𝑲𝒐𝒖𝒔𝒉𝒊𝒌 𝑪𝒉𝒂𝒕𝒕𝒆𝒓𝒋𝒆𝒆

05/09/2024

"গুরুতর বিষয়ের মাঝে, জীবনের সবচেয়ে বড় শিক্ষককে শিক্ষক দিবসের শুভেচ্ছা। আমরা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা পাই যখন আমরা ব্যর্থ হই। আপনি ব্যর্থতা না দেখলে সফল হতে পারবেন না। আমার সমস্ত ছাত্রছাত্রী, জুনিয়র, বন্ধু এবং সহকর্মীদের উদ্দেশ্যে বলছি, যদি আপনারা সাম্প্রতিক প্রচেষ্টায় ব্যর্থ হয়ে থাকেন, তবে জেনে রাখুন, আপনারা সঠিক পথে আছেন সাফল্যের দিকে।"

25/08/2024

18/08/2024

সারা দেশজুড়ে ১৫ অগস্ট দিনটি স্বাধীনতা দিবস হিসেবে উদযাপন করা হয়। মুর্শিদাবাদের ক্ষেত্রে গল্পটা একেবারেই আলাদা। ১৯৪৭ সালের ১৫ অগস্ট থেকে টানা ১৭ আগস্ট পর্যন্ত তিন দিন ধরে তৎকালীন স্যার সিরিল রাডক্লিপের নেতৃত্বে বাউন্ডারি কমিশনের সুপারিশ অনুসারে মুর্শিদাবাদ জেলা অন্তর্ভুক্ত হয়েছিল পূর্ব পাকিস্তানে৷ আর পাল্টা খুলনা জেলা যুক্ত হয়েছিল ভারতের অংশে। সেই দিন ১৯৪৭-এর ১৫ অগস্ট জেলার সদর শহর বহরমপুরের ব্যারাকস্কয়ার মাঠে পাকিস্তানের নামে প্রথম স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠান পালন হয়। সবুজের মাঝে চাঁদ তারা আঁকা সেই দেশের জাতীয় পতাকা সরকারি ভাবে তুলেছিলেন সেই সময়ের মুর্শিদাবাদের জেলাশাসক আইসিএস অফিসার আইআরখান। মঞ্চে তখন মুসলিমলিগ নেতা কাজেম আলী মির্জা, বামনেতা সনৎ রাহ,আরএসপি’র নিতাই গুপ্ত, কংগ্রেসের শ্যামাপদ ভট্টাচার্য, উপস্থিত।

বহরমপুরের খাগড়া এলাকার বাসিন্দা নব্বই ছুঁই ছুঁই ভবানী রায় জানান, সেই সময় শহরের প্রধান সরকারি দফতর ছাড়াও অনেকর বাড়ির ছাদে, আজকের জেলার অন্যতম শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কেশরী বালিকা বিদ্যালয়, লন্ডন মিশনারী স্কুল সর্বত্রই পত পত করে উড়ে চলেছিল পাকিস্তানের পতাকা। জেলা জুড়ে চাপা উত্তেজনার পরিবেশ। বাড়ির বাইরে ওই কটা দিন পা ফেলার যো ছিল না। ১৪ অগস্ট মুর্শিদাবাদ পাকিস্তানে যোগ হবার এই খবর বাতাসে বিদ্যুতের গতিতে ছাড়িয়ে পরে। রাতারাতি তৈরি হয়ে যায় পাকিস্তানের পতাকা। তার পরের দিন জেলা জুড়ে বেড়ায় বিভিন্ন স্থানে মিছিল। স্লোগান উঠে “পাক পাক পাকিস্তান, মুর্শিদাবাদ আর নেই হিন্দুস্থান৷”

নবাবের শেষ বংশ ধর লালবাগের ছোটে নবাব বলে পরিচিত ( সৈয়দ রেজা আলী মির্জা) বলেন, “সে এক কঠোর সময়, অবশ্য আমাদের পূর্বপুরুষরা সর্বধর্ম সম্প্রীতি,ভাতৃত্ব বাদে বিশ্বাসী ছিলেন,যে কারণে তারা সেই সময় মুর্শিদাবাদকে ভারত ভূমিতে যুক্তরাখার আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে গিয়েছিল, যার ফলেই তিন দিন মুর্শিদাবাদ পাকিস্তানের মাটি বলে পরিচিতি লাভের পরে ভারতের সাথে যুক্ত হলে এই লালবাগ শহরেই ওয়াসেফ আলী মির্জার সহযোগিতায় ‘হিন্দু মুসলিম কনফারেন্স’ নামের সভার আয়োজন করা হয়েছিল যেখানে সব ধর্মের মানুষকে ডেকে আমন্ত্রিত করে জেলা জুড়ে সম্প্রীতির বার্তা দেওয়া হয়৷” ১৯৪৭-এর ১৫ অগস্টের এই ঘটনার দিনই দিল্লিতে তড়িঘড়ি কংগ্রেস নেতা শশাঙ্কশেখর সান্যাল, জনসংঘের শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় মুর্শিদাবাদকে ভারতের মধ্যে ঢোকাতে তৎপর হয়। চলে মরণ পণ চেষ্টা।

রাজনৈতিক দলগুলির পক্ষ থেকে যুক্তি দেওয়া হয়, গঙ্গা নদীকে ধরে ভৌগলিক সীমারেখা পুনরায় সংশোধন করে মুর্শিদাবাদকে ভারত উনিয়ন ও খুলনা জেলাকে পূর্ব পাকিস্তানে অন্তর্ভুক্ত করার। তা নাহলে কলকাতা বন্দরের অবস্থা আশঙ্কাজনক হবে। তিন দিনের টান টান উত্তেজনার মধ্যে দিয়ে ১৭ অগস্ট ১৯৪৭-এর সরকারি খাতায় ভারত উনিয়নে যুক্ত হয় ‘মুর্শিদাবাদ’। তুবও যেন পুরপুরি নিশ্চিন্ত হতে পারছিলেন না অনেকেই। পরের দিন ১৮অগস্ট গোটা জেলায় শুনসান আর আতঙ্কের পরিবেশ ভেঙে মুর্শিদাবাদে ভারতের প্রথম স্বাধীনতা দিবস পালিত হল।বহরমপুর শহরের বুকে আরও একবার ব্যারাক স্কোয়ার মাঠে জেলাশাসক আইআরখান নিজে হাতে তুললেন ভারতের জাতীয় পতাকা। মঞ্চে সুধীর সেনের গলায় ভেসে উঠল গান। তাই মুর্শিদাবাদ পেল তার স্বাধীনতার সুখ একটু ‘বিলম্বিত’ ভাবেই।

(সংগৃহীত)

28/07/2024

কাল থেকে বাড়িতে ছিলাম না। ফিরলাম এই একটু আগে। তাই লিখতে বেশ দেরী হয়ে গেল। নয় তো প্রতিবছরই সকাল সকাল এই দিনটায় কিছু না কিছু লিখি এখানে। তবে তেমন কি-ই বা আর লিখি। ওই তো লাল ফ্রেমে সাদা অক্ষরে 'লাল সেলাম' নয়তো 'অমর শহীদ দীর্ঘজীবী হোন!' এ জাতীয় গতে বাঁধা একটা কি দুটো লাইন। দায়সারাভাবে। জবাবে ওই একইরকম দুয়েক লাইনের উত্তর আসে কয়েকটা। কয়েকটা মুষ্টিবদ্ধ হাতের ইমোজি বড়জোর। আজ ভাবলাম একটু অন্যরকম কিছু লিখবো। লিখবো ওই চোখদুটোকে নিয়ে। চোখদুটো দেখুন একবার। কলকাতা নগর কোটাল বাহিনীর সদর দপ্তরের ওই ঘরটায় বসে চারদিকে ঘাতক পরিবৃত হয়েও মোটা ফ্রেমের চশমার কাঁচের পেছন থেকে হাসছে চোখদুটো! কয়েক হাজার সূর্যের আলো হার মানবে যে উজ্জ্বলতার কাছে। চোখদুটো কিন্তু খুব ভালো করেই জানে, বেয়াড়া সব প্রশ্নটশ্ন তোলার জন্য রাষ্ট্র এবার তাকে কি করবে। ইতিমধ্যেই বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে জীবনদায়ী ওষুধ, তুলে নেওয়া হয়েছে অক্সিজেন সহায়তা। সাররাত চোখের ওপর চড়া পাওয়ারের লাইট জ্বালিয়ে, বিনিদ্র রেখে ঘন্টার পর ঘন্টা চালিয়ে যাওয়া হয়েছে টানা ইন্টারোগেশন। তারপরও চোখদুটো হাসছে! দেখতে দেখতে 'বিদ্রোহী' কবিতার ওই লাইনটা মনে পড়ে যাচ্ছে। 'আমি জাহান্নামের আগুনে বসিয়া হাসি পুষ্পের হাসি!' মনে পড়ে যাচ্ছে রবি ঠাকুরের 'মৃত্যুঞ্জয়'!

