21/10/2024
(বুদ্ধি বৃত্তির বিন্যাসে একজন ডক্টর ফরিদ উদ্দিন খান)
অতীতের ফ্যাসিবাদী সরকারের আমলে প্রায়শই দেখা যেত কোন একটি বিশেষ উদ্দেশ্যে বিশিষ্ট নাগরিকগণ বিবৃতি দিয়েছেন। এই বিশিষ্ট নাগরিক কারা? আমার ক্ষুদ্র জ্ঞানে মনে হয় এই বিশিষ্ট নাগরিক হচ্ছেন তারাই যারা আগে নিজেদেরকে বুদ্ধিজীবী হিসেবে পরিচয় দিতেন। তারা এখন বিশিষ্ট নাগরিক হিসেবে নিজেদেরকে পরিচয় দেন কারণ বুদ্ধিজীবী পরিচয়ে এখন আর সম্মান মিলে না। বুদ্ধিজীবী শব্দটি এখন কিছুটা যেন অপমানজনক হয়ে উঠেছে। ৭১ পরবর্তী সময় থেকে আজ পর্যন্ত সমাজ সংস্কার ও রাষ্ট্র গঠনে বুদ্ধিজীবীদের যে ব্যর্থতা তা সর্বজন স্বীকৃত এবং এ নিয়ে বোধ করি আহমদ ছফা সবচেয়ে বেশি সোচ্চার ছিলেন। তিনি যে নিদারুণ কঠোর ভাষায় এইসব বুদ্ধিজীবীদের পোস্টমর্টেম করতেন, তা আর অন্য কাউকে করতে দেখা যায়নি। এই মধ্যশ্রেণী ভুক্ত বুদ্ধিজীবীদের এই হীন মানসিকতার পিছনে কি কারণ থাকতে পারে তাও তিনি অনুসন্ধান করার চেষ্টা করেছেন। তিনি যদি বেঁচে থাকতেন তবে অনুমান করতে পারি বুদ্ধিবৃত্তির নতুন বিন্যাসের নতুন সংস্কারের ভূমিকায় তিনি কি লিখতেন।
বুদ্ধিজীবী কাদের বলা হয়? বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, চিন্তক, গবেষক, সাহিত্যিক ও শিল্পীরা অভিহিত হন বুদ্ধিজীবী বলে। বুদ্ধিজীবীরা তাদের কর্ম দিয়ে, তাদের লেখনী দিয়ে, তাদের সৃষ্টি দিয়ে জনসাধারণকে উন্নত চিন্তায় ও কর্মে উদ্দীপ্ত করবেন। তারা সত্যের সাথে থাকবেন, ন্যায়ের সাথে থাকবেন। অন্যায়, অবিচার ও দুঃশাসন এর তীব্র প্রতিবাদ করবেন। কোন ভয় তাদেরকে গ্রাস করবে না, কোন লোভ তাদের সত্য থেকে বিচ্যুত করবেনা। অর্থাৎ একজন বুদ্ধিজীবী হবেন একজন প্রকৃত মানুষ এবং সুনাগরিক।
আজকে বোঝার চেষ্টা করব একটি বিশেষ শ্রেণীর বুদ্ধিজীবীদের যাপিত জীবন কৌশল, যারা কিনা পদাধিকার বলে এই বিশেষ শ্রেণীর অংশ হয়েছেন। এই বিশেষ বুদ্ধিজীবীরা হচ্ছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক যারা কিনা এই দেশের মেধাবী সন্তান, যার বেশিরভাগ অংশ নিজেরাও জানে না কি জন্য এই পেশায় তারা এসেছেন, অথবা জেনেও জ্ঞান পাপীর মত নির্দ্বিধায় পাপাচারে কাটিয়ে দিচ্ছে জীবন।
উন্নত বিশ্বে শিক্ষকতা পেশাকে শ্রেষ্ঠ পেশা হিসেবে গণ্য করা হয়। ন্যায়বিচার, সুশাসন প্রতিষ্ঠা এবং একটি আদর্শ জাতি গঠনে শিক্ষকদের ভূমিকা অপরিসীম। শিক্ষা আলোকিত সমাজ বিনির্মাণের হাতিয়ার। আমরা সকলেই জানি শিক্ষাই জাতির মেরুদন্ড। অনেকে শিক্ষা না বলে এখন বলছেন সুশিক্ষা জাতির মেরুদন্ড এবং এই কার্যক্রমের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি হচ্ছেন শিক্ষক । কারণ শিক্ষক যদি তার ছাত্রদের সুশিক্ষায় শিক্ষিত না করেন, তবে একটি জাতির সুষ্ঠু মনস্তাত্ত্বিক গঠন এবং মানবিক প্রবৃত্তির বিকাশ কোনোটাই হবে না । এজন্যই শিক্ষককে বলা হয় জাতি গঠনের মহান কারিগর। বলা হয়ে থাকে তারা সমাজের বিবেক ও স্পন্দন। এজন্য একজন শিক্ষককে হতে হয় সবচেয়ে উদার, সবচেয়ে মানবিক এবং সবচেয়ে ধৈর্যশীল।
