05/10/2023
মিষ্টি যন্ত্রনা – একটা মিষ্টির দোকানে গিয়ে টেবিলে বসিয়ে দেয় লাবিবাকে। ওয়েটারকে কয়েকটি মিষ্টি বউ আনতে বলে। লাবিবা চুপচাপ বসে থাকে। ওয়াটার মিষ্টি দিয়ে গেলে বিনা বাক্য তানভির খেতে থাকে।
ভালোবাসার গল্প
Menu
Easy guide on how to become a BOSS at work
One click and you will be completely anonymous online
The Beginners’ Guide to Foreign Exchange Trading
Click Here To Know How To Be Rich If You're TEEN
These Smart and Rich Women Snatched Millionaires
Home/মিষ্টি প্রেমের গল্প
মিষ্টি যন্ত্রনা – Valobasar Romantic Premer Golpo
মিষ্টি যন্ত্রনা – Valobasar Romantic Premer Golpo: একটা মিষ্টির দোকানে গিয়ে টেবিলে বসিয়ে দেয় লাবিবাকে। ওয়েটারকে কয়েকটি মিষ্টি বউ আনতে বলে। লাবিবা চুপচাপ বসে থাকে। ওয়াটার মিষ্টি দিয়ে গেলে বিনা বাক্য তানভির খেতে থাকে।
পর্ব ১
উফফ ডেইলি এই সকাল ছয়টায় শীতের মধ্যে হেটে হেটে প্রাইভেটে যেতে হয়। আর ভাল্লাগেনা। দীর্ঘ সতের বছর থেকে এই কাজটাই করতেছি কবে যে এর অবসান ঘটবে আল্লাহই যানে। মরার স্টাডি লাইফ আর শেষ হয় না। ওমা আমার জুতো ছেড়া কেনো? আম্মুনি…আম্মুনি ….আম্মুনি…আমার পাম্পিং জোড়া কে পড়েছিলো?
আস্তে কথা বলা যায় না? সকাল বেলা তোর চিল্লাচিল্লিতে সবার ঘুম ভেঙে যায়। পাম্প মেশিন কোথায় পেলি?
আহা পাম্প মেশিন কোথায়! এই পাম্প ওয়ালা জুতার কথা বলছি।
খামস বাছা। তোর খালার বাসা থেকে কষ্ট করে দশ মিনিট পায়ে হেটে নিউমার্কেট গিয়ে তোর জন্য উপহার স্বরুপ নয়শত টাকা দিয়ে উচু জুতো কিনে এনেছি আর তুই পাম্প দেয়া জুতো বলছিস?
ফাপর কম দেও আম্মুনি। আমার প্রাইভেটের এক মেয়েও এই জুতা কিনছে নব্বই টাকা দিয়ে। আগে বলো এই উপরের ফুলটা ছিড়ছে কে?
সিদরাতুল ছিড়ছে।
ওহ। গেইট লাগাও। গেলাম আমি।
লাবিবা বেরিয়ে গেলে যেনো ছাবিনা দীর্ঘ একটা শ্বাস ফেলে। কোমড়ে শাড়ির আচল গোজে পিছু ফিরতেই দেখে ইসমাইল দাড়িয়ে হাই তুলছে।
মেয়ে বেরিয়ে গেছে? প্রশ্ন করে ইসমাইল।
হুম। একটু যাও না গো সাথে। কুয়াশায় কিছুই চোখে পড়েনা। এতো সকালে একা একা বেড়িয়ে গেলো রাস্তায় কুকুর থাকলে তো দেখবেও না উপর দিয়ে হেটে চলে যাবে।
সুয়েটারটা দাও।
পেছনে ব্যাগ ঝুলিয়ে হুডির টুপিটা আরো টেনে নিয়ে চকলেট খেতে খেতে কাপতে কাপতে হাটছে লাবিবা।
ঠান্ডায় পুরো বরফ জমা হয়ে যাচ্ছে। খুব সাবধানে ভয়ে ভয়ে পা ফেলছে। কেনো জানিনা রাস্তার কুকুর গুলো দেখলেই তেড়ে আসে ঘেউ ঘেউ করে। পেছন থেকে কেউ চাদর চাপিয়ে দিতেই পিছু ঘুরে।
ওহ আব্বু। ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম।
ভয় কেনো পাবে? ছোট থেকেই যাতায়াত করছো এখনো কেনো ভয় পাও? বুক উচিয়ে চলবে। আমার মেয়ে যেনো কোন কিছুতে ভয় না পায়।
প্রাইভেটে পৌছে দিয়ে বাসায় ব্যাক করে ইসমাইল।লাবিবা স্যারের বাসায় ঢুকে যায়। স্টাডি রুমে এসে বেঞ্চিতে বসে পড়ে। স্যার আসতেই স্যারের সাথে সাথে একটা ছেলেও আসে। কাধ থেকে ব্যাগ খুলে লাবিবার পাশে বসে পড়ে। স্যার পড়ানো শুরু করে। পড়ার মাঝখানে লাবিবা হটাৎ করে ছেলেটার দিকে তাকায়। লম্বা ফর্সা গড়নের সুইট একটা ছেলে। লাবিবা জিজ্ঞাসা করে,
কোন ইয়ার?
ফাস্ট ইয়ার। ইউ?
তোমার ওয়ান ইয়ার সিনিয়র।
নাইস টু মিট ইউ।
স্যার কি বলে শোনো।
পর পর দুটো প্রাইভেট শেষ করে বাসায় চলে আসে লাবিবা। বড় ভাই লিটনের দেড় বছরের মেয়ে সিদরাতুলকে নিয়েই সময় কেটে যায়। রাতে পড়তে বসে। মেথ বই খুলে পড়ার পৃষ্টা বের করে সামনে রেখে নিরব দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে। একটা লাল গোলাপের পাপড়ি বইয়ের ভিতরে। আজকে তো কেউ প্রাইভেটে লাল গোলাপ আনেনি। তাহলে? পাপড়ি টা হাতে নিয়ে চিমটি কাটতে কাটতে পড়ায় মনোযোগ দেয় লাবিবা।
পরদিন প্রাইভেটে যাওয়ার জন্য বের হয়ে দেখে কুয়াশা কম। হাত ডলতে ডলতে এগিয়ে যায়। স্টাডি রুমে গিয়ে বসার কিছুক্ষন পর স্যার আসে। স্যার এসেই বলে,
সবাই চলে আসছে?
