21/04/2024
"জীবনের চুড়ান্ত সত্য’’
এই বিশ্বে এক আল্লাহতায়ালা ব্যতীত অন্য কিছুরই অস্তিত্ব দেখা যায় না।
যাহা কিছু বিরাজ করিতেছে, সবই আল্লাহর অস্তিত্ব !!
বিশ্বে যাহা কিছু সৃষ্টি করা হইয়াছে সবই মানুষের জন্য।
যদি মানুষ না থাকে, তবে কিছুই থাকিবে না।
যেমন আল্লাহতায়ালা বলিয়াছেন, যদি আমি মানুষের কর্মফলের দরুন সবাইকে উঠাইয়া নেই, তবে পৃথিবীর বুকে অন্য কোন প্রাণী দেখিতে পাইবে না !!!
এই পৃথিবীতে যাহা কিছু দেখিতেছ, সবই আল্লাহর অস্তিত্বের নমুনা, সবই আল্লাহ !!!
আমরা ঈশ্বরকে উপাসনা করার জন্য হয়তো একটি মূর্তির অবতারণা করতে পারি।
কিন্তু যেনে রাখুন, তাঁহাকে উপাসনা করার জন্য এর চেয়ে ভাল মূর্তি যা আগে থেকেই রয়েছে, তা হল জীবন্ত মানুষ" আমি নিজেই !!!
"ঈশ্বরের উপাসনার জন্য হয়তো একটি মন্দির বা মর্সজীদ নির্মাণ করতে পারি।
কিন্তু আমাদের জেনে রাখা দরকার, তাঁহাকে উপাসনা করার জন্য এর চেয়ে ভাল মন্দির যা আগে থেকেই রয়েছে, তা হল মানুষের দেহ" !!!
"আমরা গড়েছি ছোট একটি মন্দির বা মর্সজীদ।
কিন্তু সমগ্র বিশ্বজগৎটাই একটি মন্দির, একটি মর্সজীদ মানুষ যে কোনো স্থানে উপাসনা করতে পারে ।
নিষ্প্রাণ প্রতীক উপাসনা করার চেয়ে মানবদেহরূপ বেদিতে বসে উপাসনা করা অনেক উচ্চ মার্গের সাধনা" !!!
এক ভিক্ষুক বৌদ্ধকে প্রশ্ন করেছিলেন, "জীবনের চুড়ান্ত সত্য কি ?
গৌতম "বৌদ্ধ উত্তর দিলেন,"আঙ্গিনার বৃক্ষটির তলায় ঝরে পড়া শেষ পাতাটি এনে দিলেই "এ প্রশ্নের উত্তর দেওয়া যাবে।
"ভিক্ষুক ভাবলেন, এ আর এমন কী কঠিন কাজ, "ঝরে পড়া শেষ পাতাটি কুড়িয়ে এনে ভিক্ষুক বৌদ্ধের কাছে সমর্পণ করে বললেন-বলুন তবে গৌতম "বৌদ্ধ হেসে বললেন.
তুমি কি নিশ্চিত যে, ঐ বৃক্ষ থেকে আর কোনো পাতা ঝরে পড়ে নি।
"ভিক্ষুক ফিরে গেলেন পরিদর্শনে !
গিয়ে দেখেন বৃক্ষ চত্বরে ঝরা পাতা অনেক গৌতম "বৌদ্ধ বললেন-বৎস! সত্য তো ঝরা পাতার মতোই, "যতদিন জীবন চলমান থাকবে, সত্যও ঝরে পড়বে।
নতুন রূপে ফিরে আসবে নতুন পাতায়।
একটি গল্প দিয়ে শেষ করা যাক'''' একজন মহিলার স্বামী এন্তেকাল করেছিলেন ।
তিনি একজন যুবতী ছিলেন এবং তার একটি সন্তান ছিল, তিনি সতী হতে চেয়েছিলেন ।
তিনি চেয়েছিলেন তার স্বামীর সাথে জলন্ত চিতায় ঝাপ দিতে, কিন্তু তার সন্তান তাঁকে বাঁধা দিল ।
ছোট্ট সন্তানের দিকে তাকিয়ে তাকে বেঁচে থাকতে হল ।
কিন্তু কিছুদিন পর সন্তানটি মারা গেলেন এবং এটা এতই দুঃখজনক ছিল যে, তিনি পাগল প্রায় হয়ে উঠলেন এবং মানুষজনকে বলতে শুরু করলেন,
এমন কোনো চিকিৎসক কি আছে যিনি আমার সন্তানকে পুনরায় জীবিত করতে পারে?
