01/09/2024
১৯৭০-এর দশকে কোকা-কোলা ছিল এক নম্বর, আর পেপসি চেয়েছিল সেই অবস্থানে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিতে। তাই তারা চালু করল পেপসি চ্যালেঞ্জ—একটা প্রতিযোগিতা, যেখানে মানুষ দুই ধরনের কোল্ড ড্রিংক একসাথে পাবে, আর বলবে কোনটা তাদের বেশি ভালো লেগেছে। পেপসি চ্যালেঞ্জের শুরু। দুইটা ব্র্যান্ডের ড্রিংক সামনে আছে, কিন্তু ব্র্যান্ডের নামগুলো গোপন। এটি ছিল একদম "অন্ধ ভাবে স্বাদ এর পরীক্ষা"। মানুষ দুই কাপ ড্রিংক পাবে, কিন্তু কোনো কাপেই ব্র্যান্ডের নাম থাকবে না। এরপর তাদের বলা হবে দুইটি ড্রিংক চেখে দেখতে এবং বলার জন্য কোনটি তাদের বেশি পছন্দ। মজার বিষয় হলো, বেশিরভাগ মানুষ পেপসিকেই বেছে নিয়েছিল!
কিন্তু কেন পেপসি এই চ্যালেঞ্জের উদ্যোগ নিল? তখনকার সময়ে কোকা-কোলা ছিল একদম সুপারস্টার। সবাই ধরে নিয়েছিল কোকা-কোলা স্বাদে বেস্ট। কিন্তু পেপসি জানত, আসলে যদি মানুষ ব্র্যান্ডের নাম না জানে, তাহলে তারা পেপসিকেই বেশি পছন্দ করবে। তাই তারা ঠিক করল, মানুষ কী ভাবে! আর এইভাবেই জন্ম হলো পেপসি চ্যালেঞ্জের।
পেপসি তাদের এই চ্যালেঞ্জকে ছড়িয়ে দিল শহরের বিভিন্ন জায়গায়—শপিং মল, পার্ক, এবং জমজমাট জায়গা গুলোতে। তারা সরাসরি মানুষের কাছে গেল এবং তাদের ড্রিংক খেয়ে দেখার আমন্ত্রণ জানালো। পেপসি চেয়েছিল, এই চ্যালেঞ্জ যেন শুধু মজার না হয়, বরং মানুষের মধ্যে একটা আলাপ-আলোচনার বিষয় হয়ে দাঁড়ায়। তারা ছোট ছোট স্টেশন বানালো, যেখানে পেপসির এমপ্লয়িরা থাকত। যখন মানুষ দেখল যে তাদের পছন্দের ড্রিংক হলো পেপসি, তখন এটা কোকা-কোলার জন্য ছিল বিশাল একটা সারপ্রাইজ!
এই চ্যালেঞ্জকে আরও হাইপ দিতে পেপসি অনেক রকম এড চালু করল। টিভি, রেডিও, পত্রিকা—সব জায়গায় "টেক দ্য পেপসি চ্যালেঞ্জ!" স্লোগানটি ছড়িয়ে পড়ল। মানুষ এই ক্যাম্পেইনকে নিয়ে এতটাই এক্সাইটেড ছিল যে, সবাই পেপসির টেস্ট পরীক্ষা করতে চাচ্ছিল।
পেপসি চ্যালেঞ্জের জন্য শুধু না দেখে স্বাদ পরীক্ষা চালানোই যথেষ্ট ছিল না; তারা ভোক্তাদের সাথে সরাসরি কানেক্ট করতে চেয়েছিল। পেপসি জানত, যদি তারা এই চ্যালেঞ্জকে সফল করতে চায়, তাহলে সঠিক জায়গায় গিয়ে প্রচারণা চালাতে হবে। তারা এমন জায়গা বেছে নিল, যেখানে কোকা-কোলার ফ্যানবেস ছিল বড়, আর সেখানে গিয়ে তাদের চ্যালেঞ্জ ছড়িয়ে দিল। পেপসি জানত, মানুষ যদি এই চ্যালেঞ্জ নেয় এবং তাদের পছন্দ পেপসি হয়, তাহলে কোকা-কোলার বাজারে বড় ধরনের প্রভাব ফেলবে।
পেপসি চ্যালেঞ্জের সবচেয়ে বড় শিক্ষা ছিল—ব্র্যান্ডের চেয়ে আসল গুণগত মানই ম্যাটার করে। পেপসি প্রমাণ করেছিল, শুধু বিজ্ঞাপনের হাইপের চেয়ে আসল স্বাদ এবং ভোক্তার মতামতই সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। ভোক্তারা যখন ব্র্যান্ডের নাম বাদ দিয়ে স্বাদ পরীক্ষা করল, তখন তারা বুঝল আসলে কোনটি বেশি পছন্দের। আর এই সহজ অথচ পাওয়ারফুল ধারণাই পেপসিকে বড় সাকসেস এনে দিল।
পেপসি চ্যালেঞ্জের পর কোকা-কোলা ছিল একটু কনফিউজড। তারা ভাবতে শুরু করল, তারা আসলে কতোটা চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে। কোকা-কোলা নতুন কিছু নিয়ে আসার চিন্তা করল—“নিউ কোক” নামে নতুন ড্রিংক লঞ্চ করল, যা তারা আশা করেছিল পেপসির টেস্ট প্রতিযোগিতায় জিতে যাবে। কিন্তু "নিউ কোক" শেষ পর্যন্ত ব্যর্থ হলো, এবং কোকা-কোলা আবার তাদের পুরোনো ফর্মুলায় ফিরে গেল, যাকে তারা "ক্লাসিক কোক" বলে বাজারে আনল। পেপসি তাদেরকে বুঝিয়ে দিল, তারা শুধু প্রতিযোগিতায় থাকতে নয়, বরং জয়ী হতে এসেছে।
এখনো অনেক ব্র্যান্ড পেপসি চ্যালেঞ্জের মতো ক্যাম্পেইন করে, যেখানে তারা তাদের গ্রাহকদের সরাসরি পণ্যের সাথে পরিচয় করায় এবং রিয়েল এক্সপেরিয়েন্স দেয়। পেপসি চ্যালেঞ্জের সাকসেস শুধু একটা প্রতিযোগিতা ছিল না, বরং এটি ভোক্তাদেরকে প্রভাবিত করার এবং তাদের পছন্দকে সম্মান জানানোর অসাধারণ উদাহরণ ছিলো ।
পেপসি চ্যালেঞ্জ আমাদের শিখিয়েছে, ভোক্তার সাথে সরাসরি কানেক্ট হয়ে এবং তাদের মতামতকে গুরুত্ব দিয়ে একটা ব্র্যান্ড কীভাবে সুপারহিট হতে পারে। এটা আমাদের দেখিয়েছে, উদ্ভাবন, ভোক্তা কেন্দ্রিকতা এবং সত্যিকারতা—এই তিনটি গুণ একটি ব্র্যান্ডকে সত্যিই এগিয়ে নিতে পারে। আপনি যখন কোনো কিছু বেছে নেবেন, তখন আসল জিনিসটা চেখে দেখুন। ব্র্যান্ড নয়, পণ্যই আসল।