'যত বড়ো হও,
তুমি তো মৃত্যুর চেয়ে বড়ো নও।
আমি মৃত্যু-চেয়ে বড়ো এই শেষ কথা বলে
যাব আমি চলে।।'

একইসাথে না খানিকটা মজাও লাগছে কেমন যেন। কোটি কোটি টাকার দুর্নীতিতে জড়িত এক সে এক সব আজকালকার নেতাজীরা যখন শ্রীঘরে পা রাখার আগেই উডবার্নে পৌঁছে যাচ্ছেন, জামিন পাচ্ছেন না বলে ভেউভেউ কান্না জুড়ছেন, তখন সেদিন ডি ডি-র চেম্বারে কিন্তু ওই চোখদুটো হাসছিল! চোখদুটোকে হয়তো বুজিয়ে দিতে পেরেছে ওরা। কিন্তু এই ছবিটাকে? না, সেটা ওরা মুছে ফেলতে পারেনি। আর যতদিন এই ছবিটা থাকবে ততদিন ঢাকা, গাজা, কেনিয়া আর প্যারিসের রাজপথে, কলম্বিয়া আর ফিলিপাইনের বর্ষা অরণ্যে, ওয়াল স্ট্রিট, প্রজন্ম আর শাহবাগ চত্বরে, রোহিত ভেমুলা আর আকলাখের হাতে হাত রেখে, জে এন ইউ, জে ইউ, প্রেসিডেন্সি ক্যাম্পাসে, টাঁড়জমিন, টিলাপাহাড়ি শালবনে হেঁটে বেড়াবে মোটা ফ্রেমের চশমার কাঁচের পেছনে হাজারখানেক সূর্যের চেয়েও উজ্জ্বল ওই চোখদুটো! ও চোখের বিনাশ নেই! লয়, অন্ত কিচ্ছু নেই। ও চোখ অনন্ত! অবিনাশী! অবিনশ্বর! তা শাসক যতই 'নকশালবাদ কা অন্ত কর দেঙ্গে' আর 'আর্বান নকশাল' ইত্যাদি বলে চিৎকার জুড়ুক না কেন? ওদের ঠান্ডা ঘরে আরামের ঘুম ভাঙ্গিয়ে মাঝরাতে বিছানায় ছিটকে তুলে বসিয়ে দেবে ওই চোখ! দেবেই! বেয়াড়া, বেয়াদব প্রশ্নগুলো করবে বারবার, করতেই থাকবে! কারণ একটাই। চোখদুটো বুজিয়ে দেওয়া গেছে। ছবিটা মুছে দেওয়া যায়নি!

(সুপ্রিয় চৌধুরী লেখা)

24/07/2024

ঊনবিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি, কুড়ি বছর বয়সী এক বাঙালী যুবক স্থির করলেন ভারতের সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মহাকাব্য, মহর্ষি ব্যাস বিরচিত মহাভারত তিনি বাংলা গদ্যে অনুবাদ করবেন। কিন্তু বললেই হয় না, তাতে বিস্তর খরচ। তার ওপর শুধু অনুবাদ করাই নয়, সেই বি নিজ খরচায় ডাকমারফত ঘরে ঘরে পৌঁছে দেওয়ার দায়িত্বও নিলেন তিনি। শেষে দীর্ঘ ছ'বছর ধরে অনুবাদ করে বেশকিছু খন্ডে প্রকাশিত সেই মহাভারত তিনি পৌঁছে দিতে লাগলেন ঘরে ঘরে। তিনি কালীপ্রসন্ন সিংহ। আজ তার মৃত্যুবার্ষিকী। ১৯৭০ সালের ২৪শে জুলাই মাত্র ৩০ বছর বয়সে এই মহাপ্রাণ তার কিছু অমর কীর্তি আমাদের‌ জন্য রেখে চলে যান। তার ১৫৪তম মহাপ্রয়াণবার্ষিকীতে তার প্রতি প্রণাম 🙏।

23/07/2024

বাংলার পরিব্রাজক অতীশ দীপঙ্কর

বিক্রমপুরের বজ্রযোগিনী নামে এক জনপদে ৯৮২ খ্রিস্টাব্দে জন্ম হয়েছিল এমন এক মানুষের, যার মতো জ্ঞানবান পণ্ডিত সে যুগে ছিল বিরল।

গত শতকের আশির দশকে পঞ্চম শ্রেণির বাংলা পাঠ্যবইয়ে অতীশ দীপঙ্করকে নিয়ে একটা লেখা ছিল। সেই লেখাটার একটা সুন্দর নামও ছিল। তখন বুঝিনি, তিনি আসলে কতবড় সাধক ছিলেন।

বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বিভিন্ন বই পড়ে যখন মনের দরজা-জানালা খুলে যেতে শুরু করলো, তখন আবার নতুন করে তার কথা মনে হলো। আর তখনই একটা বই পেয়ে গেলাম। বইয়ের নাম ‘অতীশ দীপঙ্কর’। হাতে পেয়েই একবারে পড়ে ফেললাম। কিশোর উপযোগী করে লেখা এ বইয়ের লেখক একরাম আলি। প্রকাশক ‘নালন্দা’। অনেকটা সামনাসামনি বসে গল্প বলার ঢঙে লেখা এ বই।

অনেক আগের কথা। তখন বাংলাদেশ আর পশ্চিমবাংলার মিলিত রূপ রাঢ়, বরেন্দ্র, হরিকেল, সমতট ও বঙ্গ নামে ছোট ছোট অঞ্চলে বিভক্ত ছিল। সমতটের প্রধান নগরী ও রাজধানী ছিল বিক্রমপুর। সেই বিক্রমপুরের বজ্রযোগিনী নামে এক জনপদে ৯৮২ খ্রিস্টাব্দে জন্ম হয়েছিল এমন এক মানুষের, যার মতো জ্ঞানবান পণ্ডিত সে যুগে ছিল বিরল। আজ তাকে আমরা অতীশ দীপঙ্কর নামে চিনি, কেউ কেউ অতীশ দীপঙ্কর শ্রীজ্ঞান বা দীপঙ্কর শ্রীজ্ঞান নামেও চেনেন।

পরে তিনি এসব নামে জগৎজোড়া খ্যাতি পেলেও বাবা-মা নাম রেখেছিলেন ‘চন্দ্রগর্ভ’। কল্যাণশ্রী ছিলেন একজন ধর্মপ্রাণ রাজন্য। তার স্ত্রীর নাম ছিল প্রভাবতী। তাদেরই মেজ ছেলে এই চন্দ্রগর্ভ, বড় ছেলের নাম পদ্মগর্ভ, ছোটটি শ্রীগর্ভ। বজ্রযোগিনী জনপদ কিন্তু আজও টিকে আছে। তবে, এখন সেটি নেহাতই একটি গ্রাম। একটি ঢিবিকে স্থানীয়রা চিহ্নিত করে রেখেছেন হাজার বছর ধরে, অতীশের ভিটা।

ছোটবেলা থেকেই চন্দ্রগর্ভ ছিলেন একটু অন্য ধরনের। আর-পাঁচটা ছেলের মতো খেলাধুলায় আর সামান্য পড়াশোনায় জীবন তার কাটাতে চাইল না। মাত্র দশ বছর বয়সেই সে যেকোন বই পড়ার মতো শিক্ষিত হলো। তার হাতের লেখা ছিল ছবির মতো সুন্দর। সেসময় রাজপরিবারের ছেলেদের এটুকু শিক্ষাই যথেষ্ট ছিল। কিন্তু এ-ছেলে তো আর রাজকার্য করার জন্য জন্মায়নি! তার সামনে একটাই লক্ষ্য, সবকিছু জানতে হবে তাকে। এতসব জানতে গেলে, বুঝতে গেলে, চাই আরও পড়াশোনা। চাই উপযুক্ত শিক্ষা। এমন শিক্ষক কোথায় পাওয়া যাবে!

মাত্র ১২ বছর বয়সেই রাজপরিবারে বেড়ে ওঠার মোহ তার ভেঙে গেলো। প্রাসাদের নিশ্চিন্ত জীবন ছেড়ে বেরিয়ে পড়লো। দেশান্তরে উচ্চশিক্ষার খোঁজে। আচার্যের খোঁজে। যেসময় তিনি সম্পূর্ণভাবে তন্ত্রচর্চায় নিয়োজিত, সেসময় একরাতে তিনি স্বপ্ন দেখলেন। স্বপ্নে অসংখ্য শিষ্যসহ ভগবান বুদ্ধদেব তাকে দেখা দিয়ে বলেন, ‘এ জীবনের প্রতি তোমার আসক্তি কেন? কেন তুমি বৌদ্ধধর্ম গ্রহণ করছ না?’

