12/04/2023
'জাফর' লিখে সার্চ দেয়ার পর তিনজন বিখ্যাত জাফরের তালিকা এসেছে উইকিপিডিয়াতে।
১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় ডাঃ জাফর উল্লাহ্ চৌধুরীর বয়স ৩০ বছর।
একই সময়ে আশির দশকের জনপ্রিয় নায়ক প্রয়াত জাফর ইকবালের বয়স ২০ বছর।
এবং বর্তমানে জনপ্রিয় লেখক ডঃ জাফর ইকবালের বয়স ১৯ বছর।
উপরের দুইজন জাফরের নামের পাশে লিখা আছে মুক্তিযদ্ধা।
কিন্তু লেখক জাফর ইকবালের নামের পাশে মুক্তিযোদ্ধা শব্দটি লিখা নাই।
১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ যখন শুরু হয়েছে, তখনকার সময়ের সৃত্মি উল্লেখ করে ডঃ জাফর ইকবাল উনার লিখায় উল্লেখ করেন
- আমি যাত্রবাড়ীতে একটা পরিবারের সাথে ছিলাম, সেই পরিবারে অনেকগুলো শিশু বাচ্চা। যখন যুদ্ধ পুরো মাত্রায় চলছে তখন একেবারে কানের কাছে গোলাগুলির শব্দ, শেলিংয়ের শব্দ। বাইরে কারফিউ কোথাও যাবার উপায় নেই। তখন বাসার সামনে একটি ট্রেঞ্চ কাটা হলো। যখন শেলিংয়ের শব্দ অসহ্য মনে হয় তখন বাচ্চাগুলোকে নিয়ে কম্বল মুড়ি দিয়ে ট্রেঞ্চে বসে থাকি।
(ডিসেম্বরের স্মৃতি ll মুহম্মদ জাফর ইকবাল)
১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হওয়ার পর ডাঃ জাফর উল্লাহ্ কি করেছেন জানেন?
- ১৯৬৪ সালে ডিএমসি থেকে এমবিবিএস ও ১৯৬৭ সালে বিলেতের রয়্যাল কলেজ অব সার্জনস থেকে জেনারেল ও ভাস্কুলার সার্জারিতে এফআরসিএস প্রাইমারি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। কিন্তু চূড়ান্ত পর্ব শেষ না করে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিতে দেশে ফিরে আসেন।
পাকিস্তানি বাহিনীর নির্মমতার প্রতিবাদে লন্ডনের হাইড পার্কে যে কয়েকজন বাঙালি পাসপোর্ট ছিঁড়ে আগুন ধরে রাষ্ট্রবিহীন নাগরিকে পরিণত হয়েছিলেন তাদের একজন ডা. চৌধুরী।
তারপর বৃটিশ স্বরাষ্ট্র দপ্তর থেকে ‘রাষ্ট্রবিহীন নাগরিকের’ প্রত্যয়নপত্র নিয়ে সংগ্রহ করেন ভারতীয় ভিসা।
এই বিষয়ে জাহানারা ইমাম তার ‘একাত্তরের দিনগুলি’র ১৬১-১৬২ পৃষ্ঠায় ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীকে নিয়ে লিখেছেন-
‘চেনা হয়ে উঠেছে ড. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, ডা. এমএ মোবিন। এরা দুজনে ইংল্যান্ডে এফআরসিএস পড়ছিল। ঢাকা মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস পাস করে বিলেতে চার বছর হাড়ভাঙা খাটুনির পর যখন এফআরসিএস পরীক্ষা মাত্র এক সপ্তাহ পরে, তখনই বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ শুরু। ছেলে দুটি পরীক্ষা বাদ দিয়ে বাংলাদেশ আন্দোলনে অংশ নিলো, পাকিস্তানি নাগরিকত্ব বর্জন করলো, ভারতীয় ট্রাভেল পারমিট যোগাড় করে দিল্লিগামী প্লেনে চড়ে বসলো। উদ্দেশ্য ওখান থেকে কলকাতা হয়ে রণাঙ্গনে যাওয়া। প্লেনটা ছিল সিরিয়ান এয়ারলাইন্স-এর। দামাস্কাসে পাঁচ ঘণ্টা প্লেন লেট, সবযাত্রী নেমেছে। ওরা দুইজন আর প্লেন থেকে নামে না। ভাগ্যিস নামেনি। এয়ারপোর্টে এক পাকিস্তানি কর্নেল উপস্থিত ছিল ওই দুইজন ‘পলাতক পাকিস্তানি নাগরিককে’ গ্রেপ্তার করার জন্য।
প্লেনের মধ্য থেকে কাউকে গ্রেপ্তার করা যায় না, কারণ প্লেন হলো ইন্টারন্যাশনাল জোন। দামাস্কাসে সিরিয়ান এয়ারপোর্ট কর্মকর্তা ওদের দুইজনকে জানিয়েছিল- ওদের জন্যই প্লেন পাঁচ ঘণ্টা লেট। এমনিভাবে ওরা বিপদের ভেতর দিয়ে শেষ পর্যন্ত মে মাসের শেষাশেষি সেক্টর টু রণাঙ্গনে গিয়ে হাজির হয়েছে।’
(তথ্যঃ কাফি কামাল- কে এই জাফরুল্লাহ চৌধুরী)
আমাদের দূর্ভাগ্য কি জানেন?
আমাদের প্রজন্ম কারা দেশের হিরো আর কারা গল্পবাজ তা আজো চিনতে পারলো না!
আমরা মুক্তিযুদ্ধ না করেও মুক্তিযুদ্ধের গল্প বলা ডঃ জাফর ইকবালদের নিয়ে নাচানাচি করতে শিখেছি।
কিন্তু যে মানুষ গুলোর অসীম সাহসী গল্পের কাহিনী লিখে জাফর ইকবালরা আজকে গল্পকার হয়ে উঠেছে তাদের ঠিক মত চিনতে পারলাম না,তাদের মূল্যায়ন করতে পারলাম না।
"মীর জাফর"দের দেশে "বীর জাফর"রা আজ মূল্যহীন!
কিছুক্ষন আগে জানতে পেরেছি সত্যিকার অর্থে দেশের অভিভাবক এবং সর্বজন শ্রদ্ধেয় ডাঃ জাফরুল্লাহ চৌধুরী ইন্তেকাল করেছেন।
ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিঊন।
চেষ্টা করেছেন দেশের মানুষের জন্য স্বল্প মূল্যে ওষধ এবং চিকিৎসা সেবার ব্যাবস্থা করতে। বাংলাদেশের রাজনৈতিক বৈরিতা কমাতে নিজ উদ্যোগে চেষ্টা করেছেন দুই দলের সাথে আলাপ করতে।
উনার সেইসব চেষ্টা নিয়ে আলোচনা- সমালোচনা আছে। কিন্তু কোনোদিন মনে হয় নাই উনার দেশপ্রেম নিয়ে কোন প্রশ্ন আছে!
আল্লাহ আপনার ভুলত্রুটি ক্ষমা করুন সেই দোয়া করছি।
Courtesy: Rashed Khan