04/03/2021
🚫তাগুত কি❓ও এর প্রকারভেদঃ---
[Every Muslim must know about this topic]
আরবি طاغوت এর মূল অর্থ সীমালঙ্ঘন করা৷ লিসানুল আরব অভিধান মতে-
كُلُّ مُجَاوِزِ حَدَّهُ فِي الـعِصْيَانِ طَاغِِ
"যে বা যারা আনুগত্যের ক্ষেত্রে সীমালঙ্ঘন করে তারাই তাগুত৷"
তাগুত শব্দ এসেছে “তাগা” যার অর্থ “সীমা লংঘন করা”।
ঈমানের পূর্ব শর্ত সমস্ত তাগূতকে অস্বীকার করা৷
فَمن َيَّكْفُرْ بِالطَّاغُوْتِ وَيُؤْمِنْ بِاللّٰهِ فَقَدِسْتَمْسَكَ بِالْعُرْوَةِ الْوسْقٰي ـ
"সুতরাং যারা তাগুতকে অস্বীকার করবে এবং আল্লাহর প্রতি ঈমান আনবে তারা আল্লাহর রজ্জুকে (দ্বীনকে) দৃরভাবে ধারণ করবে৷"
[সূরা বাক্বারা: ২৫৬]
এখানে প্রথমে তাগুতকে অস্বীকার করা, পরে ঈমান আনার কথা বলা হয়েছে৷ অর্থাৎ যে তাগুতকে অস্বীকার করবে সে-ই ঈমান আনবে অন্যথায় নয়।
আল্লাহ ছাড়া যা কিছুর উপাসনা করা হয় এবং যে এতে রাজি-খুশি থাকে, তাকে তাগুত বলা হয়। প্রত্যেক অনুসৃত অথবা আল্লাহ ও তার রাসুলের আনুগত্য বাদ দিয়ে যাদের আনুগত্য করা হয় তাদেরকেও তাগুত বলা হয়।
মহান আল্লাহ বলেনঃ
وَلَقَدْ بَعَثْنَا فِي كُلِّ اُمَّةٍ رَسُوْلًا اَنِ اعْبُدُوا اللّٰهَ وَاجْتَنِبُوا الطَّاغُوتَ ـ
“আমি প্রত্যেক উম্মাত (জাতির) কাছেই রাসুল পাঠিয়েছি, যেন তারা একমাত্র আল্লাহর ইবাদত করে এবং তাগুত থেকে বেচে থাকে। (সুরা আন-নাহলঃ ৩৬)
এখানেও তাগুতকে বর্জন করে আল্লাহর ইবাদত করতে বলা হয়েছে৷ واجتنبوا الطاغوت হলেই তাওহীদ অর্জন হবে বা ইমান অর্জন হবে, আর ইমান থাকলেই কেবল ان اعبدوا الله বা ইবাদত মনজুর হবে ৷ অন্যথায় সম্ভব নয়৷ তাগুত এবং তাওহীদ একইসাথে থাকা অসম্ভব৷
(ইবাদত কবুল হওয়ার জন্য ঈমান রাখা শর্ত, ঈমানের শর্ত সমস্ত তাগুতকে বর্জণ করা৷)
মোটকথা ঈমান এবং ইবাদাতের গ্রহণযোগ্যতার জন্য সমস্ত তাগুতকে বর্জন করা শর্ত৷
অন্যথায় ঈমান আনাও হবে না, কোন ধরণের ইবাদাতও কবুল হবে না৷
⭕তাগুত অনেক প্রকারের আছে তার থেকে প্রধান ৫ প্রকার উল্লেখ করা হলোঃ-
⛔১. ইবলিশঃ সে আল্লাহ ছাড়া অন্যের ইবাদতের দিকে আহব্বান করে।
“হে বনী-আদম! আমি কি তোমাদেরকে বলে রাখিনি যে, শয়তানের এবাদত করো না, সে তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু? এবং আমার এবাদত কর। এটাই সরল পথ।