একজন ছাত্র বলে,
স্যার ফাস্ট ইয়ারের নতুন ছেলেটা আসেনি এখনো।
ওহ। ও আসবেনা বলে গেছে আমাকে। আজকে বাসা সিফট করার কথা ওদের। বই খুলো। যোগান রেখা বের করো। শোনো যেহেতু ব্যাষ্টিক অর্থনীতি ফাস্ট এন্ড সেকেন্ড ইয়ার সেইম পড়া তাই তোমাদের ফাস্ট এন্ড সেকেন্ড ইয়ার একসাথে পড়াচ্ছি।
আমরা জানি স্যার। নো প্রবলেম।
প্রাইভেট শেষ করে কলেজে কিছুক্ষন আড্ডা দিয়ে বাসায় চলে আসে। সাবিনা বলে,
আজকেও ক্লাস করিসনি তাই না?
রোজ রোজ এতো ক্লাস ভালো লাগেনা আম্মুনি। সিদরাতুল কোথায়? টেবিলে খাবার দাও।
ভেতরে গিয়ে দেখে সিদরাতুল ফ্লোরে বসে মোজা কামড়াচ্ছে। হাত থেকে মোজা কেড়ে নিয়ে সিদরাতুলকে কোলে তুলে নিয়ে ভাবীর খোজ করে।
রান্না ঘরে মমতাকে দেখে বলে,
ভাবী তুমার মেয়ে জুতা মোজার মধ্যে কি পায় বলতো? কাল দেখি আমার জুতো ছিড়ে রেখেছে কামড়ে আজ মোজা কামড়াচ্ছে। দুধ না খাইয়ে খাইয়ে ইদুর বানিয়ে ফেলছো মেয়েটাকে।
মমতা বাটিতে সিদ্ধ ডিম আর নরম ভাত লাবিবার হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলে,
খাইতেই চায়না তো আমি কি করবো বলো। এখন এটা খাওয়াও দেখি খায় নাকি।
লাবিবা একহাতে সিদরাতুল আরেক হাতে বাটি ধরে ছাদে চলে আসে। পাটি বিছিয়ে খেলনা দিয়ে সিদরাতুলকে বসিয়ে দেয়। ভাত মাখিয়ে খাওয়ানোর চেষ্টা করে কিন্তু খাওয়াতে পারে না। কোলে তুলে নিয়ে হেটে হেটে খাওয়াতে থাকে। সিদরাতুল একটু খায় তো বেশিটুকুই মুখ থেকে ফেলে দেয়। ছাদের কর্ণারে যেতেই নিচের দিকে তাকাতেই দেখে গলির মুখে লড়ি ভর্তি মালপত্র। পাশের বিল্ডিং এর সুখী ছাদে এসেছে। হাত ভর্তি ভেজা কাপড়। দড়িতে কাপড় মেলতে থাকে। সিদরাতুলকে দেখে ডাক দেয়,
সিদরাতুল…..ভাত খাচ্ছ তুমি?
সিদরাতুল সুখীকে দেখে কোলে যাওয়ার জন্য হাত পা নাড়তে থাকে। মুখ ভরা হাসি আর আ আ আওয়াজ বের করে। সুখী ছাদের কিনারায় এসে দাড়ায়। লাবিবাও কিনারা ঘেসে দাড়ায়। দুই ছাদের মাঝে দুই হাত দুরত্ব শুধু। সুখী সিদরাতুলের সাথে কথা বলছে আর সিদরাতুল লাফাচ্ছে। লাবিবা সুখীকে বলে,
সুখী আপু এ গলিতে নতুন ভাড়াটিয়া এসেছে নাকি?
গলিতে না। আমাদের বাসাতেই এসেছে। দুতলার ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়েছে। ফ্যমিলি থাকবে। আংকেল আন্টি আর তাদের এক ছেলে। আংকেল কৃষি অফিসার বদলি হয়ে এখানে এসেছে।
ওহ। লড়ি দেখলাম তো তাই। বাসায় এসো আপু।
তুই আসিস। সিদরাতুলকে নিয়ে।
আচ্ছা। নিচে গেলাম। সিদরাতুল ফুপিকে টা টা দেও।
সিদরাতুল সুখীকে হাত নাড়িতে তা তা দেয়।
দুদিন পর লাবিবা ফ্রেন্ডসদের সাথে বের হয়। সরকারি ছুটির দিন হওয়াতে স্যাররা প্রাইভেট ও অফ রেখেছে। পাচঁ বান্ধবী লাবিবা মোহনা সাদিয়া তিথী তনুজা যখন একসাথে বের হয় তখন এক ড্রেস পড়ে। লোকে দেখলে ভাবে এরা পাচ বোন।
কেনাকাটির সময় এক ড্রেস কেনার জন্য সবাই একসাথেই শপিং এ যায়। যে যে শোরুম থেকে ড্রেস কেনা হয় তারা ভালো ড্রেস গুলো অনেকগুলো পিচ করে নিয়ে আসে যেনো এই পাচঁজন কাস্টমার হাত ছাড়া না হয়। গ্রামীন চেকের রেড ব্ল্যাক টপসের সাথে ব্ল্যাক জেগিন্স আর গলায় ব্ল্যাক স্কার্ফ পড়ে বের হয় পাচঁ ফ্রেন্ড একসাথে।
কাধে সেইম রেড কালার ব্যাগ। সাঝঁ ও সেইম। রাস্তা দিয়ে যখন হাটে তখন লোকজন হা করে তাকিয়ে থাকে। অটো ডেকে উঠে পড়ে সবাই। গন্তব্য আলহামদুলিল্লাহ সুইটস এন্ড রেস্টুরেন্টে পৌছেঁ ভাড়া মিটিয়ে ভেতরে ঢুকে।
একটা বড় টেবিলে গিয়ে বসেই সেল্ফি নেওয়া স্টার্ট হয়। আধঘন্টা নতুন এই মনোরম সুন্দর রেস্টুরেন্টে সেলফি কুলফি নেওয়া শেষ করে ওয়েটারকে ডাকে। মেক্সিকান সাবওয়ে আর কিছু ডেজার্ট অর্ডার করে। ওয়েটার অর্ডার নিয়ে চলে গেলে মোহনা বলে,
তোরা কি জানিস আজ আমি তোদের ট্রিট দিচ্ছি।
সেটা তো সবাই জানি। কিন্তু কেনো দিচ্ছিস সেটা বল।
এই মাসের উনত্রিশ তারিখ আমার কাবিন।
সত্যি মামী? আমরা মামা পাইতাছি? হুর্রেএএ …আয় খুশিতে বুকাবুকি করি।
সবাই উঠে একজন আরেক জনকে হাগ দেয়। ওয়েটার এসে ম্যাম বলে ডাকলে একজন আরেকজনকে ছেড়ে চেয়ারে বসে পড়ে। ওয়েটার প্লেটার দিয়ে যায় এক এক করে। হটাৎ চোখ পড়ে যায় পাশের টেবিলে। লাবিবাদের মতো সেইম চেকের শার্ট গায়ে বসে আছে। সামনে একটা একটা রেস্টুরেন্টে ঢুকার সময় যে ডেজার্ট গুলো দেখেছে সব গুলো সাজানো। বিসমিল্লাহির রহমানির রাহিম বলে একটা দিয়ে শুরু করে খাওয়া। পাচঁ বান্ধবী প্রায় অবাক হয়ে দেখছে এর খাওয়া।
একেতো সেইম কালার ড্রেস তার উপর পুরো টেবিল সাজানো ডেজার্ট। সব গুলো শেষ করে ওয়েটার কে আবার ডেকে বলে,
গিভ মি সাম রসগোল্লা সুইটস প্লিজ। যেগুলো এতো সফট আর এট্যাকটিভ যে লোভ সামলানো যায় না দেখলেই খেয়ে ফেলতে ইচ্ছা করে।
কয়টা দিবো স্যার?