জাতি গঠনে শিক্ষকদের ভূমিকা যে প্রশ্নবিদ্ধ তা বোধ করি উল্লেখ করার প্রয়োজন নেই। বিগত ১৬ বছর ধরে, বিশেষ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা জাতির সাথে যে পরিমাণ বেইমানি করেছে তা ক্ষমার অযোগ্য। আহমদ ছফা রচিত বুদ্ধিবৃত্তির নতুন বিন্যাস বইয়ের ৯৭ পরবর্তী সংস্করণের ভূমিকায় তিনি উল্লেখ করেছেন ৭২ থেকে তৎকালীন সময় পর্যন্ত বুদ্ধিজীবীরা বারবার বেহায়ার মত শাসক শ্রেণীর পদলেহন করেছেন। তিনি বেঁচে থাকলে হয়ত দেখে যেতে পারতেন এই বুদ্ধিজীবীদের নিম্নগামিতা আরো কতটা প্রবল হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা অধিকাংশই বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাদের গোলামি করেন। এই রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়ন শিক্ষক সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে এমনভাবে প্রবেশ করেছে যে মানহীন শিক্ষকে ছেয়ে গেছে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো - যাদের হাতে নিরাপদ নয় শিক্ষার্থী, শিক্ষক এবং সহকর্মী।
এত কিছুর মাঝে আমি একজন মানুষকে ব্যতিক্রম দেখেছি। বিগত ফ্যাসিবাদী সরকারের আমলে যে গুটিকয়েক বুদ্ধিজীবী অন্যায় ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেছেন তাদের মধ্যে তিনি অন্যতম। দেখেছি তিনি তার আদর্শ থেকে এক চুল সরেননি। অন্যায়ের বিরুদ্ধে সব সময় আওয়াজ তুলেছেন, প্রতিবাদ করেছেন। তার নাম ডক্টর ফরিদ উদ্দিন খান, যে মানুষটার সব পরিচয় ছাপিয়ে সবচেয়ে বড় পরিচয়, তিনি একজন সত্যিকারের দেশ প্রেমিক।
আমরা জানি একজন শিক্ষকের পেশাগত দায়িত্বের পাশাপাশি তার সমাজের প্রতি দায়বদ্ধতা রয়েছে। আজকে আমি প্রফেসর ডক্টর ফরিদ উদ্দিন খানের পেশাগত দায়িত্ব নিয়ে কোন মূল্যায়ন করবো না। শুধু ছোট করে বলে রাখি তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর করার পরে নেদারল্যান্ড থেকে স্নাতকোত্তর এবং অস্ট্রেলিয়া থেকে পিএইচডি করেছেন। ইউরোপের লোভনীয় চাকরির অফার কে উপেক্ষা করে দেশ প্রেমের টানে তিনি দেশে ফিরেছেন এবং তিনি তার গবেষণা আজ অবধি চালিয়ে যাচ্ছেন। আন্তর্জাতিক জার্নালে তার বেশ কয়েকটি উল্লেখযোগ্য প্রকাশনা রয়েছে। তাছাড়াও উনি অস্ট্রেলিয়ার এসিআইএআর সহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সাথে গবেষণা করছেন এবং বাংলাদেশের হয়ে প্রতিনিধিত্বও করছেন। আমি যেহেতু উনার সরাসরি ছাত্র, আমি কখনো দেখিনি তিনি তার পেশাগত দায়িত্ব নিয়ে অবহেলা করেছেন। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির বিভাগের সবচেয়ে ছাত্রবান্ধব এবং জনপ্রিয় শিক্ষক বোধহয় তিনিই ।
আমি নিজেও এই অর্থনীতি বিভাগ থেকেই স্নাতক ও স্নাতকোত্তর করেছি। পুরো বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে অনেক শিক্ষকের সান্নিধ্য পেয়েছি। কিন্তু খুব অল্প সংখ্যক শিক্ষককেই নিজের অন্তর থেকে শ্রদ্ধা করেছি, ভালোবেসেছি। প্রফেসর ডক্টর ফরিদ উদ্দিন খান তাদের মধ্যে অন্যতম। একজন শিক্ষকের যে মানবীয় গুণাবলি থাকা দরকার, নিজের পেশার প্রতি যে নিষ্ঠা থাকা দরকার এবং সমাজের প্রতি যে দায় থাকা দরকার তার সবটাই উনার মধ্যে বিরাজমান।