(সুরা ইয়াসিনঃ ৬০-৬১)
সুতরাং আল্লাহ ছাড়া যাকিছুর উপাসনা করা হয় এর মূলে রয়েছে ইবলিশ। সেই হচ্ছে সমস্ত শিরকের হোতা।
⛔২. আল্লাহর আইন বিরোধী শাসকঃ যে আল্লাহর বিধান পরিবর্তন করে দেয় এবং মানুষের বানানো শাসনতন্ত্র কায়েম করে। যেমন কেউ যদি বলে, “চোরের শাস্তি হাত কাটা বর্বরতা, হত্যার শাস্তি (কেসাস), জিনার শাস্তি (রজম) বর্তমান যুগে চলবেনা”... কিন্তু,
মহান আল্লাহ আল কুরআনে বলেন:-
"যে পুরুষ চুরি করে এবং যে নারী চুরি করে তাদের হাত কেটে দাও তাদের কৃতকর্মের সাজা হিসেবে। আল্লাহর পক্ষ থেকে হুশিয়ারী। আল্লাহ পরাক্রান্ত, জ্ঞানময়।" (সূরা আল মায়িদাহ:-৩৮)
আল্লাহ আরো বলেছেন দেখুনঃ
“হে ঈমানদারগন! তোমাদের প্রতি নিহতদের ব্যাপারে কেসাস গ্রহণ করা বিধিবদ্ধ করা হয়েছে। স্বাধীন ব্যক্তি স্বাধীন ব্যক্তির বদলায়, দাস দাসের বদলায় এবং নারী নারীর বদলায়। অতঃপর তার ভাইয়ের তরফ থেকে যদি কাউকে কিছুটা মাফ করে দেয়া হয়, তবে প্রচলিত নিয়মের অনুসরণ করবে এবং ভালভাবে তাকে তা প্রদান করতে হবে। এটা তোমাদের পালনকর্তার তরফ থেকে সহজ এবং বিশেষ অনুগ্রহ। এরপরও যে ব্যাক্তি বাড়াবাড়ি করে, তার জন্য রয়েছে বেদনাদায়ক আযাব। হে বুদ্ধিমানগণ! কেসাসের মধ্যে তোমাদের জন্যে জীবন রয়েছে, যাতে তোমরা সাবধান হতে পার।”
(সুরা বাকারাহঃ ১৭৮-১৭৯)
যারা আল্লাহর আনুগত্য ছেড়ে অন্য কারো আনুগত্য করতে নির্দেশ দেয় বা বাধ্য করে, আল্লাহর বিধান বাদ দিয়ে অন্য বিধান বানায় অতঃপর তা পালন করতে উৎসাহিত/বাধ্য করে এবং অন্ধকার বা গোমরাহীর দিকে আহ্বান/উৎসাহিত করে তারা তাগুত৷ যারা তাদেরকে অনুসরণ করে তারা তাগুতের অনুসারী। মহান আল্লাহ বলেন:-
"যেসব লোক আল্লাহ যা অবতীর্ণ করেছেন, তদানুযায়ী ফয়সালা করে না তারাই জালেম।"
(সূরা আল মায়িদাহ:-৪৫)
সুতরাং, মানব জীবনেরে যেকোন সমস্যায় কুরআনের ফায়সালা অনুযায়ী রাসূল (সাঃ)কে বিচারক সাব্যস্ত করে তার সমাধান করে নেয়া এবং সেমতে কাজ করা ফরয ৷ কুরআনের বাণীসমূহের উপর আমল করা মহানবী সাঃ এর যুগেই সীমিত নয় বরং তাঁর তিরোধানের পর শরীয়তের মীমাংসাই হলো তাঁর মীমাংসা৷ এবার আসুন দেখি আদৌ মানুষের ইচ্ছামতো বিধান তৈরী করার ক্ষমতা আছে কিনা ?