দিতে থাকুন।
ওয়েটার রসগোল্লার বন্যা বয়িয়ে দিয়েছে। এদিকে ছেলেটা শুধু মুখে পুরছে আর চোখ বন্ধ করে খাচ্ছে।
লাবিবাতো গুনতে শুরু করেছে একচল্লিশ, বিয়াল্লিশ, তেতাল্লিশ …… পুরোপুরি চৌষট্টিটি রসগোল্লা কাভার করে ফেলেছে। টিস্যু দিয়ে মুখ মুছে বিল রেখে চলে যায়। ওয়েটার এসে লাবিবার সামনে বিল রেখে বলে,
ম্যাম বিলটা।
বিলের দিকে তাকিয়ে সবাই অবাক। বিল কম বেশি হয়েছে জন্য নয় এর জন্য যে ওরাতো এখনো খাওয়াই শুরু করেনি তার আগেই বিল চলে এসেছে। প্লেটার গুলোর দিকে তাকিয়ে মেজাজ খারাপ হয়ে যায় সাদিয়ার। রাগ দেখিয়ে বলে,
আমরাতো এখনো খাওয়াই শুরু করিনি আর আপনি বিল ধরিয়ে দিলেন? আমরা আরো কিছু তো নিতেই পারি।
মেম, আমি জিজ্জাসা করেছিলাম আপনাকে। আপনি কিছু নিবেন না বলেছেন।( মোহনার দিকে তাকিয়ে)
এবার মোহনা নিজের মাথায় নিজেই চাপড় দেয়। এতোটা ধ্যানে পড়েছিলো যে কি বলেছে মনেই নেই তার। এবার সবাই তাকায় লাবিবার দিকে। লাবিবা মাথাটা নিচু করে নেয়। একসাথে সবাই বলে উঠে,
তোর দোষ। তুই নিজেও মানুষের খাওয়ার দিক হা করে তাকিয়ে থাকিস এখন আমাদের কেও তাকিয়ে থাকতে শেখাচ্ছিস।
লাবিবা বলে, ওহ কামন দোস্ত। দেখছিস কিভাবে খেলো? খাওয়া হলো একটা আর্ট। ছেলেটা এত্তো আর্ট করে খেলো যে আমি সহ তোরাও তাকিয়ে ছিলি। বুঝতে পারছিস ব্যপার টা? ডেজার্টে না হলেও ত্রিশটা আইটেম হবে সব একপিস করে খেলো তারপর পুরো চৌষট্টিটা রসগোল্লা খেলো। এই না হলে খাদক! এর থেকে কিছু শিখ বুঝলি। আমার তো দুইটার বেশি রসগোল্লা খেলেই পেটে ঠান্ডা লাগে আর খেতেই পারি না।
তনুজা বলে, কি হেন্ডসাম বয় দোস্ত …ভাল্লাগছে সিরিয়াসলি ভাল্লাগছে। কি সুন্দর করে বললো সফট আর আ্যাটাকটিভ যে লোভ সামলানো যায় না দেখলেই খেয়ে ফেলতে ইচ্ছে করে।
সবাই একযোগে হেসে উঠে। তনুজার পিঠে চাপড় দিয়ে তিথি বলে, জুনিয়র পোলা মামী। কন্ট্রোল মামী কন্ট্রোল।
তনুজার চোখ দুটো বড় বড় হয়ে যায়। রাগ দেখিয়ে বলে, হাসি থামা। জুনিয়র আগে বলবিতো।
হুম। সেদিন প্রাইভেটে তুই ছিলিনা জন্য জানিসনা।
বেড লাক।
সবাই খাওয়া শেষ করে। লাবিবা মোহনার দিকে বিলটা এগিয়ে দেয়। মোহনা বিল বুক টা ওপেন করতেই গোলাপের পাপড়ি দেখতে পায়। লাল গোলাপের পাচঁটি পাপড়ি। পাচঁজন হাতে পাচঁটি পাপড়ি নিয়ে নেয়। সবাই ভাবে রেস্টুরেন্ট থেকেই দিয়েছে। কিন্তু লাবিবার মনে খচ খচ করতে থাকে কারন সে আগেও একটি পাপড়ি পেয়েছিলো। অতটা মাথা না ঘামিয়ে বাসায় চলে আসে।
মমতা রুমের দরজায় টোকা দিতেই ভেতর থেকে লাবিবা বলে উঠে, কাম ইন।
মমতা দরজা ঠেলে রুমে ঢুকে দেখে লাবিবা পড়তে বসেছে। সামনে ফোনটা এগিয়ে দিয়ে বলে,
নাও কথা বলো।
কে ভাবি?
তোমার ফিওন্সে। মানে আমার হবো ননদাই।
কথা বলবোনা।
ওমা কেনো?
কেনো মানে? উনার কি সময় আছে আমার সাথে কথা বলার?
আহা!কি রাগ! কথা বলে রাগ মেটাও আমি গেলাম।
লাবিবা ফোন কানে নিয়ে বসে আছে। ওপাশে থেকে বার বার সরি শব্দটি প্রতিধ্বনি হচ্ছে। শেষমেষ লাবিবা মুখ খুলে,
সরি আর বলতে হবে না। আই থিংক ওয়ান মানথ এগো ইউ টক ইউথ মি। আমার যদি কোনো ইমপর্টেন্স থাকতো তোমার সাথে তাহলে ওয়ান মানথ টা হাজার ব্যস্ততার মধ্যেও ওয়ান ডে তে চলে আসতো।
লাবিবা টাস্ট মি। অনেক বিজি থাকতে হয় আমাকে। তোমাকে যখন আমার বিজনেসে ইনভলভ করবো তখন বুঝবে তুমি।
আমি ফোনটা রাখছি।
হে ওয়েট, এতো দিন পর ফোন দিলাম আর তুমি এখনি রেখে দিবে। বাই দ্যা ওয়ে আমি নেক্সট মানথ এ আসছি।
রিয়েলি?
রিয়েলি ডারলিং। হ্যাপি তো?
