
14/05/2024
কয়েক বছর আগে নাচোকে বিব্রতকর একটা প্রশ্ন করা হয়েছিল মাদ্রিদের ব্যাকাপ অপশন হয়ে থাকা নিয়ে। নাচোর উত্তরটা সরল ছিলো, " আমি মাদ্রিদের জার্সি গায়ে একটা ম্যাচ খেলতে চেয়েছিলাম কিন্তু ২০০ এর বেশি খেলে ফেলেছি এরমধ্যে।"
মানুষটা মাদ্রিদকে মনেপ্রাণে ভালবাসে, আনুগত্যের মূর্তপ্রতীক। মাদ্রিদে আছেন ২২ টা বছর, দ্যুতি ছড়িয়েও কখনো পত্রিকার হেডলাইন হতে পারেননি। মাদ্রিদের বিপদের দিনেই তার ডাক পড়ে। রামোস, ভারান, কার্ভাহাল, মার্সেলোরা যখন চোটের কারণে মাঠের বাইরে , তখনই সুযোগ পেয়েছেন, আবার তারা ফিরলে চুপচাপ পিছু হটে গিয়েছেন। কোনো ফিক্সড পজিশন ছিলো না। রাইটব্যাক, লেফটব্যক, সেন্টারব্যাক - সব পজিশনেই তার অবাধ বিচরণ, কোথাও খেলতে আপত্তি নেই মাদ্রিদের জার্সি গায়ে।
নিজের দাম নিয়ে কখনো দরাদরি করেননি ভালবাসার ক্লাবের সাথে, মাদ্রিদ যা ভালবেসে দিয়েছে মাথা পেতে নিয়েছেন। বহু লোভনীয় প্রস্তাবও ফিরিয়ে দিয়েছেন শুধু মাদ্রিদে থাকার জন্য। অর্থের ঝনঝনানির যুগে টটি, রয়েসদের নিয়ে বন্দনা হয় কিন্ত নাচো ফার্নান্দেজ বরাবরের মতোই এখানেও আড়ালে থেকে গিয়েছেন।
বারো বছর বয়সে টাইপ -১ ডায়াবেটিস ধরা পড়েছিল। রক্তে ইনসুলিনের অভাব, যেই ইনসুলিন ছাড়া রক্তে শর্করার অভাব হয়। এই শর্করার অভাবে মানুষ অল্পেই হাপিয়ে পড়ে, ক্ষত হলে শুকাতে সময় লাগে, ক্লান্তি - অবসর নিত্যদিনের সঙ্গী হয়।
ফুটবলারদের গড়পড়তা মানুষের চেয়ে পরিশ্রম স্বাভাবিকভাবেই বেশি করতে হয়। এরমধ্যে ডায়াবেটিসের ছোঁয়া তো ক্যারিয়ারকেই ধ্বসিয়ে দিতে পারে কিন্তু নাচো ফার্নান্দেজকে দমিয়ে রাখতে পেরেছে কি?
এই লোকটা ডায়াবেটিস নিয়ে নিয়মিত লড়ছেন, মাঠে নামছেন আর টপ লেভেলে নিজেকে টিকিয়েও রেখেছেন বছরের পর বছর। মানুষ ভুলের ঊর্ধ্বে না, তিনিও ভুল করেন। তবে, তার ভুলের জন্য মাদ্রিদকে কখনো ভুগতে হয়েছে বলে স্মরণ হয়না।
এক দশক আগে মাদ্রিদের হয়ে প্রথম চ্যাম্পিয়ন্স লীগ জেতা নাচো আজ ৩৪ বছরের অভিজ্ঞ দলনেতা পরিণত হয়েছে। আগের মতো ধার নেই ডিফেন্ডিংয়ে, বয়সের ছাপ স্পষ্ট বোঝা যায়। নিজেই বুঝেছেন যে মাদ্রিদে তার সার্ভিস আর প্রয়োজন নেই, সময় ফুরিয়ে আসার আগে নিজে থেকেই বিদায় জানিয়ে দিলেন।
মাদ্রিদে ৩৬ তম লিগ টাইটেল সেলিব্রেট করলো আজ, নাচো ফার্নান্দেজ অধিনায়কের বাহুবন্ধন হাতে জড়িয়ে শেষবারের মতো ট্রফি উঁচিয়ে ধরলো। মাদ্রিদ শহরের ইতিহাস, ঐতিহ্যের অংশ আইকনিক সিবেলিসে উঠে তাঁর মাথায় মাদ্রিদের পতাকা বেঁধে দিল। রামোস, মার্সেলোর মতোই মাদ্রিদ শেষবার নিজেদের আনসাং হিরোকে সম্মান জানালো।
নাচো চলে যাচ্ছেন, অসংখ্য স্মৃতি তার সাথী হয়েছে, একাংশ মাদ্রিদিস্তাদেরকেও দিয়ে যাচ্ছেন। মাদ্রিদিজম, আনুগত্যের যেই দৃষ্টান্ত রেখে যাচ্ছেন ,তার তুলনা হয়তো কেবল গুতির সাথেই করা যায়। হয়তো ভবিষ্যতে কেউ নাচোর মত কিংবদন্তির প্রেমে পড়েই মাদ্রিদকে ভালবাসতে শিখবে, মাদ্রিদদিজম নিজের মধ্যে ধারণ করতে শিখবে।
ছয় নম্বর চ্যাম্পিয়ন্স লীগ জয়ের সুযোগ আছে এখনো ইউরোপে, তবে মাদ্রিদে মহানায়ক নাচোর শেষটা রঙিন হয়েই থাকলো।
Author - Muhammed Hasibul Islam Jihad
Poster - Daud Sabbir