05/10/2024
প্রবাসীদের অবদান এবং দেশে ফেরত প্রবাসী উদ্যোক্তাদের কল্যাণে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে কিছু প্রস্তাব :
অধিকাংশ প্রবাসীদের দাবি বিমানবন্দরে তারা VIP সম্মান পাবে। এখানে আমার অবস্থান ভিন্ন। বিমানবন্দরের ক্লিনারের যে সম্মান হওয়া উচিত আর আমার সম্মানের মধ্যে পার্থক্য খুজতে চাই না।
রেমিটেন্স পাঠিয়ে দেশকে আমরা জাপান, কোরিয়া বানিয়ে ফেলতে পারবো বলে বিশ্বাস করি না। আমি বিশ্বাস করি শুধু রেমিটেন্সে কোনোদিন দেশ উন্নত হয় না। পেটে-ভাতে বেঁচে থাকা ছাড়া আর কিছু না। দরকার পরিকল্পনার… । তার আগে একটি উন্নত দেশের নিম্ন থেকে উপরে ওঠার যে সংগ্রাম তা থেকে সামান্য বলতে চাই।
দেশটি বর্তমানের দক্ষিণ কোরিয়া... । কোরীয় উপদ্বীপের যুদ্ধ শেষ হওয়ার পর দক্ষিণ কোরিয়ার ক্ষমতার্পণ করা হয় সামরিক শাসক পার্ক চুং-হির হাতে। তিনি ১৯৬১-৭৯ সাল পর্যন্ত দেশটির অর্থনৈতিক উত্থানের পেছনে মূল ভূমিকা পালন করেন। তিনি যখন ক্ষমতা হাতে পান, তখন দক্ষিণ কোরিয়া রীতিমতো ধুঁকছিল। কোরীয় উপদ্বীপের যুদ্ধের ক্ষয়ক্ষতি তখনও কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হয় নি, দারিদ্র্যের কষাঘাতে দেশটির নাগরিকদের জীবন ছিল বিপর্যস্ত। অধিকাংশ দক্ষিণ কোরিয়ার নাগরিক দিনে একবেলা খাবার জোটাতে হিমশিম খেত। অবস্থা এতটাই খারাপ ছিল যে, প্রতিবেশী উত্তর কোরিয়ার মাথাপিছু আয় যেখানে ছিল ১৪০ মার্কিন ডলার, সেখানে দক্ষিণ কোরিয়ার মানুষের মাথাপিছু আয় ছিল বছরে মাত্র ৯৪ ডলার! এরকম খাদের কিনারায় দাঁড়িয়ে থাকা একটি দেশকে বিপর্যয়ের হাত থেকে বাঁচানোর গুরুদায়িত্ব নিয়ে অগ্রসর হওয়ার চাপ ছিল পার্ক চুং-হির কাঁধে, যে চাপ তিনি উতরে গিয়েছেন সফলভাবে।
আমাদের দেশে যেমন ভারতের আধিপত্য, তাদের ছিল উত্তর কোরিয়ার হুমকি-ধামকি। এখনো তা চলমান…শত প্রতিকূলতার মধ্য দিয়ে আজ তারা এমন এক উন্নতির শিখরে উঠেছেন তার পেছনে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল প্রবাসীদের। সত্যিই ভাবনার বাইরে ছোট্র একটি দেশে ৭০ লক্ষের বেশি অনুমোদিত কোম্পানী। এই উন্নতির পেছনে প্রবাসীদের অবদান সবচেয়ে বেশি। কোরিয়ান প্রবাসীরা সৌদি আরব সহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কাজ করে অর্থ উপার্জন করে দেশে ফিরে ছোট-ছোট শিল্প গড়ে তোলে। আর স্মার্ট বুদ্ধিদীপ্ত সম্পন্ন মানুষগুলি আমেরিকা, জার্মানি এবং জাপান গিয়ে প্রযুক্তিগত জ্ঞান অর্জন করে দেশে ফিরে বড়, মাঝারি এবং ছোট-ছোট শিল্প কল-কারখানাগুলোতে এক বিস্ময়কর সৃষ্টিশীল কাজে নিজেদের নিয়েজিত করে। এভাবেই একটি উন্নত জাতির আবির্ভাব ঘটে বিশ্বে।
আমাদের শিক্ষা নেওয়ার সময় এসেছে। আমরা (পার্ক চুং-হির) থেকেও একজন যোগ্য মানুষ পেয়েছি। তার হাত ধরে বাংলাদেশে শিল্প-বিপ্লব ঘটাতে প্রবাসীরা এগিয়ে আসবো ইনশাআল্লাহ। বছরের পর বছর বিদেশে কামলা দিয়ে প্রতিদানস্বরূপ বিমানবন্দরে সম্মান পেতে চান? ব্যাস, দায়িত্ব কি শেষ?
সময় এসেছে প্রয়োজনীয় দাবি পেশ করার। আমি আমার দেশ নিয়ে যে স্বপ্ন দেখি সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নে আমার কিছু মতামত পেশ করছি।
১. ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট ভাঙতে হবে।
২. অভিজ্ঞ প্রবাসীরা স্বপ্ন দেখে দেশে ফিরে তারা একটা কোম্পানি তৈরি করবে তার সার্বিক সহায়তা প্রদান এবং সেই পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে।
৩. আলাদা একটি র্টীম গঠন করতে হবে। তাদের কাজ হবে দেশে ফেরত প্রবাসী উদ্যোক্তাদের ট্রেনিং-এর ব্যবস্থা করা।
৪. প্রয়োজন এবং অবস্থান বুঝে সম্পূর্ণ সুদমুক্ত লোনের ব্যবস্থা করতে হবে।
৫. কোম্পানীর তৈরি প্রডাক্ট দেশ এবং বিদেশে রপ্তানি ও বাজারজাত করনের সার্বিক সহায়তা দিতে হবে।
৬. প্রাথমিক পর্যায়ে করমুক্ত করতে হবে।
৭. শিল্প এরিয়াকে আবাসিক এরিয়া থেকে সম্পন্নভাবে আলাদা করতে হবে।
৮. নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ নিশ্চিত করতে হবে।
৯. পরিবহন এবং যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি করতে হবে।
১০.যে সব প্রবাসী সেখানে মারা যায় সরকারি খরচে তাদের লাশ দেশে পাঠানোর ব্যবস্থা করতে হবে।
১১.সরকার যদি এ দাবীর পক্ষে রায় দেয় তবে অবশ্যই তা বৈধ পথে টাকা প্রেরণকারীদের জন্য প্রযোজ্য হবে।
১২.দক্ষীন কোরিয়ার অর্থনৈতিক উন্নয়নের রূপকার(পার্ক চুং-হি) সামরিক শাষক হিসেবে ১৯৬১-১৯৭৯ সাল পর্যন্ত দেশটির ক্ষমতায় থেকে উন্নয়নের চাকা ঘুরিয়ে দিয়েছিলেন।আমরাও আশা করছি আপনার হাত ধরে আমাদের দেশে ক্ষুদ্র,মাঝারি শিল্প গড়ে উঠবে।৫ কোটির জনসংখ্যার দেশে এখন পর্যন্ত ৭০ লক্ষের বেশি কোম্পানী অবস্থিত।সেখানে আমাদের দেশের ১৮ কোটি জনগনের জন্য কয়টি কোম্পানি আছে তা আপনি ভালো জানেন।আমি আশা রাখছি কমপক্ষে ৩০ লক্ষ কোম্পানি আপনার হাত দিয়েই গড়ে উঠবে ইনশাআল্লাহ।
১৩.যে সব প্রবাসীদের দেশে ফিরে বিনিয়োগের সামর্থ্য থাকবেনা এবং তারা যদি দেশে চাকরি করতে চায় তাহলে সে সুবিধা তাদের করে দিতে হবে।
১৪.বিমানবন্দরে সকল প্রকার হয়রানি বন্ধ করতে হবে।
১৫.প্রবাসীদের দক্ষতাকে কাজে লাগিয়ে সরকারি উদ্যাগে দক্ষ জনশক্তি প্রস্তুতের জন্য তাদের তত্তাবধানে ট্রেনিং সেন্ট্রার চালু করা
১৬.প্রবাসীদের জন্য সংসদে একের অধিক সংরক্ষিত আসনের ব্যবস্থা করতে হবে।যারা এ আসনের জন্য নির্বাচিত হতে ইচ্ছুক অবশ্যই তাদের কর্মপরিকল্পনার উপর পরিক্ষা নিয়ে নির্বাচিত করতে হবে।
দাবী গুলো পূর্ন হলে আমরা যে সুবিধা পেতে পারি…..
১.দেশের বেকার সমস্যা দূর হবে।
২.দেশের অর্থনীতি মজবুত হবে।
৩.বিদেশী বিনিয়াগ বাড়বে।
৪.মানুষের জীবযাত্রার মান উন্নত হবে।
৫.প্রচুর কর্মসংস্হান বাড়লে শিক্ষার্থীরা পার টাইম জব করতে পারবে।
৬.বিদেশ থেকে আমদানী কমবে এবং রপ্তানি বৃদ্ধি পাবে।
৭.দেশের কোম্পানিগুলোকে প্রবাসীদের দক্ষতা দিয়ে আরো মানসম্পন্ন এবং আন্তর্জাতিক মানের করা যাবে।
১১-০৮-২০২৪
কাজী আলম
দক্ষীন কোরিয়া প্রবাসী