এবিষয়ে আল কুরআনে মহান আল্লাহ বলেন:-
"আল্লাহ ছাড়া কারও বিধান দেবার ক্ষমতা নেই। তিনি আদেশ দিয়েছেন যে, তিনি ব্যতীত অন্য কারও এবাদত করো না। এটাই সরল পথ। কিন্তু অধিকাংশ লোক তা জানে না।"
(সূরা ইউসুফ:-৪০)
[সূত্র: তাফসিরে মা'য়ারিফুল কুরআন]
এ সমর্থনে কুরানে এসেছে-
রাসূল এ উদ্দেশ্যেই প্রেরিত হয়েছে যে, আল্লাহর নির্দেশ অনুসারে তার আনুগত্য করা হবে৷ যখন কেউ নিজেদের প্রতি যুলুম করে তখন তারা রাসূলের নিকট আসলে, ক্ষমা চাইলে এবং আল্লাহর রাসূলও তাদের জন্য ক্ষমা চাইলে তারা আল্লাহকেও তখন ক্ষমাশীল ওপরম দয়ালু পাবে ৷ কিন্তু না, আল্লাহর কসম! তারা ততক্ষণ পর্যন্ত মুমিন হবে না যতক্ষণ পর্যন্ত তারা তাদের নিজেদের সৃষ্ট বিবাদ বিসম্বাদের বিচারভার রাসূল এর উপর অর্পণ না করে; অতঃপর রাসূলের সিদ্ধান্ত সম্বন্ধে তাদের মনে কোন দ্বিধা না থাকে এবং সর্বান্তঃকরণে তা মেনে নেয়৷
[সূরা নিসা : ৬৪, ৬৫]
ইমাম ইবনুল কাইয়্যিম (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন,
"তাগুত হচ্ছে ঐ সকল উপাস্য, নেতা-নেত্রী যাদের আনুগত্য করতে গিয়ে সীমালঙ্ঘন করা হয়। আল্লাহ এবং তাঁর রাসূলকে বাদ দিয়ে যাদের কাছে বিচার-ফায়সালা চাওয়া হয় অথবা আল্লাহর পরিবর্তে যাদের ইবাদাত করা হয়।"
শায়খুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া রহ. বলেন-
ولهذا سمي من تحوكم إليه من حاكم بغير كتاب الله طاغوت.
" আর এ কারণেই যে ব্যক্তি কুরআনের নির্দেশিত বিধান ছাড়া বিচার-ফয়সালা করে, সে হচ্ছে তাগুত।"
[তাফসীরে ইবনে কাসীর: ২/২৯৪ (দারুল কুতুবিল ইলমিয়্যা, বৈরূত)]
[মাজমূউল ফাতওয়া ইবনে তাইমিয়া: ২৮/২০১ (মাজমাউল মালিক ফাহাদ, মদীনা)]
▪️তাগুত এমন غيرالله যার নিকট বিচার ফায়সালা চাওয়া হয়৷
আল্লাহ তা'আলা ইরশাদ করেন-
يُرِيدُونَ أَن يَتَحَاكَمُوٓاْ إِلَى ٱلطَّٰغُوتِ وَقَدۡ أُمِرُوٓاْ أَن يَكۡفُرُواْ بِهِ.
"তারা তাগুতের নিকট বিচার ও ফয়সালা নিতে চায়; অথচ তাদেরকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে যে, তারা যেন তাকে অস্বীকার করে।" (সূরা নিসা, আয়াতঃ৬০)
আল্লামা ইবনে কাসীর রহ. বলেন-
وقال مجاهد: الطاغوت الشيطان في صورة إنسان يتحاكمون إليه، وهو صاحب أمرهم.