তখনই তিনি সিদ্ধান্ত নেন যে, আর নয়। যোগী আর সিদ্ধাচার্য আর ডাকিনীদের সঙ্গ ছেড়ে তিনি বিশুদ্ধ বৌদ্ধধর্মে দীক্ষা নেবেন। আচার্য ধর্মরক্ষিত তাকে বৌদ্ধধর্মে দীক্ষা দেন। আর এই প্রবর্জ্যগ্রহণের সময়ই তার নাম রাখা হয় দীপঙ্কর শ্রীজ্ঞান। তখন তার বয়স ছিল মাত্র ২৯ বছর।

বৌদ্ধধর্মে দীক্ষা নেওয়ার পর দুবছর বঙ্গ আর মগধের বিখ্যাত আচার্যদের কাছে পড়াশোনা করেন অতীশ। ওদন্তপুরী বিহারে আচার্য ধর্মরক্ষিতের কাছে মহাবিভাষা আয়ত্ত করেন। মহাসাঙ্ঘাক, সর্বাস্তিবাদী, সম্মিতীয় আর স্থবিরবাদী, এই চার সম্প্রদায়েরই ত্রিপিটক পাঠ করেন। তান্ত্রিকদের ছেড়ে বিশুদ্ধ বৌদ্ধ ধর্মচর্চাই তার জীবনের মূল লক্ষ্য হয়ে ওঠে।

বুদ্ধদেব দেবতা মানতেন না। তিনি বিশ্বাস করতেন, মানুষ নিজের চরিত্রকে শুদ্ধ করে ক্রমে ক্রমে দেবতাদের থেকেও উঁচুতে পরমপদে উঠতে পারে। তার মতে, তৃষ্ণাই নানারকম জন্মের কারণ। তাই এই তৃষ্ণাকে ধ্বংস করতে হবে। তিনি আরও বলতেন, ‘প্রাণী বধ করবে না। তোমাকে দেওয়া হয়নি এমন বস্তু নিয়ো না। মিথ্যা কথা বলবে না। মদ খাবে না। ব্যভিচার করবে না। সুগন্ধি ব্যবহার করবে না। উঁচু শয্যায় শোবে না। সোনা-রুপো ছুঁয়েও দেখবে না।’

বুদ্ধদেবের মৃত্যুর পর বৌদ্ধসমাজ ক্রমে ক্রমে ‘হীনযান’ আর ‘মহাযান’ নামে দুদলে বিভক্ত হয়ে গেলো। ‘যান’ শব্দের অর্থ পথ বা মত। দুই যানেই ত্রিশরণগমের ব্যবস্থা আছে। তবে হীনযানের ত্রিরত্ন এরকম- প্রথমে বুদ্ধ, তারপরে ধর্ম, শেষে সঙ্ঘ। কিন্তু মহাযান বৌদ্ধদের ত্রিরত্ন হচ্ছে প্রথমে ধর্ম, পরে বুদ্ধ ও শেষে সঙ্ঘ। মহাযানীরা বুদ্ধের থেকেও ধর্মকে বেশি গুরুত্ব দিলেন। তারপর ক্রমে ক্রমে এই মহাযান থেকেই উৎপত্তি হলো নানা যানের। মন্ত্রযান, বজ্রযান, সহজযান ও কালচক্রযান। সহজযানদের ধর্মচিন্তায় তন্ত্র এসে যাওয়ায় তাদেরকে তান্ত্রিক বৌদ্ধও বলা হয়। এসব সহজিয়া সাধকদের বলা হতো ‘সিদ্ধ’ বা ‘সিদ্ধাচার্য’। তারা নিজেরা গান লিখে এবং গেয়ে ধর্মপ্রচার করতেন।

বাংলাদেশের সিদ্ধারা গানগুলো লিখেছেন বাংলা ভাষায়। জেগে উঠেছিল সেই সময়ের নিচতলার মানুষেরা। যেমন, শবরপা ছিলেন ব্যাধ, মীনপা ছিলেন জেলে, চমরিপা ছিলেন মুচি, নারোপা ছিলেন শুঁড়ি, যোগিপা ছিলেন চণ্ডাল। তাদের বক্তব্য ছিল- মানুষে মানুষে উঁচুনিচু ভেদাভেদ নেই, সব মানুষই সমান। অখাদ্য বলে কিছু নেই, সবকিছুই খেতে হবে। অপবিত্র বলে কিছু নেই, সবকিছু পবিত্র। অস্থান-কুস্থান বলে তারা কিছু মানতেন না, সর্বত্র যেতেন। একে তখনকার সমাজ-আন্দোলনই বলা যায়। এরপর দীপঙ্কর দীক্ষা নেন আচার্য ধর্মকীর্তির তত্ত্বাবধানে। চারদিকে মহা অশান্তি দেখে অতীশ দীপঙ্কর দেশে ফিরে আসেন। তখন তার বয়স হয়েছিল ৪৩ বছর।

তিব্বতের রাজার অনুরোধে অনেক বাধাবিপত্তি পেরিয়ে ১০৪২ খ্রিস্টাব্দে দীপঙ্কর তিব্বতে পৌঁছান। তখন তার বয়স ৬০ বছর। তিব্বতে দীপঙ্করের প্রথম ঘাঁটি ছিল থোলিং বিহার। সেখানকার তান্ত্রিক রত্নভদ্র অবশেষে স্বীকার করেন যে, মহাপণ্ডিতদের মধ্যে দীপঙ্করই শ্রেষ্ঠ। টানা ১০ বছর সাধনার পর তিনি যে ঘরে থাকতেন তার তিনটি দরজার প্রথমটিতে লিখলেন, ‘যদি পার্থিব কোন চিন্তা এক মুহূর্তের জন্যও আমার মনে উদিত হয়, তা হলে ধর্মের প্রহরীরা আমার মাথা চূর্ণ করে দিক।’ দ্বিতীয় দরজার গায়ে লিখলেন, ‘যদি কোন ব্যক্তিগত স্বার্থচিন্তা এক মুহূর্তের জন্যও আমার মনে উদিত হয়, তা হলে ধর্মের প্রহরীরা আমার মাথা চূর্ণ করে দিক।’ আর তৃতীয় দরজায় লিখলেন, ‘যদি তুচ্ছ কোন চিন্তা এক মুহূর্তের জন্যও মনে উদিত হয়, তা হলে ধর্মের প্রহরীরা আমার মাথা চূর্ণ করে দিক।’ তারপর দীপঙ্কর হয়ে গেলেন সেখানকার ‘জোবো জে’, অর্থাৎ মহাগুরু।

তিব্বতে দীপঙ্করের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ ছিল ‘বোধি-পথ-প্রদীপ’ বইটি লেখা। তার প্রধান শিষ্যদের অনুরোধে অতীশ ছোট্ট বইটির একটা ব্যাখ্যা লিখেন ‘বোধিমার্গ-প্রদীপ-পঞ্জিকা’ নামে। সেটা ছিল একটা বিরাট বই। তিনি লিখেছেন, ‘মানুষকে তিন শ্রেণির বলে জানবে: অধম, মধ্যম ও উত্তম। এই তিন শ্রেণিরই চরিত্রের বৈশিষ্ট্য অত্যন্ত পরিষ্কার। তাদের প্রত্যেকের লক্ষণগুলো আমি স্পষ্ট করে লিখছি। অধম সে-ই, যে শুধু নিজের স্বার্থ আর সংসার-সুখের জন্য কাজ করে। সংসার-সুখের প্রতি উদাসীন আর কোন পাপকাজও করে না, অথচ যে শুধুই নিজের ভালোর কথা চিন্তা করে, সে হলো মধ্যম পুরুষ। আর উত্তম তাকেই বলা হয়, যে নিজেকে কষ্ট দিয়ে সর্বদা অন্যের কষ্ট দূর করার চেষ্টা করে।’

ভারত থেকে বৌদ্ধধর্ম গিয়েছিল তিব্বতে। বৌদ্ধধর্মের রূপে আসলে গিয়েছিল এক নতুন সভ্যতা, এক নতুন জ্ঞান আর নতুন জীবনচর্চা। নতুন ভাষা আর লিপি। দীপঙ্করকে তিব্বতের একপ্রান্ত থেকে অন্যপ্রান্তে ঘুরতে হয়েছিল মরো-মরো বৌদ্ধ সভ্যতার প্রাণ ফিরিয়ে আনতে। তাপর অক্লান্ত পরিশ্রমে একসময় শরীরে অসুখ করে। একসময় তিনি শেষ নিশ্বাস ফেলেন। সেটা ছিল ১০৫৪ খ্রিস্টাব্দ।