ডক্টর ফরিদ উদ্দিন খান এর উদার মানসিকতা ও এবং মানুষের প্রতি তার যে দরদ তা বোধ করি তার বাবার কাছ থেকেই পেয়েছেন। তিনি তার বাবার সম্পর্কে বলতে গিয়ে লিখেছেন, ”আমার বাবা একজন অন্যরকম মানুষ। খুব নিরিবিলি নির্ভেজাল। কারো সাথে কখনও হিংসা বিবাদে যান না। তিনি একাধারে একজন ভালো মানুষ, ভালো শিক্ষক এবং ভালো অভিভাবক।” তার বাবা একজন সফল পিতা যিনি তার নয় সন্তানকেই উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত করেছেন। যে গ্রামে ফরিদ উদ্দিন খান বেড়ে উঠেছেন , সেই গ্রামের প্রথম নারী গ্যাজুয়েট তার বড় বোন। এই লেখায় ডক্টর ফরিদ উদ্দিন খান এর বাবার প্রসঙ্গ টেনে আনার কারণ হচ্ছে তিনি তার বাবার দেয়া শিক্ষা কখনো ভোলেননি। আমি ডক্টর ফরিদ উদ্দিন খান কে দেখিনি কারো প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করতে। এমনকি যেসব শিক্ষকেরা তার প্রতিবাদী চরিত্রের কার্যক্রমকে নানান রকম ভাবে বিদ্রুপ এবং হেয় করার চেষ্টা করত, তিনি সেসব জেনেও তাদের প্রতি কখনো কঠোর মনোভাব পোষণ করেননি। একজন ভালো বাবা তার সন্তানের জন্য সর্বশ্রেষ্ঠ শিক্ষক।
পূর্বে উল্লেখ করেছি আজকে বোঝার চেষ্টা করব একটি বিশেষ শ্রেণীর বুদ্ধিজীবীদের যাপিত জীবন কৌশল, কিন্তু আমি কথা বলছি ডক্টর ফরিদ উদ্দিন খান কে নিয়ে। কারণ তিনি এই শ্রেণি ভুক্ত একজন বুদ্ধিজীবী। তার জীবন সংগ্রামের গল্পে আমরা বোঝার চেষ্টা করব এই বিশেষ বুদ্ধিজীবীরা সমাজ ও রাষ্ট্র বিনির্মাণে কি ভূমিকা রাখছে।
২০১৮ জুলাইয়ের প্রথমে যখন কোটা আন্দোলন শুরু হয় তখন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে কোটা সংস্কার আন্দোলনে যোগ দেয়ায় রাবির এক নিরীহ নিষ্পাপ সাধারণ ছাত্রের রক্তে মতিহারের সবুজ চত্বর রক্তাক্ত হলো। জুলাইয়ের ৩ তারিখে দেশের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত সাধারণ শিক্ষার্থীদের উপর হামলা এবং লাঞ্ছনার প্রতিবাদে সকাল ১১ থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত জোহা স্যারের মাজারে দাঁড়িয়ে নগ্নপদে তিনি নীরব প্রতিবাদ কর্মসূচি ঘোষণা করলেন। বাংলাদেশে বোধ করি তিনিই প্রথম শিক্ষক যিনি কিনা শিক্ষার্থীদের দাবির সাথে সংহতি প্রকাশ করলেন, তার সহমর্মিতা জানালেন। খালিহাতে, নগ্নপায়ে এবং নীরবে- কোন স্লোগান না, ফেস্টুন না, বক্তৃতা না, না কোনো রাজনীতি। এই নগ্নপায়ে নীরব প্রতিবাদ করে তিনি বোঝালেন আমরা আর সভ্য সমাজের নাগরিক নই, যেখানে বাকস্বাধীনতা আছে, যেখানে ন্যায়সংগত প্রতিবাদের সুযোগ আছে। এক অভিনব প্রতিবাদ দেখল বাংলাদেশ। বিভিন্ন পত্র পত্রিকাতে তার ছবি ছাপা হল। বাংলাদেশের মানুষ প্রথম জানলো যে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে একজন শিক্ষক রয়েছেন যার মেরুদন্ড রয়েছে।
স্যার যেদিন এই নীরব প্রতিবাদ পালন করলেন সেই দিন তারই বিভাগের সকল শিক্ষক এবং সহকর্মীবৃন্দ প্রাণপণে চেষ্টা করেছেন তাকে আটকানোর। বিভাগের শিক্ষক ও সহকর্মীবৃন্দ বলেছেন "আমরা জেনেশুনে তোমাকে বিপদে ফেলতে পারিনা, আমরা তোমাকে যেতে দিবোনা।" তার স্ত্রী বলেছেন,"আমার ছেলে দুটোকে এতিম করোনা।" তার সন্তানের আকুল আবেদন, ‘বাবা তুমি আন্দোলন করোনা, ওরা তোমার পা ভেঙে দিবে, ওরা তোমাকে মেরে ফেলবে। (কাঁদতে কাঁদতে) তুমি না থাকলে আমরা বাবা কোথায় পাবো?" তার মা বলেছেন,"তুমি কি আমাদের বেঁচে থাকতে দিবেনা?’ এই উক্তিগুলো দিয়ে আমরা সহজেই বুঝতে পারি বিগত ফ্যাসিবাদী সরকার আমাদের মনে কতটা ভীতির সঞ্চার করেছিল।
