08/08/2024
'সেভ বাংলাদেশি হিন্দু'
এই কথাটা লিখে যারা প্রচারণা চালাচ্ছেন তাদের কাছে প্রশ্ন- ফ্যাসিবাদি হাসিনা রেজিমের পতনের পরে বাংলাদেশে যতো মানুষের বাড়ি-ঘর ভাঙ্গা বা পোড়ানো হয়েছে এগুলোর কতো পার্সেন্ট বাড়ি হিন্দুদের আর কতো পার্সেন্ট মুসলিমদের?
যে ক'জন হিন্দুর বাড়িতে হামলা হয়েছে তাদের মধ্যে কতো জন 'সাধারণ হিন্দু' আর কতো জন 'রাজনীতিক হিন্দু'? অর্থাৎ সরাসরি আওয়ামী রাজনীতির সাথে জড়িত বা হাসিনা শাসনামলের বেনিফিসিয়ারি হিন্দু কতোজন?
রাজনৈতিক হিন্দুদের বাড়িতে আক্রমণকে কী সংখ্যালঘুদের উপর হামলা বলে চালিয়ে দেয়া যায়? যদি তাই হয়, সংখ্যাগুরুদের বাড়ি ভাংলো কারা? মুসলিমদের ঘরে হামলা করলো কারা, কেনো? এগুলোকে কোন রং দেবেন?
হাসিনার শাসনামলে বহু হিন্দু নেতারা ভয়াবহ আস্ফালন করেছে। অত্যাচার, নির্যাতন করেছে। আমার এলাকায় ছাত্রলীগের এক হিন্দু নেতার অত্যাচারে মানুষ অতিষ্ঠ থাকতো। এখন যদি কেউ ওই ছাত্রলীগ নেতার উপর প্রতিশোধ নেয়, তা কী সংখ্যালঘু নির্যাতন হবে?
আমার এক বন্ধুর প্রতিবেশি হিন্দু। তারা আমার বন্ধুদের গাছের নারকেল, সুপারি ইচ্ছা মতো পেড়ে নিয়ে যায়। বন্ধু প্রতিবাদ করলে তারা হুমকি দেয়- বেশি কথা বললে 'হাইকমিশনে' ফোন দেবে। একদিন সত্যিই তাই হয়েছে, আমার বন্ধুর ভাই ওদের বকাঝকা করার এক ঘন্টার মধ্যে থানার ওসি চলে আসে এবং বলে যায়- ওদের সাথে কোনো ঝামেলা না করতে। নয়তো সংখ্যালঘু নির্যাতনের ফাইলে পড়ে যেতে হবে। ওই প্রতিবেশির উপর যদি এখন প্রতিশোধ নেয়া হয়, তা কী সংখ্যালঘু নির্যাতন হবে?
যেমন, শেখ সাহেবের মূর্তি ভাঙ্গার সাথে তালেবানদের মূর্তি ভাঙ্গার আদৌ কী কোনো সম্পর্ক আছে? তালেবানরা রাজনৈতিক কারনে বা অন্য ধর্মের বিবেচনায় কোনো মূর্তি ভাঙ্গেনি। তারা সকল মূর্তির বিরুদ্ধে ইসলামের আদর্শের কারনে। আর বাংলাদেশের মানুষ ফ্যাসিবাদি হাসিনার অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে মনের জ্বালা মেটাচ্ছে। শেখ সাহেবের মূর্তিগুলো তাদের কাছে আওয়ামী রেজিমের প্রতীক মনে হচ্ছে। তারা ওগুলোকে শেখ হাসিনার প্রেতাত্মা ভাবছে, কারন তারা এখনো ভয়াবহ দুশাসনের ট্রমার মধ্যে আছে।
একই ভাবে- গণভবনের লুটপাট কী মানুষ 'লুটপাটের' জন্য করেছে? না, কিছু অভাবী, সুযোগসন্ধানীর বাইরে অধিকাংশ মানুষ ওগুলোকে 'স্বাক্ষী' হিসাবে সংগ্রহ করেছে। অত্যাচারী হাসিনার অস্তিত্ম মুছে ফেলার জন্য করেছে। ওগুলো আসলে চুরি বা লুটপাট নয়, মানুষের ক্ষোভ প্রকাশের ভাষা ছিলো।
কোনো ভাংচুর, সহিংসতা বা লুটপাট কাম্য নয়। কিন্তু ১৬ বছরে দুশাসনের কথা একবার ভাবুন। দেয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়া মানুষদের কথা ভাবুন। গণমানুষের এই ক্ষোভ, এই ক্রোধ কী দিয়ে থামাবেন? কীভাবে নিবারণ করবেন? তবু বলি- কোনো ভাংচুর বা সহিংসতা নয়। একই ভাবে মিথ্যা, বানোয়াট প্রপাগান্ডা নয়। নিজের দেশটাকে ভালো বাসুন।
মাদরাসার ছাত্ররা পর্যন্ত মন্দির পাহারা দিচ্ছে, এর চেয়ে বেশি ধর্মীয় সৌহার্দ পৃথিবীর আর কোথায় আছে?
লেখাঃ Palash Rahman
স্ক্রিনশটঃ Bishal Dev