অনেকমাচ।
পর্ব ২
সকাল হতেই সুয়েটার গায়ে ব্যাগ ঝুলিয়ে বেড়িয়ে পড়লো স্যারের বাসার উদ্দ্যেশ্যে। রাস্তায় এদিক ওদিক তাকিয়ে তাকিয়ে হাটছে। কখন না জানি কোন কুকুর সামনে এসে দাড়িয়ে পড়ে আর ঘেউ ঘেউ করে উপরে উঠে পড়ে।
যেখানে কুকুরের ভয় সেখানেই সকাল হয়। সামনে কয়েকটা সাদা কুকুর তাকিয়ে আছে লাবিবার দিকে। আসলে এদের গায়ের রং সাদা কালো বাদামী। কিন্তু কুয়াশায় পুরোটাই সাদা দেখা যাচ্ছে। লাবিবা সাহস করে এগিয়ে যায়। যেইনা সামনে গিয়েছে দেখে এই বড় বড় জিহবা বের করে তাকিয়ে আছে কুকুরের দল লাবিবার দিকে।
লাবিবা এদিক ওদিক তাকিয়ে দেখে কেউ নেই। লা ইলাহা ইল্লা আনতা সুবহানাকা ইন্নিকুমতু মিনাজ্জুয়ালিমিন বলে পাশ দিয়ে দৌড়। এই মুহূর্তে কোন দোয়া পড়বে জানা নেই তাই যা মুখথেকে বের হয়েছে সেটা বলেই দৌড়। পিছু পিছু কুকুরের দল ও দৌড়। দৌড়াতে দৌড়াতে খাম্বার সাথে ধাক্কা খেয়ে রাস্তায় ধপাস। পেছনে কুকুর সামনে খাম্বার ধাক্কা ভেবেই লাবিবা চিক্কুর। কিন্তু খাম্বা দিয়ে ব্যথা পেলো না কেনো?
যে জোরে ধাক্কা লেগে ধপাস হয়েছে তাতে তো নাক মুখ থেতলে যাওয়ার কথা। কিন্তু একটুও তো রক্ত পড়ছেনা। সামনে তাকিয়ে দেখে কিছুই নেই তাহলে কিসের সাথে ধাক্কা খেলো? পেছনে তাকাতেই দেখে একটা ছেলে হাতের বিভিন্ন ভঙিমা করছে আর কুকুর গুলো পালিয়ে যাচ্ছে। লাবিবা চেচিয়ে বলল,
এই ছেলে, ওমন ক্যাঙ্গারুর মতো কিলবিল করছো কেনো?
ছেলেটি পিছু ঘুরে বলে,
সিরিয়াসলি মিষ্টি? ক্যাঙ্গারু কিলবিল করে?
লাবিবা আস্তে করে উঠতে নিতেই পড়ে যেতে ধরে। আবার নিজেকে সামলিয়ে উঠে দাড়ায়। ছেলেটির দিক তাকিয়ে বলে,
নাহ তুমি তো মানুষ। তাহলে তুমি মানুষ কিলবিল করে। এখানে কি করছো?
পিছু ঘুরে আঙুল দিয়ে পিঠের ব্যাগ দেখিয়ে বলে, প্রাইভেটে যাচ্ছি।
ও হ্যা। আমি তো তোমাকে চিনি। তুমি মিষ্টি খাদক। রেস্টুরেন্টে পুরো চৌষট্টিটা রসগোল্লা খেয়েছো। আরো অনেকগুলো ডেজার্ট আইটেম খেয়েছো।
ছেলেটি মাথা নাড়ায়। বলে, জি মিষ্টি। যতদিন অমৃত মিষ্টি না খাচ্ছি ততোদিন বানানো মিষ্টি খেয়ে যাবো।
লাবিবা ভ্রু কুচকে তাকায়। অমৃত মিষ্টি আর বানানো মিষ্টির মধ্যে তফাত কি? অমৃত মিষ্টি কি প্রাকৃতিক? জিজ্জাসা করবে একটি বার? না থাক করতে হবে না। মুখ স্বাভাবিক করে বলে,
এই ছেলে, নাম কি তোমার?
আমার নাম তানভীর খান মিষ্টি।
এই ছেলে, কথায় কথায় মিষ্টি বলো কেনো? মিষ্টি তো মেয়েদের নাম। নাকি তুমি মিষ্টি খাদক জন্য সবাই তোমার নামের শেষে মিষ্টি টাইটেলটা লাগিয়ে দিয়েছে?
মিটি মিটি হেসে লাবিবার সামনে এসে দাড়িয়ে বলে,
তোমার নাম মিষ্টি। আমি তোমাকে মিষ্টি বলেই ডাকবো।
কেনো কেনো?
তুমি জানো আমি যখন সাত দিনের বেবি তখন কত রিচুয়াল ফলো করে আস্ত একটা খাসি দিয়ে আমার নামে আকিকা দিয়েছে!
তুমি দেখতে খুব মিষ্টি চেহারার একটা মেয়ে। রসগোল্লার মতো গালজোড়া। মিষ্টি করে হাস। একদম লিচি ফ্লেবার সুইটস। তাই আমি তোমাকে মিষ্টি ছাড়া অন্যকিছু ডাকতে পারবো না।
লাবিবা হা হয়ে তাকিয়ে আছে। কি সুন্দর করে একটা জলজ্যান্ত মানুষকে মিষ্টি বানিয়ে দিলো ফ্লেবার সহ ভাবাগো ভাবা ভাভা যায় এগ্লা? সরাসরি রুপের প্রশংসা। কলিজা আছে বলতে হবে। দুপা এগিয়ে একদম সামনে গিয়ে দাড়ায়। লম্বা মানুষটার দিকে তাকাতেও আকাশ পানে চাইতে হয়।
তানভীরের চোখের দিকে চোখ কুচকে তাকিয়ে বলে,
এই ছেলে তুমি তো দেখতে কিউট আছো। তোমাকে কে কি কিউট পোলা বলে ডাকবো?
