25/06/2024
কথায় আছে, "পাগলেরাই ইতিহাস গড়ে!" সত্যিই কি তাই? নাকি পাগলের পাগলামী তাকে ইতিহাস রচনা করতে বাধ্য করে? কি জানি বাবা। হয়তো দুটোর মধ্যে একটা। এবার আসি গল্পে...
রাত তখন নয়টা বেজে পনেরো মিনিট। গেষ্টহাউসের আশপাশটা ঘুরে দেখবো বলে নৈশভোজ সেরে ওই একটু ঢুঁ মারছিলাম আরকি। এমতাবস্থায় হঠাৎ চোখে পড়ে গেলো ছিমছাম চেহারার বৃহৎ গোঁফ বিশিষ্ট এক অদ্ভুত লোক। সঙ্গে ছিলো বলতে সাইনবোর্ডযুক্ত একটি বাংলা সাইকেল ও তিনটি ব্যাগ।
ভদ্রলোকের সাইনবোর্ডটি আমায় আকৃষ্ট করলো। ভাবলাম গিয়ে কথা বলি। তো যথারীতি কথা বললাম এবং বুঝতে পারলাম যে ভদ্রলোক বেশ শিক্ষিত। ভদ্রলোক আমার সাথে হিন্দি-বাংলা মিশিয়ে কথা বললেন। মাঝে মাঝে, ভাঙা ভাঙা ইংরেজিও বললেন বটে।
ওনার নামটা ঠিক মনে পড়ছে না। উনি আসছেন আসামের কোনো এক ছোটো গ্ৰাম থেকে। ধর্মে মুসলমান। সাইকেল চড়েই আসছেন ভদ্রলোক। গন্তব্যস্থল ভারতের রাজধানী, নয়া দিল্লী। দুই সপ্তাহ হলো তিনি ঘরছাড়া। ভদ্রলোকের পেশাটিও বড়ো অদ্ভুত। উনি বললেন, "আমি ভারতবর্ষের ছোটো বড়ো বিভিন্ন জায়গায় গিয়ে সেখানকার স্কুলগুলিতে গাছ লাগাই এবং পড়ুয়াদের বৃক্ষরোপণের প্রয়োজনীয়তা বর্ণনা করি।" তাঁর কথাটি আদৌ বিশ্বাসযোগ্য কিনা সেটি প্রমাণ করতে আমায় তার ব্যাগের মধ্যে থেকে একটি খাতা বের করে দেখালেন যা এটা প্রমাণ করে যে এখনো অবধি তিনি প্রায় পাঁচশ থেকে ছয়শোটি স্কুলে গিয়ে গাছ লাগিয়েছেন এবং তার এই মহৎ উদ্দোগে স্কুলের ছাত্রছাত্রীমহল, শিক্ষক-শিক্ষিকাবৃন্ত ওনার পাশে দাঁড়িয়েছে। ওনার কাজকে সম্মতি জানিয়ে প্রত্যেক স্কুলের প্রধান শিক্ষক/শিক্ষিকা তাঁদের বক্তব্য খাতায় লিখে প্রকাশ করেছেন। উনি তাই আমায় দেখালেন। ভদ্রলোক তার ট্যাবলেট থেকে তার কাজকর্মের বেশ কিছু ছবিও দেখালেন। আমি মন্ত্রমুগ্ধের মতো ওনার কথা শুনেই চললাম। উনি জানালেন যে বেশ কয়েকবার উনি ভাইরাল হয়েছেন এবং আসামের বেশ কিছু লোকাল টিভি চ্যানেলে তাঁর সাক্ষাৎকারও দেখানো হয়েছে।
আমি অবশেষে জিজ্ঞাসা করলাম, "তো এবারে তল্পিতল্পা গুটিয়ে কোথিয় চললেন হে?" ভদ্রলোক মাথার টুপি খুলে নিজের অদ্ভুদ হেয়ারস্টাইল দেখালেন। দেখলাম, চুলের কাটিং নাইজিরিয়ান ফুটবলারদের মতো। মাথার চুলটি সমানকরে পাঁচভাগে বিভক্ত। ভদ্রলোক বললেন,"ভারতবর্ষের সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ পাঁচটি সমস্যা এই পাঁচটি ফাঁকা স্থাণকে নির্দেশ করছে। যেদিন দেশে প্রতি ১কিমি অন্তর রাস্তায় একটি শৌচালয় থাকবে, যেদিন রাস্তাঘাটে স্ত্রীজাতি নিশ্চিন্তে রাত বারোটায় বাড়ি ফিরতে পারবে, যেদিন প্রতি ৫০০মিটার অন্তর পানীয় জলের সুব্যবস্থা থাকবে, যেদিন দেশের প্রতিটি গ্ৰামে একটি করে প্রাথমিক বিদ্যালয় ও চিকিৎসালয় থাকবে এবং যেদিন দেশের বহু নামজানা গ্ৰামে বিদ্যুৎ আসবে ও পাকা রাস্তা নির্মান করা হবে সেদিন থেকেই আমার মাথার এই ফাঁকা স্থাণগুলোতে চুল গজাবে। আমি এখন মাইকেল চালিয়ে দিল্লী যাবো এবং সুপ্রিম কোর্টের কাছে আমার আবেদন পেশ করবো। আমি বিশ্বাস করি, আমার এই স্বপ্নগুলি আমি বাস্তবায়িত করতে পারবো।" এই ছিলো তার বক্তব্য। আমি তো শুনে পুরো থ মেরে গেলাম। জিজ্ঞাসা করলাম, "আর যদি আপনার বক্তব্য প্রত্যাখান করা হয় তখন কি করবেন?" ভদ্রলোক উত্তর দিলেন, " যতোদিন এমন না হচ্ছে ততোদিন আমি ওখানেই থাকবো। বাড়ি ফিরবো না। বাড়ি আমি তখনি ফিরবো যখন আমি নতুন ভারতবর্ষকে দেখতে পাবো।"
অবশেষে ভদ্রলোককে স্যালুট জানিয়ে আমি বললাম, "ভগবান আপনার রক্ষা করুন। অল দ্যা ভেরি বেষ্ট টু ইউ। উনি নিড মোর পিপল লাইক ইউ স্যার। গুভ নাইট। হ্যাভ আ সেফ্ অ্যান্ড অ্যাডভেঞ্চারাস জার্নি।"