
16/01/2025
নাম অভয় সিং। বাড়ি হরিয়ানা। ওনার থেকে কী শিখলাম?
আইআইটি মুম্বাই থেকে btech করেছেন এরোস্পেস ইঞ্জিনিয়ারিং এ তারপর ডিজাইন এ মাস্টার্স করেছেন। তৃতীয় ছবিটি আইআইটি বোম্বে থেকে পড়াশোনা শেষে ওনাদের ডিগ্রী পাওয়ার দিন অন্য সহপাঠীদের সঙ্গে। এরপর একবছর ফিজিক্স পড়িয়েছেন সম্ভবত আইআইটি র কোচিং ইনস্টিটিউট এ। পাশাপাশি উনি “A beautiful place to get lost” নামে বইও লিখেছেন। এই পোস্টে দুটি ছবি আছে। প্রথম ছবিটি ওনার কম বয়সের। কি হ্যান্ডসাম ছেলে। দ্বিতীয় ছবিটি ওনারই কিন্তু কুম্ভের মেলায় তাকে সন্ন্যাসী রূপে যেভাবে দেখা গেছে। এই কারণেই ওনাকে এখন অনেকে আইআইটি বাবা বলে ডাকছেন।
উনি আইআইটি থেকে পাশ করেও নিজের প্যাশনের পিছনে ছুটেছিলেন। নিজেই বললেন থ্রি ইডিয়টসের মতো প্যাশন ফলো করে ট্রাভেল ফটোগ্রাফার হয়েছিলেন। মানালি থেকে ২০০০ কিমি পায়ে হেঁটেছেন চার ধাম দর্শন করার জন্য।ইন্টারভিউতে এটাও বললেন “এই পৃথিবীতে এতো কিছু শিখে নিলাম কিন্তু বেসিক জিনিস রান্না করাটাই শিখলাম না! ছোট ছোট বিষয়গুলো শেখা ও জানা দরকার”! যেসব মা বাবারা এখনও গর্ব করে বলেন যে আমার বাবু রান্না জানে না, তারা বুঝুন রান্না জানাটা প্রয়োজন (basic need), না জানাটা ব্যর্থতা।
গার্লফ্রেন্ড এর ব্যাপারে জিজ্ঞেস করলে অকপটে স্বীকার করলেন যে অনেক গার্লফ্রেন্ড ছিল, অনেক ভুল ভাল কাজও করেছেন। এটাও বললেন যে “আইআইটি তে ১০ জনের মধ্যে ১ জন মেয়ে কিন্তু ডিজাইন স্কুলে ১০ জনের মধ্যে ৭ জন মেয়ে ছিল।” তারপর বললেন “জীবন এ ঠিক ভুল নয়, জীবন কী সেটা বুঝতে হবে আগে। আর সেটা বোঝা সম্ভব অভিজ্ঞতার মধ্যে দিয়েই। এছাড়া আর কি উপায় আছে বলুন।”
লোকে কী বলে জিজ্ঞেস করাতে উনি বললেন “লোক তো বলবেই, তাতে আমার কিছু যায় আসে না।” উনি বাড়িতে ধ্যান করতেন বলে বাড়ির লোক পুলিশ ডেকেছিলেন। তারপর বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দিয়েছেন। উনি বললেন “ভালোই হয়েছে। আমার মধ্যে আর এই পাপ বোধ নাই যে আমি বাড়ি ছেড়ে পালিয়েছি, ওরাই আমাকে তাড়িয়ে দিয়েছে।” অর্থাৎ নিজে বাড়ি ছেড়ে পালানো টা উনি ঠিক মনে করেন না।
আরও একটি কথা আমার খুব ভালো লাগলো, “আলাদা আলাদা জিনিস বা বিষয়কে চিহ্নিত করুন কিন্তু তাদের মধ্যে তুলনামূলক বিচার করবেন না। differenciate করুন কিন্তু discriminate করবেন না।” অর্থাৎ আমি জানি বিভিন্ন ধর্ম, রাজনীতি আছে। আমি এক ধর্মে বিশ্বাস করি আপনি অন্য ধর্মে বিশ্বাসী বা আমি কালো আপনি ফর্সা বা আমি এক রাজনীতিতে বিশ্বাসী আপনি অন্য রাজনীতিতে। কিন্তু তাদের মধ্যে তুলনা করে কে ছোট কে বড় বিচার না করলেই হলো। সকলেই একসাথে বিরাজ করুক এই সমাজে। তবেই জীবনে আনন্দ থাকবে। ওর মতো হেসে আনন্দ করে জীবন কাটাতে পারবেন।
একটা বাস্তব কথা বললেন “ভারতবর্ষে এই সমস্যা আছে যে যারা বয়সে বড় তারা ভাবে তারা বেশী জানে। মা-বাবারা ভাবে তারা মা বাবা বলেই ছেলের থেকে বেশী জানে। কিন্তু বাবা হয়েছে তো কি হয়েছে, বাবা ক্লাস ১০ পাশ করেও ভাবে তার জ্ঞান সবসময় তার সন্তানের থেকে বেশী। এটা তো ঠিক নয়। তার তো বলা উচিত যে আমি সব জানি না, এতুটুকুই জানি।”
হয়তো মনে হবে যে উনি আইআইটি র একটা সিট নষ্ট করলেন বা অতিরিক্ত গঞ্জিকা সেবনের জন্য আজ উনি মানসিকভাবে অস্থির ও এভাবে হাসতে হাসতে হেলায় সবকিছু ছেড়ে দিয়েছেন। কিন্তু আমার মনে হয় উনি যথেষ্ট ইন্টেলিজেন্ট, স্মৃতিশক্তিও প্রখর। জানার ইচ্ছাও প্রবল। উনি নিজের জীবন দর্শন দিয়ে সমস্ত পার্থিব বস্তু ও সম্পর্কের মায়া ত্যাগ করে এই রাস্তা বেছে নিয়েছেন। সকলের অধিকার আছে তার জীবনকে নিজের মতো কাটাবার। উনি অন্তত কাউকে ঠকাচ্ছেন না, কারও ক্ষতি করছেন না। নিজের মতো করে জীবন উপভোগ করছেন। আমার তো বেশ হিংসা হচ্ছিল আমি ওনার মতো এভাবে অকপটে হাসতে পারি না মন খুলে বলে!
© Shubra sundar