আমাকে জন্মের সাতদিনের দিন একটা না দুটো খাসি দিয়ে আকিকা দিয়েছে।
এই ছেলে, সিনিয়রের মুখে মুখে একদম চাপা মারবেনা।
ঝাড়ি দিয়ে সরে দাড়ায় লাবিবা। তানভীর দাত বের করে আছে। রাস্তা থেকে ব্যাগ কুড়িয়ে কাধে ঝুলায় লাবিবা। তানভীর ঘড়িটা সামনের দিকে এনে তাকিয়ে বলে, মিষ্টি আর দুই মিনিট আছে প্রাইভেট স্টার্ট হওয়ার।
ও আমার আল্লাহ। এখান থেকে তো দশ মিনিটের রাস্তা আর আমি তোমার সাথে বকবক করতেছি! আর কিছু না বলেই লাবিবা দেয় দৌড়।
মিষ্টি আমাকে সাথে নিয়ে যাও আমি এই রাস্তায় আগে কখনো যায়নি বলে পিছু পিছু তানভীরও দৌড়।
স্যারের রিডিং রুমে হাপাতে হাপাতে এসে লাবিবা বসে পড়ে পিছু পিছু তানভীরও এসে লাবিবার পাশে বসে পড়ে। স্যার দুজনকে একসাথে হাপাতে দেখে বলে, তোমরা কি এখনো ছোট আছো যে কার আগে কে আসবে প্রতিযোগিতা করে দৌড়াও। অনার্সে পড়ো অথচো এখনো বড় হলে না। লাবিবা তানভীর চুপ। স্যার পড়ানো শুরু করে।
ক্যাম্পাসে ক্লাস শেষে বসে আছে পাচঁ বান্ধুবী। মোহনা বলে, কিরে ম্যারাথন দৌড় দিয়ে হাপাচ্ছিলি কেনো?
হাতে আর দু মিনিট ছিলো যখন আমি দশ মিনিটের রাস্তায় ছিলাম।
তো তোর সাথে জুনিয়র পোলাটা দৌড়েছিলো কেনো?
রাস্তায় একসাথেই আসছিলাম। ঐ ছেলেই বললো আর দু মিনিট টাইম আছে।
তখনি তানভীর এসে ঘাসের উপর বসে পড়ে। পাচ জনের চোখ ও সাথে সাথে তানভীরের উপর।
তানভীর ওদের দিকে তাকিয়ে মুখে একটা টেডি স্মাইল দিয়ে বলে,
আশপাশটা খালি খালি লাগলো তাই ভিড়েই এসে বসলাম। উঠতে বললে উঠতে পাড়বোনা এই বেয়াদবির জন্য অগ্রিম সরি।
পাচঁজনেই মাইন্ড না করে গল্পে মশগুল হলো। তানভীর বই খাতা বের করে পড়তে লাগলো। একটু পর বলে উঠল, এক্সকিউজ মি, মিক্রো ইকোনোমিকস কে ভালো পারে? মিষ্টি একটু বুঝিয়ে দাও তো এই টেক্সট টুকু।
সাদিয়া বলে,
ও বাবা। এইটাতো সেই জুনিয়র পোলা মামী। কেমনে এতো মিষ্টি খাও ভাই? যা একটু টিচারগিরী করে আয়। হেল্প লাগবে।
জি। আমি মিষ্টির লাভার। দাওয়াত দিবেন খেয়ে আসবো। কার জানি বিয়ে শুনেছিলাম দাওয়াত দিন অবশ্যই যাবো।
মোহনা বলে, আচ্ছা আচ্ছা দাওয়াত দিলাম এসো আমার বাসায়।
অবশ্যই। আপনার জন্য না হলেও মিষ্টির জন্য যাবো।
লাবিবা এসে টেক্সট টুকু বুঝিয়ে দিয়ে চলে আসে। বান্ধুবীদের সাথে চলে আসার সময় তনুজা মুখে বিরক্তি নিয়ে বলে, তোর তো এটা কাবিন রে মামী। জুনিয়র পোলারে দাওয়াত দিতে শুরু করেছিস।
আরে আমি কি করবো? কেউ যদি সেধে সেধে দাওয়াত নেয় তাহলে তো দিতেই হয়।
সাদিয়া হাতে হাতে ঝালমুড়ি ধরিয়ে দিয়ে বলে, আরে প্যারা নিস না। একজন ই তো বাইরের মানুষ যাবে। এতো চাপ নেওয়ার দরকার কি? ফেমেলিকে ফ্রেন্ড হিসেবে পরিচয় করিয়ে দিলেই হবে।
হুম। চল যাওয়া যাক।
ছাবিনা ময়লা ফেলার জন্য পাশের গলিতে ফাকা জায়গায় ময়লা স্তুপে এসেছে ঝুড়ি নিয়ে। ময়লা ফেলে ঝুড়ি নিয়ে ফিরতেই সুখীর মার সাথে দেখা। সাথে একজন মহিলাও এসেছে। ছাবিনা হেসে হেসে বলে, কি ভাবী নতুন ভাড়াটিয়া নাকি?
হা ভাবী। কয়েকদিন হলো উঠেছে। সোহানা ভাবী ইনি ছাবিনা ভাবী। পাশের বিল্ডিং এই থাকে।
ভাবি এখন সময় সংক্ষেপ তাই আলাপ করতে পারছিনা। বাসায় আসবেন ফ্রি টাইমে গল্প করা যাবে।
সোহানা বলে, আচ্ছা ভাবি আপনিও আসবেন।
ছাবিনা চলে আসে। বাসায় এসে লাবিবার কোল থেকে সিদরাতুলকে নিয়ে পড়ার সুযোগ করে দেয়। মমতা কিচেনে রান্না করছে। রাতে খাওয়ার টেবিলে ইসমাইল বলে, কয়েকদিন পর শাহাদ আসার কথা ছিলো কিন্তু কি জানি একটা সমস্যা হয়েছে তাই দুইমাস দেরি হবে আসতে।
লিটন গ্লাস থেকে পানি খেয়ে বলে, আব্বু শাহাদ আসুক বা না আসুক সেটাতে আমার কোন ইন্টারেস্ট নেই। আমার শুধু একটাই চিন্তা হয় যে বিয়ের পর না সারাজীবন আমার বোনটাকে একা লীড করতে হয়।
এটা কেমন কথা? বিয়ের পর আমেরিকা নিয়ে চলে যাবে লাবিবাকে। ওর ফেমেলি আছে সেখানে।
আব্বু ফেমেলিই সব কিছু নয়। ইমপর্টেন্ট হলো শাহাদ কতটুকু টাইম দিবে লাবিবাকে। আমি কখনো ওর বাসায় ফোন করে ওকে পাই না। সব সময় অফিস আর বিজনেস এই দুটোতেই বিজি থাকে। সপ্তাহে একবার বাসায় ফিরে কিনা সেটাই সন্দেহ।
ইসমাইল হেসে বলে, এটা কোন ব্যপার নাকি? বিয়ে হলে সব ঠিক হয়ে যাবে। কত ভাগ্য করে আমার মেয়েটার জন্য এমন ছেলে পেয়েছি বলতো। কি নেই ছেলের। রানী হয়ে থাকবে আমার মেয়ে।
তারপর লিটন আর কিছু না বলে খেতে থাকে। লাবিবার দিকে আড় চোখে একবার তাকিয়ে দেখে। লাবিবা না খেয়ে শুধু প্লেটে হাত নাড়ছে। মুখ দেখে বুঝা যাচ্ছে অন্যমনস্ক হয়ে কিছু একটা ভাবছে। খাওয়া শেষে উঠে যাওয়ার সময় শুধু বলে যায়, আব্বু যারা বাহিরের জগত আর টাকার খোজ পেয়ে যায় তাদের কখনো ভিতর বলতে কিছু হয় না।
ইসমাইল ছেলের দিকে একবার তাকিয়ে আবার খাওয়ার দিকে মনোনিবেশ করে। লাবিবা হাত ধুয়ে উঠে চলে যায়।
কলেজ থেকে ফেরার সময় প্রতিদিন মনে হয় কেউ তার পিছু পিছু আসছে। আজ হাতেনাতে ধরবে জন্য সাদিয়াকে বলেছে লাবিবার কিছুটা পিছু পিছু আসতে। পিছু পিছু তো আসেই তাও আবার তানভীর। হাতে নাতে ধরার পর লাবিবা সাদিয়ার কি রাগ। সাদিয়া তো রাগের চোটে তানভীরকে বলে,
কান ধরো জুনিয়র পোলা। সমস্যাটা কি তোমার? ডেইলি ফলো করো কেনো?