অর্থাৎ মুজাহিদ রহ. বলেন, "তাগুত (মিথ্যা উপাস্য) হচ্ছে, মানুষরূপী শয়তান। যার কাছে মানুষ বিচার ফয়সালার জন্যে যায় এবং তারা তাকে অনুসরণ করে।"
▪️তাগুত এমন غيرالله যাকে প্রতিষ্ঠা করার জন্য একদল প্রানান্তকর চেষ্টা করে৷ [সূরা নিসা : ৭৬]
হযরত ওমর রাঃ বলেন, "জ্বিবত্ অর্থ যাদু , তাগুত অর্থ শয়তান৷"
বুঝা গেল শয়তান খুশি হয়, এবং আল্লাহ নারাজ হন এমন কাজে আহ্বান করে/বাধ্য করে যে বা যারা তারাই তাগুত৷
নিশ্চয়ই ভ্রান্তি হতে সুপথ প্রকাশিত হয়েছে। অতএব যে তাগুতকে অবিশ্বাস করে এবং আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে সে দৃঢ়তর রজ্জুকে আঁকড়ে ধরলো যা কখনও ছিন্ন হবার নয় এবং আল্লাহ শ্রবণকারী, মহাজ্ঞানী। (সুরা বাক্বারা-২৫৬ এর শেষাংশ)
আল্লাহ আরও বলেনঃ
ﭐﻟﻠَّﻪُ ﻭَﻟِﻰُّ ﭐﻟَّﺬِﻳﻦَ ﺀَﺍﻣَﻨُﻮﺍ۟ ﻳُﺨْﺮِﺟُﻬُﻢ ﻣِّﻦَ ﭐﻟﻈُّﻠُﻤَٰﺖِ ﺇِﻟَﻰ ﭐﻟﻨُّﻮﺭِ ۖ ﻭَﭐﻟَّﺬِﻳﻦَ ﻛَﻔَﺮُﻭٓﺍ۟ ﺃَﻭْﻟِﻴَﺎٓﺅُﻫُﻢُ ﭐﻟﻄَّٰﻐُﻮﺕُ ﻳُﺨْﺮِﺟُﻮﻧَﻬُﻢ ﻣِّﻦَ ﭐﻟﻨُّﻮﺭِ ﺇِﻟَﻰ ﭐﻟﻈُّﻠُﻤَٰﺖِ ۗ ﺃُﻭ۟ﻟَٰٓﺌِﻚَ ﺃَﺻْﺤَٰﺐُ ﭐﻟﻨَّﺎﺭِ ۖ ﻫُﻢْ ﻓِﻴﻬَﺎ ﺧَٰﻠِﺪُﻭﻥَ
"যারা ঈমান এনেছে, আল্লাহ তাদের অভিভাবক। তাদেরকে তিনি বের করে আনেন অন্ধকার থেকে আলোর দিকে। আর যারা কুফরী করে তাদের অভিভাবক হচ্ছে তাগুত। তারা তাদেরকে আলো থেকে বের করে অন্ধকারের দিকে নিয়ে যায়। এরাই হলো দোযখের অধিবাসী, চিরকাল তারা সেখানেই থাকবে।"
(সূরা বাকারাঃ ২৫৭)
আল্লাহ অভিভাবক। তাগুতও অভিভাবক।
তাগুত জাহান্নামিদের অভিভাবক, যেখানে তারা চিরদিন থাকবে, কখনো মুক্তি পাবে না।
⛔৩. আল্লাহ যা অবতীর্ন করেছেন (কুরআন+সুন্নাহ) তা বাদ দিয়ে যে বিচারক/শাসক বা নেতাগন অন্য আইন/বিধান/সংবিধান দিয়ে ফয়সালা করে।
যেমন কুরান-হাদীস বিরোধী কোনো আইন রায়, কিয়াস, কারো ফতোয়া, অলিদের কথা, পীর মাশায়েখর কথা মানা, সংসদে আইন পাশ করে সমাজে চাপিয়ে দেয়া এবং বিজাতিদের মন গড়া সংবিধান মানা।
যেমন আল্লাহ বলেছেনঃ
“যেসব লোক আল্লাহ যা অবতীর্ণ করেছেন সে অনুযায়ী ফয়সালা করে না তারাই কাফের”। (সুরা আল-মায়িদাহঃ ৪৪)