বিগত সরকার যখন কথিত মাদক ব্যবসায়ীদের ক্রসফায়ারে একের পর এক হত্যা করছিল তখনও তিনি এর প্রতিবাদ করেছেন। সরকার যে এসবের আড়ালে এই হাজার হাজার কোটি টাকার মাদক ব্যবসা নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিচ্ছিল তা তখন অনেকেই বুঝেছেন। অথচ এত বড় অন্যায়ের কোন প্রতিবাদই হয়নি। ডক্টর জাহেদুর রহমানসহ খুব অল্প সংখ্যক মানুষ এর প্রতিবাদ করেছেন। অথচ প্রকৃত মাদক ব্যবসায়ীরা থেকে গেছেন ধরাছোঁয়ার বাইরে। শিবির সন্দেহে পিটিয়ে রক্তাক্ত করে পুলিশে সোপার্দ করার মতো ঘৃণ্য অপরাধেরও তিনি নির্দ্বিধায় প্রতিবাদ করেছেন। ছাত্রলীগের নিপীড়ন অন্যায়-অবিচার এর বিরুদ্ধে সবসময় সোচ্চার থেকেছেন এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তার প্রতিবাদ করেছেন।
ডক্টর ফরিদ উদ্দিন খান তার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লিখেছিলেন, ‘বাংলাদেশ এই মুহূর্তে 'পলিটিক্যাল এনিম্যাল' দের বিশ্বের সবচেয়ে বড় চিড়িয়াখানা। পলিটিক্যাল এনিম্যালদের রাজ্যে মানুষকে আর মানবিক গুণাবলি দিয়ে বিচার করা হয়না বরং বিচার করা হয় তার রাজনৈতিক আনুগত্বতা, চাটুকারিতা আর দাসত্ব দিয়ে। মানুষের মর্যাদার মানদণ্ড হয় রাজনৈতিক আধিপত্য, কালোটাকা আর পেশিশক্তি।’ বিগত প্রায় ১৬ বছর ধরে আমরা এমন একটা রাজ্যে বসবাস করেছি। যেখানে ভিন্নমতকে সর্বোচ্চ শক্তি দিয়ে দমন করা হয়েছে, তৈরি করা হয়েছে আয়না ঘর, গণমাধ্যমে চলেছে প্রহসন, যেখানে পুলিশরা প্রভুভক্ত কুকুরের চাইতেও বিশ্বস্ত, বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ডকে নরমালাইজ করা হয়েছে, দুর্নীতিবাজদের করা হয়েছে পুরস্কৃত, বিচার বিভাগকে মনে হতো যেন নাট্য মঞ্চ, আর জঙ্গিবাদ ছিল তাদের রাজনৈতিক অস্ত্র । শেখ হাসিনা ফ্যাসিবাদকে এমন একটি পর্যায়ে নিয়ে গিয়েছিল যেখানে মানুষজন বিশ্বাস করতে শুরু করেছিল শেখ হাসিনাই ফ্যাসিবাদের সবচেয়ে বড় শিল্পী। আর এই শিল্পীর শিল্পকর্ম অর্থাৎ তার তথাকথিত উন্নয়নের গুণমুগ্ধ দর্শক ছিলেন এই বাংলার প্রায় সকল বুদ্ধিজীবী। হাতে গোনা গুটি কয়েক বুদ্ধিজীবী এই সকল অন্যায় অবিচারের বিরুদ্ধে লিখেছেন, আওয়াজ তুলেছেন। অনেকেই বরণ করতে হয়েছে নির্মম মৃত্যু অথবা আয়না ঘরের দোযখী জীবন। মামলায় মামলায় অনেকের জীবনকে ঝাঁজরা করে দেওয়া হয়েছে। এই দিক দিয়ে ডক্টর ফরিদ উদ্দিন খান অনেক ভাগ্যবান। তাকে এসবের মধ্যে দিয়ে যেতে হয়নি।