তানভীর প্যান্টের পকেটে দুহাত ডুকিয়ে বলে, আমি কোথায় ফলো করলাম? আমি তো বাসায় যাচ্ছি।
বাসায় যাবে তো বাসায় যাও আমার পিছু পিছু আসো কেনো?
তোমার পিছু পিছু গেলেই তো আমি বাসাটা পাই মিষ্টি। মেইনরোড দিয়ে যেতে অনেক টাইম লাগে। তুমি গলি দিয়ে যাও খুব তাড়াতাড়ি পৌছে যাই। আর এই গলির রাস্তায় আমার একা ভয় লাগে নতুন তো।
এই ছেলে, ভয় পাও তো আমাকে বলবে যে সাথে নিয়ে আসতে। পিছু পিছু আসো কেনো? সকালে প্রাইভেট টাইমে তো সাথেই আসো তাহলে বিকালে পিছু পিছু কেনো?
কেউ যেনো তোমার নামে কীছু বলতে না পারে তাই।
মানে?
সকালে সবাই দেখলে ভাববে স্টুডেন্ট আর বিকালে দেখলে ভাববে বিএফ জিএফ।
লাবিবা এই সময় সিরিয়াস একটা গালি দিতে ইচ্ছা করছে। জুনিয়র ছেলে বলে কিনা তারা জিএফ বিএফ।
এই ছেলে, ছোট ছোটর মতো থাকবে। বড় আপু হই তোমার। এইসব কথা মাথায় আসে কি করে তোমার? পাগল নাকি?
তানভীর মাথা চুলকিয়ে বলে, জি পাগল মিষ্টির জন্য।
সাদিয়া খিলখিল করে হেসে উঠে। লাবিবা রাগ দেখিয়ে বলে, তুই আবার হাসছিস কেনো?
না মানে দোস্ত। সেদিনের মিষ্টি খাওয়ার দৃশ্যটা চোখে ভেসে উঠলো তো তাই।
তানভীর লজ্জা লজ্জা ভাব মুখে ফুটিয়ে বলে, জি দেখবেন। কিন্তু অমৃত মিষ্টি আমি গোপনেই খাবো। কাউকে দেখতে দিবো না শুধু নিজে দেখবো।
কেনো কেনো? আমরা দেখলে কি সমস্যা?
সেদিন মিষ্টি খাওয়া দেখে তো এখনো হাসছেন আর সেই গোপন অমৃত খাওয়া দেখলে অনেকরাত ঘুমোতে পারবেন না।
ওওও।
লাবিবা বলে, এই ছেলে, বক বক কম। চলো সন্ধ্যা হয়ে যাচ্ছে। আর এখন থেকে সাথে সাথে থাকবে বুঝলে? আসি দোস্ত।
লাবিবা সাদিয়াকে একটা হাগ দিয়েবাসার উদ্দেশ্যে রওনা হয়। পথে তানভীর বলে, মিষ্টি তোমার কাছে মিষ্টি হবে?
এখানে কোন মিষ্টির দোকান নেই।
আমার যে খেতেই হবে। না খেয়ে থাকতেই পারছিনা। হেল্প প্লিজ।
চকলেট আছে। চলবে?
দৌড়বে।
লাবিবা ব্যাগের চেইন খুলতেই তানভীরের চোখে পড়ে চকলেট গুলো। মিষ্টি তোমার ব্যাগে এতো চকলেট বলেই খামচি দিতে নিলে লাবিবা ব্যাগ নিয়ে একটু দৌড়ে সামনে গিয়ে দাড়ায়। তানভীরের দিকে তাকিয়ে বলে, এই ছেলে একদম হাত দিবে না। তুমি একটাই পাবে।
তানভীর অসহায় মুখ করে বলে, আমার তো একটা মিষ্টিই চাই।
লাবিবা তানভীরের হাতে একটা চকলেট দিয়ে হাটতে থাকে। তানভীরকে বলে,
এই ছেলে শোন। কারো সামনে আবার বলো না যে আমার ব্যাগে এতগুলা চকলেট থাকে কেমন?
কেনো?
আমার বান্ধুবীগুলা জানলে সব খেয়ে নিবে। তখন আমি সারারাত কি চিবুবো বলতো? মুখ ফসকেও বলবেনা।
আচ্ছা।
এবার তুমি যাও। আমার বাসার গলিতে চলে এসেছি বলেই গলিতে ঢুকে পড়ে। বাসার গেইটে গিয়ে পিছনে দাড়িয়ে কলিংবেলে চাপ দিয়ে পেছন ফিরতেই দেখে তানভীর সুখীদের বাসায় ঢুকছে।চার চোখ এক হতেই তানভীর হাসি দিয়ে বলে, এ বাসায় উঠেছি। পরশু সকালে দেখা হবে। অগ্রিম জুম্মা মোবারক।
পর্ব ৩
গোছলের পর গামছাটা চুলে পেচিয়ে ভেজা কাপড়ের বালতি নিয়ে ছাদে চলে আসে লাবিবা। দড়িতে কাপড় গুলো চিপে মেলে দেয়। চুল থেকে গামছা ছাড়িয়ে দড়িতে মেলে দেয়। বালতি হাতে চলে আসার জন্য পা বাড়াতেই মিষ্টি ডাক শুনতে পায়। পেছন ঘুরতেই দেখে ওপাশের বিল্ডিংয়ে তানভীর দাড়িয়ে হাত নাড়ছে।
এগিয়ে গিয়ে ছাদের কিনারায় দাড়ায় লাবিবা। তানভীরকে খেয়াল করে দেখে। সাদা পাজামা পাঞ্জাবী সাথে সাদাটুপিতে সাদা গায়ের রং এ একদম পবিত্র লাগছে। জুম্মা নামায পড়েই মনে হয় ছাদে এসে দাড়িয়েছে। মুখে সেই মিটি মিটি হাসির ছোয়া লেগে আছে। তানভীর আবার ডাকে, মিষ্টি।
বলো।
একহাতে টুপি খুলে আরেকহাতে মাথা চুলকিয়ে বলে, একটা কথা বলবো মাইন্ড করবে নাতো?