তিব্বতে এখনও তাকে ‘অদ্বিতীয় গুরুরূপে’ স্মরণ করা হয়। আমরাও তাকে পুরোপুরি ভুলে যাইনি। বাংলাদেশের বিক্রমপুরের বজ্রযোগিনী গ্রামে স্মরণফলক আর কমলাপুরের বৌদ্ধবিহার তার প্রমাণ। বাংলাদেশ সরকার রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় তার চিতাভস্ম তিব্বত থেকে নিয়ে আসে ১৯৭৮ খ্রিস্টাব্দের ২৩ জুন।

কমলাপুর বৌদ্ধবিহারে অতীশ দীপঙ্কর শ্রীজ্ঞানের চিতাভস্ম রাখা আছে। বহু মানুষ সেই চিতাভস্ম দেখতে যান। শ্রদ্ধা জানাতে যান মানবতার সেই পূজারি পরিব্রাজককে, যার কোন দেশভেদ ছিল না, সব দেশকে যিনি নিজেরই দেশ বলে বিশ্বাস করতেন। জীবনের শেষদিন পর্যন্ত যিনি ছিলেন অক্লান্ত। হাজার বছর আগে তিনি বলেছিলেন, ‘ভিড়ের ভেতর বসবাস করার সময় এটা নয়। এখন নিঃসঙ্গতার মধ্যে আশ্রয় খুঁজে নিতে হবে।’ আমরা মনে রেখেছি তার সেই উক্তি, ‘কখনো নিজের জন্য কিছু করবে না, এমনকি নিজের জন্য বাড়িয়ে যাবে না পুণ্যেরও সঞ্চয়!’

লিখছেন: মো. ইয়াকুব আলী

23/01/2024

দেশ নায়ক শ্রী সুভাষ চন্দ্র বসু🙏🖤🇮🇳

23/01/2024

দেশ নায়ক সুভাষচন্দ্র বসুঃ
-----------------------------------------------
নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসু ব্রিটিশ ভারতের অন্যতম নেতা। নেতাজি নামে বিশেষভাবে অভিহিত হয়ে থাকেন।১৮৯৭ খ্রিষ্টাব্দের ২৩শে জানুয়ারি, বর্তমান ভারত-এর উড়িষ্যার কটক শহরে জন্মগ্রহণ করেন।

তাঁর পৈত্রিক নিবাস ছিল পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণ চব্বিশ পরগণার কোদালিয়া নামক গ্রামে।তাঁর পিতা জানকীনাথ বসু ছিলেন আইনজীবী। কর্মক্ষেত্রে ছিল কটক।

সুভাষ বসুর মায়ের নাম প্রভাবতী দেবী। তিনি ছিলেন পিতামাতার চোদ্দ সন্তানের মধ্যে নবম। সুভাষের জন্মের সময় তাঁর পিতামাতা কটক শহরে ছিলেন।

ষষ্ঠ শ্রেণী পর্যন্ত তিনি কটকের একটি ইংরেজি স্কুলে পড়াশোনা করেন। বর্তমানে এই স্কুলটির নাম স্টিওয়ার্ট স্কুল । এরপর তাঁকে ভর্তি করা হয় কটকের র‌্যাভেনশ কলেজিয়েট স্কুলে । ১৯১১ খ্রিষ্টাব্দে এই স্কুল থেকে তিনি ম্যাট্রিকুলেশন পরীক্ষা দেন।

কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে অনুষ্ঠিত এই পরীক্ষায় তিনি দ্বিতীয় স্থান অধিকার করেন। এরপর তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত প্রেসিডেন্সি কলেজ (Presidency College)-এ ভর্তি হন।

এই কলেজের ইংরেজি অধ্যাপক ওটেন ভারত-বিদ্বেষী কথাবার্তার জন্য তিনি এর বিরোধীতা করেন। ফলে অধ্যাপক ওটেন-এর সমর্থকদের দ্বারা তিনি প্রহৃত হন।

এরপর কলেজ কর্তৃপক্ষ কয়েকজন ছাত্রসহ সুভাষ বসুকে কলেজ থেকে বহিষ্কার করে। এরপর তিনি স্যার আশুতোষ চৌধুরী সহায়তায় স্কটিশ চার্চ কলেজে (Scottish Church College) ভর্তি হন। এই কলেজে লেখাপড়ার সময় তিনি ইউনিভার্সিটি অফিসার্স ট্রেনিং কোর-এ যোগ দেন এবং সমরবিদ্যার প্রাথমিক শিক্ষা লাভ করেন।

১৯১৮ খ্রিষ্টাব্দে এই কলেজ থেকে তিনি থেকে দর্শনে বি.এ (সম্মান) পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। এরপর অভিভাবকরা তাঁকে ভারতীয় সিভিল সার্ভিস পরীক্ষার জন্য বিলাত পাঠান ।

১৯২০ খ্রিষ্টাব্দে ইংল্যান্ডে অবস্থানকালে ইংল্যান্ডে তিনি কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিজউইলিয়াম হলে উচ্চশিক্ষার্থে ভর্তি হন। ১৯২০ খ্রিষ্টাব্দে তিনি এই কলেজের পরীক্ষায় চতুর্থ স্থান লাভ করেন এবং মরাল সায়েন্স কেম্ব্রিজ ট্রাইপস অধিকার করেন।

ইতিমধ্যে ভারতে নানা রকমের ঘটনা ঘটে যায়। যেমন ১৯১৯ খ্রিষ্টাব্দে রাউটাল বিল বাতিলের জন্য গান্ধীজী দরখাস্ত করেন। এপ্রিল মাসে সর্বভারতীয় সত্যগ্রহ আন্দোলন শুরু হয় এবং হরতাল পালিত হয়।

এরপর পাঞ্জাবে তাঁর প্রবেশের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হলে, গান্ধীজী পাঞ্জাবে প্রবেশের চেষ্টা করেন। এই কারণে দিল্লী যাওয়ার পথে তাঁকে গ্রেফতার করা হয়।

১৩ই এপ্রিল তারিখে জালিয়ানওয়ালাবাগে হত্যাকাণ্ডের পর গান্ধীজী সবরমতী আশ্রমে ৩ দিনের উপবাস করেন। ১৪ই এপ্রিল তারিখে নদীয়াতে স্বীকার করেন যে, সত্যাগ্রহ করে তিনি হিমালয়তূল্য ভুল করেছেন।

গান্ধীজী'র এই আন্দোলন এবং জালিয়ানওয়ালাবাগে হত্যাকাণ্ডের ঘটনার পর, সুভাষ তীব্র বৃটিশ বিরোধী হয়ে উঠেন। ফলে সিভিল সার্ভিস পরীক্ষা প্রত্যাখ্যান করে তিনি ভারতে ফিরে আসার উদ্যোগ নেন।

এই প্রসঙ্গে তিনি বলেছিলেন, "কোনো সরকারের সমাপ্তি ঘোষণা করার সর্বশ্রেষ্ঠ পন্থা হল তা থেকে নিজেকে প্রত্যাহার করে নেওয়া"।

১৯২১ খ্রিষ্টাব্দের ১৬ জুলাই জাহাজ থেকে নেমে গান্ধীজী'র সাথে দেখা করেন। গান্ধীজী'র নির্দেশে তিনি দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশের সাথে দেখা করেন। উল্লেখ্য এই সময় চিত্তরঞ্জন দাশ ছিলেন সবার রাজনৈতিক গুরু।

কলকাতায় ফিরে তিনি চিত্তরঞ্জন দাশের অনুপ্রেরণায় স্বরাজ নামক সংবাদপত্রে লেখালিখি শুরু করেন এবং বঙ্গীয় প্রদেশ কংগ্রেস কমিটির প্রচার দায়িত্বে নিযুক্ত হন।

১৯২৪ খ্রিষ্টাব্দে দেশবন্ধু যখন কলকাতা পৌরসংস্থার মেয়র নির্বাচিত হন, তখন সুভাষচন্দ্র তাঁর অধীনে কর্মরত ছিলেন। ১৯২৫ খ্রিষ্টাব্দে অন্যান্য জাতীয়তাবাদীদের সঙ্গে তাঁকেও বন্দী করা হয় এবং মান্দালয়ে নির্বাসিত করা হয়।

উল্লেখ্য ১৯১৮ খ্রিষ্টাব্দের রেগুলেশন দ্বারা তিনি বন্দী হয়েছিলেন। এখানে তিনি যক্ষ্মায় আক্রান্ত হয়েছিলেন। ১৯২৭ খ্রিষ্টাব্দে তিনি জেল থেকে ছাড়া পান।

সুভাষচন্দ্র পরপর দু-বার ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের সভাপতি নির্বাচিত হন। কিন্তু মহাত্মা গান্ধির সঙ্গে আদর্শগত সংঘাত এবং কংগ্রেসের বৈদেশিক ও অভ্যন্তরীণ নীতির প্রকাশ্য সমালোচনা বিরুদ্ধ মত প্রকাশ করার জন্য তাঁকে পদত্যাগ করতে হয়।