তবে কেন ডক্টর ফরিদ উদ্দিন খান কে বিগত সরকার দ্বারা কোন ধরনের নিপীড়নের শিকার হতে হয়নি তার কারণ হিসেবে আমি উল্লেখ করতে চাই বিগত সরকারের পেটয়া বাহিনীরা ডক্টর ফরিদ উদ্দিন খানের সাথে কোন দলের বা কোন মতের সাথে কোন ধরনের কোন সংযোগ অনেক খুঁজেও উদ্ধার করতে পারেনি। তাঁকে অনেকে বিএনপি মতাদর্শের শিক্ষক বলেন। কারণ তার শিক্ষক হিসেবে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়োগের সময়কাল এবং তিনি একাধিকবার খালেদা জিয়ার মুক্তি চেয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লিখেছেন। তবে এই কারণে তাকে যদি বিএনপি মতাদর্শের মানুষ বলা হয় তবে বোধ করি ভুল হবে। কারণ তিনি বঙ্গবন্ধুকে নিয়েও লিখেছেন, একই সাথে শেখ হাসিনার ভালো কাজেরও প্রশংসা করেছেন। আমরা সব সময় সবকিছুকে শুধু একটি দৃষ্টিকোণ থেকে দেখতে পছন্দ করি। আমি সহ আরো অনেক মানুষই জানেন উনি কোন দলের গোলামি করেন না। বেগম খালেদা জিয়া যে মিথ্যে মামলায় বিগত সরকার কর্তৃক নির্যাতিত হয়েছে, দীর্ঘদিন ধরে বন্দী জীবন যাপন করেছে তা বোধ করি এই সময় আর কেউ অস্বীকার করবে না ।
তবে ডক্টর ফরিদ উদ্দিন খান কে যে ধরনের সংকটের মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে তা কোন অংশেই কম পীড়াদায়ক নয়। বিগত ফ্যাসিবাদী সরকার যে সকল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিল তাতে তার সম্ভাব্য বিপদের আশঙ্কায় সর্বদা চিন্তিত থাকতো পরিবার। ডক্টর ফরিদ উদ্দিন খান এর বয়ান, ‘মা বলেছেন, আমার লেখালেখিতে তিনি আতঙ্কিত, অতিষ্ঠ, ও অসন্তুষ্ট। লেখালেখির কারণে আমার ভয়ানক বিপদ দেখার আগেই তিনি এই পৃথিবী থেকে বিদায় নিতে চান, আব্বা বলেছেন লেখা বাদ না দিলে তিনি আমার সাথে আর কোনো সম্পর্ক রাখবেননা।’ কোন পিতা-মাতাই তার সন্তানের অকল্যাণ চান না। উনার বাবা মা কোন পরিস্থিতিতে সন্তানকে এই কথাগুলো বলেছেন তা আমরা সকলেই অনুমান করতে পারি। পরিবারের সকল মানুষ যখন তার এই বিপ্লবী জীবনের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলল তখন তিনি কষ্ট নিয়ে লিখেছেন,’আজ মনে হয় বিদায় নেবার সময় হয়েছে। মাকে কষ্ট দিয়ে দেশের কষ্ট কি দূর করা সম্ভব! রবীন্দ্রনাথের বিদায় কবিতাটির মতো সবকিছুর বিদায় আছে! হে বন্ধু! বিদায়!’
তবে তিনি বিদায় দিয়েও আবারো মহাপ্রলয়ের মতো ফিরে এসেছেন আরো শক্তিশালী হয়ে। অন্যায় অবিচার দেখে নিজেকে বেঁধে রাখতে পারেননি। তিনি তার সকল শক্তি ও সামর্থ্য দিয়ে প্রতিবাদ করে গিয়েছেন অনবরত। অনেকে বলার চেষ্টা করেছেন ডক্টর ফরিদ উদ্দিন খান সস্তা জনপ্রিয়তা পাওয়ার জন্য এই কাজগুলো করছেন। এই ধরনের সস্তা কথাবার্তা বলে তাকে অপমানের চেষ্টা করেছেন। তিনি যদি সস্তা জনপ্রিয়তা চাইতেন তাহলে তার ফেসবুকে আজ মিলিয়ন ফলোয়ার থাকতো, ব্যারিস্টার সুমন এর মত তাকে সকলে চিনতো। তিনি সবসময়ই সব ধরনের সস্তা জনপ্রিয়তা থেকে নিজেকে দূরে রেখেছেন। তবে আমার কাছে মনে হয়, তিনি যদি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক না হয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হতেন তবে বাংলাদেশের মানুষ তাকে আরো বেশি চিনতো, জানতো। এই দেশের মিডিয়া তার কার্যক্রম গুলোকে আরো হাইলাইট করত। আমাদের দেশের বুদ্ধিজীবীদের মতোই আমাদের দেশের মিডিয়ার অবস্থা। সে নিয়ে আরেকদিন আলাপ করা যাবে।