না। বলো।
আমি কি তোমার বাসায় যেতে পারি?
লাবিবার হাসি পেয়ে যায়। বাসায় যাবে এতে এতো ফলমালিটির কি আছে? তবুও কঠিন মুখ করে বললো,
কেনো যাবে আমার বাসায়?
ঐতো যেগুলো লেসন স্যারের কাছে না বুঝি সেগুলো একটু বুঝিয়ে দিতে।
আচ্ছা। এসো।
নিচে চলে আসে লাবিবা।
সকালে ইসমাইলের সাথে বের হয়ে গলির মুখে আসতেই দেখে তানভীর দাড়িয়ে আছে। ইসমাইলকে দেখে তানভীর সালাম দেয়,
আসসালামু আলাইকুম আংকেল।
ওয়ালাইকুম সালাম। তুমি?
লাবিবা বলে, আব্বু ওর নাম তানভীর। আমার ডিপার্টমেন্টেই ফাস্ট ইয়ার। সুখী আপুদের বাসায় ভাড়া থাকে। একসাথেই প্রাইভেট পড়ি।
ও আচ্ছা। তাহলে একসাথেই যাও আমি না যাই।
তানভীর বলে, জি আংকেল। আমরা এখন থেকে এই প্রাইভেটে একসাথেই যাবো।
তানভীর লাবিবা হাটতে থাকে। লাবিবা একটু পর পর তানভীরের দিকে তাকিয়ে দেখে মিটি মিটি হাসছে। এই ছেলেকি সব সময় মিটি মিটি হাসে? নাকি ওর মুখটাই ওমন। হটাৎ তানভীর বলে, মিষ্টি দেখো তোমার নানারা দাড়িয়ে আছে তোমার জন্য।
লাবিবা সামনে তাকিয়ে দেখে দুইটা সাদা কালো কুকুর জিহবা বের করে আছে। মুখটা ভিতু ভিতু হয়ে যায় লাবিবার।
তানভীর দেখে হেসে ফেলে। তানভীরের হাসি দেখে পিত্তি জ্বলে যায়। একটু তো ভয় ই পায় তাতেই এতো মজা নেওয়ার কি আছে? সে কি কোন কিছুই ভয় পায় না নাকি?
এই ছেলে, ওরা সব লেডি। আই মিন নানী। পছন্দ হয়েছে তোমার? বিয়ে করিয়ে দেই? কোনটাকে নিবে?
আর ইউ সিরিয়াস? ওরা তোমার নানী? আই মিন তোমার আম্মু _
এই ছেলে, চুপ থাকো। ওরা কেউ না আমার। সব তোমার।
আমার কি?
ডারলিং।
মিষ্টি! ইউ কল মি ডার্লিং। আই এম ইউর জুনিয়র মিষ্টি।
রেগে আগুন হয়ে যায় লাবিবা। গলায় শান দিয়ে বলে, এই ছেলে, সাহস কি করে হয় তোমার আমার সাথে ফ্ল্যাট করার? ইডিয়ট কথাকার। ছোট ছোটর মতো থাকবে। আই হেট ফ্ল্যাট। আমার সাথে আর কখ্খোনো আসবে না।
জোরে জোরে হেটে রাগে গজ গজ করতে করতে চলে যায় লাবিবা। তানভীর মুখ গোমরা করে দাড়িয়ে থাকে।
আজ বাসায় এসে ব্যাগ খুলে গোলাপের পাপড়ি পায় না লাবিবা। পুরো ব্যাগ বই খুজেও পাপড়ি পায় না। জমানো পাপড়ি গুলো দেখে মুন খারাপ হয়ে যায়। ডেইলি গোলাপের পাপড়ি পেতে পেতে হেবিট হয়ে গেছে যেনো। আজ না পেয়ে কিছুই ভালো লাগছে না। তাই সিদরাতুলের সাথে খেলতে চলে যায়। গিয়ে দেখে সিদরাতুল ঘুমিয়ে পড়েছে। ডিনার সেরে ছাদে এসে বসে লাবিবা। রাতের হাওয়া দারুন লাগছে অন্ধকারে।
পাশের বিল্ডিং এ তাকাতেই দেখে একটা ছায়া। ছেলে মানুষের ছায়া। লাবিবা যে মুখ করে বসে আছে ঠিক সে মুখ করেই বসে আছে। আলো থাকলে মনে হয় চোখাচোখি হয়ে যেতো। অনেকক্ষন কানে ইয়ার ফোন গুজে বসে ছিলো লাবিবা। হটাৎ ই কোলে একটা কাগজ এর বল এসে পড়ে। লাবিবা বলটা নিয়ে খুলে ফোনের আলোয় কিছু লেখা দেখতে পায়। ইংরেজিতে লেখা,
” I am sorry Misty “
সাথে সাথেই লাবিবা পাশের বিল্ডিং এ তাকায়। ছায়াটা যে তানভীর তা আর বুঝতে অসুবিধা হয় না। সাথে সাথেই ডেকে ওঠে, এই ছেলে ….।
তানভীর উঠে চলে যায় না শোনার ভান করে।
কুয়াশার ভেতর দিয়ে একা একা হেটে যাচ্ছে লাবিবা। আজ যেনো বেশী কুয়াশা পড়েছে। অনেকক্ষন তানভীরের অপেক্ষা করলেও তানভীর আসেনি। মাঝ রাস্তা যেতেই কাঙ্খিত কুকুর গুলোর দেখা মিলে। রাক্ষস নজরে তাকিয়ে আছে। জিহবা নাড়িয়ে নাড়িয়ে যেনো বলছে কিরে লিচু তুই আজকে একা কেনো?