আমি শুধু তার জন্যই বেঁচেছিলাম, এখন আমার জীবন অন্ধকারে নিমজ্জিত হল ।
এটা তখন ঘটেছিলো যখন গৌতম বৌদ্ধ শহরের দিকে আসছিলেন ।
লোকেরা তাই বললেন যে, "আমরা এমন কোনো চিকিৎসক কে চিনি না, তবে গৌতম বৌদ্ধ আসতেছেন, এটা একটি সুযোগ, তুমি তাঁকে বৌদ্ধের কাছে নিয়ে যাও এবং বল যে, তুমি শুধু তার জন্যই বেঁঁচেছিলে ।
এবং সে এন্তেকাল করেছে, তুমি একজন আলোকিত বা শুদ্ধ পুরুষ, তুমি তাঁকে জীবিত করে দাও।
আমায় করুনা করো !"
অতএব, তিনি গৌতম বৌদ্ধের কাছে গেলেন।
মৃত দেহটি গৌতম বৌদ্ধের পায়ের নিকট রেখে বললেন, তাঁকে জীবিত করে দাও ।
তুমি জীবনের গোপন রহস্য জানো।
এবং তুমি অস্তিত্বের উচ্চ শিখরে পৌঁচ্ছে একজন গরীব মহিলার জন্য তুমি কি এই ছোট্ট অলৌকিকতা দেখাতে পারো না?
গৌতম বুৌদ্ধ বললেন, "আমি এটা করবো, তবে একটি শর্ত আছে ।"
মহিলা বললেন, "আমি তোমার শর্ত পূরণ করবো ।"
গৌতম বৌদ্ধ বললেন, ঠিক আছে, শর্ত হচ্ছে, "এই শহরে প্রবেশ করো, এমন একটি ঘর খুঁজে বের করো যেখানে কেউ মৃত্যুবরণ করেনি ।
আর সেখান থেকে কিছু সরিষার বীজ নিয়ে এসো।
এই গ্রামটিতে সরিষার চাষ করা হত তাই বৌদ্ধ এই গ্রামেই যেতে বললেন .. মহিলাটি বৌদ্ধের কৌশল বুঝতে পারেননি, তিনি একটি বাড়িতে গেলেন,
এবং তারা বললেন, "কিছু সরিষার বীজেই তোমার ছেলে বেঁচে যাবে?
যদি গৌতম বৌদ্ধ তোমার মৃত সন্তানকে বাঁচাতে পারেন তবে আমরা সরিষা বীজ পূর্ণ কয়েক গরুর ট্রলি ও দিতে পারবো ।
কিন্তু আমাদের সরিষার বীজ তোমার কোনো কাজে লাগবে না।
কারণ একজন নয়, কয়েক হাজার মানুষ আমাদের বংশে মারা গিয়েছেন ।
যেহেতু অনন্তকাল ধরে আমরা এখানে বাস করছি ।
আমরা আমাদের দাদাকে মরতে দেখেছি, ।
দাদিকে মরতে দেখেছি, ।
আমাদের পরিবারের অনেকেই মরতে দেখেছি ।
এই সরিষার বীজ অপ্রয়োজনীয় যেহেতু বৌদ্ধ বলেছে,
এমন পরিবার থেকে বীজ আনতে যেখানে কোনো লোক মারা যায়নি ।
এটা ছিল ছোট্ট একটি গ্রাম, এবং তিনি প্রতিটি বাড়িতেই গেলেন ।
এর জন্য সকলেই প্রস্তুত ছিল, '' তোমার কতো বীজ লাগবে বল?' কিন্তু শর্তটি ছিল অসম্ভব' ।'
কারণ, প্রতিটি পরিবারেই অনেক লোক এন্তেকাল করেছিল ।
সন্ধ্যার মধ্যেই সে প্রকৃত ঘটনা এবং গৌতম বৌদ্ধের কৌশল বুঝতে পারলেন।
তিনি বুঝতে পারলেন যে, যাহা কিছুরই জন্ম আছে তা মৃত্যুর দিকেই ধাবিত হচ্ছে ।
অতএব, শিশুটির পুনর্জন্ম কি ইংগিত করে?