ডক্টর ফরিদ উদ্দিন খান তার দেশ ও শিক্ষার্থীদের জন্য সব সময় মঙ্গল কামনা করেন। শিক্ষার্থীদের নানান রকমের সমস্যায় শিক্ষার্থীরা তাকে সবসময় পাশে পেয়েছে। ২০১৯ সালে ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের সাইকেল চুরি হওয়ার প্রতিবাদে তিনি প্রশাসনের কাছে জবাব চেয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘কজন শিক্ষকের কাছে তাঁর গাড়ি যেমন গুরুত্বপূর্ণ একজন শিক্ষার্থীর কাছে তার সাইকেল তেমনি গুরুত্বপূর্ণ।’এমন মানবিক বোধসম্পন্ন মানুষকেই আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হিসেবে চাই। তিনি গোপনে অনেক শিক্ষার্থীকে আর্থিক সহায়তা করেছেন এবং সম্ভবত এখনো করেন, কোনোদিন কারো কাছে প্রকাশ করেননি। তার সাথে দীর্ঘদিন কাজ করার সুবাদে এসব বিষয়ে অল্প কিছু জানি। শিক্ষার্থীদের বিপদে আপদে সবসময় তিনি নির্দ্বিধায় এগিয়ে এসেছেন।
২০১৯ এর অক্টোবরে ডক্টর ফরিদ উদ্দিন খান নীরব প্রতিবাদ করেছেন ‘দুর্নীতিমুক্ত শিক্ষাঙ্গন চাই ও শিক্ষকের মর্যাদা নিয়ে থাকতে চাই’ এই শিরোনামে। তখন তিনি সাংবাদিকদের প্রশ্নের কোনো জবাবও দেননি। তৎকালীন সময়ে দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসিদের দুর্নীতি, নিয়োগ-বাণিজ্য, কোটি টাকার ঈদ-সালামি, নারী কেলেঙ্কারি ইত্যাদি নিয়ে যখন পত্রিকার পাতাগুলো সরগরম, তখন ডক্টর ফরিদ খানের এই নীরব প্রতিবাদে অন্য শিক্ষকেরা অংশগ্রহণ করেনি। খুবই অল্প সংখ্যক শিক্ষক এইসব অন্যায়ের প্রতিবাদ করেছেন। সকলেই যেন মেনেই নিয়েছেন এভাবেই চলবে বিশ্ববিদ্যালয়। কি আশ্চর্য রকমের নির্লিপ্ততা।
শিক্ষকদের প্রতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অকৃত্রিম শ্রদ্ধার নিদর্শন ১৯৭৩ সালের বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাদেশ যেখানে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষককে সর্বোচ্চ স্বাধীনতা ও মর্যাদা দেয়া হয়েছে। শোনা যায় শেখ মুজিবুর রহমান বলেছিলেন শিক্ষকের জন্য আবার কিসের আইন - শিক্ষক পরিচালিত হবেন তার বিবেক দ্বারা। একজন শিক্ষকের আদর্শ এবং নৈতিকতাবোধই হবে তার বড়ো অহংকার। অথচ বাস্তবে তার চিত্র একদম বিপরীত। তার জীবনের অনেক ভুল সিদ্ধান্তের মধ্যে আমি মনে করি এটিও একটি অন্যতম ভুল সিদ্ধান্ত। এই অধ্যাদেশ এর সংস্কার হওয়া সময়ের দাবি। বিশ্ববিদ্যালয় কে সঠিকভাবে পরিচালনার জন্য সকলকেই জবাবদিহিতার আওতায় আনা আবশ্যক।
ডক্টর ফরিদ উদ্দিন খান তার এই প্রতিবাদ কর্মসূচির আওতায় শত কিলোমিটারের উপরে নগ্ন পায়ে হেঁটেছেন। তার এই নগ্ন পায়ে পদযাত্রা অনেকের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিল। তপ্ত রোদে খালি পায়ে এভাবে হেঁটে কতবার যে তার পায়ে ফোসকা পড়েছে সে হিসেবে কারো জানা নেই। আমি কিছুটা জানি কারণ আমিও বেশ কয়েকবার হেঁটেছি এভাবে। যৌন নিপীড়ন এবং নারীর প্রতি ক্রমবর্ধমান সহিংসতার প্রতিবাদে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ জোহা চত্বর থেকে সাহেব বাজার জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত খালি পায়ে হেঁটেছেন। করোনা পরবর্তী সময়ে দ্রুত বিশ্ববিদ্যালয়, স্কুল, কলেজ খুলে দেওয়ার দাবি জানিয়ে হেঁটেছেন, বাংলাদেশে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার জন্য হেঁটেছেন।
