেলের সাথেও মানুষ প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তুলতে পারে সেটা আমি আজ বুঝলাম। আমি কিছু বলার আগেই অবনির মা আমাকে বলল,অবনি তো এখনো স্কুল থেকে ফেরেনি। আর আজ তুমি এতো আগেই পড়াতে আসবে সেটা বলবে না?

তখন আমি বললাম আজ মাসের শেষ তারিখ। তাই একটু আগেই পড়াতে এসেছি,টাকাটাও দরকার ছিলো।"

তখন অবনিরা মা বলল,
আচ্ছা ঠিক আছে। তুমি বসো আমি টাকা নিয়ে আসছি।"

কিছুক্ষণ পর অবনির মা এসে আমার হাতে দশ হাজার টাকা দিয়ে বলল,

"ও হচ্ছে আমার খালাতো ভাই সুজন। অবনিকে ওর কথা বলার দরকার নেই। তোমাকে অগ্রিম মাসের টাকাটাও দিয়ে দিলাম। তোমার নাকি টাকার সমস্যা বলেছিলে। আজকে পড়াতে হবে না তুমি বরং কালকে এসো।"

টাকাটা নিয়ে আমি চলে আসি। অবনিকে পড়াই আজ ছয়মাস হতে চলল। সত্যি বলতে অবনিকে আমি টাকার জন্যই পড়াই। অবনির বাবার টাকা পয়সার কোনো অভাব নেই। তাঁর বাবা বিদেশ থাকেন তাই আমাকে মাস শেষে পাঁচ হাজার টাকা দিতে কোনো সমস্যা হয় না। দশ হাজার টাকা পেয়ে সেখান থেকে মাকে চার হাজার টাকা দিলাম। আর বোনকে এক হাজার টাকা। বাকিগুলো আমার প্রয়োজনে কাজে লাগাবো রেখে দিলাম। মাকে দেওয়া এটা আমার প্রথম কোনো উপহার। আমি এর আগে কখনো মাকে টাকা দেইনি। টাকা দেওয়ার পর মায়ের চোখে যে আনন্দটা দেখেছিলাম সেটার কাছে পৃথিবীর সব আনন্দ তুচ্ছ। এক হাজার টাকা পেয়ে আমার বোন এতোটা খুশি হবে ভাবিনি। কিন্তু যখন টাকা পেয়ে সে আমাকে খুশিতে জড়িয়ে ধরে ভাইয়া বলল। তখন মনে হলো এমন বোনের জন্য জীবনে কিছু করতে না পারলে জীবনের কাছে ঋণী থেকে যাবো।

পরের দিন অবনিকে পড়াতে গিয়ে দেখলাম অবনি খুব সুন্দর করে সেজেছে। আকাশী রঙের শাড়িতে মেয়েটাকে অন্য দিনের চেয়ে আজ একটু বেশিই সুন্দর লাগছে। তাই পড়ানোর সময় তাঁর দিক থেকে কেনো জানি চোখ সরাতে পারছিলাম না। আমার এমন অবস্থা দেখে অবনি বলল,

"স্যার আপনার কি কোনো গার্লফ্রেন্ড আছে?"

নিজের ছাত্রীর মুখে এমন প্রশ্ন শুনে কিছুটা আনইজি ফিল করলাম। তারপরেও ধমকের শুরু বললাম।

"এসব কি প্রশ্ন? আমার গার্লফ্রেন্ড দিয়ে তুমি কি করবে? বাচ্চাদের এসব জানতে হয় না। তুমি পড়াশোনায় মনোযোগ দাও।"

তখন অবনি বলল,

"কে পিচ্চি? দেখেন আমি কতো বড় হয়ে গিয়েছি। আর ক্লাস নাইনে পড়া একটা মেয়েকে বাচ্চা বলা মোটেও উচিত না। আমার এক বান্ধবির বিয়ে হয়েছে,বাচ্চার মাও হয়ে গেছে। আর আপনি আমাকে বাচ্চা বলছেন।"

অবনির কথায় ঠিক। অবনিকে আজ মোটেও বাচ্চা বাচ্চা লাগছে না। বড়ই মনে হচ্ছে। শাড়ি পড়লে ছোট মেয়েদেরকেও অনেক বড় মনে হয়। অবনিকেও আজ বড়দের মতোই মনে হচ্ছে। আমি অবনির কথা এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলেও পারলাম না। অবনি আবার জিগ্যেস করলো।

"স্যার আপনি কিন্তু বললেন না,আপনার কোনো গার্লফ্রেন্ড আছে নাকি?"