সুভাষচন্দ্র মনে করতেন গান্ধিজির অহিংসার নীতি ভারতের স্বাধীনতা আনার ক্ষেত্রে যথেষ্ট নয়। এই কারণে তিনি সশস্ত্র বিদ্রোহের পক্ষপাতী ছিলেন।

সুভাষচন্দ্র ফরওয়ার্ড ব্লক নামক একটি রাজনৈতিক দল প্রতিষ্ঠা করে ব্রিটিশ শাসন থেকে ভারতের পূর্ণ ও সত্বর স্বাধীনতার দাবি জানাতে থাকেন।

ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষ সুভাষ বোসকে এগারো বার কারারুদ্ধ করেছিল। তাঁর বিখ্যাত উক্তি "তোমরা আমাকে রক্ত দাও, আমি তোমাদের স্বাধীনতা দেবো।"

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ ঘোষিত হওয়ার পরেও তাঁর মতাদর্শের কোনো পরিবর্তন ঘটেনি; বরং এই যুদ্ধকে ব্রিটিশদের দুর্বলতার সুবিধা আদায়ের একটি সুযোগ হিসেবে দেখেন।

যুদ্ধের সূচনালগ্নে তিনি লুকিয়ে ভারত ত্যাগ করে সোভিয়েত ইউনিয়ন, জার্মানি ও জাপান ভ্রমণ করেন ভারতে ব্রিটিশদের আক্রমণ করার জন্য সহযোগিতা লাভের উদ্দেশ্যে।

জাপানিদের সহযোগিতায় তিনি আজাদ হিন্দ ফৌজ পুনর্গঠন করেন এবং পরে তার নেতৃত্ব দান করেন। এই বাহিনীর সৈনিকেরা ছিলেন মূলত ভারতীয় যুদ্ধবন্দি এবং ব্রিটিশ মালয়, সিঙ্গাপুরসহ দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য অঞ্চলে কর্মরত মজুর।

জাপানের আর্থিক, রাজনৈতিক, কূটনৈতিক ও সামরিক সহায়তায় তিনি নির্বাসিত আজাদ হিন্দ সরকার প্রতিষ্ঠা করেন এবং আজাদ হিন্দ ফৌজের নেতৃত্বদান করে ব্রিটিশ মিত্রবাহিনীর বিরুদ্ধে ইম্ফল ও ব্রহ্মদেশে বর্তমান মায়ানমার যুদ্ধ পরিচালনা করেন।

ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে নাৎসি ও অন্যান্য যুদ্ধবাদী শক্তিগুলির সঙ্গে মিত্রতা স্থাপনের জন্য কোনো কোনো ঐতিহাসিক ও রাজনীতিবিদ সুভাষচন্দ্রের সমালোচনা করেছেন; এমনকি কেউ কেউ তাঁকে নাৎসি মতাদর্শের প্রতি সহানুভূতিসম্পন্ন বলে অভিযুক্ত করেছেন।

তবে ভারতে অন্যান্যরা তাঁর ইস্তাহারকে রিয়েল পোলিটিক নৈতিক বা আদর্শভিত্তিক রাজনীতির বদলে ব্যবহারিক রাজনীতি -এর নিদর্শন বলে উল্লেখ করে তাঁর পথপ্রদর্শক সামাজিক ও রাজনৈতিক ভাবাদর্শের প্রতি সহানুভূতি পোষণ করেছেন।

উল্লেখ্য, কংগ্রেস কমিটি যেখানে ভারতের অধিরাজ্য মর্যাদা বা ডোমিনিয়ন স্ট্যাটাসের পক্ষে মত প্রদান করে, সেখানে সুভাষচন্দ্রই প্রথম ভারতের পূর্ণ স্বাধীনতার পক্ষে মত দেন। জওহরলাল নেহরু সহ অন্যান্য যুবনেতারা তাঁকে সমর্থন করেন।

শেষপর্যন্ত জাতীয় কংগ্রেসের ঐতিহাসিক লাহোর অধিবেশনে কংগ্রস পূর্ণ স্বরাজ মতবাদ গ্রহণে বাধ্য হয়। ভগৎ সিংয়ের ফাঁসি ও তাঁর জীবন রক্ষায় কংগ্রেস নেতাদের ব্যর্থতায় ক্ষুব্ধ সুভাষচন্দ্র গান্ধি-আরউইন চুক্তি বিরোধী একটি আন্দোলন শুরু করেন।

এ সময় সুভাষ বোসকে কারারুদ্ধ করে ভারত থেকে নির্বাসিত করা হয়। নিষেধাজ্ঞা ভেঙে তিনি ভারতে ফিরে এলে আবার তাঁকে কারারুদ্ধ করা হয়।

মনে করা হয় ১৯৪৫ সালের ১৮ অগস্ট তাইওয়ানে একটি বিমান দুর্ঘটনায় তাঁর মৃত্যু হয়। তবে তাঁর এই তথাকথিত দুর্ঘটনা ও মৃত্যুর বিরুদ্ধ প্রমাণও বিদ্যমান।

আজ এই মহান নেতা সুভাষ চন্দ্র বসুর জন্মদিন। আজকের এই দিনে উনাকে বিনম্র শ্রদ্ধাঞ্জলি।

22/01/2024

কাঠ গোলা বাগান

21/01/2024

🙏জয় রঘুনাথের জয়🙏

রামচন্দ্র, বঙ্গদেশ ও লালগোলা রঘুনাথ মন্দিরের ইতিহাসঃ

আজ রাম মন্দির প্রতিষ্ঠা হওয়ার কয়েক ঘন্টা প্রাক কালে।। আমি আমার অল্প শিক্ষা দিয়ে যেটুকু বুঝেছি,তাতে পৃথিবীর চারটি মহাকাব্যের একটি হল রামায়ণ। রামায়ণ ও মহাভারত দিয়েই সংস্কৃত সাহিত্যের সূচনা হয়েছে।ড.সুনীতি কুমার চট্টোপাধ্যায় লিখেছেন, “The Ramayana is a work of the same or similar rank with the Rigveda and Mahabharata as wellas the Sikh Guru(also of India) with the IIliad and the Odyssey and other Homeric corpus of ancient Greece.(along with the works of Hesoid and the three great tragic poets),with the old Testament of jews withj the Saha-Namah of Iran And with the Arbian Nights of Muslim Arbia.’’

এবার আসি বাংলা ভাষায়। বাংলা ভাষায়প্রথম এবং সর্বশ্রেষ্ঠ রামায়ণ রচয়িতা হলেন কৃত্তিবাস । কৃত্তিবাসের রামায়ণ রচনাকাল ১৩৮০-১৪০০ খ্রিষ্টাব্দের প্রথম দশকের মধ্যে বলে অনুমান করা হয়। তাহলে কি উনি অন্য কোন সংস্কৃতির প্রভাবে এটি রচনা করেছিলেন, নাকি এই কাব্য সে সময় জনপ্রিয় ছিলই না। আসুন দেখা যাক। রমেশচন্দ্র মজুমদার কৃত্তিবাসী রামায়ণকে ‘জাতীয় কাব্য’ বলে তাঁর ‘বাংলাদেশের ইতিহাস’ গ্রন্থে লিখেছেন,” প্রথমত সমগ্র জাতিই এই কাব্যকে সাদরে বরণ করিয়াছে,কোটিপতির প্রাসাদ হইতে দীন-দরিদ্রের পর্ণকুটির পর্যন্ত,দেশের এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্ত পর্যন্ত এই কাব্যের জনপ্রিয়তা।”
এবার আসি আমার জন্মস্থান লালগোলাতে।
প্রায় অর্ধ সহস্রাব্দ প্রাচীন স্থান লালগোলা। এই স্থানের সবচেয়ে প্রাচীন দেবালয় যেটি সেটি হল রঘুনাথ বাড়ি। এই মন্দির প্রতিষ্ঠিত হয় ১৭৯৪ খ্রিষ্টাব্দের আশেপাশে। কিন্তু এই মন্দিরে প্রতিষ্ঠিত দেব-দেবী মূর্তি ও শালগ্রাম শিলাগুলি তার চেয়েও বহু শতাব্দী প্রাচীন। এই মন্দির প্রতিষ্ঠার ইতিহাস হল এরকম-