সে আবার মারা যাবে ।
বরং এটা তোমার জন্য অনেক ভাল হবে, তুমি নিজেই আদি-অন্তহীনের অনুসন্ধান করো ।
এমন কিছু খুঁজো যা জন্ম মৃত্যুর অধিন নয় ।
সন্ধা সময় তিনি খালি হাতে ফিরে আসলেন ।
গৌতম বৌদ্ধ জিজ্ঞাসা করলেন, "সরিষা বীজ কোথায়?
" তিনি হাসলেন, সকালবেলা তিনি কাঁদতে কাঁদতে এসেছিলেন, আর এখন তিনি হাসছেন ।
এবং তিনি বললেন, তুমি আমার সাথে চালাকি করছো !
জন্মগ্রহণ করে সবাই মারা যাচ্ছে " এমন কোনো পরিবার নেই, না এই গ্রামে, না এই পুরো বিশ্বের,যেখানে কেউ মারা যায়নি ।
তাই আমি চাই না আমার সন্তানকে পুনরায় জীবনে ফিরিয়ে আনতে -- কারণ কি? কয়েক দিন বা কয়েক মাস , বা কয়েক বছর পর তাকে আবার মরতে হবে
এবং এই বছর গুলিতে সে সব ধরণের , দুর্বিপাক, যন্ত্রণা এবং উদ্বেগের মধ্যে বাস করবে ।
তোমার সমবেদনা এতো মহান যে তুমি তাকে জীবনে ফিরিয়ে আনো নি! "শিশুর কথা ভুলে যাও. ধ্যান শিল্পে আমাকে দীক্ষিত করো, যাতে করে আমি অমরত্বের দেশে পৌছাতে পারি যেখানে কোন জন্ম-মৃত্যু নেই ।
গৌতম বৌদ্ধ বললেন " আপনি একজন খুবি বুদ্ধিমান নারী . আপনি বিন্দু (the point) বুঝতে পেরেছেন । "
গৌতম বৌদ্ধের এই কৌশলকে একটি অলৌকিক ঘটনা বলি।
প্রত্যেকেই আমরা মৃত্যুর দিকে ধাবিত হচ্ছি ।
কোন বিন্দু (point) নেই... সবাইকে জন্ম মৃত্যু অতিক্রম করতে হবে ।
গৌতম বৌদ্ধ নারীকে দীক্ষিত করলেন, এবং তিনি বুদ্ধের শিষ্যদের মধ্যে একজন আলোকিত মানুষ হয়ে উঠলেন ।
মহিলা বললেন - আমার স্বামী আমার সন্তানের মারা গেছেন , এবং এখন হয়তো আমার সময় আসছে "
যে কোনো মুহূর্তে আমি মৃত্যুর শিকার হতে পারি,
অতএব, সময় অতি অল্প ।
আমি জানি না কোন মুহূর্তে মৃত্যু আসবে,
তাই গৌতম বৌদ্ধ আমাকে যা অনুসন্ধান করতে বলেছে,
এখনি আমাকে সেই অনুসন্ধানে সম্পূর্ণভাবে জড়িয়ে পড়তে হবে ।
গভীর তন্ময়ে ( ধ্যানে) থাকুন, আপনার আদিতে প্রবেশ করুন এবং জন্ম-মৃত্যু অতিক্রম করুন ।
আমি এটাকে একটি খাঁটি অলৌকিক ঘটনা বলি :
খুব শিকড় থেকে সমস্যা কাটা ।
জ্ঞানীদের জন্য নিদর্শন রয়েছে, মূর্খের জন্য রয়েছে কুতর্কের দোকান !
'Osho''ওশো