15/07/2023
খুব উচ্চপদস্থ একজন কর্মকর্তার গল্প। তাঁর অতি সাধারণ জীবন যাপন আমাকে বিস্মিত করতো। একদিন জিজ্ঞেস করলাম:
-স্যার, আপনি এতো সাধারণ জীবন বেছে নিলেন কেন? আপনার তো অনেক ক্ষমতা!
তিনি হাসলেন। তারপর কয়েকটি কথা বললেন:
১. চাকরির শুরুতে বেশ কয়েক বছর ক্ষমতার উত্তাপ বেশ উপভোগ করতাম। বাড়তি খাতির বেশ আনন্দ দিতো- পরিবার আত্মীয়স্বজনদের সামনে ভাব নিতে সুবিধা হতো।
২. কয়েকটি অভিজাত ক্লাবের সদস্য ছিলাম। তাও চাকরির কারণে- নরমালি এসব ক্লাবের সদস্য হতে হলে ত্রিশ/চল্লিশ লাখ টাকা লাগে।
৩. বিমানবন্দরে ভিআইপি সুযোগ নিতাম-গর্বে মাথা উঁচু করে গটগট করে র্যাম্প কারে প্লেনের গোড়ায় নামতাম। প্লেনে ভিআইপি সিটে বসতাম।
৪. ডাক্তারের কাছে গেলে সিরিয়াল ভেঙ্গে চেম্বারে ঢুকে যেতাম। আগেই খবর দেয়া থাকতো- সবাই অপেক্ষা করতো কখন আমি পৌঁছাব!
৫. বিশাল গাড়ির ঠান্ডা হাওয়ায় বসে ভাবতাম, এই না হলে চাকরি!
তারপর একদিন অফিস শেষে বাড়ি ফেরার সময় দেখলাম আমার এক অতি ক্ষমতাবান রিটায়ার্ড বস হোটেল শেরাটনের সামনে ফুটপাত দিয়ে হেঁটে যাচ্ছেন। হাতে আধময়লা একটি ফাইল। কেউ তার দিকে ফিরেও তাকাচ্ছে না। দুম করে মাথায় কয়েকটি প্রশ্ন এলো:
১. চাকরির বাড়তি খাতির ক'দিনের জন্য?
২. অভিজাত ক্লাবের মেম্বারশিপ ক'দিনের জন্য?
৩. ভিআইপি সুবিধা ক'দিনের জন্য?
৪. ডাক্তার কতদিন সিরিয়াল ভেঙ্গে আমাকে দেখবেন?
৫. বিশাল গাড়ির ঠান্ডা বাতাস ক'দিনের জন্য?
উত্তর একটাই- যতদিন চাকরি আছে ততদিন। তারপর আমি নো বডি। তাহলে এই যে এত আরামে অভ্যস্ত হয়ে যাচ্ছি- রিটায়ার করার পর তো এসব হারানোর কারণেই হার্ট অ্যাটাক করবে। পরদিন থেকে বাড়তি খাতির নেয়া বাদ দিলাম। সব ক্লাবের মেম্বারশিপ বাদ দিলাম। ভিআইপি সুবিধা বাদ দিলাম। সিরিয়াল ভেঙ্গে ডাক্তার দেখানো বাদ দিলাম। অফিসে আসাযাওয়া ছাড়া সরকারি গাড়ি ব্যবহার বাদ দিলাম।
না; আমি কোনো মহামানবের কাজ করিনি। নিজের ভুল বুঝে অস্বাভাবিক আচরণ থেকে স্বাভাবিক আচরণে ফিরে আসলাম মাত্র।
ফলাফল-
আগে রিটায়ারমেন্টকে ভয় পেতাম- এখন মনে হয় সময়ের কিছু আগে অবসর নিয়ে নিলে খারাপ হয়না। কেমন যেন নিজেকে মুক্ত মুক্ত মনে হয়।
তাঁর কথাগুলো আমার মগজে ছোটোখাঁটো একটি বিস্ফোরণ ঘটালো। পরিবর্তনের বিস্ফোরণ।
সংগৃহীত
কাসুন্দি দিয়ে পাট শাক আর সাদা ভাত।জীবনে খুব অল্পতে সুখী থাকা যায়।
আলহামদুলিল্লাহ্।