সময়টা ১৭৭২-৭৩ সালের কয়েক বছর পর । বঙ্গ দেশে সন্ন্যাসী বিদ্রোহ তখন বেশ ভালভাবে ছড়িয়ে পড়েছে। সে সময় দিনাজপুর জেলার অন্তর্গত মশিদা পরগনার কাঞ্চন নামক স্থান থেকে কিছু সন্ন্যাসী, সন্ন্যাসী বিদ্রোহে যোগ দিতে যাচ্ছিলেন। রামদাস মতিলাল মহান্ত ছিলেন এই সন্ন্যাসী দলের নেতা। এই সন্ন্যাসীগণ শ্রীশ্রীসীতারাম, অনুজ শ্রীলক্ষ্মণ ও শ্রীমহাবীর হনুমান মূর্তি, পিতলের রাধাকৃষ্ণ মূর্তি ও নানা প্রকারের বহু শালগ্রাম শিলা ও কাঞ্চন মহলের বৃহৎ দেবোত্তর জমিদারী রাও নীলকণ্ঠ রায় অথবা আত্মারাম রায়ের কাছে গচ্ছিত রেখে যান। একটি অর্পণনামার মাধ্যমে সেটি হস্তান্তরিত হয়। সেখানে উল্লেখ ছিল , যদি সন্ন্যাসীরা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ফিরতে পারেন তবে তাঁরা ঐ বিরাট আই বিশিষ্ট জমিদারীর দ্বায়িত্ব গ্রহন করবেন নচেৎ উক্ত সমস্ত সম্পত্তির মালিকানা লালগোলা রাজের অন্তর্গত হবে। পরবর্তীতে এই জমিদারী লালগোলা রাজের অন্তর্ভুক্ত হয় এবং প্রতিষ্ঠিত হয় রঘুনাথ মন্দিরের।

অনুমান করা হয় মন্দির প্রতিষ্ঠার আগে এটি একটি বৌদ্ধ মঠ ছিল। স্বয়ং বঙ্কিমচন্দ্র এই স্থানের বর্ণনা তাঁর ‘ আনন্দমঠ’ উপন্যাসে করেছেন-“সেই বনমধ্যে এক প্রকাণ্ড ভূমিখণ্ডে ভগ্ন শিলাখন্ডসকলে পরিবেষ্টিত হইয়া একটি বড়ো মঠ আছে, পুরাতত্ব বিদেরা দেখিলে বলিতে পারিতেন, ইহা পূর্বকালে বৌদ্ধ দিগের বিহার ছিল-তারপরে হিন্দু মঠ হইয়াছে। অট্টালিকাশ্রেনী দ্বিতল-মধ্যে বহুবিধ দেবমন্দির এবং সম্মুখে নাটমন্দির।’’
বঙ্কিমচন্দ্র যে সময় লালগোলায় আসেন সেটি মাঘী পূর্ণিমা তিথির কিছু আগে।এই তিথিতেই লালগোলা রাজবংশের প্রাণপুরুষ রাও রামশঙ্কর রায় গুরুর পায়ে মাথা রেখে সজ্ঞানে দেহত্যাগ করেন ভাগীরথী তীরে লালগোলায় সে সময় মাঘীপূর্ণিমা তিথি মহা ধূমধামের সাথে পালিত হত। বিভিন্ন স্থান হতে দলে দলে সাধু সন্ন্যাসীদের সমাগম হত। সমস্ত সাধু সন্ন্যাসীদের সিধে দিয়ে তাঁদের রাখা হত এই রঘুনাথ মন্দিরেই নির্মিত ছোট ছোট ঘরে।

ফাল্গুন মাস হলো রঘুনাথ মন্দির স্থাপনের মাস। রাজা রাও রামশঙ্কর রায় ১৮১৩ খ্রীস্টাব্দে এই মন্দিরের দায়িত্ব পান। তার পূর্বে সম্ভবত ১৭৯৪ খ্রীস্টাব্দের মধ্যে এই মন্দির প্রতিষ্ঠিত হয়। এই মন্দির প্রতিষ্ঠার একশ বছর পর বাংলা ১৩০০ সালের ফাল্গুন মাসে মহারাজা রাও যোগীন্দ্র নারায়ণ রায় এই মন্দির পুনঃসংস্কার করেন। মন্দির ফলকে তার উল্লেখ রয়েছে। যদি তাই হয় তাহলে (১৪২৬ -১৩০০) বঙ্গাব্দ =১২৬বছর।
অতএব( ২০২০খ্রীস্টাব্দ-১২৬বছর) =১৮৯৪ খ্রীস্টাব্দের ফাল্গুন মাস সংস্কার কাল। এবং ১৮৯৪ খ্রীস্টাব্দ- ১০০বছর= ১৭৯৪ খ্রীস্টাব্দ লালগোলা রঘুনাথ মন্দিরের স্থাপন কাল।
সর্বশেষে দেখা গেল রামায়ণের প্রভাব সুদুরপ্রসারী।এই মহাকাব্যকে কেন্দ্র করে মধুসূদন থেকে শুরু করে রবীন্দ্রনাথ,দীপক চন্দ্র,নৃসিংহ প্রসাদ ভাদুড়ী প্রমুখরা লিখেছেন উপন্যাস। বাঙালীর কাছে রামচন্দ্র আধুনিক দেবতা নন বরং প্রাচীনকাল থেকেই রামচন্দ্রের বন্দনা বাঙালী করে আসছে এটা পীিশেষে বলাই যায়। সকলকে রাম নবমীর অনেক শুভেচ্ছা।।

লেখক- সুমন কুমার মিত্র
পরিমার্জিত :- কৌশিক চ্যাটার্জী
তথ্যসূত্র - মুর্শিদাবাদ অনুসন্ধান (২য় খণ্ড)
সম্পাদনা - অরিন্দম রায়।
বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস আদিখণ্ড( তপন কুমার চট্টোপাধ্যায়)
..………….........…...........…....................

19/01/2024

"বয়স পেরিয়ে গেলেও ভালোবাসাটা একই থাকে"✨🖤

শুভ জন্মদিন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় 🎂

18/01/2024

মনের মানুষ ❣️
অনুপম রায় ( Anupam Roy)

© Akram Wasim 🎥

16/01/2024

ভেজা রেলগাড়ি
হয়তো সবুজ ছুঁয়ে ফেলে,

-অনুপম রায় ( Anupam Roy)

© Akram Wasim 🎥

16/01/2024

বিজয় সেতুপতির জন্মদিন উপলক্ষে...

তামিল ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে যে দুজন বিজয় ধামাকা করছেন তার মধ্যে একজন হলেন এই বিজয় সেতুপতি। তাঁর অভিনীত বেশ কিছু সিনেমা যেমন 96, মাস্টার, বিক্রম ভেধা, ফারজি আমার খুব প্রিয়। যদিও ওনার সব সিনেমা আমার এখনও দেখা নেই। বিজয় সেতুপতি এমন একজন অভিনেতা যাকে ভিলেন, হিরো, অ্যান্টিহিরো সবরকম ছাঁচে ফেলে দেওয়া যায়। তাছাড়া অভিনয় করতে হলে যে শুধুমাত্র অভিনয়‌ই জানতে হয় সিক্স প‍্যাক চেহারা না থাকলেও চলবে সেটাও তিনি ভালোভাবে প্রমাণ করে দিয়েছেন। এবং এই ব‍্যাপারটাই আরও বেশি আকর্ষণ করে।

(সংগৃহীত)

13/01/2024

পুঁজি যদি বাঙালির হয় তাহলে অবাঙালি কেও বাংলা শিখতে হয় তার বড় প্রমাণ অমিতাভ বচ্চন এই বক্তব্য। তাই বাঙালি পুঁজি বাড়াও।
@ফলোয়ার