তখন বাঁধ্য হয়ে বললাম।

"ছিলো একসময় তবে এখন নেই। এবার খুশি তুমি? তোমার প্রশ্নের উত্তর খুুঁজে পেয়েছো।"

তখন অবনির চোখেমুখে অনেক আনন্দ দেখতে পেলাম। আমার গার্লফ্রেন্ড নেই শুনে অবনি এতোটা খুশি হলো কেনো বুঝতে পারলাম না।

প্রায় ছয় মাস পর হঠাৎ করেই জানতে পারলাম অবনির মা প্রেগন্যান্ট। এমন অবস্থায় সব জায়গায় জানাজানি হয়ে গেলো। যেহেতু অবনিদের বাসায় আমি বাদে আর কোনো ছেলে যাওয়া আসা করতো না তাই সবাই আমার দিকে আঙুল তুলতে লাগলো,আমাকে সন্দেহ করতে লাগলো। অবনির মা যখন আমাকেই দোষ দিলো তখন আমার মরে যেতে ইচ্ছে করছিলো। অবনির মা নিজেকে বাঁচানোর জন্য আমার নামে যে এতো বড় একটা মিথ্যা কথা বলবে আমি কখনো কল্পনা করিনি। অবনির সামনে সেদিন কি লজ্জাটাই না পেয়েছিলাম। কোনো অপরাধ না করেও আমি অবনির চোখের দিকে তাকাতে পারিনি। অবনি অনেক ঘৃণা নিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে ছিলো। সে কাঁদতে কাঁদতে যখন বলল।

"স্যার আপনি চাইলে তো আমিই আপনাকে এই সুখটা দিতাম। আপনাকে আমি ভালোবাসতাম। আর আপনি কিনা আমার মায়ের সাথেই এটা করলেন? আপনার প্রতি যে রেসপেক্ট ছিলো সেটা আপনি রাখেননি। আপনি কখনোই একজন শিক্ষক হওয়ার যোগ্যতা রাখেন না।"

কথা গুলোই বলেই অবনি আমাকে ধাক্কা দিয়ে তাদের বাড়ি থেকে বের করে দেয়। আমিও চলে আসি। এলাকার সবাই জেনে গিয়েছে বিষয়টা। তাই লজ্জায় কারো সামনে যেতে পারতাম না। বাসায়ও চুপচাপ থাকতাম,মা বাবা বোন কেউ আমার সাথে আগের মতো কথা বলে না। আমার জীবনটা যেনো একাকিত্বের এক নরকে পরিণত হলো। ঠিক এমন সময় আমার নরকীয় জীবনটাকে আরও বিষাক্ত করে তুলতে ফোন দিলো আমার প্রাক্তন।

মিলির সাথে আমার দুই বছরের সম্পর্ক ছিলো। হঠাৎ করেই একদিন প্রচণ্ড রাগারাগি হলো দুজনের মাঝে। সেদিনই ব্রেকআপ করলাম আমরা। তারপরে আমি আর তাকে কোনোদিন ফোন দেইনি। কারণ আমি আমার ইগোর সাথে কখনো আপোষ করতে চাইনি। সেও কখনো ফোন দেয়নি। আজ এতোদিন পর কেনো ফোন দিলো সেটার কারণ খুঁজতে গেলাম না। ফোনটা রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে ভেসে আসলো চির পরিচিত সেই কণ্ঠস্বর।

"তোমার সাথে বিচ্ছেদ হয়ে ভালোই হয়েছে। এমন একটা কাজ করবে কখনো ভাবিনি।"

"আমি ভেবেছিলাম এতোদিন পর ফোন দিয়ে তুমি জানতে চাইবে আমি কেমন আছি? কিন্তু তা না করে কাটা ঘায়ে নুনের ছিটা দিচ্ছো? এটা বলার জন্যই কি ফোন দিয়েছো?"

"সেটা বলার প্রয়োজন মনে হয়নি কারণ তুমি ভালোই আছো। সেজন্যই হয়তো নিজের থেকে বয়সে অনেক বড় একটা মেয়ের সাথেও অবৈধ সম্পর্কে জড়াতে পেরেছো। ভালো না থাকলে মানুষ এমন কাজ করতে পারে? বল।"

"আর সবাই না হয় আমার সম্পর্কে জানে না তাই এমনটা বলছে। কিন্তু তুমি তো আমার সম্পর্কে সব জানো,আমাকে চেনো আমি কেমন মানুষ। তারপরেও এমনটা বললে? তোমার সাথে তো দুইটা বছর রিলেশন করেছি কখনো তো একটা চুমুও খেতে চাইনি তোমাকে। তুমিই বল,তোমার সাথে যদি আমি ফিজিক্যাল রিলেশন করতে চাইতাম তাহলে কি তুমি না করতে? আমার তো মনে হয় না তুমি না করতে। যেখানে তোমার মতো মেয়ের সাথে এমনটা করিনি সেখানে আমার থেকে বয়সে বড় একটা মহিলার সাথে এটা করবো কি করে ভাবলে তুমি?"