বাগে পেয়েছি তোকে বড় গাছের অতীত সহ খাবো। ভয় পেয়ে চুপসে যায় লাবিবা। সূরা পড়তে পড়তে সাইড দিয়ে চেপে যেতে নিলেই কুকুর ঘেউ ঘেউ শুরু করে দেয়। লাবিবা দেয় দৌড়। পিছে পিছে কুকুর ও দৌড়। দৌড়ে একটা বাসার গেইট লাগিয়ে ঢুকে পড়ে। আজকের মতো প্রাইভেট খতম। একঘন্টা পর উকি দিয়ে দেখে কুকুর নেই। তখনি বেড়িয়ে পড়ে।
দুদিন পর বিকালে বাসায় ফেরার সময় গলিতে ঢুকতেই ডাক শুনে, মিষ্টি। পিছু ফিরে দেখে তানভীর স্টাইলিশ ভাবে দাড়িয়ে। তানভীরকে দেখেই রেগে যায় লাবিবা। জোরে হেটে এসে কলার ধরে টেনে মুখের সামনে মুখ নিয়ে বলে,
এই ছেলে সমস্যা কি তোমার? কোথায় ছিলে তুমি? দুইদিন থেকে খুজছি তোমায়।
তানভীর লাবিবার হাতের উপর হাত দিয়ে ধরে মিটি মিটি হাসছে। লাবিবা আরো রেগে যায়।
এই ছেলে, সব সময় মিটি মিটি হাসো কেনো তুমি? কথা বলতে পারো না? আমার কথার উত্তর দাও।
বাসায় কেনো গেলেনা?
আশ্চর্য। হুট হাট বাসায় যাওয়া যায় নাকি? আর তুমি ছাড়া আমি কাউকে চিনি নাকি?
কিন্তু আমি তো দেখি তোমার আম্মু আর আমার আম্মুর বেশ সখ্যতা।
আমি সারাদিন বাসায় থাকি নাকি যে দেখবো? সকালে আসো না কেনো আর? আমাকে কুকুর ধরে নিক সেটাইতো চাও নাকি?
ওহ মিষ্টি, এর জন্য তুমি প্রাইভেটে মিসিং। সরি সরি সরি আর হবে না।
পাশ দিকে এক ভদ্রমহিলা যেতে যেতে যেতে বলে যায়, ঠিক করছেন আপু। আজকালকার প্রেমিক গুলোকে একটু শাসনেই রাখতে হয়। ফেমেলিতো এদের একটুও শাসন করে না।
লাবিবা সাথে সাথেই কলার ছেড়ে দুপা পিছিয়ে দাড়ায়। খেয়াল ই ছিলো না যে সে রাস্তায় আছে। এদিক ওদিক তাকিয়ে পা বাড়ায়। দু পা এগিয়ে পিছে তাকিয়ে তানভীরকে দাড়িয়ে থাকতে দেখে বলে,
এই ছেলে, সাথে এসো।
তানভীর লাবিবার সাথে সাথে হাটতে থাকে। বাসার সামনে এসে বলে,
এই ছেলে, প্রতিদিন আমার জন্য ওয়েট করবে ঠিক আছে? আর যেনো না দেখি আমাকে ছাড়া কখনো প্রাইভেটে গিয়েছো।
লাবিবাকে ডাক পাঠিয়েছে ছাবিনা ড্রয়িংরুমে। কিছুক্ষন পর লাবিবা আসতেই দেখে ড্রয়িংরুমে ছাবিনার সাথে সোহানা আন্টি বসে। সোহানার পেছনে তানভীর দাড়িয়ে। লাবিবা কি হয়েছে জিজ্জাসা করতেই ছাবিনা বলে, তুই তানভীরের শার্ট নষ্ট করেছিস কেনো?
কি আজব! আমি শার্ট নষ্ট করবো কেনো?
করিস নি তাহলে এটা কি? বাবা তোমার শার্ট টা দেখাও তো।
তানভীর এসে শার্ট টা লাবিবার হাতে দেয়। লাবিবা শার্ট মেলতেই দেখে সাদা শার্টে কলার জুড়ে চকলেটের দাগ। কলার চেপে ধরার সময় তো হুস ই ছিলো না যে হাতে চকলেট ছিলো তখন। জিহবায় কামড় দিয়ে বলে, এমা .. আমিতো খেয়াল ই করিনি।
সোহানা বলে, এটা ওর ফেবারিট শার্ট। ওর মামা সুইজারল্যান্ড থেকে এনেছে।
তুমি এই শার্ট নষ্ট করে দিয়েছো জন্য এখন আমার মাথা খাচ্ছে। আর পারি না আমি এই ছেলেকে নিয়ে।
ছাবিনা অগ্নি দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে, কিরে তুই কি আজকাল মারামারি করছিস নাকি? গুন্ডা গিরি দেখাচ্ছিস?
কি আশ্চর্য! গুন্ডা গিরী করবো কেনো?
তাহলে কলারে কেনো চকলেট লাগবে। তানভীর বাবা সত্যি করে বলতো লাবিবাকি তোমার গায়ে হাত দিয়েছে?
তানভীর ভদ্রমত উত্তর দেয়, না আন্টি। কলার টেনে ধরেছে। মারে নি।
চিন্তায় পড়ে যায় ছাবিনা। লাবিবার দিকে কঠোর দৃষ্টি দিয়ে ধপ করে দাড়িয়ে যায়। কপালে ভাজ ফেলে বলে, অত লম্বা ছেলেটাকে কলার ধরে টেনে নিচু করার মানে টা কি?
লাবিবার চোখ বড় বড় হয়ে যায়। ঘটনা অন্যদিকে ঘুরে যাওয়ার আবাস পেয়ে শার্ট নিয়ে তানভীরের কাছে এসে দাড়িয়ে বলে, এরকম শার্ট আমি তোমাকে আরো কিনে দিবো কেমন? এখন বাসায় যাও কেমন? আমি তো খেয়াল করিনি তাই না? শার্ট নষ্ট হয়েছে আমাকে বললেই হতো তাইনা? এখন বাসায় যাও কেমন?
দাত চিপে চিপে কথা বলছে লাবিবা। ইচ্ছে করছে এখনি তানভীরকে চিবিয়ে খেতে। তানভীর মিটি মিটি হাসছে। গা জ্বলে যায় লাবিবার। থম থম শব্দ করে উপরে চলে যায়।
প্রাইভেটে যাওয়ার সময় একটা কথাও বলেনি লাবিবা। তানভীর দৃষ্টি আকর্ষনের জন্য মাঝে মাঝে একটু আধটু কথা বলছে। আজ কুকুরের দেখা মেলেনি। মাঝ রাস্তায় যেতেই লাবিবা ধুম ধাম তানভীরের পিঠে কিল ঘুষি লাগিয়ে দেয় কয়েকটা। তানভীর দৌড়ে সামনে এগিয়ে বলে,
আম্মুরে … মেরে ফেললোরে.. মিষ্টি যন্ত্রনা রে।
এই ছেলে একদম দৌড় দিবিনা। বেয়াদব ছেলে। আমি শার্ট নষ্ট করেছি আম্মুনিকে বলা তাই না? আমাকে কেস খাওয়ানোর ধান্ধা তাই না?
উত্তরে তানভীর মিটি মিটি হাসছে।
ধুর.. ভাল্লাগেনা শুধু হাসে। কথাই নাই। দূরে সর। একদম আমার সাথে আসবেনা।
ওকে মিষ্টি। কাল থেকে আ