12/01/2024

জগতের এত দুঃখ, নিজের জীবনে এত দুঃখ, এর মধ্যেও বিবেকানন্দ হাসতে পারেন! তুরীয়ানন্দজী দেখেছিলেন, ছাতে পায়চারি করতে করতে স্বামীজি আপন মনে বলছেন, ওরে আমার দুঃখ কেউ বোঝেনা-- তারপর আলসের উপর মাথা রেখে কাঁদছেন, জগতের জন্য অশ্রুর রক্তনিষেক করছেন! সেই বিবেকানন্দই অপূর্ব হাসির আলো মাখিয়ে তাঁর বেদনা বিন্দুগুলিকে সকলের সামনে তুলে ধরেছেন। স্নেহের বোন মেরি হেলের বাবার মৃত্যুতে স্বামীজী মেরিকে সান্ত্বনা দিয়ে একটি চিঠি লিখেছিলেন। পত্র সাহিত্যের সম্পদ সেই চিঠিটি । পত্রটির কয়েক ছত্রে গভীরতম বেদনাকে ধরা আছে। "তোমার শোকে কী যে গভীর দুঃখ পেয়েছি তা কি করে বলবো- আমি সন্ন্যাসী - তবু!.......
মেরি, তোমার জীবনে এইতো প্রথম দুঃখ-কিন্তু আমার জীবন! কত জনকে হারিয়েছি, কত সহ্য করেছি!... স্বামীজি তারপর লিখেছেন মেরি তুমি আচ্ছাদনের তলায় কাটিয়েছে, আর আমি বাইরে দাঁড়িয়ে জ্বলেছি, পুড়েছি-দারিদ্র্যে,বিশ্বাসঘাতকতায় আর নিজের নির্বুদ্ধিতায়!"
তবুও বিবেকানন্দ হাসেন।কারণ তিনি জানেন প্রকৃতিকে জয় করতেই হবে।এই দুঃখ প্রকৃতির দান। আবার চিঠিতে বলছেন ,"আমার প্রকৃতিতে পুরুষের চেয়ে মেয়েগুণ বেশি। আমি সবসময়ই অন্যের দুঃখ বেদনা শুধু শুধু নিজের উপর টেনে নিই,... ঠিক যেমন মেয়েদের সন্তান নাহলে একটা বিড়াল পুষে তার উপর ভালোবাসা ঢেলে দেয়।..পৃথিবীতে যদি কাউকে ভালবাসতে না হতো বেঁচে যেতাম!যদি বাল্যেই আত্মীয়হীন হয়ে অনাথ বালক হতাম! আমার আত্মীয়রাই আমাদের জীবনের সবচেয়ে বড় দুঃখের কারণ- আমার ভাই ,বোন, মা। আত্মীয়রা মানুষের গতির পক্ষে সবচেয়ে মারাত্মক বাধা। কী বিচিত্র! তবুও মানুষ বন্ধন বাড়াতে ছোটে বিয়ের দ্বারা!!"
প্রকৃতি বলবে কাঁদো আমরা তার নির্দেশ মেনে নিয়ে কাঁদতে শুরু করে দেবো, এতো আত্মশক্তির পরাজয়!তাই প্রকৃতিকে চ্যালেঞ্জ করে তিনি অদ্বৈত বাদী হয়ে প্রকৃতির মায়াকে ভস্মীভূত করেছেন তাঁর তৃতীয় নয়নে। তিনি শিবের অবতার, তাঁর তৃতীয় নয়ন জ্ঞানের আর অপর দুটি নয়ন প্রেমের। জাগতিক দুঃখকে বশীভূত করে তাই তিনি শেষ পর্যন্ত ত্রিনয়নে হাসিতে ঝলমল করে উঠেছেন। জয়তু স্বামীজি। সূত্র:সহাস্য বিবেকানন্দ;শংকরী প্রসাদ বসু।
প্রণাম স্বামীজী।
সংগৃহীত।

12/01/2024

#ওরা_তোমার_শরীর_ডোবাক

বিশ্বাসঘাতক নেত্র সেনের দেওয়া সংবাদ মারফত ১৯৩৩ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি গোর্খা সৈন্যরা মাষ্টার দার আত্মগোপনের স্থানটি ঘিরে ফেলে। সূর্যসেন ধরা পড়েন। ১৯৩৩ সালে সূর্যসেন, তারকেশ্বর দস্তিদার এবং কল্পনা দত্তের বিশেষ আদালতে বিচার বসে। ১৪ আগস্ট সূর্যসেনের ফাঁসির রায় হয়। এরপর ১৯৩৪ সালের আজকের দিন ১২ জানুয়ারি চট্টগ্রাম কারাগারে তার ফাঁসি কার্যকর হয়।

আজকের দিনে মাষ্টার দা কে ফাঁসি দিয়েছিল বৃটিশরা এ কথা নিছকই মিথ্যা কারণ মাষ্টারদা কে নয় তার প্রাণহীন দেহকে লোক দেখানো ফাঁসিতে ঝুলিয়ে ছিল বৃটিশরা। মাষ্টার দার মৃত্যুর আগে জেলের ভিতর তাঁর সাথে নির্মম অত্যাচার করেছিল। পিটিয়ে শরীরের সমস্ত হাড় ভেঙে দেওয়া হয়েছিলো ৷ ভারী কিছু দিয়ে আঘাত করে ভেঙে দেওয়া হয়েছিলো তার সব কটা দাঁত ৷ উপড়ে ফেলা হয়েছিলো হাত ও পা এর সমস্ত নখ। তৎকালীন বৃটিশ সরকার এমনই বর্বর আচরণ করেছিলো মাষ্টারদার সাথে। শেষ পর্যন্ত ফাঁসিতে ঝোলানো হয় তার অচৈতন্য দেহকে। তার মরদেহ নিয়ে ও আতঙ্কে ছিল ব্রিটিশ রাজের তাই মৃত্যুর পর তার দেহ তুলে দেওয়া হয়নি পরিজনদের হাতে৷ মরা দেহে পাথর বেঁধে ফেলে দিয়েছিল বঙ্গোপসাগরে বুকে।

ফাঁসির মঞ্চে যাওয়ার আগে তিনি সহযোদ্ধাদের উদ্দেশ্যে লিখে যান, “আমি তোমাদের জন্য রেখে গেলাম মাত্র একটি জিনিস, তা হলো আমার একটি সোনালি স্বপ্ন। স্বাধীনতার স্বপ্ন। তোমরা এগিয়ে চলো। সাফল্য আমাদের সুনিশ্চিত। যদি লক্ষ্যে পৌঁছাবার আগে মৃত্যুর শীতল হাতে তোমাকেও স্পর্শ করে তবে আরোধ্য কাজের দায়িত্ব তোমার উত্তরসূরীদের হাতে অর্পণ করো।

মাষ্টার দা সূর্যসেনের আত্মবলিদান দিবসে শ্রদ্ধার্ঘ্য। 🙏

(মহাদেব হালদার লেখা)

11/01/2024

পাঁচথুপী: নাম রহস্য

** এই নাতিদীর্ঘ রচনাটি কোন ভাবেই কোন প্রামাণিক দলিল নয়। কেবলমাত্র কিছু সম্ভাবনার যৌক্তিক বিচার হিসেবেই এর মূল্যায়ন করতে হবে। এর একমাত্র উদ্দেশ্য কিছু তথ্যের সুসংবদ্ধতা তৈরী করে ভবিষ্যত কোন গবেষণার উৎসাহ নির্মাণ।

দেউলেশ্বর মন্দির, বারকোনা, পাঁচথুপী গ্রাম, বড়োঞা ব্লক, জেলা মুর্শিদাবাদ। অবশ্য মন্দির বলতে যে ছবি মাথায় আসে এটি তেমন কিছু নয়। পথিপার্শ্বে যেমন অতিক্ষুদ্র শনি মন্দির পরিলক্ষিত হয় তেমনি একটি চারচালা অতি অর্বাচীন একটি শিবলিঙ্গ পুজাস্থান। কাঠামোটি নিতান্তই অর্বাচীন বটে কিন্তু সেটি যে মৃন্ময় ঢিপির উপর অবস্থিত সেটি কমবেশি হাজার বছরের ইতিহাস বহন করে।

স্বাধীনতার আগেই, যদিও সঠিক সালটি উদ্ধার করা সম্ভব হয় নি, স্থানীয় ইতিহাস চর্চাকারীরা উল্লেখ করছেন কে এন দীক্ষিত নামক পুরাতত্ত্ব বিভাগের জনৈক উচ্চ আধিকারিক এই ঢিপির পরিদর্শন করেন। পরে ভারতীয় পুরাতত্ত্ব বিভাগের কলকাতা সার্কেল এটিকে সংরক্ষিত ইতিহাস স্থান বলে জায়গাটিকে নিজেদের অধিকারে নেন। তবে এরপর কিন্তু কোন উৎখনন এখানে আর হয় নি। পুরাতত্ত্ববিভাগও এর স্থান মাহাত্ম্য সম্পর্কে কিছু গণজ্ঞাপন করে নি। আইনানুগ অধিগৃহিত হলো অথচ মানুষকে এ বিষয়ে জানানো হলো না এ আমাদের লজ্জা ও বিষ্ময়ের কারণ।

স্থানীয় লোকসাধারণ এটিকে একটি বৌদ্ধ স্তুপ বলেই বিবেচনা করেন। এবং এই স্তুপ থেকেই পাঁচথুপী নামটি এসেছে বলেই তাঁদের বিশ্বাস। কেউ মনে করেন সংলগ্ন এলাকায় পাঁচটি বৌদ্ধ স্তুপ ছিল ( যদিও বর্তমানে একটি ঢিপিই পরিলক্ষিত হয় )। আবার অনেকেরই বিশ্বাস এটি বিস্তৃত অঞ্চলে ছড়িয়ে থাকা বৌদ্ধ স্তুপমালার পঞ্চম স্তূপ, এবং সম্ভবত কোন বৌদ্ধ সন্ন্যাসীর স্মৃতি সৌধ। অবশ্য কেবল বৌদ্ধ নয়, লোক শ্রুতি মতে এটি জৈন সৌধ হওয়ার সম্ভাবনাও উঠে আসে।