২০২২ সালের জানুয়ারিতে তিনি নীরবে দাঁড়িয়ে প্রতিবাদ করেছেন SUST এর ভিসি পদত্যাগ ও শিক্ষার্থীদের ওপর নির্মম পুলিশি হামলার প্রতিবাদে। একজন শিক্ষক হিসেবে, একজন অভিভাবক হিসেবে তিনি ভীষণ লজ্জিত ও ব্যথিত হয়েছেন। তিনি বলেছেন, “শিক্ষার্থীদের জীবনের চেয়ে শিক্ষাঙ্গনে কোনো পদই বড়ো হতে পারে না।” ২০২২ সালের মার্চের ৮ তারিখে ইউক্রেনে রাশিয়ার নৃশংস ও বর্বরোচিত আগ্রাসনের প্রতিবাদে নীরব পদযাত্রা করেছেন। ২০২২ সালে আবাসিক হলগুলোতে সিট–বাণিজ্য, হলের আবাসিক শিক্ষার্থীদের হয়রানি ও নিপীড়ন এবং শিক্ষাঙ্গনে নৈরাজ্য সৃষ্টির প্রতিবাদে মানববন্ধন করেছেন এবং পরবর্তীতে ২৬ জুন ২০২২ রবিবার, (সকাল ১০ টা থেকে দুপুর ২ টা) নিপীড়নের বিরুদ্ধে শহীদ জোহা চত্বরে করেছেন প্রতীকী অনশন। প্রচণ্ড রোদে তিনি ঝলসে গেছেন, ঘণ্টাতিনেক এক ভাবে দাঁড়ানোর জন্য তার পা কাঁপছিল। আমি অনুরোধ করে বলেছিলাম কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিতে। তিনি মাথা নীচু রেখেই মৃদুস্বরে বললেন, “আমি ঠিক আছি।” ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে তিনি হেঁটেছেন গণতন্ত্রের জন্য।
ডক্টর ফরিদ উদ্দিন খান এভাবেই অবিরাম দ্রোহের গান গেয়েছেন, শান্ত কণ্ঠে অবিরাম বিদ্রোহের মন্ত্র জপেছেন। ২০২৪ এর ৪ জুলাই রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের সাথে সারাদেশে সম্ভবত তিনিই প্রথম শিক্ষক হিসেবে রাজপথে একাত্মতা জানিয়েছেন। আবু সাঈদ যখন তার জীবন উৎসর্গ করলেন এই দেশ থেকে বৈষম্য তাড়াবার জন্য, তখন ফরিদ উদ্দিন খান কারফিউ উপেক্ষা করে ছুটে গিয়েছেন রংপুরে। রংপুর শহরে পুলিশি তাণ্ডব এবং আগুনের মাঝে মৃত্যু ঝুঁকি জেনেও তিনি ওলিগলি ঘুরে একটি ফুলের দোকান খুঁজছিলেন। তিনি যখন ফুলের দোকান খুঁজে পেয়ে দোকানদারকে ফুলের অর্ডার দিলেন, দোকানদার নিজে থেকেই জিজ্ঞেস করলেন, এটি কি আবু সাঈদের জন্য? হ্যাঁ বলাতে দোকানদার বেছে বেছে তাজা গোলাপ ফুলগুলো বেশি বেশি করে দিলেন। নিশ্চয়ই সেই ফুল ব্যবসায়ীর হৃদয় জুড়ে আবু সাঈদ এর জন্য ছিল শ্রদ্ধা আর প্রার্থনা। ১৯ জুলাই ২০২৪, কারফিউ চলাকালে তিনিই সম্ভবত প্রথম রংপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ফটকের সামনে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে বীর মেধাশহীদ আবু সাঈদের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পুরোটা সময় জুড়ে তিনি তার জীবনে ঝুঁকি উপেক্ষা করে যেভাবে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের পাশে দাঁড়িয়েছেন তা ইতিহাস মনে রাখবে, মনে রাখবে এদেশের ছাত্র সমাজ, মনে রাখবে এই দেশ।
তার অনেক প্রতিবাদের কথা এখানে উল্লেখ করা হয়নি। সব উল্লেখ করা সম্ভবও না। যা উল্লেখ করেছি তাতেই বোঝা যায় তিনি প্রতিনিয়ত অন্যায় অবিচারের বিরুদ্ধে সোচ্চার থেকেছেন। আমার জানা নেই বাংলাদেশে কত হাজার বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক রয়েছে। বিগত স্বৈরশাসকের আমলে কজন শিক্ষক অনিয়ম অবিচারের বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলেছে? হাতের আঙ্গুলে গোনা যাবে এমন শিক্ষকের সংখ্যা। আর অপরদিকে সবাই থেকেছে নিশ্চুপ। কেউ হয়ত ভয়ে প্রতিবাদ করেনি। এই ফ্যাসিবাদের আমলে সরকার যেসব দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে ভয় পাওয়াটা একদম স্বাভাবিক। আর কিছু শিক্ষক রয়েছেন যারা শুধু সুবিধাই নিয়েছেন, আর কিছু রয়েছেন যারা সমর্থন দিয়েছেন। আন্তোনিও ফ্রাঞ্চেস্কো গ্রামশি তার কারাগারের নোটবই এ লিখেছেন কিভাবে বুদ্ধিজীবীদের সমর্থনে ইতালিতে ফ্যাসিবাদ জেঁকে বসেছিল। বাংলাদেশও ফ্যাসিবাদ কায়েমে এই সকল বুদ্ধিজীবীরাই অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে। বিগত ফ্যাসিবাদ সরকার ক্রমাগত যে সকল বয়ান প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা করেছে, চোখ বুজে সমর্থন করেছে এই সকল পদলেহনকারী বুদ্ধিজীবী। অন্যায় যে করে আর অন্যায় যে সহে তব ঘৃণা তারে তৃণ সম দহে। আমরা ভুলে গেছি এসব কথা। আমাদের দেশের বুদ্ধিজীবীরা কবে মানুষ হবে? মানুষ গড়ার কারিগর যখন এমন হয়, তখন কিভাবে আমাদের দেশে বৈষম্য দূর হবে? আমাদের সমস্যার শেষ নেই। আমাদের রাষ্ট্র কাঠামোতে কি কি সমস্যা তা হয়ত আমরা সকলেই জানি। কিন্তু আমাদের মনোজগতে যে সকল সমস্যায় রয়েছে সেগুলোর সমাধান করা অতীব জরুরি। এসব নিয়ে আমাদের অনেক ভাবতে হবে, এবং এসব সমস্যা থেকে উত্তরণের জন্য জরুরি পদক্ষেপ নিতে হবে। এখন আমাদেরকে সমাধান খুঁজতে হবে।
আমার এই লেখার উদ্দেশ্য ডক্টর ফরিদ উদ্দিন খান কে মহান কিছু প্রমাণ করা নয়। আমার এই লেখাটা পড়ে আপনাদের হয়ত এতক্ষণে মনে হয়েছে, বাহ! ডক্টর ফরিদ উদ্দিন খান কি মহান একজন শিক্ষক! তিনি কি নিজেকে মহান প্রমাণ করার জন্য এসব করেছেন? একদমই তা নয়। তিনি তার দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করেছেন। যেটা করার দরকার ছিল, উনার যেটা কর্তব্য তিনি সেটাই করেছেন। আমাদের চোখে তিনি মহান হিসেবে আবির্ভূত হয়েছেন শুধুমাত্র অন্যান্য বুদ্ধিজীবীরা তাদের দায়িত্বটুকু পালনে ব্যর্থ হয়েছেন বলেই। উনি যেভাবে সাহসিকতার সাথে সকল ধরনের অপশক্তির বিরুদ্ধে লড়াই করেছেন তা অবশ্যই তাকে মহান করে তুলেছে। কিন্তু কেন শুধু তাকেই এই মহান হওয়ার দায়িত্ব নিতে হলো? হাজার হাজার শিক্ষক এমন মহান হতে কেন পারলেন না? ডক্টর ফরিদ উদ্দিন খানের সাথে যদি ১০ জন শিক্ষকও পাশে এসে দাঁড়াতেন তাহলে এই ফ্যাসিবাদ আরো পাঁচ বছর আগেই বিদায় নিত বলে আমি বিশ্বাস করি। কিন্তু আফসোস, আমাদের বুদ্ধিজীবীরা মানুষ হলো না।
জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পরেও কিন্তু তিনি থেমে নেই। ৫ আগস্ট এর পরে সারা দেশব্যাপী যে অরাজকতা সৃষ্টি হয়েছিল তার প্রতিবাদে তিনি আবার নগ্ন পদযাত্রা করেছেন। সাম্প্রতিক বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের সাহায্যের জন্য ত্রাণ তহবিল গঠনে বিশেষ ভূমিকা রেখেছেন। সকল বৈষম্য,অবিচার ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে তার এই দ্রোহ যে চলমান থাকবে তা নিঃসন্দেহে বলা যায়। জুলাই অভ্যুত্থানের পরে বাংলাদেশে তৈরি হোক এক নতুন বুদ্ধি বৃদ্ধির বিন্যাস। যে বিন্যাসে ডক্টর. সলিমুল্লাহ খান, ডক্টর আসিফ নজরুল ও ডক্টর ফরিদ উদ্দিন খান এর মত আরো অনেক বুদ্ধিজীবীকে সহজেই খুঁজে পাওয়া যাবে।