30/08/2022
#শ্রদ্ধাঞ্জলি
বাংলা সাহিত্যের #রম্যশাখার এক অন্যতম পুরোধা ব্যক্তিত্ব #শিবরাম_চক্রবর্তী। বাংলা রম্যসাহিত্যিকের খুব ক্ষুদ্র তালিকা করলেও সেখানে নিঃসন্দেহে ঠাঁই পাবেন শিবরাম। তার সাহিত্যের হাস্যরস ছিল সম্পূর্ণই স্বভাবজাত। কোথাও জোর করে হাসানোর প্রবণতা ছিল না, পাঠক নিজ মনেই পড়তে পড়তে হাসির রাজ্যে হারিয়ে যাবেন।
ব্যক্তি শিবরাম ছিলেন প্রচণ্ড রকমের খেয়ালী এবং রসিক একজন মানুষ। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, শিবরামের এক ভক্ত তাকে প্রশ্ন করেছিলেন, সারা দিন তিনি কীভাবে কাটান---
সকালবেলা ঘুম থেকে উঠে শুয়ে শুয়ে তিনি একটু বিশ্রাম নেন। তারপর হাতমুখ ধুয়ে চা-জলখাবার খেয়ে আবার শুয়ে পড়েন। দুপুরবেলা কষ্টেসৃষ্টে উঠে টানটান করে খাওয়া সারেন। দ্বিপ্রাহরিক আহারের পর ভাতঘুম তো বাঙালির ন্যায্য পাওনা। দুপুরে তাই ভাতঘুমে থাকেন। বিকেলে চা জলখাবারের পর ভাবেন কোথায়ই বা যাবেন, ‘বরং শুয়েই থাকি’। রাতের বেলার খাওয়া সেরে আবার ঘুমিয়ে পড়েন। এভাবেই কাটে তাঁর দিনগুলো রাতগুলো। প্রশ্নকর্তা তখন বিস্মিত হয়ে জানতে চান, “তাহলে লিখেন কখন!”
নির্বিকার ভঙ্গিতে শিবরাম উত্তর দেন, “কেন, পরের দিন!”
শিবরামের বাস্তব জীবনে এমন খেয়ালী রসিকতার উদাহরণ অসংখ্য। এবং সেখানেও যথারীতি পাওয়া যায় শিবরামীয় স্টাইলের 'পান'। প্রেমেন্দ্র মিত্রের সাথে বন্ধুত্বের সম্পর্ক নিয়ে বলেছিলেন “প্রেমেণের মতো মিত্র হয় না”। আবার শিশিরকুমার ভাদুড়ীর মাদকাসক্তিকে ব্যঙ্গ করে বলেছিলেন, "শিশি-র ভাদুড়ী নহ, তুমি বোতলের"। নিজেকে নিয়ে মজা করতেও ছাড়তেন না তিনি। নিজের নামকে নিজেই বিকৃত করে লিখতেন 'শিব্রাম চকরবরতী'; লিখেছিলেন 'শিবরাম বনাম শিব্রাম'।
মূলত রম্যসাহিত্যিক হলেও সাহিত্যজগতে প্রবেশ করেছিলেন কবিতা দিয়েই। তৎকালীন সাহিত্য পত্রিকা 'ভারতী'তে প্রকাশিত হয় তার প্রথম কবিতা। পরে বেশ কিছু রাশভারি লেখা লিখলেও ধীরে ধীরে সমস্ত মনোযোগ দেন রম্যসাহিত্যেই। এছাড়াও লিখেছিলেন বেশ কিছু উপন্যাস, নাটক এবং প্রবন্ধ। এভাবেই তিনি গড়ে তোলেন এক বিশাল সাহিত্যের ভাণ্ডার। তবে ব্যক্তিজীবনের খেয়ালের প্রভাব পড়েছিল তার সাহিত্যকর্মেও। নিজের অনেক লেখাই সংরক্ষণ করে যাননি। ১৯২৯ সালে তার প্রথম কাব্যগ্রন্থ 'মানুষ' প্রকাশিত হয়। একই বছরে প্রকাশিত হয় আরেকটি কাব্যগ্রন্থ- 'চুম্বন'। লিখেছেন 'বাড়ি থেকে পালিয়ে' এবং 'হাতির সাথে হাতাহাতি'-এর মতো অসাধারণ কিছু উপন্যাস। 'ঈশ্বর পৃথিবী ভালোবাসা' নামের স্মৃতিকথা গ্রন্থে তিনি লিখে গেছেন নিজের কথা। সৃষ্টি করেছেন হর্ষবর্ধন-গোবর্ধন, বিনি, ইতুর মতো স্মরণীয় কিছু চরিত্র। জীবনে সাহিত্য পুরস্কার ছিল হাতেগোনা কয়েকটি- মৌচাক পুরস্কার, আনন্দ পুরস্কার এবং মরণোত্তর বিদ্যাসাগর পুরস্কার। তবে এর চেয়েও বেশি যেটা পেয়েছেন, তা হলো ভক্তের ভালোবাসা।
এই খেয়ালী লোকটার শেষকাল কেটেছিল নিদারুণ কষ্টে। দেনা-পাওয়ার হিসাবে গরমিল থাকায় অর্থকষ্টে।
নিজেই নিজের অবস্থা নিয়ে বলতেন,
"জিনিসপত্র সব বাঁধা হয়ে গেছে। এবার একটা ট্যাক্সি পেলেই চলে যাব।
২৮ আগস্ট, ১৯৮০। এক পর্যায়ে ডাক্তার তাকে জিজ্ঞেস করেন,
“শিবরামবাবু, এখন কেমন লাগছে শরীর?”
জড়ানো গলায় উত্তর দেন,
“ফার্স্টক্লাস।”
তার পাঁচ মিনিট পরেই 'ট্যাক্সি' চেপে মৃত্যুলোকে রওনা হন শিবরাম চক্রবর্তী।
WIZMI Collectionz এর পক্ষ থেকে প্রিয় লেখককে বিনম্র শ্রদ্ধা ও প্রণাম জানাই।।।।।