জৈন লোকশ্রুতিমতো এখানে জৈন কুল প্রধানদের লাঞ্ছনার ঘটনা ঘটে। অনেক সময় কোন ধর্মগুরুর প্রাথমিক অবমাননার পর তাঁর সমাদরের ঐতিহাস অনেক জায়গাতেই দেখা যায়। সুতরাং এ সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যায় না। তবে বৌদ্ধমূল হওয়ার দাবী কিছু অধিক। বলা বাহুল্য উৎখনন ব্যতীত চূড়ান্ত মীমাংসা সম্ভব নয়।

তবে এর প্রাচীনত্ব মনেহয় প্রশ্নাতীত । লক্ষণসেনের শক্তিপুর ( পাঁচথুপীর মতোই গঙ্গার পশ্চিম দিকের একটি জনপদ) তাম্রশাসনে যে 'বরহকোনা' গ্রামের উল্লেখ রয়েছে সেটি এই স্থানের সংলগ্ন একটি মাঠের 'বারকোনা' নামটির আদি উৎস এটি অনেকেই মনে করেন। অবশ্য এই অঞ্চলের বৌদ্ধ প্রভাব অন্তত অষ্টম শতক থেকেই যথেষ্ট ছিল বলে মনে করা যায়।

নীহার রঞ্জন রায় বাংলার প্রাচীন বৌদ্ধবিহার হিসেবে 'ত্রৈকূটক' বিহারের কথা বলছেন এবং সেটি রাঢ় বঙ্গে ছিল বলেই তাঁর অনুমান। যদিও সেটি ঠিক কোথায় ছিল তা স্পষ্ট করা এখনও সম্ভব হয় নি তথাপি রাজা ধর্মপালের (নবম শতক) সময় এটি স্বমহিমায় বিরাজমান ছিল। পন্ডিত হরিভদ্রর সুবিখ্যাত 'অষ্টসহস্রিকা প্রজ্ঞাপারমিতা'র ভাষ্য ধর্মপালের পৃষ্ঠপোষকতায় এই ত্রৈকূটক বিহারেই রচিত হয়েছিল। এসবকিছু রাঢ় বাংলার এই স্থানের উপর বৌদ্ধ প্রভাবের স্মারক।

মুর্শিদাবাদ জেলা মিউজিয়ামের মুখ্য আধিকারিক মৌসুমী ব্যানার্জি পাঁচথুপী সংলগ্ন অঞ্চলে প্রাপ্ত অন্তত চারটি প্রাচীন বুদ্ধ মূর্তির সন্ধান দিচ্ছেন যেগুলি কমবেশি দশম একাদশ শতকের।

পাঁচথুপী হরিপদ গৌরীবালা কলেজর অনুসন্ধানকারী দল এটা চিহ্নিত করছে যে এগুলি সবই 'ভূমিস্পর্শ' মূদ্রায় বিরাজমান। অনুসন্ধানকারী দল এটাও চিহ্নিত করতে সক্ষম হচ্ছে যে এই মূদ্রা বিশেষ ভাবে পঞ্চ ধ্যানীবুদ্ধের পঞ্চম রূপ 'অক্ষোভ্য'র অধিকার ভূক্ত।

মূলত গবেষক রণদীপম বসুর উল্লেখ সূত্রে বৌদ্ধ দেবদেবী বিশেষজ্ঞ বিনয়তোষ ভট্টাচার্যের নির্দেশিত বৈশিষ্ট্যের সাথে তুলনা করে এবং অপরাপর নথি বিশ্লেষণে এই বর্ননা দেওয়া যায় যে শূন্যমূল আদি বুদ্ধের থেকে কালক্রমে বজ্রযানী চর্চায় পাঁচজন ধ্যানীবুদ্ধের রূপকল্প নির্মিত হয়। এরা হলেন বৈরচন, রত্নসম্ভব, অমিতাভ, অমোঘসিদ্ধি এবং অক্ষোভ্য। এদের শক্তি মূর্তিগুলি যথাক্রমে রোচনা, বজ্রধাত্বীশ্বরী, পান্ডরা, তারা এবং মামকী।

বৌদ্ধ তন্ত্রমতে রূপ, বেদনা, সংজ্ঞা, সংস্কার ও বিজ্ঞান ( প্রতিটি পারিভাষিক শব্দ। আধুনিক অর্থে এর তাৎপর্য নির্দেশে নিষেধ করা হচ্ছে) এই পাঁচের সমবায়ে ব্যক্তিত্ব বা পুদ্গল নির্মিত হয়। এবং ধ্যানীবুদ্ধদের কল্পনায় এর প্রভাব রয়েছে গুনাধিক্য মতো।

এর মধ্যে অক্ষোভ্য হলেন পঞ্চম ধ্যানীবুদ্ধ এবং সম্ভবত এই অক্ষোভ্যর পুজার বিশেষ চল ছিল এই অঞ্চলে। এ কারনেই পঞ্চম স্তুপ কথাটি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। কিন্তু মনে রাখতে হবে লোকসাধারণের যে অংশ যে কারনে পঞ্চম স্তূপ কথাটি মানেন তার সাথে এই হাইপোথিসিসের কোন যোগ নেই।

পাঁচথুপী হরিপদ গৌরীবালা কলেজর গবেষণা মনে করছে পঞ্চম স্তূপ কথাটি পঞ্চম ধ্যান বুদ্ধ অক্ষোভ্যর সূত্রে আগত হয়ে থাকার সম্ভাবনা প্রবল। মৌসুমীদেবীর যে প্রত্নতাত্ত্বিক উল্লেখ তাতে সবগুলি বৌদ্ধমূর্তিই ভূমিস্পর্শ মুদ্রায় একটি সংকীর্ণ অঞ্চলে প্রাপ্ত হওয়াটা কাকতালীয় নয় বলেই মনে হয়।

অবশ্য এই মূদ্রারূপের একরূপতা থেকে মৌসুমীদেবী কোন হাইপোথিসিস করেন নি। অত্যন্ত যোগ্যতার সাথে ক্যাটালগিং করেছেন। পাঁচথুপী নাম রহস্য নিয়ে এই ইঙ্গিত প্রদানের দায় সর্বোতভাবে পাঁচথুপী হরিপদ গৌরীবালা কলেজর ।

তবে মৌসুমী বন্দোপাধ্যায়ের আর একটি উল্লেখ এখানে প্রণিধানযোগ্য। সাধারণ ভাবে আমরা দেখে থাকি বাংলার অনেক স্থানেই মহাবীর বা বুদ্ধের মূর্তি শিব কাল্টের সাথে মিশেছে। বাঁকুড়া বীরভূমে এমন চিহ্ন বর্তমান। মৌসুমীদেবী মুর্শিদাবাদেও এ রীতির উল্লেখ করছেন।

অবশ্য আমরা এই ট্রেন্ড বিশেষ ভাবে রাঢ় বঙ্গেই, আলোচ্যমাণ ভূখন্ডের সন্নিহিত স্থানেই দেখেছি। এ থেকে আমরা একটা হাইপোথিসিসেও গেছি। ধ্যানীবুদ্ধ মূর্তি গুলিতে সর্প প্রতীক এবং তাদের আভরণহীনতা শিবের সাথে তাদের মিশে যাওয়ার পক্ষে সহায়ক ছিল। অবশ্য এ অঞ্চলে প্রাপ্ত কোন কোন ধ্যানীবুদ্ধমূর্তিতে রত্নহার ও মুকুট দেখা যায়। রত্নও বৌদ্ধ প্রতীক, এবং ভারতে স্তূপের গঠন রীতিতে নিচের বেদীকে পদ্মাসনের যুগল পদ, মাঝের অর্ধগোলাকার অংশকে বুদ্ধের মূল দেহকান্ড এবং উপরের খাড়া চূড়াকে শিরোমন্ডন বা মুকুট হিসেবে ধরা হয়। অজন্তার গুহাচিত্রের মুকুটগুলির কথা মনে আসতে পারে। হিন্দু মন্দির স্থাপত্যের মধ্যেও এর ছাপ আছে। আসলে ধর্মের ইতিহাসে অ্যাকালচারেশন এবং অ্যামালগামেশন দুটোই চরম সত্য। কাজেই কালের নিয়মে পাঁচথুপীর পঞ্চম বৌদ্ধ স্তূপে কালক্রমে দেউলেশ্বর রূপে শিব পূজা পাবেন এ আর আশ্চর্য কি।

এখানে দেউলেশ্বর নামটিও কিছু উৎসাহ জাগায়। দেউল কথাটি স্থাপত্য নির্দেশক। কোন প্রাচীন স্থাপত্য কেন্দ্র করে এই দেবতার জন্ম অসম্ভব বোধ হয় না।
(রচনার দায় : ড. শৈবাল রায়)