ইমাম ইবনুল কাইয়্যিম আল-হাম্বলী (رحيمه الله) বলেনঃ
"যারাআল্লাহ্ যা নাযিল করেছেন তা ব্যতীত অন্য কিছু দিয়ে শাসন করে তারা তাগুত।" (মাদারিজুস-সালিকিন )
শাইখুল ইসলাম মুহাম্মাদ বিন আব্দুল ওয়াহ্হাব আল-হাম্বলী (رحيمه الله) বলেনঃ
"তাগুত হচ্ছে ঐ সকল মা’বুদ, নেতা, মুরব্বি, আল্লাহর পরিবর্তে যাদের আনুগত্য করা হয় এবং তারা এতে সন্তুষ্ট থাকে।” (মাজমাআতুত-তাওহীদ)
"সেই অত্যাচারী বিচারক, যে আল্লাহ্র বিচারে পরিবর্তন করে।"
[আদ-দারার আস-সুন্নিয়্যাহ, ভলিউম: ০১, পৃষ্ঠা: ১০৯-১১০]
আল্লামা শাব্বির আহমাদ উসমানি আল-হানাফী (رحيمه الله) বলেনঃ "হযরত শাহ সাহেব [মাওলানা শাহ আব্দুল কাদির দেহলাবি আল-হানাফী (رحيمه الله)] বলেন,
তাগুত হচ্ছে তারা, যারা ভিত্তিহীনভাবে নের্তৃত্বের দাবি করে। প্রতিমা, শয়তান, স্বেচ্ছাচারী শাসক সবই এর অন্তর্ভুক্ত।"
[তাফসীরে উসমানিঃ২/৫৪৫]
শাইখ মুহাম্মাদ আমিন শানকিত্বি আল-মালেকী (رحيمه الله) বলেনঃ "আল্লাহ ছাড়া যাদের ইবাদাত করা হয় তারাই তাগুত। আর এই গাইরুল্লাহর ইবাদতের বড় অংশটাই হচ্ছে শয়তানের জন্য। কেননা শয়তানের আহবানে সাড়া দিয়ে কোন গাইরুল্লাহর ইবাদাত করা পরোক্ষভাবে শয়তানেরই ইবাদতের শামিল।"(তাফসীরে আদওয়াউল বয়ান: ১/২২৮)
মাওলানা মুহাম্মাদ মাসঊদ আযহার আল-হানাফী (دابت بركته) বলেনঃ
১.ইসলাম বিরোধী প্রত্যেক শক্তির নামই তাগুত।
২.তাছাড়া, তাগুত হলো সেইসব ব্যক্তি যারা মানুষকে সত্য দ্বীন থেকে বিপথগামী করে-হোক সে মানুষ অথবা জ্বীন।
৩.যারা ইসলাম ও মুসলমানদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে-সেই ধরনের প্রত্যেক ব্যক্তিই তাগুত।
৪.তাগুত হলো সেইসব সিস্টেম বা পদ্ধতি যার ছত্রছায়ায় কুচক্রী মানুষগুলো একত্রিত হয়ে ইসলাম ও মুসলমানদের বিরুদ্ধে ষরযন্ত্রে লিপ্ত থাকে অথবা যুদ্ধ করে।
৫.আরো, তাগুত হচ্ছে সেইসব প্রতিষ্ঠানের নাম যেখানে সত্য দ্বীন বিরোধী নিত্য-নতুন বিভাগ ও ফিরকার উদ্ভব ঘটে।
