![রবীন্দ্রনাথ মারাত্মক রেগে গিয়েছিলেন,অমন রাগতে তাঁর ঘনিষ্ঠরা অতীতে কোনওদিন দেখেন নি। কবির চিকিৎসার জন্য ডাক্তাররা রবীন্দ...](https://img3.medioq.com/672/278/887587316722787.jpg)
10/08/2024
রবীন্দ্রনাথ মারাত্মক রেগে গিয়েছিলেন,অমন রাগতে তাঁর ঘনিষ্ঠরা অতীতে কোনওদিন দেখেন নি। কবির চিকিৎসার জন্য ডাক্তাররা রবীন্দ্রনাথের গালের কাছে কিছু অংশের দাড়ি কেটে দিয়েছিলেন। গোটা ঘটনা ঘটে রবীন্দ্রনাথের অগোচরে। সকালবেলা ঘুম থেকে উঠে দাড়িতে হাত দিয়ে তিনি বুঝতে পারলেন তাঁর দাড়িতে কিছু একটা গন্ডগোল হয়েছে। আয়নাতে মুখ দেখে কবি রাগে অগ্নিশর্মা।
রবীন্দ্রনাথ মাথা থেকে ঘাড় পর্যন্ত যন্ত্রনা অনুভব করছিলেন। কলকাতা থেকে স্বনামধন্য চিকিৎসকের দল আসে। ডাঃ নীলরতন সরকার,ডাঃ বিধানচন্দ্র রায় প্রমুখ। তারা কবিকে দিনের বেলায় ভালভাবে পরীক্ষা করে শারীরিক যন্ত্রনার কারণ শনাক্ত করতে পারলেন না। সিদ্ধান্ত হল ঘুমের ওষুধ দিয়ে কবিকে ঘুম পাড়িয়ে তাঁর দাড়ির ভেতরটা দেখতে হবে। সেইমত রবীন্দ্রনাথের রাতের খাবারের সঙ্গে গোপনে ঘুমের ওষুধ দেওয়া হয়। কবি তখন গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন। ডাক্তাররা তাঁর কানের কাছের চুল ও গালের কিছু অংশের দাড়ি কেটে তাঁকে ভালকরে পরীক্ষা করলেন এবং ওষুধপত্র দেওয়া হল।
রবীন্দ্রনাথের দাড়ির ওই দশা করে বিধান রায়, নীলরতন সরকার শান্তিনিকেতনে থাকার ভরসা পেলেন না। সেই রাতেই তারা কলকাতা পাড়ি দিলেন। ভোরবেলায় কবির ঘুম ভাঙলে তিনি দাড়িতে হাত দিয়েই অনুভব করলেন কিছু একটা গন্ডগোল হয়েছে। এরপর আয়নাতে নিজের মুখ দেখে রাগে অগ্নিশর্মা। বনমালীকে ডেকে জিজ্ঞেস করলেন তাঁর দাড়ির এমন দশা কিভাবে হল। বনমালী কাঁদতে, কাঁদতে বললেন তিনি ঘুমিয়ে পড়েছিলেন এসব কিছুই জানে না। কবি নিয়মমত কফি খেতেন, কিন্তু সেদিন রাগে কফি খেলেন না। রবীন্দ্রনাথ এরপর বনমালী কে বললেন রথীন্দ্রনাথ কে ডেকে আনতে। বনমালী ঘুরে এসে খবর দিল জরুরি কাজে ভোরবেলায় রথীন্দ্রনাথ শ্রীনিকেতন গিয়েছেন।
রবীন্দ্রনাথ আরও গুম হয়ে গেলেন, বনমালী যতবার খাবারের কথা বলে ততবার কবির কাছে ধমক খায়। কেউ রবীন্দ্রনাথের কাছে যেতে সাহস পান না। শেষ পর্যন্ত পুত্রবধূ প্রতিমাদেবী কবির সামনে গিয়ে বললেন তিনি না খেলে বাড়ির অন্যরা কেউ যে খাবার মুখে তুলবে না। তবুও যেন কবির রাগ কমে না। আবার রবীন্দ্রনাথ কে খাওয়ার অনুরোধ করলেন রথীন্দ্রনাথ জায়া। প্রচণ্ড ক্ষোভের সঙ্গে কবি জানালেন তাঁর দাড়িতে হাত দেওয়ার আগে তাঁকে কি একবার জিজ্ঞেস করার দরকার ছিল না। শেষ পর্যন্ত অবশ্য কবি খেয়েছিলেন। কিন্তু বাবার সামনে ভয়ে কয়েকদিন যান নি রথীন্দ্রনাথ।
কবির জীবনের ভিন্ন ধরনের অনবদ্য এই কাহিনী লিখেছেন নন্দিনী অর্থাৎ পুপে। ঠাকুরবাড়ির মেয়ে না হলেও তাঁকে বুকে টেনে প্রতিমা মিটিয়েছিলেন মাতৃত্বের সাধ। রবীন্দ্রনাথের দেওয়া নাম নন্দিনী, তাঁর শিশুমনে ঘটনাটি এমন দাগ কাটে পরিণত বয়সে দাদামশাইয়ের কথা লিখতে গিয়ে অনবদ্য ছবিটি উপহার দিয়েছেন। 'পিতা পুত্রী' - তে নন্দিনী , রথীন্দ্রনাথ ছাড়াও লিখেছেন দাদামশাই রবীন্দ্রনাথের কথা। নন্দিনী আত্মপ্রকাশে বিমুখ ছিলেন, লিখেছেন কম। যদি আরও একটু বেশি লিখতেন, তাহলে আরও অনেক দুর্লভ ছবি উপহার দিতেন।
(সংকলনে ✍🏻 অরুণাভ সেন।।
পুস্তক ঋণ ও কৃতজ্ঞতা স্বীকার, ঠাকুরবাড়ির অন্দরমহল, চিত্রা দেব)
🌸🌸🌸🙏🙏🌸🌸🌸