26/07/2024
যুগে যুগে নিজেকে অতিশয় পরাক্রমশালী ভাবা অনেকের শেষকাল খুবই কষ্টে কেটেছে। কেউ মরেছে মাজহুল কারো হাতে, কেউ মাছি-মশার আক্রমণে, কেউবা রোগে-শোকে। কেউ পানিতে, কেউবা বাথরুমে। মরার আগে এইসকল হৃদয়হীন হায়েনারা ম্যাসাকার চালিয়েছে অনেক। ইতিহাসবিদগণ এঁদের ব্যাপারে বলতে গিয়ে থমকে গিয়েছেন বারবার, লিখতে গিয়ে আটকে গিয়েছিল তাদের কলম। যারা রক্ত দেখলে ভয় পান তাদের উদ্দেশ্যে বলি— দ্বাদশ শতাব্দী বা তারও আগে এমন একটা সময় ছিল যখন আধুনিক যোগাযোগ ব্যবস্থা বলতে কিছুই ছিলনা, রাস্ট্রীয় কোন যোগাযোগ ছিলনা, ইন্টারনেট-ফেইসবুক ছিলনা, আপনার চিৎকার শোনার মতো মানুষ ছিলনা, সেসময় কয়েক লাখ মঙ্গোলী লাখ লাখ উট, ঘোড়া, তলোয়ার উঁচিয়ে একসাথে ধেয়ে আসে দুনিয়ার বুকে । তাদের উট-ঘোড়ার পায়ের ধূলোয় অন্ধকার হয়ে যায় দুনিয়ার একাংশ।
কল্পনা করুন সেই সময়ের কথা যখন মঙ্গোলরা সাপ, বিচ্ছু, গিরগিটিসহ সামনে যা পেতো তা-ই খেয়ে ফেলত! পুরুষ কিংবা নারী— উভয়ের সাথেই সংগমে লিপ্ত হত। ওঁরা মানুষের রক্ত দিয়ে সমুদ্রের পানি লাল করে ফেলতো। মানুষ মারার ক্ষেত্রে তাদের একটা পদ্ধতি ছিল পিষে ফেলা পদ্ধতি। আব্বাসীয় খলিফা আল-মুস্তাসিম বিল্লাহকে শুইয়ে তারউপর ঘোড়া চালিয়ে একদম পিষে মেরে ফেলে। এতটা হিংস্র আর মারমুখী ছিল যে তখনকার মানুষজন ধরেই নিয়েছিল মঙ্গোলরা হাদীসে বর্ণিত সেই ইয়াজুজ-মাজুজ। মঙ্গোল সেনাপতি চেঙ্গিস খান (নামের শেষে খান দেখে আবার মুসলিম ভাববেন না, সে মুলত টেংরিজমের অনুসারি) এর ভয়ে মানুষজন দূর-দূরান্তে পালিয়ে যায়। ১২১৮ সালে সে বুখারায় আক্রমণ করে রক্তের বন্যা বইয়ে নিজের কবজায় নেয়ার পর মুসলিমদের তিরস্কার করে বলে (যেমনটা দুনিয়ার কোথাও নির্যাতিত হলে আজকেও কেউ কেউ বলে)— “তোমরা অনেক বড় পাপী, তোমরা যদি এত বড় বড় পাপ না করতে, তাহলে সৃষ্টিকর্তা হয়তো আমার মতো এক আজাবকে তোমাদের কাছে পাঠাতেন না!” একথা সে দম্ভোক্তি দেখিয়ে বলত। অবশ্য হিজড়াদের ভিঁড়ে কিছু বীর মুসলিম ওঁদেরকে ইয়াজুজ-মাজুজ মনে না করে যুদ্ধে নেমে যায় প্রাপ্তি কিংবা ফলাফলের কথা না ভেবেই। তারিখের কিতাবাদীতে সেসময় মুনাফিক-কাপুরুষদের স্রেফ দুনিয়ালোভ, আপসে দ্বন্ধ, আর নির্দয়তার গল্পই লিপিবদ্ধ করা হয়েছে।
পৃথিবীর ইতিহাসে যত ধ্বংসলীলা হয়েছে এবং হবে (দাজ্জাল ব্যতিত) তার সব কিছুকে ছাড়িয়ে যাবে এঁদের ধ্বংসযজ্ঞ। প্রাচ্যে এমন কোন দেশ ছিলনা যা চেঙ্গিস খানের হাতে রঞ্জিত হয়নি। কত শহরকে জ্বালিয়ে ছাই করে দিয়েছে হিসেব ছাড়া। ড. আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর রাহিমাহুল্লাহ এঁদের ইতিহাস বলতে গিয়ে বলেছেন, "মনে হচ্ছিল যেন ইসলাম ও মুসলিমরা দুনিয়া থেকে পুরোপুরি শেষ হয়ে যাবে।"
কিন্তু আজ কোথায় সেই চেঙ্গিস খান? কোথায় হালাকু খান? মাটি কী তাদের স্পর্শ করেনি? দেহ কি তাদের পঁচে নি? দম্ভোক্তি কি ধূলিসাৎ হয়নি? আল্লাহর এই বাণী কী সত্য হয়নি— "আমি হঠাৎ করে তাদেরকে ধরে বসলাম; তখন (যাবতীয় কল্যাণ থেকে) তারা নিরাশ হয়ে গেল।" অত:পর যারা যুলম করেছিল তাদের শিকড় কেটে দেওয়া হল"!? সুতরাং বিশ্বাসীরা হতাশ না হই, আল্লাহ একদিন সকল যালিমের শিকড় কেটে দিবেন, আজকের দম্ভোক্তি সেদিন ধূলোয় বিলীন হয়ে যাবে। ইতিহাস নির্দয়-কাপুরষদের ভুলে যায়, কেবল বীরদের মনে রাখে ।