শয়তান এবং মিথ্যা উপাস্যগুলোকে (হোক মানুষ অথবা জ্বিন) তাগুতের প্রধান অর্থ বুঝালেও, এর পাশাপাশি তাগুত হচ্ছে পৃথিবীর সেইসকল ক্ষমতাসীন মানুষ যারা তাদের সমস্ত বাতিল শক্তির মাধ্যমে ইসলামের অগ্রযাত্রাকে ব্যাহত করে, ইসলামি শরীয়তের আইনের বাস্তবায়নকে রুদ্ধ করে এবং মুসলমানদের বিরুদ্ধে কাফেরদের সাহায্য করে। (আল্লাহই ভালো জানেন)
[ফাতহুল জাওয়াদ ফী মা’আরিফ আয়াতুল জি (হা) দ, পৃ: ৩৭৫-৩৭৬]
⛔৪. যে “ইলমে গায়েব” বা অদৃশ্য জ্ঞানের দাবী করে সে তাগুত।
এদের মাঝে রয়েছে জ্যোতিষী, গণক, রাশি-চক্র ইত্যাদি।
যেমন আল্লাহ বলেনঃ
“তাঁর কাছেই অদৃশ্য জগতের চাবি রয়েছে। এ গুলো তিনি ব্যতীত কেউ জানেনা। স্থলে ও জলে যা আছে, একমাত্র তিনিই জানেন। কোন পাতা ঝরে না, কিন্তু তিনি তা জানেন। কোন শস্য কণা মৃত্তিকার অন্ধকার অংশে পতিত হয় না এবং কোন আর্দ্র ও শুস্ক দ্রব্য পতিত হয় না, কিন্তু তা সব প্রকাশ্য গ্রন্থে রয়েছে”। (সুরা আনআ’মঃ ৫৯)
⛔৫. আল্লাহ ছাড়া সকল মাবুদই তাগুত। আল্লাহ ছড়া যার ইবাদত/পূজা/উপাসনা করা হয়, এবং এতে যে রাজী-খুশি থাকে সে তাগুত। এদের মাঝে রয়েছে সেইন্ট, ঠাকুর, পীর-ফকির, ধর্মীয় গুরু, নেতা ইত্যাদি যাদেরকে পূজা করা হয়। যেমন আল্লাহ বলেনঃ
“তাদের মধ্যে যে বলে যে, তিনি (আল্লাহ) ব্যতীত আমিই উপাস্য, তাকে আমি জাহান্নামের শাস্তি দেব। আমি জালেমদেরকে এভাবেই প্রতিফল দিয়ে থাকি”। (সুরা আল-আম্বিয়াঃ ২৯)
মালিক ইবনে আনাস রাঃ বলেন,
"আল্লাহ ব্যতীত যে সকল জিনিসের উপাসনা করা হয় সে সবই তাগুত৷"
তাগুত এমন غيرالله যাকে একনিষ্ঠ অনুসরণ করা হয় , অথচ তা হারাম ও নিষিদ্ধ ৷
[সূরা যুমার : ১৭]
তাগুত এমন غيرالله যার প্রতি আস্থা ও বিশ্বাস স্থাপন করা হয়৷ [সূরা নিসা: ৫১]
বিঃ দ্রঃ
"তাগুত তাগুতই- সব যুগেই তার এই একই চরিত্র।
কেবল নাম ও ধরনটা পাল্টায়- চেতনা ও মানসিকতায় পরিবর্তন আসে না।"
বই: নবীজির( ﷺ) সাথে
নিজেকে ঈমানদার বলে দাবী করতে হলে সবার আগে তাগুতকে অস্বীকার করতে হবে!
ওয়াল্লাহি! তাগুতকে অস্বীকার করা ব্যতীত, কেউ মুসলিম হতে পারে না।
মূলঃ শায়খুল ইসলাম মুহাম্মাদ বিন আব্দুল ওহহাব (রাহিমাহুল্লাহ)
(ঈষৎ সংযোজিত)