ঠিক এমন সময় বাবা আমার রুমে এসে পড়ায় আমি ফোনটা কেটে দিলাম। দীর্ঘ দুইমাস পর আমার রুমে কেউ আসলো,আমার সাথে কেউ কথা বলল। আমার তো ভালো লাগার কথা,খুশি হওয়ার কথা। কিন্তু আমি খুশি হতে পারলাম না বরং বাবার কথাগুলো শুনে চোখের পানিটাকে অনেক চেষ্টা করেও ধরে রাখতে পারলাম না।

বাবা যখন বললেন,

"কয়েকদিন পর তোর বোনকে দেখতে আসবে। আমি চাই না তোর কারণে আমার মেয়ের বিয়েটা ভেঙে যাক। তুই এক বছরের জন্য এই বাড়ি থেকে চলে যা। সবাই জানবে তোকে আমরা ত্যাজ্যপুত্র করেছি। তোর সাথে আমাদের কোনো সম্পর্ক নেই। একবছরে যদি কিছু করতে না পারিস,নিজের বেঁচে থাকার মতো অবস্থা তৈরি করতে না পারিস তাহলে চলে আসিস। তখন তোর বোনের বিয়ে হয়ে যাবে। তাই আর কোনো সমস্যা হবে না। তবে আমি চাইবো না তুই আর কখনো এই বাড়িতে ফিরে আস। তোর কারণে আমি আমার মান সম্মান সব হারিয়েছি। কাজটা করার আগে তোর ভাবা উচিত ছিলো তোর সাথে তোর পরিবারের মানসম্মানটাও মিশে আসে। যাইহোক তোর মাকে আমি এখনো কথাটা বলিনি। তুই চলে যাওয়ার পরেই বলবো। আজ রাতেই চলে যাবি। তোর মা কিংবা বোনের সাথে দেখার করার দরকার নেই। টাকা লাগলে বল,দিয়ে দিবো।"

আমি কিছু বলতে পারলাম না। আমি জীবনে কোনোদিনও চিন্তা করিনি আমার বাবা আমার প্রতি এতো কঠোর হবেন কখনো। কাঁদতে কাঁদতে শুধু বললাম।

"না কোনো টাকা লাগবে না।"

আমি লক্ষ্য করলাম আমার কান্না ভেজা কণ্ঠটাও বাবার ভিতরটাকে নাড়া দিতে পারলো না। বাবা আমার রুম থেকে চলে গেলেন।

ফোনের দিকে তাকাতেই দেখলাম একুশবার ফোন দিয়েছে মিলি। এখনো দিয়েই যাচ্ছে। তাঁর ফোনটা ধরতে ইচ্ছে করছিলো না। কারণ সবকিছু গোছগাছ করতে হবে,আজকেই বাবা আমাকে চলে যেতে বলেছেন। জানি না কোথায় যাবো,যাওয়ার মতো তেমন কোনো জায়গাও নেই। তবে যেতো তো হবে। পৃথিবীটা তো অনেক বড়,কোথাও না কোথাও তো জায়গা হবে?

চলবে..........

মেঘে_ঢাকা_আকাশ
#পর্ব-১

লেখাঃ আমিনুর রহমান

02/05/2024

বাবার মৃ'তদে'হ সামনে রেখে বললাম " বাবার ঋণদার যারা আছেন,আপনাদের পাওনা টাকা আমাকে জানাবেন।বাবার ঋণ আমি শোধ করবো "
ছোট বোন আমার হাত চেপে ধরে বললো " ভাইয়া,তুই শোধ করবি কিভাবে? তুই নিজেই তো ৫ বছর ধরে কোনো চাকরি পাচ্ছিস না।বেকারত্বের শিকার হয়ে টাকা শোধ করবি কিভাবে? "
বোনকে অভয় দিয়ে বললাম " শত কষ্ট হলেও শোধ করবো বোন "
সারারাত আমার ঘুম হলো না।বোনের বিয়ের বয়স হয়ে গেছে।পরিবারের খরচ নাহয় কোনোরকম চালাবো,কিন্তু বোনের বিয়ে কিভাবে দিবো?
পরেরদিনই ঋণদাতারা এসে বাড়িতে হাজির।বাইরে বেড় হয়ে এতো লোককে দেখে ঘামে আমার কপাল ভিজে উঠলো।মৃদু স্বরে বললাম
" আপনারা বাবার কাছে কত টাকা পান বলুন।আমি চেষ্টা করবো শোধ করার "
ওদের মধ্যে থেকে একজন এগিয়ে এসে বললো " আমরা ব্যাংক থেকে এসছি।উনি তার ছেলে মেয়ের নামে ৭ লাখ টাকা সঞ্চয় করে রেখে গেছেন।কাইন্ডলি ব্যাংকে যোগাযোগ করুন "
একথা বলে তিনি চলে গেলেন।বাকি লোকগুলিও ছোট ছোট সমিতি থেকে এসছেন। ওরা জানালেন বাবা ওদের সমিতিতে প্রতিদিন ২০ টাকা করে সঞ্চয় রাখতেন।
রাতে সব মিলিয়ে হিসেব করে দেখলাম বাবা আমাদের জন্য মোট ১১ লাখ টাকা সঞ্চয় করে রেখে গেছেন।মনে পড়ে গেলো সেদিন রাতের কথা।যে রাতে আমি বাবাকে বলেছিলাম
" আপনি কেমন বাবা?আমার ভবিষ্যতের নিয়ে আপনার কোনো চিন্তা আছে?দরকার নেই আমার এমন বাবার "
বাবা তখন মৃদু হেসে বলেছিলেন " আমার সাধ্য মতো চেষ্টা করছি।সময় হলেই পেয়ে যাবে "
হ্যা সে সময়টা এখন এসে গেছে।কিন্তু বাবা চলে গেছে দূরে,ওই তারাদের কাছে।আমি আকাশের দিকে দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললাম
" বাবা,আজ পর্যন্ত তোমায় কখনো বুঝতে পারলাম না।এখন বুঝতে পারছি,কেন তুমি এক শার্ট পড়েই একটা বছর কাটিয়ে দিতে "
#বাবা
©️❤️

02/02/2024

"""""""""একটি শিক্ষনীয় গল্প"""""'"'""
--------------------------------------------------
এক ব্যাক্তি জঙ্গলে গেল একটা প্রজাপতি ধরে আনার জন্য। লোকটার হাতে কিছু সময় দিয়ে একটা ঘাড়ি বেঁধে দেওয়া হলো।

তারপর লোকটা জঙ্গলে গিয়ে একটা প্রজাপতির পেছন ছুটতে শুরু করলো।
ছুটতে ছুটতে লোকটা তার সামনে কি যেন দেখতে পেল। প্রজাপতির কথা ভুলে লোকটা ঐ বস্তুকে নিয়ে তার থলের ভেতর রাখলো।

হঠাৎ তার আবার ঐ প্রজাপতির কথা মনে পরলো। তাই সে আবার ছোটা শুরু করলো। আগের বারের মতোই তার সামনে ২য় বস্তুটা পড়লো। প্রজাপতির কথা সে আবার ভুলে গেল। এবং ঐ বস্তুকে লোকটা যত্ন করে থলের ভেতর রাখলো।

এতে লোকটার থলে অনেক ভারি হয়ে গেল।
প্রজাপতির কথা পুনরায় মনে পরায় লোকটা বহু কষ্টে আবার ছুটতে লাগলো।

তারপর লোভি ব্যাক্তিটা আবার একই ঘটনা ঘটাল। সে ৩য় বস্তুটাও থলের ভেতর রাখলো। তারপর সে
প্রতিজ্ঞা করলো, এবার সামনে যাই পড়ুক না কেন, সে প্রজাপতি ছারা আর কিছুই নেবে না।

এমন সময় তার হাতের ঘড়িটা বলে উঠলো, তোর সময় শেষ। তাই লোকটা প্রজাপতি না নিয়েই ফিরতে বাধ্য হলো। কিন্তু তার থলেটা এতই ভারি ছিল যে, সে এক পাও নরতে পারছিল না। তাই সে থলেটা রেখে শূন্য হাতেই জঙ্গল থেকে চলে এল।

আপনি কি জানেন? লোকটা কে ছিল? অবাক হলেও এটাই সত্যি, এই ব্যাক্তিটা স্বয়ং আপনি। হ্যাঁ আপনিই।

ওই জঙ্গলটা হচ্ছে পৃথিবী।
ওই প্রজাপতিটা হলো নেকি, আর আপনি নেকি সংগ্রহ করতেই পৃথিবীতে এসেছেন।
১ম বস্তুটা হলো টাকা-পয়সা।
২য় বস্তুটা হলো বাড়ি-গাড়ি।
৩য় বস্তুটা হলো ধন-সম্পদ যা আপনাকে বার বার নেকি অর্জনের কথা ভুলিয়ে দেয়।
ঐ ঘড়িটা হচ্ছে আয়ু।
আয়ু শেষ হয়ে গেলে সব সম্পত্তি রেখে শূন্য হাতেই আপনাকে এই মায়ার দুনিয়া ছেরে চলে যেতে হবে!!
©️®
সাত রঙের গল্প/The story of seven colors

Address

Chattogram
Chattanooga, TN

Alerts

Be the first to know and let us send you an email when সাত রঙের গল্প/The story of seven colors posts news and promotions. Your email address will not be used for any other purpose, and you can unsubscribe at any time.

Contact The Business

Send a message to সাত রঙের গল্প/The story of seven colors:

Videos

Share